আজ শুভ্রর বিয়ে পর্ব-০৫ এবং প্রথম খন্ড

0
44

#আজ_শুভ্রর_বিয়ে
পর্ব ৫

—————-
সুনশান রাস্তায় নিভু নিভু আলোতে সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলো শুভ্র আচমকা দমকা বাতাস, ছুঁড়ে ফেলে দিলো ওকে রাস্তার একপাশে। হঠাৎ অন্ধকারে ঢেকে গেলো চারিদিক, শুভ্রর চশমাটা ছিটকে পরে গেছে। হাত দিয়ে মাটিতে হাতড়ে হাতড়ে চশমা খুঁজতে লাগলো। কি যেনো একটা নরম নরম লাগলো হাতে। হিস হিস শব্দ শুনতে পেলো। অন্ধকার চোখে সয়ে এসেছে ততক্ষনে, ওর চারিদিকে বিষাক্ত সাপ হাজারে হাজারে কিলবিল করছে।তাদের জলজলে চোখের আলোয় শুভ্র ওর মৃত্যুর ছায়া দেখতে পেলো। শুভ্রর শরীর বেয়ে তীব্র ভয়ের অনূভুতি উথলে উঠলো। না এই অনুভূতি কিছুতেই মস্তিষ্কে পৌছাতে দেয়া যাবেনা, এই ভয়ের খবর মস্তিষ্ক পেলেই পুরো শরীর অসার হয়ে যাবে। তার আগেই ওকে কিছু একটা করতে হবে। বাঁচার একটা শেষ চেষ্টা।
ঠিক তখনই কেউ একজন ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো।
শুভ্র ঝাপসা চোখে দেখতে পাচ্ছেনা কে
একটা চেনা কন্ঠ বলে উঠলো শুভ্র সাহেব আপনার চশমা
এখন চিনতে পেরেছে, ‘তুলি’
এই মেয়েটাই শুধু ওকে এভাবে ডাকে
চশমাটা নিয়ে পরতেই চারিদিক দেখতে পেলো শুভ্র
কই সাপ টাপ তো কিছুই নেই
তাহলে কি ওর মনের ভুল
মুখ তুলে চাইতেই দেখে তুলি হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে
তুলির হাসিমুখ দেখে শুভ্রর ভয় কেটে গেলো।
শুভ্র বললো মিথ্যাবাদী তুলি তোমার হাতটা বাড়াও আমাকে উঠতে সাহায্য করো। তুলি হাত বাড়ালো ঠিকই কিন্তু মুখ ভার করে।
আপনি আমাকে মিথ্যাবাদী তুলি বললেন কেনো?
আর বলবো না তবে তুমি ও আমাকে আর শুভ্র সাহেব বলতে পারবে না।
তাহলে কি বলবো
শুধু ‘শুভ্র’

শুভ্র শুভ্র
ধরমর করে বিছানায় উঠে বসলো শুভ্র।
কিরে এতো বেলা করে ঘুমাচ্ছিস কেনো?
রাতে ঘুম আসছিলোনা।
তুমি যে আজ বাড়িতে।
শুভ্রর বাবা সাধারনত কোনো দিনও বাড়িতে থাকেন না।এমনকি শুক্রবারেও না। শুক্রবার উনি উনার সাংসদীয় এলাকায় যান জনসাধারণের বিভিন্ন অভিযোগ আব্দার শোনার জন্যে। সামনে নির্বাচন তাই উনাকে প্রচুর ব্যস্ত থাকতে হয়।

