আবার প্রেম হোক ২ পর্ব-২৬ এবং শেষ পর্ব

0
817

#আবার_প্রেম_হোক (২য় খন্ড)
#নুসরাত_জাহান_মিম

অন্তিম পাতা~
“আপনি কি আমায় সন্দেহ করছেন প্রণয়?”

প্রণয়ের বুকের কাছে মাথা গুজে রাখাবস্থায়ই উক্ত প্রশ্নখানা করে চাঁদ।চাঁদের ধীরকন্ঠের শীতল বাক্যে খানিকের জন্য হৃদস্পন্দন বাড়ে প্রণয়ের।অতঃপর বাহুবন্ধনে খানিক শক্ত করেই চাঁদকে আবদ্ধ করে মোলায়েমস্বরে প্রণয়ও আওড়ায়,

“আর তা কেনো?”

“আমি প্রেগন্যান্ট…..”

চাঁদকে থামিয়ে প্রণয়ই বলে,

“হিশ!প্রশ্নটা আমারও তবে আপনাকে সন্দেহ করা বেশ অযাচিত।বরং যদি এমনটা হতো,আমার মধ্যে কোনো খুঁত থাকতো তাহলে আপনায় সন্দেহ মানানসই হয়তোবা হতোও।কিন্তু এখানে বিষয়টা সম্পূর্ণ আলাদা চন্দ্র”

অতঃপর চাঁদকে বুক হতে উঠিয়ে কপালের মাঝ বরাবর গাঢ় করে চুম্বন এঁকে প্রণয় বলে,

“লিমার কাছে যাবেন?”

“ও বুঝবে?”

“রিদির ডাক্তারতো ও ই।আমরাও খানিক যেয়ে আসি?”

প্রণয়ের বিড়ালাক্ষী হতে নেত্র সরিয়ে বুকের কাছে তার দৃষ্টি মেলে মৃদুস্বরে চাঁদ আওড়ায়,

“আমাদের সত্যিই আবার বাবু হবে প্রণয়?”

চাঁদের কোমড় আলতো হাতে চেপে বুকের খানিক কাছাকাছি চাঁদকে টেনে লম্বা শ্বাস নিয়ে কানের কাছের কেশরাজিতে চুমু খেয়ে প্রণয় শুধায়,

“আগে যাই”

দুই হাতে প্রণয়কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মৃদুস্বরে চাঁদ আওড়ায়,

“হিম”

আকস্মিক হুড়মুড়িয়ে রুমের ভেতর কেউ ঢুকে পড়তেই তৎক্ষনাৎ প্রণয়কে ছাড়ে চাঁদ।চাঁদ হতে হাত সরায় প্রণয়ও।অতঃপর কপাল কুচকে দরজা পানে চাইতেই অরণ আর মিরাকে দেখে কোনোকিছু বলার পূর্বেই অরণ বলে,

“সরি ফর ইন্টারেপ্ট।কিন্তু তোর মামিকে কিছু বোঝা তো প্রণয়”

কপাল কুঞ্চিত রেখেই প্রণয় প্রশ্ন করে,

“কী বোঝাবো?”

মিরার হাত ধরে রেখেই প্রণয়ের সম্মুখে তাকে দাড় করিয়ে বিরক্তির সহিতই অরণ বলে,

“আমার এক্সিডেন্টের পর ওর ব্রেইন কি ও ভিন গ্রহে দিয়ে এসেছিলো?”

তৎক্ষণাৎ চেচায় মিরা,

“দেখেছিস?তোর বন্ধু কী বাজে বকছে?”

মৃদু ঠোট বাকিয়ে ফের তা শিথিল করে প্রণয় আওড়ায়,

“আমার একার বন্ধু?তোর বন্ধু না?”

প্রণয়ের পাশে দাঁড়িয়ে তার কাধের কাছে কপাল চেপে অরণ বলে,

“মেয়ে মানুষ বড়োই অদ্ভুত প্রণয়!”

কপাল কুচকে রেখে চাঁদ প্রশ্ন করে,

“আপনারা এক্সেক্টলি কী নিয়ে কথা বলছেন?”

চাঁদের পরপর রুক্ষ কন্ঠ ভাসে মিরারও,

“বারবার মামি,মামি কী?আমি তোর মামি লাগি প্রণয়?”

“আমার মামাকে বিয়ে করলে মামি হবিনা তুই?অ্যাজ ওয়েল অ্যাজ মিরের মামি চাঁদ”

“তো তাই বলে আমি তোর মাম…..”

বলতে বলতেই থামতে হয় মিরার।অতঃপর ভড়কানো দৃষ্টি প্রণয় পানে নিক্ষেপ করেই সে বলে,

“কা….কী বললি তুই?”

প্রণয়ের সোজাসাপটা জবাব,

“এটাই যে আর কোনো মামাতো আমার অবিবাহিত নেই।রবিন,মির দু’জনই……তো বাকি কেবল এক মামাই”

“মজা করছিস আমার সাথে?”

কপাল কুচকে প্রণয় বলে,

“কেন তুই আমার শালি?”

হকচকিয়ে প্রণয়পানে মিরা চাইতেই হতাশার শ্বাস ফেলে অরণকে উদ্দেশ্য করে প্রণয় বলে,

“এই মেয়ে তোর শোকে সত্যিই ব্রেইন ভিন গ্রহে রেখে এসেছে অরণ”

বিরক্ত হয়ে প্রণয়ের বিছানায় বসতে বসতে অরণ বলে,

“কখন থেকে পূর্ণর প্যাচাল পেরে পেরে মাথা খাচ্ছে।এই যে বলছি পূর্ণকে ভালোবাসি না,বাসি না।শুনছে কিছু?”

