উপন্যাসের নাম::#আমি_আছি
লেখনিতে:#সাদিয়া_আফরোজ
পর্ব: ৪৯
,
,
,
,
,
,
তিন্নি আসার সপ্তাহ পেরুলো। তৃধার সাথে মনোমালিন্য না থাকলেও একটা জড়তা থেকেই গেছে। তৃধা অপছন্দনীয় নয় তবে সমস্যা তিন্নির নিজের মধ্যে। তৃধার বিরুদ্ধে গিয়ে,তৃধার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর তার সাথে স্বাভাবিক হতে পারছে না। নিজের মধ্যে একটা অপরাধ বোধ জড়তা কাজ করছে। যদিও তৃধা এইসব জানে না তাও তিন্নি সেইভাবে মিশতে পারেনি। অন্যদিকে তৃধার এতো কিছু ধরে বসে নেই। বিগত এক সপ্তাহে তার দিনকাল তিন্নি আর তার ছেলে মিরানকে নিয়ে যাচ্ছে। যার কারনে তৃধাকে খালি পাওয়া নুসাইবের জন্য মুশকিল হচ্ছে। বউটা পারলে চব্বিশ ঘন্টা তার বোন আর ভাগ্নের সাথে কাটিয়ে দেয়।
সপ্তাহের শুক্রবার, নুসাইবের অফিস নেই তাও সে তৈরি হয়ে বসে আছে। তৃধা খুব গুছিয়ে শাড়ি পরলেও আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে অনেক্ষণ। নুসাইব থুতনিতে হাত ঠেকিয়ে তাকিয়ে আছে।
এইদিকে তৃধা চুল নিয়ে পড়েছে মহা বিপাকে। যে ভাবেই করছে ভালো লাগছে না। খোঁপা করেও দেখেছে বেনী করেও দেখেছে। কোনোটাতেই মানাচ্ছে না।
তৃধা চেহারায় স্পষ্ট বিরক্তি ফুটে উঠেছে। নুসাইব তা দেখে কিঞ্চিৎ হাসলো। এইদিকে তমাল নবনী নিচ থেকে সমানে চিল্লাচিল্লি করছে। নুসাইব তমালকে মেসেজ পাঠিয়ে উঠে দাঁড়ায়। তৃধা হাল ছাড়লো। হাত খোঁপা করতেই নুসাইব হাত ধরে বললো,,” ওয়েট আমি দেখছি। ”
তৃধা চমকালেও অবাক হলো না। আজকাল নুসাইবের কাজে খুব একটা অবাক হয়না সে। তৃধা জানে মানুষটার প্রতিটা কাজ ভালোবাসার,এতে ভনিতা নেই, ছলনা নেই। তৃধা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। নুসাইব আয়নার মাঝে কয়েক সেকেন্ড তৃধার দিকে তাকিয়ে চিরুনি হাতে নিয়ে পুনরায় চুল আঁচড়ে দিতে লাগল। সামনের কিছু চুল নিয়ে পেছনে ক্লিপ দিয়ে আটকে বাকি গুলো খোলা রাখলো। তৃধা নিঃপলক তাকিয়ে আছে। নুসাইব আলতো হেসে বলল,,” পারফেক্ট। এইবার দেখো , খুব সুন্দর লাগছে।”
তৃধা আয়নার মাঝে নিজেকে দেখে নুসাইবারে দিকে তাকিয়ে বলল,,” হুম সুন্দর। কিন্তু চুল ছেড়ে দেওয়া। আমিতো বাড়ির বউ, এইভাবে গেলে কেমন লাগবে? তাছাড়া আজ প্রথম বাড়ি যাচ্ছি।”
নুসাইব ভ্রু কুঁচকে বললো,,” বউ হওয়ার সাথে চুল ছেড়ে রাখার কি সম্পর্ক? তিন্নির আর নবনীরও তো চুল ছেড়ে রাখা। তাহলে তোমার জন্য কি নতুন আইন চালু করা হয়েছে? হলেও সেটা মানার দরকার নেই। তুমি আমার সাথে যাচ্ছো। যেখানে আমার সমস্যা নেই সেখানে তোমারো থাকার কথা না। তাছাড়া তুমিতো তোমাদের বাড়িতে যাচ্ছো? ওইখানে এতো ফর্মালেটি কিসের? চলো , সুন্দর লাগছে তোমাকে।”
তৃধা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে বললো,,” আপনি এমন কেন?”
নুসাইব সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,,” কেমন?”
তৃধা নুসাইবের মুখামুখি দাঁড়িয়ে দুই হাত প্রসারিত করে বললো,,”বেশিইই ভালো।”
নুসাইব দুই ভ্রু উঁচিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাঁসি আটকে মাথা নেড়ে বললো,,” এই জন্যই বোধহয় বউয়ের চোখে কম পড়ি।”
তৃধা চোখ ছোট ছোট করে বললো,,” মোটেও না। বরং বেশিই চোখে পড়েছেন। বিয়ের পর হ্যান্ডসাম হয়ে গেছেন খুব।”
নুসাইব রহস্যময় চোখে তাকিয়ে বললো,,”ওওওও তাই? কখনো বললে না যে?”
তৃধার ধ্যান ভাঙল। এমন দৃষ্টিতে খেই হারিয়ে লজ্জায় লাল হলো। কোনোরকম ছুটে পালিয়ে বাঁচল। নুসাইব গা কাঁপিয়ে শব্দ করে হেসে উঠলো। এ যেন বিজয়ের হাসি।
*
*
*
পর পর তিনটা গাড়ি গিয়ে থামলো গেইটের সামনে। দারোয়ান দেরি না করে গেইট খুলে দাঁড়ালো। দুটো গাড়ি বাড়ির ভেতর ঢুকলেও তৃতীয়টার জায়গা হলো না। তৃধা তাড়া দিয়ে বললো জায়গা আছে চলুন। নুসাইব স্টেয়ারিংএ হাত রেখে বলল,,” মোটেও না। তিনটার বেশি পার্কিং করা যাবে না। যেতো যদি তোমার ওই রগচটা মেজর ভাইটা বাইক দুটো না রাখতো।
নুসাইবের কথা শুনে তৃধা কপাল কুঁচকে তাকালো। নুসাইব মুচকি হেসে বলল,,” ভাইয়ের কথা বলার সাথে সাথে ম্যামের এই অবস্থা? স্যরি স্যরি আর হবে না।”
,,” মনে থাকে যেন।”
নুসাইব মুচকি হেসে বলল,,” থাকবে। বউ এর কথা হেলাফেলা করার মত এতোটাও অভদ্র নই।”
,,” তাহলে এতো বলার পরেও এতো গুলো গাড়ি নিয়ে এসেছেন কেন? দুটো গাড়ি হলেই হতো। তিনটা গাড়ি নিয়ে নয়জন মানুষ এসেছে। এখন এইটা মাথায় রাখুন।”
,,” আরে তিনটাই দরকার। এইখান থেকে বেরিয়ে চিন্ময় আর তিন্নি ওদের বাড়িতে যাবে। নবনী , তমাল আর আম্মু সমুদ্রদের সাথে শপিংএ যাবে,যদিও। বাকি আমি তুমি আর বাবা। আমরা বাড়িতে যাবো। তিনটা গাড়ি না হলে কিভাবে কি হবে ভেবে দেখেছো?”