আজ বাবাকে বাড়িতে দেখে একটু চমকে গেলো শুভ্র
সব ঠিক আছে বাবা?
আজকের দিনে সব ঠিক থাকবে না কেনো? আজকে সব অতি উত্তম থাকবে, আজ যে আমার শুভ্র বাবার শুভ বিবাহ দিবস।
শুভ্র ভুলেই গিয়েছিলো আজ শুক্রবার। আজ সন্ধ্যায় তুলিদের বাসায় যাওয়ার কথা।
তুলিকে নিয়ে দেখা স্বপ্নটার কথা মনে পরে গেলো।
ছোট চাচাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করতে হবে এরকম একটা স্বপ্ন কেনো দেখলো শুভ্র।
বাবা কথা বলেই চলেছেন শুভ্র হা হু করছে
শুভ্রর মার কথা আজ তার অনেক মনে পরছে
উনি থাকলে অনেক খুশি হতেন এক পর্যায়ে বাবার চোখ ছলছল করা শুরু করলো। শুভ্র জানেনা বাবাকে কি বলে স্বান্তনা দিবে। পঁচিশ বছর আগে মরে যাওয়া মানুষের শোকে কেউ কাঁদলে তাকে কি বলে স্বান্তনা দেয়া যায় শুভ্রর জানা নেই আর এমন ও না বাবার সাথে ওর কোনো ঘনিষ্ট সম্পর্ক বাবাকে ছোটো বেলা থেকে তেমন কাছে পায়নি কখনো। শুভ্রর বিছানার পাশে রাখা ওর মার ছবিটা নিয়ে ডুকরে কেদে উঠলেন গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের খাদ্য উপমন্ত্রী তোবারক হোসেন চৌধুরী। শুভ্র অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।ওর ভয়াবহ রকম ইমোশন সমস্যা রয়েছে। কোন পরিস্থিতিতে কার সাথে কেমন আচরন করতে হবে ও বুঝে উঠতে পারেনা। অন্য ছেলেরা হলে হয়তো এতক্ষনে বাবাকে
জড়িয়ে ধরতো বাবার সাথে নিজেও কয়েক ফোটা চোখের জল ফেলতো। কিন্তু শুভ্র সবার মতোনা ওর প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে।বাবার কান্নাটা আসল না মেকি ধরার চেষ্টা করছে।

বাবা ছেলে কি নিয়ে আলাপ হচ্ছে?
শুভ্রর সৎ মা রেহানা বেগম এসে ঘরে ঢুকতেই বাবা খুব কৌশলে শুভ্র মার ছবিটা বালিশের তলে গুঁজে দিলেন। তবে মজার একটা ব্যাপার হলো শুভ্রর বাবার থেকে কোটি গুন বেশি চালাক হলো শুভ্রর সৎমা। অনেকটা তুমি চলো ডালে ডালে আর আমি চলি পাতায় পাতায় অবস্থা।
রেহানা বেগম যাকে ছোট বেলা থেকে শুভ্র আম্মা ডাকে। উনিই শিখিয়েছেন আম্মা বলা। উনার মতো বিদুষী মহিলা কমই আছে পৃথিবীতে আর সত্যি কথা বলতে নিজের আপন বাবার থেকে সৎ মার প্রতি ওর আস্থা বেশি।
ছেলের আজ বিয়ে ছেলেকে ধরে বসে থাকলে হবে।
যাও শুভ্র তুমি হাত মুখ ধুয়ে আগে নাস্তা করে নাও।
আপনি একটু আমার সাথে আসেন দরকার আছে।

————-
রেহানা বেগমের বিছানা গয়নার বাক্স দিয়ে ভরা। শুভ্রর মার সব গয়না সিন্দুক থেকে বের করা হয়েছে।

এগুলো শাহানার গয়না না..?

– জ্বী

সব বের করেছো কেনো

– শুভ্রর বউকে দেয়ার জন্যে

দুই তিন সেট দাও সব প্রথমেই দিলে পরেতো মেয়ে গয়না নিয়েই ভেগে যাবে

আপনার কি মনে হয় আমি এমন মেয়ের সাথে ছেলের বিয়ে ঠিক করেছি যে গয়না নিয়ে ভেঙ্গে যাবে, এতোদিন সংসার করেও আপনি আমাকে চিনতে পারলেন না

না আসলেই চিনতে পারলাম না
আমি শুভ্রর জন্যে কতো বড় বড় বিয়ের প্রস্তাব আনলাম মন্ত্রী মেয়ে, জাজের মেয়ে, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প বোর্ডের চেয়ারম্যানের মেয়ে তাদের কাউকে শুভ্রর পছন্দ হলোনা। আর তুমি একটা মেয়ে দেখালে তাকে ছাড়া ছেলে আর কাউকে বিয়ে করবেনা।
মেয়ের বাবা রুপালী ব্যাংকের ক্যাশিয়ার। প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করলে এ পরিচয় আমি কি করে দিবো ..?

