উপন্যাসের নাম::#আমি_আছি
লেখনিতে:#সাদিয়া_আফরোজ
পর্ব: ৮
রাতের শেষ তৃতীয়াংশের পর নুসাইব আর ঘুমোয় না। নামাজ পড়ে কখনো ছাদে তো কখনো আবার বাগানে হেঁটে বেড়ায়। অনেক সময় পেন্ডিংএ থাকা কাজ গুলো সেরে ফেলে। আজকেও তার ব্যাতিক্রম হলো না। নামাজ শেষে ছাদে এসে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই তৃধার আগমন।নুসাইব কিছুটা অবাক হলেও নড়লো না। শুধু তৃধার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে।
ছাদের রেলিং ধরে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে কেঁদে উঠলো তৃধা।
চমকালো নুসাইব, একটা মেয়ে এইভাবে হুট করে এসে কেঁদে উঠবে ভাবতেই পারেনি। কেন কাঁদছে সে? কিসের এতো কষ্ট তার? হঠাৎ করে নুসাইবের কেন জানি মনে হলো তৃধা হয়তো ছাদ থেকে লাফ দিবে। মেয়েটা হয়তো বেশি ক*ষ্টে আছে। নিজের উপর হাল ছেড়ে দেয়নি তো? আর দাঁড়ালো না সে ব্যাস্ত পায়ে তৃধা থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ালো। রেলিংয়ে হাত রেখে গাড় কাত করে তৃধার চেহারার আদলে তাকিয়ে তার ভাবাবেগ বুঝার চেষ্টা করলো। উঁহু এমন কোনো আলামত নেই। মেয়েটা শুধু কেঁদেই যাচ্ছে। নুসাইবের বয়সকালে কোনো নারীকে এইভাবে কাঁদতে দেখেনি। মাকে একবার দেখেছে তবে এইভাবে না। ছোট বেলায় তমাল একবার অ*সুস্থ হয়ে পড়ে। এমন একটা সময় ঘটনা ঘটেছে শহর জুড়ে ডাক্তারের নেই বললেই চলে। ফরিদা হক তখন তমালকে বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলো। নুসাইবের স্পষ্ট মনে আছে। এরপর আর কারো কান্না দেখেনি সে। দুই বোন আছে তাদের আবদারে নাকিকান্না করতে দেখেছে। যা সব মেয়েরাই বাবার কাছে করে থাকে। তৃধা ভিন্নধারার,তার কান্না দেখলে বুঝা যায় তার কষ্টটা কতটা বি*ভৎ*স। আচ্ছা তৃধাকে জিজ্ঞেস করলে কেমন হয়? একটা মেয়ের ব্যাক্তিগত ব্যাপার নিয়ে এতোটা কৌতুহল আধেয়ো কি উচিৎ? নিজেকে নিজে সুধালো নুসাইব। উঁহু নুসাইবের বিবেকে বাধলো। কারো ব্যাক্তিগত ব্যাপার নিয়ে এতোটা কৌতুহল ভালো নয়। নিজের কৌতুহল দিপ্ত মনকে যথারীতি স্থির করলো।
তৃধা ডুকরছে কাঁদছে। তার কষ্ট হচ্ছে ভীষণ।
নুসাইব ট্রাইজারের পকেট হাত গলিয়ে টিস্যু খোঁজার ব্যার্থ চেষ্টা করলো। না নেই , পকেটে মোবাইল ছাড়া অন্য কিছু পেলো না। স্থির চিত্তে দাঁড়িয়ে তৃধার কান্না থামার অপেক্ষা ছাড়া কিছুই কথার নেই।
তৃধা কাঁদছে শব্দ করে কাঁদছে। ঘর ছেড়ে বেরিয়ে বিশাল আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। সে জানে কেউ নেই ,এই বিশাল আকাশ ছাড়া তার কাছে কেউ নেই। তার ক*লি*জা চি*রে বেরিয়ে আসা প্রতিটা অশ্রু কনা বলছে সে ভালো নেই। কষ্ট হচ্ছে তার মনের দ*হ*ন শরীরে ভর করছে। রেলিং ছেড়ে হাঁটু গেড়ে বসলো তৃধা।
হঠাৎ এমন হওয়াতে খেই হারালো নুসাইব। ভেবেছে তৃধা পড়ে যাচ্ছে ধরতে গিয়েও হাত সরিয়ে নিলো। তৃধাকে ছোয়ার এখতিয়ার তার নেই।
এইদিকে তৃধার ৬ষ্ট ইন্দ্রিয়ও টের পেলো না পাশে কেউ আছে। তার প্রতিটা ইন্দ্রিয় রজবের মত পুরুষের দহনে জ্ব*লছে। তৃধা কেঁদে উঠে বললো,, কেন করলে এমন? কেন করলে! এর চেয়ে মেরে ফেলতে আমায়। কেন ছাড়লে! কি করবো আমি , কোথায় গেলে শান্তি পাবো। কেন জ্বা*লিয়ে দিলে আমায়। কেন করলে,,। কেন ঠকে গেলাম আমি? কেন কে*ড়ে নিলে সব?
