অসময়ের শুকতারা পর্ব-১৮

0
16

#অসময়ের_শুকতারা
#অনামিকা_আহমেদ
পর্ব:১৮

গোসল সেরে শীতল সবেমাত্র তার কোমর সমান চুল গুলো শুকনো একটা গামছা দিয়ে ঝরছিল, ঠিক সেই মুহূর্তেই কোথা থেকে জানি ব*জ্জাত হিমটা এসে আষ্টেপৃষ্টে তাকে জড়িয়ে ধরে। হিমের গতি এতটাই বেশি ছিল যে অন্যমনস্ক শীতল প্রথমে ভ*য় পেয়ে যায়। তারপর আয়নায় হিমের প্রতিচ্ছবি দেখে সে কিছুটা শান্ত হয়।

সদ্য গোসল করায় পানিতে ভেজা ঠান্ডা ত্বক হিম কে কিছুটা আরাম বোধ করায়। তাই সে নিজের মুখটা শীতলের কাপড়হীন ঘাড়ে গুঁজে দেয়। শাড়ি পরার দরুন শীতলের পিঠের দিকটা খানিক খোলা, তাই হিমের ঠান্ডা স্পর্শ গুলো পেতে বেশি বেগ পেতে হয়নি।

এভাবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে হিম নিজে থেকেই শীতল কে ছেড়ে দিয়ে তাকে নিজের দিকে ফিরায়। শীতলের ফর্সা গাল মুহূর্তেই লাল বর্ণ ধারণ করেছে, বোঝাই যাচ্ছে মেয়েটা বেশ ল*জ্জা পাচ্ছে। হিম মুচকি হেসে শীতলের থুতনি একটু উচু করে তুলে বলে,

– এখনও লজ্জা কাটে নাই তোর ছে*মরি? তোর লজ্জা লজ্জা ভাব আমার রোমান্সের গল্পের প্রধান ভিলে*ন দেখা যায়।

শীতল চোখ ছোট করে তাকায় হিমের দিকে। তারপর নিজের ফোন এ কিছু একটা টাইপ করে বলে,

– আপনার যেহেতু ল*জ্জা শরমের ছিটেফোঁটা নেই, তাই আমাকে একটু বেশীই করে সেগুলোকে দেখাতে হয় বেলেন্স করবার জন্য।

এবার হিম নিজের মুখটা শীতলের খুব কাছে নিয়ে যায়। নে*শাভরা চোখে শীতলের চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে ঠান্ডা কন্ঠে বলে,

– তো আর কি কি ব্যালেন্স করতে পারো শুনি?

শীতল কোনরূপ প্রতিক্রিয়া দেখানোর আগেই রুমের বাইরে থেকে তুষারের ঝাঁঝালো কন্ঠ শোনা যায়।

– লটকনের বাচ্চা, আধা ঘণ্টা আগে তোকে নীচে আসতে বলেছিলাম। এখনো তোর আসার নাম নেই। এখন আমি যদি সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠি তাহলে তোর ২০৬ টা হাড় ভেগে আমি ৪১২ টা করে দিবো।

“লটকনের বাচ্চা” নামটা শীতলের কাছে একেবারেই নতুন, তাই সে না হেসে পারে না। হিম তার দিকে একটা রাহী লুক দিলে সে প্রথমে হাসি আটকানোর চেষ্টা করে কিন্তু শেষে আরও বেশি হেসে দেয়। হিম কপাল কুঁচকে চোখ বন্ধ করে বলে,

– দিলো দিলো আমার প্রেস্টিজ পাংচার করে। এই হাঁটুর বয়সি ছেমরি*র সামনে আমার সব মান সম্মান কয়লার কালির মতো ভাইসা গেলো। এখন মান সম্মান ছাড়া আমি কেমনে বাঁচব😭😭 সমাজে মুখই বা কি করে দেখাবো?

কৃত্রিম কান্না শেষে হিম শীতল এর দিকে তাকিয়ে বলে,

– তোকে আমি দেখে নিবো ছে*মরি, আর কতক্ষন ই বা আকাশে সূর্য থাকবে? একসময় তো সূর্যমামা ডুবে গিয়ে চাদ চাচার দেখা মিলবে। তখন না হয় আবারও পাটক্ষেতে ভ্রমণ করে সুদ সমেত শোধ তুলবো তোর ওপর।

হিমের ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বুঝতে পেরে শীতল মুখ কালো করে ফেলে। আর হিম বিজয়ের হাসি হেসে রুম থেকে বাইরে বের হয়ে যায়।

___________________________________________

হিম আর তুষার বাইরে বের হয়েছে কোনো এক অজানা কাজের উদ্দেশে। ফিরতে দেরি হতে পারে তাই হিম শীতল কে বলে গেছে সে যেনো তাদের জন্য অপেক্ষা না করে খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। বাড়িতে এখন শুধু শীতল এর কয়েকজন মহিলা স্টাফ।

বিছানায় চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়েও যেনো ঘুম আসছে না শীতলের। তাই সে ভাবলো এই সময়ে নিজের স্বামী আর ভাসুরের জন্য বিরিয়ানি রান্না করবে। সত্যি বলতে হিম কে নিজ হাতে রান্না করে খাওয়ানো হয়নি এই কয়দিনে। তাই শীতল আঁচলটা কোমরে গুজে রান্নার কাজে লেগে পড়ে।

সন্ধ্যার দিকে রান্না শেষ হয় তার। বিরিয়ানির সাথে ছাগলের রেজালা আর রোস্ট করেছে সে। তিনটা পদ রান্না করতে করতেই সে ঘেমে একাকার হয়ে যায়। তাই চুলা থেকে পাতিলগুলো নামিয়ে হাটা দেয় নিজের রুমের দিকে।

দরজা খুলতেই এক চেনা গন্ধ নাকে এসে শীতলের। তার মনে হয় এই গন্ধটা সে এর আগেও পেয়েছে, কিন্তু এখন কিছুতেই মনে করতে পারছে না। ঘ্রাণটা আস্তে আস্তে ক্ষীণ হয়ে যাওয়ায় শীতল অতশত না ভেবে সাদা রঙের একটা টপ আর কালো সালোয়ার নিয়ে বাথরুমে ঢুকে যায় গোসলের উদ্দেশে।

গোসল সেরে রুমের মধ্যে পা বাড়ালো আবারো সেই গন্ধের ধাক্কা লাগে শীতলের নাকে। এবার গন্ধটা ভীষণই তীব্র। শীতল আশেপাশে তাকায়, কেনো জানি তার মনে হচ্ছে এই রুমে সে ব্যতিত অন্য কেউ আছে। কাওকে সে চোখে দেখতে না পেলেও কারো নিশ্বাসের ক্ষীণ শব্দ সে শুনতে পারছে।

শীতলের ভয়ে হাত কাঁপতে থাকে। একটু জোরে চিৎকা*র দিলেই বাড়ির নীচে থাকা গার্ডরা তাকে বাঁচানোর জন্য চলে আসবে, কিন্তু চিৎকা*র সে করবে কিভাবে? দীর্ঘক্ষণ মস্তিষ্কে চাপ দিয়ে এই গন্ধের কারণ সেই ব্যক্তিকে তার মনে পড়ে যায়। শীতল চোখ বড় বড় করে তাকায় তার পিছনে। সে যা ভেবেছিল সেটাই ঠিক প্রমাণিত হয়।

– সাদাত ভাই। ( মনে মনে)

শীতল দ্রুত পায়ে রুম থেকে বের হওয়ার আগেই সাদাত তাকে নিজ বাহুডোরে জড়িয়ে ধরে। শীতল নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে কিন্তু তার আগেই ক্লোরোফর্ম মিশ্রিত রোমাল সাদাত শীতলের মুখে চেপে ধরে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে শীতল জ্ঞান হারিয়ে সাদাতের বুকে ঢলে পড়ে।

– আমার সম্পত্তিকে আমি নিয়ে গেলাম হিম। কিছুদিনের জন্য দেখভাল করতে দিয়েছিলাম দেখে তুই নিজেকে ওর স্থায়ী মালিক ভেবেছিলি। বাট সাদাত নিজের জিনিস নিজে আগলে রাখতে জানে। এখন আমিও দেখব তুই কি করে শীতল কে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিস।

___________________________________________

রাত 9 টা ছুঁই ছুঁই, হিম আর তুষার বাড়ি ফিরে। শীতলের দেখা না পেয়ে হিম সারা বাড়ি তাকে তন্ন তন্ন করে খুঁজে। সব জায়গায় মানুষটার অস্তিত্ব অনুভব করে, কিন্তু হিম সেই মানুষটাকে চোখে দেখতে পায় না। শীতল কে না দেখতে পেয়ে মুহূর্তের মধ্যেই হিম পশু*র মত হিং*স্র হয়ে ওঠে। তুষার সিসিটিভি ফুটেজ চেক করতে চাইলে হিম তাকে বাধা দেয়।

– আমি জানি ওকে কে তুলে নিয়ে গেছে। সাদাত, বন্ধু ভেবেছিলাম তোকে। তার এই মূল্য চুকালি তুই? আচ্ছা মর*ন খেলায় নেমেছিস তাই না, তবে তুই হয়তো জানিস না হিম নিজেই একটা যন্ত্রণা*দায়ক মর*ণের নাম। আল্লাহ ছাড়া আর কারো সাধ্বী নেয় আমার কাছ থেকে আমার শীতল কে কেড়ে নেওয়ার। সেখানে তুই তো সামান্য এক মানুষ। Be ready for a dea*dly war Sadat. Him is coming.

চলবে……………….