– আর কিছুক্ষন পর বিয়ে এখন এসব বলে কি লাভ।শোনেন আমার কাছে শাহানার গয়না আমানত হিসাবে ছিলো এখন ওর ছেলের বউকে আমি সেই আমানত বুঝিয়ে দিতে চাই।

করো তোমার যা মন চায়।তবে আমাকে এ বিয়েতে নিতে পারবেনা।

মন্ত্রী সাহেব বের হওয়ার পর স্বস্তির শ্বাস নিলো রেহানা। বিয়েতে যাবে না, না যাক বিয়ে জোড় করে ভেঙ্গে দিতে বলেনি তাই বেশি।

আজ এতোদিন পর তার শাহানার গয়নার জন্যে দরদ উথলে উঠছে, শাহানার গয়না আরো অনেক ছিলো কদিন পর পর মন্ত্রী মশাই নতুন প্রেমিকা জোগাড় করেন। তারপর হঠাৎ একদিন এসে বলবেন রেহানা শাহানার গয়নার সিন্দুকের চাবিটা দাওতো। প্রথম দিকে বুঝতে পারেনি গয়নার সেট নিয়ে উনি করেন কি। যেদিন থেকে বুঝতে পারেন আর কোনোদিনও সিন্দুকের চাবি ওনাকে দেননি।

————
ছোটো বেলা থেকেই খুব ভালো ছাত্র ছিলো শুভ্র। সারাদিন শুধু পড়া শোনা নিয়ে ই ব্যস্ত থাকতো। ওর যখন পনেরো বছর বয়স সেবার আম্মা খুব ঘটা করে ওর জন্মদিনের আয়োজন করলেন। শুভ্রকে ডেকে বললেন শুভ্র ক্লাসে তোমার সব বন্ধুদের দাওয়াত করবে। পরদিন ক্লাশে যাওয়ার পর শুভ্র খেয়াল করলো বন্ধুত্ব তো দূরের কথা ক্লাসের বেশিরভাগ ছেলের নামই ওর জানা নেই। পরবর্তি জীবনে খুব ইচ্ছা থাকলেও আর অন্য ছেলেদের মতো বন্ধুদের দলে ভিড়তে পারেনি কোনোদিন। সেই ছোটবেলার সংকোচ অন্যদের সাথে কথা বলার আডষ্টতা কিছুতেই দূর করতে পারেনি। গোয়েন্দা গল্প বা সায়েন্স ফিকশন পড়ে বেড়ে উঠা শুভ্রর প্রেমের গল্পের সাথে প্রথম পরিচয় নিমাই ভট্টাচার্যের উপন্যাস মেম সাহেবের মাধ্যমে। তখন থেকেই ও অপেক্ষায় আছে ওর নিজের জীবনের মেম সাহেবের জন্যে। তুলির আগে অনেক মেয়ে দেখেছে ও। মার জন্যে দেখতে হয়েছে কিন্তু কোনো মেয়ের সাথেই কথা বলে ভালো লাগেনি। সবাই কেমন যেনো কৃত্রিম শিখিয়ে দেয়া মেপে মেপে কথা বলে,
একমাত্র তুলিই ছিলো বাঁধন ছাড়া যা মনে আসছে তাই বলছে ওর এসব উল্টা পাল্টা কথা শুনে শুভ্র ওকে পছন্দ করুক না করুক তাতে কিছু যায় আসেনা। তুলির এই স্বভাবটাই শুভ্রকে বেশি মুগ্ধ করেছে। তবু মনে একটু খটকা আছে আসলেই কি মেয়েটা ওর ওই মামাকে ভালবাসে। যদি তেমন হয় তাহলে অবশ্যই বিয়ে ভেঙ্গে দিতো সেটা যেহেতু দেয়নি তাহলে অন্য কথার মতো এই কথাটাও মিথ্যা বলতে পারে।

সন্ধ্যার কিছু পরে শুভ্ররা রওনা দিবে ঠিক তখুনি চারিদিকে প্রবল শব্দ করে কাল বৈশাখী ঝড় শুরু হলো। বরযাত্রী বলতে শুভ্রর মা আর ওর দুঃসম্পর্কের এক খালা। শুভ্রর বাবাকে ওর মা কিছুতেই বিয়েতে যাওয়ার জন্যে রাজী করাতে পারেনি। শুভ্রর আম্মার ধারনা একবার বিয়ে করে বউ নিয়ে চলে আসলে শুভ্রর বাবা আর না করতে পারবেন না। আর কিছু না হোক মান সম্মানের ভয়ে চুপ থাকবেন। আর পরে অনুষ্ঠান করে সবাইকে জানানো যাবে। মার এই সিদ্ধান্তের একটাই কারণ বাবা না চিনলেও মা শুভ্রকে ভালো করেই চেনে এই ছেলে সহজে কাউকে পছন্দ করেনা। আর একবার যখন পছন্দ করেছে সেই মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে না পারলে সারা জীবন আর ওকে বিয়েই করানো যাবেনা।

