#আমার তুমি
#পর্বঃ২৭
#তানিশা সুলতানা
“জ্বলে?
আমাকে পাখির সাথে দেখে বুকে জ্বালাপোড়া করে? কষ্ট হয়? জেলাস হস? পাখিকে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করে?
রিভেঞ্জ শব্দটা কখনো শুনেছিস নিশ্চয়?
আমারও জ্বলতো। খারাপ লাগতো। কষ্ট হতো। ইফাদ যখন তোর (গলা, কাঁধ, বুক, কপাল, কোমর ছুয়ে বলে) এখান এখানে এখানে এখানে ছুঁয়ে দিতো আমারও খারাপ লাগতো। কষ্ট হতো।
বারবার তোকে না করতাম ওর কাছাকাছি থাকতে।
মনে পড়ে তোর?
চিৎকার করে বলে সায়ান। তুলতুল অবাক চোখে তাকিয়ে আছে সায়ানের দিকে। চোখ দুটো টলমল করছে।
” এখানে কষ্ট হতো (বুকের বা পাশে হাত দিয়ে)
শ্বাস আটকে আসতো। খুন করে ফেলতে ইচ্ছে হতো।
চোয়াল শক্ত করে বলে সায়ান।
টুপ করে তুলতুলের চোখ থেকে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। সায়ান চোখ বন্ধ করে নেয়। দুজন দুজনের শ্বাস গুনতে পারছে। তুলতুল নিজের ডান হাতটা সায়ানের বুকের বা পাশে রাখে।
“তোর জন্য আমার জীবনটা ছারখার হয়ে গেছে। আমার ভাই এখনো পুরোপুরি সুস্থ নয়। আমার দাদিমা আমাদের সাথে নেই। সব থেকে বড় হ্মতি তুই করেছিস আমার। এবার তোকে আমি কষ্ট দেবো। যতটা আমাকে দিয়েছিস তার থেকেও বেশি।
তুলতুল চুপচাপ সায়ানের বুকে মাথা রাখে। চোখ বন্ধ করে সায়ানের কষ্ট অনুভব করে। মুচকি হাসে তুলতুল দুর্বল হলে চলবে না। সায়ান যদি বুঝতে পারে তুলতুল দুর্বল হয়ে পড়েছে তাহলে পাখির সাথে বেশি করে ঢলাঢলি করবে। আরও বেশি কষ্ট দেওয়ার জন্য।
সায়ান চোখ বন্ধ করে তুলতুলকে অনুভব করছে। তুলতুল বুকে মাথা রাখাতে বুকটা শিতল হয়ে গেছে। পারছে না দুরে ঢেলে দিতে।মন বলছে মেয়েটাকে ছুঁড়ে ফেলে দে। বিবেক বলছে এই মেয়েটার কোনো দোষ নেই। মেয়েটা পরিস্থিতির স্বীকার ছিলো।
তুলতুল সায়ানের বুক থেকে মাথা তুলে। সায়ানের পায়ের ওপর ভয় দিয়ে খানিকটা উঁচু হয়ে সায়ানের এলোমেলো চুল গুলো হাত দিয়ে ঠিক করে দেয়। কপালের ঘাম ওড়না দিয়ে মুছে দেয়।
সায়ান গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তুলতুলের দিকে।
“রিভেঞ্জ নিচ্ছেন? আমাকে জ্বালাতে চাইছেন?
