#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
৬৫.
মাস দুয়েক পরের কথা,
মেডিকেল থেকে ফেরার পথে মাঝরাস্তায় আহিনের সাথে দেখা চাঁদের।চাঁদকে দেখামাত্র আহিনের পা জোড়া থমকে গিয়েছে।সে কেবলই তাকিয়ে আছে চাঁদপানে।চাঁদও আহিনকে পর্যবেক্ষণ করছে।আহিনের মাঝে চাঁদ আহানকে খুঁজে পেলো যেনো।খুব করে তার আহানকে মনে পড়ে গেলো।মনে পড়লো সেদিনের তার সাথে অতিবাহিত করা শেষ মুহুর্তগুলো।ছেলেটা তার আপন না হয়েও নিজের বাবার বিরুদ্ধে গিয়ে তাকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করলো।কিন্তু ছেলেটার?পরবর্তীতে তার কী হলো?অধিরাজ শেখ কি তার ছেলেকেও মে!রে গুম করে দিয়েছিলেন?নাকি আহানকে কোথাও লুকিয়ে রেখেছেন?জানা নেই চাঁদের।তবে সে খুব করে জানতে চায় ছেলেটা কোথায় আছে,কেমন আছে?কিন্তু কীভাবে জানবে?পরক্ষণেই মনে পড়ে সেদিনের বলা তনিমার কথাগুলো।আচ্ছা সেই এসাইলামে গেলে কি সে আহানকে পাবে?ছেলেটা কি তার ভারসাম্য সত্যিই হারিয়ে ফেলেছে?নাকি তার সাথেও চলছে কোনো ষড়যন্ত্র?এত নির্ম!ম কেনো তার বাবা নামক পা!ষাণ লোকটা?কিন্তু আহানতো এ দেশী নয়,কেনোই বা তাকে অধিরাজ শেখ বাংলাদেশের কোনো এসাইলামে রাখবেন?চাঁদের ভাবনার মাঝেই হঠাৎ কেশে গলা পরিষ্কার করে আহিন বলে,
“যদি আমি ভুল না হই তুমি চাঁদ না?”
আহিনের কন্ঠস্বরে সামান্য কেপে উঠে চাঁদ বলে,
“জ্বি?”
“চাঁদ তাইতো?”
“হিম।কেমন আছেন আপনি?”
“আছি আলহামদুলিল্লাহ।তুমি কেমন আছো?”
“আলহামদুলিল্লাহ।তা তারপর কি কাউন্সিলর হয়েছিলেন?”
সামান্য হেসে আহিন বলে,
“হ্যা হয়েছিলাম”
“এখনও?”
“না।এখন মেয়র পদে আছি”
চাঁদও কিঞ্চিৎ হেসে বলে,
“বাহ।বাবার পদটা পেয়েই গেলেন তবে”
মাথা চুলকে আহিন বলে,
“ঐ আরকি।তুমি বলো এতবছর ছিলে কোথায়?আর কোন বিভাগে গিয়েছো?”
“ছিলাম কোনো এক জায়গায়।এখনও হইনি তবে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন চলছে”
“কোনটার উপর?”
“নিউরোলজি”
“তা ব্রেইন স্পেশালিস্ট হবে?”
“যদি আল্লাহ চান”
“ইনশাআল্লাহ।কিন্তু তুমি তো প্রণয়ের মতোই হার্ট স্পেশালিস্ট হতে চেয়েছিলে”
“অনেক চাওয়া পাওয়াই আমাদের পূর্ণ হয়না।ইচ্ছা ছিলো কার্ডিয়াক সার্জন হওয়ার তবে নিয়তি বোধহয় নিউরো সার্জন হিসেবেই চাচ্ছে”
“তবে এতদিনেতো পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে ডাক্তার হয়ে যাওয়ার কথা?”