চিরাচরিত রীতিতে জামাইরা যেই সাজ দেয় সেই সাজ না দিয়ে নরমাল শার্ট প্যান্ট পরেই বিয়ে করতে রওনা হলো শুভ্র।কেউ যদি কিছু বুঝে যায় তাই আম্মা রিস্ক নিতে রাজী হয়নি। আপাতত বিয়েটা জানাজানি হোক উনি চাচ্ছেন না।একবার কবুল পড়া হয়ে গেলে আর টেনশন নাই।

অবশেষে বর এসেছে…
পুরো বাড়িতে একটা হৈ চৈ শুরু হয়ে গেলো। সবাই খুশি হয়ে বেরিয়ে গেলো বর দেখতে, কি যেনো সবাই কেনো এতো খুশি তুলিরতো কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে আর একই সাথে প্রচন্ড রাগ হচ্ছে শুভ্রর উপর। একলা ঘরে বসে কাঁদতে কাঁদতে প্রতিজ্ঞা করলো, ‘তুলি কোনোদিনও শুভ্রকে ভালোবাসবে না কোনো দিনও না।’

সাদা শার্ট আর নীল জিনস পরা শুভ্র যখন গাড়ি থেকে নেমে ভেজা চুপচুপে প্যান্ডেলের নিচে দিয়ে কাদা পানি টপকে বারান্দায় উঠে এলো, তুলিদের বাড়ির সবাই ভুলেই গেলো বর যে বরের পোশাক পরেনি। উল্টো এমন দেবদূতের মতো বর দেখে সবার চোখ ছানাবড়া এমন কি এতক্ষন ধরে গজগজ করতে থাকা নাইমা ফুপু ও একদম চুপ। বড় মামাই প্রথম খেয়াল করলেন ব্যাপারটা। আরে নতুন জামাই কি শার্ট প্যান্ট পরে বিয়ে করবে নাকি। তুলির মা আগেই পান্জাবি কিনে রেখেছিলেন মেয়ের জামাইকে দেয়ার জন্যে। সেটাই পরতে দেয়া হলো শুভ্রকে। ঘিয়া রংয়ের পান্জাবি, মিষ্টির দোকানের ঘি এর যে রংটা থাকে ঠিক সেই রংয়ের, একে চাপা হলুদ রং ও বলা যায়। শুভ্রর গায়ের রংয়ের সাথে একদম মিশে গেছে। কি যে অপূর্ব লাগছে।

তোয়া এসে বললো আপা সাঁতশো পয়ত্রিশ টাকা আর ফেরত দেয়া লাগবে না।

– কেনো… সকালে না লেনদেন চুকাতে চাচ্ছিলি

এখন অন্যরকম লেনদেন হবে

– মানে

– তোমাদের ছেলে হলে আমার মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে হবে
আর মেয়ে হলে আমার ছেলের সাথে
রাজী থাকলে সাতশো পয়ত্রিশ টাকা মাফ।

– তোয়ার কথা শুনে তুলি না হেসে পারলোনা।

হাসছো কেনো অমন দেবদূতের সাথে বিয়ে হলে তোমার ছেলে মেয়েতো সুন্দর হবেই।তাইনা…

মাত্র একহাজার এক টাকা দেনমোহর ধার্য করে তুলি আর শুভ্রর বিয়ে হয়ে গেলো। তুলির কবুল পড়ানোর সময় হুট করে জোড়ে বাজ পরে কারেন্ট ও চলে গেলো। হঠাৎ দরকারে খুব জরুরি জিনিষ যেমন পাওয়া যায়না তেমনি অনেক খুঁজেও মোমবাতি কোথাও পাওয়া গেলোনা। কাজী সাহেবের তাড়া আছে সোহাগ কমিউনিটি সেন্টারে যেতে হবে আরেকটা বিয়ে পড়াতে, সেখান থেকে বার বার ফোন আসছে। জহির মামা খুব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন সোহাগ ১ না সোহাগ ২ ?
কাজি সাহেব জহির মামার কথায় খুব খেপে গেলেন আরে মিয়া সোহাগ কতো নম্বর সেটা দিয়া আপনে কি করবেন। বিয়ের বাড়ি না আছে জেনারেটর না চার্জ লাইট একটা মোমবাতি আনতে পারতেসেন না আপনারা। বড় মামা জহির মামাকে ইশারায় ঘর থেকে বের হয়ে যেতে বললেন। এক হিসাবে ভালই হয়েছে উনি ঘরে থাকলে তুলির জন্যে কবুল বলা অসম্ভব হয়ে যেতো। অবশেষে তুলির চুপিচুপি সিগারেট খাওয়া বাবা, মার ভয় উপেক্ষা করে পকেট থেকে লাইটার বের করে ধরালেন, লাইটারের সেই কাঁপা কাঁপা আলোতেই কাঁপা কাঁপা হাতে তুলি জীবনের সবচেয়ে বিদঘুটে স্বাক্ষরটা করলো।নিজের স্বাক্ষর নিজেই পড়তে পারছেনা মনে হচ্ছে তেলাপোকাকে পায়ে কালি দিয়ে হাটানো হয়েছে। তুলি কাজি সাহেবকে জিজ্ঞেস করলো কেটে আবার করি। কাজি সাহেব মনে মনে ভাবছেন এতো দেখি আজব পরিবার জীবনে প্রথম কোনো কনেকে দেখলাম বিয়ের স্বাক্ষর আবার করতে চায়। মুখে অবশ্য বললেন না আম্মাজান আর করা লাগবেনা।

