অস্তরাগের কলি পর্ব-০১

0
1046

#অস্তরাগের_কলি
#সঞ্চারী_চ্যাটার্জী
#পর্ব_এক
-সৃজি?
-বলো?
-তুমি কি তোমার সিদ্ধান্তে স্থির হয়ে আছো?
-হ‍‍্যাঁ।
-এছাড়া কি উপায় নেই?
-না..
-কোনো প্ল‍্যান বি নেই?
-না প্ল‍্যান এ ও ছিল না। এটাই আমার ফাইনাল ডিসিশন।
-সৃজি, এটা সিনেমা নয়, কঠোর বাস্তব। তাই তোমার এই সিদ্ধান্ত যে যথাযথ তা হলফ করে বলতে পারছি না। হয়তো দুজনে আরো সমস্যায় পড়ব। হয়তো করুণ পরিণতি নেমে আসবে আমাদের জীবনে।
কঠিন মুখে বলল নির্ঝর।
-করুণ পরিণতি! তুমি কি পাকাপাকি ভাবে ছাড়াছাড়ির কথা বলছো?
উত্তর না দিয়ে অন‍্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল নির্ঝর।
পাশাপাশি পার্কের বেঞ্চে বসেছিল সৃজিতা-নির্ঝর। নির্ঝরের বাম হাতটা নিজের কোলে টেনে মুষ্ঠিবদ্ধ করে সৃজিতা বলল,
-নির্ঝর তুমি পারবে তো আমাকে অন‍্যের হয়ে যেতে দেখতে?
-না পারবো না, তবে তোমার সিদ্ধান্তটাও সঠিক নয়। এতেও আমার মত নেই..
-ঐ যে বল্লাম। এটাই আমার সিদ্ধান্ত। অনেক ভেবেচিন্তে আমি এই রাস্তাটা পছন্দ করেছি।
-জীবনটা এত সহজ নয় সৃজি, যে তোমার এই সিদ্ধান্তে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।
-হয়তো হবে না, আমি তো তোমার সঙ্গে থাকতে পারব। এটাও তো অনেক..
-আজকের দিনে কেউ পালিয়ে এই ভাবে বিয়ে করে?
নির্ঝরের গলায় ব‍্যাঙ্গ।
-আমাকে কি তোমার বছর আঠারোর মেয়ে মনে হয়? এই ভাবে বিয়ে করতে আমারো কি খুব ভালো লাগবে? শুধুমাত্র ঐ মহিলাকে শিক্ষা দিতে এটা করছি।
-ধর, আমরা বিয়ে করলাম। তারপরেও কি উনি আমাদের সম্পর্ক মেনে নেবেন?
-আলবাত নেবে..হ‍্যাঁ হয়তো প্রথম প্রথম মেনে নেবে না। এক, দুই মাস গেলেই দেখবে মন গলবে।
বলার সময় গলায় তেমন জোর পেল না সৃজিতা।
-আমি কিন্তু বারো হাজারের চাকরি করি। বাড়িতে মা..
-হ‍্যাঁ বাড়িতে বিধবা মা, বাথরুমটা ঠিকঠাক নয়। বর্ষাকালে বেশি বৃষ্টি হলে ছাদ থেকে জল পড়ে..তাই তো! শুনে শুনে আমার কান পচে গেল নির্ঝর।
-এটাই বাস্তব..
-আচ্ছা এটাই তাহলে বাস্তব। ঠিক আছে, আমার জন‍্য ডক্টর ইন্দ্রনীলই ঠিক আছে..
বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালো সৃজিতা।
ওকে হাত ধরে টেনে আবার বেঞ্চে বসালো নির্ঝর।
-এই দেখো আবার রাগ দেখাচ্ছে..তুমি মানিয়ে নিতে পারবে তো?
-পারবো..
-চোখে চোখে রেখে বলো।
চোখ তুলল সৃজিতা।
-আমরা ভালো থাকবো নির্ঝর।
-বেশ শুভস‍্য শীঘ্রম্ হোক..এক সপ্তাহের মধ‍্যে আমরা বিয়ে করবো।
-না কালকেই..
কাল!?
-আর দেরি করা সম্ভব নয়। ঐ মহিলা আমাদের সম্পর্কের আঁচ পেয়েছে। এবার শতাব্দীর গতিতে এগোবেন উনি। আমরা যদি কালকের মধ‍্যে বিয়ে না করি তাহলে আমি হয়তো উল্কাপাতের মতন হারিয়ে যাব। কিন্তু আমিও সৃজিতা সান‍্যাল, হৈমপ্রভা সান‍্যালের কাছে হারবো না। আমিও রকেটের গতিকে অনুসরণ করবো।
সৃজিতার বলার ধরণে দুশ্চিন্তার মধ‍্যেও ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠল নির্ঝরের। সাথে সাথেই ভবিষ্যতের কথা মস্তিষ্কে জাঁকিয়ে বসল। মুহুর্তেই হাসি মিলিয়ে গেল। কি কুক্ষণে যে সৃজিতাকে মনে অধিষ্ঠিত করেছিল কি জানি..