কিন্তু পারলেন না সায়ান মাহমুদ। কারণ আমি না জ্বলছি আর না জেলাস হচ্ছি। আপনি পাখিকে বিয়ে করে তিন বাচ্চার বাবা হলেও আমার কিচ্ছু এসে যায় না। তবে হ্যাঁ আপনাকে ডিভোর্স আমি দেবো না।
সায়ান তুলতুলের দিকে সরু চোখে তাকায়। তুলতুল সায়ানের গলা জড়িয়ে ধরে।
” আপনি কি জানেন মিস্টার রিভেঞ্জ আমিও নিতে জানি। মনে আছে আমি যখন ইফাদের সাথে শপিং করতে যাচ্ছিলাম তখন আপনি আমাকে মুখ লুকাতে বাধ্য করেছিলেন।
তো এখন আমার পালা।
বাঁকা হাসে তুলতুল।
সায়ান বড়বড় চোখ করে তাকায় তুলতুলের দিকে।
“বাড়াবাড়ি করবি না একদম। চাপকে সিধে করে দেবো তোকে। মুখে মুখে কথা বলা শিখে গেছিস।
চোখ পাকিয়ে বলে সায়ান।
তুলতুল ফিক করে হেসে ফেলে।
সায়ানের গলা ছেড়ে দেয়। খানিকটা দুরে গিয়ে দাঁড়ায়।
” এটাই আপনার আর আমার মধ্যে পার্থক্য। আমি সম্পর্ককে সম্মান করতে জানি। সম্পর্কের মূল্য বুঝি। তাই তো আপনার এতো অবহেলা সয্য করেও টিকে থাকার চেষ্টা করছি। আর ইফাদকেও বিয়ে করতে রাজি ছিলাম। আপনার জায়গায় অন্য কোনো গেলো থাকলেও আমি তার সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতাম। কারণ সম্পর্ক ভাংতে সময় লাগে না। কিন্তু একটা সম্পর্ক গড়তে অনেক সময় লাগে।
গম্ভীর গলায় বলে তুলতুল। সায়ান থমকায়। আজ প্রথমবার তুলতুলে এতো গম্ভীর হয়ে কথা বলতে দেখছে। তবে ভালোই লাগছে। তুলতুল কষ্ট পেলেই সায়ান খুশি হবে।
সায়ান বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে তুলতুলের দিকে তাকিয়ে।
এবার তুলতুল চ
শয়তানির হাসি দেয়।
“এবার আপনাকে দেখাবো জেলাস কাকে বলে? আর এটাও দেখাবো আমি জেলাস না। আমার জ্বলেও না। আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে জানি। হুটহাট রেগেও যায় না আবার একবার রেগে গেলে সহজে রাগ কমে না।
এক গাল হেসে বলে তুলতুল।
” চলেন আমার সাথে।
তুলতুল সায়ানের হাত ধরে বলে।
“ফ্রীতে শুটিংয়ের মজা অনুভব করাবো।
চোখ টিপে বলে তুলতুল।
সায়ান চোখ পাকিয়ে তাকায়। তুলতুল সেদিকে পাত্তা দেয় না। বা হাত দিয়ে চোখ মুছে সায়ানকে নিয়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে।
” তুলতুল বাড়াবাড়ি করিস না। থেমে যা বলছি।
“বাড়াবাড়ি কই করলাম? দেখাতে তো হবে আমি জেলাস না। তাই না?
সায়ানের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলে তুলতুল।
ওদের বিল্ডিংয়ের পাশেই একটা ক্যাফো আছে। সেখানেই পাখি তুহিন আর সুমন কফি খাচ্ছিলো। তখন সেখানে সায়ানকে নিয়ে উপস্থিত হয় তুলতুল। তুলতুলের ঠোঁটের কোনে লেগে আছে এক চিলতে হাসি। আর সায়ানের মুখটা হয়ে আছে হুতুম পেঁচার মতো।
“তুহিন ভাইয়া উঠুন।
তুলতুল তুহিনের চেয়ার ধরে বলে। সবাই চমকে ওঠে। তুলতুল তারা দিয়ে যাচ্ছে। তুহিন উঠে দাঁড়ায়। তুলতুল সায়ানকে টেনে এসে বসিয়ে দেয় তুহিনের চেয়ারে পাখির পাশে।
সায়ান অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তুলতুলের দিকে। মেয়েটা খুব বাড়াবাড়ি করছে। সায়ান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। ইচ্ছে করলেই পারতো তুলতুলকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে চলে যেতে। কিন্তু সায়ান যাবে না। ও দেখতে চায় সত্যিই তুলতুল জেলাস কি না?
তাই চুপচাপ বসে আছে।
” বুঝলাম না?
তুহিন তুলতুলকে প্রশ্ন করে। পাখি আর সুমন হা করে দেখছে হচ্ছে টা কি?
“আসলে কি হয়েছে?
ভাইয়া পাখি আপুর সাথে সময় কাটাতে চাই ছিলো। কিন্তু তখন আমার খুব জোর পেয়েছিলো ভাইয়াকে ইশারায় বলি। আর ভাইয়া আমাকে নিয়ে রুমে যায়।
তারপর আর কি বলবো? এতো এতো বকা দিলো আমাকে। এখনো না কি পাখি আপুর সাথে কাপাল পিক তোলা বাকি।
তোমরাই বলো পটি কি বলে কয়ে আসে?
আমার কি দোষ?
