#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান
৬৬.
“অথচ হৃদয় ভাঙার কোনো শব্দ হয়না কেনো?”
মনে মনে বাক্যখানা আওড়িয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন কক্ষে বিছানার উপর বসে ধ্যানমগ্ন হয়ে প্রণয়ের পানে নির্নিমেষ চেয়ে আছে চাঁদ।এমনই কত রাত যে সে এভাবেই তার পানে তাকিয়ে কতশত দীর্ঘশ্বাস ফেলেছে কেবল সে আর তার বিধাতাই জানেন।অথচ এই মানুষটাই তাকে দিনের পর দিন শতশত অপমানে রিক্ত করে রাখে।চাঁদও যে সেসব অপমানগুলো মেনে নেয় তা কিন্তু নয়,তবে মনের গহীনে কোথাও না কোথাও আজও এই মানুষটা বিরাজমান।এই একজনকে ভালোবেসে সে হারিয়েছে তার সর্বস্ব।খুইয়েছে জীবনে বহুকিছু।তবুও তার ততটা ব্যথা হয়নি,যতটা ব্যথা সে প্রণয়ের থেকে ক্ষণে ক্ষণেই পায়।আচ্ছা,ভালোবাসা এমন কেনো?এতশত দুঃখ পাওয়ার পরেও হৃদয় কেনোই বা শুধু তার হয়েই বাঁচতে চায়?এই মানুষটা কি কখনো তাকে বুঝবে?কখনো কি তাকে নিয়ে সকল ভুল ভাবনাগুলো তার ধুয়েমুছে যাবে?সত্যিটা কি আদোতে সামনে আসবে কভু?যে ভয়ংকর সত্যি বছরের পর বছর চাঁদ লুকিয়ে রেখেছে তার হৃদ কোঠরে?না।তা যে কখনোই প্রকাশ্যে আসবার নয়।আসতে পারেনা।অন্তত সে কখনোই আসতে দেবেনা।লুকানো সত্যির আড়ালে যদি আরও কয়টা বছর বাঁচা যায় তবে সে সেভাবেই বাঁচতে চায়।বাঁচুক নাহয় আরও কয়েকটা বছর।তবে সব সামনে এলে আর কি বাঁচা সম্ভব হবে?যে ছেলে নিজের জীবনের মোহ-মায়া ত্যাগ করে বছরের পর বছর নিথর হয়ে পড়ে আছে কেবলই তাকে বাঁচানোর তাগিদে তার আত্মত্যাগ কি এতটাই ঠুনকো?আর সেই ছেলেটা?অ্যালেন নামক সেই ছেলেটাও তো তাকে বাঁচিয়েছিলো।সে যদি সেদিন তাকে সে বাড়ি হতে বের না করে আনতো সেদিন এবং সেথায়ই বোধহয় চাঁদের শেষদিন হতো।আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে সে ছেলেটার কাছে।আর আহিন নামক সেই মানুষটা? সেও তো তাকে ভালোবেসেছিলো।এমনকি তার বাবার অগোচরে তার বিরুদ্ধে বহু অজানা তথ্যও সে ই দিয়েছিলো।জীবনটা এমন কেনো?এত এত ভালোবাসা চোখের সামনে থাকা সত্যেও আমরা কেবল এমন ভালোবাসার পেছনেই ছুটে বেড়াই অথবা আটকে যাই যাকে পাওয়া অথবা ধরাছোঁয়া আমাদের নাগালের বাইরে।সেই এক মানুষের প্রতি হাজার-হাজার অনুভূতিরা কেনোই বা ডানা ঝাপটে উড়ে বেড়ায়?তাকে ঘিরেই কেনো হাজারো কল্পনা-জল্পনা যাকে কভু পাওয়া হবেনা আমাদের?অথচ চাঁদ পেয়েও আর চায়না তাকে।আগে চাইতোনা বিশেষ কারণে আর বর্তমানে ঘৃ!ণায়।লোকটাকে সে ঘৃ!ণা করতে চায়।খুব করে তার প্রতি বিতৃষ্ণা সৃষ্টি করতে চায়।