#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
৭৪.
‘রাজ ভিলা’ থেকে প্রায় দুই কিলোমিটারের পথ দৌড়েই পার করেছে চাঁদ।এতটা ভয় সে কস্মিনকালেও পায়নি।তবে আজ তার জীবনম!রণের প্রশ্নে এসে সে যেনো আটকে গেছে।আর দৌড়াতে না পেরে ধপ করে চাঁদ বসে পড়ে রাস্তার পাশ ঘেষে।জায়গাটা সুনসান,নীরব।জনমানবহীন রাস্তার পাশে বসে না থেকে দাঁড়িয়ে ধীর গতিতে হাটা ধরে।বর্তমানে সে হাটছে বুয়েট সড়কের পাশ দিয়ে,দেয়ালে দেয়ালে যেথায় বিভিন্ন আঁকিবুঁকি আর উপদেশের সমাহার।চাঁদের বুক দুরুদুরু করে কাপছে।অরণকে সে কীভাবে সব বলবে?কী কী সে করেছে?কীভাবে করেছে আর যেগুলো জেনেছে সে সত্যিই বা কী করে বলবে?ভেবেই ঢোক গিলে চাঁদ।অরণ কি তাকে বিশ্বাস করবে?নাকি প্রণয়ের মতোই অবিশ্বাসের পাহার তার সামনে এনে দাড় করাবে?এসব ভাবতে ভাবতেই আকস্মিক কাউকে দৌড়ে তার সামনে এসে দাড়াতে দেখে কিছুক্ষণের জন্য ভয় পেয়ে যায়।মনে হানা দেয় অদ্ভুতসব আশংকারা।তবে নিজেকে সামলে সামনে তাকাতেই অরণকে দেখে তার জানে জান আসে।এবং আতংকের দরুন এমন এক কাজ সে করে বসে যা সে বা অরণ কেউই কল্পনা করেনি।আকস্মিক অরণকে জড়িয়ে ধরে চাঁদ।কান্নার বেগ তার বেড়েছে।হেচকি তুলে সে কাদছে।বারংবার ফুপিয়ে উঠছে,নাক টানছে ক্ষণে ক্ষণেই।চাঁদের হঠাৎ তাকে জড়িয়ে ধরায় বেশ অস্বস্তিতে পড়ে অরণ।চাঁদের থেকে এমনটা সে মোটেও আশা করেনি।তবে চাঁদও যে এরকম ধাচের মেয়ে না সে খবরও অরণ জানে।তাই নিজেকে ধাতস্থ করে উপরের দন্ত দ্বারা নিচের ঠোট কা!মড়ে ধরে জিভ ভেজায় অরণ।অতঃপর চাঁদকে বিনা ছুয়েই বলে,
“কী হয়েছে চাঁদ?ভয় পেয়েছো বেশি?কী হয়েছে বলো আমায়।সেই ছেলে কি কিছু করেছে?”
চাঁদ সেভাবে থেকেই অরণকে বলে,
“অ….অরণ….অরণ…….ওরা আজ আমায় পেলে মনে হয় মে!রেই ফেলতো।ছেলেটা বাঁচিয়েছে আমায়”
“মানে?কিন্তু সেখানে কী হয়েছে?”
