আবার প্রেম হোক পর্ব-৩৪+৩৫+৩৬

0
684

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

৩৪.
“আমি ভুল করেও এখানে আর দ্বিতীয়বারের জন্য পা রাখবোনা প্রণয়”

বেশ কঠোরভাবেই কথাটা গাড়ির সিটে বসে থেকে প্রণয়ের উদ্দেশ্যে বলে চাঁদ।চাঁদের কথার প্রেক্ষিতে শোনা যায় প্রণয়ের শান্ত জবাব,

“আমার কোলে চড়া যে আপনার শখে পরিণত হয়েছে,বললেই পারেন মিস রেডরোজ”

গাড়ির দরজা খুলে চাঁদের কানের কাছে ফিসফিসিয়ে কথাটা বলেই ঘাড়ে হালকা করে ফু দেয় প্রণয়।অতঃপর আবেশে চোখজোড়া বন্ধ করে চাঁদ।শরীরের লোমকূপ নিমিষেই দাড়াতে বাধ্য হয় তার।প্রণয়ের এরূপ শীতল কন্ঠ আর এতোটা কাছে আসা চাঁদের সহ্যসীমার বাইরে!এরূপ কিছু হলেই নিজেকে ভুলতে বসে সে।লোকটা এমন কেনো করে?তার মস্তিষ্কে আদোতে চলছে টা কী?ভাবনায় ভাটা পড়ে যখন সে নিজেকে প্রণয়ের বাহুডোরে শূন্যে ভাসমান পায়।তৎক্ষনাৎ চোখ খুলে বলে,

“দে..দে…দেখুন।সবার সামনে এভাবে বার বার কোলে চড়িয়ে আপনি কী প্রমাণ করতে চান?খুব ভালো স্বামী আপনি?”

গাড়ির দরজা লাগিয়ে দিয়ে চাঁদকে শক্ত করে চেপে ধরে কলেজের ভেতর পা বাড়াতে বাড়াতে প্রণয় বলে,

“তবে কি আমি খারাপ স্বামী চন্দ্র?আপনার সাথে এখনো পর্যন্ততো খারাপ আচরণ না করাতেই এ কথা শোনালেন,করলে মা!মলা টামলা দিয়ে দিতেন নিশ্চয়ই!”

চাঁদ অপ্রস্তুত হয়ে বলে,

“আ..আমি সেটা বলতে চাইনি বা বলিওনি”

“ফর ইওর কাইন্ড ইনফরমেশন,আপনাকে আমি জানিয়ে দিচ্ছি যে,শুধুমাত্র পায়ের ক্ষ!তটা বেশি সেজন্যই কোলে তুলতে হচ্ছে বারবার।নাহয় পা দিয়ে র*ক্তক্ষর!ণ হবে।একজন ডাক্তার হিসেবে আপনার সাথে শুধুই মানবিকতা দেখাচ্ছি এর চাইতে বেশি কিছু নয়”

চাঁদ প্রণয়ের বিড়ালাক্ষীজোড়ার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আপনমনে বলে ফেলে,

“আর যখন হৃদমাঝারে র*ক্তক্ষর!ণ হয়েছিলো তখন?তখন কেনো তা বন্ধ করার জন্য আসলেন না প্রণয়?”

প্রণয় চাঁদের আস্তেসুরে বলা কথা আবছা শুনতে পেয়ে জিজ্ঞেস করে,

“কিছু বললেন?”

চাঁদ ম্লান হেসে দৃষ্টি নামিয়ে বলে,

“নাতো।সেদিনও কিছু বলিনি আজও হয়তো কিছুই বলিনি।বললে অবশ্যই শুনতে পেতেন”

চাঁদের কন্ঠে কি যেনো ছিলো!কিসের চাপা এক আ*র্তনাদ!যা বের হয়ে আসলো দীর্ঘশ্বাস স্বরূপ।প্রণয় কি তা বুঝতে পারলো?পেলো কি শুনতে সেই চাপা দীর্ঘশ্বাসটুকু?নাকি অজানাই থেকে গেলো অভিমানিনীর অভিমানটুকু?তবে কিসের সেই অভিমান?কার সাথে?এবং কেনো?
.
.
.
.
.
.
.
.
“আপনি ভাবলেনও কি করে আমি আবার এখানে পড়বো?পড়ার হলে আমি অবশ্যই অতোদূর যেতাম না”

“আমি আপনার মত জানতে এখানে আনিনি।আমাদের সবার মতামতের উপর আপনাকে আমল করতে এনেছি”

প্রণয়ের কথা শুনে খানিকটা চমকায় চাঁদ।অতঃপর বলে,

“আপনাদের সবার মানে?”

“আব্বু,আমি এবং ভাইয়া আমরা সবাই চাই আপনি এখান থেকেই পোস্ট গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে ডাক্তার হয়ে বের হন।আর যেই বাকি ইন্টার্নিটুকু আছে সেটুকুও এখান থেকেই করবেন।আমি আলাপ করে রেখেছি আর তারাও চায় তাদের সাবেক টপার মুহাইমা ঢামেক থেকে ঢামেকের ই বড় সার্জন হয়ে বের হোক”

“আপনি আমার সাথে মজা করছেন তাইনা প্রণয়?”

“আপনার সাথে আমার কোনো রসিকতার সম্পর্ক নেই”

প্রণয়ের গম্ভীর কন্ঠের জবাবে চাঁদ বলে,

“আব্বু?এমনকি ভাইয়াও চায় আমি আবার এই মেডিকেল থেকে পড়ি?এখান থেকেই ডাক্তার হয়ে বের হই?”

“ওয়েইট”

বলেই মোবাইল বের করে কারো নাম্বার ডায়াল করে।ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই প্রণয় বলে,

“নিন ভাইয়া কথা বলুন।সে আমার কথা মানছেই না”

অতঃপর চাঁদের কাছে ফোন এগিয়ে দিতেই সে সেটা কানে লাগিয়ে সবকিছু শুনে শেষে বলে,

“ঠিক আছে”

বিকেলবেলা,
উজানের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে ইতস্ততবোধ করে দরজায় টোকা দেয় চাঁদ।উজান মোবাইলে ব্যস্ত ছিলো তাই প্রথম টোকা শুনতে পায়না।দ্বিতীয়বার আওয়াজ পেতেই দরজার পানে চেয়ে চাঁদকে দেখে বলে,

“আরে ভাবি।দাঁড়িয়ে আছো কেনো ওখানে?এসো ভেতরে এসো”

চাঁদ খুড়িয়ে খুড়িয়ে হেটে রুমে প্রবেশ করতেই উজান বিছানার এক কোনায় বসে চাঁদকে জায়গা করে দিয়ে বলে,

“এই কা*টা পা নিয়ে কেনো আসলে?আমায় একটা মেসেজ করে দিতে আমি ই চলে আসতাম।এখন বসো”

চাঁদ বিছানার সামনে দিয়ে অল্প একটু জায়গায় বসে বলে,

“সমস্যা নেই উজান।পা ঠিক হয়ে যাবে।তোমরা খামোখাই টেনশন নিচ্ছো।তাছাড়া জরুরি বলেই আসতে হলো”

খানিকটা হেসে উজান বললো,

“আচ্ছা তাহলে বলো,কী এমন জরুরি কথা?তাও আবার তোমার এই হাভাগোভা দেবরের কাছে?”

“আমার কোনো দেবরই হাভাগোভা না।সবাই ই কিন্তু বেশ পাকা বুঝলে?”

বলেই উজানের কান মলে দিতেই উজান কানে হাত রেখে বলে,

“ছাড়ো ভাবি ছাড়ো”

“তুমি কি ভেবেছো তলে তলে যে খিচুড়ি পাকাও সে খবর আমি রাখিনা?”

উজান বিস্ময় নিয়ে বলে,

“কা…কিসের খিচুড়ি ভাবি?আমি খিচুড়ি দূর ভাতই পাকাতে পারিনা”

কানে আরেকটু জোরে মো!চ!ড় দিয়ে চাঁদ বলে,

“তাই না?মোবাইলে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসা।চূড়ায় উঠে অন্ধকারের মাঝে ভিডিও কল দেওয়া আমি কি কিছুই বুঝিনা ভেবেছো?”

উজান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলে,

“ভাবি ওটাতো আমার জাস্ট….”

ভ্রু উচিয়ে চাঁদ বলে,

“জাস্ট ফ্রেন্ড তাইনা?”

“হ্যা…মানে ”

“সত্যিটা বলবে নাকি কান একদম ছি*ড়ে ফেলবো কোনটা?”