অরণের কথায় বন্ধুর পাশে গিয়ে বসতে বসতে গম্ভীরস্বরে প্রণয় শুধায়,

“তোদের অনুভূতি সম্পর্কে তোদের তুলনায় অত্যাধিক আমরা পর্যন্ত বুঝি আর তুই সত্যিই বুঝতে পারছিস না মিরু?নাকি বোঝার চেষ্টা করছিস না?”

গম্ভীরস্বর মিরার,

“কী বোঝার চেষ্টা করবো?এটাই যে এখন পূর্ণ জীবিত নেই বিধায়…….”

মিরার কথার মাঝেই গম্ভীর এবং উচ্চস্বর ভাসে অরণের,

“থা*পড়াবো মিরা!”

লম্বা শ্বাস ফেলে হাটুতে কনুই চেপে কপালে হাত রেখে ঈষৎ বিরক্ত হয়ে প্রণয় বলে,

“থাম।দেখ মিরা,আরও বছর আটেক পূর্বেই অরণ কনফেজড করেছে।তখন পূর্ণও জীবিত ছিলো,রিহাও ছিলো”

অতঃপর চাঁদকে ইশারা করে প্রণয় বলে,

“বোঝান তো চন্দ্র”

প্রণয়ের কথায় লম্বা শ্বাস মুখ দ্বারা নির্গত করে বিছানার অপরপাশে মিরাকে ধরে বসিয়ে তার পাশে নিজে বসে মিরার হাতদু’টো হাতের মুঠোয় নিয়ে শান্তস্বরে চাঁদ শুরু করে,

“দেখো আপু,অরণ যে কখনোই পূর্ণপুকে ভালোবাসেনি সে কথা তুমি আর অরণ ব্যতীত আমরা সকলেই জানতাম।এমনকি আমিও।অরণকে আমি সর্বদাই তোমার সাথে দেখেছি।তোমার সাথে থাকতে তার ভালোলাগে,তোমার সাথে সমস্তকিছু ভাগাভাগি করতে তার ভালোলাগে,তোমার কিছু হয়ে গেলে তার হৃদয়ে অশান্তি জাগে।তুমি না থাকলে সমস্ত কিছুই খালি খালি অনুভূত করে।যতবার আমি অরণের সাথে কথা বলেছি বেশিরভাগ সময়ই তোমায় নিয়ে গল্প জুড়ে দিতো।কখনোই পূর্ণপুকে নিয়ে এত অবসেসড আমি তাকে দেখিনি।মিরার এটা,মিরার ওটা,মিরু এই।ডাকিনী,বাঘিনী সমস্ত কিছুই তার ছিলে তুমি।প্রণয়ের পর কেবল তোমায়ই অতি ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে দেখেছে অরণ।তোমায় ছাড়া এক মুহুর্ত থাকার কথা চিন্তা করলেও তার দম বন্ধ অনুভূত হয়।এখন এটাকে যদি ভালোবাসা বলা না হয় তাহলে কী বলে আমি জানিনা।একদিন অরণকে প্রশ্ন করেছিলাম মিরাপু কি কাউকে ভালোবাসে?সে বলেছিলো ‘না’।ফের আমি জিজ্ঞেস করি ‘যদি বেসে থাকে?’ সে দৃঢ় কন্ঠে বলেছিলো ‘বাসতেই পারেনা!’ আমি যখন বারবার বললাম ‘যদি বেসেই থাকে?’ তবুও সে তার কথায়ই অটুট ছিলো ‘একদমই বাসতে পারেনা,বাসবেনা’ অর্থাৎ তুমি কাউকে ভালোবাসবে এটা মানতেই চাচ্ছিলোনা।অথচ সে জানতোও না তুমি তাকেই ভালোবাসতে।হঠাৎ আরেকদিন প্রশ্ন করেছিলাম ‘মিরাপুর বিয়েতে বেশ মজা হবে অরণ।আপনি আপুকে মিস করবেন না?’ সে কপাল কুচকে আমার দিকে এমনভাবে চেয়েছিলো যেনো বেশ অপরাধ করে ফেলেছিলাম।কয়েকদিন পর নিজে থেকেই আমায় এর উত্তর দিয়েছিলো ‘ওকে ছাড়া থাকা চিন্তাতেও আসেনা চাঁদ।ওর বিয়ে হলে নিশ্চয়ই ও আর আমায় স্মরণ করবেনা?’ অথচ তোমার বোকা অরণ তখনও বোঝেনি সে তোমায় ভালোবাসে।তোমার জন্য তার অনুভূতি ছিলো ভিন্ন।তোমার নামে কখনোও কটুক্তি সে শুনতে পারতোনা।এমনকি পূর্ণপুকে ভালোবাসার কথা বলছো যে?পূর্ণপু আর তোমার মাঝে যতবার অরণকে চুজ কর‍তে দেখেছি সর্বদা তোমায় করেছে।তোমার সম্মুখে হোক অথবা আড়ালে।পূর্ণপুকে ছাপিয়ে সর্বদা তোমায় ডিফেন্ড করেছে।এমনকি পূর্ণপুর মুখেও তোমার নামে কখনো বাজে কিছু শুনতে নারাজ।এগুলোকে যদি ভালোবাসা নাই বলে তাহলে কী বলে আপু?অরণের হয়তো পূর্ণপুকে ভালোলাগতো,সেই ভালোলাগার দরুনই ভেবে বসেছে তাকে সে ভালোবাসে।কিন্তু ভালো আসলে তোমায়ই বাসতো।তোমার প্রতি যেই অনুভূতিটা অরণের ছিলো সেটা পূর্ণপুর জন্য কস্মিনকালেও ছিলোনা।আমি বা প্রণয় অন্তত তা দেখিনি।প্রণয়তো অরণের বেস্ট ফ্রেন্ড,সবচাইতে বেশি তাকে সে ই চেনে।প্রণয় নিজেও মানে অরণ কেবল তোমায়ই ভালোবেসেছে,শুধু স্বীকারটুকু করেনি অথবা বোঝার চেষ্টা করেনি।এসব কিন্তু অরণ বা প্রণয় আমায় বলেনি।আমি নিজেই তোমাদের সাথে থেকে উপলব্ধি করেছি।পরবর্তীতে অরণ নিজেই আমায় তোমার ব্যাপারে বলেছে।তার প্রতি তোমার অনুভূতিগুলো ধরা পড়ে গিয়েছিলো,নিজের অনুভূতিও বুঝতে সক্ষম হয়েছিলো কিন্তু তোমায় জানানোর পূর্বেই বেশ অনেক দুর্ঘটনাই জীবনে ঘটে গিয়েছে।কোমা থেকে বেরিয়েও তোমায় জানাতে চেয়েছিলো তবে অপেক্ষারত ছিলো তুমি নিজেই তোমার অনুভূতিগুলো স্বীকার করো কিনা।তবে তুমিতো করছিলেনা।সমস্তকিছু অরণ আমায় আর প্রণয়কে একসাথেই বলেছে।সে কখনোই পূর্ণপুকে ভালোবাসেনি আপু।সর্বদা তোমায়ই ভালোবেসেছে তবে বুঝতে দেরি করেছিলো।তুমিও একই কাজ ফের করছো।সময় থাকতে সব গুছিয়ে নাও।তোমার মানুষটাকে তোমার নিকটই আবদ্ধ করো”