অরণকে সেভাবেই আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেই সমস্ত ঘটনা সে খুলে বলে।সে কী কী করেছে,কতকিছু জেনেছে তার সমস্ত কিছুই।অতঃপর ফের ঘনঘন শ্বাস ফেলে বলে,
“আজ বোধহয় আমি ম!রেই যেতাম অরণ”
চাঁদ যে অতিরিক্ত ভয় পেয়েছে তা উপলব্ধি করতে পেরে চাঁদের মাথায় হাত রেখে অল্প বিস্তর হাত বুলিয়ে অরণ বলে,
“চিন্তা করোও না।এই যে কিচ্ছু হয়নি তোমার।আর কিছু হবেও না।এবার তো প্রমাণও আছে তাইনা?আমরা অধিরাজ শেখসহ তার সেই রাজ ভিলায় আগুন ধ*রিয়ে দেবো কেমন?আর তার পৈশাচিক সেই রাজ্যের সমাপ্তি ঘটবে তোমার হাতেই।সে যে পুরো ঢাকাটাকে আত্মসাৎ করতে চায় তা তো আমি কস্মিনকালেও ভাবিনি।কিন্তু কীভাবে চাঁদ?প্রধানমন্ত্রী,রাষ্ট্রপতি তাছাড়া সকল নেতাসেতারা তা হতে দেবেন?কেউ কি ঘুনাক্ষরেও টের পাবেনা?”
অরণের কথা শুনে অরণকে ছেড়ে দেয় চাঁদ।এখন বেশ অস্বস্তি হচ্ছে তার।ইচ্ছা করে সে এমনটা করেনি।ভুলবশত হয়ে গিয়েছে।অতঃপর দৃষ্টি নত করে অরণকে সে বলে,
“আমি আসলে ইচ্ছা করে আপনাকে জ….”
চাঁদকে মাঝ পথে থামিয়েই অরণ বলে,
“একজন বোন তার বড়ভাইকে জড়িয়ে ধরতেই পারে।টেক ইট ইজি চাঁদ”
অরণের স্বাভাবিক কন্ঠের স্বাভাবিক বাক্যে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টি মেলে তার পানে চায় চাঁদ।অতঃপর বলে,
“আপনার মতো মানুষই হয়না অরণ।যে আপনাকে পাবে সে খুব ভাগ্যবতী”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে অরণ বলে,
“অথচ আমি যারে ভালোবাসি,সে ভালোবাসেনা মোরে”
চাঁদও হতাশার শ্বাস ফেলে বলে,
“আর যে আপনারে বাসে আপনিও তো তারে বাসেন না অরণ।দুনিয়া এমনই,গোলক ধাধায় কেবলই ঘূর্ণায়মান”
চাঁদের কথার অর্থ বুঝতে না পেরে অরণ বলে,
“কী বললে?বুঝলাম না?”
প্রসঙ্গ এড়াতে চাঁদ বলে,
“অধিরাজ শেখ চাচ্ছেন তার এই রাজ ভিলাটা প্রচলিত হয়ে যাক।সকলে ভয় পাক তাকে,আতংকে থাকুক তার।বিশেষ করে মহিলারা আর যুবতী মেয়েরা।একেতো এসব থেকে সে টাকা অর্জন করছেন দ্বিতীয়ত সে চাচ্ছেন দেশ শাসন করতে।কেবলই ঢাকা নয় অরণ,পুরো বাংলাদেশে নিজ রাজত্ব চালাতে চাচ্ছেন।আমি এও শুনেছি সে নাকি খুব দ্রুতই গদিতে বসবেন।এরপর সেখান থেকে আর নামবেন না।এটা করতে যদি তার দশ-পনেরো বছরও লেগে যায় তবুও সে হাল ছাড়বেন না।আর এর জন্য প্রয়োজন রাজকীয় কারো সহায়তা আই মিন বিদেশীদের।আপনি বুঝতে পারছেন?এজন্যই অনেক মেয়েদের বিদেশ পাঠানো হবে তাদের সন্তুষ্ট করার জন্য।আরও এক জিনিস আমি জানতে পেরেছি আর তা হলো তার মেয়েলোভ বেশি।আর তার নজরে পড়েছে বর্তমান রাষ্ট্রপতির নাতনির দিকে।চোখ ধাধানো সুন্দরী সে।এবং আমি চাচ্ছি খুব দ্রুতই সবটা সমাধান করতে অরণ।এভাবে চললেতো মেয়েজাতি বাড়ি থেকে বেরুতে পারবেনা।ঢাকাশহর ধীরে ধীরে মৃ*ত্যুপুড়ীতে রূপ নেবে।এই যে দেখুন আমি ভিডিওসহ সবকিছু করেছি”
