#আঁধারিয়া_অম্বর
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
২৭।
” দাদা ভাই…তুমি আমার কথা বিশ্বাস করছো না??”
চোখে মুখে আশাহত হয়ে চেয়ে রইলো ইজহানের দিকে। ইজহান বলল,
” তোমার কাছে কোনো প্রুফ আছে?”
আয়ানার যেন তার ভাইকে বিশ্বাস করতে পারছেই না। তার ভাই তার কাছে প্রুফ চাইছে? আয়ানার কন্ঠ ধরে এলো, এই মেয়েটা.. এই মেয়েটা তার ভাইকে যাদু করে নিয়েছে একেবারে। এদিকে শ্যামা হতবাক হয়ে চেয়ে আছে ইজহানের দিকে। এই প্রথমবার… এই প্রথমবার ইজহান তার পক্ষ নিলো। শ্যামার ডাগর ডাগর চোখ জোড়া দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। দুঃখের না সুখের। মনের ভিতর দোল খেতে লাগলো আনন্দের।
তখনি আয়ানা বলল,
” দাদা ভাই? আমার মুখের কথা তুমি বিশ্বাস করছো না?”
ইজহান এদিক ওদিক মাথা নাড়লো,
“নো! ”
এবার যেন আয়ানা ভেঙে চুরে গেলো যেন। তখন ইজহান আবার বললো,
” তোমাকে এসব কে বলেছে আয়ানা? তুমি তো তখন ছিলেনা। তোমাকে কি এসব দাদিজান বলেছে?”
গম্ভীর ঠান্ডা এই কন্ঠের সম্পর্কে আয়ানা অবগত। তার ভাই যখন রেগে যায়, তখনি এমন ভাবে কথা বলে। আয়ানা না সূচক মাথা নাড়লো। আর ইজহান ঘাড় কাত করে তার দাদি জানের উদ্দেশ্যে হাক ছাড়লো,
” দাদিজান? আপনাকে কি শ্যামা ধাক্কা দিয়ে ছিলো?”
দাদিজান খানিক চুপ থেকে মাথা নাড়লো, ব্যথাতুর কন্ঠে বলল,
” আমি কাউকে দেখিনি। আমি সিঁড়ি দিয়ে নামার সময়, কেউ একজন দৌঁড়ে আসে, আর তখনি ধাক্কা লাগে। ”
শ্যামা সেই সময় বলল,
” আমি দাদিজানের চিৎকার শুনে নিচে আসি। আমি সত্যি কিছু করিনি!”
আয়ানা কিড়মিড় করে উঠলো,
” তুমি-ই করেছো! ওই সময় তুমি ছাড়া কেউ ছিলো না উপরে!”
শ্যামা নিজেকে ডিফেন করে বলল,
” আমি করিনি, আমি কেন করবো?”
” কারণ তুমি আমাদের পছন্দ করো না।”
তখনি ইজহান বলল,
” কাউকে ভালো করে না যেনে তার সম্পর্কে বলা ঠিক না আয়ানা। না তার উপর দোষ চাপানো ঠিক। আর সেই সময়-তো তুমিও ছিলে না ঘরে, তুমি কিভাবে জানলে? শ্যামা ধাক্কা দিয়েছে।”
আয়ানা এবার বিস্ময়ে বিমুঢ়। এতখন চুপ করে বসে থাকা আরমান এবার বলল,
” ভাইয়া তুমি আয়ানাকে সন্দেহ করছো? ”
“আমি কেন সন্দেহ করবো? আমি শুধু সত্যি জানতে চাইছি!”
আরমান আবার মুখ খুলতে নিলো। তখনি আয়ানা ছোট দাদা ভাইয়েে হাত আটকে বলল,
” বাদ দাও ছোট দাদা ভাই! দাদা ভাই এখন আর আমাদের সেই দাদা ভাই নই। উনি এখন তার স্ত্রীর হয়ে গেছে! আমরা তার কে? যাই হোক, নিপা সেই সময় বাসায় ছিলো। সেই বলেছে। সে নিজের চোখে দেখেছে দাদিজানকে শ্যামা ধাক্কা দিয়েছে!”
