আবার প্রেম হোক পর্ব-৭৬

0
677

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

৭৬.
“আপনিময়ী আমি আপনার থেকেই পালিয়ে বেড়াই,ইহাই কি জীবন ত…”

ব্যাস!আর কোনোকিছু লিখা নেই।অর্ধসম্পন্ন বাক্যটির মাধ্যমেই পুরো ডায়েরীটা পড়া সম্পন্ন হয় প্রণয়ের।এরপর বাকি পাতাগুলোতে আর কিছুই লিখা নেই।এবং এই বাক্যটিও যে পুরোপুরি লিখা হয়নি তা বেশ বুঝতে পারছে প্রণয়।আর তার মনে পড়ে সেই দুপুরের কথা,যেদিন ডায়েরীটার জন্য পাগলপ্রায় হয়েছিলো চাঁদ।হয়তো সেদিন পুরোটা লিখার পূর্বেই ডায়েরীটা ছিটকে পড়েছিলো তার হাত থেকে।পুরো ডায়েরীটা শেষ করতেই শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসে প্রণয়ের।সে কোনোকিছুই আর ভাবতে পারছেনা,ঘেমে গেছে অনেকটাই।অগোছালো চুলগুলো ডান হাত দ্বারা টেনে ধরে আলমারিতে পিঠ ঠেকিয়ে চোখজোড়া বুজে নেয়।অতঃপর লম্বা শ্বাস ফেলে অস্থিরচিত্ত হয়ে উঠে সে’ সন্ধ্যায় চাঁদ আর অরণের সাথে কী হয়েছিলো তা জানার জন্য।চাঁদ আর অরণের অতো মেলামেশার কারণ আজ অবশেষে সে উদঘাটিত করতে পারলো।কেনো তাদের তখন প্রায়ই একসাথে দেখা যেতো।এগুলো ভেবেই তার দম ব!ন্ধ হয়ে আসতে লাগলো।কতটা ভুল সে ছিলো,কতটা অন্যায় সে তার প্রিয় দুজনের সাথে করেছে ভাবতেই শ্বাস ঘন হতে লাগলো।সবকিছুই ডায়েরীতে বর্ণিত থাকলেও শুধুমাত্র সে বিকাল হতে রাত অব্দি কোনো ঘটনাই বিবৃত নেই।প্রণয়ের মনে আশংকারা দানা বাঁধছে।সে যা ভাবতে চাচ্ছেনা বা যা ভাবা তার জন্য দুষ্কর বারংবার তাই মস্তিষ্কে উঁকি দিচ্ছে।কেনো চাঁদ পালালো?কী এমন তার সাথে হয়েছিলো যার দরুন তাকে ওভাবে পালাতে হলো?আর কেনোই বা অরণকে সে আ!ঘা!ত করলো?তবে কি সে রাতে ব!র্বর লোকেরা তাদের ধাওয়া করছিলো?চাঁদ কি ধরা পড়ে গেছিলো?অতঃপর?অতঃপর কী হয়েছিলো তার সাথে?উহ!আর ভাবতে পারলোনা প্রণয়।পাগলপ্রায় হয়ে যাচ্ছে,মরিয়া হয়ে উঠলো চাঁদের কাছে যাওয়ার জন্য।তার যে জানতেই হবে কেনো চাঁদ পালালো?তার থেকে মাইলের পর মাইল দূরে কেনো পালাতে হলো তাকে?কেবলই সে তাকে অপমান আর অবিশ্বাস করেছিলো সেজন্য?নাকি অন্য কোনো কারণ।দ্বিতীয় কারণটা প্রণয় ভেবেও যেনো ভাবতে পারছেনা,দম ব*ন্ধ ব*ন্ধ লাগছে।মাথায় অসহনীয় য!ন্ত্রণা হচ্ছে।ডায়েরীটা বন্ধ করে ফের তা আলমারিতে রেখেই সে ক্ষীপ্র গতিতে ছুটলো বাড়ির বাইরে।উদ্দেশ্য চাঁদের সাথে একটাবার দেখা করা।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
উশ্মির অবস্থা বেগতিক দেখে চাঁদ ভয় পেয়ে গেলো।সে উশ্মিকে ধরে শান্ত করতে চাইলো।কিন্তু উশ্মি তা পারছেনা।ক্রমেই তার শ্বাস ফুলে উঠছে।সবকিছু ঝাপসা দেখছে।মাথা তার ঘুরাচ্ছে।চাঁদ কী করবে বুঝতে না পেরে উশ্মিকে ধরে তার কোলে শোয়ালো।অতঃপর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,