নুসাইবের দৃষ্টি জোড়া শান্ত হলো। শরীর জুড়ে ঠান্ডা বাতাস বয়ে গেল। তৃধার কথায় অনূভুতিতে এক চিলতে খারাপ লাগা ছেয়ে গেলো। কৌতুহল দমিয়ে রাখা দায়। কে ছাড়লো তাকে?কেন ছাড়লো তাকে? কেন ঠকে গেলো সে?প্রশ্ন গুলো মন মস্তিষ্ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
বেশ কিছুটা সময় পর তৃধার কান্না থামলো। এইদিকে সূর্যের আলোয় পুরো আকাশ আলোকিত হয়ে গেলো। নুসাইবের দৃষ্টি তৃধাতেই আবদ্ধ। সূর্যের একচিলতে নরম আলো রেলিংয়ের নকশা ভেদ করে তৃধার অশ্রুসিক্ত কপোল ছুঁলো। নুসাইবের কাছে এই প্রভাতের কিরন গোধূলির মত ঠেকছে।
নুসাইব বুক ফুলিয়ে শ্বাস নিলো। কারো নিঃশ্বাসের শব্দে সতর্ক হলো তৃধা। আলগোছে চোখ মুছে নিলো।
নুসাইব বুঝলো তৃধা তার উপস্থিতি টের পেয়েছে। তাই অপেক্ষা না করে বললো,, অপেক্ষা বড়ই পীড়াদায়ক।
তৃধা চমকে তাকালো। পাশে কেউ আছে টের পেয়েছে। তবে সেটা যে নুসাইব তা কল্পনাতেও ছিল না। দুহাতে চোখ মুছে বলল,, আপনি এইখানে?
তৃধার কথায় নুসাইব সূর্যের নরম আলোয় চোখ রেখে বলল,, হুম আমি। রোজ আসা হয়। আজ দেখলাম আমি একা নই,আরো একজন আছে।
নুসাইব তৃধার দিকে তাকিয়ে পুনরায় বলল,, আমি যদি ভুল না হই নবনী আর তোমার বয়সে খুব একটা পার্থক্য নেই । তাই তোমাকে তুমি করে বলছি।
তৃধা মাথা নেড়ে বললো,, সমস্যা নেই বলুন।
তৃধার কথা শেষ হতেই নুসাইব বলে উঠলো,, আমাকে এইখানে দেখে চমকানোর কিছু নেই। এইখানে রোজ আসা হয়। আজ দেখলাম তুমি এলে। ভেবেছিলাম হয়তো আমার মতই অভ্যাস। অবশ্য কান্না দেখেই ভাবনা গুলো হোঁচট খায়। ওইরাতেও কাঁদতে দেখলাম আজকেও। ভেবেছিলাম হয়তো ভুল কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে নিবে। সেই জন্যই দাঁড়িয়ে ছিলাম।
বুক ফুলিয়ে শ্বাস নেয় তৃধা। পায়ের আঙ্গুল ফ্লোরে ঘষতে ঘষতে বলল,, মানুষ একবারই ভুল সিদ্ধান্ত নেয়, এরপর সিদ্ধান্ত নেওয়াই ছেড়ে দেয়।আমিও তাই, আমার সিদ্ধান্ত নেওয়া শেষ। আ*ত্ম*হ*ত্যা করার সিদ্ধান্তটাও নেওয়া যাচ্ছে না। এমনিতেই পা*পী আর পা*প বাড়াতে চাই না। পরে খোদার কাছেও জায়গা হবে না।
নুসাইবের শান্ত দৃষ্টি শান্ত হলো। নিজের এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে প্রশ্ন করে বসলো,, কি হয়েছিল?