এমন মানুষকে সে মোটেও ভালোবাসতে চায়না যে তাকে পদে পদে অবিশ্বাস করেছে,দিয়েছে কেবলই লাঞ্চণা-বঞ্চণা।হঠাৎ করেই চাঁদের মস্তিষ্কে প্রশ্নেরা উঁকি দেয় আসলেই কি কখনো প্রণয় তাকে ভালোবেসেছিলো?ভালোবাসলে কি এতটা অবিশ্বাস ভালোবাসার মানুষটাকে করা যায়?এত এত তিক্ত বাক্য নির্দ্বিধায় ভালোবাসার মানুষটাকে শুনিয়ে দেয়া যায় কি?একটুও কি বুক কাপেনা?হৃদয় কি ভগ্ন হয়না তার?শিরদাঁড়া দিয়ে কি শীতল স্রোত বয়ে যায়না?একটুও কি হৃদস্পন্দন তীব্র হয়ে চিত্ত তাকে বাঁধা দেয়না এসব থেকে?মস্তিষ্ক কি বলেনা এমনটা করিস না!সে না তোর প্রিয় রমণী?এককালে না তাকে সবটা উজাড় করে ভালোবেসেছিলি তুই?আজ কেনো তারই প্রতি তোর এতটা ক্ষোভ,এত আক্রোশ?এই ছিলো তোর ভালোবাসা?ভাবনার মাঝেই আঁখি জোড়া টইটম্বুর হয় তার জলে।এই বুঝি পলক ঝাপটালে শুষ্ক কপোল বেয়ে গড়িয়ে পড়বে নোনাজলের বারিধারা।বাধ মানতে চাচ্ছেনা যেনো তারা।অতঃপর ঠোট কামড়ে চোখের পাতা বন্ধ করে চাঁদ।সাথে সাথে গাল বেয়ে তার গড়িয়ে পড়ে উষ্ণ জলবিন্দুরা।ডান হাত দ্বারা চোখের চশমা খুলে বিছানার পাশে রাখা টি-টেবিলে নিঃশব্দে সন্তপর্ণে তা রেখে দিয়ে বালিশে ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিতে দিতে সিলিং ফ্যানের দিকে এক ধ্যানে চেয়ে থেকে মনে মনে সে বলে,
“সেদিনও আপনি আসেননি প্রণয়।অথচ প্রথম ডাকটা হৃদয় আপনাকেই দিয়েছিলো”
ফজরের আযান কানে ভাসতেই ঘুম আলগা হয়ে যায় চাঁদের।মিনিট পাঁচেক চোখ বন্ধ রেখেই শরীর এপাশ ওপাশ করে মুচড়িয়ে হাই তুলতে তুলতে এক চোখ খুলে পুরো রুমে চোখ বুলায়।আস্তেধীরে অপর চোখ খুলে উঠে বসে শোয়া থেকে।এ তার নিত্যদিনকার অভ্যাস।ফজরের আযানের পর একবার উঠে গেলে সারাদিনেও আর ঘুম আসবেনা তার।হয়তো চেষ্টা করলে ঘুমানো যায় তবে সে ইচ্ছা করেই ঘুমায়না,নাহয় রাতে জলদি ঘুম হানা দেয়না চোখে।অতঃপর বার কয়েক হাই তুলে পাশে তাকাতেই প্রণয়কে নজরে না আসলে ওয়াশরুমের দিকে তাকিয়ে দেখতে পায় ভেতর থেকে তা বন্ধ করা।নিশ্চয়ই প্রণয় উঠে গিয়েছে।ফজর পড়েই বেরিয়ে পড়বে সে।চাঁদও আর হেলাফেলা না করে বেসিনের কাছে গিয়ে দাঁত ব্রাশ করতে আরম্ভ করে।ব্রাশ শেষে আলমারি থেকে নামাজের জন্য দু’টো জায়নামাজ,তজবি,সাদা রঙের একটা সুতির পাঞ্জাবি,টুপি আর আতরের শিশি এবং সর্বশেষে নিজের জন্য নামাজের হিজাবটা বের করে বিছানায় রাখে সে।এরই মাঝে প্রণয়ও বেরিয়ে আসে ভেজা চুলসহ শরীরে।পরণে কালো রঙের ট্রাউজার আর গলায় সাদা রঙা ভেজা তোয়ালে।