আকাশে তারার মেলা ২ পর্ব-২০+২১

0
691

#আকাশে_তারার_মেলা_২
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব_২০

শরতের সূর্য উদয় হয়ে আলোক রশ্মি ছড়িয়ে দিচ্ছে চারদিক। এক গুচ্ছ রশ্মি জানালা গলিয়ে উপচে এসে ছুঁয়ে দিচ্ছে তুলির ঘুমন্ত, মায়াবী মুখশ্রীতে। আঁখি পল্লব কুঁচকে নিল তুলি। অধর কোণে প্রস্ফুটিত হলো ক্ষীণ হাসির রেখা। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসল। শরীর টা কেমন মেজমেজ করছে। আলসেমি কাটিয়ে ধীরস্থ গতিতে ছোট্ট ছোট্ট কদম ফেলে বারান্দায় এলো সে। পড়নে গায়ের পিংক টিশার্ট টা কিছুটা এলোমেলো। ঘুমের দাপটে চোখ দুটো ফুলো ফুলো। লম্বা কেশ পিঠময় ছড়িয়ে আছে। খোলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে চোখ বুঁজে ভোরের শুদ্ধ, নির্মল বাতাস নিজের মাঝে শুষে নিল তুলি কিছু সেকেন্ড ব্যয় করে। কর্ণে প্রবেশ করল সূদুর হতে এক নাম না জানা পাখির গুঞ্জন। ইট,পাথরের চাকচিক্যময় শহরে পাখির ডাক তুলির নিকট এক অতীব মিষ্টি সুর মনে হলো। হৃদয়টা জুড়িয়ে গেল নিমিষেই। ডাগরডাগর আখিঁ মেলে তুলি বারান্দায় ঝুলিয়ে রাখা খাঁচাটার দিকে তাকাল। চেয়ে রইল অপলক। খাঁচায় বন্দি পায়রা জোড়া আজ কেমন নিষ্প্রভ। জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে পায়রা দু’টো। একে অপরের সাথে গা মিলিয়ে উষ্ণতা কুড়াতে ব্যস্ত ওরা। কপালে ভাঁজ পড়ল তুলির। অন্যদিন একাধারে ডাকতে থাকে ওরা। আজ ডাকছে না কেন?ঠান্ডা লাগছে বুঝি?কই এখন তো বর্ষা নেই, বর্ষণ নেই। বিশাল আকাশ পানে চাইল তুলি। বর্ষার নিবিড় ঘনঘটা অপসারিত হয়ে আকাশ নির্মল হয়ে উঠেছে। একদলা শুভ্র উড়ন্ত মেঘ নীলচে আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে। তুলির কাছে মনে হলো শরতের সাদা মেঘভর্তি আকাশ যেন এক বিশাল সামিয়ানার মতো। আকাশের থেকে মুখ ফিরিয়ে তুলি পুনরায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করল পায়রা জোড়ার দিক। এ কি!আগের চেয়েও গভীর ভাবে সেঁটে বসে আছে দু’জন। কিছুক্ষণ চিন্তিত ভঙ্গিতে চেয়ে থেকে তুলির মুখ টা কেমন লাল আভায় ছেয়ে গেল। বিড়বিড় করে বললো–

” সময় এখন তোদের-ই। মাসখানেক ধরে বিবাহিত হয়েও আমি সিংগেল। আমার জামাই একটা নিষ্ঠুর। কি হয় মাঝে মাঝে একটু আকটু আদর করলে?নিজের বাহুতে জায়গা দিলে?তোদের প্রেম দেখে আমার প্রেম পাচ্ছে। ভীষণ রকমের প্রেম পাচ্ছে। মন হিংসায় জ্বলে পুড়ে আংরা আংরা হয়ে যাচ্ছে। সুদর্শন সেই যুবককে দেখিয়ে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে,মাঝে মাঝে নিজের উষ্ণতায় আমায় বিমোহিত করলেই তো পারেন,খয়েরী রঙা ঠোঁট দুটো আমার ওষ্ঠে একটুখানি! স্রেফ একটুখানি ছুঁয়ে দিলে তো পারেন।’

নিজস্ব অভিব্যক্তিতে থমকে গেল তুলি। লজ্জা ছড়িয়ে গেল দেহের সর্বাঙ্গে। কি বলল তার বেহায়া মন? যদি আদ্র শুনে ফেলত? হিংসের চোটে খাঁচা টা নেড়ে পায়রা জোড় কে আলাদা করায় লেগে পড়ল। নিজেকে ধিক্কার দিতে দিতে আওড়ালো,

” ছিঃ!ছিঃ!তুলি। তুই দিন দিন বড় হচ্ছিস, সেই সাথে চরম লেভেলের অসভ্য হচ্ছিস। ডাক্তার সাহেব শুনলে কি হতো একটা বারও কল্পনা করেছিস?শাস্তি দিতো না তোকে?আচ্ছা কি শাস্তি দিতেন?”