তাই নিয়ে এলাম। এবার আমি দায়িত্ব নিয়ে কাপাল পিক তুলে দেবো।
সায়ানের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলে তুলতুল।
সায়ান তুলতুলের দিকেই তাকিয়ে আছে। পাখি তো খুব খুশিতে। খুশিতে গদগদ হয়ে সায়ানের হাত চেপে ধরে।
” আচ্ছা চলুন আমরা চলে যাই। ওনাদের মাঝে আর কাবাবের হাড্ডি হয়ে থাকবো না।
তুলতুল তুহিনকে বলে।
তুহিন আর সুমন সায় দেয়। তুলতুল চোখের ইশারায় সায়ানকে অল দ্যা বেস্ট বলে চলে যায়।
“তুলতুলের মনে কি সত্যিই আমার জন্য কোনো ফিলিং নেই? কোনো অনুতাপ নেই ওর মধ্যে? ভালোবাসে না ও আমায়?
আমিও কি বোকা। তুলতুল একটা বেইমান। এখন দেখেছে আমার ভালো চাকরি আছে। বাড়ি গাড়ি করেছি তাই আমার সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
সায়ান তাচ্ছিল্য হাসে।
কিন্তু নাহহহ তুলতুলের মুখ থেকে ভালোবাসি শুনতেই হবে। যে করেই হোক। তবেই তো হবে এই গল্পের সমাপ্তি।
বাঁকা হাসে সায়ান।
” সায়ান কি কফি খাবে বলো?
পাখি লাজুক হেসে বলে।
“তোমার ইচ্ছে।
সায়ান মিষ্টি হেসে বলে।
ধক করে ওঠে তুলতুলের বুকের ভেতরটা। হাসি মুখটা চুপসে যায়। বুকের বা পাশে চিনচিন ব্যাথা করতে থাকে।
তুলতুল তুহিন আর সুমনের সাথে অন্য টেবিলে বসেছিলো। তুলতুলের ওখান থেকে একদম সোজাসুজি দেখা যাচ্ছে সায়ানদের।
তুলতুল মাথা নিচু করে ফেলে।
“আপনি কি বুঝেন না সায়ান আমার এসব পছন্দ হচ্ছে না। ভালো লাগছে না আমার। খুব কষ্ট হচ্ছে। যতটা কষ্ট আপনি আমাকে দিতে চাইছেন তার থেকেও বেশি কষ্ট হচ্ছে আমার। বুকটা পুরে ছাই হয়ে যাচ্ছে।
কেনো বুঝেন না আপনি?
খুব খারাপ আপনি?
খুব খারাপ।
বিরবির করে বলে তুলতুল।
🥀🥀🥀🥀
শান আজকে মিলিকে বাইকের পেছনে বসিয়ে ভার্সিটিতে নিয়ে গেছে। মিলি শানের বেস্টফ্রেন্ড। দুজনের বাড়ি পাশাপাশি হওয়াতে একসাথেই গেছে আজ।
ইশা এটা দেখে ফেলে। ভীষণ রেগে গেছে ইশা। সাথে খুব কষ্ট পেয়েছে। মেয়েটা কি সুন্দর শানের বুকের ওপর হাত রেখেছিলো। কেনো রাখলো? হেসে হেসে কথা বলছিলো। মাঝেমধ্যে শানের পিঠে থাপ্পড় দিচ্ছিলো। শাওও হেসে লুটোপুটি খাচ্ছিলো।
ইশা স্কুলে যাচ্ছিলো। ভার্সিটির পাশ দিয়েই স্কুলে যেতে হয়। চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে ইশার। কয়েক ফোঁটা পানিও গড়িয়ে পড়েছে। অটো থেকে দেখেছে ওদের।
ভার্সিটির পাশ দিয়ে অটোটা যাওয়ার সময় ইশা ভার্সিটির গেটের দিকে তাকায়। শান মেয়েটার হাত ধরে হাঁটছে।
” আপনার পাশে অন্য কাউকে দেখার আগে আমি দুনিয়া ছাড়তে চাই। বিরবির করে বলে ইশা। তারপর গা ছেড়ে দেয়৷ ফলে চলতি অটো থেকে পিচ ঢালা রাস্তায় পড়ে যায় ইশা। কিছু পড়ার শব্দে শান মিলি দুজনই পেছনে তাকায়। ইশাকে পড়ে থাকতে দেখে শান চিৎকার দিয়ে ওঠে।
চলবে
#আমার তুমি
#পর্বঃ২৮
#তানিশা সুলতানা
“ভাইয়া আপুর কোমর জড়িয়ে আপুর দিকে রোমান্টিক একটা লুক দিন।
তুলতুল চোখ থেকে ক্যামেরা সরিয়ে এক গাল হেসে বলে। সায়ান চোয়াল শক্ত করে তুলতুলের দিকে তাকায়।
কফি খাওয়া শেষ হতেই ধরে বেধে নিয়ে এসেছে পার্কে। পাশাপাশি দাঁড় করিয়েছে সায়ান আর পাখিকে।
পাখি লাজুক হেসে কানের পিঠে চুল গুঁজে। তুহিন তুলতুলকে দেখতে ব্যস্ত আর সুমন এক পাশে গালে হাত দিয়ে বসে ওদের তামাশা দেখছে।
” কি হলো ভাইয়া? দেখিয়ে দিতে হবে না কি?