তোয়ালের এক পাশ দিয়ে কান ডলতে ডলতে বারান্দার কাছে গিয়ে দড়িতে তা মেলে দিয়ে ভেতরে এসে বিছানা হতে পাঞ্জাবি নিয়ে গায়ে দিয়ে মাথায় টুপি লাগিয়ে শরীরে আতর মাখিয়ে জায়নামাজ নিয়ে তা ফ্লোরে বিছিয়ে অপর জায়নামাজ আর তজবি নিয়ে তারই পাশে দেড় হাত জায়গা ফাকা রেখে বিছিয়ে দিয়ে তাতে তজবি রেখে দু’টো জায়নামাজেরই অল্প একটু কোনা ভাজ করে বিছানার পাশে রাখা টেবিলের কাছে যায় সে।অতঃপর টেবিলে রাখা জগ থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে তা পান করতে করতেই শুনতে পায় ওয়াশরুমের দরজা খোলার আওয়াজ।সবেমাত্রই ওযু করে বেরিয়েছে চাঁদ।ফোলাফোলা চোখেমুখে পানির ছিটেফোঁটা দেখা যাচ্ছে।ঘোমটা দেয়া মাথায় কানের এপাশ ওপাশ দিয়ে ছোট ছোট কয়েকটা ভেজা চুল লেপ্টে আছে।দু’বাহু কনুই অব্দি ভেজা।ঠোট তার নড়ছে,খুব সম্ভবত কি সূরা যেনো পড়ছে।অতঃপর বিছানার থেকে হিজাব নিয়ে প্রণয়ের দিকে পিঠ করে ওড়না গা থেকে সরিয়ে হিজাবটা ঠিকঠাকভাবে পরে নিয়ে ফ্লোরে নজর দিতেই দু’টো জায়নামাজ একইসাথে বিছানো দেখে মনে মনে হাসে সে তবে মুখোভঙ্গি গম্ভীরই তার।রোজই প্রণয় এমনটা করে রাখে।কেনো রাখে চাঁদ জানেনা।আর না জানার চেষ্টা করেছে কখনো।থাক না কিছু অকথ্য সুন্দর অনুভূতিমিশ্রিত মুহুর্তসমূহ।অতঃপর প্রণয়ের পানি খাওয়া শেষে জায়নামাজে এসে দাড়াতেই চাঁদও এসে দাঁড়ায় তার জন্য বিছিয়ে রাখা জায়নামাজে।দুজনের জায়নামাজে পা রাখার মুহুর্তও ঠিক একই সময়ে।হঠাৎ করেই দমকা হাওয়া বয়ে গেলো।জানালার আধখোলা পর্দাগুলো নড়েচড়ে উঠলো খানিকটা।সেইসাথে জানালাগুলোও খানিক কেপে উঠতেই ক্যাচ ক্যাচ আওয়াজ ভেসে আসলো কানে।বারান্দার গ্রিলে দু’টো পাখি একইসাথে বসে কিচিরমিচির করছে,ভোরের শীতল হাওয়া,বাতাসে সেই মিষ্টি সুভাস আর সূর্য উঠার আগ মুহুর্ত সবটা মিলিয়ে মনোমুগ্ধকর নির্মল এক পরিবেশ।অতঃপর দু’জনেই একইসাথে হাত বাঁধে নামাজের উদ্দেশ্যে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
গোলাপি জমিনের কালো পাড়ের মধ্যকার এক শাড়ির আচল কোমড়ে গুজতে গুজতে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে আসতে নিলে ভেতর থেকে চাঁদের শাশুড়ী পুষ্পিতা জামান চোখ রাঙানি দিয়ে হাতের খুন্তি নাড়িয়ে নাড়িয়ে চাঁদকে শাসিয়ে খানিকটা উচ্চস্বরে বলছেন,
“কতবার বলেছি সকাল সকালই রান্নাঘরে ছুটে আসবেনা।আগে কলেজে যাওনি করেছো,এখনতো সেসব করলে হবেনা।আরতো একটাই বছর,তারপরই স্বপ্ন পূরণ।এসবে একদম হাত দিতে আসবেনা।আমি আর তোমার চাচিমাই সবটা করে নেবো।তুমি টেবিলে বসো নাস্তা দিচ্ছি খেয়েই তন্ময়ের সাথে বেরিয়ে পড়বে”
চাঁদ রান্নাঘরের দিকে এগোতে এগোতে বলে,
“কিন্তু মা….”
