আমার চন্দ্রাবতী পর্ব-৯+১০

0
817

#আমার_চন্দ্রাবতী
লেখিকা- সালসাবিল সারা

৯+১০)
রাতভর তীব্র বর্ষণের কারণে ঢাকা শহর পানিতে থৈথৈ।এখনো প্রবল বৃষ্টির আগমন হচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে। গগণের রং কালচে ধূসর।আপাতত বৃষ্টির বেগ কম।তবে গগণের রূপই জানিয়ে দিচ্ছে যেকোনো মুহূর্তে আকাশ ভেঙে আবারও প্রবল বর্ষণের আগমন ঘটতে পারে!
প্রকৃতি ছিলো তার নিজের বর্ষণে মত্ত্ব, তো অন্যদিকে একজন মানবের মনের বর্ষণের কারণে তার রাতটুকু নিদ্রাহীন কাটিয়েছে।যখনই নিদ্রা তার আঁখিতে উঁকিঝুঁকি দিয়েছে তখনই তার চক্ষুজোড়ায় দুআ নামের মেয়েটার পবিত্র মুখশ্রী ভেসে উঠেছে বারংবার। যার দরুণ রাতভর মনের বর্ষণে ক্লান্ত হয়ে ভোরের দিকেই তার নেত্র যুগলে নিদ্রা হানা দিয়েছে।ইয়াদ এর মস্তিষ্ক এখনো ব্যাপারটা না বুঝলেও তার হৃদয় ঠিকই বুঝে নিয়েছে,প্রথম দেখায় দুআ মেয়েটা তার হৃদয়ে দাগ কেটেছে পবিত্রতার।এমন পবিত্র মুখশ্রী মানবীর অপেক্ষায় ছিলো যেনো ইয়াদের হৃদয়।এখন শুধু হৃদয়ের কথাটা মস্তিষ্ক ধারণ করার জন্যেই অপেক্ষা।এমন অনুভূতিতে মন এবং মস্তিষ্ক দুইটাই যেনো সচল হওয়া বাধ্যতামূলক!
.
দুআ বিছানায় বসে আছে দুই পা ঝুলিয়ে।মারিয়া এবং রামিসা দুইজনই ঘুমে আচ্ছন্ন।দুআর হঠাৎ আজ এতো জলদি জাগ্রত হওয়ার কারণটা তার অজানা।অনেক্ষণ যাবত বসে থেকে দুআ বিছানা ত্যাগ করে রুমে বিদ্যমান ব্যালকনিতে গেলো।চারিদিকে বৃষ্টির পানিতে চকচকে ভাবের সৃষ্টি করেছে।বিশেষ করে গাছের পাতা।একেবারে যেনো গাঢ় সবুজ রঙের স্বচ্ছ পাতা গাছে গাছে অবস্থান করছে।কিছু কর্মচারী বাড়ির সামনের দিকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করছে।এটা উচ্চ আবাসিক এলাকা বিধেয় এইখানে জমানো পানির কোনো উচ্চতার দেখা নেই।কিন্তু,দুআ যদি এখন আবাসিক থেকে বাহির হয়,তাহলে সে ঢাকার সবচেয়ে বিখ্যাত মুখ দেখবে অর্থাৎ চারদিকে পানির টইটুম্বুর অবস্থা!দুআ দাঁড়িয়ে থেকে বিরক্তবোধ করছে।কামরায় ফিরে পুনরায় ঘড়ি দেখল সে,সকাল সাড়ে আটটা বাজে।এখনো এইখানে কেউ সজাগ হয়নি কেনো এটাই দুআ বুঝছে না।এইদিকে পেট খিদায় জ্বলছে তার।বাড়িতে থাকলে নিশ্চয় সে মা এবং কাকীর পেছনে খাবারের জন্যে ঘ্যানঘ্যান করতো!দুআ নিস্তব্দ হাঁটছে কামরার চারিদিকে।পরক্ষণে তার মনে এলো মারিয়া তাকে গতকাল বলেছিলো, তার মন খারাপ লাগলে সে যেকোনো সময় বাম দিকের শেষ প্রান্তের ব্যালকনিতে যেতে পারবে।দুআর কাছে গতকাল জায়গাটা অতীব ভালো লেগেছে।কারণ, সেখানে বসেই সুন্দর পানির ফোয়ারা এবং ছোট্ট সুইমিং পুল দেখা যায়।অত্যধিক সুন্দর বাগানটাও সেখান থেকে দৃশ্যমান।দুআ নির্দ্বিধায় বেরিয়ে পড়লো রুম থেকে।তাকে কেই বা বারণ করবে! তাছাড়া দুআর পরিকল্পনা হলো সেখানে মিনিট দশেক ব্যায় করে পুনরায় কামরায় ফিরবে সে।দরকার পড়লে আবারও কম্বলের নিচে নিজেকে শায়িত করবে।পা চলমান অবস্থায় দুআ নিজের মাথায় কাপড় তুললো।স্টাডি রুমের পাশেই ইয়াদের রুম,এমনটাই বলেছিলো কাল মারিয়া তাকে।দুআর সাথে গতকাল ইয়াদের ধাক্কার সম্মুখীন হওয়ার মুহূর্তটা তার স্মৃতিচারণে এলো নিমিষেই।দুআ নিজেকে শান্ত করলো।ইয়াদ মাননটাকে দুআর অন্যরকম লাগে।কেমন যেনো দৃষ্টি নিক্ষেপ করে থাকে লোকটা তার দিকে!তবে তার দৃষ্টিতে কোনো নোংরামি খুঁজে পায়না সে।তারপরও দুআর অদ্ভুত লাগে ইয়াদের এমন নজর।

পানির ফোয়ারা এখন থেমে আছে। হয়তো এখনো পানির লাইন দেওয়া হয়নি! দুআ ব্যালকনিতে ঝুঁকে চারপাশে দৃষ্টি বুলাচ্ছে।ফুলের বাগানে উপর তীব্র বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে ছোট ছাউনী দেওয়া হলো।দুআ তারিফ করলো মনে মনে এমন চালু বুদ্ধি দেখে।মুহূর্তেই সে এইখানকার মালিকে ব্যাপক বুদ্ধিমানের খেতাব দিলো।
–“চাঁদমুখী; ঢাকায় এসে তো সবার হাতের চাঁদ সেজেছিস!তোর যে এইসব ঢং,তা আমার ঢের জানা আছে।”
দুআ নিজের মাথার কাপড়ে টান অনুভব করলো।পেছনে ফিরতেই তাসনিমকে দেখে ভরকে গেলো দুআ। বিপরীতে বিদ্যমান তার দুই হাত ব্যালকনির রেলিং আঁকড়ে ধরলো।তাসনিম এসে পুনরায় দুআর হাত চাপলো,
–“কি?তোর কাজ কি ঢাকায়?তোর আসার কি দরকার ছিলো?ওহ,ক্রিকেটার সাহেবকে ফাঁসাতে এসেছিস?হুম,পারবি তুই এমনটা করতে।রূপে যে তুই ঠাসা!কিন্তু,তোর ভেতরকার চামড়া দেখে কি তোর মনে হয় তোকে কেউ আপন করে নিবে?হাহা দুআ,নিবে না।”
–“আমি কিছুই করতে আসিনি ঢাকায়।আর আপনি..আপনি আমাকে এইসব কেনো বলবেন?”
দুআর কণ্ঠস্বর ভেঙে আসছে।চোখ তার জলে ভর্তি।
–“এই!একদম মুখ চালাবি না।জমিদারের মেয়ে হয়েছিস বলে আমি তোকে আহ্লাদ করবো এমনটা কখনোই হবে না তুই জানিস।তোর জন্যে আমার এতো ঘৃণা সেটা তোর জানার দরকার নেই।কিন্তু,আমি তোকে ঘৃণা করি।আর শুনে রাখ,তোর সাথে কারো পিরিতি দেখলেই সেখানে তোর চামড়ার রোগের কথা আমি ঢাকঢোল পিটিয়ে তাকে জানিয়ে দিবো।”
তাসনিম হাতটা মুচড়ে দিলো দুআর।ব্যাথায় অস্ফুট স্বরে মুখে হাত রাখলো সে।অশ্রু এসে ভিড় করলো তার গালের দুইপাশের আয়তনে।তাসনিম চলে গেলো।দুআ মুখে হাত রেখে অবাক ভঙ্গিতে দুয়ারের দিকে তাকিয়ে আছে।তাকে এতো ঘৃণা কেনো করে এই মহিলা সেটা তার অজানা।কিন্তু,দুআর ভাবনা তার ভেতরকার ত্বকের জন্যেই মহিলাটা তাকে ঘৃণা করে!এই মহিলার কথা যদি সে বাসায় জানায় তাহলে মহিলার ধ্বংস নিশ্চিত।তবে দুআ চাই না,এমন কাজের জন্যে কেউ একেবারে দুনিয়া থেকেই বিদেয় হোক!
দুআ নিজের অশ্রু বিসর্জন সংযত করার চেষ্টায় রইলো।কিন্তু,সে নিরুপায়।হাতের মোচড় দেওয়া অংশে তীব্র জ্বালাপোড়া করছে তার।বিপরীত দিকে ফিরে নিচের অধর চেপে কান্না সংবরণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো দুআ।

–“দুআ আপু,তুমি উঠে পড়েছো!রুমে তোমাকে না পেয়ে এইখানে চলে এসেছি সোজা।আমি জানতাম তুমি এইখানেই থাকবে।”
মারিয়া এসে দুআর পাশাপাশি অবস্থান করলো।
নিজের আঁখি জোড়া হাতের উল্টো পিঠে ঘষলো দুআ,
–“গুড মর্নিং, মারু।”
মারিয়ার কাছে দুআর কণ্ঠস্বর অন্যরকম মনে হলে মারিয়া দুআর বাহু চেপে নিজের দিকে ফেরালো,
–“কান্না করছো কেনো,চাঁদ আপু?”
–“উম,না।আমি ঠিক আছি।”
কথাটা বলে দুআ আর দাঁড়ালো না।দ্রুত গতিতে সম্মুখে পা ফেললো।

ইয়াদ প্র্যাক্টিসের জন্যে রুম থেকে বের হতেই দেখে দুআ এক প্রকার দৌড়াচ্ছে।কোমরের নিচে থাকা চুলগুলো দুলছে সমানতালে।ইয়াদের ভ্রুযুগল সংকুচিত হয়ে এলো।মারিয়া দুআর পিছু ছুটতে নিলে ইয়াদ কর্কশ শব্দে তাকে বলে,
–“দুআ, দৌড় দিলো কেনো?”
–“জানিনা।চাঁদ আপু,কান্না করছিলো।”
ইয়াদ বুঝলো দুআকে তার কাছের মানুষেরা চাঁদ নামে ডাকে।সেদিন দুআর মাও তাকে চাঁদ বলে ডেকেছিল।

তবে,ইয়াদের আমলে এলো না, দুআ কাদঁছে কেনো?
–“তুমি কিছু বললে নাকি আবার?”
–“আমি?আমি কেনো কিছু বলবো?তুমি কি জানো এক দিনেই আপু আমার আপনজনের খাতায় নাম লিখিয়েছে, আর আমিও আপুর আপনজনের খাতায় নাম লিখিয়েছি।তাই তো আমাকে আপু ‘মারু’ আর আমি আপুকে ‘চাঁদ’ বলেই ডাকি।”
মারিয়া এক নিশ্বাসে জবাব দিলো।
–“বুঝলাম।এখন কান্নার ব্যাপারটা উদ্ধার করো।ছাদে গিয়ে আমাকে খবর দিয়ে আসবে,কান্নার কারণ কি ছিলো?”
–“আচ্ছা ভাইয়া।”
মারিয়া ইয়াদের দিকে সন্দেহভাজন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রুমের দিকে ছুটলো।ইয়াদ দুআর প্রতি একটু যত্নশীল হচ্ছে,মারিয়া এই ব্যাপারটা আন্দাজ করতে পারছে।মনে মনে মারিয়া খুশি হলো যেনো!

রুমে গিয়ে সে দেখলো দুআ রামিসার পাশে শুয়ে আছে।মারিয়া অনেক প্রশ্ন করলো দুআকে।কিন্তু, দুআর মুখ বন্ধ।শেষে সে জবাব দিলো,
–“বাসার কথা মনে আসছিলো।ইচ্ছা করছে এখনই চলে যায় বাসায়।”
–“নাহ নাহ।তুমি আরো দুইদিন থাকবে এরপর যাবে বাসায়।তাছাড়া ঢাকায় চারদিকে পানি আর পানি।এমন অবস্থায় যাওয়াটা ভালো হবে না।দেখো এখনো বৃষ্টির আগমন হওয়ার অপেক্ষায় আছে আকাশটা।”
–“তুই কেনো ওর কান্না নিয়ে এতো মাথা ঘামাচ্ছিস মারিয়ার বাচ্চা?তুই ওর প্রেমিক?”
মারিয়া হেসে মাথা দোলালো দুইদিকে রামিসার প্রশ্নে,
–“ইয়াদ ভাইয়া বলেছিলো,দুআ আপুর কান্নার কারণটা উদঘাটন করতে।যদি জবাব না দিতে পারতাম,তবে ভাইয়া ভাবত তার বোন কাঁচকলা।”
রামিসা সন্দেহের দৃষ্টিতে দুআর পানে দেখলো।

কিন্তু,দুআর মুখ দেখে কোনো কিছুর হাদীস পেলো না সে।বরং তার মনে হলো,দুআ আসলেই দুঃখিত কিছু নিয়ে।মারিয়ার সম্মুখে আর প্রশ্ন করলো না সে দুআকে।
অন্যদিকে দুআ চোখ বুজেই ভাবছে,
–“আমার কান্না করার ব্যাপারে উনার জিজ্ঞেস করার কিই বা আছে?আমার মতো সাধারণ মানুষের কথা ভাবার সময় কি ইয়াদের আছে?হয়তো বা,মেহমান বলে একটু ভাবছেন!”
দুআ কিছু চিন্তা করলো না আর।আপাতত হাতার আড়ালেই দাগটুকু ঢেকে রাখার সিদ্ধান্ত নিলো সে।

সকালের নাস্তা সেরে মারিয়া এবং জিয়া তাদের দুইজনকে নিয়ে ছাদে পৌঁছালো।দুআর নজর গেলো ছাদের এককোণে টাঙানো নেট এর বাউন্ডারির দিকে।কালো রঙের ফুল হাতা গেঞ্জি পড়ুয়া ইয়াদের অবয়ব দেখা যাচ্ছে সেখানে।ফর্সা মানবের উপর কালো জামা যেনো দূর থেকে আকর্ষণ করছে দুআর নজরকে!ইয়াদ বল উপরে ছুঁড়ে ব্যাটের সাহায্যে সেটাতে কয়েকবার আঘাত করে সাইডে রেখে দিলো।হাত থেকে গ্লাভস খুলে সে ব্যাগে রাখতে শুরু করলো তার জিনিসপত্র।জিয়া দুআকে নিয়ে অন্য পাশের সবকিছু দেখিয়ে দিচ্ছে।ছাদে বিদ্যমান দোলনায় ইতিমধ্যে রামিসা এক পা ঝুলিয়ে বসে পড়লো।

মারিয়া চললো তার ভাইয়ের কাছে।

–“ঘটনা জেনেছো?”
–“হ্যাঁ।”
–“ঘটনা কি?”
ইয়াদ ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন করলো।
–“আপু তার বাবা মাকে মিস করছে।এটাই বললো।”
–“এতটুক ব্যাপারে কেউ কান্না করে?”
ইয়াদ ঠোঁট বাঁকিয়ে জবাব দিলো।
–“দুআ আপু একটু বেশি সেনসিটিভ তো তাই।জানো,
আপুকে যদি বাহিরের কেউ কিছু বললে বা ধমক দিলে আপু এক বিন্দু প্রতিবাদ করে না।সবসময় নাকি রামিসা আপু আর তাদের বাহিনী দুআ আপুকে রক্ষা করে।কিন্তু,যাদের সাথে আপু মিশে,আপু একদম মন প্রাণ দিয়ে কথা বলে।এইযে দেখো,আমার সাথে আপু কতো সুন্দর কথা বলে;আমাকে রাতে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিল।”
ইয়াদের কর্ণগহ্বরে দুআর তারিফ প্রবেশ করছে সাথে ইয়াদের দৃষ্টি দুআর মাঝেই সীমাবদ্ধ।মারিয়া তার ভাইয়ের পানে তাকাতেই দেখলো তার ভাইয়ের দৃষ্টি এখনো নিবদ্ধ দুআতে।
–“দুআ আপু অনেক বেশি শুভ্র,তাই না ভাইয়া?”
–“হুম,অনেক বেশি।”
ইয়াদ অন্যমনস্ক হয়ে বললো।
–“হাহাহা ভাইয়া,এই কথা এখন সবার কানে যাবে!”
মারিয়া কথাটা বলে দৌড় দিলেই ইয়াদের জ্ঞান ফিরে আসে।সে ঘটনা চাপা দিতে তীব্র স্বরে মারিয়াকে চিল্লিয়ে উঠলো,
–“মুখ খুললেই কিন্তু ভাইয়া আর কখনো তোমাকে আদর করবে না।”
তার চিৎকারে দুআ হাত চেপে ধরলো জিয়ার।মারিয়ার পা গেলো থমকে।

দুআ ভীত নজরে সেদিকে দৃষ্টি জ্ঞাপন করলো।ইয়াদের মুখে যেনো এখন প্রচুর বিরক্তির ছুটাছুটি।পাশে থাকা ব্যাগ নিয়ে মনবটা হনহন করে বেরিয়ে যেতে আরম্ভ করলো।তবে এর পূর্বে হয়ে গেলো এক অজানা কান্ড।ইয়াদ দুআর পানে এক তীক্ষ্ণ নজর ব্যক্ত করলো।এই তীক্ষ্ণ নজরে দুআর সর্ব সত্ত্বা যেনো ঝনঝন করে তৈরি করলো এক নতুন শব্দের!

–“এই ছেলেটা কেনো এতো চিল্লায়,আমি কিছু বুঝি না।দুআ তুমি ভয় পেয়েছো?”
জিয়ার প্রশ্নে দুআর নজর সেদিক থেকে সরলো,
–“নাহ ভয় পায়নি।একটু চমকে গেলাম।”
–“এই মারিয়া,ইয়াদ চিল্লিয়েছে কেনো?”
–“জানিনা।”
জিয়ার প্রশ্নে মারিয়া রাগ দেখিয়ে বললো।
মারিয়া হনহন করে বেরিয়ে পড়লো ছাদ থেকে।
–“মারিয়া কি রাগ করেছে?”
দুআর চিন্তামাখা কণ্ঠ।
–“আরে ধুর।আমি দেখছি গিয়ে।”
রামিসা উঠে পড়লো দোলনা থেকে।

জিয়া বকবক করা শুরু করলো তার আর জামালের প্রেম কাহিনীর সম্পর্কে।দুআ সেখানে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। এতে জিয়া আরো বেশি খুশি হলো। কারণ, সে বুঝলো দুআর নিরবতা তাদের কাহিনী শোনার জন্যে আগ্রহ প্রকাশ করছে। তবে,দুআ ভাবছে,
–“এই খেলোয়াড় এইভাবে হুটহাট রেগে যায় কেনো?এখন শান্ত তো এখন অশান্ত।অদ্ভুত!”
______________________
–“এই মারু,তোকে ভাইয়া বকেছে কেনো?”
–“ইয়াদ ভাইয়া মেয়েদের সাথে সবসময় দূরে থাকে।সবাই জানি আমরা এটা।কিন্তু কাল থেকে দেখো,সে দুআ আপুর দিকে তাকিয়ে থাকে তো থাকে।আর আজ কি বলেছে জানো?”
রামিসা ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো,
–“কি?”
–“বললো,দুআ আপু নাকি সুন্দর!ভাবতে পারো তুমি এইসব?তবে কি জানো?দুআ আপু যদি আমার ভাইয়ার বৌ হয় আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হবো।”
মারিয়ার হাসিমুখ।
রামিসার অবাকের সীমানা চূড়ান্ত পর্যায়ে। শেষে কিনা ইয়াদ দুআর প্রতি দূর্বল হয়ে পড়লো!রামিসা কিছুক্ষণ নির্বাক থেকে হঠাৎ করেই নেচে উঠলো মারিয়ার হাত চেপে,
–“ওরে,আমি কি খুশি!শুন,আমাদের এখন পরিকল্পনা হলো এই দুজনকে কাছাকাছি রাখা।দেখ,যতো কাছে থাকবে ততো বেশি অনুভূতির প্রজাপতি উড়াউড়ি করবে।আমিও চাই দুআর জীবনে ইয়াদ ভাইয়ার মতো ছেলে আসুক।যে কখনোই অন্যর কথায় আমার দুআকে কষ্ট দিবে না।আমার বিশ্বাস দুআর দাগ দেখেও ভাইয়া তাকে আপন করে নিবে।”
–“কিসের দাগ?”
–“দুআর একটু ত্বকের সমস্যা আছে।যদি দেখি ভাইয়া দুআকে ভালোবাসতে শুরু করেছে তখন আমি নিজেই ভাইয়ার কাছে সব খোলাসা করবো।”
–“হুম,ঠিক বলেছো।আমার মতে,ভাইয়া শুধু দুআ আপুর মুখশ্রীতেই ফিদা হয়ে আছে।তার কাছে অন্য কিছু যায় আসবে বলে মনে হয় না।”
–“দেখা যাক!আগে তাদের মন দেওয়া নেওয়ার ব্যবস্থা করবো।চল।”
রামিসা মারিয়ার কাঁধে হাত রেখে ফিসফিস করে কিছু বললো কানে।

দুআ হাতা তুলে কিছু বোঝার চেষ্টা করছে।তার শুভ্র আর খয়েরী রঙের সংমিশ্রণের হাতে আঙ্গুলের ছাপ স্পষ্ট।এখনো সেই স্থানে জ্বালা অনুভব করছে সে।জামার হাতা টেনে দিতেই তার সেই দাগ মাখা হাত ঢাকা পড়লো।কব্জি থেকে শুধু এখন তার শুভ্র হাতের অংশ বিদ্যমান।জিয়ার সাথে সে তার রুমেই বসে ছিলো।জিয়া ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দুআর উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
–“নিচে চলো।”
দুআ মাথা নাড়ালো।
নিচে নামার সময় আবারও সে সম্মুখীন হলো সেই লম্বা মানবটার।ইয়াদ মারিয়ার কাঁধ জড়িয়ে রইলো।আর রামিসা তাদের সামনে দাঁড়িয়ে হাত নাড়িয়ে কিসব বলছে।দুআকে দেখতে পেয়ে মারিয়া তাকে জিয়ার হাত ছুটিয়ে ইয়াদের সম্মুখে দাঁড় করালো।দুআ তার নজর অল্প ঝুঁকে রেখেছে।জিয়া ইয়াদের সাথে তাদের আড্ডা দেখে মুখ ভেংচি কেটে সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালো।

ইয়াদ যেনো দুআতেই হারিয়ে যায় বারংবার।হালকা গোলাপি ওড়না মাথায় চেপে রেখেছে মেয়েটা।চারিদিকে চুলের ছড়াছড়ি।সামনের ছোট কেশের জন্যে মেয়েটার মুখটা ঢেকে আছে দুইদিকে।ইয়াদ আবারও দুআর মুগ্ধতায় হারালো।সে বুঝে উঠতে পারে না,এই
মেয়ের থেকে কেনো তার নজর সরানো দায় হয়ে পড়ে!

-“তোমরা কথা বলো।আমরা আসি। রামিসা আপু আমি তোমাকে একটা জিনিস দেখাবো।চলো।”
মারিয়া চোখ টিপে ইশারা করলো রামিসাকে।
–“হ্যাঁ, চল তো।দুআ তুই থাক।আমি আসি।”
রামিসা আর মারিয়া দৌড় লাগালো।

এইদিকে দুআ পড়লো বিপাকে।মনে মনে হয়ে গালমন্দ করলো সে।ইয়াদের হাসিমুখ দেখে আন্দাজ করা যাচ্ছে,বেজায় খুশি।দুআকে ইতস্ত হতে দেখে সে নিজেই মুখ খুললো,
–“সকালে কান্না করেছো কেনো?”
দুআ চমকে দৃষ্টি তুললো ইয়াদের পানে,
–“আপনি কিভাবে জানলেন?”
–“আমার বাসায় কি হয় না হয় আমি সব জানি।”
ইয়াদ নিজের পাতলা ঠোঁট জোড়া প্রশস্থ করলো।এমন ভাব দেখে দুআ নিজেই হেসে ফেললো শব্দ করে।দুআর হাসিতে আবারও ভেসে গেলো ইয়াদ।শরীর টা তার ঝিম ঝিম করছে।তীব্র হাসিতে দুআ চোখ বুজে থাকে।আর তার এক হাত দুই ঠোঁটের মাঝামাঝিতে অবস্থান করে।এতো অপরূপ বুঝি কেউ আবার হাসে!ইয়াদকে চুপ থাকতে দেখে দুআ ইয়াদের দিকে দৃষ্টি জ্ঞাপন করলো পুনরায়।ইয়াদের দৃষ্টি যেনো দুআ তেই আটকে রইলো।
–“আপনি হয়তো মানুষের সাথে খুব কম কথা বলেন,তাই না?”
–“তোমার চেয়ে একটু বেশি বলি।কিন্তু,তোমার স্বভাব আমার ভালো লেগেছে।অন্য সবার মত না তুমি।”
–“উম,নাহ।আমিও বলি, যদি সেটা আমার কাছের মানুষ হয়।”
–“গুড।মাত্রারিক্ত বকবক করা আমার একদম ভালো লাগে না।তুমি জানো,যখন আমি ফ্যানবেসের সামনে পড়ে যায়;মাই গড!সবাই আমাকে পারে না চিবিয়ে খেতে।কিছু কিছু মেয়ে আমার উপরেই চড়ে বসতে চাই।এখন এইসব এড়িয়ে চলি।আমাকে অবশ্য সবাই অনেকটা ভয় পায় এখন।আগে এমন ছিলাম না।হঠাৎই রগচটা খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছি।”
ইয়াদ নিজের বুকে দুই হাত চেপে বললো।

দুআ আবারও মলিন হাসলো,কোনো উত্তর দিলো না।ইয়াদের মনে ব্যাপক ইচ্ছা জাগলো দুআর খরশান গালখানা একটু ছুঁয়ে দেখতে।পরক্ষণে ইয়াদ নিজের চিন্তায় নিজেই ব্যাপক অবাক হলো।

–“আব্বা,তুমি কি বেরুবে আজকে?”
ডালিয়া হাসিমুখে তাদের পানে এগিয়ে আসলো।
–“নাহ, আম্মি।ঝড়ের কারণে রাস্তাঘাট একদম বাজে অবস্থায় আছে।”
ইয়াদের থমথমে কণ্ঠ।
–“আন্টি,জিয়া আপু কোথায়?”
–“নিচেই আছে,মা।লিভিং রুমে।”
দুআ মুচকি হেসে বিপরীত দিকে হেঁটে যাচ্ছে।
–“মেয়েটা খুব লক্ষ্মী। কাল একদিনেই মেয়েটার সাথে খুবই ভালো একটা সংযোগ হলো আমার।গ্রামে গেলে ওদের বাড়ি আমি অবশ্যই যাবো।”
–“হ্যাঁ,লক্ষ্মী তো বটেই।”
ইয়াদের হেয়ালি কথায় তার মা থমকে গেলো।ছেলের মুখের এমন কথা শুনবেন,কোনো দিনই আশা করেননি। যেখানে ইয়াদের গম্ভীর স্বভাবের কারণে কোনো মেয়ের কথা তিনি উল্লেখ করেন না,সেখানে আজ ইয়াদের মুখে অন্য মেয়ের কথা শুনে না চমকে পারলেন না উনি।
ইয়াদ তার কামরার দিকে পা বাড়ালো।
আর ডালিয়া নিজের কানে শোনা কথা মস্তিষ্ক থেকে বারংবার স্মরণ করার চেষ্টা করছে।
—————————–
তিনদিন পর আজ দুআ এবং বাকি সবাই ফিরে যাচ্ছে চট্টগ্রামে।
পুরো পাঁচদিনে ইয়াদ দুআর মোহে পুরোপুরিই মত্ত হলো।তবে এখনো ইয়াদ তার এই অনুভুতির নাম দিতে নারাজ।ইয়াদের যেনো এখনো আরো সময়ের দরকার।কিন্তু, ইয়াদ এটা বুঝেছে,ইয়াদ দুআর প্রতি যা অনুভব করে সেই অনুভূতি কখনো অন্যর প্রতি আসেনি।ইয়াদ আজ সারাদিন বাইরে ছিলো।তার বন্ধুরা তাকে পাগল করে ফেললো দুআর কথা জিজ্ঞাসার মাধ্যমে।ইয়াদ তাদের সাথে দুআর ব্যাপারে কথা বলতে নারাজ।পরক্ষণে ইয়াদ তাদের সাথে জিদ দেখানো শুরু করলে তারা দুআর ব্যাপারটা চেপে গেলো।অতঃপর বন্ধুদের সাথে খোশ মেজাজে আড্ডা দিয়ে সে ফিরলো বাড়িতে।

ইয়াদ প্রচন্ড অবাক।বাড়ির সামনে মাইক্রো বিদ্যমান।দুয়ারে রিজোয়ানকে দেখা যাচ্ছে।ইয়াদ গাড়ি পার্ক করে গাড়ি থেকে নামতেই রিজোয়ান তার দিকে এগিয়ে এলো,
–“চলে যাচ্ছি।আমাদের বাসায় যাবে কিন্তু তোমার পরিবারকে নিয়ে।”
ইয়াদ হাত মেলালো রিজোয়ানের সাথে।অবাক ভঙ্গিতে সে জবাব দিলো,
–“অবশ্যই।আবার আসবেন।”
বিদায় জানিয়ে ইয়াদ ভেতরে চললো।ভেতরে যেতেই ইয়াদের হৃদয়ে যেনো শুরু হলো হৃদয়ক্ষরণ।লাল রঙে আবৃত এই শুভ্র মানবীকে আর দেখা হবে না তার!!সামনের কিছু অবাধ্য চুল কানের পেছনে গুঁজে দিতেই কানের উপর লাল রঙের পাথরও দৃষ্টির অগোচরে গেলো না ইয়াদের।পূর্বের চেয়েও আজ তার বুক অতি তীব্রতায় শব্দ করছে।মারিয়া হঠাৎই দুআর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো।শব্দ করে কান্না করছে মারিয়া।দুআ তার পিঠে হাত বুলিয়ে তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টায় রইলো।দুআর মুখে হাসি বিদ্যমান।ইয়াদের সব এলো মেলো লাগছে।দুআ চলে যাবে আজ,এটা যেনো ইয়াদের বিশ্বাস করতেই বাঁধা আসছে ভেতর থেকে।
–“ইয়াদ ভাইয়া,চললাম।দেখা হবে আবারও।আপুর বিয়েতে কিন্তু অবশ্যই আসবে।”
–“আসবো।”
দুআর পানে চেয়ে বললো সে।রামিসা ইয়াদের দৃষ্টির আন্দাজ অনুমান করে মুখ চেপে হাসলো।সবাই বেরিয়ে যাচ্ছে ইয়াদকে বিদায় দিয়ে।ইয়াদ মূর্তির ন্যায় সেই স্থানেই দাঁড়িয়ে রইলো।দুআ তার সামনে আসলে ইয়াদ অস্ফুট কন্ঠে বলে উঠলো,
–“চলে যাচ্ছো?”
–“জ্বী।আমাদের গ্রামে অবশ্যই আসবেন।”
–“যাবো।অবশ্যই যাবো।না গিয়ে তো উপায় নেই।”
ইয়াদের কণ্ঠ অন্যরকম শোনালো যেনো।

দুআ আর কিছু ব্যক্ত করলো না।ধীর গতিতে মারিয়ার হাত চেপে হাঁটছে।বেরিয়ে যাওয়ার পূর্বে অবশ্য দুআ আড়চোখে এই খেলোয়াড় মানবটার পানে তাকিয়েছিলো।দুআর নিজেরই মন খারাপ হলো অজান্তে।

ইয়াদ তার হাতে থাকা ক্যাপ মুচড়ে ফেললো।দুআ চলে যাওয়াটাই তার যতো রাগের কারণ।এই পাঁচদিনে মেয়েটা যেনো ইয়াদের মনে এক গভীর দাগ কেটে ফেললো।দুআ নামের মেয়েটা তার মনের এমন অবস্থা করলো,তাকে ছাড়া এখন নিজেরই যেনো একাকীত্ব অনুভব হচ্ছে।
দুআর লাজুক হাসি,লাজুক চাহনী,পবিত্রতায় ঘেরা ব্যবহার,ধীর শব্দে কথা বলা,সম্মান জানানো,ইয়াদ অন্যদের বকাবকি করার সময় নিজেই ভয়ে জমে যাওয়া,ভীত চাহনীতে তার দিকে চেয়ে থাকা, সবটা একে একে মনে আসছে ইয়াদের।
অস্থিরতায় ইয়াদের মাথা ব্যাথা করছে।কামরায় প্রবেশ করে উবুত হয়ে শুয়ে পড়ল সে।বুকের একপাশে খালি অনুভব হচ্ছে তার।কম মেয়ে তো তার জীবনে ছিলো না! রাত পোহালে কেউ যেনো কাউকে চিনতো না তারা।কিন্তু,তাদের প্রতি মনের কোনো অনুভূতি কাজ করেনি।আর না কখনো তাদের কথা মনে পড়েছে। তবে দুআ বিহীন এখন ইয়াদের নিজেকে মনে হচ্ছে সর্বহারা।ইয়াদ চোখ বুজে গত পাঁচদিনের স্মৃতিচারণ করার চেষ্টা করলো।সর্বপ্রথম ভেসে এলো দুআর সেই পবিত্র মুখমন্ডল আর নজর কাড়া অপরূপ নেত্রযুগল।

বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলো আকাশের বুকে।উদোম শরীরে সোফায় গা এলিয়ে রইলো ইয়াদ। হাতের জ্বলন্ত সিগারেট মাঝে মাঝে তার ঠোটে অবস্থান করছে।মেজাজ তার প্রচুর বিগড়েছে।এই মুহূর্তে তার মনে হচ্ছে কাউকে না ঝারলে দুআর চলে যাওয়ার রাগটা দমানো সম্ভব না।সে বিছানার উঁচু স্থান থেকে মোবাইলটা নিলো।ফোন লাগালো ইয়াসিরকে,
–“এই তোদের সমস্যা কি?”
ফোন রিসিভ হতেই ইয়াসিরকে ধমকে উঠলো সে।
–“কিসের সমস্যা?দুআর ব্যাপারে?ওহ,আসলেই বল তো কি করেছে দুআ তোকে?আগে আমাদের দেখেছিস কোনো মেয়ে নিয়ে তোর সাথে মশকরা করতে?কিন্তু, এই মেয়ের দেখা পাওয়ার পর থেকে কেমন যেনো অন্যমনস্ক হয়ে পড়লি তুই।কি আছে এই মেয়ের মাঝে?”
–“ওর মাঝে পবিত্রতা আছে।তার পবিত্রতা সরলতা সব আমাকে মেরে দিয়েছে।আমি শেষ মনে হচ্ছে।মেয়েটা আমাকে না বলেই চলে গেলো।শেষ মুহূর্তে লাল রং জড়ানো কি অতীব গুরুত্বপূর্ণ ছিল?আমার মাথা হ্যাং হয় আছে।পাঁচদিন,পাঁচদিনে আমাকে শেষ করে দিলো মেয়েটা।”
ইয়াদ মাথা চেপে ধরলো নিজের।
–“এখন প্লিজ বলিস না তুই ওকে..?”
–“হুম।তোর মুখের না বেরুনো কথাটা সত্যিই।কিন্তু বুঝলাম না কিভাবে কি আগাবো আমি?মেয়েটা একদম সহজ সরল।আমার কথা জানলে সে যদি আমাকে ঘৃণা করে?”
এই প্রথম ইয়াসির ইয়াদের নিজেকে নিয়ে চিন্তার সুর শুনলো।
–“তুই কি সত্যি ইয়াদ বিন তেহরান?যে মেয়ে মানুষকে বিষ ভাবতিস?এখন এক ছোট মেয়ে তোকেই নাকানি চুবানি খাওয়াচ্ছে?”
–“আমি জানিনা কিছুই।কিন্তু দুআকে আমার চাই। জোর করে নয়,নিজের ভালোবাসায়।আমি যেমনটা অনুভব করি,সেও কি তেমনটা অনুভব করবে আমার প্রতি?”
ইয়াদ দ্বিগুণ করলো নিজের গলার শর।
–“ঘোর চিন্তার বিষয়। ছোট মেয়ের অনুভূতিও ছোট এখন। ছোট মেয়ের দিকে যেহেতু নজর দিয়েছিস, তাই ধৈর্য ধর।আরে হ্যাঁ,আমাদের কাছে অনেক বড় একটা সুযোগ আছে।এর মধ্যে রামিসাকে খবর লাগা দুআর,
সরি দুআ ভাবীর প্রতি নজর রাখতে।অন্য কারো দিকে তার নজর যদি যায়?”
–“মেয়েটা সহজ সরল,একদম পবিত্র।তার কখনো এইসবে সাহসই হবে না।মারিয়া থেকে দুআর সম্পূর্ণ বায়োডাটা আমার জানা আছে। তাকে নিজের সব অনুভূতি দিয়ে আগলে রাখতে চাই।ওকে আমার চাই,ইয়াসির।”
–“বুঝলাম খেলোয়াড় সাহেব।আমি আগেই বুঝেছি তুই এই মেয়েতে শেষ হবি।প্ল্যান আছে বড়। এখন শুধু দিন গুনতে থাক।”
ইয়াসির কথাটা বলতে ইয়াদ ফোন রাখলো।

তার নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছে না,দুআর চলে যাওয়া তাকে এতটাই গুড়িয়ে দিবে যে মনের ভেতর সুপ্ত অনুভূতিটা আজ মনের অজান্তেই বেরিয়ে আসবে।ইয়াদ ঘাড়ে হাত ঘষলো।তার মনে এক সুপ্ত চিন্তা উঁকি দিলো,
–“আমার অতীত শুনে তুমি কি আমাকে ভুল বুঝে আমার থেকে দূরে সরে যাবে?উহু,আমার অতীত কখনোই তোমার সামনে আসতে দিবো না আমি।ধরণীর মাঝে যতো বাঁধা আসুক না কেনো,তুমি নামক শুভ্র চাঁদের টুকরোকে ইয়াদের প্রয়োজন সর্বক্ষণ।সত্যি আমি তোমাকে চাই,চাঁদ।উম না,তুমি চাঁদ না।।তুমি একান্তই আমার চন্দ্রাবতী।”
অস্থিরতার পাশাপাশি ইয়াদের মনে উড়াল দিলো শত ডানার প্রজাপতি।

চলবে…..