“আমি কিন্তু এখনো বেকার ভাবি।তাই কাউকে জানাই নি”

এবার কান ছেড়ে দিয়ে চাঁদ বলে,

“হ্যা বেকার তো কী হয়েছে?ক’দিনই বা আর থাকবে?অলরেডি ফাইনাল ইয়ারে উঠে গেছো।দিয়েও ফেলবে ক’দিন বাদেই।বিয়ে তাহলে জলদি খাচ্ছি কী বলো?”

“চাকরি পাওয়া কি এতোই সহজ ভাবি?”

কপাল কুচকে চাঁদ বলে,

“তোমাদের তো এতো এতো সোর্স।চাকরি কেনো পাবেনা?তাছাড়া বাবা আর আংকেলেরই তো পারিবারিক কোম্পানি আছে”

উজান নাক-মুখ কুচকে বললো,

“আর তুমি ভাবো আমি বাপ-চাচার হালে নিজের জীবন কাটাবো?আমাদের ফ্যামিলিতো এমন না ভাবি।এখানে সব ছেলে-মেয়েই সমান।আর সবারই একটা না একটা গোল আছে।এই যেমন প্রণয় ভাই ডাক্তার হলো।আপু ব্যারিস্টার।তেমনি আমিও টিচিং প্রফেশন বেছে নিয়েছি।আমিতো দু’টো কোচিং এর টিচারও ভাবি।হোপফুলি একদিন খুব ভালো একজন প্রফেসর হতে পারবো”

উজানের কাধে আলতো করে চাপড় মে!রে চাঁদ বলে,

“একদিন সব হবে উজান,ইনশাআল্লাহ।আর তাহলেতো তুমি বেকার না।বেকার বলছো কেনো নিজেকে?”

উজান হঠাৎ হেসে দিয়ে বলে,

“একজন কোচিং এর টিচার,যার কিনা মাসিক বেতন এই পাঁচ হাজারেরও নিচে তার কাছে মেয়ে বিয়ে দেবে কোন বাবা ভাবি?”

“যাকে ভালোবাসো তার বাবাই দেবেন”

“তোমার মতো ম্যাচিওর মেয়ের মুখে এসব কি মানায় ভাবি?”

“একটা কথা বলি শোনো”

“হ্যা অবশ্যই”

অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে চাঁদ বলে,

“একটা ছেলে ছিলো মেয়েটাকে ভীষণ ভালোবাসতো বুঝলে?”

“আচ্ছা,তারপর?”

“মেয়েটাও খুব বাসতো।দু’জন দু’জনকে ছাড়া ম*রে যাবে অবস্থা।মেয়েটা খানিকটা শ্যামলা আর একটু স্বাস্থ্যবান ছিলো।নিজেকে নিয়ে সবসময় অসন্তুষ্ট ছিলো।তাই ভয় পেতো খুব যদি ছেলেটাকে হারিয়ে ফেলে?

“তারপর?”

“ছেলেটা মেয়েটাকে অসম্ভব ভালোবাসতো।তাই লুকিয়ে মেয়েটাকে নিজের করে নেয়।যাতে করে মেয়েটা আর ভয় না পায়”

“মানে?বিয়ে করে তারা?”

“হ্যা।কিন্তু তবুও কী হলো জানো?”

উজান খানিকটা ঘেমে গেছে।হৃদস্পন্দন বেড়েছে অনেকখানি।অস্তির হয়ে সে জিজ্ঞেস করে,

“কী হলো ভাবি?”

“মেয়েটা ছেলেটাকে ধো*কা দিলো।খুব চতুরতার সাথে ডি*ভোর্স পেপারে ছেলেটার সাইন নিয়ে নিলো”

বেশ অবাক হয়ে উজান বলে,

“কী!”

“হিম।এরপর একদিন ছেলেটার সামনে এসে সব দেখিয়ে বিয়ের কাগজ ছি*ড়ে ফেললো।ডি*ভোর্স পেপার একহাতে ধরিয়ে দিয়ে অপরহাতে মেয়েটার বিয়ের কার্ড দিলো।এরপর কি হলো জানো?”

ঢোক গিলে উজান বলে,

“কী ভাবি?”

“অতঃপর ছেলেটা ভেঙে গেলো।প্রেম-ভালোবাসা থেকে বিশ্বাস উঠে গেলো।কোনো মেয়েকে আর বিশ্বাস করতে পারলোনা।মেয়ে মানুষ দেখলেই মেজাজ চ!টে যায় তার”

“কে সে ভাবি?”

“আছে একজন।তাই বলছি যা করবে সাবধানে করবে।মেয়ে মানুষ বড়ই ছলনাময়ী উজান”

উজান অবাক হয়ে বলে,

“তুমি মেয়ে হয়ে এ কথা বলছো ভাবি?”

চাঁদের শান্ত জবাব,

“হ্যা বলছি।মেয়েরা ছলনাময়ীই।এমনকি আমি নিজেও”

এবার বিস্ময়ে চোখজোড়া বড় করে কপাল কুচকে উজান বলে,

“কিসব বলছো!”

চাঁদ খানিকটা হেসে বলে,

“আমি তোমার ভাইয়ের সাথে ছলনা করেছি উজান,বুঝলে?খুব বড় ধরনের ছলনা।চাঁদ ছলনাময়ী।প্রণয়ের লালগোলাপ কেবলই ছলনাময়ী এক নারী।তাই নারী থেকে সাবধান উজান!”

“আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা ভাবি”

চাঁদ গম্ভীর হয়ে বলে,

“বাদ দাও।যেজন্য এসেছিলাম।তুমি ড.আরফিদকে চেনো?”

“ড.আরফিদ?কার কথা বলছো?অরণ ভাইয়াকে যে ট্রিটমেন্ট করছে?সেই নিউরোলজিস্ট?ফায়ান ভাইয়ার কথা বলছো তুমি?”

“হ্যা হ্যা।তার পুরো নাম ড.আরফিদ ফায়ান তাইনা?”

“হ্যা।প্রণয় ভাইয়ের দু’ব্যাচ জুনিয়র ছিলো।একই মেডিকেল থেকে”

“আচ্ছা তার নাম্বারটা তোমার কাছে আছে?”

“ফায়ান ভাইয়ের নাম্বার দিয়ে তুমি কি করবে ভাবি?তাছাড়া আজ যেই ছেলেমেয়েগুলো আসলো।দেখেতো লাগলো তোমরা পূর্বপরিচিত।ওখানেইতো ফায়ান ভাইও ছিলো”

এবার নিশ্চিত হয়ে চাঁদ বললো,

“আচ্ছা!তাহলে ঐ ফায়ানই অরণের ট্রিটমেন্ট করছে?”

“হ্যা”

“অরণ কোথায় আছে তুমি জানো?”

“তাতো জানিনা ভাবি।ফায়ান ভাই,প্রণয় ভাই আর মির ভাইয়েরাই জানে সে খবর।আর কাউকে বলেনি”

“আচ্ছা ঠিক আছে।আসছি”

বলে উঠে যেতে নিয়েই আবারও উজানের দিকে ঘুরে বলে,

“আর হ্যা প্রেম করছো ঠিক আছে।তবে সাবধানে।লুকিয়ে চুরিয়ে বিয়ে শাদি করবেনা।আর কেউ সাপোর্ট দিক না দিক।আমি দেবো।বিয়ে করতে হলে জানিয়ে শুনিয়ে করবে।মেয়েকে ডিরেক্ট ঘরে তুলবো।তোমার বাড়িতে না মানলে আমি আমার বাড়িতে তুলবো তাকে।তবুও আমায় জানিয়ে করবে সব।বুঝেছো?”

উজান চাঁদের কথায় ঠোট প্রসারিত করে বললো,

“অবশ্যই ভাবি।তোমায় জানিয়েই যা করার করবো।ভাবিরাইতো এসব বিষয়ে দেবরদের হেল্প করে।আর তুমিতো বেস্ট ভাবি ইন দি ওয়ার্ল্ড!ভাইয়াকে যতই থ্যাংক্স দিই না কেন ততই কম হয়ে যায়।বেস্ট একটা ভাবি গিফট করেছে আমাদের সবাইকে”

“তুমি আমার ছোট ভাইয়ের মতো।আমি চাই আমার সব ভাইয়েরা সুখে থাকুক”

বলেই প্রস্থান করে চাঁদ।সেখান থেকে এসে নিজের অর্থাৎ প্রণয়ের রুমের বিছানায় শুয়ে পড়ে।কিছুক্ষণ পর বিছানা থেকে উঠে বসে ফোন নিয়ে কন্টাক্টলিস্টে যায় সে।সেখানে খুঁজে খুঁজে ‘এম ভাইয়া’ লিখা নম্বরটার দিকে অনেক্ক্ষণ চেয়ে থাকে।অতঃপর অনেকগুলো বছর পর আবার ডায়াল করে ‘এম ভাইয়া’ নামে সেভ করা সেই নম্বরটিতে।অতঃপর দু’বার রিং হতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসে মিরের কন্ঠস্বর,

“কত বছর পর ঘসেটি বেগমের নাম ফোনে জ্বলজ্বল করছে ঘসেটি”

চাঁদ ম্লান হেসে বললো,

“আমি খুবই ভাগ্যবতী।একসাথে এতোগুলো ভাই পেয়ে”

“কিন্তু মিরের মতো ভাই আর দু’টো পাবেনা ঘসেটি”

“হ্যা হ্যা।মি.মিশকাত মির ওরফে চাঁদের মিরজাফর ভাইয়া”

“আচ্ছা হঠাৎ কল দিলে?”