“কোনো কিন্তু টিন্তু না।এক্ষুনি আচল কোমড় থেকে খোলো”
চাঁদ আরও কিছু বলতে নিলে পুষ্পিতা জামান ফের বলেন,
“খোলো বলছি।আর খুলে টেবিলে বসো গিয়ে”
অগ্যতা শাড়ির আচল কোমড় হতে খুলে সেখানে দাঁড়িয়ে থেকেই তার শাশুড়ীকে চাঁদ বলে,
“কিন্তু মা আপনার উপর বেশি চাপ পড়ে যায়না?”
রান্নার কাজ করতে করতেই পুষ্পিতা জামান বলেন,
“কোথায় আর চাপ?রাতেরটাতো তুমিই করো।আর খালাতো আছেনই”
“তাও”
আবারও চোখ রাঙানি দিতেই চাঁদ ভয় পাওয়ার ভঙ্গিমা করে তার শাশুড়ীর পাশে দাঁড়িয়ে পেছন থেকে তার গলা জড়িয়ে বলে,
“চোখ দেখেই ভয় পেয়ে গিয়েছি মা।এবার মেয়ের বুকে থুতু দিয়ে দিন তো!”
চাঁদের কথা শুনে হেসে দেন পুষ্পিতা জামান।অতঃপর চুলার আচ কমিয়ে চাঁদের হাত গলা থেকে সরিয়ে তার দিকে ঘুরে মিছেমিছি বুকের কাছে থুতুর দেয়ার ভঙ্গিমা করে বলেন,
“দিয়ে দিলাম”
বলেই চাঁদের শাড়ির আচল তার মাথায় রেখে মিছেমিছি আরেকবার থুতু দেয়ার ভঙ্গিমা করে থুতনীতে আলতো ছুয়ে বলেন,
“সাথে আমার চাঁদ মেয়েটাকেও দিয়ে দিলাম।আর নজর লাগবেনা।ভাগ্য করে এমন এক বউ এনে দিয়েছে ছেলে আমার।ভাগ্যিস বিয়েটা করেছিলো তোমায়।নাহয় এত সুশ্রী আর সুভাষি পুত্রবধূরূপী মেয়ে কোথায় পেতাম আমি?”
চাঁদ প্রতিত্তোরে কেবলই মৃদু হাসে।অতঃপর চুলার দিকে উঁকি দিয়ে গরুর গোশত কষা দেখে শাশুড়ীর কাছে আবদার করে,
“একটা খাই মা?”
চাঁদের এরূপ আবদারে চুলার দিকে ঘুরে একটা ছোট বাটিতে দু’টো গোশত রাখতে রাখতে তার শাশুড়ী বলেন,
“বলা লাগে আবার?নিয়ে খেয়ে ফেলবে।আমারই তো মেয়ে তুমি!”
চাঁদ শাশুড়ীর পানে চেয়ে মৃদু হেসে লম্বা শ্বাস ফেলে বলে,
“একটু ঝোলও দিয়েন মা”
চাঁদের কথা শুনে বাটিতে খানিকটা ঝোল দিয়ে চাঁদের দিকে পুষ্পিতা জামান এগিয়ে দেন তা।চাঁদ তা নিয়েই একটু ফু দিয়ে গোশত তে কামড় বসাতেই আবারও তা বাটিতে রেখে গরমে ফু ফু করতে লাগলে পুষ্পিতা জামান বলেন,
“আস্তে!গরমতো জিভ পু*ড়ে যাবে”
চাঁদ স্মিত হেসে মাথা চুলকে বলে,
“মা আম্মু বলেছে আপনাদের নিয়ে বাড়ি যেতে”
“অতদূর ঈদ ছাড়া কীভাবে যাবো মা?তাছাড়া উশ্মির….”