,,”আরে আমাদেরও তো একটা গাড়ি আছে। ওইটা নিলেই হতো। এখন তো এইটা রোড় সাইডে পার্ক করাতে হবে। এইখানে বিচ্চু পোলাপানের আড্ডা,আজ নিশ্চিত আপনার এই প্রিয় গাড়ির গ্লাস ভেঙ্গে দিবে।”
নুসাইব কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বলল,,” সমস্যা নেই। এখন প্রায়োরিটি লিস্টে বউ আগে। ভেঙ্গে যাক।”
তৃধা এদিক ওদিক তাকিয়ে নজর লুকানোর চেষ্টা চালিয়ে বেরিয়ে পড়লো। নুসাইব কপালে আঙ্গুল ঘষতে ঘষতে নিজেই নিজেকে বলে উঠলো,,” এইভাবে লজ্জা পেলে তোর বাঁচা মুশকিলরে নুসাইব।”
গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে নুসাইবের অপেক্ষা করছে তৃধা। নুসাইব গাড়ি পার্ক করে বাকি জিনিস পত্র নামাচ্ছে।এর মধ্যে একজন মাঝ বয়সী মহিলা তৃধাকে দেখে দাঁড়িয়ে গেলো। তার চেহারায় কৌতুহল স্পষ্ট। তৃধা সেই মহিলাকে দেখে মাথা নোয়ালো। ওনাকে তৃধা চেনে। রক্তের সম্পর্কের কেউ না হলেও প্রতিবেশী বটে। ইনি পাড়ার সেই জেঠি যে সবার চিন্তা করতে করতে প্রেশার হাই করে ফেলে। তৃধা চাইছে কোনোরকম ওনার থেকে বেঁচে পালাতে। যদিও শেষ রক্ষা হলো না। সেলিনা হাসান বিচক্ষণতার চোখে তৃধাকে পরখ করে বললো,,” কিরে তৃধা তুই কখন এসেছিস?”
তৃধা সালাম দিয়ে বললো,,” এইতো এখন।”
তিনি অবাকতার সুরেই বলল,,” মেনে নিয়েছে শেষমেশ? তুই ও একটা মেয়ে বটে,কেন গেলি বলতো? যাও গেলি ওইরকম একটা ছেলের সাথে। তোর বাপ ভাইয়ের কি টাকা পয়সা কম ছিলো? ভালো হলে ওরাই তো মেনে নিতো। মান সম্মানতো কিছুই রাখলি না।
তৃধা মাথা নিচু করে শুনছে সব।তার বলার মত কিছুই নেই। দোষ করেছে যখন কথা তো শুনতেই হবে।
তিনি পুনরায় বলে উঠলো,,”তোর মত মেয়ের পছন্দ এমন হবে ভাবতেই পারিনি। তুই,,
ওনাকে আর বলতে না দিয়ে নুসাইব বললো,, কেন?পছন্দ কি খারাপ নাকি? তখন থেকেই তো দেখছি যা তা বলছেন।
তৃধা মাথা তুলে তাকায়।
নুসাইব বিরক্ত ভঙ্গিতে বলল,,” আমি কি দেখতে খারাপ নাকি? নাকি টাকা পয়সা কম? তাছাড়া আমার চরিত্রও খারাপ না। শুধু মাত্র তিহানের বন্ধু দেখে শ্বশুর আব্বা মেনে নেয়নি । এই জন্যই তার মেয়ে নিয়ে পালিয়েছিলাম। কিন্তু আপনারাতো দেখছি তিলকে তাল বানিয়ে মাথায় তুলে নৃত্য করছেন। এখন আবার মাঝপথে আমার স্ত্রীকে ধরে বাজে বকছেন!”
তৃধা হা করে নুসাইবের দিকে তাকিয়ে আছে। তিহান বোনকে রিসিভ করার জন্য এগিয়ে এলেও নুসাইবের কথা শুনে গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে গেলো।
সেলিনা হাসানের চোখ কপালে। তিনি হতবিহব্বল হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,,” মানে?”
নুসাইব তৃধার হাত ধরে বললো,,” মানে যা বলছি সেটাই। বাড়ি গাড়ি সবই আছে। বউয়ের অভাব ছিলো বলেই নিয়ে গেছি। এখন শ্বশুর বাড়ির অভাব দেখা দিয়েছে এইজন্য আবার এলাম। বাইদা ওয়ে, একটা কাজ করুন আমার গাড়িটা ওইখানে রেখেছি একটু দেখে রাখবেন। কিনেছি বেশি দেরি হয়নি। চলো তৃধা যাওয়া যাক।
তৃধার বিস্ময় কাটার আগেই তৃধাকে নিয়ে গেইটের ভেতরে ঢুকে পড়ল নুসাইব। তিহান এমন ভাব করছে যেন সে মাত্রই এসেছে। নুসাইব তিহানের হাতে জিনিসপত্রের প্যাকেট দিয়ে বললো,,” আরে বড় ভাইয়া আপনি? আসসালামুয়ালাইকুম কেমন আছেন?”
তৃধা মুখ টিপে হাসছে।
তিহান দাঁড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেপে নুসাইবের পেটে ঘুষি দিতেই কুঁকড়ে গেলো নুসাইব। পেটে হাত রেখে চোখ মুখ খিচে বন্ধ করতেই তৃধা রেগে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে নুসাইবের হাত ধরে বললো,,” বেশি লেগেছে? দেখি! ভাইয়া তুই কি পাগল?এতো জোরে কেউ মা*রে?”
তিহান বোনের কথা শুনে কিঞ্চিৎ অবাক হলেও, নুসাইব মুচকি হেসে তিহানের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে চোখ টিপে পুনরায় পেটে হাত চেপে রাখলো। তৃধা কেঁদে দেওয়ার জোগাড়। তিহান বন্ধুর অভিনয়ে বিরক্ত হয়ে নুসাইবের পায়ে লাথি মেরে বললো,,” নাটক কম কর, ওঠ! নয়তো তোর বউ কেঁদে ভাসাবে।”
নুসাইব ফটাফট দাঁড়িয়ে তৃধার দিকে তাকালো। সত্যি তৃধার চোখ মুখের অবস্থা খারাপ।মনে হচ্ছে কেঁদেই দিবে। নুসাইব বেশ অপরাধবোধ নিয়ে একমাত্র বউয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,”আরে বেশি ব্যাথা পাইনি। আমি ঠিক আছি।”
তৃধা চুপচাপ হাঁটা ধরলো। বর,ভাই দুটোই বিটকেল। এদের সাথে থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো।
তিহান নুসাইবের দিকে তাকিয়ে হাই তুলতে তুলতে বললো,,”তোর আজ খবর আছে। চুল গুলো সামলে রাখিস। আমার বোন আবার চুল ছেঁড়ায় এক্সপার্ট।”
তিহানের কথা নুসাইব এক কান দিয়ে ঢোকালেও অন্য কান দিয়ে বের করে দিয়েছে। বউ তার এতটাও জংলি না যে চুল ছেড়াছেড়ি পর্যন্ত যাবে। গেলেও সমস্যা নেই একটাইতো বউ।
*
*
বাড়ির পরিবেশ জমজমাট। মেহমানে মেহমানে পূর্ণ ঘর। তৃধার নানু বাড়ির লোকজন এসেছে। মায়া জাহান একা হাতে সব সামলাতে পারবে না দেখে বোন আর ভাইয়ের বউ দুটোকে খবর দিয়ে আনিয়েছে। সবাই মেহমানদের আদর আপ্যায়নে ব্যস্ত। তৃধাও হাতে হাতে এগিয়ে দিচ্ছে সব। মায়া জাহান তাড়া দিয়ে তৃধাকে রুমে পাঠালেন। এই প্রথম মেয়ে জামাইটা এসেছে, তাকে রুমে না নিয়ে ঘন্টা খানেক সবার মাঝে বসিয়ে রেখেছে। তিনি চোখ রাঙিয়ে শাসালো মেয়েকে। তৃধা মায়ের ইশারা বুঝে নুসাইবকে নিয়ে রুমের দিকে হাঁটা ধরলো। তৃধার রুমে ঢুকে নুসাইব অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়। তৃধা নিজেও অবাক হলো। রুমের কিছুই বদলেনি। সবটাই আগের মত। তৃধা হেঁটে হেঁটে দেখছে সব। নুসাইব চারপাশে তাকিয়ে মুখ টিপে হেসে বলল,,”ওমাই গড তৃধা তোমার রুমে এতো এতো সফ্টটয়? তাছাড়া সবই দেখছি পিংক কালারের। তোমার পিংক কালার এতো পছন্দ?