“আসলে ভাইয়া আজ সকালে ফায়ানরা এ বাড়ি এসেছিলো।ইপ্সিরা আরকি।আমার সাথে দেখা করতে।কিন্তু প্রণয়ের সাথে মেডিকেল যেতে হয়েছিলো তাই আর ওদের সাথে তেমন কথা হয়নি।তুমি কি ফায়ানের নাম্বারটা আমায় দেবে?”

“ফায়ানের নাম্বার?তোমার কাছে নেই?”

“আগেরটা আছে।ওটাই কি চালায়?”

“হ্যা ওটাও চালায় আবার নতুন আরেকটা নিয়েছে।আমি তোমায় মেসেজ করছি সেটা দাড়াও”

“ঠিক আছে ভাইয়া”

দীর্ঘ পাঁচ বছর তিন মাস তেরো দিন পর সচক্ষে অরণকে দেখছে চাঁদ।নির্নিমেষ তাকিয়ে আছে তার পানে।নেত্রে তার অসহায়ত্ব।তার জন্যইতো ছেলেটার আজ এই দশা।না সেদিন সে ওভাবে দৌড়িয়ে যেতো না ওরূপ কান্ডগুলো হতো।আর না নি*স্তেজ হয়ে প্রাণবন্ত ছেলেটাকে এভাবে পড়ে থাকতে হতো।প্রণয় বোধহয় ঠিকই বলে।সে আসলেই একটা খু*নী!আস্তে আস্তে অরণের দিকে এগুতে এগুতে চাঁদের চোখের সামনে ভেসে উঠে সেদিনের বীভ!ৎস!কর মুহূর্তগুলো!মস্তিষ্কের নিউরনগুলো সেসব স্মৃতি স্মরণ করতেই লোমকূপ দাঁড়িয়ে যায় তার।নিশ্বাস আটকে আসে!কেমন দমব*ন্ধকর পরিস্থিতি!এর তুলনায় ম*রে যাওয়াও বোধহয় ঢের!স্মৃতিপটে ভেসে এলো অরণের হাত ধরে দৌড়ানোর মুহুর্তগুলো।অরণের ক্ষ*তবিক্ষ*ত হওয়া হাত আর পিঠের দৃশ্যটুকু মনে পড়তেই ঘেমে যায় চাঁদ।কি ব!র্বর সেই দৃশ্য!কি বি!শ্রী ওসব স্মৃতি!ওভাবে ছু!রিকাঘা!ত কেউ কাউকে করতে পারে?একটুও কি বুক কাপলোনা তাদের?হৃদয়ে কি একটুও ব্যথা হলোনা ছেলেটাকে নির্ম*মভাবে মা!রতে?একজন ব্যক্তির প্রাণের মূল্য কি এতোটাই নগন্য যে হ*ত্যার মতো চেষ্টা করতেও কারো বুক কাপেনা?নিষ্পাপ ছেলেটার দোষই বা কী ছিলো?এইতো?সে চাঁদের সঙ্গ দিয়েছিলো তাই?নাকি চাঁদের সাথে সেদিন ছিলো তাই?চাঁদের জন্যইতো আজ অরণের এ নি*র্ম*ম পরিণতি।চোখজোড়া বুজে নেয় চাঁদ।সেইসাথে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে অঝোর ধারার নোনাজল।কে বলেছিলো তাকে এতো প্রতিবাদী হতে?একটু কম হলে কি চলতোনা?প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্র*তিশো*ধের সম্মুখীন হয়ে নিজের জীবনকেতো ন*রকে পরিণত করেছেই সেইসাথে আরও কতগুলো জীবনও ন!ষ্ট করে ফেলেছে।ভাবতে ভাবতেই চেয়ার টেনে অরণের সামনে বসে চাঁদ।সে পানে তাকিয়ে চশমা খুলে পাশের টেবিলে রেখে অরণের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে করুন চাহনী নিক্ষেপ করে বলে,

“আমা…আমায় মাফ করে দিন অরণ!মাফ করে দিন।সেদিন আপনার কথা শোনা উচিত ছিলো আমার।আপনার কথা শুনে যদি থেকে যেতাম!এ দশা…এ দশা কখনোই হতোনা।আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিন প্লিজ!”

বলেই খানিকটা থেমে ঢোক গিলে লম্বা শ্বাস নিয়ে আবারও বলে,

“সেদিনের কথা স্মরণ করে আমি আজও,আজও ম*রে যাওয়ার উপক্রম হয়ে যাই অরণ!আপনি আপনার জীবনটা নিজ হাতে ন!ষ্ট করে দিলেন কেনো?কেনো আপনি ভালোবেসে কেবলই দুঃখ পেলেন?আপনি প্লিজ ফিরে আসুন অরণ!ফিরে আসুন।ফিরে এসে আমায় পাপমুক্ত করুন।পাপমুক্ত করুন অরণ!”

বলেই বেডের কোনায় মাথা রেখে নিঃশব্দে কেদে দেয় চাঁদ।অতঃপর অরণের হাত ধরে আবারও বলে,

“আমার জন্য হলেও ফিরে আসুন অরণ প্লিজ!আপনার বন্ধু আমায় খু*নী ভাবে।আপনার খু*নী!আমিতো সত্যিই আপনায় খু*ন করে ফেললাম অরণ!খু*ন করে ফেললাম!”

কথাটুকু বলে যেইনা অরণের হাত নিজের কপালের কাছে নেবে এমতাবস্থায় তীব্র গতিতে টান অনুভব করে চাঁদ।এতোটাই তীব্র সেই গতি যে মনে হলো তার বাহুটা বোধহয় ছি*ড়েই যাবে!আলাদা হয়ে যাবে শরীর থেকে।সেকেন্ডের মাঝে প্রবল বেগে ধা!ক্কাও অনুভব করলো চাঁদ।নিজেকে সামলাতে না পেরে ছি!টকে পড়লো টাইলস করা মেঝের উপর।হাত গিয়ে পড়লো কাঠের এক চেয়ারের ভাঙা অংশের উপর।চি*ড়ে গেলো হাতের তালু।দাতের সাথে ঠোটের চাপ লেগে কে*টে গেলো ঠোটও।আকস্মিক হাম!লা!র তীব্র বেগে টাস করে কপাল মেঝেতে লেগে ফে!টে গেলো কপালের ডান পাশও।গলগলিয়ে র*ক্ত ঝড়তে লাগলো ফোয়ারার ন্যায়।ভেসে গেলো ফ্লোরখানা,সেইসাথে চাঁদের ধূসর রঙের জামাখানাও।র*ক্তের সাথে মিশে গিয়ে পরিণত হলো কালচে খয়েরী বর্ণের অদ্ভুত এক রঙিন জামাতে।সেভাবে পড়ে থেকেই ঠোট কা*মড়ে আধো আধো চোখ খুলে তাকালো চাঁদ সে পানে,যেখান থেকে হঠাৎ করে তার উপর হা*মলা হলো।অস্পষ্টভাবে নজরে আসলো সাদা রঙের শার্টের উপর এপ্রোণ গায়ে দেওয়া লম্বাটে এক মানবকে।অবস্থা তার অতিরিক্ত মাত্রায় বিধ্ব*স্ত!চোখেমুখে হিং*স্রতা*র প্রকাশ!কই?কখনোতো এ বেশে লোকটাকে দেখেনি সে?এতোটা হিং*স্র,এতোটা ব*র্বরতো তার শুদ্ধ পুরুষ ছিলোনা!তবে কেনো আজ এতোটা অমানবিক,এতোটা ব*র্বর?যার বিড়ালাক্ষীজোড়ায় তাকিয়ে হাজার বছর কাটিয়ে দেওয়া যাবে,সেই বিড়ালাক্ষীজোড়া থেকে কেনো আজ আগুনের ফু!ল্কি ঝড়ে পড়ছে?ঐ শীতল চাহনী কেনো আজ এতোটা হিং*স্র?এতোটা ঘৃ*ণা মনের মাঝে কেনো?কেনো চাঁদ আজ কেবল প্রণয়ের ঘৃ*ণার পাত্রী?আর কিছু ভাবতে পারলোনা চাঁদ।চোখজোড়া বন্ধ করতে করতে অনুভব করলো কেউ তাকে ধরে উঠাচ্ছে।তার মাথা আগলিয়ে হাটুর উপর রাখছে।রেখে গালে হাত দিয়ে আলতো থা!পড়ে বারবার উঠতে বলছে,

“এই চাঁদ?চাঁদ?এই?এই উঠো!উঠো ব…..”