তৃধা একটু অবাক চোখেই চাইলো। সে ভেবেছিল বাড়ির সবাই তার কাহিনী জানে। তবে কি তার ভাবনা ভুল? এই বাড়ির ছেলে মেয়েরা তার সম্পর্কে কিছুই জানে না? আন্টি নিশ্চয়ই বলেনি? তবে কেন? লম্বা শ্বাস নিয়ে তৃধা বলে উঠলো,,, সর্বহারা।
নুসাইবের প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টি।
তৃধা মৃদু হেসে বলল,, যাকে চেয়েছিলাম সে ছেড়ে দিয়েছে। আপনার ভাষায় যদি বলি , তবে তিল তিল করে জমানো নিজের সব কিছু ইনভেস্ট করার পর লোকসান গুনতে হলো। এক রাতেই দেউলিয়া হতে হলো। না চাইতে ঘরদোর নিলামে উঠলো।
নুসাইবের দৃষ্টি শান্ত হলো। প্রশ্নের ফোয়ারা শেষ হয়েও শেষ হলো না। আরো কিছু জানার ছিলো তার। তবে কেন জানি বলতে দ্বিধা হচ্ছে। মনের এক কোনে সুপ্ত থেকে সুপ্ত বাসনা গুলো বিলিন হয়ে গেছে। তবে মায়ারা প্রগাঢ় হলো।
তৃধাও নিঃচুপ কথা নেই তার মুখে। তবে তার তপ্ত নিঃশ্বাস অনেক কিছুই বলছে।
উঠে দাঁড়ালো নুসাইব। পকেটে হাত গলিয়ে নরম গলায় বলল,, আমি নিচে যাচ্ছি।
সাঁড়া শব্দ নেই তৃধার। সে নিঃচুপ তাকিয়ে রয়।
নুসাইব আর কথা বাড়ালো না। নিঃশব্দে ছাদ থেকে নেমে গেল।
সকাল হতে না হতেই ডায়নিং রুমে এসে হাজির হলো নাবীব শেখ। চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে রাত তার ভালো কাটেনি। পুরো রাত মনে হয় ঘুমোয়নি। রাশ ভারী চেহারা নিয়ে খবরের কাগজে মুখ গুঁজে আছে।
তমাল মুখে ব্রাশ পুরো বাড়ি চোষে বেড়াচ্ছে। নাবীব শেখ খবরের কাগজ নামিয়ে তমালের দিকে তাকিয়ে বলল,, ব্যাড হ্যাভিট।
পিতার কথা পুত্র স্পষ্ট শুনতে পেলো। তমাল একপলক তাকিয়ে মুখ ধুয়ে প্রেশার মাপার মেশিন নিয়ে হাজির।
তমালের হাতে প্রেশারের মেশিন দেখে রেবেকা খালা হাত বাড়িয়ে দিলো। তমাল বিরক্ত চোখে চেয়ে বললো,, তোমার প্রেশার হাতে নেই বরং গলায়। একটু ধৈর্য ধরো মেপে দিবো।
রেবেকা দাঁড়ালো না এলোমেলো পায়ে দৌড়ে কিচেনে ঢুকলো। এই ছেলের বিশ্বাস নেই।
নাবীব শেখ বিরক্ত হয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো। তমাল প্রেশার চেক করে বললো,, রাতে ঘুমাও নি কেন! প্রেশার দেখো।
নাবীব শেখ বড়ই বিরক্ত হলে।
তমাল পুনরায় জিজ্ঞেস করলো,, শেষ কখন ডায়বেটিস চেক করেছিলে?
নাবীব শেখ তেজি গলায় বলল,, জিজ্ঞেস করছিস কেন? সব আমাকে জিজ্ঞেস করলে তুই ডাক্তার আছিস কেন? টুকে টুকে পাশ করিস?
তমাল ভ্রু জোড়া বেঁকিয়ে উঠে পড়লো। তার বুঝা শেষ। এই ঘরের তার মত ডাক্তারের দাম নেই। মুখ দেখে রোগ বুঝতে না পারা পর্যন্ত ডাক্তার দাবি করা যাবে না।
তমাল সোফা ছেড়ে উঠবে তার আগে নাবীব শেখ বলে উঠলো,, তৃধার কপাল ড্রেসিং করতে হবে। আমি ভুলে গেছি মেয়েটাও মনে করিয়ে দেয়নি।
,, ব্রেকফাস্ট সেরে করে দিবো।
,, ড্রেসিং করতে পারিস তো?
তমাল দাঁতে দাঁত চেপে বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,, না। সেটা শিখছি কেবল।
নাবীব শেখ ছেলের চেহারা দেখে চশমা ঠিক করে আবার খবরের কাগজের দিকে তাকালেন। এই ছেলে সহজ প্রশ্নের সহজ উত্তর কখনোই দিবে না। হাড়ে হাড়ে ব*জ্জা*ত হয়েছে।
___
নাস্তার টেবিলে সবাই উপস্থিত। রেবেকা সবাইকে নাস্তা বেড়ে দিচ্ছে। তমাল রেবেকার দিকে তাকিয়ে বলল,, খালা তৃধা আপুকে এরেকটা রুটি দাও।
আপু বলাতে তৃধা হকচকিয়ে তাকালো। নুসাইব নিজেও চমকে তাকায়। ভাই তার এতো ভদ্র হলো কবে। নবনী কোনো খবর নেই সে নিচের দিকে তাকিয়ে গোগ্ৰাসে গিলছে। নাবীব শেখ আর ফরিদা হক নিজেদের মত করে খাচ্ছে।
রেবেকা অপ্রস্তুত হেসে তৃধার পাতে আরেকটা রুটি দিলো। তৃধা মানা করতে নিয়ে নুসাইবের দিকে তাকালো। দুজন চোখাচোখি হতেই চোখ নামিয়ে নিলো।
খাওয়া দাওয়া শেষ হতেই নুসাইব নিজের রুমে চলে গেল। তমাল গলা ঝেড়ে নবনীর দিকে তাকিয়ে বলল,, আর না গিলে উঠ। আপুকে নিয়ে সোজা তোর রুমে যাবি। মাথার আ*ঘা*তটা ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ পাল্টে দিতে হবে।
খাবার নিয়ে কথা বলায় মুখ কালো করলো নবনী। তৃধা তাকিয়ে দুজনের কথপোকথন শুনছে শুধু।
নাবীব শেখ উঠতেই তমাল বলে উঠলো,, বাবা কথা আছে, বসো।
নবনী তৃধাকে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল।
তমাল খালা বলে ডাক দিতেই রেবেকা হাজির।
তমাল গলা ঝেড়ে বলল,, বাবা, কালকের ঘটনা আম্মু জানে?