“না মা।আম্মুরা ঢাকা এসে পড়েছেতো।এই মাসেই নতুন বাসায় উঠেছে।সেখানেই যেতে বলছিলো”
“ওহ আচ্ছা হ্যা!তুমিতো বলেছিলে।ভুলে গিয়েছিলাম মা।বেয়াইনকেতো তবে কার্ডই দেয়া যাবে।যাবো ঠিক আছে।তুমি আজ একটু জলদি এসো।অনেক জায়গায়ই যেতে হবে কার্ড নিয়ে।তো ভাবছিলাম তোমায় নিয়েই যাই।সবাই ই প্রণয়ের বউকে দেখতে ব্যাকুল”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের ভেতর সবুজ রঙা ডাক্তারী পোশাকে ফায়ানের পাশে দাঁড়িয়ে আছে চাঁদ।ফায়ানসহ আরও কয়েকজন সার্জন সেখানে উপস্থিত আছেন।মূলত সেখানটায় ওপেন হেড সার্জারী চলছে।এক যুবতী মেয়ে এক্সিডেন্ট করেছিলো মাস খানেক আগে।র*ক্ত তখন না গেলেও পরবর্তীতে তা জমাট বেধে ভয়াবহ ক্ষ*তি হয়ে গেছে।সেজন্যই জমাট বাধা র*ক্ত বের করে ফেলতে হবে।অন্যথা ব্রেইনে প্রভাব পড়ে মৃ*ত্যুও ঘটতে পারে।চাঁদ খানিকটা নার্ভাস হলেও নিজেকে সামলে সবটা পর্যবেক্ষণ করছে।আর দেখছে ফায়ানকে,কতটা নিখুঁতভাবে সে সবটা করছে।অতঃপর ঘন্টা দুয়েকের মাঝেই সফলভাবে সার্জারী সম্পন্ন হলে সকলে সমস্বরে জাযাকাল্লাহ খায়রুন পড়ে বাইরে বেরিয়ে আসতেই মেয়েটার পরিবারের লোকজন জেঁকে ধরে তাদের।ফায়ান সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“অপারেশন সাকসেসফুল তবে পেশেন্টের জ্ঞান ফিরতে সময় লাগবে।এমনও হতে পারে দু’দিন লাগবে তবে ভয়ের কিছু নেই আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন”
ফায়ানের সাথে চলে যেতে নিলেই চাঁদের নজরে আসে তনিমা।তনিমাকে দেখে চাঁদ তাকে ডেকে উঠে,
“এই তনিমা তুমি এখানে?”
তনিমা চাঁদের কন্ঠস্বর পেয়ে তার কাছে এসে বলে,
“চাঁদ ভাবি?”
অতঃপর মুখের মাস্ক খুলে চাঁদ বলে,
“হ্যা আমি।কিন্তু তুমি এখানে?”
তনিমা লম্বা শ্বাস ফেলে বলে,
“হ্যা ভাবি।ভেতরে যে আছে ও আমার ছোট বোন”
“সে কি!কীভাবে হলো সবটা?”
চাঁদের সাথে তনিমাকে কথা বলতে দেখে তনিমার ভাবি এগিয়ে এসে চাঁদকে বলে,
“চাঁদ তুই এখানে?”
এবারে ইপ্সিকে দেখে অতিরিক্ত মাত্রায় ভড়কে গিয়ে চাঁদ বলে,
“তুই এখানে কী করছিস?”
তনিমা তার ভাবি তথা ইপ্সিকে বলে,
“তুমি চাঁদ ভাবিকে চেনো ভাবি?”