বলেই নিজের ফোনটা এগিয়ে দেয় চাঁদ।অরণ সেটা প্লে করতে নিলেই পেছন থেকে হাততালির আওয়াজ আসতেই কপাল কুচকে ফোনের পাওয়ার বাটন চেপে ফোন অফ করে পকেটে পুরে নেয় তা।অতঃপর পিছু ঘুরে প্রণয়সহ বন্ধুমহলের সকলকেই দেখতে পেয়ে কপাল আরও কুঞ্চিত হয় তার।আর প্রণয় বলে,
“ওয়াও!সো আমেজিং সিনারি!ওহ মাই গড!লেট মি ক্লিক সাম ফটোজ।আর ইউ গাইজ রেডি টু মেক দ্যাট হাগ আগ্যাইন?” [বাহ!কি অপরূপ দৃশ্য!ও আমার প্রভু!আমাকে কিছু ছবি তুলতে দাও।তোমরা কি আরও একবার সেভাবে নিজেদের জড়িয়ে ধরতে রাজি?]
প্রণয়ের কথায় গা ঘিনঘিন করে উঠে চাঁদের।সে উচ্চস্বরে বলে,
“জাস্ট শাট ইওর মাউথ মি.প্রণয়।যাচ্ছেতাই বলে যাচ্ছেন কেনো?”
প্রণয়ও উচ্চস্বরে বলে,
“ইউ শাট আপ মিস চাঁদ!আপনারা যাচ্ছেতাই করবেন আর আমি বললেই দোষ?একটু আগেই দুজন একে অপরকে জড়িয়ে ধরেননি?বলুন ধরেননি?আমি স্পষ্ট দেখেছি।দেখেছে ওরা সকলেই।এবার বলুন আর কত মিথ্যে বানাবেন?”
“দেখুন প্রণয়,যা জানেন না তা নিয়ে বলবেন না”
“হ্যা আজতো জানতেই এসেছি।জানান না?কবে থেকে এসব চলছে?একইসাথে আর কত ছেলেকে পেছনে ঘোরাবেন?নাকি সকলের সাথেই ঘেষাঘেষি করতে খুব আনন্দ পান আপনি?”
প্রণয়ের প্রতিটা কথায় চাঁদের কান দিয়ে ধোয়া নির্গত হচ্ছে।মেজাজ তার ধীরে ধীরে বিগড়ে যাচ্ছে।অরণও আর স্থির থাকতে পারলোনা।প্রণয়ের সামনে এসে তার ডান গালে শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে চ!ড় বসিয়ে বললো,
“অনেকদিন ধরেই তোর ননস্টপ অপবাদ শুনে যাচ্ছি।আর একটা কথা বললে জাস্ট মে!রে ফেলবো তোকে”
এবার প্রণয়ও অরণের বুকে ধা!ক্কা দিয়ে বলে,
“মা!রবি?মার না?বারণ করেছে কে?আয় মা*র!ম*রেতো আজ এমনিই গিয়েছি।তোদের দুজনের ওরূপ বি*শ্রী কাজে হৃদয়টা আমার ম!রে গিয়েছে অরণ।আর কত মার!বি?”
“ফালতু বকবিনা”
এবার ডান হাতে অরণের চোয়াল ধরে আর বাম হাতে বাহু চেপে প্রণয় দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“আমার চাঁদের দিকে হাত বাড়াতে তোর বিন্দুমাত্র লজ্জা করলোনা?এই তুই না পূর্ণকে ভালোবাসিস?চাঁদকে দেখে তোর পুরুষসত্ত্বা জেগে গেছে কেন?নিজের পুরুষত্ব কেন তাকে দেখাচ্ছিস বারবার?ন্যূনতম লজ্জাবোধ নেই?ছিহ!”