কল্পনার জগতে শাস্তি কল্পনা করতে মগ্ন হলো তুলি। গভীর এক শাস্তি মাথায় আসতেই তুলির বুক ঢিপঢিপ করতে লাগল। রুমে যেতে যেতে ধাতস্থ কন্ঠে বললো,

” অসভ্যতার লেভেল ছাড়িয়ে যাবি একদিন তুই তুলি। নিজেকে শুধরা। ”
__________

শুভ্র রঙের একটা থ্রি পিচ গায়ে জড়িয়ে তুলি খালি পায়ে হেঁটে চলেছে ঘাসের উপর দিয়ে। তার পদলি গভীর ভাবে ছুঁয়ে দিচ্ছে ঘাসগুলো কে। আজ যেন ঘাসগুলো ধন্য। শহরের অহংকারী মানুষ গুলো কি খালি পায়ে তুলির মতো করে স্পর্শ বুলিয়ে দেয় ঘাস গুলো তে?দেয় না তো। দিলে তাদের পা নষ্ট হয়ে যাবে না? তুলির মতে,জুতো পড়ে হেঁটে ব্যস্ত মানুষ জনেরা নাজেহাল করে ছেড়েছে এদের অবস্থা। আজ শরতের শিশিরের ছোঁয়ায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে। ঘাসের উপর সঞ্চিত শিশির বিন্দুকে তুলির কাছে রূপালী মুক্তার মতো মনে হচ্ছে। সর্বত্র শুভ্র ও নাতিশীতোষ্ণ অবস্থা বিরাজমান। তুলির গলায় জড়ানো লম্বা ওড়নার এক কার্ণিশ শিশির বিন্দুতে ছুঁয়ে ছুঁয়ে ভিজে যাচ্ছে। তুলির সেদিকে খেয়াল নেই। তার একমাত্র লক্ষ্য আদ্র দের অর্থাৎ শশুড় বাড়ির পিছনে থাকা বড় শিউলি ফুলের গাছ টা। শরতের আঁচ করতে পেরে তুলি নিজেকে ধরে রাখতে পারে নি। ছুটে এসেছে শিউলি ফুলের টানে। গ্রামে চেয়ারম্যান বাড়ির পাশে একটা শিউলি গাছ আছে,শরতের আগমন ঘটলেই মর্মিতার সাথে ছুটে যেতো ফুল কুড়াতে। আমরিনের সাথে ছাঁদে উঠে এক মাস আগে এ বাড়ির শিউলি গাছ টা দেখেছিল।

আদ্র দের বাগানের এক পাশের দূর্বাঘাস ডিঙিয়ে তুলি সবার আড়ালে শিউলি তলায় হাজির হলো। ঘাসের উপর চাদরের ন্যায় বিছিয়ে আছে শুভ্র শেফালি। উৎফুল্ল হয়ে উঠল তুলির মন। হাতের জুতো জোড়া এক পাশে রেখে খুশিতে গদগদ হয়ে ফুল কুড়িয়ে ওড়নায় রাখতে লাগল। হাত বাড়িয়ে আরো একটা ফুল নিতে গিয়ে নিজের শ্যামবর্ণ হাতের পাশে উজ্জ্বল ফর্সা বলিষ্ঠ এক হাতের দিকে দৃষ্টি স্থির হলো। নিস্তেজ,স্তব্ধ হয়ে পড়ল তুলি। ভয়ার্ত চোখে হাত টা অনুসরণ করে মানুষটার দিক দৃষ্টি নিবদ্ধ করতেই, প্রগাঢ় কম্পনে কেঁপে উঠল হৃদপিণ্ড। চোখ দুটো জুড়িয়ে গেল মুগ্ধতায়। সাদা পাঞ্জাবি পড়েছে আদ্র। হাতা গুটানো,অনাসয়ে লোমশ গুলো ভেসে উঠছে তুলির চোখের পাতায়। শুভ্র গায়ের রং, শুভ্র পাঞ্জাবি, লোমশ হাত। তুলির ভিতর টা কাঁপছে। গলায় শুষ্কতা অনুভব করছে। অথচ আদ্র ভাবলেশহীন ভাবে ফুল কুড়িয়ে ভরে দিচ্ছে তুলির ওড়না তে। তুলি হতভম্ব হয়ে নিষ্পলক মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। আদ্র একে একে সবগুলো ফুল কুড়িয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়াল। তুলির চেহারা তে দৃষ্টি বুলিয়ে স্মিত হেসে,উঠে দাঁড়ানোর ইশারা করল তুলি কে। বাধ্য মেয়ের মতো উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াল তুলি। নীল বর্ণী চোখের মাদকতায় হারিয়ে যাচ্ছে, ডুবে যাচ্ছে আবেগি মন। এতো সুন্দর পুরুষ! এতো সুন্দর বুঝি ছেলে রা হয়?তুলির নিজেকে তুচ্ছ মনে হচ্ছে। এতো সুন্দর এক পুরুষের রূপের কাছে তার রূপ খুবই পানসে। ছেলেরা নাকি মেয়েদের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে?কই?তুলি নামক শ্যামবতীর তো এক যুবকের দিক থেকে চোখ ফেরানো দায় হয়ে পড়ছে। আদ্র কিছুটা কাছে এসে দাঁড়াতেই শীতল স্রোত বয়ে গেল তুলির সারা শরীর জুড়ে। মিষ্টি একটা ঘ্রাণ নাকে এসে ঠেকল। এটা কি শিউলির ঘ্রাণ নাকি আদ্রর শরীরের?বুকের ধুকপুকানি শব্দ নিয়ে লজ্জিত ভঙ্গিতে বললো,