অতঃপর?অতঃপর কী হলো?
আর কিছু দেখার বা শোনার ভাগ্য জুটলোনা চাঁদের।নি*স্তেজ হয়ে পড়লো দেহখানা।অস্পষ্টভাবে প্রণয়ের পানে চেয়ে থেকে চোখজোড়া বুজে নিয়ে শরীর ছেড়ে দিলো হঠাৎ আসা আগন্তুকের হাটুর উপরই।

To be continued…

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

৩৫.
বেশ অনেক্ক্ষণ যাবৎ ডাকার পরেও যখন চাঁদের হুশ ফিরেনা আলতো করে চাঁদের মাথাটা ফ্লোরে রেখে ক্ষিপ্রগতিতে প্রণয়ের পানে ছুট লাগায় ফায়ান।অতঃপর র*ক্তচক্ষু নিয়েই সর্বশক্তি দিয়ে প্রণয়ের শার্টসহ এপ্রোণের কলার ডান হাত দিয়ে ধরে অপর হাতের তর্জনী মুখ বরাবর নিয়ে উচ্চস্বরে বলে,

“আপনার সাহস কি করে হলো এমন একটা বি!শ্রী কাজ করার?”

প্রণয় কোনোকিছুই বলেনা।বেশ শান্তভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকে ভাবলেশহীনভাবে।যেনো কোনোকিছুরই পরোয়া সে করেনা।প্রণয়ের এমন গা-ছাড়া ভাব দেখে ফায়ানের মেজাজ আরেকটু চ!টে যায়।সে ভ্রুযুগোল কুচকে নাসারন্ধ্র প্রসারিত করে আবার বলে,

“আপনার মধ্যে কি ন্যূনতম অ*পরা*ধবোধ কাজ করছেনা ভাইয়া?একটা বাচ্চামেয়ের উপর গায়ের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে একটুও লজ্জাবোধ করছেন না?পুরুষত্ব দেখাচ্ছেন আপনি?”

ততটা নয় তবে খানিকটা উচ্চস্বরে প্রণয়ও বলে,

“স্টপ সেয়িং ননসেন্স আরফিদ!আর যেই মেয়ে মানুষ খু*ন করতে পারে সে কি করে বাচ্চামেয়ে হতে পারে?”

আরেকটু জোরে কলার চে!পে ধরে ফায়ান প্রণয়কে শাসিয়ে বলে,

“চাঁদ কাকে খু*ন করেছে কি করেছে আমি জানিনা।জানতে চাইওনা।তবে আপনাকে এখন কোনো খু*নীর চেয়ে কম কিছু মনে হচ্ছেনা।চাঁদের যদি কিছু হয় আমি আপনাকে ছেড়ে কথা বলবোনা ভাইয়া!”

“বেস্টফ্রেন্ডকে এ অবস্থায় দেখে সহ্য করতে পারছোনা তাইনা?অথচ আমি আমার বেস্টফ্রেন্ডকে এর চাইতেও বি*শ্রীভাবে দেখেছি!ম*রে যাচ্ছিলো সে।আর তার জন্য কে দায়ী জানো?তোমার এই বাচ্চা বেস্টফ্রেন্ড।যার জন্য তুমি আদব-কায়দা ভুলে গিয়ে আমার কলার পর্যন্ত ধরে ফেলেছো!”

“তাই বলে আপনি চাঁদের সাথে এরূপ করবেন ভাইয়া?ওকে মে*রে ফেলতে চাবেন?সে না আপনার বউ?বিয়ে করেছেন?আপনি না তাকে খুব ভালোবাসেন?”

এমতাবস্থায় কেবিনে প্রবেশ করে মির,তার পিছু এসেছে মিরাও।কেবিনে ঢুকেই ফায়ান আর প্রণয়কে এমন অবস্থায় দেখে ভ!ড়কে যায় মির।কপাল কুচকে রেখে তাদের কথোপকথন শুনে এবং বুঝতে পেরে ফ্লোরের পানে চেয়ে চাঁদকে সেই অবস্থায় দেখে দৌড়ে আসে চাঁদের দিকে।হাটুর উপর চাঁদের মাথা নিয়ে কিছুক্ষণ ডাকে তাকে।চাঁদ সেন্সলেস হয়েছে বুঝতে পেরে জলদি করে চাঁদকে কোলে তুলতেই রিহাও প্রবেশ করে কেবিনে।অতঃপর এ অবস্থা দেখে ভ!ড়কে মিরকে জিজ্ঞেস করে,

“কী?কী হয়েছে চাঁদের?কীভাবে হয়েছে?কে করেছে এসব?”

মির ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলে,

“এখন এতো সময় নেই রিহু।তুই জলদি ফায়ানকে নিয়ে ওটিতে আয়।আর তোর যদি ইচ্ছে থাকে আসতে পারিস”

শেষের কথাটা মিরার উদ্দেশ্যে বলেই দ্রুতগতিতে চাঁদকে নিয়েই কেবিন থেকে প্রস্থান করে মির।মিরের কন্ঠ পেয়েই সে পানে তাকিয়ে চাঁদকে নিয়ে যেতে দেখে প্রণয়কে ছেড়ে দিয়ে ফায়ানও দ্রুত পা চালিয়ে মিরের পিছু যায়।সাথে পা বাড়ায় রিহাও।যেতে গিয়েও থেমে গিয়ে মিরার পানে চেয়ে বলে,

“খুব খুশি হয়েছিস তাইনা?হওয়ারই তো কথা।এটাইতো চেয়েছিলি তুই।দোয়া করিস যেনো মেয়েটা ম*রে যায়।তোর অরণের প্র*তিশোধ পেয়ে যাবি তুই”

বলে আর এক মুহুর্ত দাড়ায়না রিহা।

চাঁদকে ওরূপ অবস্থায় দেখে কিছুক্ষণের জন্য পাঁচ বছর আগের ঘটনা স্মৃতিপটে ভেসে উঠে মিরার।অরণেরও তো এমন হয়েছিলো!এর চাইতেও বেশি র*ক্তা*ক্ত ছিলো সে।অতঃপর আজ?আজ তার কি করুন দশা!এমতাবস্থায় রিহার ওসব কথা শুনে বুকের ভেতরটা আরও ভারী হয়ে আসে মিরার।সে তো এমনটা চায়নি।সে তো চায়নি কাউকে মে*রে ফেলতে বা তার বদদোয়ার জন্য কেউ মা*রা যাক।সে চেয়েছিলো মেয়েটা শাস্তি পাক।তবে এমনভাবেতো সে চায়নি!কেনো করলো এমনটা প্রণয়?সে না চাঁদকে অসম্ভব ভালোবাসতো?আর কেউ জানুক না জানুক তার বন্ধুমহলের সবাইতো জানতো!মিরাও তো জানতো।এই একটা মেয়ের জন্য প্রণয়ের দুনিয়া ওলোটপালট হয়ে গিয়েছিলো!এই মেয়েটাইতো জীবনকে কিভাবে রঙিন করতে হয়,সাজাতে হয় সবটা প্রণয়কে শিখিয়েছিলো!যাকে ছাড়া ছেলেটার একেবারেই চলতো না তার সাথে এমন কুৎসিত ব্যবহার সে কি করে করতে পারলো?তার কি হাত কাপলোনা?বুকটাও কি কাপলোনা?ভাবতে ভাবতেই এগিয়ে আসে প্রণয়ের পানে।অতঃপর শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বিরাট লম্বা এক শ্বাস নিয়ে বললো,

“তুই এমনটা কি করে করতে পারলি রে?”

মিরার কথা শ্রবণ হতেই তার পানে তাকায় প্রণয়।অতঃপর দৃষ্টি আড়াল করে গম্ভীরভাবে বলে,

“যে যার প্রাপ্য সে তাই পায়”

“দৃষ্টি কেনো লুকাচ্ছিস প্রণয়?তুই যে ইচ্ছাকৃতভাবে কাজটা করিস নি তা আর কেউ না জানলেও আমি বুঝতে পেরেছি।তুই অরণের প্রতি পজেসিভনেসে ভুলবশত কাজটা করে ফেলেছিস,তাইনা?কিন্তু এখন মানতে চাচ্ছিস না,তাইতো?তুই কি চাচ্ছিস আমরা সবাই ভাবি তুই চাঁদকে ঘৃ*ণা করিস?”