বলেই এক ধাক্কায় অরণকে মাটিতে ফেলে দেয় প্রণয়।এবার বেশ ক্ষীপ্র গতিতে চাঁদের সামনে এসে তার চোয়াল চেপে ধরেই দেয়ালের সাথে তাকে মিশিয়ে র*ক্তুচক্ষু নিয়ে বলে,
“আর তুই?শরীরে এত রঙ কেন তোর?একজন দিয়ে তোর পো*ষায় না?ক’জনকে একসাথে লাগে?নিজের রূপ আর দেহ দেখিয়ে কী পাস?না মানে কী পাস টা কী তুই?তুই বললেইতো তোকে বিয়ে করে নিতাম।কিন্তু তুই কী করলি?যার তার সাথেই ঘেষাঘেষি আর……..ছিহ!দূর হ আমার চোখের সামনে থেকে।আর কখনো যেনো তোর এই কুৎসিত চরিত্রের মুখশ্রী আমার দৃষ্টিতে না পড়ে”
আরও কিছু বলার পূর্বেই অরণ এসে প্রণয়কে ছাড়িয়ে ক*ষিয়ে থা!প্পড় দিতেই প্রণয়ের রাগ যেনো কয়েকগুন বেড়ে যায়।সেও প্রতিঘাতস্বরূপ অরণকে একের পর এক দুই গালেই চ*ড় দিতে দিতে বলে,
“এই তোর সাহস কী করে হয় আমার চাঁদকে ছুয়েও দেখার?তোর একটুও বিবেকে বাধলোনা?তার সাথে….তার সাথে……ছিহ!”
অরণও প্রণয়কে পাল্টাঘাত করতে করতে বলে,
“তুই পাগল হয়ে গিয়েছিস প্রণয়!পাগল হয়ে গিয়েছিস!তুই মেন্টালি সিক!তোর ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন।যাচ্ছেতাই বলে যাচ্ছিস!মানে যাচ্ছেতাই!মুখে যা আসছে বলেই যাচ্ছিস বলেই যাচ্ছিস।ইউ স্টুপিড”
বলতে বলতেই বেশ জোরেই প্রণয়ের ডান গালে চ!ড় দিতেই গাল ফে!টে র*ক্ত বের হয় আর প্রণয় গিয়ে ছিটকে পড়ে মাটিতে।অতঃপর চাঁদের কাছে অরণ যেতে নিলেই তাড়াতাড়ি উঠে দৌড়ে এসে অরণের হাত ধরে তাকে দূরে ঠেলে দিয়ে তর্জনী দ্বারা তাকে শাসিয়ে প্রণয় বলে,
“খবরদার!আর এক পা যদি এগিয়েছিস,প!ঙ্গু করে ছেড়ে দেবো তোকে আমি”
মির,রবিন,রিহা,পূর্ণতা আর মিরা চেয়েও তাদের ঝ!গড়া থামাতে সক্ষম হচ্ছেনা।দুজনকে টেনেও আটকানো যাচ্ছেনা।উল্টো তাদের ঝাড়া মেরে ফের আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে দুজনেই।প্রণয় এবার চাঁদের নিকট গিয়ে সিক্ত দৃষ্টি তার দিকে নিক্ষেপ করে বলে,
“আপনার জীবনে কত পুরুষের আনাগোনা বলবেন?এত পুরুষ কেনো আপনার?কেবল একজন পুরুষ থাকলে কি চলতোনা?চলতোনা আপনার?আপনার সেসব দৃশ্য আমি ভাবতেও পারছিনা চাঁদ বিশ্বাস করুন!চোখের সামনে ভাসলেই মনে হয় কেউ আমার গলা চে!পে ধরেছে।অথচ আপনি সেসব কী করে করতে পারলেন?আপনি কিনা আমার বন্ধুটাকেও ছাড়লেন না?এতটা নিষ্পাপ মুখের অধিকারী হয়েও চরিত্রটাকে নিষ্পাপ রাখতে পারলেন না?আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছিনা আপনি!আমার চন্দ্রময়ী এত কুৎসিত ব্যক্তিত্বের অধিকারী।যার ব্যক্তিত্ব চোখ ধাধিয়ে দিয়েছিলো আমার।সেই ব্যক্তিত্বকেই আজ দু’চোখে ঘৃ!ণা করি।আপনার মতো চরিত্রহীনা নারীকেও ঘৃ!ণা করি।দূর হয়ে যান।চলে যান আমার সামনে থেকে!আর এক মুহুর্ত আপনাকে আমি টলারেট করতে পারছিনা”