“থার্ড প্রফে ফেইল গিয়েছিলো তাই থার্ড ইয়ারে আরও একবছর পড়া লেগেছে।মোটমাট দুইবছর গ্যাপ পড়েছে।সেই দরুনই এখনও পড়ছি”
বিস্ময়ে কপাল কুঞ্চিত করে আহিন বলে,
“কী!তুমি?সিরিয়াসলি চাঁদ?তোমার ফেইল এসেছে?আর ইউ কিডিং?”
গম্ভীরভাবে চাঁদ বলে,
“নো আয় আম নট।একচুয়ালি সে বছর আমি থার্ড প্রফ দিতেই পারিনি সেজন্যই ফেইল ধরেছে।সবার সুপারিশের জন্য আরেক বছর পড়ে এক্সাম দিতে পেরেছিলাম”
“কিন্তু প্রথমবারের এক্সাম দাওনি কেনো?”
“ছিলো কিছু কারণ”
“বলা যাবে?”
“না”
“আচ্ছা।তবে এতদিন ছিলে কোথায়?আর এখানে আবার?”
“ছিলাম বহুদূর।এখন আবারও এই মেডিকেল থেকেই পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করছি।আপনার কাছে একটা রিকুয়েষ্ট করবো।যদি রাখতেন!”
“হ্যা অবশ্যই।বলো”
“আমি যে ঢাকা ফিরে এসেছি আর এই কলেজেই এসেছি দয়া করে আপনার বাবা অথবা কাউকেও বলবেন না।আমাদের যে দেখাও হয়েছে একথাও কাউকে জানাবেন না প্লিজ”
কপাল কুচকে আহিন বলে,
“কিন্তু কেনো?”
“এর উত্তর নেই।তবে প্লিজ এই তথ্যগুলো গোপন রাখলে আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো”
“কৃতজ্ঞ তো তখনও ছিলে”
“আমি সর্বদাই আপনার কৃতজ্ঞ।কোনো একসময় আপনার ঋন অবশ্যই শোধ করার চেষ্টা করবো”
“সব ঋণ তুলে রাখলাম তবে।সময় আসলে আমিই শোধ করতে বলবো তোমায়”
মৃদু হেসে চাঁদ বলে,
“আসি তবে।ভালো থাকবেন”
দৃষ্টি অন্যপানে দিয়ে মনে মনে আহিন বলে,
“এভাবে হেসোনা নীলাম্বরী,আজও তোমায় ভুলা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি”
অতঃপর মুখে বলে,
“তুমিও ভালো থেকো”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
সন্ধ্যা সাতটা,
ফায়ানের বাসায় অরণের পাশে বসে আছে চাঁদ।অরণের মেডিকেল রিপোর্টগুলো চেক করছে সে।রিপোর্টের পাতাগুলো উল্টে পাল্টে দেখতে দেখতে ফায়ানকে সে বলে,
“দেখেছো ফায়ান?আমি বলেছিলাম না?হাসপাতালেই কোনো ঘাপলা ছিলো”
“আমিও তাই দেখছি”
“প্রণয়কে বলেছো?”
“হ্যা।প্রণয় ভাইয়াও বেশ অবাক হয়েছেন এসবে”
“হওয়ারই কথা”
“কিন্তু মিরা আপু অরণ ভাইয়াকে খুঁজে না পেয়ে অধৈর্য হয়ে পড়েছে”
“হলেও কিছু করার নেই।কিছু পেতে কিছুতো ত্যাগ করতেই হবে”
“তুমি কি নিশ্চিত অরণ ভাইয়া এ বছরেই ঠিক হবে?”
দৃঢ়তার সহিত চাঁদ বলে,
“আল্লাহর ইচ্ছা আর আমাদের প্রচেষ্টায় অরণকে আমি সুস্থ করে তুলবোই।কেবল অরণের জন্যই আমার নিউরো সার্জন হওয়ার সিদ্ধান্ত।তাকে ভালো না করতে পারলে ডাক্তার প্রফেশনই আমি ত্যাগ করে দেবো”
“এভাবে বলোও না।ভাইয়া ইনশাআল্লাহ ঠিক হয়ে যাবেন”
“ইনশাআল্লাহ”
“হার্ট সার্জন আর হওয়া হলোনা না?”
