আবার প্রেম হোক পর্ব-৫৪+৫৫+৫৬

0
692

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

৫৪.
“কেউ থাকেনা চিরদিন সাথে,প্রেম এসেছিলো নীরবে”

বাক্যটুকু লিখে তার পাশে আজকের তারিখ লিখে সেভাবেই তা রেখে দিয়ে আরেকটা ডায়েরী হাতে নেয় চাঁদ।অপর ডায়েরিটা খুলে তার ফাকা পৃষ্ঠায় লেখে,

“আপনাকে ভালোবেসেছিলাম।আর আপনি কী দিলেন?এক আকাশসম অপমান,পাহারসম অবিশ্বাস আর সমুদ্রের ন্যায় বিশাল দুঃখের পরিমাণ”

লিখা শেষ করে তা সশব্দে বন্ধ করে চাঁদ।অতঃপর পাশের ডায়েরির পৃষ্ঠা উল্টিয়ে তার পরবর্তী পৃষ্ঠার মাঝ বরাবর কলম চালায়,

“অতঃপর প্রেমের দ্বার হলো বন্ধ,মায়া হলো ত্যাগ”

বাক্য সম্পন্ন করে তার ডান পাশে আজকের তারিখসহ সময়ও উল্লেখ করে চাঁদ।

প্রায় এক সপ্তাহ কলেজে পা রাখেনি চাঁদ।নিজেকে সময় দিয়েছে।সবকিছু থেকে বেরিয়ে আসার উপযুক্ত হওয়ার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা করেছে এবং কিছুটা সে সফলও।তাই অষ্টম দিনে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগে।কী এমন ভুল জীবনে করেছিলো?যার দরুন প্রেম নামক মিছেমায়া তার জীবনে এসেছিলো?ভাবতে ভাবতেই হিজাবে পিন লাগায় চাঁদ।পুরো হিজাব পরা শেষ করে ব্যাগ কাধে নিতেই তার ভাই চৈত্র পাশে দাঁড়িয়ে বলে,

“আজ কলেজ না গেলে হয়না?”

ভাইয়ের পানে চেয়ে চাঁদ শুধায়,

“ঠিক আছে যাবোনা।তবে কারণ?”

“আমার সাথে এক জায়গায় যেতে হবে।যাবি?”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে চাঁদ বলে,

“তুমি রেডি থাকলে চলো”

অবাক হয়ে চৈত্র বলে,

“আমাদের আশেপাশেতো অপরিচিত কেউ নেই তুমি করে বলছিস কেনো?কী হয়েছে?”

চাঁদ খানিকটা হেসে বলে,

“বাঃ রে!ভাইকে তুমি বলতে লোকজন থাকার প্রয়োজন?আমার ভাইকে যখন যা ইচ্ছা হবে তাই বলে ডাকবো।তোকেতো ঠিকঠাকই লাগছে চল”

“দাড়া এখানে।এক্ষুনি আসছি”

বলেই নিজের রুমের দিকে এগোয় চৈত্র।অতঃপর একটা কাগজের ফাইল নিয়ে চাঁদসহ বের হয় বাড়ির বাইরে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
কাজী অফিস থেকে হাসিমুখে বের হয় দুই ভাইবোন।পাশে আছে চাঁদের নতুন ভাবি,যাকে সদ্য বিয়ে করেছে তার ভাই চৈত্র।এবং তাদের সাথে আরও আছে চৈত্রের এক বন্ধু,তার নব্য বিবাহিতা স্ত্রীর এক ভাই আর এক বোন।চাঁদ গলা পরিষ্কার করে বলে,

“রূপ ভাবি তুমি বরং আমার সাথে চলো আমার এক ফ্রেন্ডের বাসায় তোমাদের নিয়ে যাই।ও ভীষণ খুশি হবে জেনে যে আমার ভাইয়া বিয়ে করেছে”

চাঁদের ভাবি রূপা বলে,

“না চাঁদ প্লিজ কাউকে বিয়ের কথা বলবেনা।আমি চাই এই কথা কেবল আমাদের ছ’জনের মাঝেই থাকুক”

চাঁদ কপাল কুচকে নিতেই চৈত্র বোনকে চোখের ইশারায় কিছু বলে।তা দেখে মুচকি হেসে ভাবির গালে হাত রেখে চাঁদ বলে,

“ঠিক আছে আমার মিষ্টি ভাবি”

চৈত্রের বন্ধু বলে,

“শোন চৈত্র আমরা সকলে মিলে তোদের জন্য একটা প্ল্যান করেছি।যেহেতু আজ বৃহস্পতিবার কাল শুক্রবারও আছে।তোরা দু’জন আজকে আর কালকের জন্য সাজেক থেকে ঘুরে আয়।যদি সমস্যা হয়ে যায় তবে শনিবারও থাকিস।একদিন ছুটি নিলে কিছু হবেনা”

চৈত্র চিন্তিত হয়ে বলে,

“তা ঠিক আছে কিন্তু আমার বাসার দিকটা?আর রূপ?”

চাঁদ ভাইকে আশ্বস্ত করে বলে,

“আম্মু-আব্বুর টেনশন নিওনা ভাইয়া।আমি ম্যানেজ করে নেবো”

রূপার বড় ভাই বলে,

“দেখো চৈত্র অনেক ভরসা করে তোমার হাতে বোনকে দিয়েছি।আমি জানি আমার বোনকে তুমিই ভালো রাখতে পারবে।হয়তো আমি ওর আপন ভাই না তবে একই বংশধর আমরা।ভালোও বাসি ভীষণ।সারাক্ষণ তোমায় নিয়ে চিন্তায় থাকে।বারবার বলবে ‘ভাইয়া ছেলেমানুষও বুঝি এতো সুন্দর হয়?’ আগেতো বুঝিনি হঠাৎ একদিন তোমার কথা বললো।তারপর ওর ইন্সিকিওরেন্স দেখে এই পদক্ষেপ নিতে হলো আমাদের।বাকিটা আমরা সামলে নেবো”

রূপার ভাইয়ের দিকে চেয়ে চৈত্র বলে,

“আমি আমার রূপন্তিকাকে ভীষণ ভালোবাসি ভাইয়া।আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা”

রূপার বোন বলে,

“ভাইয়া রূপা কিন্তু সবসময় বলতো ‘জানিস তোর দুলাভাইয়ের মতো সুদর্শন পুরুষ আমি আর দু’টো দেখিনি।যেদিন দেখবিনা?হা হয়ে থাকবি একদম!’ সত্যি ভাইয়া আপনাকে দেখে আমি হা ই হয়ে গেছিলাম।এই চাঁদ তোমরা দু’জন এতো সুন্দর কেন বলোতো?”

চাঁদ খানিকটা হেসে বলে,

“আল্লাহ সবাইকেই সুন্দর করে বানিয়েছেন সেজন্য”

রূপার ভাই চাঁদকে বলে,

“আমি কিন্তু আপনার প্রেমে পড়ে যাচ্ছি বেয়াইন সাহেবা”

চাঁদ মৃদু হেসে বলে,

“প্রেম জীবনে ধ্বংস বৈ কিছু আনেনা।প্রেম হতে সাবধান বেয়াই সাহেব”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
ভাই আর ভাবিকে বিদায় দিয়ে চাঁদ হাটতে হাটতে কন্টাক্টলিস্টে গিয়ে অরণকে কল দেয়।তিনবার রিং হতেই অরণ তা রিসিভ করে বলে,

“হ্যালো চাঁদ?এতোদিন কোথায় ছিলে?তুমি কি প্রণ….”

অরণকে থামিয়ে দিয়ে চাঁদ বলে,

“তৃতীয় কোনো ব্যক্তির কথা অথবা নাম কোনোটাই শুনতে চাচ্ছিনা।আপনার সাথে দেখা করাটা জরুরী আসতে পারবেন?”

“প্রণয় আবারও ভুল….”

অরণকে থামিয়ে দিয়ে চাঁদ শক্ত কন্ঠে বলে,

“আরেকবার সেই টপিকে কিছু বললে আপনার সাথেও যোগাযোগ বন্ধ করে দেবো”

“আচ্ছা সরি।আমিতো এখন হাসপাতালে আছি।তুমি কোথায় আছো?আর কোথায় আসতে হবে বলো”

“আমি এখন ঢাকা ভার্সিটির রোডে আছি।রোকেয়া হলের দিকে।ওখানটায় আসুন।না থাক টিএসসির মোড়েই আসুন আমি সেদিকটায় যাচ্ছি”

“ঠিক আছে আসছি”

অরণ কল কাটতেই চাঁদ অনেক ভেবেচিন্তে আরেকটা নম্বরে ডায়াল করে।কল রিসিভ হতেই চাঁদ ইতস্তত করে বলে,

“মি.আহিন?”

“বলছি”

“কিছু কথা বলা যাবে?”

“কথা বলতেই অবশ্যই ফোন দিয়েছেন”

“জ্বি”

“বলুন”

“আসলে একটা হেল্প লাগতো”

“যথাসাধ্য চেষ্টা করবো বলুন”

“ব্যস্ত না থাকলে দেখা করতে পারবেন?”

খানিকটা হেসে আহিন বলে,

“কী এমন কাজ পড়ে গেলো যে প্রণয়কে রেখে আহিনকে মনে পড়লো আপনার?”

“পার্সোনাল জিনিসে না যাই?”

“হ্যা হ্যা অবশ্যই।বলুন দেখা করতে চাচ্ছেন কেনো?আমি একটু ব্যস্ত আছি।সামনে ইলেকশন”

“হ্যা জানি।তবুও ঝামেলায় ফেলে দিচ্ছি।চাচ্ছিলাম না তবে আমি নিরুপায়।আপনি ছাড়া আর কেউ হেল্প করতে পারবেনা”

“চেষ্টা করবো।একটু তাড়াতাড়ি বলুন।আমার মিটিং আছে”

“জ্বি আসলে আপনার বাবাতো ঢামেকের সহকারী সভাপতি।ওনি নিশ্চয়ই মেডিকেলের ভেতরে যেই বাগান টা আছে সেই সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত?”