তৃধা ঠোঁট কামড়ে কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে নিজেকে সংযত করে বলল,,” অদ্ভুত! পছন্দ হলেই বা-কি তখন আমি ছোট ছিলাম। এর জন্য গ্ৰাম্য মহিলার মত ফোড়ন কাটবেন নাকি?”
তৃধার রাগ বুঝে পুনরায় হাসলো নুসাইব। রুমের চারপাশটা একনজর দেখে যা বুঝলো তাতে আসলেই তৃধা প্রিন্সেস ছিলো। তিহানের আদরের পিচ্চি।
*
*
*
বিকেল হতেই সবাই বেরিয়ে পড়লো।তৃধা নুসাইব বিদায় নিয়ে গাড়িতে বসলো। নাবীব শেখ তাদের সাথে যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি হুট করে প্ল্যান চেন্জ করে ফেলেছেন। ডাক্তার জাকের এসে ওনাকে নিয়ে গেছে। তাই তৃধা নুসাইব ওনাকে ছাড়াই বাড়ির পথে রওনা দিলো। ড্রাইভ করার ফাঁকে ফাঁকে তৃধাকে দেখছে নুসাইব। তৃধার চোখে মুখে আলাদা এক মুগ্ধতা বিরাজ করছে। নুসাইব গাড়ির গতি কমিয়ে বললো,, তোমাকে এইভাবে দেখতে বেশ লাগে। এমন হাঁসি-খুশি থাকলে চেহারা গ্লো করে বেশি। এই মুহূর্তে তোমার চেহারা গ্লো করছে।”
তৃধা মুচকি হেসে বেশ স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বললো,,” উমমম,,, “সেটা আপনার উপর নির্ভর করে।যতক্ষণ আপনি হাসি খুশি রাখছেন ততক্ষন এমন চেহারা দেখবেন।”
,,” আমি?”
,,”হুম আপনি। হাসবেন্ড হিসেবে সব কিছুর দায়িত্বই আপনার। আমাদের একজন স্যার ছিলেন ।উনি একদিন কথায় কথায় বলেন ‘ একজন বিবাহিত নারীর সৌন্দর্যের রহস্য তার বরের যত্ন।’ তা বলুন বর আপনার কি খেয়াল?”
তৃধার কথায় চাঁপা হাসলো নুসাইব। এক হাত স্টেয়ারিংএ রেখে অন্য হাতে তৃধার হাত ধরে গম্ভীর গলায় বললো,” কি আবার! বউয়ের খেয়াল রাখতে হবে, যত্ন নিতে হবে। নয়তো লোকে বউয়ের চেহারা দেখেই বুঝে ফেলবে জামাই কত খারাপ।”
তৃধা হাসছে। নুসাইবের কথায় খিলখিল শব্দে হাসছে। লোকটার বাচন ভঙ্গি তার বড্ড প্রিয় ঠেকছে আজ। কথায় কাজে ভালোবাসা উপচে পড়ছে।
তৃধা থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকালো নুসাইব। অদ্ভুত এক সুখানুভূতিতে হৃৎপিণ্ড থরথর করে কাঁপছে। সেই কাপন থামাতে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে অনবরত।
ব্যস্ততা শেষে সোফায় বসে ফেসবুকে ডুকলো তিহান। তার নিউজ ফিডে তেমন কারো আনাগোনা না থাকলেও নুসাইব ঠিকই আছে। নুসাইবের পোস্ট করা ছবি দেখে স্ক্রল করা থামিয়ে দিয়ে ভালো করে দেখলো। ছবিতে থাকা ব্যক্তিটাকে চিনতে তিহানের দু মিনিট সময় লাগলো। দূর থেকে তোলা ছবিটা। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে একজন শাড়ি পরিহিতা নারী। যার চেহারার আবছা অবয়ব দেখা যাচ্ছে আয়নাতে। লম্বা চুল পিঠ ছড়িয়ে আছে। ছবিটা তৃধার। আজ সকালের ছবি মনে হচ্ছে। তিহান ছবির ক্যাপশন দেখে মুচকি হাসলো। সেখানে ইংরেজিতে লেখা,,”She try to hide her feelings‚ but she forgot that her eye’s speak.”
চলবে,,,,
উপন্যাসের নাম::#আমি_আছি
লেখনিতে:#সাদিয়া_আফরোজ
পর্ব: ৫০
,
,
,
,
,
সময়ের সাথে সম্পর্ক গুলোও বয়ে চলছে আপন গতিতে। ঋতুর সাথে সম্পর্কের ক্রমাগত রং বদল হচ্ছে। থেমে নেই কেউ ,কারো সম্পর্ক। এরমধ্যে চোখের পলকে তেরোটা দিন পেরিয়ে গেছে।নবনীর বিয়ে নিয়ে তোড়জোড় দুই বাড়িতেই চলছে। সমুদ্রদের বাড়ি ভর্তি মেহমান। কোথাও দুদণ্ড জিরানোর সুযোগ নেই। এতো ব্যস্ততার মাঝেও নবনীর খোঁজ নিতে ভুলছে না সে।
শেখ ভিলা জমে উঠেছে। ফরিদা হককের ভাই আর বোনের পরিবার এসেছে। যদিও নাবীব শেখের পক্ষ থেকে এখনো কেউ আসেনি। ওনারা হয়তো কাল আসবে। এই নিয়ে নাবীব শেখ তেমন একটা মাথা ঘামাচ্ছে না। তারপরও বিয়ের আমেজ বাড়ির কোনায় কোনায় ছড়িয়ে পড়েছে এতক্ষণে। শপিং থেকে শুরু করে,কে কি করবে প্ল্যানিং করছে বসে বসে। তমাল পড়ালেখা গুটিয়ে বাড়ি এসে উঠেছে। যদিও তার ঘরে সবার প্রবেশ নিষেধ। সময় সময় বের হলেও বাকি সময়টা পড়ালেখাটাকেই দিচ্ছে। নাবীব শেখ ছেলেকে বই মুখো দেখে প্রথমে কিছুটা অবাক হলেও তমালের পেছনে সবাইকে কঠোর ভাবে মানা করে দিয়েছে। কেউ যেন তার ছেলের ঘরের আশেপাশেও না যায়। ফরিদা হক আর তৃধা ঘরের পুরো দায়িত্ব পালন করছে। সায়রা বানু দুজনকে সব এগিয়ে গুছিয়ে দিচ্ছে। তিন্নিও বসে নেই, ঘরের কাজে পারদর্শী সে। মাঝে মাঝে তৃধাকে ছুটি দিয়ে সে রান্নাবান্না করছে। বিয়ের কনের কাজ নেই। ছোট ভাগ্নেকে নিয়ে সময় কাটাচ্ছে। নুসাইব অফিস সামলে শপিংএ গেছে। নিজের আর তৃধার কেনা কাটা এখনো বাকি। বারবার বলেও তৃধাকে রাজি করাতে না পেরে শেষে নিজেই এসেছে শপিংএ। এর মধ্যে কতবার যে তৃধাকে মেসেজ করেছে কল করেছে তার হিসেব নেই। তা দেখে তিন্নি আর ফরিদা হক মুখ টিপে হাসছে। তিন্নি মজার ছলে বললো,,” আম্মু তোমার বউমাকে এক্ষুনি মার্কেটে পাঠাও। তা না হলে তোমার ছেলে কল দিতে দিতে তোমার বউমার মাথা খেয়ে ফেলবে।”
ফরিদা হক মুচকি হেসে বলল,,” এইটাইতো স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের সৌন্দর্য।তৃধা বিরক্ত হবে না,ওরা ওদের মত থাকুক।”
তৃধার কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে। শ্বাশুড়ি আর ননদের কথায় লজ্জা লাগছে তার। ফরিদা হক তৃধাকে কিচেন থেকে বের করে দিতে দিতে বলল,,” যা আমার ছেলেটাকে সময় দে। রুমে গিয়ে কথা বল আমার বাচ্চাটা অনেক টায়ার্ড।”
তিন্নি হাসি মুখে চেয়ে আছে। তৃধাকে নিয়ে তার মনের মেঘ কেটেছে অনেক আগেই। এখন বুঝতে পারছে অতীত ধরে বসে থেকে লাভ নেই। তৃধা মেয়েটা খারাপ নয়, বরং সে ভালোর উদাহরণ।
বিছানায় পা গুটিয়ে বসে আছে তৃধা। নুসাইবের পাঠানো ছবিগুলো থেকে বেছে একটা নীল রঙের পাঞ্জাবীর ছবি পাঠালো। ছবি দেখা মাত্রই পাঞ্জাবীটা প্যাক করিয়ে নিলো। এরপর একে একে সব জিনিস কিনে নিচ্ছে নুসাইব। এরমধ্যে তৃধা কল দিয়ে বসলো। বোধহয় এই একটা নাম্বার থেকে আসা কল নুসাইব খুব দ্রুত হড়বড়িয়ে রিসিভ করে। এই নাম্বার আর নাম্বারের মালিক দুটোই তার বড্ড প্রিয়। কল রিসিভ করার পর তৃধার প্রথম প্রশ্ন ছিলো,” আর কতক্ষন লাগবে? কখন ফিরবেন? দেরী হবে? দুপুরেও খাওয়া দাওয়া ঠিক মত হয়নি এখন কিছু খেয়েছেন?”