নাবীব শেখ রাশভারী গলায় বলল,, না। বলিনি।
ফরিদা হক ভ্রু গুটিয়ে বলে উঠলো,, বাপ ছেলে মিলে কি খিচুড়ি পাকিয়েছো? আমি জানি না কেন?
তমাল এক নিঃশ্বাসে কালকের কথা গুলো বলে শেষ করলো।
ফরিদা হকের মাথায় হাত।
,,এইসব কথা বাইরে গেলো কিভাবে?
রেবেকা চোখ লুকাতে ব্যাস্ত।
,, কিভাবে আর যাবে। ঘরের মধ্যে সাংবাদিক লোক পুষে রেখেছো সেই ভাবেই গেলো। তাও আবার সবটাই মন গড়া। নিউজ চ্যানেলের চেয়ে দ্রুত ছড়াচ্ছে সব।
,,কি বলতে চাইছিস?
,, খুব সহজ কথা আম্মু। মজিদ কাকা এইসব বাইরে রটাবে না। তিনি সব সময় গেইটে থাকেন। তার এতো সময় নেই। কিন্তু রেবেকা খালা এইবাড়ি ছাড়াও চার চারটা বাড়িতে কাজ নিয়ে রেখেছে। যার মধ্যে জয়নুল আংকেল, মনসুর আংকেলের বাসাও আছে। তুমি ভেবে দেখো দুইয়ে দুইয়ে চার হতে দেরি হবে না। তাছাড়া আমার কাছে সলিড প্রমাণ আছে । খালা রাফি ,রিমান দুজনকেই তো চেনো? কিছু বলার আছে?
রেবেকা কেঁদে দেওয়ার জোগাড়। ফরিদা হক চোখ গরম করে তাকালো।
,, রেবেকা তোকে আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। তুই বাইরে এইগুলো করে বেড়াচ্ছিস। সেইদিনও আমি কিছু বলার আগে আমার বড় ছেলেটার কাছে কান ভাঙ্গিয়েছিস। আজ তো দেখছি পাড়ায় বদনাম করে এসেছিস।
নাবীব শেখ গম্ভীর গলায় বলল,, রেবেকা আমি অ*মানুষ দেখিনি তবে তোকে দেখেছি। ভাইজান ভাইজান বলে তো তুই স*র্বনা*শ করে দিয়েছিস।
রেবেকা কেঁদে উঠলো। তমাল বিরক্ত হয়ে বলল,, কুমিরের কা*ন্না এইখানে চলবে না। তুমি আমার ভাইয়ের নামে ব*দনাম করে এসেছো। আমার বাবা পাড়ার দোকানে যেতে পারছে না। তাছাড়া তুমি তৃধা আপুর মত মেয়েটাকে পর্যন্ত ছাড়লে না। এই বাড়িতে মেহমান হয়ে এসে ব*দনাম কুড়োচ্ছে । চিন্তা করেছো কেমন লাগছে তার?
ফরিদা হক রেবেকার কান্না দেখে কিছুটা শান্ত হলেন। তিনি রেবেকার কাঁধ চাপড়ে কাঁদতে মানা করলেন। তমাল সেটা দেখে প্রচন্ড খেপে গেছে। তমাল টেবিল ছেড়ে দাঁড়ায়।
,, খবরদার আম্মু, তুমি একদম মায়া দেখাবে না। পাড়ায় কুৎ*সা রটে গেছে। বাবা যা শুনেছে তা কিছুই না। ভেতরে ভেতরে লোকে ভাইয়ার নামে কি বদনাম করছে সেটা আমি জানি। তাই বাদ দাও। কাজটাজের দরকার নেই।
ফরিদা হক ছেলের হাত ধরে বললো,, বাবু শান্ত হ। তৃধা শুনবে।
রেবেকা কেঁদে বেরিয়ে গেল। সে থাকবেনা এই বাড়িতে।
রেবেকার দিকে তাকিয়ে তমাল বলে উঠলো,, দেখেছো কেমন পালাচ্ছে? রিমানদের বাড়ি গিয়ে বলে এসেছে ভাই বিয়ে করে তৃধা আপুকে অস্বীকার করেছে। তৃধা আপু প্রতিবাদ করেছে বিধায় মে*রে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। এই গুলো কোনো কথা?