“মেডিকেলের বাগান?”

“জ্বি।আমার আসলে সেই বাগানটার ব্যাপারে জানাটা ভীষণ জরুরী।আপনি যদি তাকে জিজ্ঞেস করে আমায় জানাতেন!”

“বাগান সম্পর্কে কী জানতে চান?”

“আপনি শুধু ওনাকে বলবেন আপনি সেই বাগান টা ঘুরে দেখতে চান।ঐ বাগানটা আপনার ভালো লেগেছে।তখনই আপনার বাবার প্রতিক্রিয়া দেখতে পাবেন।আর বাকিটা দেখা করে তারপর বলবো আমি।দেখা করা যাবে?”

“কবে করতে চান?”

“যদি আপনার হাতে সময় থাকে তো আজই”

“আমি মিটিং শেষ করে আপনায় কল দেবো”

“আর শুনুন!”

“বলুন”

“আমি যে আপনাকে এসব বলতে বলেছি।কাইন্ডলি আমার নামটা আপনার বাবার সামনে নেবেন না”

“তার বিনিময়ে আমি কী পাবো?”

“ঘুষ চাচ্ছেন?”

“অনেকটা তেমনই ধরতে পারেন।রাজনীতির মূলনীতিই হচ্ছে ‘একহাতে দাও একহাতে নাও”

“একদম পাকাপোক্ত রাজনীতিবিদ হয়ে উঠেছেন দেখছি”

“আপনিও তো পাকাপোক্ত প্রেমিকা হয়ে উঠেছেন”

“রাখছি।মিটিং শেষ হলে টিএসসি আসবেন।ওখানেই থাকবো”

“ঠিক আছে”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
আধাঘন্টা পর টিএসসির মোড় হতে অরণ আর চাঁদ এক ফুচকার দোকানের পাশের পাকায় বসে দুই প্লেট ফুচকা অর্ডার করে।অতঃপর অরণ বলে,

“হঠাৎ কী হলো?”

“আমি আহিনকেও ডাকিয়েছি অরণ”

“আহিনকে কেনো?সেদিন না মানা করলে?”

“করেছিলাম তবে আমার মনে হলো তার বাবা যেহেতু কলেজের সাথে জড়িত হতেও পারে কিছু জানেন অথবা তিনিও শামিল”

কিছুক্ষণ ভেবে অরণ বলে,

“হ্যা এমনটা হতে পারে।কখন আসবে ও?”

“একটা মিটিং আছে তারপরই নাকি আসবে।সেজন্যই ফুচকা অর্ডার দিলাম।কিছুক্ষণ এখানে বসি এরপর তাকেসহ উদ্যানে ঢুকবো”

“আচ্ছা।কিন্তু সেদিন যে প্ল্যানের কথা বললে সেটা কতদূর এগোলো?”

“তার মাঝে কত কাহিনীই তো হয়ে গেলো।আজ কলেজ যাওয়ার ছিলাম একটা কাজে আটকা পড়েছি।শনিবার যাবো।সেদিন দেখি আশা করছি হয়ে যাবে”

“আজই নাহয় চলো?ওদের ক্লাসটাইম শেষ হতে বিকাল হবে।আমাদের কাজ তার আগেই হয়ে যাবে”

“কিন্তু রাখবো কোথায়?”

“আমার বাসায়”

“কেউ জানবেনা?”

“না”

“ঠিক আছে।আহিনের সাথে কথা বলেই আমরা বেরুবোনে”

“ঠিক আ…ঐতো ফুচকা।নাও খাও”

বলেই ফুচকার প্লেট চাঁদের দিকে এগিয়ে দেয় অরণ।নিজেও আরেকটা নিয়ে কথা বলতে বলতে খাওয়া আরম্ভ করে।ফুচকা খেতে খেতেই চাঁদ অরণকে বলে,

“নাস্তা না করেই বেরিয়েছিলাম।এখন আবার ফুচকা খাচ্ছি।নিশ্চিত গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা উঠবে”

নিজের ফুচকার প্লেট টা চাঁদকে ধরতে দিয়ে কাধের ব্যাগ সামনে এনে অরণ বলে,

“আমার ব্যাগে প্রায় অনেকধরণের ট্যাবলেটই আছে।তোমায় ক্যাপসুল দিচ্ছি।কোনটা খাও?”

“সেকলো টুয়েন্টি”

“ইম…আমার কাছে সরকারি টাই আছে।ওমিপ্রাজল খাও।এটা বেটার”

“ঠিক আছে দিন”

“পানি আছে?”

“হ্যা ব্যাগে আছে”

“ধরো”

প্রণয় আর মিরা এতক্ষণ যাবৎ অরণ আর চাঁদকেই পর্যবেক্ষণ করছিলো।অরণকে হাসপাতালের কাজ রেখে দ্রুত আসতে দেখেই প্রণয় মিরাকে নিয়ে তার পিছু আসে।যদিও মিরা আসতে চায়নি তবে প্রণয়ের জন্য আসতে হয়েছে তার।বর্তমানে প্রণয় ক্ষীপ্র গতিতে চাঁদ আর অরণের দিকে যেতে চাইলে তাকে টেনে গাছের আড়ালে নিয়ে আসে মিরা।অতঃপর গাছের পাশে পাকার উপর বসিয়ে নিজেও তার পাশে বসে বলে,

“কী করতে যাচ্ছিলি তুই?”

“দেখিস নি কী করছিলো ওরা?”

“হ্যা দেখেছি তো?”

“তো মানে?ফুচকা খাচ্ছে,পানিও খাইয়ে দিচ্ছে।এসব তুই দেখতে পাচ্ছিস না?খুব না সেদিন বললো কিছু নেই?”

“এতোটা জ্ঞানহীন কবে হলি প্রণয়?”

“কী বলতে চাচ্ছিস?”

“ঔষধ দিয়েছে খেতে।তাও গ্যাস্ট্রিকের পাতার মতো দেখলাম।আর তুই কিসব বলছিস?”

“আর প্রেমিকযুগোলের মতো বসে যে ফুচকা খাচ্ছে?”

“তুই অরণকে নিয়ে ইন্সিকিওর ফিল করছিস প্রণয়?সিরিয়াসলি?”

থমথমেভাবে প্রণয় বলে,

“এমন কিছুনা”

“তাহলে কেমন কিছু?”

“ওরা যদি রিলেশনশিপে থেকেই থাকে বলে দিলেইতো পারে।এতো নাটক করার কী আছে বুঝতে পারছিনা আমি”

“হতে পারে জরুরী কাজে এসেছে।আর তুইতো জানিস অরণ পূর্ণকে ভালোবাসে।তবুও এমন কথা কী করে বলছিস?”

“জরুরী কাজটা নিশ্চয়ই ফুচকা খেতে খেতে প্রেম করা?”

কপাল কুচকে মিরা বলে,

“প্রণয় তুই…”

“চুপ থাক।অরণের সাফাই গাইবি না।আমি জানি ও পূর্ণকে ভালোবাসে।তবে বন্ধুর ভালোবাসার দিকে হাত কেনো বাড়ালো?এতো ঘনিষ্টতা কিসের?আর আমিতো….”

বলতে গিয়েও থেমে যায় প্রণয়।তা দেখে মিরা বলে,

“কী?”

“অরণকে আমি সবটা বলেছিলাম।চাঁদের জন্য কী ফিল করি,কবে থেকে করি সবকিছুই।যেদিন থেকে আমি আমার অনুভূতিগুলো বুঝতেও পারিনি সেদিন থেকে আমারও আগে অরণ আমার অনুভূতি ধরে ফেলেছিলো।তাহলে সেই অরণ এমন কেন করছে বলতে পারিস তুই?আমার চাঁদের দিকে ও কেন হাত বাড়াবে?চাঁদকে ছোয়ার এবং ভালোবাসার অধিকার কেবল প্রণয়ের,এটা কি ও জানেনা?”

“আমি বুঝতে পারছি ইউ আর জেলাস বাট হতে পারে কোনো বিশেষ কারণ আছে যার জন্য দুজনকে এভাবে দেখা করতে হচ্ছে।হয়তো আমাদের পরে জানাবে”

“কবে জানাবে?যেদিন আমি জ্যান্ত লা*শ হবো সেদিন?”

প্রণয়ের ঠোট হাত দ্বারা চেপে মিরা খানিকটা উচ্চস্বরে বলে,

“প্রণয়!”

অতঃপর কপাল কুচকে আবারও বলে,

“কিসব বলিস!”

মিরার হাত সরিয়ে মিরাকে জড়িয়ে ধরে লম্বা শ্বাস নিতে নিতে প্রণয় বলে,

“আমি আর নিতে পারছিনা রে মিরা!”

প্রণয়ের পিঠে হাত বুলিয়ে মিরা শান্ত কন্ঠে বলে,

“এই যে তুই আমায় জড়িয়ে ধরলি।এটাকে কি তুই প্রেমিক-প্রেমিকার ভালোবাসা বলবি?”

কথাটা শোনামাত্র মিরাকে ছেড়ে দিয়ে প্রণয় বলে,

“তোকে তো আমি…”

“জানি।আর অরণ আর চাঁদেরও একই।ওরা প্রেমিক-প্রেমিকা হিসেবে কিছুই ভাবছেনা।আর অরণ চাঁদকে বোন হিসেবেই দেখে যেমনটা মির আর রবিন দেখে”

“তাহলে মির আর রবিনকে ভাইয়া ডাকলেও অরণকে ভাইয়া ডাকেনা কেনো?”

“সেটাতো আমি জানিনা”

“কিন্তু আমি জানি।কারণ অরণের জন্য তার ফিলিংস আছে”

“তুই আসলেই পাগল!ডাকেনাতো ভাইয়া তোকেও।সেটার বেলা?”