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চাঁদ বলে,
“হয়তো আল্লাহ আমার ক্যারিয়ার নিউরোতেই রেখেছেন”
“হয়তো।তা ইন্টার্নি কেমন হচ্ছে?কোনো সার্জারী কি এখনও করলে?”
“এখনও না তবে মাস খানেকের মাঝেই খুব সম্ভবত আছে একটা।করবোনা,শুধু দেখবো আরকি”
“প্রথম?”
“হ্যা”
“আমার দরকার পড়লে অবশ্যই বলবে”
“এমনও হতে পারে তুমিই সেই সার্জারীর মেইন সার্জন?”
সামান্য হেসে ফায়ান বলে,
“এতটাও পরিপক্ক নই”
“যথেষ্ট পরিপক্কই তুমি।সেই হাসপাতালে না থাকলে এতদিনে অরণকে তুমি ঠিকও করে ফেলতে”
“হয়তো আল্লাহ চান অরণ ভাইয়া তোমার দ্বারাই সুস্থ হয়ে উঠুক”
“কি জানি!তবে আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।আমি চাচ্ছিলাম অরণের মাথাটা আরেকবার এক্স-রে করাতে।যদি কিছু ধরা পড়েই?”
“বহুবারই করিয়েছি,নরমালই দেখলাম”
“আরেকবার করাতে ক্ষতি কী?”
“তেমনটা না তবে কিছুইতো ধরা পড়েনা”
“তাহলে অরণ ঠিক হচ্ছেনা কেনো?”
“বুঝতে পারছিনা কিছুই”
“এবার সবটা পর্যবেক্ষণ করবো আমি।তুমি এ ব্যাপারে প্রণয়কেও বলবেনা”
“এভাবে আর কতদিন?কতদিন প্রণয় ভাইয়ার থেকে লুকিয়ে অরণ ভাইয়ার চিকিৎসা করবে?”
“যতদিন না অরণ ঠিক হয়ে যাচ্ছে ততদিনই!”
“যদি ভাইয়া জেনে যায়?”
“তুমি না জানালে কখনোই জানবেনা”
“জানাচ্ছোনা কেনো?”
সামান্য হেসে চাঁদ বলে,
“যার খু*নি হিসেবে সকলে গণ্য করছে তারই চিকিৎসা করতে দেবে সে আমায়?”
এ কথার প্রেক্ষিতে আর কিছু বলতে পারেনা ফায়ান।তাই চাঁদই বলে,
“এ কয়দিনের মাঝেই এক্স-রে টা করিয়ে ফেলবো ফায়ান।সপ্তাহখানেকের মধ্যেই সম্ভবত উশ্মির বিয়ের আয়োজন শুরু হয়ে যাবে”
“ঠিক আছে।তুমি বরং এখন এসো প্রণয় ভাইয়ার আসার সময় প্রায় হয়েই গেছে”
“হ্যা যাচ্ছি।সাবধানে থেকো তুমি”
“তুমিও সাবধানে যেও”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
হলরুমে বসে আছে প্রণয়সহ তার সকল বন্ধুবান্ধবেরা।সকলেই প্রণয়ের সাথে চেচামেচি করছে।তবে প্রণয় বসে আছে ভাবলেশহীনভাবে।তার এরূপ বেপরোয়া ভাব দেখে মিরা বেশ ক্ষুব্ধ হয়ে বলে,
“এবার কিন্তু ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে প্রণয়।একেতো ঐ মেয়েকে বিয়ে করেছিস,কিছুই বলিনি।তার উপর অরণকে কোথায় গায়েব করেছিস?মানে চাচ্ছিস টা কী তুই?”