তুমি তাও বলছো শান্ত হতে।
তমালের কথা শুনতেই ফরিদা হকের গাঁয়ে যেন আ*গু*ন ধ*রে গেলো।
নাবীব শেখ গম্ভীর গলায় বলল,, আজকাল ছেলের বউয়ের চেয়ে কাজের লোক পাওয়া মুশকিল। তাই তোর মা শান্ত হতে বলছে।
বাবার কথা কর্নকুহরে পৌঁছাতেই তমাল বলে উঠলো,, সেটা আগে বলতে। এমন কাজের লোক না রেখে আমাকে বলতে। আমি একটা ফরজের সাথে তিনটে সুন্নত নিয়ে আসতাম।চারজন মিলে কাজ করলে কাজ থাকতো না। পরে নাহয় ভাইয়া বিয়ে করে আরেকটা নিয়ে আসতো।
অন্তত তারা পাড়া মহল্লা ঘুরে ঘুরে বদনাম করতো না। এই বাড়িটাকে নিজের বাড়ি মনে করে থাকতো।
ছেলের কথা শুনে ফরিদা হকের মুখে হাত। নাবীব শেখ বিনা বাক্যব্যয়ে উঠে রুমে চলে গেলেন। মুখে লাগাম নেই ,নির্লজ্জ ছেলে।
নুসাইব তৈরি হয়ে নিচে নামছিল এমন সময় তমালের কথা শুনে দাঁড়িয়ে গেলো। রাগবে না হাসবে বুঝতে পারছে না। একটা ফরজের সাথে তিনটা সুন্নত নিয়ে আসবে। অকর্মার ঢেঁকি! চার বিয়ের প্রস্তাব রাখছে । নুসাইব মুচকি হেসে নিচে নেমে এলো।
ফরিদা হক বড় ছেলেকে দেখে নজর লুকিয়ে রুমে ছুটলো।
তমাল ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ঘুরে দাঁড়ালো। যা বলেছে বলেছে কিন্তু সবতো আর চিন্তা করে বলেনি।রাগের বশে বলে ফেলেছে।
নুসাইব ভাইয়ের কাঁধে হাত রেখে গম্ভীর গলায় বলল,, পাত্রী গুলো পছন্দ করা আছে নাকি আমাদের খুঁজতে হবে।
চলবে,,!
উপন্যাসের নাম::#আমি_আছি
লেখনিতে:#সাদিয়া_আফরোজ
পর্ব: ৯
মায়ের সাথে তিন্নির বিস্তার আলাপ হলো। তৃধার কথা শুনে তিন্নির বেশ খারাপ লাগা কাজ করছে। মাকে বারকয়েক বলেছে তৃধার খেয়াল রাখতে। থাকুক তৃধা এই বাড়ি তার আপত্তি নেই।
নবনী তৃধার চুল বেঁধে দিচ্ছে সেইসাথে জুড়েছে গল্প। এর মাঝে নবনীর মোবাইল ফোন স্বশব্দে বেজে উঠলো। কিঞ্চিত বিরক্ত হলেও সেইভ করা নামটা দেখে লাজুক হাসলো। তৃধার দৃষ্টি নবনীতে আবদ্ধ। কল রিসিভ করে মোবাইল খানা কানে চেপে ধরলো। ফ্যানের বাতাসে চুল উড়ছে তাও নবনীর ললাটে ঘাম চিক চিক করছে। ছোট ছোট চুল গুলো আলগোছে কানের পেছনে গুঁজে মুচকি হাসলো সে। মূহুর্তে গালের দুপাশে লাল আভা ছড়িয়ে পড়লো। এই হাসি,এই ঘামে ভেজা ললাট,এই লাল আভা ছড়ানো কপোল সব তৃধার চেনা। নবনী পুরো রুম জুড়ে পায়চারি করে কথা বলছে। কখনো পর্দা ধরে কথা বলছে কখনো ফুলের টবে হাত ছুঁইয়ে। হ্যাঁ নবনী প্রেমে পড়েছে। তৃধার উদাসী চোখ জোড়া নতুন প্রেমে পড়া নবনীকে দেখতে ব্যাস্ত। প্রেমে পড়া সুন্দর, সুন্দর সেই অনুভূতি। এই অনূভুতিতে যে নারী জড়ায় তার সৌন্দর্য কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এখন যেমন নবনীর বেড়ে গেলো। ঘামে চিকচিক করা কপালে অবাধ্য চুল এসে বিরক্ত করছে, যদিও নবনির এতে মাথা ব্যাথা নেই। সে সপ্তপর্নে চুল গুলো সরিয়ে মিষ্টি আলাপচারিতায় মশগুল। কথার ফাঁকে ফাঁকে মুচকি হাসছে। মাঝে মাঝে লাজুক হয়ে গালের দুপাশ গরম হচ্ছে,লাল আভা সেটাই জানান দিচ্ছে। অদ্ভুত সুন্দর লাগছে তাকে। নবনীর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো তৃধা।
নারী প্রেমে সুন্দর,
নারী যত্নে সুন্দর,
নারী মাতৃত্বে সুন্দর,
নারী অপেক্ষারত সুন্দর।
__________
সপ্তাহ পেরুলো।