“এখানে মানা না মানার কিছু নেই মিরা।আমি তাকে ঘৃ*ণা ব্যতীত আর কিছুই করতে পারিনা,করিনা”

মিরা স্মিত হেসে বলে,

“তাই না?কিন্তু আমি যে তোর চোখের গভীরতায় আজও মেয়েটার জন্য বিশাল প্রেম দেখি?”

দৃষ্টি এলোমেলো করে খানিকটা অস্থিরতা নিয়ে প্রণয় বলে,

“বাজে বকিস না”

মিরা এবার গম্ভীর হয়ে বলে,

“ওখানে ফায়ান ব্যতীত আর কেউ সার্জন নেই।তোর যাওয়া উচিত”

এবার মিরার পানে দৃষ্টি রেখে প্রণয় বলে,

“এখন এটাকে কী বলবি তুই?ছোট বোনের প্রতি টান,ভালোবাসা নাকি কেবলই মানবিকতা?”

“মানবিকতা বৈ কিছুনা”

“আচ্ছা তবেতো সেখানে তোর যাওয়া উচিত।আমিতো হার্ট সার্জন।ওসব মাথা টাথার কাজতো আমি পারিনা।তুই পারিস।অরণের এ অবস্থা হওয়ার পরতো সিদ্ধান্ত নিলি নিউরোলজিস্ট হবি।তো তুই যা আরফিদকে হেল্প কর।আমি এসবে থাকতে চাইনা।তাছাড়া এ কান্ডের পর ওরা আমায় মোটেও ভেতরে যেতে দেবেনা।তো তুই ই যা”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
ওটির বাইরে দেয়ালে হেলান দিয়ে চেয়ারে বসে আছে প্রণয়।বাহু দ্বারা দু’চোখ তার বন্ধ।ঘাড় খানিকটা ব্যথা হয়ে যাওয়ায় দৃষ্টি মেলে ঘাড় খানিকটা নাড়াচাড়া করায় সে।অতঃপর হাতঘড়ির দিকে চেয়ে দেখে প্রায় তিন ঘন্টা হয়ে আসলো অথচ কোনো খবর সে পাচ্ছেনা।বা কেউই বের হচ্ছেনা।হঠাৎ করেই হৃদস্পন্দন তীব্র হলো তার।খানিকটা কি ভয়ও পেলো?প্রিয় কিছু হারিয়ে ফেলার?নাকি কেবলই অপ*রা*ধবোধের দরুন?

আরও মিনিট ত্রিশেক বাদে সর্বপ্রথম বেরিয়ে এলো মির।মির বেরুতেই দ্রুত পা চালিয়ে মিরের সামনে এসে প্রণয়ের কিছু বলার পূর্বেই তার পানে চেয়ে কোনোকিছু না বলেই তাকে এড়িয়ে সেখান থেকে চলে গেলো মির।মিরের খানিক পরে বেরুলো রিহা।রিহাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে নিলে সে মুখ ভাড় করে বলে,

“আমি তোর সাথে কোনোপ্রকার কথা বলতে ইচ্ছুক নই”

বলে সেও প্রস্থান করে।এবার বের হয় মিরা।মিরা আসতেই প্রণয় বলে,

“চাঁ…চাঁদের এখন….”

প্রণয়কে আস্বস্ত করে মিরা বলে,

“চিন্তা করিস না।ক্ষ!ত ততটা হয়নি তবে অনেক র*ক্ত গিয়েছিলো।বেশ দুর্বল এখন।জ্ঞান ফিরেনি তবে আশা করছি রাত্রের মধ্যেই ফিরবে।আর সবাই তোর সাথে রেগে আছে।বিশেষ করে মির”

মিরার পরপরই ফায়ানও বের হয়।ফায়ান বের হয়ে মিরার কথা শুনতে পেয়েই বলে,

“আপনার বন্ধু কাজই এমন করেছে যার জন্য কেবল রাগ করাই যথেষ্ট নয়।আমি অবশ্যই তার এবং তার ওয়াইফের পরিবারে বিষয়টা জানাবো।তাদেরও তো জানা উচিত তাদের ছেলের কারসাজি এবং কেমন পুরুষের কাছে মেয়ে তুলে দিয়েছে যার কাছে তাদের মেয়ে নিরাপদ ই নয়”

ফায়ানের কথার প্রেক্ষিতে শোনা যায় প্রণয়ের শীতল কন্ঠস্বর,

“তুমি এমন কিছুই করবেনা আরফিদ।আজকের ঘটনা আমরা ছ’জন ব্যতীত আর কেউ জানবেনা।জেনে গেলে এটাও অবশ্যই জেনে যাবে কেনো তোমার বান্ধবীর এ দশা হয়েছে।অতঃপর অতীতের সমস্ত কিছু টে*নেহিঁ!চড়ে বেরিয়ে আসবে।আশা করছি তুমি চাইবেনা তোমার বান্ধবীর কোনো ক্ষতি হোক”

খুব ভোরের দিকে চাঁদকে নিয়ে বাড়ি ফিরেছে প্রণয়।নিজের কাছে থাকা ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে গেট খুলে বাড়িতে ঢুকতেই হলরুমে সোফার উপর হেলান দিয়ে তার মা পুষ্পিতা জামানকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে কপাল কুচকে আসে তার।চাঁদকে রুমে রেখে এসে তারপর মাকে ডাকার সিদ্ধান্ত নেয় সে।হয়তো তার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন।তাই ধীর গতিতে যেতে নিলেই ফজরের আযান পড়ে যায়।আযানের সুরে ঘুম আলগা হয়ে যায় পুষ্পিতা জামানের।অতঃপর চোখের সম্মুখে ছেলের কোলে ছেলের বউকে আ!ঘা!তপ্রাপ্ত অবস্থায় দেখে হুড়মুড়িয়ে উঠে দৌড়ে ছেলের সামনে এসে ব্যতিব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করেন,

“কিরে চাঁদের কী হয়েছে?মাথায়,হাতে ব্যান্ডেজ কেনো?আর কাল বিকেলের পর কোথায় ছিলি তোরা?তুইতো হসপিটাল ছিলি আর চাঁদও বললো বাইরে যাচ্ছে জলদি আসবে।কিন্তু আসলোনা।আমি খুব চিন্তায় ছিলাম।বাড়ির সবাই ই চিন্তিত ছিলো।চাঁদের এ দশা কি করে হলো?কী হয়েছে কিছু বল?”

“মা,মা,মা!আস্তে আস্তে।শান্ত হও আগে।আমি চাঁদকে রুমে রেখে আসছি।তুমি বসো।এসে সব বলছি”

সকালবেলা,
ঘুম থেকে উঠে হাত নাড়াতে গেলেই হাতে এবং মাথায় বেশ চাপ পড়ে চাঁদের।ডান হাতে খানিকটা সুচের মতোও বিঁ!ধে যার দরুন দ্রুতগতিতে চোখ খুলতে হয় তাকে।অতঃপর ডান হাতে ক্যানোলা লাগানো দেখে বেশ চমকায় চাঁদ।আশেপাশে নজর বুলিয়ে নিশ্চিত হয় এটা প্রণয়েরই রুম।তবে?মস্তিষ্কে চাপ প্রয়োগ করতেই গতকাল বিকালের কথা স্মরণ হয় তার।এক নিমিষেই বুক ভার হয়ে আসে।সেইসাথে বেরিয়ে আসতে চায় চাপা দীর্ঘশ্বাস।তবে আজ আর সে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে পারেনা।বুকে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভূত হচ্ছে।নিজেকে খুব নিকৃ!ষ্ট মনে হচ্ছে তার।কেনো সেদিন পালিয়েছিলো সে?না পালালেতো আজ প্রণয়ের ঘৃ*ণার পাত্রী সে হতোনা!সব সত্যিটাও প্রণয়ের জানা হতো।আগের মতো ভালোবাসতো তাকে।প্রকাশ নাহয় নাই করতো।তবে ভালো তো বাসতো নাকি?এখন যে ভালোও বাসেনা তাকে।কেনো বাসেনা?একটুখানি ভালোবাসলে কি খুব ক্ষতি হতো?অতঃপর আবার ভাবে।না!তাকেতো ভালোবাসা যায়না।সেতো প্রণয়ের ভালোবাসার যোগ্যই না।এমন মেয়েকে কি কেউ ভালোবাসতে পারে?আদোতে কেউ বাসবে?বাসা যায় কি?সেতো কারো বাড়ির বউ,কারো স্ত্রী,কারো ভালোবাসার মানুষই হওয়ার যোগ্যতা রাখেনা।তবুও কেনো নিয়তি তাকে প্রণয়ের কাছেই এনে দাড় করালো?পাঁচ বছর আগে যেই সিদ্ধান্ত নিয়ে এখান থেকে চলে গেলো কেনো আজ তা এভাবে বদলে গেলো?আজকের এই দিন দেখার জন্যই কি সেদিন সে ওভাবে পালিয়েছিলো?ভাগ্য কি তার আগেই নির্ধারিত ছিলো?তার সাথে জীবন এভাবে খেলা করবে?যাকে ছাড়া ছেলেটার এক মুহুর্ত চলতোনা সেই ছেলেটা তাকেই মৃ*ত্যুর সম্মুখ করতেও দ্বিধাবোধ করলোনা?সে কি এতোটাই জঘন্য?অতঃপর চোখজোড়া বন্ধ করে ডুব দিলো অতীতে।যখন প্রণয় নামক তার বিড়ালাক্ষী মানবটি তাকে অসম্ভব ভালোবাসতো।একটু একটু করে তাদের প্রেমের সূচনা ঘটেছিলো।যে প্রেম মনের অন্তরালে লুক্কায়িত ছিলো।সে যে অসীম প্রেম!সমুদ্রের চেয়েও গভীর,আকাশের চেয়েও বিশাল!