নুসাইব হাতের ব্যাগপত্র রেখে দেয়ালে পিঠ ঠেকালো। গভীর নিঃশ্বাস ফেলে কম্পায়মান বুকটাকে স্থির করার চেষ্টা করলো। যদিও তা হওয়ার নয়। একতরফা ভালোবাসাটা এখন আর একতরফা নেই। বরং এখন দুজন দুজনকেই ভালোবাসে। তৃধা তাকে ভালোবাসে ব্যাপারটা মন মস্তিষ্ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে হৃৎপিণ্ডে কাঁপন ধরছে। নুসাইব রয়ে সয়ে উত্তর দিলো,,” না খাওয়া হয়নি।
ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লো তৃধা।বলল,,” নয়টা বেজে আসছে ক্ষিদে লাগেনি? কেনাকাটার দরকার নেই চলে আসুন।”
নুসাইব তৃপ্তির হাসি হাসছে। চোখ মুখ উজ্জ্বল তার। কোমল কন্ঠে বলল,,” ঠিক আছে, বেরুচ্ছি।
,,” বেশি তাড়াহুড়ো করে ড্রাইভ করার দরকার নেই। আস্তে ধীরে সাবধানে আসুন।”
ঠোঁট জোড়া প্রশস্ত করে হাসলো নুসাইব।বেশ আদুরে গলায় বলল,” ঠিক আছে।”
তৃধা কল কেটে বিছানাটা আবার ঝেড়ে রাখলো। ফ্রেশ হওয়ার জন্য ট্রাউজার, টিশার্ট, টাওয়েল বিছানার একপাশে রেখে দিলো। সব গুছিয়ে নিচে নেমে এলো।
নুসাইবের মামা-মামী, খালামনি তৃধাকে ভীষণ আদর করে। সব জানার পরও তাদের কোনো প্রশ্ন কিংবা অভিযোগ ছিলো না। নুসাইবের মামা ফয়সাল হকের মতে, অবিবাহিতর চেয়ে ভালো মেয়ে ,ভালো মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তৃধার অতীত থাকতেই পারে,তবে সে খারাপ নয়। অন্তত এই দুইদিনে এই কথাটা তিনি খুব ভালো করেই বুঝেছেন।
নুসাইবের খালা ফাতেমা হক তৃধাকে চোখে হারাচ্ছেন। যেখানেই পাচ্ছেন ধরে ধরে গল্পে জুড়ে দিচ্ছেন। তৃধার কাছে ফরিদা হক আর ফাতেমা হক দুজনকেই একই মনে হয়। চেহারার মধ্যে অমিল থাকলেও দুজনের চিন্তাধারা,মন মানসিকতা একই। দুজনই বেশ মমতাময়ী। তৃধার কাছে তাদের ভীষণ ভালো লাগে।
কিচেনে বেশ মনযোগ সহকারে কাজ করছে তৃধা।
ফরিদা উঁকি দিয়ে জিজ্ঞেস করল,,” কি রান্না হচ্ছে?”
তৃধা হাসি মুখে বললো,,”তোমার বড় ছেলে দুপুরে পর কিছুই খায়নি। এই জন্য টুকটাক রান্না হচ্ছে।”
ফরিদা হক সরে গেলেন। তার কাছে এরচেয়ে আনন্দের মূহুর্ত বোধহয় আর একটাও নেই। তিনি প্রথম থেকেই জানেন তৃধা নুসাইবের মধ্যকার সম্পর্কে ঠিক কতটা জড়তা আছে। এজন্য নিজে সুযোগ পেলে দুজনকে এক সাথে সময় কাটানোর জন্য পরিস্থিতি তৈরি করে দিতেন। কিন্তু আজকের ব্যাপারটা ভিন্ন।তৃধা নিজ থেকেই সব করছে। যদিও কিছুদিন যাবত খেয়াল করে দেখেছেন নুসাইবের মেসেজ,কল সব কিছুতেই তৃধার চোখ মুখে আলাদা এক মুগ্ধতা বিরাজ করছে। এই মুগ্ধতার ব্যাপারটা ফরিদা হকের কাছে স্পষ্ট। এমন সময় তার জীবনেও ছিলো, ভালোবাসার মানুষের প্রতিটা কাজে তিনিও এমন মুগ্ধ হয়ে ছিলেন। ফরিদা হক হলফ করে বলতে পারেন তৃধা তার ছেলেটাকে ভালোবেসে ফেলেছেন। তাও ভীষণ ভাবে।
*
*
*
হারিকেনের টিমটিমে আলোয় অন্ধকার ঘরটায় খানিকটা আলো ছড়ালো। হারিকেনের আলো রজবের পছন্দ নয়। তাও এই আলো দেখতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিল না দেওয়াতে সকালে লাইন কেটে দিয়ে গেছে। প্রায় পাঁচ মাসের টাকা জমেছে। সব টাকা একসাথে দেওয়ার সামর্থ তার নেই। নিজের অপারগতার উপর খানিকটা হাসলো রজব । রিক্ত শূন্য জীবনটা বিষাদে ভরে গেছে। তাও সে বেঁচে আছে। জীবনটাকে এগিয়ে নেওয়ার একরত্তি ইচ্ছেও তার নেই। পেছনে ফিরে যাওয়ারও অবকাশ নেই। মনে হচ্ছে সব থেমে গেছে। হারিকেনের আলো নিভু নিভু করে জলছে। এই আলোর সাথে তার জীবনের মিল খুঁজে পাচ্ছে বেশ। মনে হচ্ছে ঠিক এই ভাবেই তার জীবনটা নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। আর অল্প সময় এরপর সব অন্ধকার হবে। রজবের স্থির চোখ জোড়া সিক্ত হয়ে উঠলো। গড়িয়ে পড়লো নোনা জল। নিজেকে আজ ভীষণ অসহায় মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে সময়ের চাকা ঘুরিয়ে দিতে। বর্তমান থেকে অতীতে ফিরে যেতে। হারিকেনের নিভু নিভু আলো ধপ করে নিভে গেছে। তার সাথে রজবের বিভীষিকাময় জীবনটা তলিয়ে গেছে অন্ধকারে। ডুকরে কেঁদে উঠলো রজব। বুকের বাঁ পাশ খা*মচে ধরে হা*উমা*উ করে কাঁদছে। অদ্ভুত ঠেকছে সেই কান্না।
*
*
*
সাউন্ড সিস্টেম চেক করছে তমাল। গান চেন্জ করে দেখছে বারবার। এর মধ্যে রিমি হড়বড়িয়ে এসে তমালের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললো,,” হয় চালিয়ে রাখুন নয়তো বন্ধ করে দিন। আপনার জন্য আমার মাথা হ্যাং হয়ে যাচ্ছে। বার বার গান চেন্জ করছেন কেন?”