“অস্থির হয়ো না উশ্মি।আমায় নিয়ে চিন্তা করবেনা।যা হওয়ার তা হয়েই গিয়েছে।আল্লাহ ভাগ্যে যা রেখেছিলেন তাই হয়েছে।তা নিয়ে আর আফসোস করিনা।তোমার কাছে একটাই রিকুয়েষ্ট,যত দ্রুত পারো ডি!ভোর্সের ব্যবস্থা করো।তার নামটাও নিজের নামের সাথে এক মুহুর্তের জন্য আর সহ্য করতে পারছিনা”

হঠাৎ করেই উশ্মি শোয়া থেকে উঠে বসলো।অতঃপর চোখের পানি মুছে লম্বা শ্বাস টেনে বললো,

“তোমাদের ডি!ভোর্স করাবো মানে করাবোই!এতে যদি ভাইয়ার সাথে আমার সম্পর্ক নষ্ট হয় তো হোক।তুমি ভেঙে পড়ও না ভাবি।আমরা সবাই চেষ্টা করছি”

“শোনো,আমি কিন্তু সত্যি ই ইচ্ছা করে গাড়িটা ব্রেক করতে চাইনি এমন কিছুই ছিলোনা।তোমায়তো সবটা বলেছি ই।তুমি প্লিজ আমায় এখান থেকে জলদি বের করো।যারা আমায় বাঁচিয়েছে তাদের ঋণ তো শোধ করতে পারবোনা তবে তাদের আমি বাঁচাতে চাই উশ্মি।আরেকটা কথা রিদিকে আপাতত মেডিকেলে যেতে দিও না।কেনো মানা করছি বুঝতেই তো পারছো?আগে আমি এখান থেকে বের হই।পরিস্থিতি বুঝি তারপর দেখছি কী করা যায়”

“ঠিক আছে ভাবি।তুমি টেনশন নিওনা।রিদির উপর আমি আঁচও আসতে দেবোনা”

মৃদু হেসে উশ্মির মাথায় হাত রেখে চাঁদ বলে,

“জানি।আর আমার কথাগুলো কাউ….”

চাঁদের কথা সম্পূর্ণ হবার পূর্বেই উশ্মি বলে,

“চোখের সামনে মৃ*ত্যুও এসে যদি হাজির হয় তোমার এই বিধ্বংসী সত্য আজীবন হৃদয়ে লালিত রাখবো ভাবি।কখনোও তা উন্মুক্ত হবেনা”

সবেমাত্র উশ্মি হাজত থেকে বেরিয়েছিলো আর দেখতে পায় এপ্রোণ গায়ে দেওয়া কয়েকজন ছেলে-মেয়েকে।অতঃপর সামনে যেতেই স্পষ্ট নজরে আসে প্রণয়ের বন্ধুমহলকে।জেলারের কাছে এসে মির বলে,

“মিস মুহাইমা বিনতে চাঁদের সাথে দেখা করা যাবে?”

জেলার সাথে সাথেই দাঁড়িয়ে বলেন,

“আমরাতো কোনো ডক্টর ডাকিনি স্যার”

রিহা বেশ থমথমেভাবে জবাব দেয়,

“আমরা এখানে একজন কয়েদীর সাথে দেখা করতে এসেছি”

জেলারের প্রশ্ন,

“প্রণয় স্যারের পূর্বপরিচিত আপনারা?”

এবারে মিরা জবাব দেয়,

“আমরা মিস চাঁদের পরিচিত।তার বড় ভাইবোন।দেখা করতে চাচ্ছি,কোথায় সে?”

“মিস মিস বলছেন যে?এখানে কোনো মিস চাঁদ নেই”

তখনই উশ্মি এসে জেলারের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,

“সমস্যা কোথায় আপনার?আপনি কি জানেন আমার একটা ফোনকলে আপনার চাকরী নিয়ে টানাহেঁচড়া পড়ে যাবে?”

“হুমকি দিচ্ছেন আমায়?”

জেলারের মুখপানে চেয়ে দৃঢ় কন্ঠে উশ্মি বলে,

“আমি সত্য বলতে বিশ্বাসী মিস্টার?বিশ্বকুমার রায়”

শেষের দিকে জেলারের পোশাকের বুকের কাছটায় নেমপ্লেট দেখতে দেখতেই উশ্মি জবাব দেয়।উশ্মির কন্ঠ পেয়ে তার পানে তাকিয়ে মির বলে,

“চাঁদ কোথায় উশ্মি?”