ইপ্সিকে ভাবি ডাকতে দেখে চাঁদ তনিমাকে বলে,
“ইপ্সি তোমার ভাবি হয়?”
“হ্যা ভাবি।ইপ্সি ভাবি আমার আপন ভাবি”
এবারে ফায়ানও ইপ্সির কাছে এসে বলে,
“ভেতরের টা তোর ননদ ছিলো ইপ্সু?”
ফায়ানের দিকে চেয়ে ইপ্সি বলে,
“হ্যা আমার ছোট ননদ অনিমা।কেন পছন্দ হয়েছে নাকি তোর?”
বলেই ফায়ানের পানে চেয়ে ভ্রু নাচায় ইপ্সি।তা দেখে ইপ্সির মাথায় চাটি মে!রে ফায়ান বলে,
“ওহ শাট আপ বোকাপ্রাণী”
তনিমা চাঁদকে বলে,
“চাঁদ ভাবি তোমরা সবাই কি ফ্রেন্ডস?আর তুমি ডাক্তারী পোশাকে যে?”
চাঁদ জবাবে বলে,
“হ্যা।আমি,ইপ্সু,ফায়ানসহ আমাদের আরও দু’জন ফ্রেন্ড আছে।আমরা একই মেডিকেলের স্টুডেন্ট।আর আমিও বছর দেড়েক বাদে প্রফেশনালি ডাক্তার পদ পাবো।কেন আলফি ভাইয়া তোমায় বলেনি আমার ব্যাপারে?”
আলফির কথা নিজের ভাবির সামনে শুনে কাশি উঠে যায় তনিমার।কোনা চোখে তা পর্যবেক্ষণ করে ইপ্সি বলে,
“আলফি কে তনি?”
সামান্য হেসে তনিমা বলে,
“ফ্রেন্ড হয় ভাবি”
কপাল কুচকে ইপ্সি বলে,
“শুধুই ফ্রেন্ড নাকি?”
তখনই চাঁদ বলে,
“বেশি ভাবিগিরি দেখাচ্ছিস না ইপ্সু?আমিও কিন্তু ভাবি হয়েছি।তোর চাইতে বেশি ননদ আর দেবর কিন্তু আমার আছে।আর সবার সাথে যথেষ্ট ফ্রিও আমি।তুই অযথা মেয়েটাকে ভয় দেখাচ্ছিস।তাছাড়া ও কিন্তু ছোট নয়।বিয়ে দিচ্ছিস না কেনো?”
ইপ্সি কপাল আরও কুঞ্চিত করে বলে,
“ওকেতো কবে থেকেই বিয়ের কথা বলছি।ও ই তো করতে চাচ্ছেনা।এই তনি সত্যি করে বলোতো এই আলফিটা কে?”
তখনই হঠাৎ কোনো পুরুষালি গম্ভীর কন্ঠস্বর ভেসে আসে,
“কোন আলফি?”
ভাইয়ের কন্ঠে ঈষৎ কেপে উঠে পেছন ঘুরে ভাইকে দেখে তনিমা ঢোক গিলে চাঁদের পানে অসহায় দৃষ্টি দিয়ে তাকাতেই চাঁদ তাকে আস্বস্ত করে ইপ্সিকে বলে,
“বেশি বুঝিস তুই।হাসের মতো প্যাকপ্যাক করিস না।তোর ননদের জ্ঞান আজ রাত অব্দি না ফিরে কালকের মধ্যেই ফিরে আসবে”
লোকটা আবারও গম্ভীরভাবে বলে,
“ইপ্সি?কোন আলফির কথা বলছো তুমি?কে সে?”
চাঁদ ইশারায় ইপ্সিকে কিছু জিজ্ঞেস করতেই ইপ্সি জবাবে হ্যা সূচক মাথা নাড়ায়।আর চাঁদ লোকটার সামনে এসে বলে,
“আসসালামু আলাইকুম।আপনি পেশেন্টের ভাই?”