ছোট ছোট চোখ করে সায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে তুলতুল।
সায়ান সরু চোখে তুলতুলের দিকে তাকায়। ভ্রু কুচকে যায় সায়ানের। তুলতুলের চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে। হেসে হেসে কথা বলছে ঠিকই কিন্তু কথার ভাজেই কষ্ট প্রকাশ পাচ্ছে।
তৃপ্তির হাসি হাসে সায়ান। ঠোঁট কামড়ে পাখির দিকে এক পলক তাকায়।
“গ্রেট, আমার বউয়ের কষ্ট হচ্ছে। তাহলে তো রোমান্টিক লুক দিতেই হবে।
বাঁকা হেসে পাখির কোমর জড়িয়ে ধরে সায়ান। পাখি চমকে ওঠে। এটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।
তুলতুলের বুকের বা পাশে চিনচিন ব্যাথা করছে। এতখনে আটকে রাখা কান্না এখন আটকাতে কঠিন হয়ে পড়ছে। চোখের অবাধ্য পানি গুলো গড়িয়ে পড়তে চাইছে।
মুখে মিথ্যে হাসি ঝুলিয়ে একটা ছবি তুলে দেয় তুলতুল।
পাখি এখনো সায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। সায়ান রোমান্টিক লুক দিতে জানে না। তাই সে চোখ বন্ধ করে আছে।
তুলতুল ঠাস করে ক্যামেরা ফেলে দেয়। চমকে ওঠে সায়ান আর পাখি। সুমন ঠাস করে পড়ে যায়। আসলে ও খুব মনোযোগ দিয়ে ছবি তোলা দেখছিলো। হঠাৎ বিটকে শব্দে চমকে ওঠে। হাতের ওপর ভর দিয়ে বসায় ঠাস করে পড়ে যায়।
তুলতুল গাল ফুলিয়ে এগিয়ে আসে সায়ানদের দিকে।
” নষ্ট ক্যামেরা। ছবি ওঠে না।
বুকে হাত গুঁজে বলে তুলতুল।
পাখি ভ্যাবেচেকা খেয়ে যায়। কারণ এটা পাখির নতুন ক্যামেরা।
সায়ান ঠোঁট কামড়ে হাসে। গা জ্বলে ওঠে তুলতুলের। ইচ্ছে করছে উঁচু বিল্ডিং থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিতে। শালা বজ্জাত। কি কিউট করে নিকনিক করছিলো।
“আমার ফোনের ক্যামেরা মারাক্তক ভালো
এটা দিয়ে তুলে দে।
সায়ান পকেট থেকে ফোন বের করে তুলতুলের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে।
চোখ পাকিয়ে তাকায় তুলতুল সায়ানের দিকে।
” ফোনটা নষ্ট করার ইচ্ছে হয়েছে?
দাঁতে দাঁত চেপে বলে তুলতুল। সায়ান তারাহুরো করে ফোন পকেটে পুরে নেয়। নতুন কিনেছে ফোনটা। এটা ভাঙার ইচ্ছে নেই।
“এবার আমি কিভাবে পিক তুলবো?
পাখি নেকা কান্না করে বলে।
” ও লে সোনা বাবু লে
তুলতুল পাখির গাল টেনে বলে। তুলতুল রেগে পাখির হাত সরিয়ে দেয়।
“বজ্জাত মেয়ে তুমি ইচ্ছে করে ক্যামেরা ভেঙেছো।
পাখি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে।
” এতোখন পরে বুঝলে?