শ্যামা এবার চমকে গেলো। সাথে সাথে বলল,
” ও এইটা কিভাবে, ও তো তখন আমার সামনে ছিলো!”
ইজহানের ভ্রুযুগল কুচকে গেলো। আয়ানা এবার তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,
” এবার এটা বলো না.. নিপা মিথ্যা বলছে, এতবছর ধরে আছে আমাদের সাথে। বিপদে আপদে পাশে ছিলো। ওর কথা তো আর ফেলা যাবে না?”
তখনি ইজহান বলল,
” কে সত্যি আর কে মিথ্যা তা না হয় পুলিশের হাতেই ছেড়ে দিবো। কিন্তু তার তুমি শ্যামাকে সরি বলো।”
আদেশ করে বললো আয়ানাকে ইজহান। আয়ানক রাগে ফোঁসফোঁস করে উঠলো এবার,
” কোন ব্যাসিসে দাদা ভাই?”
” ও তোমার ভাবি। তাকে তোমার মারা উচিত হয়নি। সো সে সরি…!”
লাষ্ট কথাটি একটু ধমকে বলল ইজহান। আয়ানা কেঁপে উঠলো ভাইয়ের ধমকে। এই প্রথমবার এই মেয়ের জন্য তার ভাই তার সাথে রুড বিহেভ করলো। আয়ানা জল ভর্তি চোখ নিয়ে, হাত দুটি মুঠ করে কাঠ গলায় বলল,
” সরি।আমার ভাইকে আমার উপর ভরকে এবার…খুশিতো…?”
বলেই কাঁদতে কাঁদতে বেড়িয়ে গেলো আয়ানা। তার পিছন পিছন আরমান-ও দৌড়ে গেলো। যেতে যেতে বলে গেলো,
” ভাই কাজটা ঠিক হলো না। পরে যদি আয়ানা যা বলছে? তা সত্যি হয়? পস্তাবে খুব…!”
শ্যামার এত সবে নিজেকে অপরাধী মনে হলো সবার কথা গুলো গায়ের মাঝে ছুরি দিয়ে কেঁটে ফালা ফালা করে যাচ্ছে। এসব কিছুর জন্য দায়ী সে কাকে করতে পারে? তার কঁপালকে? নাকি তার বাবা-মাকে? কথায় বলে বাবা-মা যা কর্ম করে, তার কারমা সন্তান ভোগ করে। তাহলে কি তাই হচ্ছে তার সাথে? আর সব থেকে বড় কথা… এত কিছুর মাঝে, আজ ইজহান তার জন্য তার পরিবারে সাথে লড়াই করেছে। তার জন্য প্রতিবাত করেছে। তার পাশে দাঁড়িয়ে তার ডিফেন্ডে কথা বলেছে। এর থেকে বড় কি হতে পারে?
ঠিক সে সময় একটি গলা ভেসে এলো শ্যামার কানে। জান্নাত ফিসফিস করে বলল,
” বড়পু তোমার ভাগ্য অনেক ভালো, এমন একটা বর পেয়েছো!”
শ্যামা কিছু বলল না। ভিতরে ভিতরে হাসলো। সত্যি কি তার কঁপাল ভালো? শ্যামার বুক চিঁড়ে দীর্ঘ শ্বাস বেড়িয়ে আসতে চাইলো। ভিতরটা হাহাকার করছে তার। চোখ বুজে নিজেকে শান্ত করতে লাগলো। একটা ঠান্ডা হাত অনুভব করলো শ্যামা তার হাতে উপর। ধীরে ধীরে চোখ খুলে দেখতে পেলো ইজহানের মাদকাসক্ত কালো কুচকুচে চোখ। যে বলছে,
“চিন্তা করো না, আমি আছি তো তোমার সাথে!”
কিছু ঘন্টা পর….