“তো অরণকেওতো ডাকেনা।অরণ অরণ বলে ডাকে”

“হ্যা হয়তো কিছু কারণবশত ডাকেনা।অথবা ভাইয়া ডাক আসেনা মুখ দিয়ে”

“আসেনা কারণ শি লাভস হিম”

“ধ্যাত!বেক্কল কোথাকার!ও যদি অরণকেই ভালোবাসতো।তাহলে তোকে…..ধুর!এখন তুই কি চাস তোকে ভাইয়া ডাকুক?”

মুখ গোমড়া করে প্রণয় গম্ভীরভাবে বলে,

“না।এমনকিছুই বলিনি আমি”

“তো অরণ আর চাঁদকে কেনো কাপল বানাচ্ছিস তুই ইয়ার!দেখ,অরণ পূর্ণকে অসম্ভব ভালোবাসে।তা তুইও জানিস আমিও জানি।আমি অরণের চোখে পূর্ণর জন্য যা দেখতে পাই একই জিনিস চাঁদের চোখে তোর জন্য দেখতে পাই মামা!মেয়েটার তোর প্রতি রয়েছে অগাধ ভালোবাসা।তোকে যেভাবে,যেই নজরে দেখে আর কাউকে দেখেনা ট্রাস্ট মি!আমি একটা মেয়ে হয়ে অন্য মেয়ের চোখের ভাষা বুঝবোনা?অন্তত তিন বছরেও না?শুরু থেকেই আমি তোর জন্যই ওর অনুভূতি বুঝতে পেরেছিলাম।আচ্ছা তুই ই বল আহিনের মতো অত সুদর্শন ছেলেকে রিজেক্ট করার কারণ কী?”

“প্রেম করতে চাইতোনা তাই”

“তাহলে অরণের সাথে প্রেম কী করে করছে?”

“জানিনা”

“ছাগল কোথাকার!আহিনকে রিজেক্ট কেনো?ও তো আরও অনেককেই রিজেক্ট করেছে আমরা দেখেছি।তুইও দেখেছিস।তার মধ্যে বেশিরভাগ সুন্দর ছেলেই ছিলো।এতো সুন্দর সুন্দর ছেলে কেনো রিজেক্ট করেছে?”

“তো তুই বলতে চাচ্ছিস আমি সুন্দর না?”

বিরক্তিতে কপাল কুচকে মিরা বলে,

“উফ!না।কারণ মেয়েটা শুরুতেই তোকে মন দিয়ে বসেছে।যার দরুন আর কেউতেই ওর মন আসেনি।আসবেওনা সম্ভবত”

“কিন্তু অরণ…”

মেজাজ খারাপ করে মিরা বলে,

“থা!প!ড়িয়ে গাল লাল করে দেবো এবার।মেজাজ খারাপ হচ্ছে আমার।কখন থেকে অরণ-চাঁদ অরণ-চাঁদ বলে ঘ্যানর ঘ্যানর করতেই আছে”

“তুই এতোটা স্বাভাবিক কী করে আছিস বলবি?”

“মানে?”

“এই যে অরণ পূর্ণকে ভালোবাসে।এখন আবার চাঁদের সাথে ওর এতো সখ্যতা।তোর কষ্ট লাগছেনা?একটুওনা?”

খানিকটা হেসে মিরা বলে,

“তুই আর মির বাদেতো আমার মনের খবর কেউ জানেনা,রাখেওনা।বলিস না কিন্তু কাউকে!”

“আহহা!তুই বল কষ্ট লাগেনা তোর?”

লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিরা বলে,

“চাঁদকে নিয়ে আমি মোটেও কিছু ফিল করিনা।কেনোনা আমি জানি ওদের মাঝে কিছুই নেই।কেনোনা অরণ পূর্ণকে ভালোবাসে আর চাঁদ তোকে।তবে অরণের চোখে যখন পূর্ণর জন্য ভালোবাসার বিশালতা দেখি হৃদয় চি!ড়ে যায় রে বন্ধু!”

“আমারও যায়”

“ভুল ভাবছিস তুই।মেয়েটা কেবল তোকেই ভালোবাসে।আমরা সবাই বুঝে গেলাম অথচ তুই বুঝছিস না।তবে তুই যা করেছিস সেদিন,আমার মনে হচ্ছে তোর জন্য সম্মান কমে যাবে মেয়েটার।ভালো আর বাসবে কিনা জানিনা।তবে যদি কখনো তুই ওকে পেতেও চাস অনেক স্ট্রাগল করতে হবে তোর।কেনোনা কোনো মেয়ের ক্যারেক্টার নিয়ে বললে সে সেটা মেনে নেবে না কখনোই।হোক সেটা তার ভালোবাসার মানুষই”

“অথচ করার বেলা মনে ছিলোনা?”

“কী?”

“কিছুনা”

To be continued…..

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

৫৫.
সূর্যের তেজ কমেছে অনেকখানি।নীলচে আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে শুভ্র মেঘেদের ভেলা।বৃষ্টি আসার কোনো সম্ভাবনা নেই,না আছে তেজী উষ্ণতা।মৃদুমন্দ বাতাস বইছে চারিপাশে।গাছের পাতাগুলো কিঞ্চিৎ নড়েচড়ে উঠছে।মাঝেমাঝে নীলাভ গগণে দেখা মিলছে সূর্যের হালকা সোনালি কিরণের রেখাও।যা স্পষ্টত চাঁদের চশমা বরাবর পড়ায় প্রতিফলিত হচ্ছে উদ্যান মাঠের ঘাসগুলোতে।বর্তমানে চাঁদ আর অরণ বসে আছে উদ্যানের ভেতরে একপাশের মাঠের দিকটায়।তাদের সাথে আছে আহিনও।তবে তার মুখশ্রী স্পষ্ট নয়।সে পরিধান করে আছে কালো রঙের এক পাতলা মাস্ক।গলা পরিষ্কার করে সে ই শুরু করে,

“হঠাৎ দেখা করার কথা বললে যে?”

লম্বা শ্বাস নিয়ে চাঁদ উত্তর দেয়,

“জ্বি”

আহিনের প্রশ্ন,

“অরণও আছে।কোনো গুরুগম্ভীর বিষয় কিনা?”

চাঁদ আবারও জবাব দেয়,

“হ্যা অনেকটা তেমনই”

“তা অরণ তুমিই বলবে নাকি চাঁদ থেকেই শুনবো?”

অরণ জবাব দেয়,

“চাঁদই বলুক”

“বলছি তবে।আসলে আহিন আপনার একটা হেল্পের খুব দরকার ছিলো”

“সেটাতো শুনেছিই কী হেল্প এবং কাহিনী কী তা বললে উপকৃত হতাম”

“হ্যা বলছি।আপনায় বলেছিলাম না?আপনার বাবার কথা?আপনি কাইন্ডলি ওনাকে এখন কল দিয়ে জিজ্ঞেস করতে পারবেন?”

ভ্রুযুগোল কুঞ্চিত করে আহিন বলে,

“এখন?কিন্তু কেনো?”

অসহায় দৃষ্টি দিয়ে চাঁদ বলে,

“প্লিজ?”

“আচ্ছা ঠিক আছে।কিন্তু কল দিয়ে বলবো কী?”

অরণ বলে,

“তুমি আংকেল কে বলবে আমাদের মেডিকেলের ভেতরের বাগান টা তোমার ভালো লেগেছে তুমি ঘুরে দেখতে চাও কোনো সুযোগ হবে কিনা?”

“কিন্তু মেডিকেলের বাগানে কী আছে অরণ?”

“কিছুতো অবশ্যই আছে।আমাদের উপর ভরসা রাখো আহিন,খারাপ কিছুই করবোনা”

“আহা!তা জানি।তবে বাগানে আমি কেনো যাবো বুঝছি না”

চাঁদ প্রতিত্তোর করে,

“আপনি না গেলে আমরাতো যেতে পারবোনা।আর আপনিতো একা ভেতরে যাবেন না।ইনিয়ে বিনিয়ে অনেকে থাকবে,থাকবো আমি আর অরণও”

“তাহলেতো তোমরা এমনিতেই যেতে পারো।তোমাদেরই তো মেডিকেল”

চাঁদ বলে,

“তা পারি তবে পুরোটাতো ঘুরে দেখতে পারবোনা।এজন্যই আপনাকে বলা”

“কিন্তু…”

আহিনের কিছু বলার পূর্বে অরণ বলে,

“প্লিজ আহিন আংকেল কে কল দিয়ে বিষয়টা বলো।আর হ্যা আমার অথবা চাঁদের কথা বলোও না কিছু”

“বলবোনা তবে এখনই কি করতে হবে?”

“হ্যা আর একটু প্লিজ স্পিকারে রেখো”

কপাল কুচকে নিয়ে অরণের পানে চেয়ে আহিন বলে,

“ঠিক আছে”

অতঃপর তার বাবা অধিরাজ মোহাম্মদ শেখের নম্বরে ডায়াল করে ফোন স্পিকারে রাখে সে।দু’বার রিং হতেই কল রিসিভ করেন তিনি আর বলেন,

“হ্যালো”

“হ্যালো বাবা?”

“হ্যা বলো”

“কোথায় আছো তুমি?”

“তোমার বোনের সাথে আছি।একটু পরে কল দেই?”

“কী!অহনা এসেছে?ও বাংলাদেশে কবে এসেছে?আমার সাথে দেখা করলোনা?এবারও কি না দেখা করেই চলে যাবে নাকি?দেখি ওর কাছে ফোন দাওতো”

“কিরে শুনলাম তুই নাকি কোন মেয়ের জন্য দেবদাস হয়ে বসে আছিস”

থতমত খেয়ে চাঁদের পানে চেয়ে আহিন খানিকটা কেশে বলে,

“সেসব রাখ।তুই বল বিডিতে এসেছিস দেখা না করে চলে যাবি?একবারও কিন্তু দেখা করিস না আমার সাথে।সেই বারো বছর আগে তোকে দেখেছি আমি”

আহিনের বোন অহনা খানিকটা হেসে বলে,

“চিল ম্যান!দেখাসাক্ষাৎ তো হতে থাকবে।অ্যান্ড আই গেস এবারও তোর সাথে আমার দেখা হচ্ছেনা।আয় উইল গো সুন”

“অহনা!”