“যা চাচ্ছি সময় হলেই জানতে পারবি”
এবারে শোনা যায় পূর্ণতার কন্ঠস্বর,
“আর তোর সেই সময়টা আদোতে আসবে কখনো?”
“সময় হলেই সবটা সামনে আসবে পূর্ণ”
মিরা কপাল কুচকে বলে,
“সময় হলে এটা আসবে,সময় হলে ওটা হবে এসবই তো শুনে যাচ্ছি কেবল।দেখ প্রণয় অরণকে রেখেছিস কোথায় বলবি তুই?আমাদেরতো অন্তত বলতেই পারিস তুই!”
“না পারিনা”
এবার পূর্ণতা বেশ গম্ভীরভাবে বলে,
“তুই কি আমাদের সন্দেহ করছিস প্রণয়?”
প্রণয়ের প্রশ্ন,
“কেমন সন্দেহ?”
তখনই মির বিরক্তিকর ভঙ্গিমায় বলে,
“যেহেতু প্রণয় চাচ্ছেনা এ ব্যাপারে কাউকে জানাতে।তোরা এমন অস্থির হচ্ছিস কেন বুঝতে পারছিনা আমি।কোনো কিছু ভেবেই হয়তো এমনটা ও করেছে।সবটাকে সিম্পলি নিলেইতো পারিস”
পূর্ণতা বলে,
“কীভাবে সিম্পলি নেবো বলবি তুই?মিরার অবস্থা দেখেছিস তুই?তোরা কি জানিস না মিরা অরণকে….”
পূর্ণতাকে থামিয়ে দিয়ে গম্ভীরভাবে মির বলে,
“সে ব্যাপারে বহু আগে থেকেই অবগত আমি।তোর থেকে জানতে চাইনি”
মির থামতেই রিহা বলে,
“আর অরণের ফ্যামিলির থেকে বেশি ডিপ্রেসড কিন্তু তোরা বা আমরা নই পূর্ণ,মিরু”
মিরা ভড়কে গিয়ে বলে,
“তো তোরা প্রণয়কে এবারও ওর কাজে সায় দিচ্ছিস?”
রবিন থমথমেভাবে বলে,
“এখানে সায় দেয়ার মতো কিছুই দেখছিনা মিরা”
পূর্ণতা রবিনকে বলে,
“তুইতো কথাই বলিস না প্লিজ।ঐ চাঁদের বোনের সাথে প্রেম করে তোর মাথাটা জাস্ট বি!গড়ে গিয়েছে।ওর সাথে প্ল্যানিং করে ওদের বিয়ে পর্যন্ত দিয়ে দিয়েছিস।আমি যদি আগে জানতাম অমৃতা চাঁদের বোন তো কখনোই সেদিন তোদের হেল্প করতাম না”
শান্ত কন্ঠে মির বলে,
“তবে কেমন বন্ধু হলি তুই?যে বন্ধুর বিপদে বন্ধুকে সাহায্যই করবিনা”
“তুই ভুলে যাচ্ছিস অমৃতা চাঁদের বোন”
“আর তুইও ভুলে যাচ্ছিস তুই একজন মেয়ে”
রিহা বিরক্তি নিয়ে বলে,
“তোরা নিজেদের মাঝে অহেতুক ঝগড়া করে মজা টা কী পাস বুঝিনা একদমই!”
মির সোফা থেকে উঠতে উঠতে বলে,
“তোরা থাক আমি উঠলাম”
এতক্ষণ চুপ করে থাকলেও এবার প্রণয় বলে,
“কোথায় যাচ্ছিস?”
“সে প্রশ্নের উত্তর আপনাকে দিতে আমি বাধ্য নই”
মিরের উত্তর শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রণয় বলে,
“ঐ এক কাহিনী এখনও ধরে বসে আছিস তুই?”