তমাল ভ্রু কুঁচকে চোখ ছোট ছোট করে বললো,,” গুড় ! আমি ভবিষ্যৎ নিউরোসার্জন। তার মানে এখন থেকে মাথা হ্যাং হওয়া শুরু করলে আগামী দেড় দুই বছরের মধ্যে রেজাল্ট দিয়ে ইন্টার্নশিপ শেষে করে পুরো ডাক্তার হতে হতে তোমার মাথায় পুরো সমস্যা হয়ে যাবে। নিউরোলজিস্টকে দেখাতে হবে না,তোমার সরাসরি সার্জারিই লাগবে। তাড়াতাড়ি এককাজ করো। এখনই এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রেখে দাও। প্রথম রোগী হিসেবে তোমাকেই দেখবো। গরুর ম*স্তি*ষ্ক বের করে মানুষের ম*স্তি*ষ্ক ইনসার্ট করে দিবো। তখন আর হ্যাং হবে না।বুঝলে?”
রিমি দাঁতে দাঁত চেপে তমালের কথা গুলো হজম করে বললো,,” আপনি আসলেই নিউরোসার্জন? কথা শুনে তো হাতুড়ি ডাক্তার মনে হচ্ছে। কি ভাষা,মস্তিষ্ক ইনসার্ট! আপনি এক কাজ করুন, আপনি নিজে আগে একজন নিউরোলজিস্টকে দেখান। হতে পারে মাথার রগে গিট্টু লেগে গেছে। আমিও এক পা*গল, কোন কুক্ষনে আপনার মত পাগলের প্রেমে পড়লাম আল্লাহই ভালো জানেন। একদম অনলাইনের প্রোডাক্ট। ছবিতে ভালো দেখলেও সামনাসামনি পুরাই ডুবলিকেট। দুই তো দুরের কথা এক্কেবারে চার নাম্বার ।
রিমির শেষের কথা গুলো শুনে তমাল হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ততক্ষণে রিমি ধুপধাপ পা ফেলে স্টেজ পেরিয়ে গেছে। তমালের প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা থাকলেও এই বাড়িতে পা রাখার পর থেকেই তমালের সাথে তার ঝগড়া হচ্ছে। খুব সামান্য কারণ , যেগুলো মানুষ গননাতেও রাখে না। সেই সব কারণে ঝামেলা হচ্ছে। রিমির মতে ঝগড়ার জন্য একমাত্র দায়ী তমাল। এই লোকটার গা জ্বা*লা*নো কথাই সব ঝগড়ার মূল।
নবনী সাজগোজ নিয়ে বসে আছে। তার সাজ হয়ে গেলেও ঘরে থাকা বাকি রমনীরা এখনো শাড়ি চুড়ি নিয়ে ব্যস্ত। রিমি নবনীর পাশে বসে ফুঁসছে। নবনীর বুঝতে বাকি নেই, অবশেষে বান্ধবী কল্পনার রাজ্য থেকে বাইরে বেরিয়ে এসেছে। নবনী বিনা বাক্যব্যয়ে রিমির হাত ধরে বললো,,” আমি তো আগেই বলেছি ওর মাথায় সমস্যা। তাও শুনলি না, দুই আড়াই বছরের জীবন যৌবন ওই পাগলকে ভেবেই ওয়েস্ট করেছিস।”
রিমি বিরক্ত হলেও কথা বাড়ালো না।
অন্য দিকে তমালের মাথা ঘুরছে।এই প্রথম কোনো মেয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে বলেছে সে তার প্রেমে পড়েছে। তমাল চোখ কচলে, হাতে চিমটি কাটলো। নাহ্ ব্যাপারটা আসলেই সত্য। ঘাপটি মেরে বসে থাকা রাফি রিমান দাঁত কেলিয়ে হাসছে। মগ*জের ডাক্তারের ম*গ*জ হ্যাং হয়ে গেছে। রিমান গলা খাঁকিয়ে বললো,,” মেয়েটা সুইট ,কিউট, সুন্দরী,আছে।একটু রাগী কিন্তু তোর সাথে মানাবে ভীষণ।”
রাফি আফসোস করে বললো,,”সেই সুযোগ নেই। দেখলি না, নিজের পছন্দের উপর কেমন থুতু ফেলে গেলো। বাজারে ডাক্তারদের ভাত নেই মামা।আর আমরাতো প্রথম থেকে মিসকিন। ”
তমাল দুজনের দিকে তাকিয়ে পুনরায় সাউন্ড চেক করতে লাগলো। প্রেমে পড়ার ব্যাপারটা ফেলতে না পারলেও মেনে নিতে পারছে না। তমালের কাছে প্রেমে পড়া মানে জাল ফেলা। উঁহু! তমাল কিছুতেই রিমির জালে মাছ হবে না। এই জালে ফাঁসলে সত্যিই হাতুড়ি ডাক্তার হতে হবে। জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ফেলার ইচ্ছা তার নেই।
*
*
*
তৃধা শাড়ি পরে তৈরি হলেও সাজগোজ এখনো বাকি। নুসাইব ওয়াশরুম থেকে বের হতে তৃধাকে এক পলক দেখে নিলো। তৃধার পরনে রয়েল ব্লু কালারের সিকোয়েন্সের জর্জেট শাড়ি। কালো রঙের পুরো হাতার ব্লাউজের সাথে শাড়িটা বেশ লাগছে। নুসাইব নীল রঙের পাঞ্জাবি পরে মুচকি হাসলো। আজও তৃধা চুল নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ে আছে। নুসাইব তৃধার পাশে দাঁড়িয়ে বললো,,” মাঝখানে সিঁথি করে খোঁপা করো, দেখতে ভালো লাগবে। ”
তৃধা আয়নায় নুসাইবের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে বলল,,” খালি খালি লাগবে,দেখুন।
তৃধা খোঁপা করে দেখালো। নুসাইব লম্বা শ্বাস টেনে বললো,,”এক মিনিট ওয়েট করো।”
তৃধা বুঝে পায় না হঠাৎ করে কি এমন আইডিয়া মাথায় এলো।
নুসাইব ল্যাম্পশেডের পাশ থেকে শপিং ব্যাগটা নিয়ে তৃধার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,,” এই গুলো পুরো খোঁপায় গুঁজে দাও। সুন্দর লাগবে একটুও খালি খালি লাগবে না।”
ব্যাগ ভর্তি একগুচ্ছ তাজা গোলাপ দেখে তৃধা বিস্ময় নিয়ে তাকালো। নুসাইব মুচকি হেসে বলল,,”অবাক হওয়ার কিছু নেই। এই গুলো আমার মোস্ট বিউটিফুল ওয়াইফের জন্যই আনা।
নুসাইবের সহজ স্বীকারোক্তিতে তৃধা মাথা নুইয়ে নিঃশব্দে হাসলো। আকাশ সমান ভালোলাগা মন মস্তিষ্ক আন্দোলিত করছে তার।
একগুচ্ছ গোলাপ হাতে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিগত রমনীর পেছনে দাঁড়িয়ে আছে নুসাইব। আয়নার প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে হাসলো সে। দুকদম এগিয়ে এই রমনীর পিঠে বুক ঠেকিয়ে আলতো হাতে কোমর জড়িয়ে দাঁড়ালে মন্দ হয় না। হোক কিছু দুষ্টু মিষ্টি আলাপচারিতা। তাতে যদি সে লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে দিকবিদিক ছুটে পালায় তবুও ব্যাপার মন্দ হবে না।