নবনী আর তমাল তিনদিনের সফর কাটিয়ে নিজ নিজ অবস্থানে ফিরে গেছে। কোথাও যাওয়া হয়নি তৃধার । সে এখনো শেখ ভিলায় আছে। নাবীব শেখ এর ডায়বেটিস আর প্রেসার দুটোকে বাগে আনতে পেরেছেন। এই নিয়ে তার খুশির শেষ নেই। আসতে যেতে ফরিদা হককে টিপ্পনী কাটতেও ভুলছে না। এই নিয়ে সকাল থেকে মিনিটে মিনিটে ভেজাল হচ্ছে। তৃধা দুজনের ভেজাল মিটমাট করছে। তাদের শালিস নালিশ করতে করতে তৃধার সময় পার হচ্ছে। যদিও তৃধা একা নয়। তার সাথে আছে সায়রা বানু নামের এক মাঝ বয়সী ভদ্র মহিলা। রেবেকা খালাকে বাদ দেওয়ার দুই দিন পর তমাল কোথা থেকে যেন সায়রা বানুকে ধরে এনেছে। সায়রা বানু মাঝ বয়সী মহিলাদের কাতারে পড়লেও তার পরিস্থিতি তার বয়স বাড়িয়ে দিয়েছে।
সায়রা খেটে খাওয়া মানুষ। তিনবেলা খাবার আর পরিধেয় বস্ত্র দিলে তার চলবে। দুই কুলে কেউ নেই যার দরুন বেতন নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই। তাকে পেটে ভাতে রাখলেই চলবে। তাও তমাল তার বেতন ধরে বেঁধে দিয়েছে। খরচ না করলেও এই অর্থের মালিক সে থাকবে। প্রয়োজনে খরচ করবে,তা না হলে তার কাছেই রাখবে। এই নিয়ে কেউ দুই কথা বলেনি। যদিও এই নিয়ে কারো কোনো আপত্তি ছিলোও না। তাও ফরিদা হক মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছিলেন। ভালো খারাপ কিছুই বলেনি ।সাথে নাবীব শেখকে কড়া নজরদারিতে রেখেছিলেন। এই ছেলের ভরসা নেই, উনিশ থেকে বিশ হলে একটা ফরজের সাথে তিনটা সুন্নত গুনে গুনে নিয়ে আসবে। তাই রিস্ক নিলেন না।
অফিসের সময় হয়ে গেছে। নুসাইব হড়বড়িয়ে নিচে নামলো। ডাইনিং রুমের দৃশ্য কিছুটা অন্য রকম। ফরিদা হক খু*ন্তি নিয়ে নাবীব শেখকে তা*ড়া করছে। এর মাঝে তৃধা দুইজনকে শান্ত করতে পিছু পিছু ছুটছে। সায়রা খালা গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে দেখছে। নুসাইব কি বলবে বুঝতে পারছে না। টম এন্ড জেরি টিভিতে অনেক দেখেছে । বাস্তবে এই প্রথম দেখছে।
ফরিদা হক হাঁপিয়ে উঠলেন। বাজখাঁই গলায় বলে উঠলো,, তোমার ডায়বেটিস আজ আমিই বাড়িয়ে দিবো। বদ লোক! আজ সব তরকারিতে চিনি দিবো। তোমার মত লোকের সংসার করেই আমার হাই প্রেশার। আমি দেখে তোমার সংসার করছি। তা না হলে সাত আটটা বিয়েও কম পড়তো।
নাবিব শেখ হাঁপিয়ে উঠলো। এই বয়সে শরীরের পক্ষে এতো দৌড় ঝাঁপ নেওয়া যাচ্ছে না। তিনি চশমা ঠিক করে বললো,, তোমার সাথে থেকেই আমার ডায়বেটিস হয়েছে সাথে প্রেশার লো ।
ফরিদা হক তেড়ে যেতেই তৃধা জড়িয়ে ধরে । শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,, আন্টি তুমি ভালো বলেই ডায়বেটিস হয়েছে। এতো মিষ্টি বউ যার থাকবে তারতো ডায়বেটিস হবেই। প্লিজ আন্টি এমনিতেই প্রেশার হাই,তার উপর আরো রেগে আছো। শরীর খারাপ করবে।
তৃধার কথায় নাবীব শেখ মুচকি হাসলো। নুসাইব কিছুটা নড়াচড়ে দাঁড়ালো। তৃধাকে ক্লান্ত লাগছে। ক্লান্ত গলায় ঝ*গড়া থামানোর প্রবল চেষ্টা। ঝ*গড়া থামানোর ব্যাপারটা নুসাইবের ভালো লাগলো। ঘর ভর্তি হইচই থাকলে ঘরের মানুষ গুলো সুস্থ থাকে। তৃধা আসার পর থেকে নুসাইব তার মাকে খুব ভালো করে অবজার্ভ করছে। মা আগের মত সকাল দুপুর বিছানায় পড়ে নেই। সারাদিন ফুরফুরে মেজাজে থাকছে। রাতে ঠিকমতো ঘুমোচ্ছে , নিয়ম গুলো একটাও এদিক ওদিক হচ্ছে না। তৃধাও তার সাথে তার ছায়া হয়ে আছে। বুক ভরা শ্বাস নিয়ে ঘড়িতে সময় দেখে ফরিদা হককে ডাক দিলো।
,, আম্মু! আমি বেরুচ্ছি।
নুসাইবের গলার আওয়াজ পেয়ে তৃধা ফরিদা হককে ছেড়ে সরে দাঁড়াল। ফরিদা হক টেবিলে খুন্তি রেখে শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে ছেলের কাছে এলো।
,, দুপুরে খেতে আসবি?