অতীতপাতা~
আজ চাঁদের দু’মাস পূর্ণ হলো তার স্বপ্নের ঢামেকে প্রবেশ করার।স্বপ্নকে জয় করার সূচনা সে করেছে।শেষটা যেনো সুন্দর হয়।ভীষণ সুন্দর!এই প্রত্যাশা নিয়েই রোজ মেডিকেলের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায় সে।সবকিছু কেমন স্বপ্ন স্বপ্ন লাগে।সে কস্মিনকালেও ভাবেনি সবকিছু এতো সুন্দর হবে।সবাই তাকে এতোটা পছন্দ করবে,এতো স্নেহ করবে।শুধুই কি টপ করেছে বলে?নাকি সে তার মার্জিত ব্যবহারেও অনেকের মন জয় করতে পেরেছে?হ্যা,পেরেছেতো!কয়েকজন সিনিয়রের তো সে প্রিয়!আর অনেকগুলো বন্ধুওতো সে পেয়েছে।প্রিয় কতগুলো প্রফেসর পেয়েছে।সবাই তো তাকে ভীষণ ভালোবাসে।সেও বাসে,সম্মান করে।তবে কোথাও একটা শূন্যতা অনুভূত হচ্ছে।কেমন সেই শূন্যতা?কেনোই বা এ শূন্যতা?শূন্যতাটা কি সেই বিড়ালাক্ষী মানব?যে কেবলই তাকে অ!পমান ব্যতীত আর কিছুই করতে পারেনা?সেতো সব মেয়ের সাথেই এমন করে।এটাতো নতুন কিছুনা।তবে চাঁদের কেনো বিষয়টা মানতে অসুবিধা হচ্ছে?কলেজে এসে এ পর্যন্ত অনেক ছেলেই সে দেখেছে।তবে এমন ছেলে আর দু’টো দেখেনি।কি এমন আকর্ষণীয় ভাব তাতে বিদ্যমান?যার দরুন চাঁদ বারবার তার দিকে সম্মোহিত হয়?নাকি ছেলেটা তাকে এড়িয়ে চলছে বলে বিষয়টা মেনে নিতে পারছেনা সে?সেদিনের পর আর ছেলেটার সাথে দৃষ্টি তার মেলেনি।যখনই পেরেছে তাকে সূক্ষ্মভাবে এড়িয়ে গিয়েছে ছেলেটা।চাঁদও যে তাকে এড়িয়ে চলে নি এমনটা না।সেও এড়িয়ে চলেছে।এবং প্রথম থেকেই চলেছে।যেদিন থেকে ছেলেটা প্রথম তাকে অ!পমান করলো ঠিক সেদিন থেকেই।অতোটা অ!পমানবোধ চাঁদ নিতে পারেনি।তাই এই মানব থেকে দূরে থাকাকেই সে শ্রেয় মনে করেছে।তবে প্রায়শই তাকে দেখতে পেয়ে,যার তার মুখে তার সম্পর্কে বারংবার শুনতে পেয়ে,জানতে পেরে কৌতূহল বেড়েছে বৈ কমেনি।এজন্যই কি এই শূন্যতা?সে কি অন্যসব মেয়েদের মতো ছেলেটার প্রেমে পড়লো?নাকি কেবলই ছেলেটার ব্যক্তিত্ব ভালোলেগেছে?এসব ভাবতে ভাবতেই হাইওয়েতে উঠে আসে চাঁদ।অতঃপর ব্যাগ থেকে ফোন বের করতে করতে মনে মনে বলে,

“এসব ভাবনা তোকে মানায়না চাঁদ।প্রেম-ভালোবাসা এসব কেবলই ভুয়া,কেবলই ফক্কিকার!”

কিন্তু চাঁদ কি জানতে পেরেছিলো?তার জীবনেও প্রেম আসবে?এবং এমনভাবে আসবে তার দুনিয়া ওলোটপালোট করে ছাড়বে?যেই প্রেম তাকে সর্বহারা করে দেবে?যেই প্রেমে মত্ত হয়ে তার মাঝে সে নিজের ধ্বংসত্ব খুঁজে পাবে?

To be continued….

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

৩৬.
গাছতলার নিচে কয়েকজন ছেলেপেলে দেখা যাচ্ছে।তাদের ঠিক মধ্যখানে পাশাপাশি বসে আছে আরও দু’জন ছেলে-মেয়ে।মেয়েটার হাতে গিটার।তার পাশে বসা ছেলেটাই তাকে গিটারের তার ধরা,কোথায় আঙুল রেখে চাপ দিতে হবে,কোন তারে আ!ঘা!ত করলে কেমন সুর বের হবে আরও নানান ধরণের বিষয়াদি শেখাচ্ছে।মেয়েটাও মাথা ঝাকিয়ে ঝাকিয়ে বিজ্ঞদের ন্যায় সবটা বোঝার চেষ্টা করছে।খানিক বাদে বাদে দু’জনই একসাথে হেসে উঠছে।দূর থেকে একজোড়া ধা!রালো দৃষ্টি তীক্ষ্ণভাবে তা পর্যবেক্ষণ করছে।সেইসাথে পর্যবেক্ষণ করছে নিজ বন্ধুমহলের কাণ্ডকীর্তিও।সকলের মধ্যমনি হয়ে বসে থাকা ছেলেমেয়েগুলো আর কেউ নয়,বরং চাঁদ এবং ফায়ান।আর তাদেরকে ঘিরে বসে আছে চাঁদের এবং প্রণয়ের বন্ধুমহল।খানিকটা কেশে চাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মির বলে,

“মিস ঘসেটি বেগম!”

চাঁদ ঠোট চেপে হেসে বলে,

“বিবাহিতা মহিলারা বুঝি মিস হয় মিরজাফর ভাইয়া?আমি যতদূর জানি ঘসেটি বেগম একজন বিধবা নারী ছিলেন।সেই হিসেবে কখনো না কখনো অবশ্যই বিয়েও করেছিলেন?”

মির বেশ ভাব নিয়ে বলে,

“আজকালকার ছেলেপেলে ইন্টারের কিসব সহপাঠের নাটক ফাটক পড়ে নিজেদেরকে খুব বিজ্ঞ মনে করে।তোমার কি মনে হয় ইন্টারের সিরাজদ্দৌলা নাটকে সবটা নিখুতভাবে বিশ্লেষিত?”

মিরা কপাল কুচকে মিরের বাহুতে কি!ল বসিয়ে বলে,

“কিসের সাথে কী,পান্তা ভাতে ঘি!”

মির চোটপাট দেখিয়ে বলে,

“তুই চুপ থাক”

রিহা বুঝতে না পেরে মিরকে জিজ্ঞেস করে,

“কিন্তু এই বিষয়ের সাথে ঘসেটি বেগমের কী সম্পর্ক বুঝলাম না মামা?”

ইপ্সিও জিজ্ঞেস করলো,

“সেম কুয়েশ্চন ভাইয়া”

মিরা সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“ওর কথায় কান দিও নাতো তোমরা!ওর কাজই এমন অদ্ভুত আর উদ্ভট কথাবার্তা বলা”

মির মেজাজ খারাপ করে বলে,

“এই মাইয়া তোরে চুপ থাকতে বলছি না?”

মিরা কপাল চা!পড়ানোর অভিনয় করে বলে,

“দেখেছো?দেখেছো তোমরা?যেই ছেলে নিজের বড় বোনকেই সম্মান দেয়না তোমাদের সাথে কীই বা ভালো ব্যবহার করবে?”