চলবে,,,
উপন্যাসের নাম::#আমি_আছি
লেখনিতে:#সাদিয়া_আফরোজ
পর্ব: ৫১
,
,
,
,
,
,
,
হলুদের অনুষ্ঠান চলছে। বিয়ের আমেজ সবার মাঝেই দেখা যাচ্ছে। নবনীকে সাদা বাসন্তী মিশ্রনে শাড়িতে ভীষণ সুন্দর লাগছে। এর মাঝে সমুদ্র বার কয়েক ভিডিও কল করে দেখেছে তার বধুয়াকে। এই নিয়ে হাসাহাসি করছে সবাই। নুসাইব দুর থেকে বোনকে দেখছে। ছোট্ট বোনটা দেখতে দেখতে কত বড় হয়ে গেছে। এতোটাই বড় হয়ে গেছে যে তাকে কাল পরের বাড়িতে পাঠানোর আয়োজন চলছে। বোনের হাঁসি মুখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো। এর মাঝে তিহান পেছন থেকে গলা জড়িয়ে ধরে বললো,,” কি ব্যাপার বিজনেসম্যান? একা দাঁড়িয়ে এতো সেন্টি খাচ্ছেন কেন?”
নুসাইব মুচকি হেসে বলল,,” কারণটা মেজর সাহেবের জানা। তারও বোন আছে ।”
তিহান আক্ষেপ করে বললো,” হুম আছে। এক বলদের সাথে বিয়ে হয়ে গেছে।”
,,” আমি বলদ? ভেবে কথা বল। তোর বোনের জামাই হই, মনে কষ্ট নিয়ে মুখ বেঁকিয়ে বসে থাকব। পা ধরেও ঠিক করতে পারবি না।”
,,” সেটার দরকার হবে না। দুইটা ঘু*সি, তিনটা লা*থি দিলে সব ঠিক হয়ে যাবে।”
নুসাইব শব্দ করে হেসে উঠে বলল,,”বোন বিয়ে করেও ইজ্জত মিলছে না। কি করি বলতো?”
তিহান নিজেও হাসছে। সম্পর্কের সৌন্দর্য বোধ হয় এইখানেই।
ফরিদা হক আর নাবীব শেখ হেঁটে হেঁটে মেহমানদের দেখছে। খাওয়া দাওয়ার খোঁজ খবর নিচ্ছে। সোয়েব শেখ নাতি নাতনিদের মাঝে বসে গল্প করছে। গ্ৰামের বাড়ি থেকে শুধু তিনিই এসেছেন। সেতারা বেগম আসবে না বলে জের ধরেছে। তাকে বারবার বলে কয়েও রাজি করাতে পারেনি। তিনিও আর দ্বিতীয় বার সাধেননি। ব্যাগ পত্র গুছিয়ে চলে এসেছেন। ইচ্ছে থাকার সত্বেও সেতারা বেগমের ভয়ে বাকিরা আসার নাম মুখেও আনেনি।
তমাল ঘটা করে ফুচকার স্টল বসিয়েছে। সেখানে ভীড় ঠেললে ঠেলা যাচ্ছে না। তমাল বিরক্ত নিয়ে তাকিয়ে আছে। রিমি ফুচকা স্টল থেকে এক প্লেট ফুচকা নিয়ে স্টেজে উঠে নবনীর সামনে প্লেট ধরলো। তমাল ভ্রু কুঁচকে বললো,,”তুমি খাচ্ছো খাও নবনীকে কেন দিচ্ছো? ওর পেট খারাপ হবে।”
নবনী চোরা চোখে তাকাচ্ছে। রিমি কপাল গুটিয়ে বললো,,” ওর সাথে আমি থাকি। আমি ভালো বলতে পারবো কিসে কি সমস্যা হবে। আপনি চুপ থাকুন। আপনি মুখ খুললেই সমস্যা হবে।”
তমাল পাঞ্জাবীর হাতা গুটোতে বললো,,” এই জন্যই তো প্রেমে পড়েছিলে। এখন কেন সয্য হচ্ছে না?”
নবনী হা করে তাকিয়ে আছে। প্রেমে পড়েছে এইটা জানলো কখন? রিমি দাঁতে দাঁত চেপে হিসহিসিয়ে বললো,,” তখন কি জানতাম নাকি আপনি কুটনি মহিলাদের মত পায়ে পা বাঁধিয়ে ঝগড়া করেন। নবু তুই ঠিকই বলেছিস,এই দেড় দুই বছরে জীবন যৌবন এই বেহুদা মানুষের কথা চিন্তা করেই ওয়েস্ট করেছি। এর চেয়েতো মিহাদ বেশ ভালোই ছিল।
নবনী বাঁক শক্তি হারিয়ে তাকিয়ে আছে। কি থেকে কি হচ্ছে কিছুই মাথায় ধরছে না। সব মাথার দশ হাত উপর দিয়ে যাচ্ছে।
সমুদ্রের বাড়ি থেকে হলুদ ছোঁয়াতে সমুদ্রের কাজিনরা এসেছে। নুসাইব তাড়া দিতেই তমাল ভাইয়ের পেছন পেছন ছুটলো। রিমি সহ সবাই মিলে ফুল দিয়ে বরন করে নিলো তাদের। তৃধা সবাইকে বসতে দিয়ে কাজে লেগে পড়লো। তিহান বোনকে দেখছে আর অবাক হচ্ছে। সংসার প্রাসঙ্গিক কোনো কাজ যে তৃধা করতে পারবে,কিংবা তৃধা দ্বারা হবে সেটা তিহান কখনো কল্পনাও করতে পারেনি। কিন্তু আজ চোখের সামনে বোনকে সাংসারিক দায়িত্ব নিতে দেখে বেশ অবাকই হচ্ছে। তিহান মুগ্ধ হয়ে বোনটাকে দেখছে। এর মধ্যে নুসাইব তৃধার সাথে কিছু নিয়ে কথা বলছে। তৃধা চুপচাপ শুনছে। তৃধা কিছু বলতে নিবে এর আগেই নুসাইব তাকে থামিয়ে দিল। ব্যাপারটা দূর থেকে দেখে অনেক কিছুই মনে হতে পারে। তিহানেরো হচ্ছে, কিন্তু তিহান জানে মুদ্রার এক পিঠ দেখে বিচার করতে নেই। হতে পারে ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাছাড়া নুসাইবকে তার চেনা। তৃধা নুসাইবের কথায় প্রত্যুত্তর না করে তিন্নির পাশে গিয়ে বসলো। তিহান খেয়াল করে দেখলো তৃধা মন খারাপ করে নেই। বরং তার চোখ মুখ বেশ উজ্জ্বল। নুসাইবের চলে যাওয়া দেখে মিষ্টি করে হাসছে। তিহান ঠোঁট জোড়া প্রশস্ত করে হাসলো। হয়তো এই জন্যই ভালোবাসা সুন্দর।
নুসাইব ইশারায় তিহানকে ডেকে নিলো। তিহান দাঁড়ালো না, খুব দ্রুত এগিয়ে গেলো।
এই দিকে দুই পক্ষের মেহমানে জমে উঠেছে বাড়ি। সমুদ্রের ছেলে কাজিন আর মেয়ে কাজিনের হাসবেন্ডরা মিলে ছবি তুলতে ব্যাস্ত হলেও, মেয়েরা ফুচকা স্টল ঘিরে আছে। সবাই হই হই করে ফুচকা খাচ্ছে।
তমাল রাফি-রিমান দুজনের কাঁধে হাত রেখে বলল,,” অস্বাস্থ্যকর খাদ্য খেতে কি ভালো লাগে বলতো? ফুচকা ওয়ালা মামা সেই সন্ধ্যা থেকে ফুচকা বানাচ্ছে। হতে পারে এর মধ্যে বাথরুমে গিয়েছে দুই একবার, অন্য সব কিছু বাদ দিলেও হতে পারে পিঠ চুলকেছে অনেকবার। চিন্তা করে দেখ যদি হাত না ধুয়ে থাকে তাহলে কি হবে!”