“ঐতো ঐদিকটায়।তোমরা যাও আমি বরং আসছি”

মিরা জিজ্ঞেস করে,

“জামিনের ব্যাপারে কথা হয়েছে?”

“যেই পর্যন্ত বাচ্চার বাবা-মা কেস না উঠাচ্ছে আর প্রণয় ভাইয়া কিছু না বলছে জামিন নাকি হবেনা।প্রমাণ নাকি ভাবির বিরুদ্ধে,কিছুই বুঝতে পারছিনা আমি”

মির বেশ থমথমেভাবে বলে,

“অরণের হাতে বহুবছর আগে একবার মা!র খেয়েছিলো তোমার ভাই।তাও কঠিনভাবে।এবার যদি আমার হাতে পড়ে সাবধান করছি ম*রে যাবে ও”

বেশ রুক্ষ কন্ঠে উশ্মি বলে,

“মে*রেই ফেলো!”

রিহা জিজ্ঞেস করে,

“তুমি কি কিছু করতে পারবে না?”

রিহার দিকে চেয়ে উশ্মি বলে,

“আমি চেষ্টা করছি আপু।তোমরা দুআ করও,আসছি।অনেক কাগজপত্রের কাজ বাকি”

“ঠিক আছে যাও”

উশ্মি চলে যেতেই মিরার নজর গিয়ে পড়ে হাজতের শিক দুই হাত দিয়ে ধরে দাঁড়িয়ে তাদের পানেই এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকা চাঁদের দিকে।অতঃপর দৃষ্টি মিলিত হয় দুজনের।নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকে তারা একে অপরের পানে।দৃষ্টি সিক্ত হয় মিরার।সে এগিয়ে চলে চাঁদপানে।
চাঁদের কোনো পলক পড়েনা।যখন কারো হাতের স্পর্শ নিজ হাতে পেলো তখনই সে খানিকটা নড়চড়ে শ্বাস ফেলে বললো,

“আপু!”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিরা বললো,

“তোমার এ পরিণতি আমি কস্মিনকালেও চিন্তা করিনি চাঁদ!”

বলতে বলতেই গাল বেয়ে দু’ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো মিরার।ঠোট কাম!ড়ে কান্না আটকাবার চেষ্টা চালাচ্ছে সে।কিন্তু সে বরাবরই ব্যর্থ।অতঃপর চাঁদের মুখের দিকে চেয়ে বলে,

“চেহারার এ দশা করেছো কেনো?”

চাঁদের কিছু বলার পূর্বেই মির সেখানে এসে বলে,

“তার প্রাণপ্রিয় স্বামীর বদৌলতে করেছে আবার কী?”

মিরের কথা শুনে তার পানে তাকিয়ে মৃদু হেসে চাঁদ বলে,

“কেমন আছো মিরজাফর ভাইয়া?”

গম্ভীরভাবে মির বলে,

“আমি এখানে তোমার সাথে রঙ তামাশা করতে আসিনি।তোমাকে ছাড়াতে এসেছি।প্রণয়ের বিরুদ্ধে স্টেটমেন্ট দিয়ে তোমায় নিয়ে যাবো”

বেশ গম্ভীরভাবে চাঁদ বলে,

“কারো দয়ায় বেঁচে থাকা আমার পছন্দের নয় ভাইয়া।পূর্ণ সম্মানে বেরুতে না পারলে এখানেই পঁচে গলে ম*রে গেলেও আমার আফসোস নেই”

মির ধমকে উঠে,

“জাস্ট শাট আপ”

রিহা বলে,

“এখনো সেই দাম্ভিক চাঁদই রয়ে গেছো?”

“দাম্ভিক নই আপু।সম্মানে লেগে গেলে ওটা মেনে নিতে পারবোনা”

মিরের প্রশ্ন,

“প্রণয়কে মানছো কী করে?পদে পদে হেনস্তা করে তোমায়”

চাঁদের পাল্টা প্রশ্ন,

“তোমরা কেনো করোনা?অরণতো তোমাদেরও বন্ধু ছিলো”

রিহা জবাব দেয়,

“তুমি যে অরণের সাথে জেনেবুঝে কিছু করোনি তা আমরা বেশ ভালো করেই জানি চাঁদ”