লিজেন্ড হতে পারবে না দেখি।
মুচকি হেসে বলে তুলতুল।
“কিছুখনের জন্য ধার দিয়েছিলাম বর টাকে। সারাজীবনের জন্য দেয় নি।
ভেংচি কেটে বলে তুলতুল।
” আগে বলবি তো?
তাহলে আর কফি খেয়ে সময় নষ্ট করতাম না। কিছুখনের জন্য হওয়া বউকে একটু আদর করে দিতাম।
বাঁকা হেসে বলে সায়ান।
তুলতুল সায়ানের দিকে তাকিয়ে মেকি হাসে।
“যে যেমন তার ইচ্ছে গুলোও তেমন।
ইস্টুপিট
বিরবির করে বলে তুলতুল।
” ভাংবে তবু মচকাবে না ইডিয়েট একটা।
সায়ান মনে মনে বলে।
তুলতুল সায়ানের দিকে তাকিয়ে চলে যায়।
“সায়ান তুমি কি ওকে মেনে নিয়েছো?
রেগে বলে পাখি।
” মেনে আবার নিলাম না কবে? জাস্ট রেগে আছি। রাগ কমছে না
জাস্ট এটাই।
সায়ান স্বাভাবিক ভাবে বলে সায়ান।
“ইটস নট ফেয়ার সায়ান। ওই মেয়েটা তোমার সাথে কি কি করেছো ভুলে গেছো তুমি? কি করে ভুলতে পারো তুমি? তোমার কি কোনো আত্নমর্যাদা নেই?
সরিয়ে দাও মেয়েটাকে। তুমি আমাকে ডিজার্ভ করো। ওই মেয়েটা তোমার লেভেলেরই না।
সায়ানের কাঁধে হাত রেখে বলে পাখি।
সায়ান পাখির দিকে ফিরে মুচকি হাসে।
” অসম্মান করবা না একদম। ও যা করেছে আমার সাথে করেছে। তোমার সাথে না। আমি বুঝে নেবো। ভালো হলেও ও আমার বউ। খারাপ হলেও ও আমারই বউ।
তাছাড়া তোমরা দুজনই মেয়ে। অচেনা একটা শহর। কতো সুন্দর জায়গাটা। এখানে বারোটা ছেলের সাথে এসেছো। বারো জনের মধ্যে একজন মাএ মেয়ে আছে।
আমার তো মনে তোমাদের মাঝে ভালো বন্ধুত্ব হওয়া উচিৎ। দুজনই এনজয় করবে, ঘুরে ফিরে পরিবেশটা উপভোগ করবে, ছবি তুলবে। সুন্দর কিছু স্মৃতি সাথে নিয়ে বাংলাদেশ ফিরবে।
পাখি তুলতুল তোমার একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ডের বউ। ভাবি বলবে৷ আর সম্মান করবে কেমন?
পাখির গালে ছোট একটু হাত বুলিয়ে মিষ্টি হেসে বলে সায়ান।
পাখি ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে সায়ানের দিকে।
“রুমে যাও। রেস্ট নাও। সকালে আবার জার্নি করতে হবে। আসছি।
সায়ান পাখির মাথায় হাত বুলিয়ে চলে যায়।
পাখি হাঁটু মুরে বসে থাকে।
” তুমি কি বোঝে না সায়ান ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে? ছেলে মেয়ে কখনোই বেস্টফ্রেন্ড হয় না। খুব ভালোবাসি তোমায়। কি এমন আছে ওই মেয়েটার মাঝে? ওই মেয়েটা তোমাকে এতো কষ্ট দিলো তবুও তুমি তার পেছনেই ছুটছো। কেনো সায়ান?
আমি কি করে এটা হতে দেবো???