” আপনাকে স্নিগ্ধ লাগছে আদ্র।”

শুধুই মেয়েদের হৃৎস্পন্দন অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে প্রিয় মানুষ টার সান্নিধ্যে? উঁহু! ছেলেদের ও হয়। তার প্রমাণ স্বয়ং আদ্র। প্রাণ প্রিয় তুলার এক বাক্যে স্তম্ভিত সে। পরক্ষণেই হাত বাড়িয়ে অতি যত্নসহকারে তুলি কে কাছে টেনে নিল। হকচকিয়ে গেল তুলি। খেয়াল হলো মুগ্ধতার মোহজালে আঁটকে কতটা বেহায়া হয়ে পড়েছে। হলেই বা কি?হাত স্পর্শ করে শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে শিহরণ জাগিয়ে তোলা সুদর্শন মানুষ টা তো তার স্বামী!নত মস্তকে কানের লতিতে ভেজা ওষ্ঠের স্পর্শ পেতেই বিমূঢ় হয়ে গেল তুলি। এক হাতে আঁকড়ে ধরা ফুলে ভর্তি ওড়না টা পড়তে নিলেই আদ্র গা থেকে টেনে ওড়না টা নিজের হাতে নিয়ে নিল। লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে গেল তুলি। সাথে সাথেই পিছন ফিরে গেল। আদ্র নির্লিপ্তভাবে ওড়নাটা একটু ঢিল করে গিট্টু মেরে দিল,যেন ফুল গুলো পড়ে না যায়। পিছন থেকে ফিচেল স্বরে ডাকল,

“তুলা!এদিকে ফিরো।”

তুলি লজ্জায় আরো জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়াল। কিছুতেই ফিরবে না সে। পিছন থেকে হাত বাড়িয়ে আমতা আমতা করে বললো,

” আমার ওড়না টা দিন।”

আদ্র গম্ভীর কন্ঠে বললো,

” বেয়াদব মেয়ে, বরের কথা অমান্য করো। দিব না। ”

তুলি অবাকের শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছে গেল। সে তো বেয়াদবি করে নি বরং লজ্জা পাচ্ছিল। মাথা তুলে ফিরতে যাবে তখনি আদ্র দ্রুত বেগে সামনে এসে উপস্থিত হলো। খানিক্ষণ নীরব থেকে বললো,

” টি-শার্ট,প্লাজু পড়ে বারান্দায় দাঁড়ালে প্রবলেম নেই অথচ বরের সামনে ওড়না বিহীন উপস্থিত থাকতেই তোমার পা কাঁপাকাপি শুরু।”

তুলি সচকিত নয়নে চাইল। এক রাশ বিস্ময় এসে জমলো চক্ষে। তার মানে আদ্র দেখে ফেলেছে? লজ্জায় অন্যদিকে চাইতেই আদ্র নেশা মিশ্রিত স্বরে বলে উঠল,

” তুমি যখন হাত উঁচিয়ে পায়রা দের সাথে বকবক করছিলে তখন গেঞ্জি উপরে উঠে দৃশ্যমান ছিল তোমার কোমর। ইচ্ছে হয়েছিল,, ”

তুলির আর দাঁড়াবার শক্তি নেই। এটুকু শুনেই হাত পা কাঁপছে তার। কেটে পড়ার আগেই নিজেকে শূন্যে অনুভব করল সে। আদ্রর পাঞ্জাবি টা শক্ত করে আঁকড়ে ধরল। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে উচ্চারিত করলো,

” কি করছেন?”