প্রণয়ের প্রতিটা বাক্য চাঁদের হৃদয় চি!ড়ে অভ্যন্তরে প্রবেশ করলো।শেষের কথাগুলো কর্ণকুহর হতেই চাঁদ ছুট লাগালো দূরে,বহুদূরে।ডান হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে বারংবার চোখ-গাল মুছতে মুছতেই দৌড়াতে লাগলো প্রাণপণে।অরণের মেজাজ এবার আর স্থির থাকতে পারলোনা।মাথায় র*ক্ত উঠতেই সে প্রণয়ের দিকে তেড়ে এসে তার গলা চে!পে ধরে দেয়ালের সাথে আটকে একের পর এক এলোপাথাড়ি দুই গালেই সশব্দে চ*ড় বসাতে লাগলো।রবিন আর মির কোনোক্রমেই ছুটাতে পারছেনা তাদের।না প্রণয় চেষ্টা করছে ছুটতে।সে সেভাবেই অরণকে দেখে যাচ্ছে কেবল।বারবার চোখ বড় হয়ে বুক ফুলে নাসারন্ধ্র ফুলে উঠছে প্রণয়ের।আর কিছুক্ষণ থাকলে দম বন্ধ হয়ে মা*রা যাবে ভাবতেই পাঁচ বন্ধু-বান্ধব একত্রিত হয়ে বেশ শক্তি প্রয়োগ করেই অরণকে ছাড়ালো।কিন্তু অরণ থেমে নেই,সে তার ব্যাগ থেকে স্টেথোস্কোপ বের করে তা দ্বারাই প্রণয়ের গায়ে আ!ঘা!ত করতে করতেই বললো,
“তোকেতো আজ!তোকেতো আজ আমি মে!রেই ফেলবো।তোর ঐ বিশ্রী জিভের স্থায়ী থাকার অধিকার নেই,ছিড়ে ফেলবো তা আমি”
অতঃপর প্রণয়ের চোয়াল চে!পে বাহুতে ফের আ!ঘা!ত করেই আশেপাশে কিছু একটা খুঁজতে খুঁজতেই ভাঙা অর্ধইট চোখে পড়ে তার।সেটাই ঝড়ের বেগে নিয়ে প্রণয়ের দিকে তেড়ে আসতে আসতে বলে,
“তোকেতো আমি!”
ঠিক সেই মুহুর্তে মিরা চেচিয়ে বলে,
“অরণ থাম!প্রণয় ম*রে যাবে”
বাক্যখানা শ্রবণ হতেই হাত থেকে ধপ করেই ইটটা পড়ে যায় অরণের।অতঃপর র*ক্তচক্ষু নিয়েই সে প্রণয়ের ডান পাশে খানিক থুতু ফেলে নাকমুখ ফুলিয়ে ঘনঘন শ্বাস নিয়ে বলে,
“তোর মতো বন্ধু আল্লাহ কাউকে না দিক!কারো প্রেমিক হবার যোগ্য নস তুই!আর চাঁদকে তুই কোনোদিনই পাবিনা।আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি।আমি বেঁচে থাকতে চাঁদকে অন্তত তোর হতে দেবোনা!যেমনভাবে চাঁদকে তুই ঘৃ!ণা করিস,তেমনিভাবে আজ এবং এখন থেকে তার চেয়েও অধিক পরিমাণ ঘৃ!ণা তোকে আমি করি।তোর মতো সাপকে আমি বন্ধু মানিনা।মানিনা!দূর হয়ে যা আমার চোখের সামনে থেকে”
বলেই দ্রুত গতিতে চাঁদ যেদিকে ছুটে গিয়েছি সেদিকটায় যেতে উদ্যোগী হয় অরণ।এমন সময় বেশ দুর্বল কন্ঠে প্রণয় বলে,
“কা……কী এমন পেয়েছিস চাঁদের মাঝে?”
কথাখানা শুনে নাসারন্ধ্র প্রসারিত করে অগ্নিদৃষ্টি প্রণয়ের পানে নিক্ষেপ করে ফের ঘাড় ঘুরিয়ে চাঁদকে অনুসরণ করতে করতে অরণ বলে,
“যা তুই কখনো পাস নি।পাবিও না!”
অতঃপর সেও ছুট লাগায় চাঁদের পিছু।মেয়েটার জীবন এমনিতেই সংকটে।ভুলভাল কিছু করে বসলে?চিন্তারা মস্তিষ্কে কিলবিল করছে অরণের।সে যেকোনোক্রমে চাঁদের কাছে পৌঁছাতে চায়।মিনিট দশেকের মাঝে কোথায় গায়েব হলো মেয়েটা?খুঁজে পাচ্ছেনা কেনো?ফোনটাও তো অরণের কাছে।এবার?কী করে চাঁদকে খুঁজবে সে?
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
দৌড়াতে দৌড়াতেই ফের একই জায়গায় দাড় হয় চাঁদ।আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সন্ধ্যা নেমে এসেছে।একটু বাদেই মাগরিবের আযান পড়বে।জনশূন্য এলাকা খানিকটা ভুতুড়ে লাগছে চাঁদের নিকট।তবুও সেসব জিনিসকে তোয়াক্কা না করে সে তার বাড়ির দিকে এগোচ্ছে।কিন্তু এমতাবস্থায়ই দৌড়ে তার সামনে এসে উপস্থিত হয় অ্যালেন নামক সেই শেতাঙ্গ ছেলেটা।চাঁদের দিকে দৃষ্টি স্থির করেই আলতো হেসে ধপ করে রাস্তার মাঝে পড়ে যায় অ্যালেন।অতঃপর র*ক্তরাঙা হয় পাকা সড়কের পথ।পেছনে শক্তপোক্ত লোহা হাতে দাঁড়িয়ে আছেন মাহতিম স্যার।তারই পাশ ঘেষে দাঁড়িয়ে অনিন্দ্য ঘোষ স্যার।তার একটু পেছনেই কাশেম বাবুর্চি আর অপরপাশে মধ্যবয়স্কা সেই মহিলাটি যিনি ছিলেন সকল পতিতা মেয়ের সরদার।এবং সাথে তাদের আছে কয়েকজন সাঙ্গপাঙ্গরাও।আর মাহতিম স্যারের ঠিক পেছন হতে বেরিয়ে আসেন অধিরাজ মোহাম্মদ শেখ।অধিরাজ মোহাম্মদ শেখকে দেখে গলা শুকিয়ে আসে চাঁদের।সঙ্গে সঙ্গে পুরো শরীর দিয়ে ঘাম ছুটে যায় তার।ঠোট অল্প বিস্তর ফাক করে ভেতরে লম্বা শ্বাস নিয়ে তা বাইরে নির্গত করারও সময় পায়না সে,ঠিক তখনই রাস্তায় র*ক্তাক্তবস্থায় শোয়া অ্যালেনের কম্পিত কন্ঠস্বর ভেসে আসে,
“চ…..চলে যাও…চলে যাও।পালাও চাঁদ!পালিয়ে যাও”
To be continued…..