#অ্যাডিক্টেড_টু_ইউ
#অরনিশা_সাথী
#পর্ব_২৫
বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়ে এবার বিদায়ের পালা। এতক্ষণের হাসিখুশি পরিবেশটায় এখন অন্ধকার গুমোট হয়ে আছে। হাসিখুশি পরিবেশটা নিমিষেই নিস্তব্ধতায় পরিনত হয়েছে। মাইশা পাপা আর মামনিকে জড়িয়ে চিৎকার করে কাঁদছে। একমাত্র মেয়েকে বিদায় দিতে পাপা আর মামনির বুকটাও ফেঁটে যাচ্ছে। দুজনেই কাঁদছে মেয়েকে ধরে৷ মাইশা একে একে সবার থেকে বিদায় নিয়ে তিন্নির সামনে এসে দাঁড়ায়। তিন্নি মাইশাকে জাপ্টে ধরে কেঁদে দেয়৷ ছোটবেলা থেকে এই অব্দি দুজনে একইসাথে বড় হয়েছে একসাথেই থেকেছে। সবার থেকে বিদায় নিয়ে মাইশা আশেপাশে চোখ বুলাচ্ছে। স্পষ্ট বুঝতে পারলাম মেয়েটা ওর ভাইকে খুঁজছে। এই মূহুর্তে আদ্র’কে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। মাইশা আমার কাছে এসে দাঁড়িয়ে কান্নারত কন্ঠে বললো,
–“ভা্ ভাইয়া কোথায়?”
–“ঘরে। ডেকেছি অনেকবার তোমার ভাইয়া এখানে আসতে চাইছে না।”
মাইশা আর এক মূহুর্ত না দাঁড়িয়ে আদ্র’র ঘরের দিকে পা বাড়ালো। মাইশার পেছন পেছন আমিও গেলাম। দরজার সামনে যেতেই আবারো দুই ভাই-বোনের আবেগঘন মূহুর্ত দেখে চোখের কোনে পানি জমলো। মাইশা কাঁদতে কাঁদতে বলছে,
–“আমাকে ক্ষমা করে দিও ভাইয়া, না বুঝে বড্ড কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তোমায়।”
–“কাঁদিস না পাগলি, আমিও তো তোকে কম কষ্ট দেইনি৷ ও বাড়িতে ভালোভাবে থাকবি, কেউ যাতে খারাপ না বলতে পারে আমার বোনকে কেমন? আর ইরান যদি কিছু বলে সরাসরি আমাকে জানাবি তুই।”
মাইশা সম্মতি জানিয়ে আদ্র’র শার্ট খামচে ধরে ওর বুকে মাথা দিয়ে কাঁদছে। আদ্রও এবার আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না৷ বোনকে নিজের সাথে জড়িয়ে কেঁদে দিলো এবার৷ দু ভাই-বোনের কান্না এবার থামানো দরকার ওদিকে ইরান ভাইয়াও মাইশাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। তাই দেরী না করে কাছে গেলাম। আদ্র’র কাঁধে হাত রাখতেই উনি মাইশাকে ছেড়ে দিয়ে চোখের পানি মুছে নিলেন। আমি মুচকি হেসে বললাম,
–“চলুন, মাইশাকে ইরান ভাইয়ার হাতে তুলে দিতে হবে তো নাকি? রাত হচ্ছে অনেক, আবার বাড়ি ফিরবে ওরা।”
আমার কথায় আদ্র মেকি হেসে মাইশার হাত ধরেই বাইরে বেরিয়ে এলো। ইরানের হাতে মাইশাকে তুলে দিয়ে বললো,
–“অনেক যত্নে বড় করেছি আমার বোনটাকে। আশা রাখছি কোনো কষ্ট আমার বোনকে ছুঁতে পারবে না। এতদিন ও আমাদের দায়িত্বে ছিলো, আজ থেকে ও তোমার দায়িত্বে। তোমাকে বড্ড ভালোবাসে আমার বোনটা। ভালো রেখো ওকে।”
ইরান ভাইয়া আদ্র’র কাঁধে হাত রেখে বললো,