“ফুলিশ আহিন!রাজনীতি করছিস অথচ নিজের প্রফিট দেখছিস না তুই?এভাবে জনসেবা করলে কি আদোতে তুই তোর দাপট দেখাতে পারবি?”

“লোকে আমায় ভালোবাসে আমিও বাসি।আর আমার বিশ্বাস ভালোবাসার মাধ্যমেই তাদের মনে জয় করবো আমি”

“অথচ সেই মেয়ের মন জয় করতে পারিস নি কেনো?”

প্রসঙ্গ এড়াতে আহিন বলে,

“বাবাকে ফোন দে।কথা আছে তার সাথে আমার”

“বিষয় এড়িয়ে যাচ্ছিস?ওয়েল,গুড।নাও ড্যাড কথা বলো তোমার মানবসেবক ছেলের সাথে”

ফোন কানে লাগিয়েই অধিরাজ শেখ বলেন,

“যা বলবে তাড়াতাড়ি বলবে আমার কাজ আছে”

“আসলে বাবা ডিএমসিতে যেই বাগান টা আছে না?সেখানে গিয়েছিলাম”

অধিরাজ শেখ চেচিয়ে বলেন,

“কী!ওখানে গিয়েছো!কেনো গিয়েছো?”

কপাল কুচকে আহিন বলে,

“চেচাচ্ছো কেনো?বাগানটা ভালো লেগেছে তাই গিয়েছি”

“কাকে বলে গিয়েছো?”

“আমার বাবা যেখানে সভাপতি আমি নেক্সট কাউন্সিলর পদে দাড়াবো সেখানে ঐ বাগানে যেতে আমার পার্মিশন নিতে হবে বাবা?সিরিয়াসলি?”

“না আমি সেভাবে বলিনি।ওখানে যাওয়ার বিশেষ কারণ?”

“আসলে চাচ্ছিলাম ওখানের ভিউ টা বেশ ভালোতো সেখানে একটা সমাবেশ ডাকাতাম।তাই ঘুরে দেখতে চাচ্ছিলাম পুরোটা।তোমার কি কোনো সমস্যা আছে?”

“কী!পুরোটা কেনো ঘুরতে চাচ্ছো?আর ঐ বাগানে সমাবেশ ডাকানোর প্রয়োজন টা কী?তুমি যেখানে সেখানে চাইলেই সমাবেশ হয়ে যাবে।ঐ বাগানের প্রতি আগ্রহ কেনো তোমার?”

“আমার তুলনায় তোমার আগ্রহ বেশি দেখছি বাবা”

ওপাশ থেকে আওয়াজ আসে আহিনের বোনের,

“ড্যাডের মুখে মুখে কথা বলিস তুই আহিন?অভদ্র হয়ে গেছিস?”

“আমি অভদ্র হইনি।আমি জাস্ট জিজ্ঞেস করছি।এখন বাবার ভালো না লাগলে ইটস ওকে।পড়ে থাকো তোমরা তোমাদের বাগান নিয়ে।ডিজগাস্টিং!”

বলেই কল কাটতে নিলে অধিরাজ শেখ বলেন,

“কল কাটবেনা।বলো কবে সমাবেশ করবে?”

“সমাবেশের আগে পুরোটা দেখতে চাই।কোন জায়গা পার্ফেক্ট হবে সেটা আমায় দেখতে হবে”

বলেই চাঁদের দিকে চোখের ইশারায় জানতে চায় কবে দেখতে যাবে তারা।চাঁদ আঙুলের ইশারায় আরও তিনদিন পরের কথা বুঝায়।ইশারায় ইশারায় কথা বলতে বলতে অধিরাজ শেখের গম্ভীর কন্ঠস্বর ভেসে আসে,

“কবে দেখতে চাচ্ছো?”

“এই তো বাবা তিনদিন পরই”

“সোমবারে?”

কথাটা শুনেই চাঁদের দিকে তাকাতে চাঁদ হ্যা বোধক মাথা নাড়ে।অতঃপর আহিন তার বাবাকে বলে,

“ইম….হ্যা সোমবারই”

“ঠিক আছে রাখছি”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
অরণ আর চাঁদ লুকিয়ে চুরিয়ে কলেজে প্রবেশ করেছে।বর্তমানে তারা আছে দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাসের পেছন দিকটায়।সেখানকার পাইপ বেয়ে দেয়াল টপকে ক্লাসের শেষ মাথায় আসতে হবে যেনো কেউ দেখতে না পায়।সেখানে দাড়িয়েই উপরের দিকে চেয়ে চাঁদ অরণকে বলে,

“আপনি আগে উঠুন তারপর আমি উঠছি”

অরণের অসহায় মুখভঙ্গি দেখে চাঁদ জিজ্ঞেস করে,

“কী হয়েছে?”

“এসব কখনো করিনি আমি,পারিনা।তুমি কী করে উঠবে?”

খানিকটা হেসে চাঁদ বলে,

“স্কুল থেকে এমন কত পালিয়েছি!এগুলো কোনো ব্যাপার না।আমি আগে উঠছি।আমায় ফলো করে উঠবেন,বুঝেছেন?”

“আমি পড়ে যাবো চাঁদ।তুমি বরং এখান দিয়ে উঠো আমি সিড়ি বেয়ে উঠছি”

“আরে!সিড়ি দিয়ে কেউ দেখে ফেলবে।দারোয়ান মামা আছেনা?এখান দিয়েই উঠা লাগবে।আপনি পারবেন চিন্তা করছেন কেনো?খুব সহজ।আমি যেভাবে উঠবো ঠিক সেভাবেই উঠবেন”

“ব্যথা পাবোতো”

কপাল কুচকে চাঁদ বলে,

“সেদিন লা*শ দেখে ভয় পাননি আজ ব্যথার ভয় পাচ্ছেন?”

চাঁদের ঠোটে আলতোভাবে হাত রেখে অরণ ফিসফিসায়,

“হিশ!আস্তে কথা বলো শুনে ফেলবে কেউ”

বলেই হাত সরিয়ে নেয় সে।হাত সরাতেই চাঁদ বলে,

“আচ্ছা এখন চলুন”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
ঘন্টা দুয়েক পরে অরণের বাসার গ্যারেজের সামনে অরণ তার গাড়ি নিয়ে ঢুকে পড়ে।অতঃপর ভেতরটায় গিয়ে গাড়ি থেকে বের হয় অরণ আর চাঁদ।গাড়ির ডিকি হতে এক বস্তা বের করে কাধে তুলে নেয় অরণ।চাঁদকে ইশারায় তার পিছু আসতে বললে দুজনে হাটা ধরে সামনের দিকে।খানিকটা ভেতরে যেতেই একটা দরজা দেখতে পায় চাঁদ।অরণ সেটা খুলতে বললে চাঁদ তা খুলে ভেতরে ঢুকে।ভেতরে এসে দুজন ধরাধরি করে বস্তাটা নামায়।নামিয়েই বস্তা হতে একটা মেয়েকে বের করে তারা।অতঃপর অরণ গিয়ে দরজা আটকে দেয়।দরজা আটকাতেই চাঁদ মেয়েটার মুখে লাগানো কস্টেপ খুলে দিয়ে তার দিকে পানি এগিয়ে দেয়।মেয়েটাকে পানি খাইয়ে তার সামনে বসে চাঁদ,পাশে বসে অরণও।দুজনকে বসতে দেখেই ব্যতিব্যস্ত হয়ে মেয়েটা বলে,

“চাঁদ আপু তুমি?আর ওনি ফাইনাল ইয়ারের সেকেন্ড ক্যাপ্টেন ছিলো না?তোমরা আমায় এভাবে ধরে এনেছো কেনো?প্লিজ আমাকে যেতে দাও আপু”

চাঁদ তাকে আশ্বস্ত করে বলে,

“টেনশন নিওনা।আমরা তোমার কিছু করবোনা।শুধু কিছু জিনিস জানতে চাই।এবং সত্যিটাই জানতে চাই।হয়তো খারাপ কিছুই করবোনা তবে মিথ্যা বললে হতেও পারে তোমার সাথে খারাপ কিছু হয়ে গেলো?”

মেয়েটা ঢোক গিলে বলে,

“কী জানতে চাও?”

চাঁদ সোজাসাপটা বলে,

“ইনিয়ে বিনিয়ে কথা আমি পছন্দ করিনা।তাই সরাসরি জিজ্ঞেস করছি।আর মিথ্যা বলার চেষ্টা করবেনা কারণ সত্যি ঘটনার অনেকাংশ আমরা জানি।সো যা বলবে সত্যিটাই বলবে বুঝেছো?”

“বু…বুঝেছি।বলো”

“আমার জানামতে যেদিন ফাইনাল ইয়ারের ফেয়ারওয়েল হলো তার আয়জনের জন্য এর আগের দিন আমিসহ আমার সাত ফ্রেন্ড কলেজে ছিলাম।এবং সেদিন তোমাদের সবাইকে চলে যেতে বলা হয়েছিলো।কিন্তু সেদিন তুমি যেতে পারোনি।কিডন্যা!পড হয়েছিলে এবং শুধু তুমি না তোমার ক্লাসের আরও একটা মেয়েসহ আমার এক ক্লাসমেটও”

অরণ খানিকটা কেশে বলে,

“আর তোমাদের রাখা হয়েছিলো মেডিকেলের ভেতরের বাগান টায়।ঠিক কিনা?”

মেয়েটা তোতলিয়ে বলে,

“তো….তো..তোমরা জানো কী করে?”