তুলতুল রুমে ঢুকে এক জগতে পানি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সায়ান আসবে আর সায়ানের গায়ে ছুঁড়ে মারবে। সায়ানের লাগেজ তুহিনের রুমে রেখে এসেছে।
এখন ভিড়িয়ে দিলেই হয়।
বেচারা সারা রাগ ঠান্ডায় বরফ হয়ে যাবে। আর ওই বরফেই তুলতুলের মন শান্ত হবে। বজ্জাত লোক। হনুমান। শিয়াল। সাহস কতবড় বড়ে বউ থাকতেও অন্য মেয়েদের সাথে ঢলাঢলি করে। ইচ্ছে করছে সারা মুখে চুলকাইলি লেপ্টে দিতে৷। কিন্তু এখানে তো আর চুনকালি পাওয়া যাবে না। তাই আপাতত পানি দিয়েই কাজ চালাতে হবে।
সায়ান ফোনে কথা বলতে বলতে রুম ঢুকে আর সাথে সাথে এক জগ ঠান্ডা পানি এসে পড়ে সায়ানের গায়ে। চমকে ওঠে সায়ান। ফোনটা কেটে বিছানায় ফেলে সায়ান।
তুলতুল বিশ্ব জয়ের হাসি দেয়। ভাব দেখিয়ে টিশার্টের গলা ঝাঁকিয়ে মুখ বাঁকিয়ে চলে যেতে নেয়।
সায়ান তুলতুলের হাত ধরে। ভ্রু কুচকে তাকায় তুলতুল।
“বলছিলাম না মার্চ করবেন না? যে কেউ আমাকে মার্চ করুক এটা আমার বিরক্ত লাগে। সো ডোন্ট টাচ মি।
তুলতুল চোখ পাকিয়ে সায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে।
“তাই না কি?
তুই ভাব দেখিয়ে ডোন্ট টাচ মি না বললে তোকে টাচ করতাম না
তোকে টাচ করতে আমার বইয়েই গেছে। আমার পাখি আছে।
বলে সায়ান।
তুলতুল হাত মুচরা মুচরি করে ছাড়ানোর জন্য।
” ভিজিয়ে দিলি আর তোকে এমনি এমনি ছেড়ে দেবো?
বাঁকা হেসে বলে সায়ান।
তুলতুল মিষ্টি করে হাসে।
“নো পবলেম
এক জগ পানি এনে আমাকে ভিজিয়ে দিয়ে রিভেঞ্জ নিন। বারণ করছে কে?
এমনিতেই আমি এখন গোছল করবো।
সায়ান ভ্রু কুচকে তাকায়। গন্ডগোল তো কিছু একটা আছে। পুরো রুমে চোখ বুলায় সায়ান। সবই তো ঠিক আছে। কিন্তু লাগেজ একটা। লাগেজ তো দুটো থাকার কথা। এখানে শুধু সায়ানের লাগেজ তুলতুলেরটা কই গেলো?
সায়ান তুলতুলের মুখের দিকে তাকায়।
মেয়েটা হাসছে। এবার সায়ান ফিক করে হেসে ফেলে। তুলতুলের হাসি বন্ধ হয়ে যায়। কপালে ভাজ ফেলে সায়ানের দিকে তাকায়। পাগলের মতো হাসছে কেনো?
” কাম অন তুলতুল
একটু তো চালাক হ।
এতো বোকা আর বলদ কেনো তুই?
তুলতুলের হাত ছেড়ে দিয়ে বলে সায়ান।
তুলতুল কোমড়ের হাত দিয়ে দাঁড়ায়।
“বলদ কেনো বললেন?
সায়ান তুলতুলের কোমর জড়িয়ে ধরে।
” ওয়েট বেবি
কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে ফিসফিস করে বলে সায়ান। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয় তুলতুল। বুক টিপটিপ করছে। ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে। সায়ান কি বুঝে গেলো? এখন কি হবে? নিশ্চিত পিটানি খেতে হবে।
তুলতুল ভাবনার মাঝেই নিজেকে শূন্যে অনুভব করে। পড়ে যাওয়ার ভয়ে সায়ানের গলা জড়িয়ে ধরে। ছোট ছোট চোখ করে সায়ানের দিকে তাকায়। সায়ানের ঠোঁটের কোনে এখনো হাসি ঝুলছে।
“আজকে তুই শেষ তুলতুল।
তুলতুল একদম শক্ত করে সায়ানের গলা জড়িয়ে ধরে। যাতে সায়ান ওকে ফেলে দিতে না পারে। ফেলে দিলেই কোমরটা ভেঙে যাবে।
বাথটাবে পানি ভরাই ছিলো। সায়ান তুলতুলকে আস্তে করে বাথটাবের শুয়িয়ে দেয়। নাক মুখে পানি উঠে যায় তুলতুলের। হুরমুর করে সায়ানের গলা ছেড়ে বাথটাব শক্ত করে ধরে মুখটা পানি থেকে ওপরে তুলে।
কাশতে থাকে তুলতুল কয়েক সেকেন্ডই অনেকটা পানি খেয়ে ফেলছে।
সায়ান বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে মিটমিটিয়ে হাসছে।
” বজ্জাত লোক একটা। এইভাবে প্রতিশোধ নিতে হয়? আমারই ভুল হয় এই হনুমানকে শাস্তি দিতে গেছিলাম। আমি তো ভুলেই গেছিলাম একে একটা থাপ্পড় দিলে আমার দশটা খেতে হবে।
তুলতুল বিরবির করে নিজে নিজেকে গালি দেয়।
শার্টের বোতাম খুলতে থাকে।
তুলতুল বড়বড় চোখ করে তাকায়।
“এএএএ কককি কককরছেন? বোতাম খখুলছেন কেনো?