শ্যামা যখন হসপিটাল থেকে অফিসে যাচ্ছিলো। তখনি জান্নাত এসে বলল,
“আপু, আমি হোস্টেলে থাকতে চাই, নয়তো আমরা বান্ধবীরা মিলে রেন্টে বাসা নিতে চাই।”
শ্যামা বোনের এমন কথায় অবাক হলো না। সে জানে, তার বোনের শশুর বাড়িতে থাকে কতটা সংকোচ হচ্ছে জান্নাতের। তাই বলল,
” তুই বড় হয়েছিস, ভালো মন্দ বুঝিস, যা ভালো মনে হয় কর। কিন্তু হ্যাঁ আমার বিশ্বাস ভাঙ্গিস না!”
জান্নাত সম্মতি পেয়ে বোনকে জড়িয়ে ধরলো। নিজের ব্যাগ পত্র গুছিয়ে ফেলতে লাগলো। মনে মনে আরমান মেহতাবের চেহারা যেন আর দেখতে না হয়, সেই দোয়াই করতে লাগলো।
এদিকে শ্যামা বেড়িয়ে যেতেই ইজহান নিপাকে তার রুমে ডাকলো। ইজহানের গম্ভীর থমথমে মুখ দেখে নিপা ভয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগলো। ইজহান তখন অত্যান্ত ঠান্ডা গলায় বলল,,
” নিপা…! আপনি আমাদের লয়াল তো?”
নিপা মাথা নিচু করেই মাথা হ্যা সূচক নাড়লো। ইজহান আবার বলল,
” আমি-ও তাই ভাবতাম!”
ইজহানের কথায় ঘাবড়ে গেলো নিপা। চোর যেমন চুরি করলে ধরা পড়ে যায়? ঠিক তেমনি ছাপ পড়েছে চোখে মুখে নিপার..!” ইজহান আবার বলল,
” আপনি কি জানেন? আমাদের এই বাড়িটাতে প্রায় ৫০ টার মতো হিডেন ক্যামেরা আছে”
নিপা এবার ঘামতে লাগলো। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো তার। নিপা বলল,
“স্যার… স্যার আমি কিছু করিনি! বিশ্বাস করুন?”
ইজহান বলল,
“আপনি আয়ানাকে মিথ্যা কেন বলেছেন?”
নিপা কি বলবে এই মুহূর্তে মাথায় এলো না। পরনের কাপড় শক্ত করে হাত মুঠ করে ফেললো। সে তো সত্যিটা বলতে পারবে না। তাহলে তো তারা তার সন্তানকে মেরে দিবে। কি করবে নিপা এখন?? কি বলবে ইজহানকে??
চলবে,
#আঁধারিয়া_অম্বর
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
২৮।
” স্যার আমি কিছু করিনি বিশ্বাস করুন।আমি যা দেখেছি তাই বলেছি!”
নিপা আবারো শুকনো ঢুক গিলে বলল। নিপা মাথা একটা কথা মনে পড়লো। যখন এই বাসার রেনোভেশনের কাজ হয়েছিলো, আলিয়া মানা করেছিলো ঘরের ভিতর কোনো রকম ক্যামারা যেন লাগানো নক হয়, এতে করে ঘরে প্রাইভেসি নষ্ট হয়। নিপা বুকের ভিতর একটু সাহস সঞ্চালন করে বলল,
“স্যার আপনি চাইলে চেক করতে পারেন!”
ইজহান গম্ভীর কন্ঠে বলল,
” আপনি ঠিক কি দেখেছিলেন?”
নিপা এবার বুদ্ধি খাটিয়ে বলে,
” স্যার আমি কিচনে মেডামের জন্য চা বানাচ্ছিলাম। ঠিক তখনি মেডামের চিৎকার ভেসে আসে, আর যেতেই দেখে উপর থেকে শ্যামা মেম নিচে নামাচ্ছে। তাই আমার মনে হল…!”
নিপার কথার মাঝে এবার কথা থামিয়ে ইজহান বলল,
” আপনিতো শ্যামাকে ধাক্কা দিতে দেখেন নি, তাহলে? কিভাবে এত শিউর হয়ে কথা বললেন আয়ানাকে? এভাবে বিভ্রান্ত করার কোনো মানে হয় কি? আপনিকি জানেন? তার জন্য আপনার নামে মানহানীর কেইস হতে পারে!”
ইজহান বলা প্রতিটি কথা ভয়ে শিহরণ তুলে দিলো শরীরের মাঝে নিপার। নিপা বলল,
“স্যার আমার ভুল হয়ে গেছে, আমাকে মাফ করে দেন! আমি মেডাম এমন হাল দেখে ভয় পেয়ে গেছিলাম, তার উপর শ্যামা দাদিজানকে একদম পছন্দ করে না, আমি তাই ভেবেছি!”
” আপনার ভাবলেই তো সব হয়ে যাবে না নিটা। তবে আপনি এখানে আর থাকছেন না। আপনার এখানের চাকরি শেষ আজ থেকে।”
নিপার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। ইজহানের পা জড়িয়ে হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলো। ভিতরে ভিতরে নিজেকে কসতে লাগলো, কেন কেন গেলো সে সেই মেডামের কথা শুনতে? কিন্তু কোনো লাভ হলো না। আগত ছাড়তেই হলো নিপার এই বাড়ি!
এদিকে সময়ের স্রোত গড়িয়ে যেতে লাগলো। সকাল থেকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এলো। কাজের মাঝে বুঁদ হয়ে থাকা শ্যামা এবার হাফ ছাড়লো। দেখতে দেখতে কতগুলো দিন অতিবাহিত হয়ে গেলো। ইজহানের সাথে শ্যামার সম্পর্ক আগে থেকে অনেকটা উন্নত হয়েছে। মনে মনে শ্যামা খুব খুশি। কিন্তু তাদের বাচ্চাটা যদি থাকতো? এই ভাবনাটাই মাথায় এলে সব কিছু বিতৃষ্ণা লাগে শ্যামার। নিপার কাছে সেদিন যেনে-ও যেত, কেন এমনটি করলো সে? কিন্তু নিপাকে সে আর পায়নি। তার বাসায়-ও গিয়েছিল শ্যামা কিন্তু তার হদিশ পায়নি। সে দিন দাদিজান যদি ওই অবস্থা না হতো? তাহলে ঠিক বের করে ফেলতো সে। এসব ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল শ্যামা। টুং টাং করে ফোনের ওয়াজ করতেই শ্যামার ভাবনা ভাঙ্গলো। বিতৃষ্ণা মন এবার তৃষ্ণায় পরিপূর্ণ হলো। এক চিলতে হাসি মুখের মাঝে ঝুলিয়ে ফোন তুললো শ্যামা। ফোনের ওপাশ থেকে ইজহানের ভরাট গলাটা ভেসে এলো,
” তোমার আর কতক্ষণ লাগবে?কাজের চাপ বেশি নাকি?”
শ্যামা ফোনের এপাশ থেকে লাজুক মাখা হাসি হেসে বলল,
” এই তো.. শেষ প্রায়!এখনি নিচে নামবো!”
ইজহান ফোনের ওপাশ থেকে বলল,
” আচ্ছা! ”
বলেই ফোন কেঁটে, ইজহান বাহিরে তাকালো। ঘন কালো কুচকুচে অন্ধকার আকাশ। অথচ… অথচ এক চিলতে তারা আর ছোট ছোট তারা গুলো অন্ধকার কাটিয়ে ঝাপিয়ে আলোকিত করার চেষ্টা করছে। রাস্তার ধারের হলদে আলো-ও যেন এই অন্ধকার ঠেলে দূর করতে ব্যর্থ হত, যদি না এক ফালি আকাশের চাঁদ উঠতো…! ইজহানের পুরোনো দিনের একটি কথা মনে পড়লো,
ইজহান একদিন খাগড়াছড়িতে টুরে গেছিলো। সেখানে নেটওয়ার্ক অনেক উইক। তাই সাথে করে একটি রবি সিম নিয়ে গেছিলো। সেদিন সারাদিন ঘুরে ফিরে রাতে রেমাক্রির একটু হোটেলে উঠে পরে ইজহান। ঝুলন্ত বারান্দায় দাঁড়িয়ে, শীতের রাতে কুয়াশার চাদরে মুড়িয়ে সারারাত কথা বলেছিলো তারা। রাতের আশে মেঘদের যুগলবন্দীরাও ঘুরে বেড়িয়েছে আঁধারিয়া অম্বরের বড় আকর্ষণ চাঁদটাকে ঘিরে। ইজহানের বড্ড হিংসে হয়েছিল সেদিন সেই যুগলবন্দী মেঘদের উপর। দাম্ভিক মুখখানা ঠান্ডা লাল টুকটুকে টমেটো হয়ে গেছিলো। গম্ভীর আফসোসের সুরে বলেছিল,
” ইশ! আমি যদি মেঘ হতো? ভেসে ভেসে চলে যেতাম আমার চাঁদের কাছে। ভিজিয়ে দিতাম ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে!”