,, সময় হবে না আম্মু।
,, সময় তোর কোনো কালেই হবে না। না বিয়ের জন্য হচ্ছে ,না খাবারের জন্য। বাপ ছেলে দুটোতো মিলে আমাকে মে*রে ফেল।
নুসাইব তৃধার দিকে একপলক তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো। মাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু এঁকে বলল,, এইসব বলে না মা। তুমি ছাড়া আমার কে আছে বলো?
ছেলের কথা শুনে নাবীব শেখ চশমা নাকের ডগায় এনে উপর দিয়ে তাকিয়ে বলল,, আমাকে চোখে লাগছে না? বাপ কি বাদ পড়ে গেছে?
নুসাইব মৃদু হেসে বেরিয়ে যেতে যেতে বললো,, আল্লাহ হাফেজ বাবা। তোমার ভাগ তমাল নিবে।
নুসাইব বেরিয়ে গেছে ঠিকই কিন্তু নাবিব শেখ থেমে নেই তিনি তেলে বেগুনে জ্ব*লে উঠে বললো,, দেখেছো তৃধা ছেলেটা কি বলছে? আমাকে ওই ব*জ্জা*তের ভাগে ফেলছে। আমি ঘরদোর ছেড়ে মুসাফির হয়ে যাবো তাও ওই ডান পিঠে বাউন্ডুলে ছেলের সাথে থাকবো না।
ফরিদা হক আহ্লাদে আটখানা। নাবীব শেখকে জ্ব*ল*তে দেখেই তার সব রাগ নিমেষেই উবে গেছে। তিনি খুন্তি হাতে সুচিত্রা সেনের গান গাইতে গাইতে কিচেনে ছুটলো।
এইদিকে তৃধা অবাক তাকিয়ে রয়। সংসার সুন্দর। ঝ*গড়া ,রা*গা*রা*গী, কথা কাটাকাটি কিংবা খুনসুটি যাই হোক না কেন? দিন শেষে ভালোবাসা,মায়া আর যত্ন জিতে যাচ্ছে। তৃধা মুচকি হেসে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,, এভাবেই চলুক তোমাদের সংসার, সুখে-দুঃখে একসাথে থাকো তোমরা। নজর না লাগুক। তোমাদের জোড়া হেফাজতে থাকুক।
———
সময় তার গতিপথ ধরে চলছে। থেমে নেই কারো জন্য। তার সাথে চলছে মানুষের জিবনের ধারা। কেউ ভালো আছে, কেউ ভালো নেই আবার কেউ কেউ ভালো খারাপে মিশে আছে। মাস পেরুলো তাও তৃধার মনে হলো তৃধা সেই দিনেই আটকে আছে। তার সময় থেমে গেছে। বয়স বাড়ছে, তার সাথে থাকা মানুষ গুলোরো জিবন বদলাচ্ছে, তাদের আবেগ অনুভূতি বদলাচ্ছে, নতুন নতুন স্মৃতি তৈরি করছে। শুধু থেমে আছে সে। সে এক মৃ*ত নদীতে পরিনত হয়েছে। জোয়ার নেই, ভাটা নেই,গতি পথ পরিবর্তন নেই, ভাঙ্গা গড়ার খেলা নেই । তি*ক্ত স্মৃতি ,বিষাদে ভরা অনূভুতি আর সব হারিয়ে ফেলার বেদনা ভরা বুকটা ক্রমাগত শুকিয়ে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। ম*রে যাচ্ছে সে, ক্রমশ মৃ*ত্যু*র দিকে ধাবিত হচ্ছে।
বসন্ত ঋতুর সময় কাল সীমিত। শুরু হতে না হতেই শেষ। শীত ঋতু তাড়া দিয়ে প্রকৃতিতে তার প্রভাব বিস্তার করছে, গাছ ভর্তি ছাতিম ফুলতো সেই কথাই বলছে। হালকা বাতাসে শরীরের লোমকুপ দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।
আজকে নুসাইব লাঞ্চ টাইমে এসে আর অফিস মুখো হয়নি। কাজের চাপ নেই। না গেলেও চলবে। ম্যানেজার সাহেব সবটুকু বুঝে নিবে।
শীতকালের দিন গুলো ছোট তাই বেশিক্ষণ রুমে থাকলো না। মোবাইল ফোন হাতে নিতেই খুব কাছের একজনের কথা মনে পড়লো। ভাবলো এক কাজে দুইকাজ সেরে ফেললে মন্দ হয় না। যেই ভাবা সেই কাজ। দরজা খুলে বের হতেই মায়ের সাথে দেখা। হাতে তিনটে কাশ্মীরি শাল নিয়ে পুরো বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। এই সময় ছেলে বেরুচ্ছে দেখেই বুঝে নিলো ছাদে যাবে। নুসাইব সোয়েটার পরে আছে তাও ফরিদা হক একটা শাল ছেলের গায়ে জড়িয়ে দিয়ে বলল,, খবরদার যদি ঠান্ডা লেগেছে। ছাদে বেশিক্ষণ থাকা যাবে না।
নুসাইবের মনে হলো মা তাকে চটের ব্যাগ পরিয়ে দিয়েছে। এতো শীত নেই তার মা যতটা মনে করছে। নুসাইব বিরক্ত হলেও প্রকাশ করলো না। মায়েদের যত্নে স্নেহে বিরক্ত হতে নেই। মায়ের মমতা যত কুড়িয়ে নেওয়া যায় ততই লাভ।
,, এই বিকেলে এতো কিছু পরিয়ে পাঠাচ্ছো। পাড়ার লোকে যদি দেখে কি বলবে বলো?এতোটাও শীত পড়েনি আম্মু।
,, পাড়ার লোক তোকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেনি। আমার ছেলে আমি দরকার হলে তুলোয় মুড়িয়ে কোলে নিয়ে হাঁটবো। আসছে পাড়ার লোকের কথা বলতে। ছাদে যাচ্ছিস যখন টের পাবি।
মায়ের যুক্তির কাছে বরাবরই তাকে হার মানতে হয়। সে তমালের মত আতো শতো যুক্তি দিতে পারে না। মায়ের খারাপ লাগবে ভাবতেই হার মেনে নেয়।
“মেজর” নাম দিয়ে সেইভ করা নাম্বারে কল দিয়ে ছাদে পা রাখলো নুসাইব।
অপর প্রান্তের ব্যাক্তি যেন জানতো আজ এই প্রান্ত থেকে কল যাবে। সাথে সাথে রিসিভ করে বললো,, কি ব্যাপার বিজনেসম্যান এই সময়ে আমাকে মনে পড়লো কেন? মিটিং ক্যানসেল? নাকি মিটিং হওয়ার আগেই ডিল ফাইনাল হয়ে গেছে?