রিমান কিছুক্ষণ আগে দুই প্লেট ফুচকা খেয়ে এসেছে। রাফি চিন্তা করছিলো খেয়ে দেখবে। কিন্তু তমাল এখন যা বলেছে এতে করে খাওয়ার রুচি ম*রে ভুত হয়ে গেছে। রিমান কাঁদো কাঁদো প্রায়। গা গুলিয়ে উঠছে তার। তমাল রিমানের অবস্থা দেখে বললো,,”তোর কি হয়েছে? পোয়াতি মহিলার মত ওয়াক ওয়াক করছিস কেন?”
রাফি অনেক কষ্টে হাসি চেপে রেখে বললো,,”বেশি না এই পোয়াতি বেটা দুই প্লেট খেয়ে এসেছে। ”
তমাল গা কাঁপিয়ে হু হাহা হা করে হেসে উঠে বলল,,” ও মাই গড রিমান।
রিমানের চোখ মুখ দেখার মত। বেচারা রাগে দুঃখে গজগজ করতে করতে বললো,,” এতোই যখন বুঝিস তাহলে বাড়ি বয়ে আনলি কেন?”
,,” এইটাতো মেয়েদের জন্য। ওদের হযম শক্তি বেশি। ওরা কথা ছাড়া যাবতীয় সব হযম করতে পারে। তুই কেন গিলতে গেলি!বলদ কোথাকার।”
রিমান রাগলেও চুপ করে রইলো। তার বমি পাচ্ছে ভীষণ।
সমুদ্রের কাজিনরা একে একে স্টেজে উঠছে সবাই। সমুদ্রের কাজিন দের মধ্যে প্রায় সবাই বিবাহিত। মেয়েরা হাসবেন্ড নিয়ে আর ছেলেরা বউ নিয়ে এসেছে। এর মধ্যে যারা ছোট তারা আসেনি। সবাই
প্যান্ডেলে দিকটায় দাঁড়িয়ে একজন আরেকজনের লেগ পুল করছে। কেউ কেউ সমুদ্রকে ভিডিও কলে রেখে নবনীকে খোঁচা দিচ্ছে। এই নিয়ে পুরো প্যান্ডেল জুড়ে হাসির রোল পড়ে গেছে। তৃধা এদের দুষ্টুমিতে হেসে কুটিকুটি। নুসাইব হাতের কাজ সেরে বধুয়াকে খুঁজে নিয়ে তার কাছ ঘেঁষে দাঁড়ালো। তৃধার খেয়াল নেই। বেখেয়ালি তৃধা বেখেয়ালি হয়ে হাসছে। নুসাইব চোরা চোখে তাকিয়ে দেখছে তৃধাকে। এর মাঝে খেয়াল করে দেখলো খোঁপা থেকে একটা গোলাপ প্রায় খুলে পড়ছে। নুসাইব লম্বা শ্বাস টেনে আলতো হাতে পুনরায় সেই ফুল গুঁজে দিতেই ফিরে তাকালো তৃধা। নুসাইবের চোখে চোখ পড়তেই চোখে হাসলো সে। নুসাইবও কম যায় না। চোখে চোখ রেখে হাসায় আগ বাড়িয়ে তৃধার হাত ধরে দাঁড়াল। তৃধা মোটেও অবাক হলো না,আর না পেলো লজ্জা। সে নুসাইবের কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আঙ্গুলে আঙ্গুল গলিয়ে হাতের বাঁধন শক্ত করলো। কেউ কারো দিকে না তাকালেও দুজনের ঠোঁট জোড়ায় হাঁসি ঝুলে আছে। তৃপ্তির হাসি, অনূভুতি প্রকাশ করেও লুকিয়ে রাখার হাসি,ভালো বেসেও ভালো না বাসার হাঁসি।
সবার হইহুল্লোড় থেকে বেরিয়ে এলো তিহান। কল এটেন্ড করার জন্য প্যান্ডেল থেকে খানিকটা দূরে ফুচকা স্টল ঘেঁষে দাঁড়ালো। কিছু সময় আগেও জায়গাটায় মেয়েদের ভীড় ছিল। কিন্তু এখন আর কেউ নেই। তিহান কিছুটা অবাক হলেও তেমন একটা মাথা ঘামালো না। সে তার মত করে কথা বলছে।
ইশিকা শাড়ির আঁচল গুটিয়ে প্যান্ডেল থেকে বেরিয়ে এলো। ফুচকা স্টলে কাউকে দেখতে না পেয়ে এক প্রকার ছুটেই এসেছে। তখন ভীড় ঠেলে ফুচকা নিতে না পারায় এখন এসেছে। আসতে না আসতেই ফুচকা ওয়ালা মামাকে বললো,,” মামা এখন আর কেউ নেই। আপনি আমাকে সুন্দর করে ফুচকা বানিয়ে দিন। ঝালটা বেশি দিবেন শসাটাও বেশি দিবেন। তাড়াহুড়োর দরকার নেই মনোযোগ দিয়ে সময় নিয়ে বানিয়ে দিন।
ফুচকা ওয়ালা ইশিকার কথায় হেসে বলল,,” ঠিক আছে।”
ইশিকা ধৈর্য্য নিয়ে ফুচকা বানানো দেখছে। তার সাথে নানান রকম প্রশ্নও জুড়ে দিয়েছে। এতক্ষণে ফুচকা ওয়ালা মামার গুষ্টির খবর নেওয়া হয়ে গেছে। এখন শুধু ছেলে মেয়ের গুষ্টির খবর নেওয়া বাকি। এক প্লেট ফুচকা বানিয়ে দিতেই ইশিকা বেশ হড়বড়িয়ে প্লেট হাতে নিয়ে টক সমেত ফুচকা মুখে পুরে নিলো। ফুচকা ওয়ালা বেশ আগ্ৰহ নিয়ে তাকিয়ে আছে। যেন ইশিকার প্রশংসা শোনার অপেক্ষা করছে।
ইশিকা ফুচকা চিবোতে চিবোতে বললো,,” দারুন হয়ে , শুধু ঝালটা কম।”
ইশিকার কথা শুনে স্টলে থাকা ছেলেটা শুকনো মরিচের গুঁড়া ফুচকার উপর ছিটিয়ে দিতে নিলে ইশিকা মরিচের বোতলটা নিয়ে আরো বেশি করে দিতে থাকে। ফুচকা ওয়ালা মরিচের পরিমাণ দেখে বাধ সেধে বলল,,”আরে আরে বেশি হয়ে যাচ্ছে মা। পরে খেতে পারবে না।”
ইশিকার দেওয়া মরিচের পরিমাণ দেখে স্টলে থাকা ছেলেটা হা করে তাকিয়ে আছে।
ইশিকা মুচকি হেসে বলল,,” কিচ্ছু হবে না । এর চেয়ে বেশি ঝাল দিয়ে ফুচকা খাই।”
তিহান ফোনে কথা বলতে বলতে ইশিকার মরিচ দেওয়ার ব্যাপারটা ঠিকই লক্ষ্য করলো। ফুচকা ওয়ালার চেহারা দেখে বুঝতে পারছে তিনি মরিচ দিতে বারন করছে। তিহান কথা শেষ করে স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে ইশিকা-কে উদ্দেশ্য করে বলল,,” এতো ঝাল খাওয়া মোটেও ভালো নয়। পেট ব্যাথা করবে।”
