আমার চন্দ্রাবতী পর্ব-২৬

0
777

#আমার_চন্দ্রাবতী
লেখিকা- সালসাবিল সারা

২৬.
দুআর নির্বিকার দৃষ্টি মারিয়ার মুঠোফোনে।মিনিট বিশেক অতিবাহিত হলো তার প্রেমিক পুরুষের সমেত আলাপের।দুআর মনে ভাবনার সূর্য উদয় হয়।মন বলে,লোকটা দূরে নয়;তার খুবই নিকটে আছে।নাহলে, ফোনের কথায় এতো জীবন্ত ভাব থাকে?মেয়েটা মাথা ঝুঁকিয়ে নানান কথা ভেবে যায়।আজ মনটা বড্ড ব্যাকুল।বারংবার মনে উকি দেয়,আজ অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু হবে।ড্রেসিং টেবিলের পানে দৃষ্টি জ্ঞাপন করলো দুআ।মারিয়া এখনো প্রসাধনী ব্যবহারে ব্যস্ত।
ইয়াদের সাথে কথা শেষে দুআ নাম মাত্র কাপড় পরিবর্তন করলো।নেত্রযুগল আবৃত করেছিল কাজল দ্বারা।তবে সেটার স্থায়ীকাল ছিলো খুবই কম।বিছানায় বসে মারিয়ার মুঠোফোন নিতেই পুনরায় আবেগী মেয়েটার আঁখি ভিজে একাকার।আর সেই অশ্রুজলে কাজল লেপ্টে আছে নেত্রে।তবে মেয়েটার এই ব্যাপারে কোনো মাথা ব্যথা নেই।তার একটাই চাওয়া,প্রেমিক পুরুষ যেনো এইবার জলদি ফিরে আসে।মারিয়ার মুঠোফোনটা নেওয়ারও একটা উদ্দেশ্য আছে,যদি লোকটা আবারও ফোন দেয়?

–“চাঁদ আপু,আমি নিচে যায়।মানুষ কমলেই তোমাকে নিতে আসবো আমি।”
দুআ ঘাড় কাত করলো।মাথা ব্যথার বাহানায় রুমে থাকতে ইচ্ছে করলো মেয়েটার।যেখানে তার মনের অবস্থা বেগতিক,সেখানে এতো মানুষের ভিড়ে মিথ্যা হাসি দ্বারা মানুষের মনোরঞ্জন করতে নারাজ দুআ,
–“আচ্ছা।রামিসা এলে তাকে এই রুমে পাঠিয়ে দিও।”
মারিয়া এসে থামলো দুআর সম্মুখে,
–“ওকে,পাঠিয়ে দিবো।লেপ্টানো কাজল ঠিক করো,চাঁদ আপু।”
মারিয়ার কথায় দুআ বৃদ্ধা আঙ্গুল ছোঁয়ালো বাম আঁখিতে।হালকা ঘষা মাজা করতেই দুআ জবাব দিলো,
–“ঠিক করে নিবো।নিচে যাও,সবাই অপেক্ষা করছে।”
দুআ মুঠোফোন মারিয়ার হাতে দিলো সযত্নে।মারিয়া কক্ষ ত্যাগ করতেই আঁখিজোড়া বুজঁলো দুআ।

অপেক্ষা জিনিসটা খুবই খারাপ,মহাখারাপ।একেকটা সেকেন্ড যেনো গায়ে জ্বালা সৃষ্টি করছে।তৃষ্ণার্ত মনটা প্রেমিক পুরুষের স্পর্শের জন্য বড্ড আনচান করছে এই ক্ষণে।দুআ মনে মনে স্থির করলো,এইবার ইয়াদ এলে তাকে আর যেতেই দিবে না।মেয়েটার ভাবনার মাঝে অবাক কান্ড হলো।হঠাৎই দরজার নব খোলার ব্যস্ততা তার দৃষ্টিতে আবদ্ধ। অপর পাশের মানুষটা দরজার নব ঘুরিয়ে যাচ্ছে।এক সেকেন্ড,দুই সেকেন্ড,তিন সেকেন্ডের মধ্যেই দরজা খুললো।
লম্বাটে মানুষটার অবয়ব নিজ আঁখির সম্মুখে এলেও বিশ্বাস করতে নারাজ মেয়েটা।এটা কি স্বপ্ন?নাকি বাস্তব?নাকি মরীচিকা?এই মরীচিকা স্পর্শ করলেই হাওয়া হয়ে যাবে? তিন-চার বার পিটপিট নেত্র পল্লবের নাচ শেষ।নাহ,অবয়বটা নড়ছে না,সরছে না,বরং সামনের দিকে এগিয়ে আসছে।শরীরটায় অন্যরকম অনুভূতি সৃষ্ট।মেয়েটা কাঁপছে। এতমাসের অপেক্ষার অবসানে এতো তৃপ্তি?কখনো মেয়েটা চাতক পাখির ন্যায় কারো জন্যেই অপেক্ষা করেনি।এই অপেক্ষা দুআর নিকট নবীন।
সূক্ষ্ম কণ্ঠে মানবটার বাক্য দুআর কর্ণ গহ্বরে যেতেই উঠে দাঁড়ালো মেয়েটা।