“দু’মিনিটের বড় হয়ে দুই যুগের বড় হওয়ার এক্টিং কেবল তোকে দিয়েই মানায় মিরা দি ডা!কিনী”

“খবরদার ও নামে ডাকবিনা!”

মির ভ্রু নাচিয়ে নাচিয়ে বলে,

“ক্যান ক্যান?”

তখনই শোনা যায় অরণের প্রাণোচ্ছল কন্ঠস্বর,

“কারণ ও নামে শুধু আমি ডাকবো।কারণ ও হলো আমার ডাকিনী।এ নামে ওকে ডাকার আর কারো অধিকার নেই বুঝেছিস?”

তখনই অবনী আর ইফাদ কোনোকিছু না বুঝেই একসাথে সুর তুলে তুলে বলে,

“ওহোও!সামথিং সামথিং”

মিরা আর অরণ তৎক্ষনাৎ ভ!ড়কে যায়।মিরা লজ্জামিশ্রিত কন্ঠে বলে,

“তো…তোমরা যা ভাবছো মোটেও তা নয় অবু”

ইপ্সি হুটহাট হেসে দিয়ে বলে,

“আমরা কিন্তু কিছুই ভাবিনি আপু।ওরাতো জাস্ট তুক্কা লাগালো।তুক্কাটা বুঝি লেগেই গেলো তাইনা রে অবু,ইফাদ?”

ইফাদ ঠোট চেপে হেসে বলে,

“মনে তো তাই হচ্ছে”

অরণ বেশ অস্বস্তি নিয়ে বলে,

“দেখো ভাই,তোমরা যা ভাবছো তা কস্মিনকালেও সম্ভব না।আমি এ জীবনে বই ব্যতীত আর কিছুর প্রেমে পড়িনি।যেমন তোমাদের বান্ধবী চাঁদের দ্বারা এসব প্রেম-ভালোবাসা সম্ভব না ঠিক তেমনি”

অরণের কথার জবাবে রবিন বলে,

“কিন্তু চাঁদকে দেখে কিন্তু লাগেনা যে ও কখনো প্রেম করেনি”

চাঁদ কপাল কুচকে বলে,

“তো তুমি কি বুঝাতে চাচ্ছো ভাইয়া?আমি বেশ কয়েকটা প্রেম করে বেরিয়েছি?”

রবিন ঠাট্টা করে বলে,

“প্রেম করেছো কিনা সেতো তুমিই জানো।তবে তোমাকে দেখলে কোনো প্লেগার্ল থেকে কম কিছু মনে হয়না”

চাঁদ আকাশ থেকে পড়ার ভঙ্গিতে বলে,

“কী!কী বললে!কিন্তু কেনো?এমন টা মনে হলো কেনো?”

“আরে আমি বুঝালাম তুমিতো দেখতে শুনতে বেশ সুন্দরই।নিশ্চয়ই অনেক ছেলে ঘুরিয়েছো।তো তোমার পক্ষ থেকে ধরে ছেড়ে দেওয়া,বহু প্রেম করা কি খুব কঠিন কিছু?”

চাঁদের বদলে মিরই খানিকটা উচ্চস্বরে জবাব দেয়,

“বাজে বকিস না।নিজেতো এক বেডির পিছে পইড়া আছিস সেটার কোনো খবর নাই আসছে আরেকজনের খবর নিতে।বলি সবাই কি মিরের মতো এক্সপার্ট নাকি?যে একটা ধরবে আর দুইটা ছাড়বে?”

চাঁদ নাকমুখ কুচকে বলে,

“ছি ভাইয়া!সেসব তুমি আবার বুক ফুলিয়ে গর্ব করে বলছোও?”

মির ভাবলেশহীনভাবে বলে,

“হ্যা বলছি তো?কিন্তু তোমার মতো তো চাপাজুড়ি করিনি ঘসেটি।”

চাঁদ অবাক হয়ে বলে,

“আমি কী চাপাজুড়ি করলাম ভাইয়া?”

মির এদিক ওদিক তাকিয়ে দৃষ্টি ঘুরিয়ে টুরিয়ে বুঝালো,

“এই যে ফায়ান আর তুমি…”

চাঁদ তখনই মিরকে মাঝ পথে আটকে দিয়ে বলে,

“খবরদার ভাইয়া!উলটা পালটা ভাববেও না বলবেও না।আমি আর ফায়ান খুব ভালো বন্ধু।বলতে পারো আমরা বেশ ক্লোজ”

মির বিরক্তি নিয়ে বলে,

“মেয়ে মানুষদের এই এক সমস্যা।পুরো কথা না শুনেই মনগড়া কাহিনী বানিয়ে দেয়”

তেতে উঠে রিহা বলে,

“এই কী বললি তুই?”

মিরা রিহাকে বলে,

“তুই জানিস না ও কাদেরকে ইঙ্গিত করে কথাগুলো বললো?”

মির নিজ বান্ধবীদের দিকে তাকিয়ে বলে,

“এই ঝ!গড়ালু মহিলারা চুপ থাক!আর আপনি,ঝ!গড়ালু নাম্বার ওয়ান।দি ঘসেটি বেগম!আমিও সেটাই বলেছি যে তোমরা বেশ ক্লোজ।যে কেউ তোমাদের পর্যবেক্ষণ করলে কাপল বলবে বা ভাববে।তোমাদের বিহেভিয়ারও কাপলদের মতোই।তার উপর আবার দু’জনেই তুমি তুমি করে কথা বলো”

“হ্যা সেটা কারণ..”

চাঁদকে আঁটকে দিয়ে ফায়ান বলে,

“কারণটা আমি বলি চাঁদ?”

চাঁদ ইশারায় সম্মতি জানায়।চাঁদের সম্মতি পেয়ে ফায়ান বলে,

“কারণ হলো ভাইয়া আমরা দু’জনই অপরিচিত ছিলাম।তাছাড়া দু’জনের পড়াশুনার ক্যাটাগরিও প্রায় সেমই।বলা যায় পড়া ব্যতীত মগজে কিছুই ঢুকেনা।তো সম্মানের খাতিরেই হোক বা সংকোচবোধে,আমাদের মুখ দিয়ে একে অপরকে তুই জিনিস টা আসেনা।এই আরকি!”

মির পকেট থেকে মোবাইল হাতে নিয়ে বলে,

“বুঝলাম বুঝলাম।আচ্ছা তোমরা আড্ডা দাও আমার এক্স আমায় কল দিচ্ছে।দেখি,আবার কী আলাপের জন্য আমায় মনে করলো!”

মিরের কথা শুনে সেখানে উপস্থিত সকলেই হেসে দেয়।খানিক বাদে মিরা চাঁদকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“আচ্ছা চাঁদ তুমিতো বেশ ভালো গাইতে পারো।কোথাও শিখেছো?”

“না আপু।এমনিতে মাঝেমাঝেই গুনগুনাই।আর প্রফেশনালি বাথরুম সিংগার বলতে পারো”

বলেই একদফা হাসে চাঁদ।চাঁদের সাথে হাসে সেখানে উপস্থিত অনেকেই।রবিনও হাসতে হাসতে বলে,

“সেটা এখানে উপস্থিত কম বেশি সবাই ই চাঁদ”

“তুমি কিন্তু বেশ ভালোই গান করো চাঁদ।সেদিন তুমি আর ফায়ান যা গাইলে না!আর তোমাদের এক্টিং স্কিল।ইশারায় ইশারায় একে অপরকে লাইনগুলো ছুড়ে দেয়া।জাস্ট অসাধারণ ছিলো!তোমার কন্ঠস্বর এত্ত মিষ্টি!আমি ছেলে হলে কবেই তোমার প্রেমে পড়ে যেতাম”

রিহার কথা শুনে অবনী বলে,

“সেটাইতো আপু!কেন যে আমরা মেয়ে হলাম!মেয়ে না হলে অবশ্যই চাঁদকে নিয়ে আমি পালিয়ে যেতাম!”

বলেই হেসে দেয় অবনী।সেইসাথে হাসে সেখানে উপস্থিত সকলেই।ইফাদ অবনীর কথা শুনে বলে,

“এজন্যই তুই ছেলে হসনি।মেয়ে হয়েছিস”

ইফাদকে খোচা মেরে অবনী বলে,

“তুই আর কথাই বলিস না!কলেজে ঢুকে চাঁদকে প্রথম প্রোপোজালটা তুই ই কিন্তু দিয়েছিস লুই!চ্চা জানি কোথাকার”

ইফাদও অবনীকে ভেংচে বলে,

“হইছে আর খোচা দেওয়া লাগবেনা।চাঁদ তো অহরহই প্রোপোজাল পাচ্ছে।কেউ কেউ ওর উপর ক্রাশ খেয়ে করছে,তো কেউ আবার টপার বলে ওর সান্নিধ্য পেতে।এতে নতুন কী?”