রিহার কথা শুনে মিরার পানে চেয়ে চাঁদ বলে,

“মিরাপু?মিরাপুতো বিশ্বাস করেনা।সেও প্রণয়ের মতোই ভাবে আমার জন্য অরণের এই দশা”

মিরার হঠাৎ প্রশ্ন,

“তবে তুমি কেনো বলোনা সেদিন প্রণয়ের সাথে ঝগড়ার পরে তুমি যে ছুটে গেলে অরণও তোমার পিছু গেলো।তারপরের কয়েক ঘন্টায় কী এমন ঘটে গেলো যে তোমাদের অবস্থা র*ক্তাক্ত ছিলো?অরণের মাথায় তোমায় আ!ঘা!ত করা লাগলো?এবং শেষমেশ পালিয়ে গেলে?”

ফের চাঁদের দম ব*ন্ধ হয়ে আসতে লাগলো।ঘনঘন শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে সে বললো,

“কিছু তিক্ত সত্য আড়ালেই থাকুক নাহয়?সেগুলো প্রকাশ্যে এলে বাঁচা দুষ্কর।তবে তোমায় আমি কথা দিচ্ছি।অরণও ঠিক হবে,আমার সাথে প্রণয়কেও আর দেখা লাগবেনা তোমাদের।এবং আমি যে অরণের সাথে কিছু করিনি তার প্রমাণও তোমাদের দেবো”

বলেই মিরের পানে চেয়ে বলে,

“ভাইয়া আমার একটা কথা রাখবে?”

মির ভ্রু কুচকে বলে,

“কী কথা?”

কিছুক্ষণ ভেবে চাঁদ বলে,

“না থাক কিছুনা”

বেশ একরোখাভাবে মির বলে,

“বলো?”

“আজ না অন্যদিন।সময় হোক”

মির বেশ মেজাজ দেখিয়ে বললো,

“তোমার আর তোমার বিড়াল মানবের কোনোদিনও সঠিক সময় আসবেনা,আসেনা”

চাঁদ হঠাৎ হেসে বলে,

“বিয়ে করছোনা কেন তুমি?”

চাঁদের হঠাৎ প্রশ্নে থতমত খায় মির।সে প্রসঙ্গ এড়িয়ে বলে,

“বুড়ি হয়ে যাচ্ছো অথচ ভীমরতি কমছেনা?”

কপাল কুচকে চাঁদ বলে,

“বুড়ি আমি?সিরিয়াসলি ভাইয়া?তাহলে তুমিতো বুড়োদের সর্দার”

মিরও পাল্টা কিছু বলতে নিলে চাঁদ আবারও জিজ্ঞেস করে,

“রবিন ভাইয়া কোথায়?”

চাঁদের প্রশ্নের জবাব দেয় রিহা,

“তোমার সাথে এতবড় অন্যায় করার পরেও তোমার সামনে দাড়ানোর সাহস আছে ওর?”

কথাখানা বলতে গিয়ে দৃষ্টি এলোমেলো হয়ে যায় রিহার।অতঃপর আরও পাঁচ মিনিটের মতো চাঁদের সাথে আলাপ আলোচনা করে তারা চলে আসে।ফের চাঁদ একলা হয়ে পড়ে।এবং বুক চি!ড়ে বেরিয়ে আসে এক কঠিন দীর্ঘশ্বাস!কী জীবন কী হয়ে গেলো তার?একটা ভুলের জন্য কতকিছুইনা সহ্য করা লাগলো এবং এখনো লাগছে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
চাঁদের সাথে দেখা করার পূর্বে প্রণয় ফায়ানের কাছে আসে তার কেবিনে।প্রণয়কে দেখেই কপাল কুচকে ফায়ান বলে,

“আপনার এ অবস্থা কেনো ভাইয়া?চেহারার এমন বেহাল দশা কেনো?কী হয়েছে?”

ফায়ানের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে ফায়ানের কাছে গিয়ে তার দু’হাত নিজ হাতের মুঠোয় নিয়ে তার সামনে হাটুগেরে বসে প্রণয় বলে,

“ভাই!ভাইরে তুমি গতকাল মধ্যরাতে যেই বাচ্চাটাকে আনা হয়েছে তাকে বাঁচাও প্লিজ!বাচ্চা ছেলেটাকে ম*রতে দিওনা।বাঁচিয়ে নাও প্লিজ!তার অপারেশনটা কেবল তুমিই সাকসেসফুল করতে পারবে আরফিদ”

প্রণয়ের কান্ডে হকচকিয়ে উঠে ফায়ান তাকে বসা থেকে উঠিয়ে বলে,

“কী করছেন ভাইয়া?পাগল হয়েছেন?বাচ্চাটার অপারেশন আমিই করেছিলাম এবং তাকে এখনও অবজারভেশনে রাখা হয়েছে।যদিও বাচ্চাটার প্রাণ নিয়ে কেউ আশাবাদী নয় তবে আমার বিশ্বাস বাচ্চাটার কিছু হবেনা।অমন নিষ্পাপ বাচ্চার কিছু হতে পারেনা।তবে এমন নি!র্মম এক্সিডেন্টটা করলো কে?”