–“চন্দ্র!কেমন আছো?”

মানুষটার অবয়ব সম্মুখে আসার পূর্বে দুআ নিজেই পায়ের গতি বাড়ালো।হামলে পড়লো প্রেমিক পুরুষের প্রশস্থ বুকে।খামচে ধরলো প্রেমিকের কালো রঙের সুন্দর শার্টখানা।এই বুঝি মেয়েটার নখ বিধঁলো মানবটার পিঠে!
প্রেয়সীর কোমরে হাত রাখলো ইয়াদ। অপর হাতে মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছে বেশ আহ্লাদে।মেয়েটা তার বক্ষস্থলে ফুপিয়ে অশ্রু বিসর্জন করছে।কিয়ৎ বাদে দুআর পিঠে ধীরে হাত বুলালো ইয়াদ।উদ্দেশ্য, মেয়েটা যেনো একটু শান্ত হয়!

–“এখনো কাঁদবে?এমন করলে আবার চলে যাবো।”
বক্ষস্থলে আবদ্ধ অবস্থায় মাথা নাড়িয়ে “না” জানালো মেয়েটা।ইয়াদ হাসলো।প্রশান্তির হাসি।

প্রেয়সীর তপ্ত নিঃশ্বাসে ইয়াদের মন ব্যাকুল।বুকের মধ্যকারে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় তার বেগ বৃদ্ধি করছে। বাহুডোরের বন্ধন খানিক দৃঢ় করলো সে।দুআ ফুঁপিয়ে যাচ্ছে।নরম হাতে মেয়েটার মাথা তুললো নিজের বক্ষদেশ থেকে।মেয়েটা আঁখি বুঁজে কাদঁছে এখন।ইয়াদ বৃদ্ধাঙ্গুল সমেত মুখে লেপ্টে থাকা অশ্রুজল সরালো।আবারও সেথায় ভিড় করলো প্রেয়সীর অশ্রু।

–“এইভাবে কাদঁছো কেনো? এসেছি তো।”
ইয়াদ দুই হাত ছোঁয়ালো প্রেয়সীর গালে।
–“আর যাবেন না।”
দুআ আঁখি জোড়া মেললো।প্রেমিক পুরুষ তার পানে ঝুঁকে আছে।তার অধরে সেই প্রত্যাশিত হাসিটা।দুআর মন শান্ত হলো।লোকটা অবশেষে তার নিকট ধরা দিয়েছে।
–“না গেলে সবাই আমাকে গণধোলাই দিবে।তবে,তুমি যদি চাও;তোমাকে বিয়ে করে নিয়ে আসি আমি?এরপর আমার সাথেই থাকবে,যেখানে যাবো সেখানেই নিয়ে যাবো।কি বলো?”
লজ্জায় কুঁকড়ে উঠলো মেয়েটা।ইয়াদ হাসলো সশব্দে,
–“লজ্জা পেয়ে লাভ নেই।আমি ডিসিশন নিয়ে ফেলেছি।”
–“কিসের?”
দুআর ভ্রু কুচঁকানো প্রশ্নাত্মক মুখভঙ্গিতে আটকে গেলো প্রেমিক।বৃদ্ধা আঙ্গুল মুখশ্রীর উপরিভাগে বিচরণ করে ইয়াদ জবাব দিলো,
–“সময়ে টের পাবে।”
দুআ উপর নিচ মাথা দোলালো কেবল।ইয়াদ শব্দ করে অধর ছুঁয়েছে দুআর ললাটে,
–“তোমায় এমন মায়াবী হতে কে বলেছে?দুচোখে সেদিন প্রশান্তির ঘুম নামবে,যেদিন আমার পাশে বুকের মধ্যিখানে তোমার অস্তিত্বের টের পাবো আমি।”

লজ্জায় নুয়ে থাকা দুআ, লাজ সংবরণ করতে অন্য আলোচনায় মত্ত হওয়ার চেষ্টা করলো,
–“আপনি কখন এসেছেন?”
–“লজ্জা পাচ্ছো চন্দ্র? এইভাবে লজ্জায় নুয়ে থেকো না আমার মনে নিষিদ্ধ ইচ্ছের বিচরণ হচ্ছে।”
ইয়াদ পুনরায় নিজের সন্নিকটে আনলো প্রেয়সীকে।প্রেয়সীর তিরতির কম্পন ইয়াদের হৃদয়কে ক্ষ’ত বিক্ষ’ত করতে ব্যস্ত।নজর ঘোরালো ছেলেটা।মনটা তার সংযত করা দরকার।নিষ্পলক দুআর শুভ্র মুখশ্রী পর্যবেক্ষণ করে পরক্ষণে দুআর হাত তুলে সেথায় অধর স্পর্শ করলো প্রেমিক।ফিচেল কণ্ঠে বলল,
–“চুড়ি পড়েছো,চন্দ্র!বড্ড মানিয়েছে।”
–“আপনি দিয়েছিলেন।মনে আছে?”
ইয়াদ হাসলো।মাথা দুলিয়ে বলে,
–“আছে।কিন্তু কেমন চুড়ি দিয়েছি মনে নেই।”
ইয়াদের কথায় দুআ নিজেও হাসলো নিঃশব্দে।খেলোয়াড় প্রেমিকের তৃষ্ণার্ত নজর প্রেয়সীর সারা সত্তায় নিবদ্ধ।

–“ইয়াদ,আছো রুমে?”
সাজ্জাদ সাহেব দরজায় টোকা দিয়ে রুমে প্রবেশ করলেন।দুআ ভড়কালো,হচকালো।অনুশোচনায় আঁখি ভিজে এলো মেয়েটার।এখন কি বড় একখান লড়াই বাজবে?
দুআ নিজের হাত মুক্ত করতে চাইলো ইয়াদের শক্ত হাতের বাঁধন থেকে।বিনিময়ে ইয়াদ তার হাতের বাঁধন আরো কঠোর করলো।
সাজ্জাদের চাহনী করুণ।পাশে উপস্থিত ডালিয়া হেসে বললো,
–“দেখা দিতে না দিতেই মেয়েটাকে কাঁদিয়েছো আব্বা?”
–“নাহ,আম্মি।”

–“হাতটা ছাড়ুন,প্লিজ।”
দুআর স্বর অতি সূক্ষ্ম।ইয়াদ ব্যতীত কেউ শুনেনি।বাম পাশে কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে দাঁড়ানো,দুআর পানে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই মেয়েটা চুপ করে গেলো। দুআর মতে,ইয়াদের চাহনীও কথা বলে।

–“এই সেই মেয়ে যাকে ভালবেসেছো?”
সাজ্জাদ যেনো তাচ্ছিল্য করে বললো।

–“ভালোবাসি।”
ইয়াদের সোজা জবাব।

সাজ্জাদ কিছু বললেন না।তবে মনে মনে কিছু একটার পরিকল্পনা করলো যেনো ঠিকই।গ্রামের মেয়ে তার পুত্রবধূ হবে ব্যাপারটা মানতে নারাজ সে।এছাড়াও দুআর পরিবার ভালো,পয়সাওয়ালা হলেও সাজ্জাদের ভালো লাগলো না ব্যাপারটা।বেশকিছুক্ষণ ভেবে সে বললো,
–“দেখা যাক কি হয়!”
সাজ্জাদ চলে যাচ্ছেন।তবে ইয়াদের পা থেমে রইলেও মুখ থামলো না,
–“ভালো করে দেখো বাবা।এই মেয়েই তোমাকে রোজ সকালে চা বানিয়ে দিবে,তোমার পুত্রবধূর অধিকারে।”

–“ইয়াদু,নিচে আসো।মারিয়াকে পাঠালে দুআ মাকে নিয়ে যাবে সে।”
ডালিয়া কথাটা বলে কামরা ত্যাগ করলো।

–“বাবার সাথে এইভাবে কথা বলে?”
দুআর প্রশ্নে ইয়াদ মেয়েটার পানে তাকালো।সহজ সরল মেয়েটা জানেও না,তার বাবা কি বুঝিয়ে গিয়েছেন নিজ কথায়।জানলে হয়তো,মেয়েটা ইয়াদের বাহুডোরে আবদ্ধ অবস্থায় পুনরায় অশ্রু খেলায় মেতে উঠতো!
–“আমি এমনই।”
ইয়াদের সাবলীল ভাষা।

–“হু।বুঝেছি।”
–“কি বুঝেছো?”
ইয়াদ প্রশ্ন করলো।
–“কিছুই না।”
দুআ নিচের ঠোঁট উপরের পাটির দাঁতের সাহায্যে চেপে বললো।

–“তোমার লিপস আর দাঁত যদি আমার হয়,ব্যাপারটা তারপর সুন্দর হবে।এইভাবে কামড়াচ্ছো কেনো?আমি এখনো ভদ্র আছি আর আমাকে ভদ্র থাকতে দাও।”
পায়ের নিচে মাটি অনুভব করতে পারছে না দুআ।এই মুহূর্তে ইয়াদের বলা কয়েক বাক্য দুআর শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার জন্যে যথেষ্ট।জ্বলজ্বল করছে তার সম্পুর্ণ তনু।লোকটাকে না দেখে দহনে পুড়েছিলো সে।আর এই মুহূর্তে লোকটার এমন সব বাক্যে,দুআ যেনো পুড়ে ছারখার হলো নিমিষেই।

——————————
রামিসা এবং তার পরিবার আসলো দুপুরের শেষ ভাগে।রাস্তায় প্রচুর ট্র্যাফিক ছিলো এটাই দেরীতে আসার মুখ্য কারণ।দুআ,রামিসা,মারিয়া সকলেই নিচে একপাশে বসে রইলো।দুপুরের খাবার খেতে বড্ড অনীহা দেখাচ্ছে তিনজনই।আলোচনায় মশগুল দুআ থমকে গেলো সেই তিক্ত অতীতের মানুষটাকে দেখে।দুআ ভীত।রামিসার হাত চেপে সে ভাসা কণ্ঠে বলল,
–“ই..ইশফাক?”
–“ঐ ফাকের বাচ্চা এইখানে কিভাবে?”
দুআর আঙ্গুলের ইশারায় রামিসা সেদিকে দৃষ্টি জ্ঞাপন করতেই অবাক হলো বেশ,
–“মারু, ঐ ইশফাক এইখানে কেনো?”
–“আত্মীয় হয়।মা দাওয়াত করেছিলো।”
মারিয়া বললো।
–“শা’লা যদি আজ কিছু করে,ইয়াদ ভাইকে দিয়ে উত্তম মধ্যম চলাবো তার।”
রামিসার কণ্ঠ রাগী তবে দুআর মনে আতঙ্ক ছেয়ে আছে।লোকটাকে তার বড্ড ভয় হয়।

দূরে দুআর মতো অবয়ব ঠাহর করে চমকালো ইশফাক।মেয়েটা এইখানে?কি করছে, কার সাথে এলো? সবটাই এলোমেলো লাগছে তার।জিয়াকে খুঁজে বের করলো সে ভিড়ের মাঝে।এদিক সেদিক কথা না ঘুরিয়ে সে প্রশ্ন করলো,
–“দুআ মেয়েটা এইখানে কেনো?”
–“আমাদের কাছের আত্মীয়।চিনো নাকি?”
জিয়া প্রশ্ন করলো উল্টো।
–“মেয়েটাকে আমার ভালোলাগে।কোনো ভাবে লাইন করিয়ে দেওয়া যাবে?”
জিয়া মাথা দোলালো দুই প্রান্তে,
–“আমার ভাই মে’রে দিবে তোমাকে।দুআ আমার ভাইয়ের জন্যে ফিক্সড। ভুলেও তার সামনে এইসব বলো না।মেয়েটা সুন্দরী,তাই সবাই ওর জন্যে দেওয়ানা হতে বাধ্য। আমার প্রেম সাকসেস হবে নাকি জানিনা।
তবে আমার ভাইয়ের প্রেমটা যেনো সফল হয়।ভাইকে দেখে শিখেছি আসল প্রেমিক কেমন হয়!যে প্রেমে নিজের বাউন্ডারির আন্দাজ রাখে,প্রেমিকাকে আগলিয়ে রাখে।”
মুখের ভাবভঙ্গি অপরিবর্তিত রেখে হাসলো জিয়া।

ইশফাকের চেহারা দেখার মতো।আর যায় করুক সে,
ইয়াদের সাথে কোনো ঝামেলায় জড়াতে চায় না।ইয়াদ খারাপে ঠিক কতো খারাপ সেটা তার চেয়ে ভালো কেউ জানেনা।প্রতারণার মামলা ঠুকে নিজের প্রতিদ্বন্ধী জামালকে জে’লে পুড়েছে সে,যেখানে জিয়ার সাথেই জামালের সম্পর্ক ছিল।নিজের বোনের ভালোবাসার অন্যা’য়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে ইয়াদ।সেক্ষেত্রে ইশফাক তো একেবারেই ঠুনকো।মলিন মুখে জিয়ার পানে তাকালো।
তার নিষ্ঠুর মনে দুআকে না পাওয়ার কষ্টটা প্রবল হলো নিমিষেই।হৃদয়ের অন্তরালে ভেবে নিয়েছে সে কিছু একটা।
.
অনুষ্ঠানের পরের দিন সকলে চট্টগ্রামে ফিরলো।ইয়াদ অনুষ্ঠানের রাতেই ভারতে পাড়ি জমালো কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজে।সাথে আছে তার বন্ধুমহল।মোটকথা,
চার বন্ধু মিলে নিজস্ব এক কোম্পানির পরিকল্পনা করছে।দুআ এবং বাড়ির সকলকে কথা দিয়েছে,দ্রুত ফিরবে সে।

চট্টগ্রামে ফিরে দুইদিন টানা বিশ্রাম নিয়েছে দুআ।মাঝে টুকটাক কথা হয়েছে ইয়াদের সমেত তার।পড়ালেখায় বড্ড আগ্রহ দুআর।পরীক্ষার পূর্বে তাই পড়ালেখাতে মজে থাকার পরিকল্পনা এঁটেছে সে।এইদিকে মেয়েকে পড়ার প্রতি ধাপিত হতে দেখে দুআর মা বাটিতে নারিকেল তেল নিয়ে উপস্থিত হলো কামরায়।তার মায়ের ধারণা, তেল দিলে মাথা ঠাণ্ডা থাকে।আর ঠান্ডা মাথায় পড়ালেখায় আকর্ষণ বাড়ে।অন্যদিকে মেয়ে তেলের বাটি দেখে নাক সিটকালো,
–“আমি কোনো তেল দিবো না।”
–“তেল তোকে দিতে হবে না।আমি লাগিয়ে দিচ্ছি।”
বলতে না বলতেই আহেলী মেয়ের মাথার তালুর উপরে তেল ঢাললো।
–“আম্মা?”
–“কি?এর ঘ্যানঘ্যান করার কি এইখানে?”
মায়ের কথায় চুপসে গেল দুআ।তার চুল মায়ের হাতের মুঠোয় আছে।উল্টো পাল্টা বকলে, চুল টানা থেকে বাঁচতে পারবেনা সে।

অতঃপর মেয়েটা বইয়ে চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে নিভৃতে।

মোবাইল ভাইব্রেট হচ্ছে বারংবার।বইয়ের আড়ালে ইয়াদের কলটা রিসিভ করার সাহস নেই তার। মা এইসব কিছুই জানেনা।জানলে কেমন অভিব্যক্তি দিবে বুঝেনা দুআ।বুঝতে চাইও না সে।প্রেম বিষয়ক কিছু মায়ের সামনে এলে লজ্জায় ম’রবে মেয়েটা।এক পর্যায়ে মোবাইল সুইচ অফ করলো।
আহেলী নিজের কার্য সম্পাদন করে বিদায় জানিয়েছে।
দুআ এক লাফে দরজার নিকট পৌঁছে দরজা ভিড়িয়ে দিলো।মোবাইল চালু করেই ফোন চাপলো প্রেমিক পুরুষের নাম্বারে।

একবার রিং বাজতেই লোকটা কল রিসিভ করলো।যেনো এই মহৎ কাজের অপেক্ষায় ছিলো সে,
–“কল ধরছিলে না কেনো?পরপর আবার ফোন বন্ধ করেছো।সমস্যা কি?”
–“আম্মা ছিলো।”
দুআর মলিন কণ্ঠে ছেলেটার বাজখাঁই গলার পরিবর্তন হলো,
–“কি করছিলে এতক্ষণ?”
–“পড়ছিলাম। আম্মা মাথায় তেল দিয়ে গেলো মাত্রই।”
–“ওহ।আচ্ছা,এক মিনিট।”
কল কেটে গেলো।দুআ ভ্রু কুঁচকে চেয়ে রইলো ফোনের পানে।পরক্ষণে বেজে উঠলো মুঠোফোন।

গাড়ির ভেতরে অবস্থানরত ইয়াদের সেল্ফি নেওয়া ছবিটা ভাসছে স্ক্রিনে।ইয়াদ ভিডিও কল দিচ্ছে।দুআ হতবিম্ভল।তার মাথা তেলে চুপচুপ।এই অবস্থায় কিভাবে সে লোকটার সাথে কথা বলবে?ফোন কেটে গেলো।
পরমুহুর্তে ইংরেজি শব্দে ইয়াদের মেসেজ এলো,
–“Pick up the call. I wanna see you. Call receive na korle, Iyaad er next phone ar asbe na. Chondro,don’t make me angry.”
মেসেজ পড়ার মিনিট এক পরেই একই ভঙ্গিতে ফোন বাজলো।বাধ্য হয়ে ফোন রিসিভ করলো সে,
–“তেল দিয়ে চুপসে আছি।এইখানে আমাকে দেখার মতো কি হলো?”
কথাটা বলে ইয়াদকে পর্যবেক্ষণ করতে আরম্ভ করলো দুআ।ছেলেটা রোদে দাঁড়িয়ে।হয়তো কোনো কাজেই বাহিরে আছে। রোদ চশমা আড়ালেও ছেলেটার হাসিমাখা নজর এড়িয়ে যায়নি দুআর।একহাতে চুল ব্যাক ব্রাশ করে ইয়াদ বলে উঠলো,
–“ফর মি,ইউ আর দা মোস্ট বিউটিফুল লেডি।সর্বদায় মোহনীয় তুমি।আমার হৃদয় হ’ত্যা করে আমাকেই প্রশ্ন করো,তোমাকে দেখার কি আছে?”
–“হু,দেখেছেন?এইবার রাখছি।”
–“স্টপ!”
ইয়াদের তীক্ষ্ণ কণ্ঠ।
–“আবার কি?আমাকে দেখতে খুবই বাজে লাগছে।সত্যি।”
–“এই রূপেও তোমাকে মারাত্মক লাগছে,চন্দ্র।মনটা আবারও বিক্ষি’প্ত হলো।আমার হৃদয়ের হ’ত্যাকারী তুমি।বলো কি শাস্তি দিবো তোমায়?”
–“প্রশান্তি দিন।নিজেও ভেতরে যান।গরমে অবস্থা কাহিল হচ্ছে আপনার।আপনি কি টায়ার্ড?”
–“শাস্তি তো তুমি পাবেই।অন্যরকম শাস্তি।আর বাদ বাকি,তোমায় দেখে সকল টায়ার্ডনেস পালিয়েছে।”

দুআ কিছু বলতে যাবে এর পূর্বেই জেনি হুড়হুর করে রুমে এলো,
–“বিরাট ঘটনা।ইয়াদ স্যারের আব্বা আইছে সাজ্জাদ স্যার।উনার মুখের রং এক্কেরে অন্যরকম।জমিদার আব্বার জন্যে অপেক্ষা করতাছেন।”

দুআ অবাক হলো।সাজ্জাদ হঠাৎ এইখানে?জেনির কথা ভালো করে কর্ণপাত করা হয়নি ইয়াদের।নেটওয়ার্কের সমস্যা।

–“কেনো এসেছেন?”
দুআ ভীত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো জেনিকে।জেনি হাত উঁচিয়ে না জানার ভঙ্গি করলো।

–“কে এসেছে চন্দ্র?”
ইয়াদের তেজী কণ্ঠ।

–“আপনার বাবা।”
দুআ স্পষ্ট বুঝতে পারলো,বাবার নাম শুনে ইয়াদের মুখশ্রীর রং বদলিয়েছে।যেনো ব্যাপারটা ইয়াদের মোটেও পছন্দ হয়নি।ভয়ংকর রেগেছে সে।কথাটা বোধগম্য না হলে ইয়াদ আবারও প্রশ্ন করলো,
–“কে?”
দুআ এইবার নরম কণ্ঠে আওড়ালো,
–“আপনার বাবা,সাজ্জাদ আঙ্কেল।”

চলবে…..