অরণের জবাব,

“আমরা আরও অনেককিছুই জানি।কিন্তু যেটা জানিনা সেটাই তোমার থেকে জানতে চাচ্ছি”

“কা….কী জানতে চাচ্ছেন ভাইয়া?”

চাঁদ বলে,

“আমাদের জানামতে যারাই গায়েব হয়েছে বেশিরভাগই রে!পড হয়েছে।সেই দরুন অনেকে সু!ই!সাই!ডও করেছে।তবে তোমাদের ব্যাপারে আমি জানিনা।সেদিন আমি শুধু কোনো কিছু পড়ার আওয়াজ শুনেছিলাম।তোমাদেরই যে ধ!রেবে!ধে নেওয়া হয়েছিলো তা জানি।তবে বাগানে নিয়ে কী করেছিলো?কিভাবে আবার ফেরত আসলে?নিয়েছিলোই যখন ফেরত পাঠালো কেনো?”

অরণের প্রশ্ন,

“মেয়েগুলোকে নিয়ে ওরা কী করেছে?আর কয়জন শামিল এসবে?কেনো করছে এসব?কারা করছে?”

আবারও চাঁদ জিজ্ঞেস করে,

“মাস্টারমাইন্ড কে তা কি জানো?”

ঘনঘন শ্বাস নিয়ে মেয়েটা বলে,

“মাস্টারমাইন্ড সম্পর্কে জানিনা।বা এসব কেনো করছে তাও জানিনা।তবে ওখানে কী করেছে সেটা বলতে পারি”

অরণ বলে,

“বলো”

চাঁদের বুকের ধুকপুকানি বেড়েছে।সেইসাথে চোখের সামনে আম্বিয়ার লা*শসহ সেদিনের সেই মেয়েটার আহাজারি কানে ভাসছে।তবে নিজেকে যথেষ্ট সামলে উৎসুক হয়ে আছে সবটা জানতে।

মেয়েটা ঢোক গিলে বলে,

“সেদিন সকালে যখন আসি হঠাৎ করেই বলা হয় আজ ক্লাস হবেনা,বাড়ি চলে যেতে।প্রথমে বুঝিনি তবে পরে বুঝেছিলাম এটা করা হয়েছিলো মেয়েদেরকে ধরে নেয়ার জন্য।ভীড়ের মাঝেই কে যেনো মুখ চে!পে ধরে আড়াল করে নিয়ে যায় আমায়।এরপর আর মনে নেই।পরে যখন চোখ খুলি দেখি কোনো জঙ্গলের ভেতরে আছি।কিন্তু আমি একা না আরও চার-পাঁচটা মেয়ে ছিলো।আমাদের বেঁ!ধে রাখা হয়েছিলো।তিনজন পুরুষও ছিলো”

মেয়েটা থামতেই অরণ বলে,

“কারা ছিলো?”

“সে আমি বলতে পারবোনা ভাইয়া”

চাঁদ গম্ভীরভাবে বলে,

“বলতে হবেনা।আমরা জানি।অনিন্দ্য স্যার যে মেয়েদের অ*পব্যবহার করেন তা জানি আমরা।আর সে যে ধ….ধ!র্ষ!ণেও শামিল আছেন তাও জানি”

মেয়েটার চোখে অশ্রুরা এসে ভীড় জমায়।সে নাক টেনে বলে,

“তাহলেতো জানোই।আমরা তখন চেচাতে গেলে আমাদের সামনে আমাদের সামনেই!……”

মেয়েটা ইতস্তত করছে দেখে চাঁদ বলে,

“বলো সমস্যা নেই।অরণ সবই জানে।তুমি দ্বিধাহীনভাবে বলো।বড় ভাইয়ের ন্যায় তোমার সাহায্য করবে”

মেয়েটা খানিকটা হেসে বলে,

“ধ!র্ষি!তাকে আর কীই বা সাহায্য করবে আপু?”

কপাল কুচকে চাঁদ বলে,

“তুমি!”

“হ্যা আপু।আমিও বাদ যাইনি।এমনকি কেউই বাদ যায়নি।যারা ফেরত এসেছে সবাই ই ধ!র্ষি!তা ট্যাগ লাগিয়েই এসেছে।ফেরত আসার যেমন কারণ আছে তেমনি আমাদের ফেরত পাঠানোরও কারণ আছে”

“সবটা বুঝিয়ে বলো”

“সবকিছু নিঁখুতভাবে বলতে পারবোনা আপু।বাধ্যবাধকতা আছে।পরিবারের ক্ষ*তি করতে পারবোনা যে!”

অরণ শান্তকন্ঠে মেয়েটাকে বলে,

“চিন্তা করোনা।যতটুকু বলা যায় ততটুকুই বলো।তবুও বলো”

“বলছি ভাইয়া।সেদিন আমাদের সামনেই আমাদের মনে ভয় ঢুকানোর জন্য অনিন্দ্য স্যার আর মাহতিম স্যার মিলে!একটা মেয়েকে…. একটা মেয়েকে…..আমাদের সামনেই…..আমাদের সামনেই ব….ব*স্ত্রহী*ন করে আপু!তারপর তারপর….”

অরণ কিছু বলতে নিলে চাঁদ তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,

“বুঝেছি।এরপর কী হয়েছে তা বলো”

“আমাদের সামনেই কাশেম মামা মেয়েটাকে!”

অরণের প্রশ্ন,

“আবার কী করেছে?”

“মেয়েটাকে মে!রে ফেলে”

বলেই লম্বা শ্বাস নেয় মেয়েটা।চাঁদ কপাল কুঞ্চিত করে জিজ্ঞেস করে,

“কাশেম মামা কি ক্যান্টিনের কাশেম মামা?”

“হ্যা আপু”

“ওনি এতো নি!কৃ!ষ্ট!”

মেয়েটা হেসে বলে,

“নি!কৃ!ষ্টতার এখনো কিছুই শোনাইনি আপু”

চাঁদ বলে,

“বলো শুনছি”

“তুমি শুনে অবাক হবে।ফাইনাল ইয়ারের এক আপু লিডার এসবের।সেইসাথে মাহতিম স্যারের গার্লফ্রেন্ডও।নামটা যেনো কী!”

তৎক্ষনাৎ অরণ বলে,

“আম্বিয়া?”

“হ্যা হ্যা আম্বিয়া।আপুটা জানো আমাদের কী বলে?”

অরণ জিজ্ঞেস করে,

“কী বলে?”

“আমরা যেনো এসবে অভ্যস্ত হয়ে যাই।এগুলোই নাকি আমাদের করতে হবে।তারা নাকি ট্রেনিং দিচ্ছে”

কপাল কুচকে চাঁদ বলে,

“বাগানেই এসব করা হয়?”

“না।বাগানের দিক দিয়ে একটা পেছন দিকে রাস্তা আছে।ওখান থেকে আজিমপুর যাওয়া যায়।আজিমপুরের কোথায় যেনো আমাদের আ*টকে রাখা হয়েছিলো।বাড়িটা বেশ বড়।কেউ থাকেনা।সেখানেই আমরা ছিলাম।শুধু আমরা না।পথ শিশু।ভিখারি মেয়ে,বড় ছোট সব মেয়েই ছিলো।এমনকি নয়-দশ বছরের বাচ্চা মেয়েদেরও বাদ দেয়নি আপু!”

“আজিমপুরের বিষয়টা তুমি বুঝলে কী করে?”

“একদিন জানালা দিয়ে লুকিয়ে বাইরে দেখেছিলাম।আমার বাসা আজিমপুরেই সেই দরুন এখানের সব চিনি।আজিমপুরেই ছিলাম অথচ দেখো নিজের বাসায় যেতে পারিনি!”

বলেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেয়েটা।অরণ জিজ্ঞেস করে,

“তারপর কী হলো?তোমাদের দিয়ে করানোটা কী হয়েছে?”

“সেসব বলা আমার পক্ষে সম্ভব না ভাইয়া!আপনারা আর জিজ্ঞেস করবেন না প্লিজ”

“কিন্তু তোমরা ফেরত কেনো এসেছো?কেনো পাঠিয়েছে?”

“না এসেতো উপায় নেই ভাইয়া।আমাদের হু!মকি দেয়া হয়েছে যদি ফেরত এসে নতুন মেয়েদের নিজ ইচ্ছায় না নেই তবে আমাদের ফ্যামিলির ক্ষ*তি করবে।আমাদের পাঠানোর এটাই কারণ যাতে করে কেউ সন্দেহ না করে আর যেনো নতুন মেয়ে নিতে পারি আর নিজ ইচ্ছায় রোজ তাদের ওখানে গিয়ে…..”

বলতে বলতে থেমে যায় মেয়েটা।তা দেখে চাঁদ জিজ্ঞেস করে,

“গিয়ে?”

“না আপু বলতে পারবোনা আমি!”

চাঁদ মেয়েটার হাতের বাধন খুলে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

“বিশ্বাস করো আমায়।কাউকে কিচ্ছুটি বলবোনা।আমাদের তিনজনের মাঝেই থাকবে।তুমি বলো প্লিজ!জানাটা জরুরী”

“আমি বলতে পারবোনা আপু!”

অরণ গম্ভীরভাবে বলে,

“তুমি কি চাওনা আর কোনো মেয়ে সেই পথে যাওয়া থেকে বেঁচে যাক?একটা মেয়ের জীবন আর সম্ভ্রম বেঁচে যাক?কী?চাওনা তুমি?”

মেয়েটা চোখের জল ছেড়ে দিয়ে বলে,

“চাই ভাইয়া চাই!খুব করে চাই।তবে আমার পরিবার!”

অরণ ভরসা দিয়ে বলে,

“তোমার পরিবারের কিছু হবেনা।কেউ জানবেনা তোমার ব্যাপারে।আমরা কাউকে বলবোনা।তোমার থেকে এতোকিছু জেনেছি তাও কেউ কখনো জানবেনা।আমারও একটা ছোট বোন আছে।একদম তোমার মতো।আমি অবশ্যই চাইবোনা আমার বোনের মতোই নিষ্পাপ কোনো মেয়ের কিছু হোক!”