প্রণয়কে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে সদর দরজা দিয়ে বেরিয়ে যেতে নিলেই মিরের সামনে পড়ে যায় চাঁদ।চাঁদও কেবল ভেতরে প্রবেশ করতেই নিয়েছিলো কিন্তু মিরকে দেখে সেও থেমেছে।অতঃপর মিরের দিকে চেয়ে বলে,
“কখন এসেছো?চলে যাচ্ছো যে?”
“পেট ভরে গেছে তাই চলে যাচ্ছি”
মিরের কথার অর্থ চাঁদ বুঝতে না পেরে বলে,
“মানে?”
“এখন কেমন আছো তুমি?ব্যথা সেড়েছে?”
“হ্যা আলহামদুলিল্লাহ সুস্থই এখন”
“মনেতো হচ্ছেনা আর বেশি সুস্থ থাকবে বলে”
“মানে?”
চাঁদের কুচকানো ভ্রু নজরে আসতেই পেছন ঘুরে প্রণয়কে একবার অবলোকন করে মির বলে,
“যেই এক স্বামী পেয়েছো কীভাবে যে তার সাথে থাকো ভেবেই পাই না আমি”
তখনই প্রণয় মিরের পাশে দাঁড়িয়ে গম্ভীরভাবে বলে,
“সে তোর না জানলেও চলবে।আমাদের পার্সোনাল বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে তোকে কেউ বলেনি।আর আপনি?কোথায় ছিলেন এতক্ষণ?হাসপাতাল থেকেতো বহু আগেই বেরিয়েছেন”
শেষের কথাগুলো চাঁদকে উদ্দেশ্য করেই বলে প্রণয়।প্রণয়ের কথা শুনে কপাল সামান্য কুচকে আসে চাঁদের।ভার কন্ঠে সে বলে,
“আপনাকে কৈফিয়ত দিতে আমি বাধ্য নই।ভাইয়া একটু আমার সাথে এসো তো কথা ছিলো কিছু”
বলেই মিরের হাত ধরে এগোতে গেলে হঠাৎ করেই প্রণয় বলে,
“স্বামীর সামনেই পরপুরুষের হাত ধরে হেটে বেড়াচ্ছেন না জানি পেছনে কী কী করেন”
ঘৃ!ণায় গা রি রি করে উঠে চাঁদের।সেইসাথে মিরেরও।তৎক্ষণাৎ চাঁদ মিরের হাত ছেড়ে দিয়ে প্রণয়কে উদ্দেশ্য করে বলে,
“আপনাকে স্বামী মানে কে?”
ঠোট অল্প বিস্তর প্রসারিত করে দুই ভ্রু উচিয়ে প্রণয় বলে,
“তাইতো!তা মানবেন কেনো?আপনারতো যেখানে সেখানে….”
প্রণয়ের কথাকে সম্পূর্ণ করতে না দিয়েই তার দিকে ঘুরে চোখ বরাবর তর্জনী নিয়ে চাঁদ বলে,
“মুখ সামলে কথা বলবেন মি.রুহায়ের প্রণয়!জিভ টেনে ছি!ড়ে দেবো”
বলেই ঘনঘন শ্বাস ফেলে মিরের হাত ধরে সিড়ি বেয়ে উপড়ে উঠতে লাগে চাঁদ।সেদিকে তাকিয়ে এক গালে কেবলই হাসতে থাকে প্রণয়।অতঃপর উশ্মিকে ডেকে তার বন্ধুদের নাস্তাপানি দেয়ার কথা বলতেই রিহা সোফা থেকে উঠে মুখ গোমড়া করে গম্ভীরভাবে বলে,
“যে নিজের স্ত্রীকে সম্মান দিতে জানেনা।তার বাড়িতে এক বিন্দু পানি খেতেও ইচ্ছুক নই আমি”
অতঃপর কাউকে কিছু বলতে না দিয়েই বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে।তার পিছু চলে আসে রবিনও।রবিনকে যেতে দেখে মিরাও আর বসে থাকেনা।সেও বেরিয়ে আসে।অগ্যতা পূর্ণতাকেও চলে আসতে হয়।সকলে বেরিয়ে পড়তেই হতাশার নিশ্বাস ত্যাগ করে প্রণয় বলে,