তুতলিয়ে বলে তুলতুল।
সায়ান উওর দেয় না। শার্ট খুলে বালতিতে রাখে। শার্টের নিচে সেন্ডো গেঞ্জি ছিলো। তুলতুল হাঁপ ছেড়ে বাঁচে।
সায়ান জুতো খুলে বাথটাবের ভেতর নামে। সায়ানকে নামতে দেখে তুলতুল উঠে আসতে নেয়।
তুলতুল উঠে আসতে নেয়। সায়ান হাত ধরে টান দেয়। একদম সায়ানের বুকের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে। সায়ানের গলা ওবদি পানির নিচে। আবারও পানি খায়।
তুলতুল অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায় সায়ানের দিকে।
সায়ান আরও একটু শক্ত করে আকড়ে ধরে তুলতুলকে।
” ভুল করে তোর লাগেজ টাই রেখে এসেছিস তুহিনের রুমে। এবার তুই কি করবি?
ফিসফিস করে বলে সায়ান। বড়বড় চোখ করে তাকায় তুলতুল। এতো বড় ভুল করলো কি করে? সায়ান ঠিলই বলেছে। একদম বলদ তুলতুল।
এবার কি হবে?
সায়ানের দিকে কাঁদো কাঁদো ফেস করে তাকায় তুলতুল। সায়ান ফিক করে হেসে ফেলে।
“বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান
এই বার তোমার আমি বধিবো পরাণ”
ফিসফিস করে বলা কথা গুলো মারাক্তক। হার্ট জোরে জোরে লাফাচ্ছে তুলতুলের। উঠতেও পারছে না। এই লোকটা না ছাড়লে এখান থেকে উঠে দাঁড়ানো অসম্ভব। সায়ান তুলতুলের ভীতু লাজুক মুখটার দিকে তাকিয়ে একটু হাসে।
আজকে শাড়ি পড়ার পর থেকে মেয়েটাকে অন্য রকম লাগছে। ঘোর লেগে যাচ্ছে। তাই তো শাড়িটা খুলে দিলো। এখনো কিছু নিষিদ্ধ ইচ্ছে মনে জেগে উঠছে। কিন্তু ইচ্ছে গুলোর প্রাধান্য পাওয়ার সময় এটা না। এই সময়টা ইচ্ছে গুলোকে দমিয়ে রাখার।
তুলতুলের কানে একটা কামড় দিয়ে উঠে যায় সায়ান। তুলতুল চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নেয়। এই লোকটা আজকে একটু বেশিই চিপে যাচ্ছে। পবলেম কি এর?
মনে মনে বলে তুলতুল।
সায়ান শিশ বাজাতে বাজাতে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে যায়।
তুলতুল কপালে হাত দিয়ে ওখানেই বসে থাকে।
ঠান্ডায় হাত পা শিতল হয়ে আসছে। রাত আনুমানিক সাতটা কি আটটা বাজবে হয়ত।
উঠে ভেজা শরীর নিয়ে ওয়াশরুমে পায়চারি করছে। সারা রাত এভাবে থাকবে কি করে? সায়ান তো আস্ত হনুমান ওনার মনে কোনো দয়া মায়া নেই। কি করবে তুলতুল এখন?
কেউ তো একটু সাহায্য করতে এসো?
কিন্তু এই অচেনা শহরে কেউ আসবে না।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তুলতুল। গ
হঠাৎ করে তুলতুলের চোখ যায় দরজার ওপর একটা সাদা শার্ট রাখা।
শার্টটা হাতে নেয় তুলতুল।
এটা পড়লে কেমন হয়? কিন্তু এটা পড়ে সায়ানের সামনে দাঁড়াবো কেমনে?
চলবে