মেয়েটা ঢোক গিলে লম্বা শ্বাস নিয়ে বলে,

“আমাদের সন্ধ্যার দিকে সেখানটায় যেতে হয় ভাইয়া।কলেজ শেষ করে আমরা সেখানেই যাই।আর কিছু বলতে পারবোনা।প্লিজ জিজ্ঞেস করবেন না,প্লিজ!দোহাই লাগে!”

চাঁদ বলে,

“শুধু শেষ একটা প্রশ্ন”

“বলো”

“মাহতিম স্যার,অনিন্দ্য স্যার আর কাশেম মামা বাদে আর কে কে আছে এসবে?”

“সেটা আমি বলতে পারবোনা আপু।আমায় মাফ করে দাও প্লিজ!”

“তুমি জানো?চেনো তাদের?”

“বেশি কিছু বলতে পারবোনা তবে এটা বলতে পারি যে এটায় কয়েকজন না অনেকজন শামিল আর যে মাস্টারমাইন্ড সে খুব প্রভাবশালী”

“মাস্টারমাইন্ড কে দেখেছো?চেনো?”

“না কখনো আমাদের সামনে আসেনা।তবে আম্বিয়া আপুর সাথে তার বেশ ঘনিষ্ঠতা।সম্ভবত আম্বিয়া আপু মাস্টারমাইন্ডের কিছু হয়”

“প্রেমিকা টাইপ?”

“না তেমন না।এমনকিছু দেখিনি,শুনিওনি।আম্বিয়া আপুতো মাহতিম স্যারের গার্লফ্রেন্ড।একবার তো আমাদের সামনেই তারা!”

“কী?”

“কিছুনা।আমি জানিনা তোমরা এসব কেনো জানতে চেয়েছো,জেনে কী ই বা করবে তবে ভাইয়া,আপু প্লিজ তোমরা কাউকে কিছু বলোওনা।আমার নামটা কখনোই নিও না প্লিজ।দোহাই তোমাদের!আমার উপর রহম করোও।যদি আমার ব্যাপারে জেনে যায় আমার ছোট বোনটাকে তারা ছাড়বেনা গো!”

চাঁদ মেয়েটার বাহুতে হাত রেখে বলে,

“ভরসা রাখো কেউ জানবেনা।তবে আমাদের ব্যাপারেও যেনো ঘুনাক্ষরে কেউ টের না পায়।যদি জানে বুঝে নেবো তুমি বলেছো আর তুমি অবশ্যই চাইবে না তোমার জন্য আরেকটা মেয়ের জীবন নষ্ট হোক?”

“না আপু কখনোই না।আমি চাইনা তোমার অথবা ভাইয়ার কোনো সমস্যা হোক।কেউ এসব জানবেনা।আমাদের যে দেখা হয়েছে সেটাই আমি এখান থেকে গেলে ভুলে যাবো।তোমরাও মনে রাখবেনা কিছু”

অরণ লম্বা শ্বাস ফেলে বলে,

“চিন্তা করোনা।দ্যা চ্যাপ্টার ইজ ক্লোজড হেয়ার”

চাঁদ মেয়েটাকে ছাড়াতে ছাড়াতে অরণকে বলে,

“লিমাকে একটু ফ্রেশ হতে দিলে ভালো হয়না অরণ?”

“না না আপু।আমায় ছেড়ে দাও আমি চলে যাবো এভাবেই”

“এভাবে গেলে সন্দেহ করবে।আর তুমি ই তো বললে কলেজ থেকে সেখানে যাও।তাহলে বুঝে যাবেনা?তোমার কিছু হয়েছে?আর নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রাখবে।কাউকে বুঝতে দেবেনা তোমার মনে লুকানো কথা অন্যরা জানে”

“না আপু বুঝবেনা কেউ”

“তাহলে চলো আমার সাথে?”

“ঠিক আছে চলো”

চাঁদ অরণকে বলে,

“অরণ?”

“হ্যা চলো।আমার রুমে নিয়ে যাই সেখান থেকে ফ্রেশ হয়ে তারপর যাবে”

“ঠিক আছে চলুন”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
লিমা নামক মেয়েটাকে বিদায় দিয়ে হলরুমে বসে থাকা অরণের কাছে এসে চাঁদ বলে,

“লিমা গেছে আমারও যাওয়া উচিত অরণ”

“চলো দিয়ে আসি”

“সমস্যা নেই যেতে পারবো আমি”

“সমস্যা তোমার নাইবা থাকতে পারে তবে আমার আছে।আমিই দিয়ে আসবো তবে কিছুইতো খেলেনা দাড়াও আমি আসছি”

“না না কিছু লাগবেনা অরণ।আপনি বরং…..”

চাঁদের কথা সম্পূর্ণ হবার পূর্বেই অরণের বোন অরিন নিজের রুম থেকে বেরিয়ে হলরুমে আসতে আসতে বলে,

“মেয়েটা কে রে ভাই?আমার হবু ভাবি নাকি হা?”

নাকমুখ কুচকে বোনের দিকে চেয়ে অরণ বলে,

“থা!প্প!ড় দেবো বেয়াদব কোথাকার”

“মাহ কী করলাম আমি?”

চাঁদ ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলে,

“কী করছেন অরণ?এভাবে কেনো বলছেন?আপনার বোন হয় কি?”

“হ্যা”

“দেখুন আপু আপনার কোথাও সমস্যা হচ্ছে।অরণ আমার সিনিয়র ভাই হয়”

অরণ বলে,

“অরিন তোমার ছোটই চাঁদ”

অরণের মুখে ‘চাঁদ’ শুনে মেয়েটা জিজ্ঞেস করে,

“আপু আপনার নাম কি চাঁদ?”

“হ্যা”

“আপনি কি ঢামেকের?”

“হ্যা,এখনই না বললাম অরণের জুনিয়র আমি?”

অরণের পানে চেয়ে অরিন বলে,

“এই চাঁদই কি?”

অরণ গম্ভীরভাবে বলে,

“হিম”

কথাটা শোনামাত্র অরিন চাঁদের সামনে এসে চাঁদের দিকে পলকহীন তাকিয়ে বলে,

“আপনার সাথে সত্যিই কারো তুলনা হয়না আপু।আপনি সাধারণের মাঝেও অসাধারণ একজন!”

অরিনের গালে হাত রেখে চাঁদ বলে,

“তুমিও ভারী মিষ্টি মেয়ে অরিন”

“তবে আপনার সামনে কেবলই ফিকে পড়ে যাওয়া সামান্য এক মিষ্টি মেয়ে বোধহয়।আর আপনি হলেন অমৃতরূপী অসাধারণ এক নারী।এজন্যই বুঝি প্র…..”

অরিনকে থামিয়ে দিয়ে অরণ বলে,

“স্টপ অরিন।যা চাঁদের জন্য শরবত করে আন”

“যাচ্ছি ভাইয়া”

“না না অরিন যেতে হবেনা।আমি এখন বাসায় যাবো”

“কিন্তু আপু….”

“অন্য একদিন হা?”

“ঠিক আছে।তবে একটা কথা জিজ্ঞেস করতাম আপু”

“হ্যা অবশ্যই”

“আপনি কি খুব দুঃসাহসী?”

“মানে?”

“কেউ একজন বলেছিলো আপনি নাকি ভীষণ দুঃসাহসী এক নারী।আপনার মাঝে যেই দুঃসাহসিকতা আছে অন্য কারো মাঝে তা নেই।কেবল আপনাতেই নাকি সেই দুঃসাহসিকতা বিদ্যমান”

“কে বলেছে?”

“কোনো…”

অরিনের কথা সম্পূর্ণের পূর্বেই অরণ বলে,

“চলো চাঁদ তোমায় বাসায় পৌঁছে দেই”

“ইম…হ্যা।আচ্ছা অরিন আসি ভালো থেকো”

“তুমিও ভালো থেকো”

চাঁদ দূরে চলে যাচ্ছে আর সে পানে তাকিয়েই আস্তেসুরে অরিন বলে,

“আর আমার ভালোবাসাকে ভালো রেখো”

অতঃপর চেচিয়ে বলে,

“চাঁদ আপু!আকাশের চাঁদও তোমায় দেখলে ভীষনভাবে শরমে যাবে!”

অরিনের ডাক শুনে তার পানে ঘুরে কেবলই একটা মিষ্টি হাসি উপহার দেয় চাঁদ।তা দেখে সে পানে তাকিয়েই বিড়বিড় করে অরিন বলে,

“এজন্যই বুঝি প্রণয় বলেছিলো? ‘প্রণয়কে পাওয়ার দুঃসাহসিকতা কেবল চাঁদেতেই বিদ্যমান?”

To be continued….

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

৫৬.
“এতোটা ভয়াবহ লা*শ আগে কখনো দেখিনি।কতটা বিকৃ!ত মস্তিষ্কের অধিকারী হলে কেউ কাউকে এভাবে খু*ন করতে পারে!”

বাক্যগুলো সম্পন্ন করে নিজ চোখে দেখা সকল ঘটনা একের পর এক ডায়েরির পাতায় তুলতে থাকে চাঁদ।এবং সর্বশেষে লিখে,

“আমি বোধহয় জানি সবকিছুর পেছনে কে হতে পারে।তবে কেবলই সন্দেহ হচ্ছে।যেদিন জানতে পারবো সবটা,সেদিন এই পাতাটাও পূর্ণ করবো”

অতঃপর কলমের মুখ লাগিয়ে ডায়েরীটা বন্ধ করে আলমারিতে সন্তপর্ণে তা লুকিয়ে রাখে চাঁদ।

আজ রবিবার,
মাঝে দিয়ে কেটে গেছে দু’টো দিন।বিশেষ কিছু ভেবে পায়নি চাঁদ।তবে আজ এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে।যে করেই হোক তা আমলে আনতেই হবে।কাজটা তার করতেই হবে এবং সে করবেও।এক বুক শ্বাস সঞ্চার করে বাড়ির বাইরে পা রাখে।রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে ডায়াল করে লিমা নামক সেই মেয়েটার নম্বরে।কয়েকবার রিং হয়ে রিসিভ হতেই মেয়েটার সালামের জবাব নিয়ে চাঁদ বলে,

“কলেজ যাচ্ছো আজ?”