চাঁদের কথা শেষ হতে না হতেই মিরার নজর যায় দরজা দিয়ে বের হওয়া অরণপানে।অতঃপর প্রণয়ের দিকে চাইতেই প্রণয় বলে,

“কী দেখছিস?দ্রুত যা”

প্রণয়ের বাক্য শেষ হতে না হতেই ছুট লাগায় মিরা অরণপানে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
“আপনার অতীতে কী হয়েছে আমি জানতে চেয়েছি?”

“একবার বলেছি না আপনার অতীতে আমি ইন্টারেস্টেড না?”

“অতীত আপনার চুলোয় যাক,আমি বর্তমান চৈত্রকে চিনি এবং তাকেই চিনতে চাই”

“আপনার জীবনে কে ছিলো কে ছিলো না জানিনা,জানার ইচ্ছেও নেই।হয়তো আপনার প্রথম আমি নাই হতে পারি।তবে আপনার শেষটা কেবল আমিই থেকে যেতে চাই”

“আপনি আমার হন অথবা না হন,রুবার প্রথম এবং শেষ পুরুষ সর্বদা আপনিই থেকে যাবেন”

“আপনি আমার কৈশোরকালের ভুল নন।আপনি আমার হৃদয়ে গাঁথা অলেখিত সুন্দরতম এক স্মৃতি”

“আমি হতে দূরত্ব নাহয় বাড়ালেনই,হৃদয়ে থাকা আপনিটার কী করবো মিস্টার চৈত্র?”

“বয়স?বয়সে কী আসে যায়?তাছাড়া আপনাকে দেখলে কেউ বলবেই না আপনি থার্টি প্লাসও হবেন!”

“ডোন্ট লুক লাইক দিজ।আপনার ঐ আঁখিদ্বয় হৃদয় ছি*ন্নভিন্ন করে দেয় চৈত্রসোনা।আ’ম গোয়িং টু ডায় ফর শিওর!”

“একটা মানুষ এতটা কাতিলানা কী করে হয় বলতে পারেন?আপনার চোখের দিকে তাকালেই আমি একবার করে ম*রে যাই চৈত্র!”

“ফের বয়সের প্যাচাল পারছেন?আপনি কি জানেন আমি কত প্লাস?আমি টুয়েন্টি ওয়ান প্লাস!বিয়ের বয়স হয়ে আরও তিন বছর এক্সট্রা হয়ে গেছে।তখন বিয়ে করলে এই তিন বছরে আমাদের দু’টো বাচ্চাও হয়ে যেতো।আসছে আমি নাকি বাচ্চা!”

“চাঁদ ভাবি আমার থেকে ছয় বছরের বড়।আপনি ভাবির থেকে আরও ছয় বছরের বড়।সো দেখা যাচ্ছে আপনি আমার……ও!এটা কোনো বিষয়ই না!মানুষতো পনেরো বিশ বছরের বড় ছেলেও বিয়ে করে হোয়াটস দ্যা বিগ ডিল?আর আপনি!আপনাকে দেখলে আমি সেখানেই ম*রে যাই বাকিরা তো ম*রে টরে ভুত হবেই।আপনি মাত্রাতিরিক্ত ইয়াং,থামেন তো!”

“থার্টি থ্রি প্লাস?এহ!আপনি টুয়েন্টি নাইনের বেশি হবেনই না।একদম বাজে বকবেন না।ওয়েইট,গুনছি!ইম……ইম…..তা…তো তাতে কী?বয়স,অতীত এসবে রুবার কিচ্ছু আসে যায়না।মন আপনাকে দিয়েছি মানে আপনাকেই দিয়েছি!এই মন আর ফেরত নেবোনা”

_____________________________

“বিয়ে যেহেতু করেছি ভা!র্জিন থাকার কিন্তু কথা না মিস রুবা”

“তো আপনি এটা দিয়ে কী বোঝাতে চাচ্ছেন?”

“এটাই যে আপনার আর আমার মাঝে কোনোকিছু আদোতেও সম্ভব না”

“আপনি ভা!র্জিনিটি দিয়ে কী বোঝাচ্ছেন মিস্টার চৈত্র?”