–“চিন্তা করো না। আমি জানি তোমার বোন আমায় কতটা ভালোবাসে। আমিও ভীষণ ভালোবাসি তোমার বোনকে। তুমি নিশ্চিন্তে থাকো, তোমার বোনকে কোনো কষ্ট ছুঁতে পারবে না। খুব ভালো রাখবো ওকে আমি।”
মাইশা ডুঁকরে কেঁদে উঠলো। আমি গিয়ে মাইশাকে আগলে নিলাম নিজের সাথে। মাইশা আমার বুকে মাথা রেখে কাঁদছে। আমি মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম। অতিরিক্ত কান্নার ফলে একসময় সেন্স হারিয়ে ফেলে মাইশা৷ আদ্র মাইশাকে কোলে তুলে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে এলো৷ আর মাইশার যাতে একা ফিল না হয় সেজন্য সাথে তিন্নি আর আমার কাজিনমহলের সকলকেও পাঠানো হলো। আমাকে সবাই যাওয়ার জন্য জোড়াজুড়ি করেছিলো কিন্তু আদ্র’র এক কথা আমি কোত্থাও যেতে পারবো না। আদ্র’র মুখের উপর আমিও আর কিছু বলিনি।
–
ঘড়ির কাটায় পাক্কা সাড়ে এগারোটা বাজে। সারা বাড়ি খুঁজে কোত্থাও আদ্রকে পেলাম না। এখন শুধু ছাদটা খোঁজা বাকী। নিশ্চয়ই ছাদে গিয়ে মন খারাপ করে বসে আছে মাইশুর জন্য। কালকেই কি চোটপাট করলেন মাইশা ইরানের হাত ধরে বাড়ি থেকে পালিয়েছে বলে। অথচ দেখো আজ বোনকে বিদায় দিয়ে এখন মন খারাপ করে কোন কোনায় যেন চুপটি করে বসে আছে। আমি সিউর এই মূহুর্তে উনি ছাদেই আছেন। তাই চটপট দুই মগ কফি করে নিলাম। আর রুমে গিয়ে উনার গিটারটাও সঙ্গে নিয়ে নিলাম। এই মূহুর্তে উনার মন ভালো করার একটাই উপায়, আর সেটা হলো গান করা।
আমার ভাবনাই সত্যি হলো। আদ্র ছাদের এক কোনে রেলিঙের উপর আনমনে বসে আছে। আমি গিয়ে কফির মগ দুটো রেলিঙের উপর রেখে পিঠ থেকে গিটারটা নামিয়ে নিলাম। আমাকে দেখে আদ্র মেকি হেসে বললো,
–“এই শরীরে তুমি আবার ছাদে এলে কেন রুহি? ঠান্ডা পড়েছে কত দেখেছো? আবারো যদি শরীর খারাপটা বেড়ে যায়?”
–“আহ! এত উতলা হচ্ছেন কেন? সামান্য একটু জ্বর ছিলো গতরাতে। এখন তো শরীর ঠান্ডা।”
–“হয়েছে আজ সারাদিন অনেক দৌড়ঝাঁপ করেছো। এখন আমার কাছে এসো তো।”
কথাটা বলেই আদ্র আমাকে টেনে উনার কাছে নিলেন। আদ্র তখনো রেলিঙে বসে ছিলো। আমি উনার বুকের সাথে আমার পিঠ লাগিয়ে বসলাম। উনি পেছন থেকে আমার দু কাঁধের উপর দিয়ে হাত দিয়ে আমার দুহাত মুঠো করে ধরেছে। কয়েক সেকেন্ড এভাবে থাকার পর আমি সরে গিয়ে কফির মগে এক চুমুক দিয়ে উনার হাতে মগটা দিলাম। উনিও আমার ঠোঁট ছোঁয়ানো স্থানেই ঠোঁট বসালেন। উনার কান্ডে লাজুক হাসলাম আমি। অতঃপর আমিও কফির মগ হাতে তুলে নিলাম খাওয়ার জন্য। কফি শেষ করার পর বেশ ক্ষানিকটা সময় নিরবতা চলছিলো। আমিই নিরবতা ভেঙে উনার দিকে গিটার এগিয়ে দিয়ে বললাম,
–“একটা গান শোনাবেন প্লিজ?”