ডাক্তারী পোশাকে চাঁদকে দেখে লোকটা নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,
“ওয়ালাইকুম’সালাম।জ্বি”
“আপনার বোন এখন চিন্তামুক্ত”
চাঁদের কথা শুনে মনে মনে আলহামদুলিল্লাহ বলে লোকটা চাঁদের দিকে চেয়ে বলে,
“আপনাকে আমি কোথাও দেখেছি”
চাঁদ জিজ্ঞেস করে,
“কোথায়?”
মনে করার চেষ্টা করে লোকটা বলে,
“ঠিক মনে পড়ছেনা তবে দেখেছি”
তখনই ইপ্সি বলে,
“আমার সাথে ছবিতে দেখেছো তুমি।ও ই সেই চাঁদ যার কথা প্রায়শই আমি তোমায় বলি”
মনে পড়েছে এরূপ ভঙ্গিমায় লোকটা বলে,
“সেই চাঁদ?ঐ যে তোমাদের ব্যাচের রেকর্ড গড়েছিলো যে সেই মেয়েটা?মানে তোমার বান্ধবী চাঁদ?”
ইপ্সি হ্যা সূচক মাথা নাড়তেই চাঁদ বলে,
“জ্বি দুলাভাইয়া।আমিই আপনার সেই শালিকা”
গম্ভীরভাবে লোকটা বলে,
“কিন্তু শালিকা মহাশয়াতো বিয়েতে আসেনি”
“সরি ভাইয়া।আমি ঢাকা ছিলামই না।আশা করি ইপ্সির থেকে সবই শুনেছেন”
“হ্যা শুনেছি তবে তুমি আবার হঠাৎ আসলে যে?”
কপাল কুচকে ইপ্সির পানে চেয়ে চাঁদ বলে,
“ইপ্সু আপনায় কিছু বলেনি?”
চাঁদের কথা শুনে ইপ্সির পানে চেয়ে আবারও চাঁদের দিকে তাকিয়ে লোকটা বলে,
“কিছু বলার ছিলো নাকি?”
“আসলে বিয়ে আমার ঢাকাই হয়েছে তাই এখানেই থাকি”
বিস্ময়ে চোখ বড় করে দুই ভ্রু উঁচিয়ে ইপ্সির হাজবেন্ড বলে,
“কিন্তু তুমিতো প্রণয় নামের কাউকে ভালোবাসতে নাকি?”
তখনই হাসিমুখে ইপ্সি বলে,
“প্রণয় ভাইয়ার সাথেই চাঁদের বিয়ে হয়েছে তূর্ণ”
ইপ্সির কথা শুনে ঠোটজোড়া প্রসারিত হয় তার হাজবেন্ড তূর্ণের।অতঃপর সে বলে,
“তাহলেতো ভালোই হলো”
চাঁদ জিজ্ঞেস করে,
“ভাইয়ার নাম তূর্ণ?”
ইপ্সি হ্যা সূচক মাথা নাড়তেই চাঁদ বলে,
“তা তূর্ণ জিজু,তনিমা কি আপনার সত্যি সত্যি বোন?”
কপাল কুচকে তূর্ণ বলে,
“কোনো সন্দেহ?”
“না না।এমনি বললাম আরকি”
“হ্যা,তনিমা আর অনিমা আমারই ছোট বোন।তনি মেঝো আর অনি ছোট”
“আর আপনি সবার বড়?”
“হ্যা”
“তা দুলাভাই আপনার বিয়ে খাইনি বলে যে বেয়াইনদের বিয়ে খাবোনা সেটা কিন্তু ভাববেন না।দুই বেয়াইনের বিয়েতে দাওয়াত মাস্ট!”