ইশিকা ফুচকা মুখে পুরে তিহানের দিকে তাকিয়ে চেনার চেষ্টা করছে । যদিও লোকটাকে তার চেনার কথা নয়। বিয়ে বাড়ীতে সবাইকে চেনা এতো সহজ নয়। মুখের খাবার শেষ করে বললো,,”আমার অভ্যাস আছে, সমস্যা হবে না।”
তিহান মুচকি হেসে বলল,,” অভ্যাস থাকতেই পারে। কিন্তু বিয়ে বাড়ি তো ,এইখানে নরমাল খাবার পাওয়া মুশকিল। সব সময় ভাজা পোড়া,মশলা যুক্ত মাছ মাংস এইসব বেশি খাওয়া হবে। এর মধ্যে গরম আবহাওয়া তারউপর ঝাল খাচ্ছেন এতে স্টমাক আপসেট হওয়ার চান্স বেশি। তেমনটা হলে এতো সুন্দর অনুষ্ঠান বি*ষাক্ত লাগবে।”
তিহানের বুঝানোর ধরনটা ইশিকার মনে ধরলো ভীষণ। সে ফুচকার প্লেট রেখে মুচকি হেসে বলল,,” কথা সত্য। কিন্তু আপনাকে তো চিনলাম না। কনের কি হন আপনি?”
তিহান মোবাইল পাঞ্জাবীর পকেটে রেখে বলল,,” প্রথমত কনের বড় ভাইয়ের ফ্রেন্ড, দ্বিতীয়ত কনের বড় ভাবীর ভাই। আর আপনি?”
ইশিকা তিহানের কথায় হেসে উঠে বললো,,” ইন্টারেস্টিং সম্পর্ক। আর আমি সমুদ্র ভাইয়ার খালাতো বোন।”
,,”ওহ্ আচ্ছা।”
,,”আমার মনে হয় আপনাকে আমি চিনি। ভাইয়া আপনার কথা বলেছে। আপনি মেজর তিহান না?”
তিহান কিছুটা অবাক চোখে তাকিয়ে বললো,,”চেনেন? কিভাবে? তাছাড়া আমার কথা বলার কথা নয়।”
ইশিকা হেসে উঠে বলল,,” ব্যাপারটা একসাথে হাস্যকর আর লজ্জার হলেও বিয়ে বাড়িতে ছেলে পক্ষ মেয়ে পক্ষের অবিবাহিত ছেলে মেয়ে নিয়ে যেমন আলোচনা করে, তেমনি মেয়ে পক্ষও ছেলে পক্ষের অবিবাহিত ছেলে মেয়ে নিয়ে আলোচনা করে। তেমনি আপনাকে আর তমাল ভাইকে নিয়ে ছেলে পক্ষ মানে সমুদ্র ভাইয়ের কাজিন দের মধ্যে আলোচনা হয়ে ছিলো। সেখান থেকেই চেনা।”
এই প্রথম তিহান কিছুটা লজ্জা পেলেও শব্দ করে হেসে উঠে বলল,, “বুঝলাম। তা আপনার নাম কি। আপনি যেহেতু আমাকে চেনেন।”
ইশিকা মুচকি হেসে বলল,,” আমার নাম ইশিকা ইমনিধাহ্। ”
তিহান একপলক ইশিকার দিকে তাকালো। ইশিকা খানিকটা হেসে বলল,,” স্যরি ,যদিও কারো প্রফেসন নিয়ে তার ব্যক্তিত্ব বিচার করতে নেই,তাও আমরা তো মানুষ। আমরা বিচার করেই ফেলি। সত্যি বলতে মেজর তিহান শুনে ভেবেছিলাম আপনি অনেক রুড হবেন। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ব্যাপারটা তার উল্টো।”
তিহান ঈষৎ হেসে মাথা নেড়ে বললো,,”সবাই তাই মনে করে। অবশ্য এইটা মিথ্যাও নয়। এইটা সত্য, কর্মক্ষেত্রে গেলে রুড হতে হয়। অনেক রিজার্ভ থাকতে হয়। কিন্তু সেখান থেকে বের হওয়ার পর আমি আর দশ জনের মত স্বাভাবিক মানুষ।এই নিয়ে স্যরি বলার কিছু নেই।”
ইশিকা মৃদু হেসে মাথা নাড়ালো। এরমধ্যে একটা শাড়ি পরিহিতা মেয়ে ইশিকা হাত ধরে টানতে টানতে বললো,,” ইমনু, চল হলুদ ছোঁয়াবি।”
ইশিকা বিরক্ত নিয়ে বললো,,” ছাড় মাইশা, তোরা সবাই জোড়ার কবুতর। আমি নিরিহ এতিমের মত এসেছি। স্টেজে একা উঠতে লজ্জা লাগছে। আমি মোটেও উঠবো না।”
কে শোনে কার কথা। মাইশা টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল,,” তোর জন্য মেজরটাকে খুঁজে বের করবো। দুই সিঙ্গেল মিলে স্টেজে উঠবি। ব্যাস বাত খাতাম!”
ইশিকার চক্ষু চড়কগাছে। সে ফটাফট তিহানের দিকে তাকিয়ে লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। তিহান নিজেও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। হুট করে কেউ এমন কথা বলবে তার ধারনার বাইরে।
অন্য দিকে ইশিকা মাইশার আগেই হাঁটা ধরলো। মান সম্মান সব শেষ করেছে মাইশা। মেজর তিহানের সামনেই তাকে খুঁজে বের করার কথা বলছে। ইশিকা হলফ করে বলতে পারে এই মাথা মোটা মেয়ে মেজর তিহান কে সেটাই চেনে না।
এই পুরোটা সময় মায়া জাহান আর ফরিদা হক তিহান আর তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শাড়ি পরিহিতা মেয়েটাকে দেখছিলো। মেয়েটাকে প্রথম দেখাতেই তাদের খুব পছন্দ হয়েছে। কিন্তু এখন তিহানের পাশে দেখে দুজনের মনই খুশিতে ভরে উঠল। তিহানের পাশে মেয়েটাকে দারুন মানিয়েছে। ফরিদা হক আগবাড়িয়ে বললো,,” এই মেয়েটাকে হাত ছাড়া করা যাবে না আপা। এই ছুটিতেই বিয়ে ফাইনাল করতে হবে।”
মায়া জাহান মাথা নাড়তে নাড়তে বললো,,” ঠিক বলেছেন আপা।”
চলবে,,
(ভুল গুলো সংশোধন করে দিবেন।)