আমার এহেন কথায় আদ্র পূর্ণদৃষ্টিতে তাকালেন আমার দিকে। তারপর গিটার হাতে নিয়ে বাঁকা হেসে বললো,
–“অবশ্যই শোনাতে পারি। তবে আমি গিটারে আওয়াজ তুলছি প্রথম গানটা তুমি ধরো।”
–“আ্ আমি?”
–“হ্যাঁ তুমি। কেন গাইবে না?”
–“তেমন ভাবে পারি না।”
–“যেমন পারো তেমন গাইলেই চলবে৷ তবে হ্যাঁ তুমি না গাইলে আমিও গান শোনাবো না।”
অগ্যতা উনার কথায় রাজি হতে হলো আমায়। উনি গিটারে টুংটাং আওয়াজ তুলতেই আমি গাইতে শুরু করলাম,
“কিছু কথার পিঠে কথা, তুমি ছুঁয়ে দিলে মুখরতা….
হাসি বিনিময়ে চোখে চোখে, মনে মনে রয় ব্যাকুলতা___”
আমি এইটুকু গাইতেই আদ্র গেয়ে উঠলেন,
“আমায় ডেকো একা বিকেলে, কখনো কোনো ব্যাথা পেলে__”
আবার আমি গেয়ে উঠলাম,
“আমায় রেখো প্রিয় প্রহরে, যখনই মন কেমন করে।”
এবার দুজনে একসাথেই গেয়ে উঠলাম,
“কোনো এক রুপ-কথার জগতে, তুমি তো এসেছো আমারই হতে….
কোনো এক রুপ-কথার জগতে, তুমি চিরসাথী আমার জীবনে___”
–
রাত প্রায় দুটো নাগাদ বাজে৷ এতটা সময় দুজনে একইভাবে ছাদে দাঁড়িয়ে আছি। ভীষণ ভালো লাগছে আজ এভাবে ছাদে কাটাতে। ইচ্ছে ছিলো সারাটা রাত আজ এভাবেই কাটাবো। কিন্তু আমার সেই ইচ্ছের সে গুড়ে বালি, আদ্র আমায় আচমকা কোলে তুলে নিয়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নামতে লাগলো। প্রথমে বেশ ক’বার কোল থেকে নামাতে বললেও লোকটা আমার কোনো কথাই শুনেনি। তাই ক্লান্ত হয়ে শেষমেশ আমিই শান্ত হয়ে যাই। আদ্র আমাকে কোলে করে এনে সোজা বিছানায় শুইয়ে দেয়৷ তারপর রুমের লাইট অফ করে দরজা আটকে বিছানার দিকে এগিয়ে এলেন। বিছানার কাছাকাছি এসে একটানে গায়ে জড়ানো শার্ট-টা খুলে ছুঁড়ে ফেললেন। অতঃপর এগিয়ে এলেন আমার দিকে। উনি যতটা কাছে এগিয়ে আসছেন আমার হার্টবিট তত দ্রুতই চলছে। লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছি আমি। বিয়ের এতগুলো মাস কেটে যাওয়ার পরও উনি কাছে এলেই আমি লজ্জায় কুঁকড়ে যাই। আদ্র একটানে আমার শাড়ি খুলে ছুড়ে মারলো ফ্লোরে। তারপর আমার উপরে উঠে গেলো। বাঁকা হেসে বললো,
–“বিয়ের এতগুলো মাসেও তোমার লজ্জা ভাঙাতে পারলাম না আমি? বড্ড আফসোস এই জিনিসটা নিয়ে৷”
লজ্জায় মুখ লুকালাম উনার বুকে। আদ্র আমার ঘাড়ে শব্দ করে চুমু খেয়ে বললো,
–“রুহি?”
–“হু___”
–“আই ওয়ান্ট এ লিটেল রুহি।”
আদ্র’র এমন কথায় আমার ভিতর শুদ্ধ কেঁপে উঠলো। কি বললেন উনি? কি চাই উনার? কাঁপা কাঁপা স্বরে জিজ্ঞেস করলাম,
–“ক্ কি চাই আপনার?”
আদ্র’র সোজাসাপটা উত্তর,
–“লিটেল রুহি।”
আমি কিছু না বলে লজ্জায় মাথা নুইয়ে নিলাম। আদ্র আমার বন্ধ চোখে চুমু খেয়ে বললো,
–“ডোন্ট ইউ ওয়ান্ট এ বেবি এট দিস মোমেন্ট?”
আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম। আদ্র আবারো বললো,
–“তুমি না চাইলে এ বিষয়ে আর কথা আগাবো না আমি। তুমি চাইলেই বেবি নিবো আমরা নয়তো না।”
–“চ্ চাই আমি।”
কথাটা কোনমতে বলেই আবারো উনার বুকে মুখ লুকালাম আমি। আদ্র যে প্রচন্ড খুশি হয়েছে তা বেশ বুঝতে পারছি আমি৷ আদ্র আমার পিঠে হাত দিয়ে ব্লাউজের ফিতে খুলে ফেললো। তারপর ঘাড়ে মুখ ডুবালেন আদ্র। উনার প্রতিটা স্পর্শে কেঁপে উঠছি আমি। আদ্র’র স্পর্শ ধীরে ধীরে গভীর থেকে গভীর হচ্ছে। আর উনার সেই ভালোবাসাময় স্পর্শগুলো গভীর ভাবে অনুভব করছি আমি।
চলবে~
#অ্যাডিক্টেড_টু_ইউ
#অরনিশা_সাথী
#পর্ব_২৬
এর মাঝে আরো কয়েকটা মাস পেরিয়েছে। ভার্সিটি, ফ্রেন্ড আর আদ্র সবকিছু মিলিয়ে ভালোই যাচ্ছে দিনকাল। ঘরোয়া ভাবেই রুপ ভাইয়া আর ফাইজার বিয়ে হইছে। নিশাদ ভাইয়া আর হিমাদ্রির সম্পর্কটা আগের থেকে আরো একধাপ এগিয়েছে। তবে হ্যাঁ এখনো অব্দি তিন্নি আর ফারাবী ভাইয়ার জীবনেই নতুন কারো আগমন ঘটেনি। ফারাবী ভাইয়া ভীষণ খুতখতে। সেজন্যই বোধহয় এখনো কাউকে মনে ধরেনি৷ অন্যদিকে তিন্নি বোধহয় আদ্র’র কথা রাখতেই এসব বিষয়ে এখনো কিছু ভাবেনি৷ কখনো কোনো সম্পর্কে জড়ায়নি। মাইশাও ইরান ভাইয়ার সঙ্গে বেশ ভালোই আছে। রুশাপু আর শান ভাইয়াও প্যারেন্টস হয়েছে। তিন মাসের ফুটফুটে একটা ছেলে বাবু হয়েছে তাদের। নাম রুশান। পরিবারে প্রথম বাচ্চা রুশানকে পেয়ে সকলেই ভীষণ খুশি।
ইতিমধ্যেই আরো একটা গুড নিউজ এসেছে। আপিও প্রেগন্যান্ট। রুশাপু মা হয়েছে আপি প্রেগন্যান্ট, সব মিলিয়ে আমার মনটা খারাপ হয়ে আছে। আমরাও তো বেবি নেওয়ার চেষ্টা করছি তাহলে আমি বেবি কনসিভ করছি না কেন? এইসব নিয়ে বেশ মন খারাপেই দিন কাটছে এখন আমার। ব্যাপারটা বোধহয় আদ্রও বুঝতে পেরেছেন৷ তাই আজ ও অফিস যায়নি৷ সময় দিচ্ছে আমাকে। দুপুরের খাবার খেয়ে সব কিছু গুছিয়ে রুমে আসতেই দেখলাম আদ্র আধশোয়া হয়ে ফোন ঘাটছে। আমি দরজাটা আটকে দিয়ে উনার পাশে গিয়ে বসতেই উনি ঠিক ভাবে বসলেন। আমাকে উনার বুকে টেনে নিয়ে বললেন,
–“মন খারাপ?”
–“উঁহু।”
–“মিথ্যে বলছো কেন রুহি? নীলাদ্রির বেবি হবে কথাটা শোনার পর থেকেই তোমার মন খারাপ ভাবটা বেড়ে গেছে৷ সারাদিন উদাসীন থাকো। অন্যমনস্ক থাকো প্রায়শই। নোটিশ করেছি তো আমি।”
আমি কিছু না বলে গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরলাম আদ্রকে। আদ্র আমার চুলে বিলি কাটতে কাটতে বললেন,
–“চিন্তা করো না বউ, আল্লাহ চাইলে আমাদেরও বেবি হবে।”
আমি মুখ তুলে আদ্র’র দিকে তাকিয়ে বললাম,
–“আল্লাহ যদি না চান আদ্র?”
আদ্র চোখ রাঙিয়ে তাকালো আমার দিকে। রুক্ষ স্বরেই বললো,
–“কিসব যা-তা বলছো রুহি? এমন কিচ্ছু হবে না দেইখো।”
আমার মন মানলো না উনার কথায়৷ কয়েকটা মাস যাবত বেবি নেওয়ার ট্রাই করছি তো, তাহলে আল্লাহ মুখ তুলে চাইছেন না কেন? আদ্র আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
–“এই নিয়ে একদম মন খারাপ করবে না পাগলী। উল্টাপাল্টা চিন্তা করে একদম শরীর খারাপ করবে না ওকে?”
এবারেও নিশ্চুপ রইলাম আমি৷ উনাকে আরো গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে বললাম,
–“আচ্ছা, আমারই যদি কোনো প্রবলেম থেকে থাকে? আমি যদি কখনো বেবি কনসিভ করতে না পারি তখন? তখন কি আপনি আমায় ছেড়ে যাবেন?”
আমার কথায় আদ্র’র রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। আমাকে উনার থেকে ছাড়িয়ে রাগান্বিত স্বরে বললেন,
–“প্রবলেমটা যদি আমার হয়? যদি আমার মাঝেই সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা না থাকে? তখন কি তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে?”
আমি আবারো আদ্রকে জাপ্টে ধরে বললাম,
–“এইসব কি কথা হ্যাঁ? এ ধরনের কথা কক্ষনো বলবেন না আপনি। আমি আমৃত্যু আপনাকে ছাড়বো না।”
–“তাহলে তুমি এইসব কথা কিভাবে মাথায় আনতে পারো রুহি? একটা বাচ্চা দিতে না পারলেই আমি তোমায় ছেড়ে দিবো? আমার ভালোবাসা কি তোমার এতই সস্তা মনে হয়?”
আদ্র’র গালে চুমু খেয়ে বললাম,
–“স্যরি, আর এমন বলবো না।”
আদ্র এবার রাগ ভুলে আমাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো। কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে বললো,
–“ভালোবাসি বউ।”
কথাটা বলে উনি বেশ কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থাকলেন। হয়তো বা আমার মুখ থেকেও ভালোবাসি শুনতে চেয়েছিলো তিনি। বিয়ের বছর পেরোতে আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকী আছে। এখনো অব্দি তাকে নিজ মুখে ভালোবাসি কথাটা বলিনি আমি। আর উনিও জোর করেনি কখনো আমায়। আমি উনার গলায় হালকা করে কামোড় দিলাম। তারপর উনাকে অবাক করে দিয়ে বুকে চুমু খেয়ে ফিসফিস করে বললাম,
–“আমিও ভালোবাসি।”
আমার মুখ থেকে উচ্চারণ করা এই দুটো শব্দতেই আদ্র’র মুখে হাসি ফুটে উঠলো। হেসেই আমাকে গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লেন।
–
কাল আমাদের প্রথম বিবাহবার্ষিকী। আদ্র ঠিক করেছে কাল সারাটা দিন বাসায় আমার সাথে কাটাবে৷ অফিস থেকে ছুটিও নিয়েছে সেই মোতাবেক। আদ্র আজ অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরেছে। বাসায় ফিরে আমাদের সাথেই লাঞ্চ করেছে। আজ অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফেরার কারন নাকি আমাদের নিয়ে শপিংয়ে যাবেন। আদ্র’র কথামতো আমি আর তিন্নি শপিংয়ে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি। মাইশা আর ইরান ভাইয়া সরাসরি শপিংমলেই মিট করবেন আমাদের সাথে।
পুরো শপিংমল ঘুরেও তেমন কিছুই পছন্দ হচ্ছে না। তিন্নি আর মাইশা অন্যদিকটা দেখছে। আর ওদের পেছন পেছন ইরান ভাইয়া ঘুরছে। এদিকে আমিও প্রায় অনেকগুলো দোকান ঘুরে ক্লান্ত হয়ে গেলাম। অ/স্থি/র লাগছে ভীষণ। শেষে ক্লান্ত হয়ে আদ্র’র বাহু ধরে দাঁড়িয়ে পড়লাম। আদ্র আমার গালে হাত রেখে বললো,
–“কি হইছে? খারাপ লাগছে?”
আমার যে সত্যিই খারাপ লাগছে সেটা বললাম না উনাকে। বললেই হু/লু/স্থু/ল কান্ড বাধিয়ে ফেলবেন। আমি বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে বললাম,
–“ধুর! কিছুই পছন্দ হচ্ছে না আমার।”
আদ্র মৃদু হেসে বললো,
–“এই ব্যাপার? আচ্ছা আমার সাথে চলো।”
কথাটা বলেই আমার হাত ধরে উনি অন্যদিকে হাটা ধরলেন। মিনিট পাঁচেক হাটার পরই কাঙ্ক্ষিত স্থানে এসে পৌঁছালেন। তাকিয়ে দেখলাম লোকটা আমাকে বেনারসি পল্লিতে নিয়ে এসেছেন। অবাক চোখে চাইলাম উনার দিকে। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,
–“বেনারসি পল্লিতে আনলেন কেন?”
আদ্র আমার হাত ধরে সামনে এগোতে এগোতেই বললো,
–“বেনারসি পল্লিতে অনেক ভালো ভালো শাড়ি পাবে। আর শাড়িগুলো পছন্দও হবে তোমার।”
উনার কথার প্রত্যুত্তরে আমি আর কিছু বললাম না। চুপচাপ উনার সাথে এগোতে লাগলাম। আদ্র আমার হাত ধরেই একটা দোকানে ঢুকে পড়লো। দোকানী বেশ কিছু শাড়ি দেখাচ্ছিলেন হঠাৎ করেই একটা শাড়িতে চোখ আটকে যায়৷ গোলাপি রঙের অসাধারণ একটা কাতান শাড়ি। আদ্র আর আমি দুজনে একসাথেই শাড়িটাতে হাত দিলাম। দুজনের পছন্দ মিলে যাওয়াতে দুজনেই দুজনের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললাম। আদ্র শাড়িটা প্যাক করে দিতে বললো। সাথে আরো দুটো শাড়ি নিলো আমার জন্য। লাস্টে আম্মু, মামনি এবং আব্বু আর পাপার জন্যও উনার পছন্দমতো শাড়ি পাঞ্জাবী কিনে নিলেন। নিজের জন্য কিছু নিতে চাইছিলেন না। আমিই এক প্রকার জোর করে উনার জন্য একটা পাঞ্জাবি একটা শার্ট এবং দুটো টি-শার্ট নিই।
নাম করা রেস্তোরাঁর এক কোনার টেবিলে বসে আছি আমরা পাঁচজনে। খাবারের জন্য ওয়েট করছি। একেবারে ডিনার সেরেই বাড়ি ফিরবো আমরা। মাইশা আর ইরান ভাইয়া নিজেদের বাসায় চলে যাবে আজ। আদ্র অবশ্য আজই যেতে বলেছিলো কিন্তু ইরান ভাইয়ার অফিস থাকায় সেটা সম্ভব হচ্ছে না। কাল আধা বেলার অফিস করে বাড়ি ফিরে মাইশাকে নিয়ে আমাদের বাসায় গিয়ে লাঞ্চ করবেন বলে জানিয়েছেন ইরান ভাইয়া। কথা বলার একপর্যায়ে ওয়েটার এসে একে একে খাবার দিয়ে গেলেন। সবার জন্যই সবার পছন্দমতো খাবার অর্ডার করেছেন আদ্র। হঠাৎই রেস্তোরাঁর গেটে চোখ পড়লো। ফারাবী ভাইয়া ফোন কথা বলতে বলতে ভিতরে ঢুকছে। ফর্মাল লুকে আছেন ভাইয়া। তারমানে অফিস থেকেই এখানে এসেছে। আমি আদ্রকে বলে টেবিল ছেড়ে উঠে এলাম। ফারাবী ভাইয়ার সামনে দাঁড়াতেই ভাইয়া প্রথমে চমকালেও পরবর্তীতে নিজেকে সামলে নিয়ে মুচকি হাসলেন। আমার চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বললেন,
–“কিরে বুড়ি এখানে কি করছিস? আদ্র এসেছে? কোথায় ও?”