ফায়ানের সকল কথাই প্রণয়ের হৃদয়ে শীতলতা ছেয়ে দিলেও শেষের কথাটা ঘনকালো মেঘে আধার করে দিতে কালবিলম্ব করলোনা।এবং সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সমস্ত কিছু ফায়ানকে বলতেই ফায়ান গর্জে উঠলো তার উপর।অনেকরকম কথা শুনিয়ে তার কলার পর্যন্ত ধরলো তবে প্রণয় টু শব্দটুকুও করলোনা।সে কেবলই শুনে গেলো সবটা।

ফায়ানের কাছে অপমানিত হয়ে প্রণয় এসেছে চাঁদের সাথে দেখা করতে,একটুখানি কথা বলতে।প্রণয় থানায় ঢুকেই জেলারের থেকে পার্মিশন না নিয়ে ক্ষীপ্র গতিতে ছুটে আসলো চাঁদের নিকট।হাজতের বাইরে থেকে তার নজরে আসলো হাজতের ভেতরে উঁচু স্থানে সটান হয়ে উপরের দিকে এক ধ্যানে পলকহীন চেয়ে শুয়ে থাকা চাঁদকে।ডান হাতটা ঝুলে আছে নিচের দিকে।বারংবার পেটটা উঠানামা করছে দ্রুত।যার অর্থ ঘনঘন শ্বাস নেওয়া হচ্ছে।চাঁদের এরূপ চিত্র দেখে বুকটা হাহাকার করে উঠলো প্রণয়ের।বুকের ভেতর জ্বলুনি শুরু হলো তার।অতঃপর হাজতের শিকগুলোয় হাত রেখে চাঁদপানে চেয়ে সে অতি বিষাদতা মিশ্রিত কন্ঠে ডেকে উঠলো,

“চন্দ্রময়ী!”

বুকের ভেতর তড়িৎ গতিতে লাফিয়ে উঠলো চাঁদের।নিশ্বাসের গতি আরও তীব্র হলো।তবে সে পলক ফেললোনা,তাকালোনা কোথাও।এক ধ্যানে সেভাবেই থাকলো।ফের শুনতে পেলো প্রণয়ের মলিন কন্ঠস্বর,

“আমি আপনার অপরাধী চাঁদ!আমায় মা!রুন,কা!টুন যাই করুন তবুও একবার আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলুন প্লিজ!হৃদয় তৃষ্ণার…..”

প্রণয়ের বাক্য সম্পন্ন হবার পূর্বেই চাঁদ সেভাবে থেকেই গর্জে উঠে,

“হৃদয় মরুভূমিতে পরিণত হয়ে পানির অভাবে ম*রে যাক!তবুও চাঁদের বিন্দুমাত্র আফসোস হবেনা।চাঁদ এক ভুল একবার করে,দুইবারও করে তবে তৃতীয় বারের ন্যায় সেই ভুল আর কস্মিনকালেও করেনা,করবেওনা।চলে যান,আমার ত্রিসীমানায়ও আপনাকে আর দেখতে চাইনা আমি”

সেভাবে থেকেই কথাগুলো বলে চোখজোড়া বুজে নিলো চাঁদ।দুইপাশের কার্নিশ বেয়ে দু’ফোটা অশ্রুবিন্দু গড়ালো তৎক্ষনাৎ।এবং তা ভিজিয়ে দিলো কানের পাশে থাকা চুলসমূহ ও ঘোমটা দেওয়া ওড়নাটাকে।এক হতাশার শ্বাস ত্যাগ করে ঝুলন্ত হাত উপরে উঠিয়ে হাজতের বাইরের দিকে পিঠ করে শুয়ে জামাটা ভালোভাবে শরীরের সাথে টেনে নিয়ে পাশে থাকা চাদরটা গায়ে জড়ালো চাঁদ।

To be continued……