এটি শুনে শ্যামা খিলখিল করে হেসে ফেলেছিলো,
” তুমি কবি হয়ে গেছো, ঘুরতে গিয়ে সুফিয়ান?”
” কবিরাতো ভবঘুরেই প্রাকৃতের মাঝে বুঁদ হয়েই কবিতা লিখে!”
শ্যামা হাসে,
” তা আমার কবিটা কি ঘরে যাবে? নাকি কনকনেই এই ঠান্ডায় হাত পা জমাবে?”
ইজহান মুচকি হাসলো। চেয়ারের মাঝে আরো ভালো করে গা এলিয়ে দিয়ে বলল,
” নাহ্, আজ আর ঘরে যাবো না। সারা রাত আমার চাঁদকে দেখবো, তারপর ভোর রাতে সূর্য উদয় দেখবো দুজন, তারপরেই ঘরে যাওয়া!”
শ্যামা ফিক করে এসে ফেললো। তার ঘর থেকেও দেখা যাচ্ছে রাঁতের চাঁদের পসর কতট তীব্র। হাতে বাড়ি চাঁদের পসর গায়ে মাখিয়ে গুন গুন করলো সে,
চাঁদনী পসরে কে
আমারে স্মরণ করে
কে আইসা দাড়াইসে গো
আমার দুয়ারে
তাহারে চিনিনা আমি
সে আমারে চিনে
বাহিরে চাঁন্দের আলো ঘর অন্ধকার
খুলিয়া দিয়াছি ঘরের সকল দুয়ার
তবু কেন সে আমার ঘরে আসেনা
সে আমারে চিনে
কিন্তু আমি চিনিনা
সে আমারে থরে থরে ইশারায় কয়
এই চাঁদের রাইতে তোমার হইছে গো সময়
ঘর ছাড়িয়া বাহির হও
ধরো আমার হাত
তোমার জন্য আনছি গো আইজ চাঁন্দেরও দাওয়াত
গানের প্রতিটি লাইন খুব মনযোগ দিয়ে শুনেছিলো ইজহান। মনের কোনে আলাদা শিহরণ দিচ্ছিলো সেই মুহূর্তে। ইজহান গান শেষে বলে ছিলো আনমনে,
” আই ওয়ান্না কিস ইউ… মোর দেন মোর এন্ড মোর!”
শ্যামার লজ্জা গরম হয়ে গেছিলো গাল দুটি। টুস করে কম্বল টেনে মুখে ঢেকে ফেলে। যেন ইজহান তার সামনেই বসে আছে। সে বিড়বিড় করে বলেছিলো,
“নির্লজ্জ… ঠোঁট কাঁটা ছেলে!”
ইজহান হো হো করে হেসে ছিলো সেদিন। নিস্তব্ধতা চিঁড়ে হাসির শব্দ গুঞ্জন তুলেছিলো।
ইজহান হাসতে লাগলো, প্রেমে পড়ার মতো মধুর কিছু মূহুর্ত থাকে। যারা সঠিক অর্থে প্রেম করতে যানে? তাদের জন্য সাতশোত তের নদীর ওপারে থাকলেও মানুষটি সম্পূর্ণ তার থাকে। আর এই প্রেমে যদি খাদ হয়? মিথ্যা হয়? সেটা প্রেম বলা চলে না… সেটাকে বলা হয়.. টাইমপাস… সময় অতিবাহিত করা…!