ফারাবী ভাইয়ার একসাথে এত প্রশ্ন শুনে হাসলাম আমি। তারপর বললাম,
–“তার আগে বলো, তুমি কি করছো এখানে?”
ফারাবী ভাইয়া বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে বললেন,
–“আর বলিস না, এক ফ্রেন্ডের আসার কথা ছিলো। এখন ফোন করে বলছে আসতে পারবে না। মেজাজটাই বিগড়ে গেলো আমার। ভাবলাম এসেই যেহেতু পড়েছি তাহলে একেবারে ডিনার সেরেই যাই।”
আমি হেসে ফারাবী ভাইয়ার হাত ধরে বললাম,
–“খুব ভালো করেছো। এখন চলো আমাদের সাথে ডিনার করবে।”
ফারাবী ভাইয়াকে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই হাত ধরে টেনে আমাদের টেবিলে নিয়ে গেলাম। অতঃপর সবাই একসাথেই ডিনার করতে বসলাম। কয়েক বার খাবার মুখে দেওয়ার পরই গাঁ গুলিয়ে এলো আমার। ভীষণ বমি বমি পাচ্ছে। দ্রুত মুখ চেপে ধরে উঠে ওয়াশরুমের দিকে চলে গেলাম। বেসিনের সামনে দাঁড়িয়েছি অনেকটা সময় হলো। বমি আসছে না। কিন্তু বমি বমি ভাবটা কাটছেও না। আদ্র আমার কাঁধে হাত রেখে বললো,
–“খুব খারাপ লাগছে? এজন্যই বলেছিলাম এতো ভাজাপোড়া, স্ট্রিট ফুড খেও না। দেখলে তো এখন কি অবস্থা? আমার একটা কথাও শুনতে চাও না তুমি।”
আমি চোখমুখে পানির ছিটা দিয়ে টিস্যু দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে উনার দিকে ঘুরে বললাম,
–“এখন কি এজন্য আপনি আমাকে বকাবকি করবেন?”
আমার গোমড়া মুখ দেখে আদ্র কিছুটা মিইয়ে গেলেন। নরম সুরে বললেন,
–“আমার কথা কেন শুনতে চাও না বলো তো? ভীষণ খারাপ লাগছে কি? চলো ডক্টরের কাছে নিয়ে যাই।”
আমি চোখমুখ খিঁচে বললাম,
–“উঁহু, এখন আমি একদম ঠিক আছি।”
আদ্র এক ভ্রু উঁচু করে বললেন,
–“আর ইউ সিউর?”
আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিতেই উনি আমার হাত ধরে বেরিয়ে এলেন। দুজনে আবারো টেবিলে এসে বসেছি। আমরা বসতেই তিন্নি বললো,
–“ভাবী কি হইছে তোমার? শরীর খারাপ লাগছে?”
আমি কিছু বলার আগেই আদ্র সবাইকে আস্বস্ত করে বললেন,
–“অতিরিক্ত ভাজাপোড়া আর স্ট্রিট ফুড খাওয়ার জন্যই এমন হচ্ছে সম্ভবত। চিন্তার কিছু নেই।”
ফারাবী ভাইয়া রাগী চোখে তাকিয়ে বললেন,
–“এত করে বলার পরও কথা কেন শুনিস না তুই? শরীরের কথা ভাববি না? এত ভাজাপোড়া খাওয়া শরীর স্বাস্থ্যের জন্য একদমই ভালো না।”
আমি চোখমুখ খিঁচে বললাম,
–“উফস ভাইয়া, তুমিও এখন উনার মতো বকাঝকা করবে?”
আমার কথা বলার ধরনে সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। তারপর আবারো সবাই খাওয়াতে মনোযোগ দিলো। আমাকে খেতে বলেছিলো সবাই কিন্তু আমি আর খাইনি, তাই সবাই আর বেশি জোরাজোরিও করেনি। খাবার দেখলেই কেমন গাঁ গুলিয়ে যাচ্ছে আমার।
চলবে~