#আমার তুমি
#পর্বঃ১৫
#তানিশা সুলতানা
ইলেকশনের জন্য বিয়েটা পিছিয়ে গেছে। এবারেও নৌকায় ভোটে দাঁড়িয়েছে ইফাদের বাবা ইদ্দিস চৌধুরী। এতো টেনশনের মধ্যে বিয়েটা দিতে চাইছেন না ওনারা। তাছাড়া ইফাদও বিয়েটা কিছু দিন পরে করতে চায়। তুলতুলকে জানতে চায় ইফাদ। এক সাথে আরও কিছুটা সময়,কাটাতে চায়।
এংগ্রেসমেন্ট হয়েছে কাল। ঘরোয়া ভাবেই হয়েছে। ইফাদ চায় না জাঁকজমক ভাবে হোক। এংগ্রেসমেন্ট করতেই চাই ছিলো না কিন্তু তৌফিক রহমানের জোরাজুরিতে করেছে।
পাথরের মতো হয়ে গেছে তুলতুল। যদিও আগেও এমনই ছিলো। বাবা মা যা বলবে তাই করবে তুলতুল। কিন্তু ইদানীং খুব অশান্ত লাগে তুলতুলকে। তাই নাজমা বেগম তুলতুলকে একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসতে বলে।
তুলতুল অনেকদিন পরে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। দুই মাস পাঁচ দিন পরে বাইরের মুক্ত হাওয়ায় প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে পারছে তুলতুল।
বাড়ি থেকে খানিকটা দুরে পদ্মা নদীর পাড়ে দুই হাত প্রসারিত করে শ্বাস নিচ্ছে তুলতুল। তুলতুলের সাথে এসেছে তাজ। কড়া পাহারায় তাজকে পাঠানো হয়েছে। তাজ দুরে বসে গেমস খেলছে। ফোন পেলে তার আর কোনো দিকেই খেয়াল থাকে না। ক্লাস সেভেনে পড়ে তাজ।
হঠাৎ পেটের কোনো হাতের স্পর্শ অনুভব করতেই শিওরে ওঠে তুলতুল। ছিটকে দুরে সরে যায়।
ইফাদ বিরক্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। যতবারই তুলতুলের সাথে দেখা করতে আসে ততবারই ছোঁয়ার চেষ্টা করে।
“কাম অন তুলতুল
তোমাকে তোমার বর টাচ করেছে। ইলেকট্রনিকসে শট দিচ্ছে না।
বলে ইফাদ।
তুলতুল মাথা নিচু করে আছে। এখনো হাত পা কাঁপছে। বুক টিপটিপ করছে। এই লোকটা আশেপাশে থাকলে বড্ড ভয় করে তুলতুলের।
” এখনো বর হন নি। হবু বর।
শক্ত গলায় বলে তুলতুল।
“ওহহ তাই বেবি?
বিয়ে হওয়ার অপেক্ষায় আছো? তুমি ভাবছো আমি তোমাকে বিয়ে করবো না? বিয়ে না করলেও কি? এখন তো গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ডও
“আমি ওদের মতো নই
তুলতুল ইফাদকে থামিয়ে বলে।
” তুমি ভীষণ বরিং। ডিসগ্রাসটিং লাগে আমায়। মাঝে মঝে মনে হয় তোমার কোনো পবলেম আছে। নাহলে আমার মতো একটা হট ছেলের থেকে দুরে থাকো কিভাবে?
ইফাদ এক পা এগিয়ে বলে।
গা গুলিয়ে আসে তুলতুলের। খারাপ লোক একট।
” আমাকে পড়ালেখাটা করতে দিন প্লিজ। আমি খুব ভালো স্টুডেন্ট।
তুলতুল কথা ঘোরানোর জন্য বলে।
“পড়ালেখা করে করবে টা কি? চাকরি করবে? ইউ নো তোমার বরের অফুরান্ত টাকা। এই টাকাই খাওয়ার মানুষ নেই। তো তুমি চাকরি করে কি করবে শুনি?
পকেটে হাত গুঁজে বলে ইফাদ।
” পড়ালেখা কি শুধু চাকরি করার জন্যই করে?