ইজহানের পুরোনো স্মৃতির ডায়েরি বন্ধ করলো শ্যামার আগমনে। শ্যামা এসে গাড়িতে বসতেই ইজহান আচমকা কাছে টেনে নিয়ে আসে শ্যামাকে। ক্লান্ত মুখের উপর দু হাত রেখে লম্বা গভীর চুম্বন করে। তারপর তার ওষ্ঠ ছেড়ে, কঁপালে মধ্য ভাগে চুম্বন করে। শ্যামা হতবাক। ডাগর ডাগর চোখে বার বার ভাড়ী পল্লব জোড়া ফেলে দেখতে থাকে সামনে বসা থাকা লক্ষ লক্ষ মানুষের ক্রাশকে। ইজহান সেদিকে আর ভ্রুক্ষেপ না করে, গাড়ির মিউজিক বাটনে ক্লিক করতেই বেজে ওঠে সেদিনের গানটি…
চাঁদনী পসরে কে
আমারে স্মরণ করে
কে আইসা দাড়াইসে গো
আমার দুয়ারে
তাহারে চিনিনা আমি
সে আমারে চিনে
মূহুর্তেই শ্যামার মনে হানা দেয় পুরোনো স্মৃতি, বিষন্ন মন নিয়ে তাকিয়ে থাকে বাহিরের দিকে, চলতি গাড়ির দিকে, পিছনে ফেলা আসা মানুষটির স্মৃতির দিকে। বিড়বিড় করে বলে,
” সুফিয়ান… কোথায় তুমি? এ শহর যে তোমার নামে এখন বৃষ্টি হয়। ”
“কি ভাবছো?”
ইজহানের কন্ঠে শ্যামা হাসার চেষ্টা করে। বলে,
“গানটি আমার প্রিয়!”
“আমারো!”
দুজনেই আবারো চুপ… কালো মেঘে ঢাকা বিষন্ন আকাশের মতো দুজন দু দিকে মুখ করে গান শুনে পুরোনো স্মৃতি বিচরণে ব্যস্ত।
————-
শরতের আগমন অনেক আগেই ঘটেছে। নীল আকাশ আর ভেসে যাওয়া পেঁচা মেঘ গুলো যেন তাকিয়ে আছে শ্যামার দিকে। আজ দুদিন ইজহান আউট ওফ টাউন। তাই শ্যামার নিজেই যাওয়া আসা করতে হচ্ছে, তবে একা নয় গাড়ির ড্রাইভার রেখে গেছে ইজহান তার মহারানীর জন্য। ভেবেই এক ধলা হাসি ফুঁটে মুখে। ঠিক তখনি সামনে পড়ে একটি ফুচকাওয়ালা দোকান। চটপটি দেখে লোভে জিবে জল চলে আসে শ্যামা। হন্তদন্ত হয়ে ড্রাইভারকে গাড়ি থামিয়ে বেড়িয়ে পরে সে। ফুচকা এক ফ্ল্যাট নিয়ে আয়েশে খেতে লাগলো শ্যামা।
” আহ্… কতদিন পর… পেটে গেলি তুই!”
বলেই গপাগপ করে খেতে লাগলো সে, পর পর দুচারটা ফ্ল্যাট সবার করে যখন গাড়িতে উঠে! তখনি চোখে পড়লো, সাদা ফিনফিনে ময়লা একটা শাড়ি গায়ে জড়িয়ে হাতে বাজারের ব্যাগ নিয়ে নিপা দাঁড়িয়ে। শ্যামা যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলো। হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গেলো নিপার সামনে। নিপা শ্যামাকে দেখেই ভয়ে মুখ শুকিয়ে গেলো। শ্যামা কোনো ভনিতা ছাড়াই প্রশ্ন ছুড়লো পর পর,
” নিপা আমার নামে আপনি মিথ্যা কেন বললেন? কেন সবার কাছে আমাকে খারাপ করতে চাইছেন?
এতে কি লাভ আপনার? আপনাকে কি কেউ এসব করাচ্ছে? আর সব থেকে বড় কথা… আমার মিসক্যারেজের পিছনে কার হাত? আমার বাচ্চা নষ্ট করার জন্য কে মেডিসিন দিতে বলেছিলো?”
নিপা সঙ্গে সঙ্গে বলল,
” ইজ.. ইজহান স্যার…..”
চলবে