“ততটাও কিন্তু অবুঝ আপনি নন।এক কথায়,আপনাকে ভালোবাসা আমার পক্ষে সম্ভব না।আপনি অনেক ভালো কিছু ডিজার্ভ করেন মিস রুবা।মরিচিকার পেছনে দৌড়িয়ে শুধু শুধু নিজের এবং আমার দু’জনেরই সময় অপচয় করছেন”

লম্বা শ্বাস টেনে বেঞ্চের পেছনে হেলান দিয়ে আকাশপানে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রুবা বলে,

“একজন বিবাহিত পুরুষ ভা!র্জিন থাকবেনা এটাই স্বাভাবিক।এখানে অস্বাভাবিকের কিছুই দেখছিনা।তাছাড়া আপনাকে আমি শুরুতেও বলেছি,এখনো বলছি।আপনি অতীতে কী ছিলেন,কী করেছেন তাতে আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই।বর্তমানের আপনাকেই আমি….ইম আর আমি কী ডিজার্ভ করি কী ডিজার্ভ করিনা সেটা অবশ্যই আপনার থেকে জেনে নেবোনা”

রুবার দৃঢ় কন্ঠে ঘাড় বাকিয়ে তার পানে খানিক চেয়ে ফের দৃষ্টি সরিয়ে চৈত্র বলে,

“হঠাৎ করেই ম্যাচিওর হয়ে যাচ্ছেন মনে হচ্ছে?”

“ম্যাচিওর কতটুকু জানিনা তবে আপনার ক্ষেত্রে ইমম্যাচিওরিটির মাত্রা হয়তোবা সত্যিই আমি ছাড়িয়ে ফেলেছি।এবং তা কেবলমাত্র আপনার ক্ষেত্রেই।কোনো পুরুষেই রুবা কখনো ইন্টারেস্টেড ছিলোনা,তবে আপনি আমার সাজানো দুনিয়া পুরো ওলোট পালোট করে দিয়েছেন”

চৈত্রের সোজাসাপ্টা জবাব,

“আপনি স্বেচ্ছায় তা উল্টে,পাল্টিয়েছেন”

চৈত্রের কথায় তৎক্ষণাৎ বাকা চোখে চায় রুবা।অতঃপর শুনতে পায় চৈত্রের গম্ভীর কন্ঠস্বর,

“এখন যেহেতু আমার স্ত্রী সম্পর্কে সবই জানেন।তাই আমার মনে হয়না একজন বিবাহিত ছেলের পেছনে ঘোরাটা আপনার মানায়।তাছাড়া এও কিন্তু সত্যি আপনার পাশে একটা ডিভোর্সী ছেলে কখনোই যায় না”

মৃদু হেসে রুবা বলে,

“প্রথমত সে আপনার স্ত্রী নয়,প্রাক্তন স্ত্রী।তাই আপনি এখন বিবাহিতও নন।যেহেতু আমায় পছন্দও করেন না,করার কথাও না।তবে একটা প্রশ্ন ছিলো মনে,করবো?”

“জ্বি”

চৈত্রপানে পলকহীন চেয়ে রুবা বলে,

“এখনো ভালোবাসেন তাকে?খুব বেশি পরিমাণে কি?”

লম্বা শ্বাস টেনে চৈত্র জবাব দেয়,

“বাসি”

“সে আপনায় ধো*কা দিয়েছে তবুও বাসবেন?”

“আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি,তার সম্পর্কে নিজ মুখেই আপনাকে জানাচ্ছি।আপনাকে না চাইতেও হয়তো কষ্ট দিচ্ছি তবুও আপনি কি বাসছেন না?”

চৈত্রের কথায় দৃষ্টি স্থির হয় রুবার দূর ঘাসপানে।অতঃপর ফের কানে ভাসে চৈত্রের ধীরকন্ঠ,

“ভালোবাসা এমনই রুবা”

লম্বা শ্বাস মুখ দ্বারা নির্গত করে ধীরস্বরে রুবা প্রশ্ন করে,

“একবার কি তাকে দেখানো যাবে?”

রুবার প্রশ্নানুযায়ী কিয়ৎক্ষণ চুপ থেকে পকেট হতে মোবাইল বের করে ড্রাইভে গিয়ে ‘বউ’ লিখিত একটা ফোল্ডারে ঢোকে চৈত্র।আর রুবা কেবলই আড়চোখে সে পানে চেয়ে থাকে।ফোল্ডারের নাম দেখে হঠাৎ করেই বুকের ভেতর দহন যন্ত্রণা সে অনুভব করলো।স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেশিই যেনো যাতনা সেথায় অনুভূত হচ্ছে।হৃদপিন্ডটা তার হঠাৎ করেই চূর্ণ হলো,শব্দহীন বোধহয় ভেঙেই গেলো?অতঃপর তার সম্মুখে যখন মোবাইল মেলে ধরা হলো সযত্নে তা আগলে নিলো রুবা।বেশ নিখুঁতভাবেই দেখতে লাগলো চৈত্রের রূপন্তিকা তথা তার প্রাক্তন স্ত্রী রূপার প্রতিচ্ছবিসমূহ।হঠাৎ করেই রুবার হিংসে জন্মালো।মেয়েটা তার জীবনে নেই অথচ স্বার্থহীন এতটা ভালো তাকে কেনো বাসে লোকটা?একটুখানি রুবাকে বাসলে খুব কি ক্ষ*তি হতো?অতঃপর লম্বা শ্বাস টেনে রুবা বলে,

“আপনার সাথে তার ছবি নেই?”

রুবার পানে দৃষ্টি স্থির করে চৈত্র প্রশ্ন করে,

“কষ্ট হবে না?”

রুবা হতে কোনো জবাব না আসায় মোবাইল ফের হাতে নেয় চৈত্র।অতঃপর অন্য ফোল্ডারে গিয়ে তার আর রূপার একসঙ্গে কাটানো মুহুর্তের বেশকিছু হাস্যোজ্জ্বল ছবিই রুবাকে দেখানোর জন্য ফোন এগিয়ে দেয়।রুবাও সন্তপর্ণে তা হাতে নেয়।এবং ধীরসহিত তিন-চারটার ন্যায় ছবি দেখেই চৈত্রকে ফোন ফেরত দেয়।অতঃপর দৃষ্টি নত রেখেই শুধায়,

“আমি আপনাকে ভালোবাসি মিস্টার চৈত্র”

বলার পরপরই প্রস্থান নেয় সে জায়গা।ধীরপায়ে এগিয়ে যায় সম্মুখপানে।আর চৈত্রের নজর আটকায় তার ফোনের স্ক্রিণে পড়ে থাকা একফোটা পানির উপস্থিতিতে।তৎক্ষণাৎ কর্ণগোচর হয় রুবার উক্ত বাক্যখানাও।এবং দ্রুতই সে আঁখি তুলে রুবার পানে চাইতেই নজরাবন্দী হয় রুবার দূর হতে দূরান্তে চলে যাওয়ার দৃশ্যখানা।অতঃপর আর কখনো রুবার সাথে তার দেখা হয়নি।রুবাও কখনো চেষ্টা করেনি আর না সে কখনো করেছে।রুবার প্রসঙ্গ আসলে সূক্ষ্মভাবেই তা এড়িয়ে যায় চৈত্র।আজ ফের মিন্টুরোড দিয়ে হাটার সময় রুবার প্রতিটা বাচ্চামো তার স্মরণে আসে,স্মৃতিপটে ভেসে উঠে রুবার মাত্রাহীন পাগলামিসমূহও।তাকে বলা প্রতিটা বাক্য চৈত্রের স্মরণে আছে।খানিক পাগলামি মিশ্রিত থাকলেও অনুভূতিসমূহ ছিলো প্রখর।অতঃপর আনমনেই হাসে চৈত্র।এই মিন্টুরোডেই রুবার সহিত তার বেশিরভাগ স্মৃতি।প্রায়শই আসা পড়ে আজকাল।কেনো আসে চৈত্র?এর উত্তর আদোতে তার নিকট আছেও কি?হাটার গতি ধীর করে সেথাকারই এক গাছের সনে হেলান দিয়ে পকেট হতে ফোন বের করে চৈত্র।অতঃপর ড্রাইভে গিয়ে একটা ফোল্ডারে ঢুকে শাড়ি পরা এক মেয়ের লজ্জামিশ্রিত হাসি পানে দৃষ্টি স্থির করে সে।বুক চি*ড়ে দীর্ঘশ্বাস বের হওয়ার পূর্বেই ঠোটে মৃদু হাসির রেশ টেনে মনে মনে চৈত্র শুধায়,

“আপনি বড্ড বোকা রুবা,পালিয়ে গেছেন”

অতঃপর দৃষ্টি সেথায় স্থির রেখেই ফের ফিসফিসায়,

“মন যে দিয়ে গেলেন,আর তো ফেরত নিলেন না?”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
লিমার কেবিনে তারই সম্মুখে বসে আছে চাঁদ আর প্রণয়।মুখশ্রীজুড়ে চাঁদের চিন্তার রেশ।প্রণয় খানিক গম্ভীর।চাঁদের রিপোর্ট দেখতে দেখতেই লিমা বলে,

“হ্যা ঠিকই তো আছে।আপু প্রেগন্যান্ট,সমস্যা কোথায়?”

“কিন্তু লিমা আমি….”

বলতে গিয়েও হকচকায় চাঁদ।অতঃপর দৃষ্টি কাচের ডেস্কপানে রেখে গম্ভীরস্বরে প্রণয় আওড়ায়,

“প্রায় মাস এগারো পূর্বে চাঁদের মিসক্যারেজ হয়েছিলো।হয়তো তোমার জানা”

“জ্বি ভাইয়া,শুনেছিলাম”

“মিসক্যারেজের পর অপারেশনের সময়ই তার গর্ভাশয় ফে*লে দেওয়া হয়েছিলো”

“হ্যা,আর সেটা পূর্ণতা আপুর কথা মোতাবেকই”

কপাল কুচকে চাঁদ প্রশ্ন করে,

“তুমি কী করে?”

“তোমার অপারেশনের সময় আমিও ছিলাম”

প্রণয়ের শীতল গম্ভীরস্বর,

“অহেতুক ঠাট্টা অপছন্দের লিমা”

প্রণয়পানে চেয়ে লিমা বলে,

“ঠাট্টা কোথায় করছি ভাইয়া?”

“শুরুতেই বলেছো চাঁদ প্রেগন্যান্ট”

“হ্যা আপুতো প্রেগন্যান্টই,রিপোর্টও তাই বলছে”

“গর্ভাশয় ফে*লে দেয়ার পরেও প্রেগন্যান্ট হওয়া যায় বলে আদোতে কোনো বইতে এখনও পর্যন্ত আমাদের পড়া হয়নি”

প্রণয়ের গম্ভীরস্বরে প্রণয় পানে চেয়ে চাঁদ বলে,

“একটু প্রণয়!”

অতঃপর লিমার কাছে প্রশ্ন করে,

“গর্ভাশয় ফে*লে দিলে আমি প্রেগন্যান্ট হই কী করে লিমা?এই মুহুর্তে নিশ্চয়ই তুমি মজা করবেনা”

“আমি মজা করছিনা আপু।তুমি প্রেগন্যান্ট বিষয়টা কতটুকু সঠিক জানিনা।আমি আরেকবার টেস্ট করাবো।তবে তোমাদের যা জানা প্রয়োজন তা হচ্ছে সেদিন তোমার গর্ভাশয় ফে*লা হয়নি।পূর্ণতা আপু বাকি ডাক্তারদের বলেছিলো ঠিকই।তবে আমি এবং আমার দুইজন কলিগ এমনটা করিনি।করার কোনো কারণও দেখিনি।মিসক্যারেজ তোমার অবশ্যই হয়েছিলো।কিন্তু বাচ্চাতো জীবিতই ছিলোনা।যদি বেঁচে থাকতো এবং তখন মিসক্যারেজটা হতো তাহলে বেশ জটিলতা হয়তো দেখা দিতোও।কিন্তু যেহেতু বিশেষ কোনো প্রবলেম হয়নি তাই গর্ভাশয় ফে*লবোও কেনো?তাও আবার পরিবারের কারো পার্মিশন ব্যতীত।মানলাম পূর্ণতা আপু প্রণয় ভাইয়ার ফ্রেন্ড তার মানেতো এই না যে সে তোমার জীবনের এত বড় ডিসিশন নিয়ে ফেলতে পারবে।আর আমি যে সেখানে ছিলাম এ খবরও পূর্ণতা আপু জানতোনা।তার অজান্তেই তোমার অপারেশনটা করা হয়েছিলো।এবং বলা হয়েছিলো গর্ভাশয় ফে*লে দেওয়া হয়েছে।অথচ পূর্ণতা আপু জানতোনা এরকম কিছুই করা হয়নি।কিন্তু পূর্ণতা আপু তোমার সাথে এমনটা কেনো করতে চেয়েছিলো?”

লিমার প্রতিটা কথা শ্বাস থেমে শোনে চাঁদ।বুকের ভেতর থাকা হৃদযন্ত্রটা মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে তার।আঁখিজোড়া সিক্ত।অতঃপর আটকাতে আটকাতেই লম্বা শ্বাস ফেলে কামিজের একপাশ খা!মচে ধরে চাঁদ।চাঁদের অবস্থা অবলোকন করে চাঁদের কম্পিত হাতখানা চেপে ধরে প্রণয়ও।তার অবস্থাও যে খুব একটা স্থির তেমন নয়।হৃদস্পন্দন তারও দ্রুত হয়েছে।নিজেকে সামলে চাঁদের হাত ধরে রাখাবস্থায়ই প্রণয় লিমাকে প্রশ্ন করে,

“আর ইউ শিওর?”

“জ্বি ভাইয়া,আমার কাছে অপারেশন জড়িত প্রায় অনেককিছুই আছে।এমনকি আমি যে সেখানে উপস্থিত ছিলাম সেই প্রমাণস্বরূপ কিছু ডকুমেন্টও আছে।চাঁদ আপুর ঝামেলাহীন অপারেশন হয়েছিলো,বিশেষ কোনো প্রবলেম হয়নি।আপনি দেখবেন সেগুলো?”

“হা….হ্যা প্লিজ!”

অতঃপর চাঁদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে তাকে বসা হতে উঠিয়ে আগলে নিতেই প্রণয়ের বুকের কাছে শক্ত করে চেপে ধরে চাঁদ।এখনো শরীর তার কাপছে,হৃদপিন্ডের তীব্র গতিতে উঠানামা স্পষ্ট টের পাচ্ছে প্রণয়।নিজ অর্ধাঙ্গিনীকে আরেকটু শক্ত করে একহাতে বুকের কাছে চেপে রেখে অপরহাতে রিপোর্টসমূহ দেখতে দেখতেই চোখের কোন সিক্ত হয় মৃদু।বিড়ালাক্ষীজোড়া বদ্ধ করতেই পানিসমূহ ভেতরেই শুষে যায় এবং প্রণয় লম্বা শ্বাস ফেলে দুই হাতেই চাঁদকে বুকের মাঝে আগলে ধরে বলে,

“আমরা….আমরা আবারও প্যারেন্টস হবো চন্দ্র!”

প্রণয়ের কথায় হৃদস্পন্দনের গতি আরও জোরালো হয় চাঁদের।প্রণয়ের ক্ষেত্রেও এক।প্রণয়কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতেই আঁখি হতে বর্ষণ ঝড়ে চাঁদের।চাঁদকে বুক হতে সরাতে চাইলে চাঁদ আষ্টেপৃষ্টেই জড়িয়ে রাখে প্রণয়কে।মৃদু ঠোট বাকিয়ে সেভাবেই চাঁদকে আগলে রেখে কোলে তুলে প্রণয়।অতঃপর ধীরস্বরে বলে,

“কিছু টেস্ট করিয়ে যেতে হবে চন্দ্র,আসুন”

লজ্জায় প্রণয়ের বুকের কাছেই মুখ গুজে রাখে চাঁদ।ভুলেও সেথা হতে আঁখি আর তোলেনি সে।আর লিমা তাদের পানে চেয়ে থেকে কেবলই মুচকি হাসে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
মাস তিনেক পরের কথা,
পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা চাঁদ।ফের মাতৃত্বের স্বাদ সে সাদরে গ্রহণ করেছে।জীবনে এখন সর্বসুখী কেবল সে ই।প্রণয় এবং তার অংশ ফের গর্ভে ধারণ করে বেশিরভাগ সময়ই সৃষ্টিকর্তার নিকট শুকরিয়া জ্ঞাপন করে অশ্রু বর্ষণ করে চাঁদ।জীবনে বহুকিছু খোয়ালেও ফের মা হওয়ার অনুভূতি যেনো সেসব বেদনাদায়ক স্মৃতিসমূহকে ছাপিয়ে তুলেছে।প্রণয় নামক তার শুদ্ধ পুরুষটা সত্যিই শুদ্ধতায় মোড়ানো আস্ত এক প্রেমের বাগান তার।যেই বাগানে সে তার প্রণয়েরই লালগোলাপ হয়ে আজন্ম হৃদয়ে থেকে যেতে চায়।এই একটা মানুষ সর্বদা তার থাকুক,কেবলই তার থাকুক!প্রণয়কে নিয়ে ধ্যানমগ্ন থেকে হঠাৎ ই চোখ লেগে আসে চাঁদের।বর্তমানে তার সময় কেবলই শুয়ে,বসে কাটে।বাচ্চা পেটে আসার মাস তিনেক হতে না হতেই প্রণয় চাঁদকে ছুটিতে বসায়।রুম হতে ওয়াশরুম,ওয়াশরুম হতে রুম এই পর্যন্তই তার যাওয়া আসা।এর বাইরে কোথাও প্রণয় তাকে যেতে দেয়না।যেদিন থেকে শিওর হয়েছে চাঁদ প্রেগন্যান্ট সেদিনই নিচতলায় শিফট হয়েছে তারা।চাঁদের খাওয়া দাওয়া হতে শুরু করে ওয়াশরুম পর্যন্ত যাওয়া সকল বিষয়াদি সযত্নে প্রণয়ই দেখছে।এবার আর কোনো ত্রুটি না রাখার দরুনই প্রণয়ের হৃদয় সর্বদা উষ্ণ থাকে।ছোটখাটো ভুলও তার নজরে বিশাল কিছু।গম্ভীর স্বভাবের প্রণয়ের মাঝে সেন্সেটিভ সত্তাও যে বিদ্যমান,চাঁদের দ্বিতীয়বার প্রেগন্যান্সির দরুন সকলের নজরে তা দৃশ্যমান হয়।মাঝে মাঝে তাদের মনে হয় কেবলমাত্র এই এক মেয়ের নিকটই প্রণয়ের একাধিক সত্তা নতুনভাবে উন্মুক্ত হয়।এই এক মেয়েকে ভালোবেসে সত্যিই প্রণয় ‘প্রেম’ নামক শব্দটাকে স্বার্থক করেছে।

ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে চাঁদকে ঘুমন্তবস্থায় দেখে তার পাশে দাঁড়িয়ে কিয়ৎক্ষণ চাঁদপানে চেয়ে হঠাৎ ই চাঁদের অধরজোড়ায় ঠোট ছোয়ায় প্রণয়।অতঃপর চাঁদের কিঞ্চিৎ ফোলা পেটে চুমু খেয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,

“দ্রুত আসো সোনা,বাবা অপেক্ষারত”

___________________________

হাসপাতাল থেকে কলেজে যাওয়ার পথে ক্যাম্পাসে ফায়ানকে নজরে আসে প্রণয়ের।একা একাই বসে কী যেনো বিড়বিড়াচ্ছে সে।ঈষৎ কপাল কুচকে তার পানে এগোয় প্রণয়।অতঃপর পাশে বসে মৃদু কেশে ধীরকন্ঠে শুধায়,

“কী ভাবছো আরফিদ?”

হঠাৎ কারো কন্ঠ কর্ণগোচর হতেই পাশ ফিরে তাকায় ফায়ান।অতঃপর প্রণয়কে দেখে মৃদু হেসে বলে,

“তেমন কিছু না ভাইয়া।কেমন আছেন আপনি?”

“আলহামদুলিল্লাহ”

খানিক চুপ থেকে এদিক ওদিক চাইতেই প্রণয় হতে আর কোনো বাক্য কর্ণকুহর হয়না ফায়ানের।অতঃপর ইতস্তত করতে কর‍তে মৌনতা সে ই ভাঙে,

“চাঁদ কেমন আছে ভাইয়া?”

“প্রশ্নখানা করতে এত সময় নিলে?ভাবলাম সাথে সাথেই করবে”

“না মানে”

“চাঁদ,বাবু দু’জনই আলহামদুলিল্লাহ।তবে তুমি হয়তো দু’হাজার আট এই আটকে আছো”

কপাল কুচকে ফায়ান বলে,

“এমনটা কেনো?”

“নিজেই ভেবে দেখো”

প্রণয়ের কথায় কিয়ৎক্ষণ চুপ থেকে ধ্যানমগ্ন হয় ফায়ান।অতঃপর উক্ত কথার অর্থ বুঝতে সক্ষম হয়ে বলে,

“এমন কিছু না ভাইয়া”

“এমনটাই”

প্রণয়ের কথার প্রেক্ষিতে আর কোনো কথা বলেনা ফায়ান।কিয়ৎক্ষণ নীরবতায় সময় কাটলে কানে ভাসে প্রণয়ের গম্ভীরস্বর,

“এখনো ভালোবাসো চাঁদকে?”

প্রণয়ের কথায় তৎক্ষণাৎ তার পানে চায় ফায়ান।অতঃপর দৃষ্টি নত করে মৌন রয়।ফায়ানের মৌনতার দরুন লম্বা শ্বাস টেনে প্রণয়ই ফের বলে,

“জীবন এভাবে হয়তো থেমে থাকেনা আরফিদ”

হঠাৎ শীতলস্বর ভাসে ফায়ানেরও,

“এখানে বসে স্মৃতিচারণ করছিলাম কিছু বিশেষ এবং অতি সুন্দরতম মুহুর্তের”

অতঃপর গম্ভীরস্বরে বলে,

“তাকে ভালোবাসা আমার নিত্যদিনকার রুটিন।হয়তো সে আপনারই,তবে তার প্রতি রাখা অনুভূতিসমূহ হতে আড়াল আপনি আমায় রাখতে পারেন না।আমি জানি আপনি তা করবেনও না”

“তবে চাঁদ নামক ঐ চন্দ্রময়ী কেবলই প্রণয়ের,কেবলই প্রণয়ের।তার প্রতি অনুভূতি রাখাও তোমার অনুচিত”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
বাড়ি ফিরে হলরুমে নিজ বন্ধুমহলকে দেখে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতেই প্রণয় বলে,

“হঠাৎ একসাথে হানা দিয়েছিস?”

রবিন হাই তুলতে তুলতে বলে,

“বিয়ের পর পর সবাই বিজি হয়ে গেছি তাই ভাবলাম কয়েকদিনের জন্য ফের একসাথে হই”

রবিনের কথা শেষ হতে না হতেই মিরার খোচাপূর্ণ বাক্য ভাসে কানে,

“বিজি তুমি একাই হয়েছো,আমরা হইনি”

কপাল কুচকে রবিন বলে,

“তুমি বিজি হবাও কী করে?প্রেমিকরূপে বন্ধুকে পেয়েছো না?”

বাকা চোখে রবিন পানে চেয়ে অরণ বলে,

“কীসের প্রেমিক?বউ হয় আমার”

“দেখেছিস মির?কীভাবে পল্টি খাচ্ছে?”

কপাল কুচকে মির বলে,

“পল্টি কীসের?মিথ্যে কোথায় বলছে?”

ঠোট চেপে অরণ বলে,

“আমারই শা*লার কাছে আমার নামে বদনাম করিস?”

আড়চোখে অরণের পানে চেয়ে মির বলে,

“বেশি শা*লা গিরি করবিনা।তোর বোনকেতো আর বিয়ে করতে পারলাম না।সুদূর রাঙামাটি চলে গিয়েছে।কেনো পাহাড়িদের সাথে নাচানাচি করবে?সাথে করে আমার শা*লিটাকেও নিয়ে গেছে।এদিকে আর ফিরেও তাকালো না!বেস্টফ্রেন্ডের বাচ্চা হয়ে বড়ও হয়ে যাচ্ছে অথচ আসার নামগন্ধ নেই”

মিরের বাহুতে চাপড় মেরে মিরা বলে,

“রিদি ভাবির কাছে বিচার দেবো?আমার ননদের দিকে নজর দিচ্ছিস তুই”

ঠোট উল্টে মির বলে,

“তোর ননদের দিকে নজর দিতে যাবে কে?আমার বউ কম সুন্দর নাকি?”

“তোরা নাটক করতে থাক।ঐদিকে বান্দা এসে বউয়ের কাছে চলেও গিয়েছে”

বলতে বলতে নিজেও উঠে দাঁড়ায় রবিন।অতঃপর তার পিছু নেয় বাকি সকলে।প্রণয়ের রুমের কাছে আসতেই দরজা পানে প্রণয়কে কপাল কুচকে চেয়ে থাকতে দেখে ঠোট টিপে মির বলে,

“কী মামা?বউ তো তোমার অন্যের দখলে”

মিরের কথায় গম্ভীর দৃষ্টি তার পানে প্রণয় রাখতেই হকচকায় মির,

“খেয়ে ফেলবি নাকি?ভেতরে যা”

অতঃপর প্রণয়কে ঠেলেঠুলেই ভেতরে আসে সবাই।

বন্ধুবান্ধবের সাথে কিছু সুন্দরতম মুহুর্ত স্মৃতি রেখে ধীরপায়ে নিজ কামড়ায় এগিয়ে আসে প্রণয়।অতঃপর বিছানার উপর কিয়ৎক্ষণ বসে গম্ভীরভাবেই হেটে আসে আলমারির নিকট।এবং সেথা হতে একটা ফটোফ্রেম বের করে হাত ছোয়ায় তাতে।কিয়ৎক্ষণ সে পানে চেয়ে থাকতেই বুক ভার হয় প্রণয়ের।অতঃপর পেছন হতে কেউ তার পেটের কাছে দু’হাতে আলিঙ্গন করতেই ঠোটের কোন কিঞ্চিৎ বাকা হয়।এবং নিজেও চাঁদের হাতে হাত রাখে প্রণয়।হাতের উপর প্রণয়ের শীতল ছোয়া অনুভব হতেই বাহুবন্ধন শক্ত করে ধীরকন্ঠে চাঁদ আওড়ায়,

“রিহাপুদের কথা মনে পড়ছে প্রণয়?”

দৃঢ় এবং গম্ভীরস্বর প্রণয়ের,

“কেবলই রিহার”

অতঃপর প্রণয়কে ছেড়ে তার পাশে দাঁড়িয়ে ফটোফ্রেমের দিকে চাইতেই চাঁদের নজরে আসে কলেজ ড্রেসে আবৃত জন সাতেক ছেলে মেয়ের হাস্যোজ্জ্বল ফ্রেমবন্দী এক ছবি অর্থাৎ প্রণয়সহ তার বন্ধুমহল।মৃদু দীর্ঘশ্বাস চাঁদও ফেলে।চাঁদের দীর্ঘশ্বাস প্রণয়ের কর্ণগোচর হতেই ফের আলমারিতে ফটোফ্রেম রেখে চাঁদকে আকস্মিকই কোলে তুলে প্রণয়।প্রণয়ের কান্ডে হকচকায় চাঁদ।অতঃপর বলে,

“কা…..কী করছেন প্রণয়?”

“হৃদযন্ত্রে ফুটে উঠা লালগোলাপের লজ্জারাঙা মুখশ্রী আঁখি সম্মুখ ভাসলেই বারংবার অবচেতন মন বেহায়া হয় চন্দ্রময়ী”

প্রণয়ের কথায় মাত্রাতিরিক্ত লজ্জায় সত্যিই লালরাঙা হয় চাঁদ।অতঃপর প্রণয়ের বুকের কাছে মুখ গুজে রাখলে সাবধানতার সহিত বুকে আগলে চাঁদকে কোলে রেখেই বারান্দা সম্মুখে হাজির হয় প্রণয়।অতঃপর খানিক ভেতর দিকে যেতেই চাঁদকে নামায় সে।নামিয়ে চাঁদের দুই বাহুর পাশ দিয়েই নিজ বাহুদ্বয় গ্রিলের কাছে রেখে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে চাঁদকে।অতঃপর চাঁদের কাধের কাছে থুতনী রেখে গালের কাছে কানের পাশে ঠোটের আলতো স্পর্শ এঁকে ফিসফিসায় প্রণয়,

“আপনার সাথেই বারবার প্রণয়ের প্রেম হোক।প্রেমে মজে বারংবার প্রণয় ক্ষুন্ন হোক,তবুও আপনার সনেই কেবল তার প্রেম হোক চন্দ্রময়ী”

সমাপ্ত…..