মাথা তুলে ইফাদের দিকে তাকিয়ে বলে তুলতুল।
ইফাদ তুলতুলের হাত ধরতে যায়। তুলতুল দুরে সরে যায়। রাগে চোয়াল শক্ত করে ইফাদ।
“এখানে আসা টাই আমার ভুল হয়েছে। ডিসগ্রাসটিং
ফালতু
বলেই হনহনিয়ে চলে যায় ইফাদ।
তুলতুল দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
” হায়রে জীবন। যার সাথে দুদিন পরে বিয়ে সে কখনোই আমার পাশে বসে বলে না তুলতুল তোমার কি পছন্দ? সে শুধু ছোঁয়ার অজুহাত খোঁজে।
মুডটাই নষ্ট হয়ে যায় তুলতুলের। খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারে। এখানে আসার খবরটা বাবা বা দাদি জানিয়েছে ইফাদকে।
“তাজ চল ভাই বাসায় যাবো।
বলেই তাদের হাত ধরে চলে যায় তুলতুল।
🥀🥀🥀🥀🥀
শান মোটামুটি অনেকটাই সুস্থ এখন। হাঁটা চলা করতে পারে। আবারও সবটা আগের মতো হয়ে গেছে। দুঃখের দিন গুলো প্রায় শেষ। সায়ান চাকরির পাশাপাশি একটু আতটু গান গান। অল্প দিনেই বেশ পরিচিতি পাচ্ছে ওর গানের জগৎে।
দেখতে দেখতে নয়টা মাস চলে যায়। কাল তুলতুলের বিয়ে। তৌফিক রহমান বারবার কল করে সাহেদা বেগমকে জেতে বসেছে। সাহেদা বেগমও এক গাল হেসে বলেছে অবশ্যই যাবো আমি আমার পরিবার নিয়ে।
তৌফিক রহমান বেশ অবাক হয়।কতো আত্নবিশ্বাস নিয়ে বলছে আসবে। তাহলে কি সায়ান স্বাভাবিক হয়ে
গেছে?
সায়ান সুমুকে গিটার বাজাতে শিখাচ্ছে। সুমুর খুব ইচ্ছে গিটার বাজানো শিখবে। খুব মনোযোগ দিয়ে ভাইয়ের থেকে গিটার বাজাচ্ছে।
” আব্বা একটা কথা ছিলো?
সাহেদা বেগম সায়ানের কাঁধে হাত রেখে বলে। সায়ান মায়ের দিকে না ফিরেই বলে।
“বলো মা।
” কাল তুলতুলের বিয়ে। আমাদের দাওয়াত হয়েছে। কি দেবো ভাবছি।
“ওই মেয়েটার বিয়েতে আমরা যাবো না মা।
সুমু রেগে গিটার রেখে বলে।
” ওই মেয়েটা কি সুমু? তোর বোন হয়। আর যাবি না কেনো? মামাতো বোনের বিয়ে অবশ্যই যাবো।
সায়ান শান্ত ভঙ্গিতে বলে।
সাহেদা বেগম মুচকি হাসে। সুমু রাগে ফুসছে। কিন্তু কিছু বলছে না। বললেই ভাইয়া ধমক দেবে।
“একমাত্র ভাইজির বিয়ে তোমার স্বর্ণের কিছু দেওয়া উচিৎ।
আমি টাকা দিচ্ছি। সুমুকে সাথে করে যাওয়ার সময় কিছু কিনে এনো।
” তুইও যাবি তো
“আমি তে মেয়েদের জিনিস কিনতে পারি না।
” ঠিক আছে।
সায়ানের ফোন বেজে ওঠে। স্কিনে পাখি নামটা ভেসে ওঠে। সাহেদা বেগম ভ্রু কুচকে তাকায়।
“বেস্টফ্রেন্ড
বলেই সায়ান ফোন রিসিভ করতে করতে বেরিয়ে যায়।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সাহেদা বেগম।
কতোদিন হয়ে গেলো ছেলেটার মুখে হাসি দেখি না। আগের মতো মা মা বলে চিল্লায় না। কোনো পবলেম হলে মাকে জানায় না।
তোর এই পরিবর্তনটা খুব কষ্ট দেয় আমায়।
🥀🥀🥀🥀
কবুল বলেই বিয়ের আসর থেকে হনহনিয়ে বেরিয়ে যায় সায়ান। সামনে যা যা পড়ে চেয়ার টেবিল থালা বাসন সব ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে বেড়িয়ে যায়। পেছন থেকে সাহেদা বেগম অনেকবার ডাকে সায়ানকে ফিরেও তাকায় না সায়ান।
তৌফিক রহমান কেঁপে ওঠে সায়ানের ব্যবহারে। পুরো বিয়ে বাড়িতে রটিয়ে যায় কথাটা। বিয়ে বাড়ির সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়।
সাহেদা বেগম ভাইয়ের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
“আমার ছেলে খাটি সোনা। তাই তো তোর মেয়েকে বিয়ে করে নিলো। আমার ছেলেকে আমি শিখিয়েছি কুকুর কামড়ে দিলে কখনোই কুকুরকে কামড়ে দেওয়া যায় না।
বুঝলি ভাই?
তৌফিক রহমান অপমানে মাথা নিচু করে ফেলে।
কিছুখন আগে।
সায়ানরা যখন তুলতুলের বাড়িতে পৌছায় তখন জানতে পারে ইফাদ তার গার্লফ্রেন্ডের সাথে পালিয়ে গেছে। তুলতুলের মতো বোরিং মেয়েকে সে বিয়ে করবে না। তুলতুলের না কি শারিরীক সমস্যা আছে। এতোদিন তুলতুলের আশেপাশে থেকে ইফাদ এটা জানতে পেরেছে। তুলতুলের পরিবার এটা গোপন করে তুলতুলকে ইফাদের গলায় ঝুলিয়ে দিতে চেয়েছিলেন।
ইদ্দিস চৌধুরি ছেলের এরকম কান্ডের মাথা নিচু করে বেরিয়ে যায়। তার কিছুই বলার নেই।
লজ্জায় মাথা কাটা যায় তৌফিক রহমানের। তুলতুলের কানে কথাটা পৌঁছালে মেয়েটা নিজেকে শেষ করে দিতেও দুবার ভাববে না। তাই তিনি চেপে যায়। কিন্তু কতোখন?
একজন দুজন করে পুরো গ্রাম ছড়িয়ে যায় কথাটা। মেহমান নেমন্তন্ন করা হয়ে গেছে। রান্না বান্না করা শেষ। শেষ মুহুর্তে বিয়েটা হবে না।
তৌফিক রহমান ভাবতে পারে না এখন কি করবে? মেয়েকে বিয়ে না দিলে আর কখনোই বিয়ে হবে না মেয়েটার।
আর ইফাদের দেওয়া অপবাদ শোনার পরে কেউ বিয়ে করবে না তুলতুলকে। এমনকি গ্রামের রাখতে দেবে না।
শেষ মুহুর্তে সায়ানের কথা মাথায় আসে তৌফিক রহমানের।
দৌড়ে গিয়ে সায়ানের পা আকড়ে ধরে। কান্নাকাটি করে।
সায়ান পা ছাড়িয়ে দুরে গিয়ে দাঁড়ায় ফিরেও তাকায় না।
তুলতুলের মা নাজমা বেগম নিজে গিয়ে সায়ানের হাতে পায়ে ধরে।
সায়ান বিরক্তির বিশ্বাস ফেলে।
“ডোন্ট ডিস্টার্ব
জোরে বলে ওঠে। পুরো বাড়িটা কেঁপে ওঠে। সায়ান ফোন নিয়ে বেড়িয়ে যায়।
তৌফিক রহমান সাহেদা বেগমের পা জড়িয়ে ধরে। হাউমাউ করে কাঁদে। সোহেল মিয়া আজ আসে নি। অফিসের কাজে আটকে গেছে।
সাহেদা বেগম ভাইকে উঠতে বলে। তৌফিক রহমান ওঠে না।
” লজ্জা করে না আপনার? কোন সাহসে আপনি আমার মায়ের
সাহেদা বেগম হাত উঁচু করে থামিয়ে দেয় শানকে। মায়ের মুখের ওপর কথা বলার সাহস নেই শানের নেই।
“অহংকার পতনের মূল। দেখলি তো ভাই?
তোর মতো অহংকারী আমি না। যদিও আমার অহংকার করার মতো অনেক কারণ আছে। আমার দুটো হিরে আছে।
আমি তুলতুলকে আমার ছেলের বউ করবো। কিন্তু সেটা তোর পায়ে ধরার জন্য না।
একটা অপবাদ পাওয়া, বিয়ে ভেঙে যাওয়া অসহায় মেয়েকে সমাজে অলহ্মী বলা হয়। সমাজে এদের জায়গা হয় না।
তাই আমি তুলতুলকে একটা পরিচয় দেওয়ার জন্য আমার বাড়ির বউমা বানাবো।
যাতে সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে মেয়েটা।
ধরে নে দয়া করলাম তোকে আর তোর মেয়েকে।
বলে একটু হাসে সাহেদা বেগম। শান আর সুমু রেগে চলে যায় ওখান থেকে।
তৌফিক রহমান কৃতজ্ঞতার হাসি হাসে।
মায়ের কথা রাখতে বিয়েটা করে নেয় সায়ান।
বিয়ে হওয়ার পরে তুলতুল জানতে পারে সায়ানের সাথে বিয়ে হয়েছে। কেঁপে ওঠে তুলতুল। শরীরের লোম জাড়িয়ে যায়।
সায়ান যে তুলতুলকে খু*ন করে ফেলবে এটা বেশ বুঝতে পারছে তুলতুল। ভীষণ কান্না পায় তুলতুলকের। কেনো এমনটা হচ্ছে ওর সাথে? ভাগ্য কেনো খেলছে ওকে নিয়ে?
শান সুমু সোহেল মিয়া আর সায়ান ভীষণ রেগে আছে সাহেদা বেগমের ওপর।
মা এটা কি করে করতে পারলো?
সায়ান কবুল বলেই ঢাকা চলে যায়। আর যাই হোক এই বাড়িতে এক সেকেন্ডও থাকা সম্ভব না ওর।
শান আর সুমু বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে যাবে না। এতোখন চলে যেতো। কিন্তু মাকে ছাড়া যেতে পারবে না।
বিয়ের কাজ শেষ হওয়ার পর সাহেদা বেগম তুলতুলের রুমে যায়। লাল টুকটুকে বউ সেজে মাথা নিচু করে বসে আছে তুলতুল। তুলতুলের আশেপাশে অনেক মেয়েরা বসে আছে।
” তুলতুল
সাহেদা বেগমের ডাকে তুলতুল তাকায়। চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে। ইফাদের দেওয়া অপবাদ আর সায়ানের সাথে বিয়ে একটাও মেনে নিতে পারছে না তুলতুল।
এক পলক তাকিয়ে মাথা নিচু করে ফেলে। এই মানুষটার মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলার সাহস নেই তুলতুলের। চোখ দুটো আবার ছলছল করে ওঠে।
চলবে
#আমার তুমি
#পর্বঃ১৬
#তানিশা সুলতানা
ফুল সাজানো রুমে পায়চারি করছে তুলতুল। এটা সেই রুম যেখানে ও ঢাকায় আসার পরে থেকে ছিলো। রুমটা একদম পাল্টে ফেলেছে। রুমের ফার্নিচার কালার সবই পাল্টে গেছে।
আগের তুলনায় রুমটা অনেক বড়ও করেছে। শুধু রুম না পুরো দুই তালার সব কিছুই পাল্টে গেছে। মনে হচ্ছে ভেঙে আবার গড়া হয়েছে।
এই রুমে আগে তুলতুল থাকতো এটা আন্দাজ করেছে জানালা দেখে।
সাহেদা বেগম বাড়ি ওয়ালার মেয়ে নিশাকে বলেছিলো ফুলসজ্জা খাট সাজাতে।
মেয়েটা খুব সুন্দর সাজিয়েছে।
তুলতুলের খুব ইচ্ছে করে ফটাফট কয়েকটা সেলফি তুলতে। কিন্তু মন মানছে না। যদি সায়ান দেখে ফেলে তো কাঁচা চিবিয়ে খাবে।
কিন্তু বিয়ে তো একবারই আর ফুলসজ্জাও তো একবারই হবে। খাটটাও একবারই সাজানো হবে। এরকম সাজ আর জীবনেও সাজতে পারবে না। বাড়ি থেকে একটাও ছবি তুলতে পারে নি। বর পাল্টে গেছে এটা নিয়ে তো কান্নাকাটিই চলেছে সারাক্ষণ।
চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে ফটাফট কয়েকটা সেলফি তুলে নেয়। এক চিলতে হাসে তুলতুল। দীর্ঘ আট মাস পড়ে হাসলো। সায়ানকে বিয়ে করার জন্য এই হাসিটা না। এই হাসিটা হলো এই বিয়ে বিয়ে খেলা থেকে মুক্তি পাওয়ার হাসি।
এই রুমে সোফা নেই। শুধু একটা খাট ড্রেসিং টেবিল আলমারি আর টেবিল। সায়ান যে তুলতুলকে খাটে জায়গা দেবে না এটা তুলতুল জানে। তুলতুল সায়ানের সাথে বেড শেয়ার করতেও চায় না।
ওই বাড়ি থেকে আসার সময় একটা সুতোও আনে নি। সাহেদা বেগম আনতে দেয় নি। কিন্তু তুলতুল এখন পড়বে কি? বিয়ের ভাড়ি লেহেঙ্গা পড়ে কতখন থাকব?
কিন্তু থাকতেই হবে। কারণ এই মুহুর্তে কোথাও জামাকাপড় পাবে না।
হাই তুলে তুলতুল। অনেক দিন শান্তিতে ঘুমতে পারে নি। এখন লম্বা একটা ঘুম দরকার।
কিন্তু কোথায় ঘুমাবে? আশেপাশে দেখতে থাকে।
খাটের পেছনের দিকটায় ঘুমনো যায়। ওই খানে কেউ দেখবে না।
তুলতুল খাটের পেছনে একটা বালিশ নিয়ে শুয়ে পড়ে। যাতে সায়ান এসে ওকে না দেখতে পায়। দেখলে নিশ্চয় গলা টিপে মেরে ফেলবে? নয়ত ছাদ থেকে ফেলে দেবে। যেভাবেই হোক মার্ডার করবেই তুলতুলকে। কিন্তু তুলতুল মরতে চায় না। বাঁচতে চায়।
আর বাঁচতে হলে সায়ানের সামনে যাওয়া যাবে না।
গলা শুকিয়ে আসে তুলতুলের। ঢোক গিলে খাটের পেছনে বসে থাকে।
রাত দুইটা ছুঁই ছুঁই। সায়ান এখনো বাসায় ফেরে নি। সাহেদা বেগম চিন্তিত মনে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে৷
এক ঘন্টা হলো এভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু আর কতোখন এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে?
শান সুমু সোহেল মিয়া কেউ খান নি রাতে। সায়ানকে ছাড়া ওরা কেউ খাবে না।
সাহেদা বেগম কল করে সায়ানকে।
বাড়ির কাছেই গাড়িতে বসে ছিলো সায়ান। সায়ানের পাশেই পাখি বসে আছে।
ফোন বেজে ওঠে সায়ানের।
বিরক্ত হয় সায়ান। স্কিনে মা নামটা দেখে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
“কে কল করেছে?
পাখি সায়ানের কাঁধে হাত রেখে বলে
সায়ান পাখির দিকে এক পলক তাকায়।
” মা
ছোট করে বলে।
“ধরো
ফোনের দিকে ইশারা করে বলে পাখি।
সায়ান ফোন রিসিভ করে।
” কোথায় তুই আব্বা? তুই জানিস আমারা কেউ খাই নি? তোর বাবার ঔষধ আছে রাতে সে ঔষধও খায় নি।
কি শুরু করেছিস তুই? আমি চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছি।
এক নাগারে কথা গুলো বলে সাহেদা বেগম।
“মা রিলাক্স। আমি বাড়ি আসছি।
” পাঁচ মিনিট দিলাম তার মধ্যে তোকে বাড়ি দেখতে চাই আমি।
বলেই খট করে ফোন কেটে দেয়।
সায়ান দুই হাতে মাথা চেপে বসে।
“এনি পবলেম?
পাখি জিজ্ঞেস করে। তারপর আবার নিজেই নিজের মাথায় চাটি মারে।
” আমিও বোকার মতো জিজ্ঞেস করছি। জানিই তো পবলেম। যার জন্য এই রাত দুপুরে আমাকে এখানে বসিয়ে রেখেছো। তুমি চাইলে বিয়েটা আটকাতে পারতে। কিন্তু নাহহহ
মা যা বলবে তাই শুনবে। ওকে শুনেছো। ভালো করেছো। একসময় যাকে ভালোবাসতে তাকেই লাইফ পার্টনার হিসেবে পেয়েছো। শুকরিয়া আদায় করো।
তা না এখন আবার আমার কাছে হেল্প চাইছো কি করে তাকে দুরে সরাবে। বাসা থেকে বের করবে।
তুমি এক্সজেকলি কি চাও?
সায়ান চোখ বন্ধ করে ফোঁস করে শ্বাস নেয়।
“তুমি আমাকে বলেছো আমি অন্যায় করেছি ওই মেয়েটার সাথে মেনে নিয়েছি।
আমি ওই মেয়েটাকে কন্টিনিউ টর্চার করেছি। মেনেছিয়েছি।
এখন আমি চাইছি না ওই লোভী মেয়েটাকে খুন করে নিজের রেপুটেশন নষ্ট করতে।
তাই তোমার থেকে হেল্প চাইছি ওই মেয়েটাকে বাড়ি থেকে তাড়ানোর জন্য। ভালোই ভালোই যদি মেয়েটাকে বের করতে না পারি না
তাহলে চাপকে বাসা থেকে বের করবো বলে দিলাম।
জাস্ট নিতে পারছি না আমি।
চোয়াল শক্ত করে বলে সায়ান।
পাখি গাড়ির ছিটে মাথা রাখে।
” চলো আমার সাথে। দুরে কোথাও পালিয়ে যাই। কয়েকদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকি। আর এখানে রটিয়ে দেই আমি আর তুমি পালিয়েছি।
মেয়েটা এমনিতেই চলে যাবে। পরে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিও।
সায়ান চোখ পাকিয়ে তাকায় পাখির দিকে। ঢোক গিলে পাখি। একটু হাসার চেষ্টা করে।
“মজা করছি ইয়ার,
সিরিয়াসলি কেনো নিচ্ছো?
সায়ান কিছু বলে না। পাখি কাচুমাচু হয়ে বসে।
” আমি তো একটা মেয়ে সায়ান। এতো রাত ওবদি বাইরে আছি বাবা মা টেনশন করছে। আমাকে যেতো হবে।
শান্ত গলায় বলে পাখি।
“ওকে যাও
শক্ত গলায় বলে সায়ান।
পাখি দমে যায়। বুঝতে পারে সায়ান রেগে যাচ্ছে।
” সায়ান আমি
“যেতে বলেছি আমি
ধমক দিয়ে বলে পাখিকে।
তুমি তো কোনো সাজেশন দিতে পারবে না। তো তোমাকে আমার দরকার নেই।
যাও
সায়ানের ধমকে কেঁপে ওঠে পাখি। তরিঘরি করে গাড়ি থেকে নামে। পাখি নামতেই সায়ান গাড়ি নিয়ে চলে যায়।
প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে পাখির। মাঝরাতে মাঝ রাস্তায় ছেড়ে গেলো ওকে। একবার ভাবলোও না মেয়েটা একা যাবে কিভাবে? এতোটা কেয়ারলেস সায়ান?
শার্ট ফ্রকটা টেনে টেনে হাঁটুর ঢাকতে চেষ্টা করে পাখি। ফলাফল শূন্য। উঁচু জুতোটা খুলো হাতে নেয়। যখন তখন বখাটে ছেলেদের পাল্লায় পড়তে পারে।
বাবাকে কল করে গাড়ি পাঠাতে বলে।
….
বাড়ি ফিরে ভাই বোনকে ঘুম থেকে তুলে খাইয়ে তারপর রুমে এসেছে। এই মুহুর্তে সায়ানের প্রচন্ড ঘুম প্রয়োজন।
রুমের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয় সায়ান। ফুল একদম পছন্দ না ওর।
রুমের চারদিকে চোখ বুলায় সায়ান। তুলতুলকে দেখতে পায় না। ভ্রু কুচকে ফেলে সায়ান।গেলো কোথায় স্টুপিটটা?
ফোঁস করে শ্বাস ফেলে। হাত থেকে ঘড়ি খুলে ড্রেসিং টেবিলের ওপর রাখে। আয়নায় নিজেকে একবার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে সায়ান।
” ওই মেয়েটার সাথে রুম শোয়ার করা সম্ভব না। আবার মায়ের কথা অমান্য করে অন্য রুমে শিফট হওয়াও সম্ভব না।
ঠান্ডা মাথায় কিছু একটা করতে হবে। যাতে শাপও মরে লাঠিও না ভাঙে।
খোঁচা খোঁচা চাপ দাঁড়ি গুলো একটু বড় হয়েছে। আগের তুলনায় অনেকটা ফর্সা হয়ে গেছে। ইদানীং জীম করা হয়। তাই একদম ফিট দেখায়।
“এই রুমে কেউ থাকলে তাকে বলছি। আমি দশ মিনিটের জন্য ওয়াশরুমে যাবো। তো দশ পরে এসে যেনো এখানে কাউকে না দেখি।
গলা উঁচু করে বলে সায়ান।
সায়ানের কথা তুলতুলের কান ওবদি পৌছায় না। কারণ তুলতুল অনেক আগেই ঘুমিয়ে গেছে। মাথার কাছে একটা কয়েল আর পায়ের কাছে একটা কয়েল জ্বালিয়ে শুয়েছে। খাটের পাশে চিপা জায়গা পেয়ে মশারা ওখানে বাসা বেঁধেছে।
খাটের পয়া জড়িয়ে আরামসে ঘুমিয়ে আছে তুলতুল
সায়ান ফ্রেশ হয়ে রুমে আসে। এখনো রুমে কেউ নেই।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সায়ান। যাক আপদটা ঘাড় থেকে নেমেছে।
নিশ্চয় বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে।
ভালোই হয়েছে।
সায়ান লাইট বন্ধ করে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে শুয়ে পড়ে।
দু চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কয়েলের ধোঁয়ার গন্ধে ঘুমতে পারছে না। ধোঁয়া একদম সায়ানের নাক এসে লাগছে।
কিন্তু সায়ান তো কয়েল জ্বালায় নি। তাহলে?
এক লাফে উঠে বসে সায়ান।
লাইট জ্বালায়। খাটের বাম সাইড থেকো ধোঁয়া আসছে। সায়ান উঁকি দেয়।
মুহুর্তেই সায়ানের মাথা গরম হয়ে যায়। দাঁত কটমট করে।
কয়েলের ধোঁয়া তুলতুলের নাকেও লাগছে। তাই তুলতুলের ঘুম ভেঙে যায়।
চোখ খুলেই একজোড়া লাল চোখের সম্মুখীন হয় তুলতুল। ভয় পেয়ে জোরে চিৎকার দিয়ে উঠে বসতে যায় আর ওই লালা চোখ ওয়ালা মানুষটা মাথার সাথে গুতা খায়।
এবার তুলতুল তুই শেষ।
ভয়ে ভয়ে তুলতুল একটু একটু করে সরে এসে প্রাণপনে এক দৌড় দিতে যায়। লেহেঙ্গারে বেঁধে পড়ে যায়।
যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধে হয়।
মনে মনে আওড়াতে থাকে কথাটা তুলতুল।
সায়ান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে তুলতুলের দিকে তাকিয়ে আছে। সায়ানের চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে।
তুলতুল দুই চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে।
“প্লিজ আমাকে মার্ডার করবে না। আমি বাঁচতে চাই। এখনো নাতিনাতনির মুখ দেখা বাকি।
দুই কাঁদো কাঁদো গলায় বলে।
” মার্ডার করবো না। খুন করবো এখন।
আশেপাশে কিছু খোঁজে সায়ান।
“এইবার বেঁচে গেলে আর কখনোই এই রুমে ঢুকবো না। কিন্তু আমাকে বাঁচাবে কে?
চলবে