হঠাৎ মিরা ফায়ানকে জিজ্ঞেস করে,

“তুমি চাঁদের উপর ক্রাশ খাওনি ফায়ান?”

মিরার আকস্মিক করা প্রশ্নে খানিকটা ভ!ড়কায় ফায়ান।অতঃপর নিজেকে সামলে বেশ শান্তস্বরেই জবাব দেয়,

“চাঁদ অবশ্যই অপূর্ব মুখশ্রীর অধিকারিনী তবে আমি তার ব্যক্তিত্ব পছন্দ করি”

ফায়ানের বেশ সাবলীল জবাবে ফায়ানের পানে আড়চোখে তাকায় চাঁদ।অতঃপর ছোট্ট শ্বাস ফেলে লজ্জা পেয়ে খানিকটা ঠোট বাকিয়ে হাসে সে।তখনই মিরার প্রস্তাব শুনে ভ্রু কুচকে তাকায় তার পানে,

“তোমাদের জুটিটা কিন্তু বেশ!আই মিন গান করার ক্ষেত্রে।আজ আরেকবার হয়ে যাক?চাঁদের মিষ্টি কন্ঠস্বর শোনার সৌভাগ্যও হয়ে গেলো?”

“তোরা গানের কলি খেলছিস?বেশ!অনেকদিনই হলো গলা পরিষ্কার করিনা।আজ নাহয় করেই ফেলি কী বলিস?”

হঠাৎ কোনো পুরুষালি গম্ভীর কন্ঠস্বর শুনে পেছন ঘুরে তাকায় চাঁদ।ঠিক দু’মাস!দু’মাস পর সামনাসামনি হলো লোকটার।কিন্তু দৃষ্টি তাদের আজও মিললো না।প্রণয়ের দৃষ্টি মিরার পানে।চাঁদ প্রণয়ের পানে কিছুক্ষণ নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকলো।অতঃপর মিরার আওয়াজে দৃষ্টি সরালো সে,

“কিন্তু আমরাতো গানের কলি খেলছিলাম না।চাঁদ আর ফায়ানকে গান গেতে বলছিলাম”

“শুধু তাদের গান কেনো শুনবি?গান মোটামুটি এখানে উপস্থিত আমরা সকলেই টুকটাক পারি।এক্সসেপ্ট মির,রবিন আর রিহা”

রিহা ভ!ড়কে বলে,

“তুই রীতিমতো আমাদের অপ!মান করছিস প্রণয়?”

তখনই পূর্ণতার হাত টেনে তাকে সাথে করে আনতে আনতে মির বলে,

“কে কার অ!পমান করছে রিহু?”

“এই যে এই প্রণয়।ও বললো এখানে সবাই গানে খুব পটু।কেবল তুই,আমি আর রবিন বাদে।মানে ও বুঝালো আমরা বেসুরা”

পূর্ণতা হেসে বললো,

“হ্যা তো ভুল কোথায় বলেছে?”

মির তখনই পূর্ণতার হাত ছেড়ে চোখ ছোট ছোট করে তার পানে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে বলে,

“ওরে শেয়ানা খালা রে আমার!”

তখনই শোনা যায় অবনীর ঠাট্টামূলক বাক্য,

“আমাদের গ্রুপেও কিন্তু এমন বেসুরা দু’জন আছে”

রবিন উৎসুক হয়ে বলে,

“তাই নাকি?যাক বেসুরা গ্যাং-এর মেম্বার তাহলে বাড়লো বলে।কারা তারা?”

অবনী হাসতে হাসতে বললো,

“এই লুই!চ্চাটা আর ইপ্সু”

ইপ্সি বেশ অ!পমানিতবোধ করে বললো,

“দেখলি!দেখলি ইফাদ।তোর জন্য আমায়ও অ!পমান করতে বাদ রাখলোনা এই বাচাল মহিলাটা”

মির ইপ্সিকে সাপোর্ট দিয়ে বললো,

“আরে ছোট বোন এতো প্যারা নিওনা।তুমি একা নও আমরাও এই দলে আছি।সো প্যারা বাদ দিয়ে প্রণয়ের কন্ঠ শোনো দেখবে তুমি হাওয়ায় ভাসছো”

ইপ্সি কপাল কুচকে বলে,

“মানে?”

পূর্ণতা ইপ্সির পাশে বসতে বসতে বলে,

“যখন প্রণয় গান করবে তখনই মানে বুঝতে পারবে পিচ্চি”

প্রণয় গিয়ে ফায়ানের সামনে দাঁড়িয়ে মুখভঙ্গি গম্ভীর রেখে থমথমে কন্ঠে বললো,

“দেখি সাইড দাও”

প্রণয়ের কন্ঠ পেয়ে একটুখানি পেছনের দিকে চেপে বসলো ফায়ান।তবুও প্রণয় দাঁড়িয়ে আছে বলে ফায়ান জিজ্ঞেস করলো,

“কী হলো ভাইয়া?সমস্যা হচ্ছে?”

ফায়ানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে প্রণয় বললো,

“তুমি একটু এ সাইডটায় এসে বসোতো”

ফায়ান হালকা হেসে সৌজন্যতার খাতিরে প্রণয়ের হাত ধরে উঠে আসলো।এসে চাঁদের অপর পাশে বেশ অনেকখানি জায়গা রেখে ইফাদের পাশ ঘেষে বসলো।আর ফায়ানের জায়গায় অল্প একটু জায়গা রেখে চাঁদের এবং অরণের মাঝখানে বসলো প্রণয়।বসে দু’হাত ঝেড়ে চুল ঝাকিয়ে হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে অরণের দিকে তাকালো।সেই মনকাড়া দৃশ্যটি হাটুতে কনুই চেপে গালে হাত রেখে কানের পাশের দিকের হিজাবের উপর দিয়েই তর্জনী বুলাতে বুলাতে উপরের দিকে বাকাচোখে চেয়ে নজরাবন্দী করলো চাঁদ।এতো সুন্দরও বুঝি কোনো ছেলের চুল হতে পারে?কোনো ছেলের গম্ভীর,রাশভারি কন্ঠস্বরও বুঝি এতো শ্রুতিমধুর লাগতে পারে?যেই বর্ণেই নিজেকে আবৃত করুক না কেনো এতো চমৎকার,দৃষ্টিনন্দনও বুঝি কোনো ছেলেকে লাগতে পারে?আর এভাবে হৃদয়ে আকস্মিক হা!মলা করে হৃদস্পন্দন তীব্র করার জন্য বুঝি অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির পাশ ঘেষে বসাটাই যথেষ্ট?দু’হাত দিয়ে চুলের মাঝে হাত চালাতে চালাতে আড়চোখে চাঁদের পানে তাকায় প্রণয়।চাঁদের দৃষ্টি তখনও প্রণয়ের পানেই ছিলো।হঠাৎ করেই দুজনের দৃষ্টি মিললো।দৃষ্টি সরিয়ে নিতে মন সায় দিলোনা কারোরই।সেভাবেই ডুব দিলো একে অপরের চোখের গভীর সমুদ্রে।উপলব্ধি করতে লাগলো সেই সমুদ্রের গভীরতাটুকু কতখানি!কী অপূর্ব সেই দৃশ্য!কী মনোমুগ্ধকর সেই চাহনী!পাশাপাশি বসা দু মানব-মানবীর লুকিয়ে চুরিয়ে একে অপরকে দেখতে চাওয়ার প্রয়াশ!একজনের চুলে,অপরজনের গালে হাত রাখার বাহানায় আড়চোখে একে অপরের দিকে মন্ত্রোমুগ্ধের ন্যায় তাকিয়ে থাকা!কী অসাধারণ,কী অপূর্ব সেই মূহুর্তটা!খানিকটা প্রেমময়ও বুঝি?এই শুভক্ষণের,শুভ দৃষ্টিমিলন দ্বারাই বুঝি ধ্বংসাত্মক প্রেমের সূচনা ঘটলো?দৃষ্টি এখনও তাদের সরেনি।সেই দৃষ্টি কত সেকেন্ড,কতক্ষণ একে অপরকে আ!হত করলো তারা কেউই জানলোনা,জানার চেষ্টাটুকুও করলোনা।কেবলই তাকিয়ে থেকে দৃষ্টি দ্বারা দৃষ্টি মেলালো,কথোপকথন করলো মনের অন্তরালে।প্রেমের সূচনা ঘটানোর সুতো বুনলো মনের গহীনে।ভাবনাগুলো কি কেবল চাঁদেরই?নাকি তার পাশে বসে তার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে থাকা সেই বিড়ালাক্ষী মানবেরও?

To be continued….