“হৃদয় পো*ড়া গন্ধ কেউ কি পায়?পায়না।আমার হৃদমানবী যে আমারই হৃদয় জ্বা!লিয়ে দেয় সে খবর কি কেউ রাখে?রাখেনাতো!”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
বাইরের হিজাব না খুলেই মিরকে বিছানায় বসতে দিয়ে চাঁদ বলে,
“তুমি বসো আমি শরবত করে আনি”
“না লাগবেনা।কী জন্য ডেকেছো তা দ্রুত বলো।নাহয় তোমার স্বামী আবার আমায় দিয়েও সন্দেহ শুরু করবে”
গম্ভীরভাবে চাঁদ বলে,
“তার কোনোকিছুকেই এখন আর পরোয়া করিনা আমি”
বলেই মিরের পাশে বেশ অনেকখানি জায়গা রেখে বসতে বসতে চাঁদ বলে,
“তো যেজন্য তোমায় ডাকলাম।আসলে একটা জিনিস জানার ছিলো”
“কী?”
“তুমি কি আদোতে কাউকে ভালোবাসো ভাইয়া?সত্যিই কি কাউকে কখনো মন দিয়েছিলে?”
হঠাৎ করা চাঁদের প্রশ্নে তার দিকে বিস্ময় নিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে মির।অতঃপর লম্বা শ্বাস ফেলে দৃষ্টি নত করে বলে,
“না”
গম্ভীরভাবে চাঁদ বলে,
“দৃষ্টি নত কেনো তোমার?আমার দিকে চেয়ে তারপর উত্তর দাও”
চাঁদের কথা শুনে তার দিকে তাকিয়ে মির বলে,
“হঠাৎ এসব বলছো কেনো?”
“হঠাৎ করেই জানতে ইচ্ছা হলো কেনো তুমি এত মেয়ের সাথে সম্পর্কে আছো।কাউকে ভালো টালো বেসে ছ্যাকা খেয়ে কি দেবদাস রূপ ধারণ করেছো?”
থমথমেভাবে মির বলে,
“দেবদাসের মতো এতটা বিবেকহীন হইনি যে পরনারী ছুয়ে দেখার চেষ্টাও করবো।তুমি জানো সম্পর্ক থাকলেও তা কেবলই অনলাইন ভিত্তিক।আর দেখা সাক্ষাৎ হলেও আজ অব্দি কাউকে ছুয়ে দেখিনি আমি”
“কার জন্য?বিশেষ কেউ কি আছে জীবনে?যাকে ভালোবেসে প্লেবয় হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছো?”
প্রসঙ্গ এড়াতে মির বলে,
“কখনোতো আমার পার্সোনাল লাইফ নিয়ে তোমায় কোনোরূপ মন্তব্য করতে দেখিনি চাঁদ।তবে আজ কী হলো?”
“এড়িয়ে যাচ্ছো ভাইয়া?”
“গুরুত্বপূর্ণ কোনোকিছু বলার হলে বলো।নাহয় আসছি আমি”
বলেই বিছানা থেকে উঠে চলে যেতে নিলেই চাঁদ বলে,
“রিদিকে ভালোবাসো তুমি?”
চাঁদের আকস্মিক করা প্রশ্নে থমকে যায় মিরের পা জোড়া।হৃদস্পন্দন তীব্র হয় তার।হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে ঘনঘন শ্বাস নেয় সে।অতঃপর সেভাবে স্থির থেকেই বলে,
“না”
কথাখানা বলে আর এক মুহুর্ত সেখানে দাড়ানোর প্রয়োজনবোধ করেনা মির।দ্রুতগতিতে প্রস্থান করে সে জায়গা।
To be continued…..