খানিক হেসে তূর্ণ বলে,
“অবশ্যই শালি সাহেবা!এত সুন্দর শালি আছে জানলে কবেইনা তোমায় খুঁজে আধি ঘরওয়ালি বানিয়ে নিতাম?তোমার বান্ধবীতো জ্বা!লিয়ে অন্তর কালা করে দিলো”
বলেই আড়চোখে ইপ্সির পানে তাকায়।ইপ্সি চোখ ছোট ছোট করে তার দিকে তাকাতেই দৃষ্টি সরিয়ে নেয় সে।চাঁদও হেসে বলে,
“এই যে এখন এসে গেছি।আর কালা করতে দেবোনা ভাইয়া।তবে ইপ্সুতো আমাদের সার্কেলের সবচাইতে ঠান্ডা মেজাজের।বিচ্ছুতো হলো অবু”
অবনীর কথা শুনতেই হায় হুতাশ করে তূর্ণ বলে,
“আসলেই বিচ্ছু।বিয়ের দিন জ্বালিয়ে মে!রেছে আমায়।এখনও মাঝেমাঝেই হুম!কি ধাম!কি দেয় কলের মধ্যেই”
চাঁদ সামান্য হেসে বলে,
“তাহলে আপনারা থাকুন আমি আসছি তবে।আর হ্যা ভাইয়া ইপ্সু,তনিমা,অনিমাকে নিয়ে আমার বাসায় অবশ্যই যাবেন”
“মায়ের টা নাকি শ্বশুরবাড়ি?”
মৃদু হেসে চাঁদ বলে,
“দু’টোতেই দাওয়াত রইলো”
অতঃপর তনিমার দিকে চেয়ে বললো,
“যেও কিন্তু তনি”
“ঠিক আছে ভাবি।তুমি বাড়ি এসো।এখনতো বান্ধবীর শ্বশুরবাড়ি জানলেই”
“হ্যা অবশ্যই”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
সন্ধ্যাবেলা,
ব্লাউজ আয়রণ করে রেখে শাশুড়ীর ডাকে তার রুমে গিয়েছিলো চাঁদ।কিন্তু নিজ রুমে এসে পোড়া গন্ধ পেতেই বিছানার দিকে চোখ পড়তেই ব্লাউজের উপর আয়রণ মেশিন দেখে চোখজোড়া বড় বড় হয়ে আসে তার।তৎক্ষনাৎ দৌড়ে মেশিন উঠিয়ে ব্লাউজ হাত দিয়ে ধরতেই ব্লাউজের পোড়া অংশে খানিক আগুনের স্পর্শ লেগে চার আঙুলসহ তালুতেও তা লেগে জ্ব*লে যায় চামড়া।ব্লাউজ বিছানায় ফেলেই নজরে আসে আয়রণ মেশিন দিয়ে বিছানার চাদরও পু*ড়ে যাচ্ছে।তাই আ!ঘা!ত প্রাপ্ত হাত নিয়েই মেশিন উঠিয়ে বাম হাত দ্বারা তলানি স্পর্শ করতেই বা’ হাতের তিন আঙুলের চামড়া তার ঝ!লসে যায়।অতঃপর ‘আম্মু’ বলে চিৎকার দিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে রয়।মেশিন থেকে হাত তুলছে পারছেনা।চোখ দিয়ে টলমলিয়ে পানি ঝড়ছে।ঠোট কামড়ে ধরে কেবলই অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে সে।হঠাৎ করেই প্রণয় দৌড়ে এসে আয়রণ মেশিন থেকে হাত টেনে এনে আঙুলগুলোর দিকে তাকাতেই চোখজোড়া সাথে সাথে বন্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে চাঁদকে ধরে বেসিনের সামনে এনে ট্যাপ ছেড়ে দিতেই গগণবিদারী চিৎকার দিয়ে উঠে চাঁদ।ঠোট চেপে ক্ষণে ক্ষণেই ফুপিয়ে উঠছে।চোখ দ্বারা ভারী বর্ষণ ছুটেছে তার।কিয়ৎক্ষণ বাদে হাত ঝাড়া দিয়ে কান্নামিশ্রিত কন্ঠেই উচ্চস্বরে সে বলে উঠে,
“ছুবেন না আপনি আমায়!একদম ছুবেন না!দূর হন আমার সামনে থেকে।ঘৃ!ণা করি আপনায় আমি।আই হেইট ইউ।আই জাস্ট হেইট ইউ!”
To be continued…..
[বিঃদ্রঃগল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক]