অসময়ের শুকতারা পর্ব-২০ এবং শেষ পর্ব

0
29

#অসময়ের_শুকতারা
#অনামিকা_আহমেদ
পর্ব:২০ ( অন্তিম পর্ব)

– দেখ তোর ভাতা*র এসে গেছে শীত। আজ তোর সামনে তোর ভা*তারকে মে*রে আজকেই তোকে বিয়ে করব আমি।

সাদাত দীর্ঘজীবন কথায় কথায় শীতল কে অপ*মান করেছে, অসম্মান করেছে। কিন্তু শীতল কখনো সাদাত কে বাধা দেয় নি, প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু আজ তার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। শীতল তার ছোট্ট জীবনে সবচেয়ে বেশি ভালবেসেছি, প্রাধান্য দিয়েছে হিম কে। তার সম্পর্কে সে কারো মুখ থেকে কোনো ধরনের বাজে কথা সহ্য করবে না। সেটা সাদাতই হোক না কেনো।

শীতলের হাতের চ*ড় গালে পড়ায় সাদাতের মুখ কাত হয় কেবল। সেই চ*ড়ে তেমন একটা শক্তি না থাকলেও যে প্রাণ ভরা ঘৃ*ণা ছিল সেটা সাদাতের বুঝতে বাকি থাকে না। আজ সাদাতের জন্য শীতল তার গায়ে আঘা*ত করেছে, ভাবতেই তার সর্বাঙ্গে রাগের আগুন ছড়িয়ে যায়। রক্তিম চোখে শীতলের দিকে তাকালে শীতল কিছুটা ভ*য় পেয়ে যায়। এখনো সাদাতের অত্যা*চারের স্মৃতি গুলো তার মগজে গেঁথে আছে। কত রাত তাকে ঠাণ্ডার মধ্যে গরম কাপড় ছাড়া দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে, কত গরম দুপুরে কড়া রোদে কান ধরে উঠবস করতে হয়েছে তার ইয়াত্তা নেই। সবই সাদাতের শা*স্তি দেওয়ার অভিনব কৌশল।

সাদাত শক্ত করে শীতলের হাত চেপে ধরে। বেশি জোর খাটানোর কারণে শীতল হতে ভীষণ ব্য*থা পায়, কিন্তু মুখে কিছুই বলে না, কেবল চোখ দুটো জ্বলজ্বল করে উঠে।

– আজ শেষ বারের মতো যত ক*ষ্ট দিতে ইচ্ছে করে সে দিক। আজ যদি হিমের কিছু হয়ে যায় তবে আমিও নিজেকে শে*ষ করে ফেলবো। হিম ছাড়া শীতলের অস্তিত্ব থাকতে পারে না। কখনোই না। ( মনে মনে)

সাদাত শীতল কে টেনে তাকে নিচে নিয়ে যায়। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই হিমের তাচ্ছি*ল্য ভরে কন্ঠে গায়ে জ্বালা ধরা কথা শুনে সাদাতের মুখ কালো হয়ে যায়।

– আরে বন্ধু, তোর কালো মুখটা ফর্সা ফর্সা লাগছে, ফিয়ার এন্ড লাভলি লাগাচ্ছিস নাকি নিয়মিত। ভালো ভালো, চালিয়ে যা, দেখ এসব করে একটু আমার লেভেলে উঠতে পারি কিনা। তবে কি জানিস বন্ধু, যতই সাজুক কাক কখনও ময়ূর হতে পারে না। তার কাক হয়ে আমার ময়ূরীর পাশেও তোকে ঠিক ভালো লাগছে না।

সাদাত দৃষ্টি স্থির রেখে শীতলের দিকে বন্দু*ক তাক করে হিমের দিকে তাকায়।

– শীত তোর না, আমার ময়ূরী ছিল। ওকে আমি ছোট থেকে বড় করেছি। 18 years is not a joke. আর তুই দুদিন থেকেই ওকে আমার থেকে কেড়ে নিবি ভেবেছিস? সেটা আমি কখনোই হতে দিবো না।

– আমার স্ত্রীর হাত ধরার অপরাধে তোর দুই হাত যে তোর শরীর থেকে এখনও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়নি এটা তোর ভাগ্য সাদাত। আর কি বললি ওকে তুই বড় করেছিস? For your kind information, ভাইরা বোনদের ছোট থেকে বড় করে, হাজবেন্ড নয়। ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করে হাজবেন্ড হওয়ার স্বপ্ন দেখা বাদ দে সাদাত। লোকে ম*ন্দ বলবে।

– লোকে কি বলবে সেটা নিয়ে সাদাত কখনও ভাবেনি, আর ভবিষ্যতেও ভাববে না। Guards attack on him.

সাদাতের নির্দেশ পাওয়ার সাথে সাথেই তার গার্ডরা হিম এর ওপর আক্র*মণ করে। বিশ জন অনভিজ্ঞ গার্ডদের প্রতিহত করা হিমের জন্য খুবই সহজ। সেই ছোট থেকেই মার*পিটে তার সমকক্ষ কেও নেই। ক্লাস ফাইভ এই থাকতে ক্লাস টেনের দামরা দামড়া ছেলেদের পিটি*য়ে পাটকাঠি করে দিত সে।

শীতলের হাত সাদাতের আয়ত্তে বদ্ধ। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টায় সে ব্য*র্থ হওয়ায় সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। কারণ তার মন বলছে হিম সব বিপদ সামলে নিতে পারবে। হঠাৎ শীতল দেখতে পায়, মা*র খেয়ে মেঝেতে পড়ে থাকা এক গার্ড উঠে ছু*রি হাতে হিমের দিকে এগিয়ে আসছে। হিম তখন নিজের শক্তি জাহির করতে ব্যস্ত থাকায় সে এটা দেখতে পায় না।

শীতল এবার সর্বশক্তি দিয়ে সাদাতের হাত থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে, কিন্তু সাদাতের বলিষ্ঠ দেহের শক্তির সাথে পেরে উঠে না। শীতলের বড় বড় চোখে ভেসে উঠছে যে গার্ডটা হিমের একেবারেই কাছে এসে পড়েছে। শীতল কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না, যে করেই হোক তাকে শব্দ করতে হবে। অনেক প্রচেষ্টার পর শীতল জোরে চিৎকার দিয়ে ওঠে,

– হিম পিছনে –

পরের কথা বলার সুযোগ পায় না। শীতলের মুখ দিয়ে র*ক্ত বের হতে থাকে, আর সাথে সাথে শীতল জ্ঞান হারায়।

______________________________________

শহরের এক নামী দামি প্রাইভেট হাসপাতালের করিডোরে বসে আছে হিম। তার দৃষ্টি মাটিতে সীমাবদ্ধ, শরীর জমে গেছে। পরনের সাদা শার্টের হাতায় শীতলের র*ক্ত লেগে আছে। হিম এখনও বুঝে উঠতে পারছে না কি হয়েছিল একটি আগে।

শীতলের কন্ঠ শুনে হিম অবাক চোখে তাকায় তার দিকে। চোখের সামনে নিজের ভালবাসাকে র*ক্ত ব*মি করে অজ্ঞান হতে দেখে সে। হিম তাড়াতাড়ি করে শীতল কে সাদাতের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। আর সাদাত কে এর পর থেকে সে দেখতে পায়নি, হয়তো হিম তাকে দেখতেও চায় নি। এসব কিছুর ব্যবস্থা ফয়সাল করেছে। হিম কে বসিয়ে রেখে সে বর্তমানে ছুটছে ডাক্তারের বলা ওষুধ কিনতে।

ওটি থেকে ডাক্তার বেরিয়ে আসলে হিম তাড়াতাড়ি করে তাদের কাছে যায়।

– ডাক্তার, ও কেমন আছে? আমাকে ছেড়ে চলে যায় নি তো। বলুন না চুপ করে আছেন কেনো? আর কিছু হলে কিন্তু আপনারাও বাঁচ*তে পারবেন না।

হিমের এমন কথায় ডাক্তারদের ঘাম ছুটে যায়। একজন ডাক্তার পরিস্থিতি সামাল দিতে বলে,

– মিস্টার হিম, শান্ত হোন । আপনার স্ত্রী সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন এখন। প্রথমে যেভাবে ব্লি*ডিং হচ্ছিল আমরা তো ভয় পেয়ে গেছিলাম যে উনার কিছু হয়ে না যায়। কিন্তু আজকে আমাদের সিনিয়র ডাক্তার স্বপন ঘোষ, উনি বাঁচিয়েছেন আপনার স্ত্রী কে।

– হেলো মিস্টার হিম, আমি স্বপন ঘোষ।

– স্বপন ঘোষ নাকি স্বপ্ন*দোষ, স্বপ্ন*দোষই ঠিক আছে। স্বপ্ন*দোষ আংকেল, আমার স্ত্রী কি কথা বলতে পারবে ?

কলিগ দের সামনে নিজের নামের এতটা বিকৃতি শুনে স্বপনের মুখ লজ্জায় লাল হয়ে উঠে। কলিগদের মধ্যে একজন মহিলা ডাক্তার ও উপস্থিত ছিলেন, তিনি তো হেসেই যাচ্ছেন। কি লজ্জার ব্যাপার!! শেষে কিনা হাঁটুর বয়সি এক ছেলের দ্বারা মহিলা কলিগের সামনে বেজ্জতি!!!

– আমি স্বপন ঘোষ, বাবা। ঠিক ভাবে উচ্চারণ করো।

– আরে রাখেন আপনি আপনার উচ্চারণ। আগে বলুন আমার স্ত্রী কি আগের মতো কথা বলতে পারবে?

– হে পারবে। তবে কয়েকটা দিন ওকে বেশি কথা বলতে দিবেন না। ও উত্তেজিত হয় এমন কিছু বলবেন না। আর গোলার ক্ষ*ত শুকালে সব আগের মত ঠিক হয়ে যাবে। কথাও বলতে পারবে।

_______________________________________

নীরব হাইওয়ের মাঝখান দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে সাদাত। দেখেই বোঝা যাচ্ছে উদাসীন তার তার মন।।এক মুহূর্তে সে ধপ করে রাস্তার ওপর বসে পড়ে। রাতের কালো আকাশের দিকে চায় সে। চোখে বেদনার ছাপ আর মুখে করু*ন হাসি।

– হিম তোর কাছে এতটা গুরুত্বপূর্ণ শীত। আর আমি , আমি কেও না তোর? ওর জন্য আজ তুই প্রথম বারের মতো কথা বলার চেষ্টা করেছিস, বলতেও পেরেছিস। আর আমি যে তোকে কতবার জোর করেছি কথা বোলানোর জন্য, কই তখন তো পাত্তাও দিস নি আমাকে। আজ হিমের কিছু হয়ে যাবে ভেবে মৃত্যু*কেও ভয় করলি না। কেনো আমাকে এভাবে ভালবাসিস নাই? আমিও যে তোর ভালবাসা পাওয়ার জন্য আকুল এক আ*ত্মা। কেনো বাসিস নি আমায় ভালো?

সাদাত চিৎকার দিয়ে কাদতেঁ থাকে। ঠিক সেই মুহূর্তে তার পিছন থেকে এক মেয়েলি কন্ঠ ভেসে আসে।

– এই যে ভাইয়া ঠিক আছেন? রাত বিরাতে মাঝরাস্তায় বসে কাদছেন কেনো? দেখে তো ভদ্র ঘরের ছেলেই মনে হচ্ছে।

সমাপ্ত