“আপনি কে?”

“চাঁদ”

“আপ…আপু।শোনো আমি একটু তাড়াহুড়োয় আছি তোমার সাথে পরে কথা বলবো।আর হ্যা কলেজ যাচ্ছি”

বলেই দ্রুত কলটা কাটে মেয়েটা।লিমার কর্মকান্ডে অবাক হয়ে মোবাইলের পানে চেয়ে থাকে চাঁদ।অতঃপর কলেজের উদ্দেশ্যে হাটা ধরে।

কলেজ ক্যাম্পাসের একপাশে দাঁড়িয়ে আছে অরণ।তার থেকে হাত তিনেক দূরেই দাঁড়িয়ে আছে প্রণয়ও।দুজনের মুখে কোনো রা নেই।সেইসাথে গম্ভীরভাব বজায় রেখেছে দুজনই।অরণ বেশি অসন্তুষ্ট।সেদিনের প্রণয়ের বলা কথাগুলো এখনও সে স্মরণে রেখেছে।রাখার মতো কথাই সে বলেছে।যার দরুন প্রণয়ের থেকে যথেষ্ট দূরেই দাড়িয়েছে সে।প্রণয়ও যে এর ব্যতিক্রম তেমন না।দুজনই কিছুক্ষণ নিজেদের মাঝে নীরবতা পালন করে।অতঃপর বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে প্রণয়ই অরণের কাছে আসতে আসতে বলে,

“এখন আমার সাথে কথা বলতেও তোর রুচিতে বাধে নাকি রে?”

অরণও সাথে সাথে জবাব দেয়,

“রুচিতে না বিবেকে বাধে”

“তা বিবেক কী বলে?”

“এটাই যে,পরিবারের পরে যাকে সবচাইতে বেশি ভালোবাসি সে অবিশ্বাস করেছে,অ!পবাদ দিয়েছে”

“তুই এখনও বলছিস আমি অ!পবাদ দিয়েছি?”

“না।তুই কেবলই অ!পবাদ না,অপমানও দিয়েছিস”

“আর তুই কী দিয়েছিস?”

“তোকে আর কীই বা দিতে পারি আমি?”

“তুই জানতিস না আমি?আমি চাঁদকে…চাঁদকে আমি….”

কথাটা বলতে চেয়েও বলতে পারছেনা প্রণয়।তাই অরণই সে কথা সম্পূর্ণ করে,

“ভালোবাসিস তাইতো?”

কিছুক্ষণ চুপ থেকে প্রণয় বলে,

“তবুও তুই কী করে আমার চাঁদের সাথে?”

“তুই ওসব টিপিক্যাল বয়ফ্রেন্ডদের মতো বিহেভিয়ার করছিস না প্রণয়?অথচ তুই চাঁদের বয়ফ্রেন্ডও নস”

“তোকে বানিয়েছে নাকি বয়ফ্রেন্ড?”

“শাট আপ প্রণয়”

“ইউ শাট আপ।তোর চাঁদের সাথে এতো কী?আমি…আমি সেদিনও তোদের একসাথে দেখেছি”

“কবে দেখেছিস?”

“বৃহস্পতিবারে”

কপাল কুচকে অরণ বলে,

“কোথায় দেখেছিস?”

“তোরা যেখানে দেখা করেছিস সেখানেই দেখেছি”

“টিএসসির মোড়ে?”

“তো আর কোথায় দেখবো?”

“আর কিছু দেখিস নি?”

“হ্যা দেখেছি তো।তোর চাঁদের প্রতি যত্ন নেয়া দেখলাম।যত্ন করে ঔষধ খাইয়ে দেয়া দেখলাম।আরও দেখলাম দুজনে খুব মজা করে ফুচকা খেলি”

“আর কিছুই দেখিসনি তুই?”

“কেন?আরও কিছু দেখার বাকি ছিলো নাকি?আরও কিছু করেছিস নাকি তোরা?”

“জাস্ট শাট আপ প্রণয়!মুখে যা আসছে বলে যাচ্ছিস।একবারও ভাবছিস না কাকে বলছিস,কেনো বলছিস,কোন ভিত্তিতে বলছিস?”

“যেই ভিত্তিতে তোদের এতো মেলামেশা”

থমথমেভাবে অরণ বলে,

“কাজে গিয়েছিলাম একটা”

“কাজটা নিশ্চয়ই চাঁদের সাথে প্রেম করা?”

প্রণয়ের পানে অবিশ্বাস্য চাহনী নিক্ষেপ করে অরণ বলে,

“সিরিয়াসলি প্রণয়?তুই আমায় এসব বলছিসও কী করে?”

“তুই করতে পারলে আমি বলতেও পারবোনা?”

“তোর এতোটাই অবিশ্বাসের পাত্র হয়েছি যে তুই আমায় ফলো অব্দি করেছিস?এতো সন্দেহ করছিস আমায়?অথচ তুই জানিস আমি পূর্ণকে….”

“আমি জানি।এজন্যই এখনও বুঝতে পারছিনা তুই কী করে এমনটা করছিস?তুই তো শুরু থেকে চাঁদের বিষয়টা জানতি তবুও তোর কেনো চাঁদের সাথে সম্পর্ক করতে হলো?তোকে আমি বলেছিলাম না চাঁদের জন্মদিনের দিনই তাকে মনে চে!পে রাখা সকল কথা বলবো?তবুও তুই আমার সাথে এমনটা কী করে করলি অরণ?করছিসই বা কেনো?”

কিছুক্ষণ পলকহীন প্রণয়ের পানে তাকিয়ে থাকে অরণ।কোনোকিছু বলেনা।তা দেখে প্রণয় বলে,

“কী হলো বল?”

তবুও অরণ তাকিয়ে আছে তারই দিকে।এবার অরণের আরও সামনে এসে অরণকে ঝাকিয়ে প্রণয় বলে,

“কী হয়েছে?এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?”

দৃষ্টি মাঠপানে দিয়ে খানিকটা হেসে অরণ বলে,

“তাকিয়ে আছি আমার বন্ধুর দিকে।সেই বন্ধুর দিকে যেই বন্ধু ব্যতীত নিজের অস্তিত্ব কখনো কল্পনা করিনি।যেই বন্ধুহীন আমি অসহায়।আর যেই বন্ধুকে ছাড়া অরণের কোনো জুড়ি হয়না”

কথাটা শুনে দৃষ্টি নত করে প্রণয়।সে দৃষ্টি আর তুলতে পারেনা সে।তা দেখে অরণ প্রণয়ের বাহুতে হাত রেখে বলে,

“এমন কাজ কখনো করিস না যার জন্য দৃষ্টি মেলানো দায় হয়ে পড়বে।আর তোর সব প্রশ্নের উত্তর আমি দেবো।অবশ্যই দেবো,সময় হোক।এখন আসি”

বলেই পিছু ঘুরে পা চালায় অরণ।ঠিক তখনই দৃষ্টি উঁচু করে প্রণয় বলে,

“অরণ?”

বন্ধুর ডাকে পা জোড়া থামায় অরণ।অতঃপর পিছু ঘুরে তাকায় তার পানে।দৃষ্টি দিয়েই জিজ্ঞেস করে ‘কী?’ প্রণয় গম্ভীরভাব বজায় রেখে দৃষ্টি নত করে শুধায়,

“কোথায় যাস?চাঁদের কাছে?”

প্রণয়ের কথায় হেসে দেয় অরণ।অতঃপর লম্বা এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে খানিকটা উচ্চস্বরে বলে,

“আবারও বলছি,এমন কিছুই করিস না যার দরুন দৃষ্টিতে দৃষ্টি রেখে কথাও বলা যাবেনা”

বন্ধুর জবাব শুনে চটজলদি তার পানে তাকায় প্রণয়।কিন্তু দেরি হয়ে যায় তার।তার তাকানোর পূর্বেই অরণ দৃষ্টি ঘুরিয়ে বহুখানি পথ চলে গিয়েছে।হতাশার শ্বাস ফেলে প্রণয়।সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে সে।সবটা মিথ্যা মনে হচ্ছে,মনে হচ্ছে হয়তো সে ই ভুল ভাবছে,বেশি ভাবছে।কিন্তু আঁখি দেখা জিনিস কি ভুল হয়?

কলেজে প্রবেশ করেই নিজ কক্ষে না গিয়ে দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাসের দিকে এগোয় চাঁদ।অতঃপর সেথায় এসে খুঁজতে থাকে লিমা নামক সেই মেয়েটাকে।তাকে দেখতে না পেয়ে তারই এক বান্ধবীকে জিজ্ঞেস করে,

“লিমাকে দেখেছো মিতু?আসেনি আজ?”

“এখনও তো দেখিনি আপু।বলতে পারলাম না সরি”

“আচ্ছা।সমস্যা নেই”

কথাটুকু বলে আরেকবার পুরো ক্লাসজুড়ে দৃষ্টি বুলিয়ে বের হয় চাঁদ।বের হতে গেলেই লিমার সাথে তার সামনাসামনি হয়ে যায়।লিমাকে প্রচন্ড অস্থির দেখাচ্ছে।অনেকটা ঘেমেও গিয়েছে।কপাল কুচকে চাঁদ কিছু বলার পূর্বেই চাঁদের হাতে আড়ালে কিছু গুজে দিয়ে ক্লাসে প্রবেশ করে সে।চাঁদ স্পষ্ট সেটা টের পেয়েছে তবে তৎক্ষনাৎ কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে সে হাত মুঠো করেই নিজ ক্লাসে এসে বসে।বসতেই পাশে এসে দাঁড়ায় ইফাদ।ইফাদকে দেখেও কিছু বলেনা চাঁদ।এক হাতে পানির বোতল নিয়ে খোলার চেষ্টা করেও পারেনা।অতঃপর বোতলটা পাশে রেখে দিয়েই কিছু একটা মনোযোগ সহকারে চিন্তা করতে লাগে।ধ্যান ভাঙে তার ইফাদের কথায়,

“কী হলো নাও”

“হা?কী নেবো?”