” চুপ থাকো।”

আদ্রর গম্ভীর কন্ঠে চুপসে গেল। বাগান পেরিয়ে বাড়ির ড্রইং রুমে আসতেই তুলি সতর্ক নয়নে চারপাশ দেখতে লাগল। যদি কারো নজরে পড়ে যায়?আদ্র কে ভয়ে বলতেও পারছে না। খালা মণি তো সকাল সকালই উঠে যায়। তুলির লজ্জার রেশ,ভয়ার্ত ছাপ কাটাতে আদ্র সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে বললো,

” বাবা -মা,আমরিন সকালেই পার্কে গেছে মর্নিং ওয়াকের জন্য। ”

তুলি চিন্তা মুক্ত হলো। আদ্র রুমে এনে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে দিয়ে ওড়না থেকে ফুল গুলো একটা জায়গায় রাখল। ড্রয়ার থেকে একটা বক্স বের করে, তা থেকে সুই সুতা বের করলো। তুলির চোখে অবাকতার ছাপ দেখা দিল। গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল আদ্রর কর্মকান্ড। সুতায় ফুলগুলো গেঁথে একে একে কয়েকটা মালা বানিয়ে ফেললো আদ্র। তুলির কাছে এসে হাতে, গলায়,মাথায় শিউলি ফুলের মালা পড়িয়ে দিল নিজ হাতে। বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তুলি আয়নায় নিজেকে দেখার চেষ্টা চালালো। কিন্তু তা হতে দিল না আদ্র। কোলে তুলে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে তুলির সামনে বসে পড়ল। সাদা শুভ্র ওড়না টা জড়িয়ে দিল তুলির মাথায়। বউ বউ লাগছে তুলি কে। স্নিগ্ধ এক শুভ্র বধূবেশী কন্যা যেন আদ্রর হৃদয় দুয়ারে দাঁড়িয়ে বলছে, “একটু আপনার হৃদয়ের গহীনে স্পর্শ করার অনুমতি দিবেন ডাক্তার সাহেব? ” গলা প্রায় শুষ্ক হয়ে উঠল আদ্রর। তুলির নত চিবুক এক আঙ্গুলে তুলে বললো,

” তোমার নিজেকে দেখতে হলে আমার চোখে চোখ রাখতে হবে তুলা। কারণ সর্বদা তুমি আমার চোখে নিজেকে মোহনীয় রূপে আবিষ্কার করবে।”

তুলি নির্নিমেষ ঘোরে আটকা পড়ল। তিরতির করে কাঁপতে লাগল ওষ্ঠ যুগল। ছোট্ট হৃদপিণ্ডের বেসামাল স্পন্দন আদ্রর কান পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারল না আদ্র। অধর ছুঁয়ে দিল তুলির কম্পনরত ওষ্ঠে। মুহুর্তেই তুলির পুরো দুনিয়া থমকে গেল। তার ডাক্তার সাহেবের প্রথম গভীর স্পর্শে কেঁপে উঠল তার বক্ষস্থল। কয়েক সেকেন্ড পর আদ্র ওষ্ঠ ছেড়ে দিতেই ঘনঘন শ্বাস নিল। আঁড়চোখে দেখল আদ্র শুয়ে পড়েছে। কোনোরকম লজ্জা মিশ্রিত মুখ লুকিয়ে চলে যেতে নিলেই হাতে টান পড়ল। শোনা গেল আদ্রর শান্তস্বর।

” তুলি!”

“হু!”

“লজ্জা পাচ্ছো?”

তুলি কিংকর্তব্যবিমূঢ়। আদ্রের প্রশ্নে দ্বিগুণ লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠল গাল। কোথায় লুকাবে সে এই লাল হয়ে যাওয়া মুখ?তুলি ঝটপট পিছন ফিরল। এক প্রকার হামলে পড়ল আদ্রর বুকে। কিঞ্চিৎ ব্যাথায় আহ্ করে উঠল আদ্র। আমলে নিল না তুলি। আদ্রর বুকে মুখ লুকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। কি সাংঘাতিক ব্যাপার!লজ্জা লুকাতে লজ্জা বাড়ানোর জায়গাতেই হামলে পড়ল বেচারি। তুলি মন কে শুধাল,” এটা আমার শান্তির স্থান। ”

আদ্র তুলি কে টেনে আরেকটু উপরে নিয়ে এলো। বললো,

” দূরত্ব আর সহ্য হচ্ছে না তুলি। তুমি কেন এলে সেদিন আমার চোখের সামনে?আসলেই যখন সাথে কেন এতো শর্ত? কেন দূরত্ব তোমার, আমার মাঝে?খুব শীগ্রই নিয়ে আসবো তোমাকে। পারব না কোনো শর্ত সহ্য করতে,মানতে। এতো সহ্যশক্তি আমার নেই। ”

#চলবে,,!

#আকাশে_তারার_মেলা_২
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব_২১

আমরিন বসে আছে তুলি দের ড্রইং রুমের সোফায়। পড়নে তার বাসন্তী রঙের সিল্কের একটা শাড়ি। ফর্সা মুখশ্রী তে হালকা মেকআপের ছোঁয়া। দু’হাত ভর্তি কাঁচের লাল চুড়ি। তুলির মা এক বাটি আচার এনে রাখলো আমরিনের সামনে। আচার দেখেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠল আমরিন। চুড়ির ঝনঝন আওয়াজ তুলে হাত বাড়িয়ে বাটি টা নিয়ে নিল। মুখে আচার দিতে দিতে বললো,

“ওয়াও খালামণি!থ্যাংক ইউ সো মাচ আচারের জন্য। তোমার হাতের আচার মানেই অমৃত। এত্তো! এত্তোগুলো ভালোবাসা শুধু তোমার জন্য। ”

হাত দিয়ে দেখিয়ে বললো আমরিন। আফসানা হেসে উঠলেন। আমরিনের দিকে চেয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন,

“দেখলি তো মেয়েটা এখনো দরজা মেললো না। এতো ধাক্কালাম কিন্তু কোনো খবর নেই। বিয়ে হয়ে গেল তবুও বাজে,পুরোনো অভ্যাস টা বুঝি যাবে না। ভোর বেলা উঠবে ঠিকি, কয়েকঘন্টা জাগ্রত থেকে সুযোগ পেলেই তলিয়ে যাবে গভীর ঘুমে। তোদের বাসায় চলে গেলে তোর মা তো আমাকে হাজার টা অভিযোগ করার কারণ পেয়ে যাবে।”

আচার খাওয়া থামিয়ে দিয়ে ফিক করে হেসে দিল আমরিন। হাসতে হাসতে বললো,

” মম?মম অভিযোগ করবে তুলির ব্যাপারে? আর মানুষ পেলে না খালামণি। তুমি নিজেই জানো তোমার বোন তুলি কে চোখে হারায়।”

” আমি তো চাই অভিযোগ করুক। নাহলে এই মেয়ে দিন দিন আরো অলস হবে। ছোট বেলায় যা-ই একটু শাসন করতাম, এখনতো তাও পারি না। সময়ের সাথে সাথে মেয়ের প্রতি ভালোবাসা টা বেড়েই চলছে। তোর মা-র অভিযোগের উছিলায় একটু আকটু শাসন করার কথা ভেবেছিলাম, তা আদৌও অসম্ভব। ”

কথার মধ্যে আমরিনের ফোন টা বেজে উঠল প্রবল শব্দ সৃষ্টি করে। পার্স থেকে ফোন টা বের করতেই স্ক্রিনে ভেসে উঠল ‘ প্রিয় মানুষ।’ কেটে যাওয়ার আগে তড়িঘড়ি করে ফোন টা রিসিভ করে বললো,

“ভাবী দরজা বন্ধ করে ঘুমোচ্ছে ভাইয়া। দশমিনিট ধরে খালা মণি ডেকে যাচ্ছে। ”

আমরিন কে আর একটা শব্দও উচ্চারণ করার সময় দিল না অপর পাশের মানুষ টা। দু’টো বাক্য কর্ণধার হওয়া মাত্রই কল কেটে দিল। আফসানার চেহারায় চিন্তার ছাপ ফুটে উঠলো। নরম স্বরে জিজ্ঞেস করলেন,

” আদ্র ফোন দিয়েছিল?”

” হ্যাঁ। তোমার মেয়ের কপালে আজ শনি আছে খালা মণি। ভাইয়া বিশ মিনিট ধরে বাহিরে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে।”

কথাটা বলেই আমরিন উঠে দাঁড়াল। তুলির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে ডাকতে লাগল। বুঝে গেল নরম স্বর তুলির কর্ণ দূর,রুম ভেদ করেই ঢুকবে না। তাই এক প্রকার দরজা ভেঙে ফেলার মতো করে অনবরত ধাক্কা দিতে লাগল। সবেই গাঢ় তন্দ্রা ভাব কেটে এলো তুলির। হালকা হয়ে এলো ঘুমের রেশ। দরজায় আঘাতের ঢোলের মতো শব্দে কর্ণ কাড়া হয়ে গেল। ভালো করে কিছু বুঝে উঠার আগেই কানে আসল আমরিনের অস্থির কন্ঠস্বর।

“ওপেন দ্যা ডোর তুলো। বাঁচতে হলে তোর তাড়াতাড়ি দরজা খুলতে হবে। ”

তুলি খানিকক্ষণ বিমূঢ় হয়ে রইল। মস্তিষ্ক কাজ করছে না একদম।’ বাঁচতে হলে দরজা খুলতে হবে। ‘ এহেন বাক্যে তুলি বিস্ময়াবিষ্ট। আমরিন দরজা ভেঙে দেওয়ার অপেক্ষা না করে কোনো রকম বাকবিতণ্ডা ছাড়াই দৌড়ে গিয়ে দরজার ছিটকিনি খুলে দিল। এক প্রকার হামলে পড়লো আমরিন রুমের মধ্যে।

তুলি চট করে সরে পড়ল। শাড়ি তে প্যাঁচ খেয়ে পড়ে যেতে নিলেও নিজেকে ফ্লোর আঁকড়ে ধরে সামলে নিল। হাতের শপিং ব্যাগ টা বিছানায় রেখে বললো,

” শপিং ব্যাগে লেভেন্ডার রঙের একটা জামদানী আছে, তাড়াতাড়ি পড়ে ফেল।”

সদ্য ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে এমন এক পরিস্থিতিতে হতবিহ্বল তুলি। শাড়ির কথা শুনে চমকাল সে। চমকিত নয়নে তাকাল আমরিনের দিকে। চোখে বিঁধল আমরিনের এক মোহনীয় রূপ। উদ্বিগ্ন কন্ঠে প্রশ্ন করল,

” তুই এভাবে সেজেছিস কেন আমড়া?এতো তাড়াহুড়ায় বা করছিস কেন?কোথায় যাবো?শাড়ি কেন পড়বো?শাড়ি কে পাঠিয়েছে? ”

একাধারে এতো প্রশ্ন শুনে চোখ কপালে উঠে গেল আমরিনের। ‘আমড়া’ ডাক নিয়ে তার কোনো মাথা ব্যাথা নেই। তুলির মুখের আমড়া ডাকটা তার ভীষণ প্রিয় একটা শব্দ। আমরিন মৌন হয়ে রুমের চারদিকে ব্যস্ত চক্ষু বুলালো। টেবিলের উপর থেকে তুলির মোবাইল টা এনে হাতে ধরিয়ে দিল শব্দ বিহীন। তুলি প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে চাইল। অথচ পাত্তা দিল না আমরিন। ব্যাগ থেকে শাড়ি টা বের করলো দ্রুত। সেদিকে এক পলক বিস্ময় দৃষ্টিতে চেয়ে, চোখ রাখল মোবাইলে। সাথে সাথেই তুলির অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল। এক ঝাঁক ভয় উড়ে এসে জুড়ে বসলো মনের প্রত্যেক টা কোণে কোণে। একশত! একশত চল্লিশ টা কল। কতোটা ধৈর্য হলে মানুষ দু’ঘন্টা ধরে এতোগুলো কল দিতে পারে?জানা নেই তুলির। কখনও পারত না। কখনও পারত না তুলি এতোগুলো কল কাউকে দিতে। দুই থেকে তিনবার কল দিয়ে অপর পাশের ব্যক্তিকে না পেলেই তো তুলির মেজাজ তুঙ্গে উঠে। আর আদ্র!তুলির মস্তিষ্ক জানান দিচ্ছে, ‘ আজ আর রক্ষে নেই। ‘ কাঁপা কাঁপা হস্তে মেসেজ টা অন করলো। চক্ষে ভাসল,

” সকালে বলা হয় নি। প্ল্যান টা হুট করেই। আমরিন কে দিয়ে শাড়ি পাঠাবো,রঙ টা আমার ভীষণ প্রিয়। সেই রঙে আচ্ছাদিত মায়াবীনি তুলা!আমার তুলা কে মুগ্ধ চোখে দেখতে চাই আমি। অপেক্ষা করিও না। আজকাল অপেক্ষা তীক্ত, বিষের মতো বিঁধে বক্ষে।”

মেসেজ টা পড়ে তুলির মনে অনুভূতি জড়ো হলেও ভয়ের চোটে নিঃশেষ হলো নিমিষেই। তুলির মনে হচ্ছে মরার মতো ঘুম দিয়েছিল,নয়তো ফোনের এতো উচ্চ আওয়াজ কেন তার শ্রবণ গ্রন্থিতে একবারের জন্যও প্রবেশ করে নি?
_________

শাড়ি পড়ে কুঁচিগুলো আঁকড়ে ধরল তুলি। কোনোমতে বিশ মিনিটের মাথায় কুঁচি গুলো ধরে বড় বড় পা ফেলে বেড়িয়ে এলো বাড়ি থেকে। আমরিন এখনও পিছনে ধীরে গতিতে হেঁটে আসছে। বার বার বলছে,

“শাড়ির ভাঁজে হোচট খেয়ে পড়ে যাবি তুলো। সাবধান! ”

কে শুনে কার কথা?এখন একটা শব্দও শোনার সময় নেই তার। সকালে আদ্রর বুকে মাথা রেখে পাক্কা এক ঘন্টা ঘুমিয়েও কিভাবে পারল সে বাসায় এসে ঘুমিয়ে তলিয়ে যেতে!এতো আলসেমি!ঢিল করে একটা খোঁপা করেছে তুলি। কিছু বাঁধ না মানা চুল বার বার কপালে এসে পড়ছে। দু’হাতে বেগুনি চুড়ি তে ভরপুর। চুড়ি গুলো একটু বেশিই সুন্দর। কিন্তু তুলি মন দিয়ে অবলোকন করার সময়টুকুও পেল না। তুলি কে আজ যুবতী লাগছে খোঁপা, শাড়িতে। দূর থেকে গাড়িতে হেলান দিয়ে আদ্র নির্নিমেষ চেয়ে আছে। রেগে আছে নাকি ভালো মুডে আছে বুঝার জো নেই। ফর্সা মুখের ভাবভঙ্গি খুবই কঠোর। যাকে রাগের আওতায় ও ফেলতে পারছে না তুলির মস্তিষ্ক। তবে আদ্র কে দেখে অসম্ভব মিষ্টি অনুভূতি তে ছেয়ে গেছে মন,হৃদয়। পরিবেশ টা নিস্তব্ধ, নির্বাক,জনশূন্য। আদ্র একটা কালো জ্যাকেট পড়েছে। জ্যাকেটের নিচের সাদা টি শার্ট টা দৃশ্যমান। তুলির চোখে এক রাশ মুগ্ধতা ভর করলো। মনে মনে ডায়েরির সুপ্ত কোণে লিখে নিল,

” যোগ হলো মনের ডায়েরি তে আপনার সৌন্দর্যে মোহাবিষ্ট হওয়ার আরো একটা মুহুর্ত। জানেন আজকাল আমি কেমন যেনো হয়ে গেছি!এতটুকু বয়সে বড়দের ন্যায় চিন্তা ভাবনা ঝেকে ধরে আমায়। আপনাকে হারানোর ভয়ে বুকে ব্যাথা অনুভব করি। একসময় ভাবতাম ডাক্তার রা বুঝি চোখে বিজ্ঞদের মতো চশমা পড়ে,মাথায় টাক থাকে,শার্ট প্যান্ট ইন করে,গম্ভীর মুখে চলে। কিন্তু আপনি ভিন্ন। আপনার চোখের গভীরে আমি কল্পনায় ডুবে যায়। প্রেমে পড়লে কি এমন হয়!পড়েছি তো আগেই, বহু আগেই তো প্রেমের অধ্যায় ছেড়ে ভালোবাসার অধ্যায় পড়ছি দু’জন ।”
__________

গাড়িতে বসে আছে তুলি। দুই পাশে ভাই-বোন বসে মাঝখানে অবহেলিত করে ফেলে রেখেছে তাকে। গাড়ি কোথায় ছুটে যাচ্ছে জানা নেই তার। সবকিছু এতো দ্রুত ঘটে গেছে যে আমরিন কে জিজ্ঞেস করতে পারল না। আদ্র কেমন যেনো একটু আলগা ভাবে বসে আছে। এক নজরে চেয়ে আছে বাহিরের দিক। এখন অব্দি একটা শব্দও উচ্চারণ করে নি। নিঃশব্দে যখন গাড়িতে উঠে বসল তুলি কিছু বলবে বলবে করেও ভয়ে সেঁটে গেল। ভয়ার্ত, করুণ চাহনি নিক্ষেপ করল আদ্রর মুখশ্রী তে। অথচ একটা বারও ফিরে চাইল না আদ্র। চোখ সরিয়ে আনতে গিয়ে দৃষ্টি ঠেকল আদ্রর বাম হাতের সাদা ব্যান্ডেজে। মুহুর্তেই তুলির হৃদপিণ্ডে ধারালো বর্শার ফলার মতো সোজা গিয়ে কিছু একটা আঘাত করলো। অজানা এক চাপা কষ্টে বিষাক্ত হয়ে উঠল মনটা। কিন্তু আঘাতের উৎপত্তি জিজ্ঞেস করার বিন্দুমাত্র সাহস জোগাতে পারল না। অশ্রুসিক্ত নয়নে অপলক আদ্রর হাতের দিকে চেয়ে পার করে দিল কিছু পথ। এর মধ্যে একটা বারও ফিরল না মানুষ টা। আজ কেমন পাথর হয়ে গেছেন। পাষাণ তো ছিলেনই,আজ যেনো ভয়ংকর পাষাণ হয়ে উঠেছেন। হুট করেই নির্জন এক পরিবেশে ড্রাইভার কে গাড়ি থামাতে আদেশ করলো আদ্র। ভ্রুঁ কিঞ্চিৎ কুঁচকিত হলো তুলি ও আমরিনের।

আদ্র গাড়ি থেকে নেমে কাঠ কাঠ গলায় বললো,

” বাহিরে এসো।”

তুলি ভাবলো এখানেই বুঝি আসার কথা ছিল। ভর দুপুরে ভূতুড়ে ভূতুড়ে ভাব। গাড়ি থেকে আস্তে করে নেমে দাঁড়াতেই আদ্র আমরিনের উদ্দেশ্যে নিচু স্বরে বললো,