বাজ পরে খুব বড় কোনো ট্রান্সফর্মার বাস্ট হয়েছে। বড় মামা বিদ্যুত অফিসে ফোন দিয়ে জানতে পেরেছেন মাঝ রাতের আগে আর কারেন্ট আসবে না। কিছুক্ষন আগে মোমবাতি পাওয়া যাচ্ছিলো না এখন পুরো ঘরে শুধু মোমবাতি আর মোমবাতি। কোনো এক ফাকে বড় মামা জহির মামাকে পাঠিয়ে কয়েক ডজন মোমবাতি আনিয়ে ফেলেছেন। সেই মোমবাতির আলোতেই আয়নার ভেতর দিয়ে তুলিকে দেখলো শুভ্র। কি জানি হয়তো জহির ঘরে ছিলো এজন্যে কিনা তুলি আর চোখ চুলে তাকাতে পারলোনা। যদি তাকাতো তাহলে শুভ্র দেখতে পেতো তুলির দুচোখ জলে ভেসে যাচ্ছে। এতক্ষন তেমন বুঝতে পারেনি সব কিছু কেমন ঘোরের মতো মনে হয়েছে এখন মনে হচ্ছে জহিরকে না দেখে বাকিটা জীবন কি করে কাটাবে তুলি।কয়েকবার ঘট ঘট করে বিকট শব্দে জেনারেটরটা চালু হতেই সারা বাড়ি আলোতে ঝলমল করে উঠলো।বাড়িতে যে এতো আলোকসজ্জা হয়েছে এই প্রথম দেখলো তুলি।

ঝলমলে লাল হলুদ আলোর মধ্যে দিয়ে তুলি শুভ্রর হাত ধরে রওনা হলো নতুন জীবনের পথে। বাবা যখন শুভ্রর হাতে তুলির হাত তুলে দেয় তখন থেকে আর হাত ছাড়েনি শুভ্র। গাড়িতে উঠেও হাত ধরেই বসে আছে। পাশে শুভ্রর মা বসা। তুলির লজ্জা করছে।আস্তে করে হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করলো, কিন্তু শুভ্র আরো শক্ত করে তুলির হাতটা ধরে থাকলো। তুলি পিছনে তাকিয়ে দেখলো সবাই দাঁড়িয়ে আছে মা,বাবা,তোয়া, বড়মামা তুলির চোখ যাকে খুঁজছে এক কোনায় সেই জহির মামাকেও দেখলো। মনে হলো ওনার চোখ ঝাপসা হয়ে আছে। খুব চেয়েছিলো জহির এমন শক্ত করে ওর হাতটা ধরবে।ভাবতে ভাবতে ওর চোখও আবার ঝাপসা হয়ে উঠলো।

জীবনের প্রথম প্রেম কেউ কি কখনো ভুলতে পারে…
….যদি না পারে…
কি করে কাটাবে সারাটা জীবন…
তাও আবার এমন কারো সাথে…
….. যাকে ভালোইবাসেনা…?

‘আজ শুভ্রর বিয়ে’
গল্পের এখানেই সমাপ্তি
এর পরের গল্প ‘তুলির সংসার’
খুব শীঘ্রই আসবে আমার গ্রুপে যার লিংক কমেন্ট সেকশনে পেয়ে যাবেন

‘ধন্যবাদ’ গল্পটি পড়ার জন্যে …