“পানি”

বলেই চোখের ইশারায় পানির বোতলটা দেখায় ইফাদ।তা দেখে বোতল নিতে নিতে চাঁদ বলে,

“ওহ হ্যা”

অতঃপর অনেকখানি পানি খেয়ে লম্বা এক শ্বাস নেয় চাঁদ।ইফাদ হঠাৎ প্রশ্ন করে,

“কী হয়েছে চাঁদ?কোনো সমস্যা?”

“না তো”

“ইদানীং বেশি চিন্তিত লাগছে।সারাক্ষণ কী যেনো ভাবো”

ম্লান হেসে চাঁদ বলে,

“ভাবি নিজের ভবিষ্যৎ।কী করবো জীবনে”

“কী করবে মানে?আমাদেরতো উজ্জ্বল এক ভবিষ্যৎ আছে।বিশেষ করে তোমার”

খানিকটা হেসে চাঁদ বলে,

“কোথায় আর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।সবাই কি সবটা পায়?”

“কেনো পাবেনা?”

প্রসঙ্গ এড়াতে চাঁদ জিজ্ঞেস করে,

“ফায়ান কোথায় ইফাদ?আর বাকিরা?”

“ফায়ান কোথায় জানি গেলো।অবনী আর ইপ্সি রাস্তায় আছে বোধহয়”

“ফায়ানকে একটু ডেকে দেবে প্লিজ?কাজ ছিলো”

“হ্যা ডাকছি।বসো তুমি”

“ঠিক আছে”

ইফাদ যেতেই মুঠ করে রাখা হাত প্রসারিত করে চাঁদ।হাত খুলতেই দেখতে পায় একটা কুচকানো কাগজ।তা দেখে ভ্রুযুগোল কুঞ্চিত করে কাগজ খুলে তাতে লেখা শব্দগুলো মনে মনে পড়ে সে,

“এগারোটার দিকে আমাদের ক্লাসের পাশের ওয়াশরুমে এসো।সেখান ছাড়া কথা বলা সম্ভব না।আর আমায় কলও দিয়োনা ভুল করেও।আমার থেকে যত দূরে থাকবে তত ভালো।আমি তোমার সাথে ওয়াশরুমের ওখানেই দেখা করবো যা বলার সেখানে বলোও।আর এই কাগজটা কাউকে দেবেনা।কারো চোখে পড়তেও দেবেনা।ব্যাগে রেখে দাও।পারলে বাসায় গিয়ে ছিড়ে ফেলোও অথবা পানিতে ধুয়ে ফেলোও”

লিমার দেওয়া চিরকুট পড়ে বেশ চিন্তায় পড়ে যায় চাঁদ।কতটা ভয়ে থাকলে মেয়েটা এভাবে বলতে পারে ভাবতেই চাঁদের বেশ খারাপ লাগা শুরু হয়।লিমার কথা মোতাবেক নিজের ব্যাগে কাগজটা রাখতে গিয়েও রাখেনা চাঁদ।কী যেনো ভেবে হিজাবের নিচ দিয়ে জামার ভেতরে কাগজটা লুকিয়ে রাখে সে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
এগারোটা বেজে তিন মিনিট,
হাতঘড়ি দেখে বই বন্ধ করে দ্রুত গতিতে ক্লাস থেকে বের হয় চাঁদ।বের হওয়ার সময় তাদের এক প্রফেসর ক্লাসে আসতে গেলেই চাঁদ বলে,

“ম্যা’ম ওয়াশরুমে যাচ্ছিলাম”

প্রফেসর হাসিমুখে বলেন,

“হ্যা যাও।সমস্যা নেই”

চাঁদও প্রতিত্তোরে সুন্দর এক হাসি উপহার দিয়ে লিমার ক্লাসের দিকে পা বাড়ায়।অতঃপর ওয়াশরুমের কাছে এসে নিজেকে স্বাভাবিক করে ওয়াশরুমের দিকটার ভেতরে যায় সে।সেখানে যেতেই লিমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছু বলতে নিলেই লিমা আশেপাশে তাকিয়ে তাকেসহ একটা ওয়াশরুমের ভেতরে ঢুকে যায়।চাঁদ বেশ অবাকই হয় তাতে।কিছু বলতে নিলে লিমা বেসিনের কল ছেড়ে দিয়ে লম্বা শ্বাস নিয়ে বলে,

“এবার বলো আপু”

“এতোটা ভয় পাচ্ছো কেনো?”

“কারণ ভালো মুখোশের আড়ালে লুক্কায়িত খা!রাপ মানুষটার নজর কখন কোথায় পড়ে যায় বলাতো যায়না আপু”

“মানে?”

“মানে হলো শ*ত্রু আশেপাশেই।খুব নিকটে অথচ আমরা জানিনা”

“তুমি বলতে চাচ্ছো এখানকার কেউই?”

“এখানে বলার কিছু নেই।অনিন্দ্য স্যার,মাহতিম স্যার আর কাশেম মামার ব্যাপারে তুমি জানোই।বাকি আর কে কে আছে সেতো জানোনা,হয়তো আমিও নাম জানিনা বা চিনিনা এমন কেউ আশেপাশে থেকে গেলো।যাদের নজরে আমিসহ তুমিও পড়ে গেলে।সেটা চাচ্ছিলাম না”

“বুঝতে পেরেছি”

“কল কেনো দিয়েছিলে আপু?আমায় প্লিজ আর কল দেবেনা।সেই সিমটাও তাদের দেয়া।ভয়েস রেকর্ডিং সিস্টেম চালু করা।সেজন্যই দ্রুত কেটে দিয়েছিলাম”

“কী!আমি বেশ চিন্তায় ছিলাম লিমা”

“হ্যা আপু।প্লিজ আর কল দিওনা।আমার সাথে দেখাও করতে চেয়োনা প্লিজ।শুধু আমার না,যাদেরই ধরে নিয়েছিলো কারো সাথে দেখা করোও না আপু।এতে তোমার বিপ*দ বৈ আর কিছুই আসবেনা”

“ঠিক আছে সাবধানে থাকবো।আমি আসলে তোমায় কিছু বলার জন্যই কল দিয়েছিলাম”

“হ্যা বুঝতে পেরেছি,বলো”

“তোমার সাথে আমায় সেই বাড়িটায় নিয়ে যাবে প্লিজ?”

বিস্ময় নিয়ে লিমা বলে,

“কী!”

লিমার মুখ চে!পে ধরে চাঁদ বলে,

“আস্তে!”

চাঁদের হাত সরিয়ে লিমা বলে,

“কিন্তু সেখানে যেতে চাচ্ছো কেনো?সে জায়গা ভালো না আপু।আমি তোমায় রি!স্ক নিতে দেবোনা।সে জায়গায় ভালো মানুষেরা যায় না”

“তুমিতো রোজ যাচ্ছো”

“আমিও তো ভালো না আপু”

“যার মন পবিত্র সে অবশ্যই ভালো ব্যক্তিত্বেরই অধিকারী লিমা”

“ব্যক্তিত্ব দিয়ে আর কী হবে?যেখানে…”

“আমায় প্লিজ নিয়ে চলো লিমা।যাওয়াটা জরুরী”

“না আপু।আমি নিতে পারবোনা।আমি চাইনা তোমার কোনো ক্ষ*তি হোক।জায়গা টা ভ!য়াবহ।তোমার জন্য আরও বেশি।তোমার জীবন আর সম্ভ্রমের ক্ষ*তি আমি জেনেশুনে করতে পারিনা।তুমি প্রণয় ভাইয়ার আমানত।ঐ একটা মানুষই কেবল তোমায় ডিজার্ভ করে।তার ভালোবাসায় তুমি ভালো থাকো আপু।এসব উটকো ঝামেলায় জড়িয়ে নিজের জীবন কেনো ন*ষ্ট করার পেছনে লাগছো আপু?সেইসাথে অরণ ভাইয়াও ঝামেলায় পড়বেন।তোমরা দুজনই এসব থেকে দূরে থাকো প্লিজ।এসব কিছুতে জড়ালে জীবনের ঝুঁ*কিতো আছে সাথে করে ক্যারিয়ারও আপু।বোঝার চেষ্টা করো”

“না লিমা।আমার যাওয়াটা জরুরী।আমার যেতেই হবে।আমি জানতে চাই সেখানে কী আছে,কী করা হয়”

“সেখানে কী হয় আমি বলবো তোমায়।তবুও যেতে চেয়ো না প্লিজ আপু”

“না লিমা।আমি যাবোই।এবং তোমাকে নিতেই হবে”

“ওরা তোমায় দেখলে সমস্যা হবে আপু।বোঝার চেষ্টা করো।তোমায় ওরা ছেড়ে দেবেনা”

“চিনবেনা তো।আমি সেসব পরিকল্পনা করেই এসেছি”

“মানে?”

“শুধু এতটুকু বোঝো যে আমায় নিয়ে চিন্তার কারণ নেই।আমি সাবধানে যাবো এবং সাবধানেই আসবো।কেউ বুঝতে পারবেনা।তুমি শুধু ক্লাস শেষে আমায় তোমার সাথে নিয়ে যাবে।বলবে নতুন মেয়ে এনেছো।ঠিক আছে?”

“তুমি বোঝার চেষ্টা করো আপু।তোমার লাইফ রি*স্কে পড়ে যাবে”

“জীবনে বহু রি*স্ক নিয়েছি।এবার নাহয় নিজের জীবনটাই রি!স্কে নিলাম”

To be continued…..