” পাঁচ মিনিট অপেক্ষা কর গাড়িতে।”

অবাক হলো তুলি। বুঝলো এটা ওদের গন্তব্য নয়। তাহলে আদ্র তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? হাতে থাকা ফোনের দিকে তাকিয়ে তুলি আঁতকে উঠলো। নিশ্চয়ই এতো গুলো কল দিয়ে না পাওয়ায় আদ্রর মাথায় রাগ চেপে বসেছে। শাস্তি দিতে নিয়ে যাচ্ছে না তো!শুকনো একটা ঢোক গিলল। কাঁপা কাঁপা পায়ে আদ্রর পিছন পিছন একটা বড় তুলা গাছের নিচে এসে উপস্থিত হলো। আদ্র চলন থামিয়ে দিতেই প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই স্থির হলো। সন্দিগ্ধ চোখে চারপাশে তাকিয়ে ঠাওর করলো দু’টো হৃদপিণ্ডের নিশ্বাসের শব্দ বিহীন অন্য কোনো মানুষের ছিটেফোঁটাও নেই।

” মোবাইল টা দাও।”

আদ্রর অগ্নি,তেজী কন্ঠে ভড়কে গেল তুলি। এক হাতে শাড়ির কিছু অংশ আঁকড়ে ধরে সঠিক ভাবে বুঝার জন্য বললো,

” জ্বি?”

” গিভ মি ইউর সেল ফোন। ”

ফের রাগান্বিত স্বরে তুলি হকচকিয়ে গেল। কম্পিত হাতে বাড়িয়ে দিল মোবাইল টা। বাড়িয়ে দিতে যতটা না সময় লাগল,আদ্রর প্রচন্ড জোরে মাটিতে আছাড় দিতে এর অর্ধ সময়ও লাগল না। ভেঙে চুরে গেল ফোন টা। সেই সাথে তুলির ভিতরের কোনো একটা অংশ ভাঙনের অনুভবতায় ডুবে গেল। চোখ দুটো অসম্ভব লাল হয়ে আছে আদ্রর। দেখেই আন্দাজ করা যাচ্ছে, এতো সময় বহু কষ্টে রাগ টা চেপে রেখেছিল যা এখন তুলির ফোন টার উপর ঝাড়লো। মর্মান্তিক, করুন দৃষ্টিতে ফোন টার দিকে চাওয়া অবস্থায় কানে আসলো আদ্রর কঠোর স্বর,

” কল যখন ধরবে না তাহলে ফোনের কোনো প্রয়োজন নেই। ইচ্ছে তো করছে মেরে তক্তা বানিয়ে দেয় তোমায়। থাপ্পড় দিয়ে লাল করে দেয় গাল দুটো। কিন্তু কি করবো?আমি তো তোমার কাছে হেল্প লেস। আমার অস্তিত্বে তুমি মিশে নেই, বরং আমার অস্তিত্ব মানেই তুমি। কিভাবে আঘাত করবো নিজের অস্তিত্বে?”

দূর থেকে হিম করা এক শীতল হাওয়া তুলির শাড়ির আঁচল উড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ব্যস্ত হয়ে পড়ল তুলির মন আদ্র কে গভীর ভাবে উপলব্ধি করতে। আদ্র চোখে রাগ ফুটিয়ে বললো,

” কানে ধরো।”

নেত্র যুগল বড়বড় হয়ে এলো তুলির। আদ্রর বলিষ্ঠ হাত টা পরখ করে নিল একবার। থাপ্পড়ের চেয়ে কানে ধরার অপশন টা বেটার মনে হলো। ভেবে নিল একদিন অনেক বড় হবে,অনেক সাহস হবে তখন আর এই রাগী ডাক্তার কে ভয় পাবে না সে। ভয়ার্ত মন নিয়ে কানে ধরলো। পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিয়ে আদ্র চোখ রাঙালো। তুলি বিনা সময় ব্যতীত ভয়ের চোটে আওড়ালো,

” ইহজনমে কোনোদিনও ঘুমাবো না।”

ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটে উঠল আদ্রর। ভয়ে চুপসে গেছে মেয়েটা৷ বোকা হয়ে গেছে বড্ড। হাসি নজরে পড়তেই তুলি থমকালো। কি বললো বুঝতে পেরেই নিজেকে গাঁধি বলে উপাধি দিল। আর আদ্র সামনে এগোতে এগোতে ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে বললো,

“ফলো মি তুলা।”

তুলি খানিক সময় ভাবলো। দ্বিদান্তিতে ভুগলো। তালগোল পাকিয়ে গাছের দিকে চেয়ে বোকার মতো করে বললো,

” আমি নাকি তুলা গাছ?”

ফিরে তাকাল আদ্র। লহু স্বরে বললো,

” আমার তুলা।”

#চলবে,,,,,

(ভুল -ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)