-অই..হলো তো! আবার কি ভাবছে ছেলেটা..
-সৃজিতা আরো একবার তোমার মায়ের সঙ্গে কথা বললে ভালো হত না?
-নির্ঝর তুমি এখন পঁচিশ, আমিও তাই..আমার বাড়িতে অন্তত‍ বছর আঠাশ বা ত্রিশের আগে বিয়ের কথা উঠাতো না। কোনোক্রমে আমাদের সম্পর্কটা মা জানতে পেরেছে। সেদিন সেই কারণে আমাকে ডেকে পাঠালো। তোমার বায়োডাটা নিল। আমি জানতাম হৈমপ্রভা সান‍্যাল সহজে মানবে না। তবে আমার জন‍্য পাত্র খুঁজতে উদ‍্যোগী হবে তা কে জানত!
ঠোঁট উল্টে বলল সৃজিতা।
প্রেমিকার অভিমুখে তাকালো নির্ঝর। বিখ‍্যাত শিল্পপতির মেয়ে সৃজিতা। প্রথম দেখার দিনটা আজও চোখে ভাসে। সৃজিতা ছিল উচ্ছ্বল ঝর্ণার মতন, কলেজে প্রথম দিনই সবার সঙ্গে যেচে আলাপ সারছিল। নির্ঝরের দিকেও হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। পড়াকু নির্ঝর একটু হকচকিয়ে গিয়েছিল। প্রথম দিনেই এই ভাবে কোনো মেয়ে বন্ধুত্বের হাত বাড়াতে পারে?!
-এই আবার ফ্ল‍্যাশব‍্যাকে চলে গেছো নাকি?
-না না..বলো।
-কাল তাহলে..
-হ‍্যাঁ কাল আমাদের বিয়ে হচ্ছে।
সৃজিতার কথার শেষ করার আগেই বলে উঠল নির্ঝর।
সৃজিতার ঠোঁটে হাসি ফুটলেও, চোখের কোণে জল।
-চল আজকেই ম‍্যারেজ রেজেস্টির অ‍্যাপলিকেশনটাও দিয়ে আসি। কোর্ট ম‍্যারেজটা সহজে কেউ ভাঙতে পারবে না।
-একদম, হৈমপ্রভা দেবীও তখন আইন দেখাতে পারবে না।
***
সদ‍্য সিঁথি রাঙানো,লাল বেনারসি পরিহিত সৃজিতাকে হাঁ করে দেখছিল নির্ঝর। সেই টকটকে লাল রঙ সিঁথিতে পরতেই এক অন‍্য রূপে আবির্ভূত হয়েছে সৃজিতা। দামাল, চঞ্চল মেয়েটাকে ধীর, স্থির দেখাচ্ছে। যেন সদ‍্য জন্মানো লজ্জাবতী লতা। সামান্য ছোঁয়া স্বরূপ আহ্বানে লজ্জা পাবে।
-এই এখন এত হাঁ করে দেখতে হবে না। চোখে হার্ট আট‍্যাক হয়ে যাবে।
দুজনের কমন ফ্রেন্ড বিথী বলে উঠল।
জনা চারেক বন্ধু মন্দিরে ওদের সঙ্গে উপস্থিত হয়েছিল। ওদের তত্ত্বাবধানে চার হাত এক হল। সাধারণ পোশাকে বিয়ে সারতে চেয়েছিল সৃজিতা। কথা শোনেনি নির্ঝর। দোকান থেকে সর্বনিম্ন দামে লাল বেনারসি কিনে এনেছে। তাতেই খুশি সেই মেয়ে..
বিয়ের পর বন্ধুদের নিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে ক‍্যাব বুক করল নির্ঝর।
-কি প্রয়োজন ঐ বাড়িতে যাওয়ার, চলো না তোমার বাড়ি যাই।
-কেন সৃজি, প্ল‍্যানমাফিক তোমাদের বাড়িতে যাওয়ার তো কথা ছিল। তুমি বলেছিলে ফোনে না, স্বশরীরে জোড়ে উপস্থিত হয়ে আমাদের বিয়ের খবর জানাবে।
-সে তখন বলেছিলাম। এখন প্ল‍্যান চেঞ্জ করছি। এই চলো না তোমার কোনো রিলেটিভের বাড়িতে কিছুদিন গিয়ে থাকি।
-কেনো ভয় পাচ্ছো তুমি?
-না আসলে মা যদি…
বলা শেষ হল না, তার আগে নির্ঝরের ফোন বেজে উঠল।
নির্ধারিত সময়ে ক‍্যাব চলে এল। বন্ধুদের বিদায় জানিয়ে গাড়িতে উঠল ওরা। গাড়ি চলতে শুরু করল সান‍্যাল ম‍্যানসনের উদ্দেশ্যে..
চলবে: