আমার একলা আকাশ তোমায় জুড়ে পর্ব-১৪

0
235

#আমার_একলা_আকাশ_তোমায়_জুড়ে
#১৪তম_পর্ব

এদিকে অন্নার কান রক্তিম বর্ণ ধারণ করলো। সর্বদা মানুষের সুপ্ত মূহুর্তেই কেনো সে সেখানে উপস্থিত থাকে! তবে রবিন ভাই এর সাহসিকতায় সে খুব অনুপ্রাণিত। একটু সাহস কি তার ও করা উচিত। কথাটা ভাবতেই পা বাড়লো সামনের দিকে। এদিকে কলার খোসার ন্যায় শাড়ির তলটা আবারো পায়ের নিচে বাধলো। অমনি হুমড়ি খেয়ে পড়তে গেলো অন্না। কিন্তু এবার আর মাটির সাথে মোলাকাত হলো না। কারণ তার পূর্বেই এক জোড়া হাত তার কোমড় জড়িয়ে ধরলো। তীক্ষ্ণ স্বরে বলল,
“চোখ জোড়া খুলে আঁচলে বেধে রাখ”

কন্ঠটি কানে আসতেই তড়িৎ গতিতে মুখ তুললো অন্না। মুখখানা তুলতেই অর্জুনের শ্যাম কঠিন মুখশ্রী চোখের সম্মুখে ভেসে উঠলো। তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি অন্নাকে পরখ করে দেখছে যেনো। অন্নার হাত পা আবারো অসাড় হতে লাগলো। হৃদয়টা যেনো বক্ষস্থল থেকে লাফিয়ে বেরিয়ে যাবার উপক্রম চালাচ্ছে। গলা শুকাতে লাগলো। মুখশ্রী থেকে চোখ সরাতেই চোখ আটকালো অর্জুনের পাঞ্জাবীর খোলা বোতামটার দিকে। খোলা বিধায় বুকের কিঞ্চিত অংশ দেখা যাচ্ছে। ফলে অর্জুনের লোমশ বুকের দর্শন মিললো অন্নার। কোমল গালে রক্ত জমতে লাগলো নিমিষেই। অর্জুনের গা থেকে একটি মিষ্টি গন্ধ নাকে আসছে, গন্ধটিতে যেনো মিশে আছে অসীম মাদকতা। আচ্ছা, এটা কোন পারফিউমের গন্ধ? নাকি এটা অর্জুনদার নিজস্বতা। কিশোরী হৃদয়ের নানা অবান্তর চিন্তা পাগলপ্রায় করে দিচ্ছে যেনো অন্নাকে। সকল কল্পনা, চিন্তা ভো দৌড় দিলো যখন আবারো অর্জুনের কড়া স্বর কানে এলো,
“খিঁজ খেয়ে পড়ে আছিস কি জন্য? আমার বুকে কি আর্যপদের উপন্যাস লেখা নাকি যে হা করে গিলছিস!”

অর্জুনের কথাটা কানে যেতেই সম্বিত ফিরলো। লজ্জা, অস্বস্তিতে চুপসে গেলো অন্না। তড়িৎ গতিতে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো সে। বিব্রতবোধ হচ্ছে; গলার কাছে কথাগুলো এসে আটকে আছে, বের হতে চাইছে না। ঈশ! কি লজ্জা! না জানি অর্জুনদা তাকে কতো বড়ো বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ ভাবছে, যে কিনা ছেলেদের বুকের দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। অন্নার অস্বস্তি আরোও বাড়লো যখন অর্জুন তার দৃষ্টির তীক্ষ্ণ বাড়ালো। এই অস্বস্তি নিবারণের একটি ই উপায় এখান থেকে পালানো। নয়তো অর্জুনদার প্রশ্নের বানে আজ নাস্তানাবুদ হতে হবে। অন্না পালানোর চেষ্টা করলো ঠিকই কিন্তু সেটা সফল হলো না, তার ছুট দেবার আগেই অর্জুন তার হাত টেনে ধরলো। হিনহিনে স্বরে বললো,
“সকাল থেকে দেখছি পালিয়ে বেড়াচ্ছিস, কি সমস্যা? আমি কি বাঘ না ভাল্লুক যে গি’লে খাব?”
“হাত ছাড়ো”
“উত্তর দে, হাত ছেড়ে দিচ্ছি”
“কেনো? উত্তর না পেলে কি তোমার পৃথিবী ভেঙ্গে যাবে? নাকি সাগর জলশূন্য হবে? নাকি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে? নাকি তুমি নাওয়া খাওয়া ছেড়ে সন্ন্যাসী হবে? তুমি ই তো চাচ্ছিলে যেনো এই অন্না তোমার পথ না মারায়, তাই করছি। তাহলে এতো আপত্তি কেনো?”

হাত ছাড়াতে ছাড়াতে গরগর করে বলল অন্না। কিন্তু তাতে খুব যে লাভ হলো তা নয়, অর্জুনের হাতের বাধন বরং আরোও শক্ত হলো। অন্না অধৈর্য্য হয়ে বললো,
“অর্জুনদা হাত ছাড়”
“না ছাড়লে?”
“লোক ডাকবো কিন্তু”
“ডাক, আমিও বলবো তুই কি করেছিস! তারপর লোক কি বিচার করে সেটাও শুনে নিবো”
“কি করেছি আমি?”

হতবিহ্বল কন্ঠে অন্না শুধালো। অন্নাকে আরেকটু কাছে টেনে চোখে চোখ রেখে ধীর কন্ঠে বললো,
“সুযোগ পেলেই আমার ফুলের মতো পবিত্র ইজ্জতে হানা দিস, আমার বড় বড় কথা? লোকে জানলে কোথায় মুখ দেখাবো!”
“বাজে কথা বলবে না অর্জুনদা”

অন্না চোখ রাঙ্গিয়ে কথাটা বললো। কিন্তু এতে খুব একটা যায় আসলো না অর্জুনের। সে অসহায় কন্ঠে বললো,
“হ্যা, হ্যা, এখন তো আমি বাজে বকেছি। কই অসহায় জ্বরে বেহুশ ব্যক্তির ফয়দা তোলার সময় তো মনে ছিলো না তোর”

কথাটা শুনতেই জমে গেলো অন্নার। বিস্ফারিত নয়নে অর্জুনের দিকে তাকালো সে। ভেবেছিলো অর্জুন সব ভুলে গিয়েছে, জ্বরের ঘোরের কথা মানুষের মনে না থাকাটা আশ্চর্য নয়। কিন্তু কিসের কি! আমতা আমতা করে বললো,
“তোমার মনে আছে?”
“আমার কি তোর মতো ব্রেইন নষ্ট? ভুলে যাওয়া রোগ আছে? আমার সব মনে আছে, কিভাবে আমার ঘরে ঢুকে তুই আমাকে”

এবার অর্জুন থেমে গেলো। এদিকে অন্না বিমূঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অর্জুনের পানে। লোকটা এমনভাবে কথা বলছে যেনো অন্না অন্না নয় বরং বাংলা সিনেমার কুখ্যাত ভিলেন মিশা সওদাগর। অন্নার রাগ হলো, প্রচন্ড রাগ। ইচ্ছে করলো অর্জুনদার কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো টেনে তাকে টেকো করে দিতে। রাগে ফুসতে ফুসতে বললো,
“অর্জুনদা, ভালো হচ্ছে না কিন্তু। তুমি তো মানুষ ভালো না, নিজের দোষ আমার ঘাড়ে দিয়ে দিচ্ছো। আমি কি করেছি? করেছো তো তুমি। তুমি ই আমাকে”
“কি তোকে?”

অন্নার চোখে দৃষ্টি আবদ্ধ রেখে প্রশ্নটি করলো অর্জুন। অন্নার হৃদস্পন্দন বাড়তে লাগলো পুনরায়, শিরদাঁড়া বেয়ে রক্তের স্রোত থামলো। অর্জুনের প্রগাঢ় নয়নের মাদকতা সামলাতে পারলো না কিশোরী। কোনো মতে হাতটি ছাড়িয়েই ছুট দিলো অন্দরমহলের দিকে। অর্জুন সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো। চেয়ে রইলো অন্নার যাবার পানে। অন্না যখন মিলিয়ে গেলো, তখন মাথা তুলে কৃষ্ণ আকাশের দিকে চাইলো সে। আকাশে এক ফালি রুপালি চাঁদের দেখা মিললো। সাথে সাথে হাসি ফুটে উঠলো তার শুষ্ক ঠোঁটে। আনমনে গুনগুন করলো,
“আমার একলা আকাশ থমকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে
শুধু তোমায় ভালোবেসে”………

******

ফুলের সাজানো বাসরে কৃষ্ণাকে বসালো অন্না এবং মীরজাফরের দল। সোনার গহনা খুলে তার বদনে উঠেছে ফুলের গহনা। কৃষ্ণা নিজে তাকে সাজিয়েছে। ননদিনী এবং বৌদির খাতির ই আলাদা। সাজানোর সময় অন্নার ঈষৎ রক্তিম গাল দেখে কৃষ্ণা শুধালো,
“শুনলাম তোমার নাকি শরীর ভালো নেই, আমার বিয়ের রাত থেকেই তুমি ঘরে দ্বার দিয়েছো। কাহিনী কি ননদিনী?”
“কই নাতো? কি হবে কাহিনী?”

অন্না আমতা আমতা করে বললো। কৃষ্ণা ঠোঁট চেপে বললো,
“তাহলে অর্জুনকাথা হয় নি? কাকীমা বলেছিলো অর্জুনদাকে দেখে আসার পর থেকেই তোমার এই হাল। আজও বাগানের অদিকে তো তার সাথেই ছিলে। তাই ভাবলাম কিছু হলো বুঝি। যাক মনের ভুল সব”
“বৌদি”

কৃষ্ণার কথায় লজ্জায় কুকড়ে উঠলো কিশোরী। অন্নার লজ্জায় রাঙ্গা মুখখানা দেখে হেসে উঠলো কৃষ্ণা। হাসি থামিয়ে বললো,
“কি বৌদি, ভালোবাসা কি লুকাবার জিনিস। যখন ভালোই বাসতে পেরেছো তাহলে এতো লুকোচুরি কেনো ননদিনী!”
“ভালোবাসা না ছাই, আমি আর অর্জুনদা এক সাথে যায়? কোথায় সে আর কই আমি?”
“যাবে না কেনো? আমার ননদিনী কম কিসে?”
“তোমার ননদিনী যে ফেলু”
“সে তো কলেজ টপার পড়িয়ে টরিয়ে নিবে”
“তোমার ননদিনী যে বাঁচাল”
“সে কম কথা বলে পুষিয়ে নিবে”
“সে যে হেমনলিনীকে ভালোবাসে”
“তুমি যে সে নও বুঝলে কি করে”
“যদি স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়? সব যদি মরিচীকা নয়? ভাঙ্গা জিনিস যে জুড়ে না, জুড়লেও তাতে নিখুঁত হয় না। দাগ যে থাকে গো বৌদি”

অন্না কাতর স্বরে বললো। কৃষ্ণা নিঃশব্দে হাসলো, তারপর ধীর স্বরে বললো,
“এতো ভয় নিয়ে ভালোবাসা যে যায় না ননদিনী। যখন ভালোবেসেই ফেলেছো, সব ভয়, দ্বিধা ছেড়ে ভালোবাসো। মাস্টারমশাই কে প্রেমের আহ্বানটি আগে আমি দিয়েছিলাম জানো। তখন আমি তোমার মতোই কিশোরী ছিলাম। ভয় হচ্ছিলো, হৃদয় ভাঙ্গার তিক্ত ভয়। কিন্তু কি জানো এই অনুভুতির জোয়ারটা বুকের ভেতর দম বন্ধ হয়ে মা’রা যাবে এই ভয়টা আরোও গাঢ় ছিলো। হৃদয়ভঙ্গনের চেয়ে প্রণয় ফুলটি নিজ পায়ে পিষে ফেলার ভয়টি বেশি ভয়ংকর। একবার সাহস করে দেখো, অনুভূতিগুলো জাহির করেই দেখো। এই দমবন্ধ অনুভূতিগুলো আর থাকবে না”

অন্না উত্তর দিলো না। কৃষ্ণা ধীর স্বরে বললো,
“একটু সাহস করেই দেখো ননদিনী। আমার মনে হয় না হিতে বিপরীত হবে। কারণ আগুন যে একপাশে জ্বলছে তা কিন্তু নয়”

*****

দেবব্রতের ঘরটি খুব বড় নয়, তবে গোছানো। একটি ঝুলন্ত বারান্দা রয়েছে। পুরোনো বাড়ি বলে, বারান্দাটি মাটি থেকে বেশ উচু। কৃষ্ণা সেখানেই যেয়ে দাঁড়ালো। নিগূঢ় আকাশে কমলার কোয়ার ন্যায় চাঁদ। কৃ্ষ্ণা মুগ্ধ নয়নে চাঁদ দেখতে ব্যাস্ত। তখন ই এক জোড়া শীতল হাতের পরশ পেলো উদরে। কেঁপে উঠলো কৃষ্ণা। পেছনে না ফিরেও বুঝতে পারলো মানুষটি কে। দেবব্রত তখন কানে মুখ ঠেকিয়ে বললো,
“ভয় পাস নি? আমি ভাবলাম চুপি চুপি এসে চমকে দিবো”
“আমি তোমার অস্তিত্ব বুঝি মাস্টারমশাই”
“তোর মুখে দেবব্রত টি কি কখনো শুনতে পাবো না? আমার যে বড় সাধ”

কৃষ্ণা তার দিকে ফিরলো। চোখ তুলতে পারছে না। আড়ষ্ট কন্ঠে বলল,
“স্বামীর নাম যে নিতে হয় না, পাপ হয়”
“আমি সেই পাপ নিজ ঘাড়ে নিয়ে নিবো। আজ ফিরিয়ে দিস না কৃষ্ণা”

রুক্ষ হাতে মুখখানা তুললো দেবব্রত। কৃষ্ণা লাজুক নয়নে তাকালো। এই চাহনীতে যে মরতেও দ্বিধা নেই দেবের। কাতর স্বরে বললো,
“আজও ফিরিয়ে দিবি?”
“তোমায় ফিরাবার যে জো নেই আমার দেবব্রত”

লাজুক স্বরে কথাখানা বললো কৃষ্ণা। কৃষ্ণার মুখে নিজের নাম শুনে হৃদস্পন্দনের গতি বেসামাল হলো দেবের। মৃদু বাতাসে কাঁপছে কৃষ্ণার পাতলা ঠোঁট। অবাদ্ধ ইচ্ছে ডানা মেললো। আজ নিজেকে উজার করতে মন চাইছে, আজ বিলীন হতে মন চাইছে। এই কৃষ্ণাবতী যে তার, একান্ত তার_______

****

অন্নার অবস্থা আক্কেলগুড়ুম হবার যোগাঢ় অর্জুনের। আজ যে সকল প্রশ্নের উত্তর সঠিক দিয়েছে। একটা অংক ও ভুল করে নি। মনে হচ্ছে প্রয়াত কোনো হিসাববিজ্ঞানী যেনো এসে ভর করেছে অন্নার দেহে। অর্জুন হা করে তাকে আর তার খাতা দেখছে। অবাক স্বরে বললো,
“এই অংক কি তুই ই করলি?”
“না আমার ঠাকুরদা এসে করে গেছে, এই তোমার সম্মুখেই তো করলাম। চোখে ন্যাবা হয়েছে?”
“আসলেই, বিশ্বাস হচ্ছে না। অন্না ভুল করে নি, এ কি বিশ্বাসযোগ্য? এবার তাহলে পাশ করবি বল?”
“তা আর বলতে? আচ্ছা অর্জুনদা আগামী সোমবার আমার জন্মদিন আমাকে কি দিবে?”
“কি চাই তোর?”

অন্না অনেকক্ষণ ভেবে একটি খাম এগিয়ে দিলো। অর্জুন খামটা খুলতে গেলেই অন্না বাঁধা দিয়ে বললো,
“জন্মদিনের বিকেলে খুলবে, আমি যা চাই এখানে আছে”
“খসাবার মতলব নাকি?”
“একটু তো বটেই”

অর্জুন শুকনো ঢোক গিললো। মেয়েটির বিশ্বাস নেই। আসলেই খসাতে পারে। অন্না মিটিমিটি হাসলো। এই হাসি লুকিয়ে আছে হাজারো কাব্যের সূচনা_______

******

আজ অন্নার জন্মদিন, মন্দিরের পেছনের সবুজ ঘাসে পা এলিয়ে বসে আছে কিশোরী। পরনে সাদা শাড়ী, অর্জুনের যে বড্ড প্রিয় এই রঙ। যে খামটি দিয়েছিলো তা নিশ্চয়ই অর্জুনদা খুলেছে। খামে একখানা চিঠি রয়েছে। সে চিঠিটা অন্নার প্রথম প্রেমপত্র। চিঠি লিখতে কিশোরীর কম কষ্ট হয় নি। কত কত পৃষ্ঠা উজার করে চিঠি লিখেছে।

প্রিয় অর্জুনদা,
যদিও তুমি আমার প্রিয় নও তবুও প্রিয় বলছি। কারণ এই কিশোরীর অবুঝ হৃদয়ের এক কোনে যে প্রণয়ফুলটি রয়েছে তার খুব প্রিয় তুমি। তোমাকে নিয়ে এই চিঠিটি লিখেছি অনেক কষ্টে, হ্যা আমার কষ্ট হয়েছে। কারন এই জং ধরা নষ্ট হৃদয়ের কথাগুলো সাজাতে যে আমি অক্ষম। আমি কবি নই, আমি সাহিত্যিক নই। তবুও আমি তোমাকে নিয়ে হাজারো কবিতা লিখতে পারি। জানো অর্জুনদা, যেবার তোমায় প্রথম দেখেছিলাম সেবারই এই হৃদয়টা তোমাতে হারিয়েছিলাম। তোমার চশমার ফাঁকে ওই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ঝরছিলো বিরক্তি। অথচ আমার মনে হচ্ছিলো আমি এই বিরক্তিতেই আমার প্রাপ্তি। তোমার একটি বই চুরি গেছিলো মনে আছে, চোরটি আমি ছিলাম। কারণ তোমাকে প্রায় ই দেখতাম বারান্দার কর্ণিশে বসে ওই বই এ ঘন্টার পর ঘন্টা কাটাতে। আমার কৌতুহল হতো কি আছে এতে, যে তোমার পড়তেই হবে? আমাকে পড় না কখনো। সেবার যখন নৌকাডুবিতে তোমার কবিতাটা পড়লাম খুব কষ্ট হয়েছিলো। তোমাকে হারাবার কষ্ট, আপন শূন্য হবার কষ্ট। অবুঝ মনটা কাল্পনিক চরিত্রকেও হিংসে করে বসলো। আমি তোমার চোখে নিজের সর্বনাশ দেখছি। একটু একটু করে নিজেকে হারাচ্ছি। তুমি কি জানো অর্জুনদা তুমি সত্যি বিধ্বংসী! তবুও বিধ্বস্ত আমি তোমার মাঝেই বাঁচতে চাই। আমি হেমনলিনী নই অর্জুনদা, তবে আমার রমেশরুপে তোমাকেই চাই। আমি কবি নই তবুও বলবো,
“ তোমার ওই শ্যাম মুখশ্রীতে কি এমন আছে যুবক?
আমার একলা থাকা দুপুরজুড়ে তোমার ছবি ভাসে!
তোমার শান্ত চোখের আগ্নেয়গিরিতে আমার ডুবে মরতে ইচ্ছে করে।
একটুখানি প্রেম দিবে?
আমার শীতল জলের তৃষ্ণা মেটাবার।
তুমি ওমন গোমরামুখো কেন?
কত রাত পুড়িয়েছি সে খবর কি জানো!
তুমি আসলেই, হিসেবের পাট চুকাতাম,
তোমায় নিয়ে একটা মিষ্টি ভোর কাটাতাম।
তুমি ঠিক শিউলী ফুলের মতই শুভ্র,
তোমার শুভ্রতার আকাশে-আমার একলা আকাশ থাকে তোমায়জুড়ে।
সঙ্গী হবে?
একলা আকাশ, একলা আমির।
আমার রোদ্র, দুপুর, মেঘলা, সাজের;
সঙ্গী হবে অঙ্ক পাঠের?” [জান্নাতুল মিতু]

অন্না তাকিয়ে আছে অচিন দিগন্তে। অপেক্ষা অর্জুনদার…………

চলবে