বিরক্ত হলো নুসাইব। ভ্রু গুটিয়ে কপালে ভাঁজ ফেলে বললো,, কথা কম বল হারামি। আমি মনে না করলে তোর মনে পড়ে?
,, শেখ সাহেব আমি কল না দিলেও আপনার খবর রাখি। আমার ফিডে আপনার পোস্টের আনাগোনা বেশি। কি যেন লেখা ছিলো?? দাঁড়ান একটু মস্তিষ্কে জোর দেই। ওহ্ আচ্ছা হ্যা মনে পড়েছে “Don’t force someone to love you. God already loves you beyond your imperfections. কি কিছু ভুল বললাম? পোস্ট প্রায় মাসখানেক আগে করা। তাও খুব ভোরে।
নুসাইবের সংকোচিত ভ্রু জুগল প্রসারিত হলো।ধীরে সুস্থে নিঃশ্বাস ফেলে বললো,, হুম এমন কিছুই। তোর এতো কিছু মনে থাকে কিভাবে?
,, সে কথা নাহয় পরে হবে।আগে বল ঘটনা কি?
নুসাইব দুপা এগোতেই তৃধাকে চোখে পড়লো। এগোয়নি বরং থমকে দাঁড়ালো। তৃধা সটান হয়ে ছাদের একটা কোন ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। তার দৃষ্টি সম্ভবত শূন্যে। ঠান্ডায় গায়ে কাঁটা দিচ্ছে কিন্তু তৃধা শুধু থ্রিপিস পরে আছে। না সোয়েটার ,না শাল গায়ে জড়ানো। ওড়নাটা আঁটসাঁট করে দিয়ে রেখেছে। মৃদু বাতাসে ওড়নার দুপাশ দুলছে। বেনী করা চুল পিঠে জুড়ে লুটোপুটি খাচ্ছে। বেঁধে রাখার পরেও কিছু অবাধ্য চুল বেরিয়ে গেছে। নুসাইব অবাক তাকিয়ে রয়। মেয়েটা কেমন অনুভূতি শূন্য হয়ে আছে। কি হচ্ছে তার সাথে? কেন সে নিজেকে লুকোচ্ছে। কেন সে সবার আড়ালে এতোটা জীর্ণশীর্ণ? নুসাইব টেনে নিঃশ্বাস নিলো।
অপর পাশ থেকে তিহান হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছে। নুসাইব শান্ত গলায় বলে উঠলো,, তোকে একটু পরে কল দিচ্ছি।
তিহানের বলার অপেক্ষা না করেই কল কেটে দিলো নুসাইব।
স্বভাবসুলভ হেঁটে তৃধার সমীপে দাঁড়ায়। তৃধা তখনো শূন্যে দৃষ্টি রেখে ভাবনায় মশগুল। হয়তো হিসেব কষছে, দেওয়া নেওয়ার হিসেব। নুসাইব গাঁয়ের চাদর খানা খুলে নিয়ে তৃধার গায়ে জড়িয়ে দিতে নেয়। হুট করে মনে হলো ব্যাপারটা ঠিক নয়। তৃধা যদি তাকে ভুল ভেবে বসে?
নড়েচড়ে দাঁড়ালো নুসাই। গলা ঝেড়ে নিজের উপস্থিতি জানান দিলো। তৃধা পাশ ফিরে চায়। অবাক হলো না, ভাবাবেগও নেই স্থির চিত্তে তাকিয়ে সুধোয়, আপনি! হাঁটতে এসেছেন বুঝি?
নুসাইব তৃধার দিকে তাকিয়ে চাদরখানা বাড়িয়ে দিয়ে বললো,, আগে এইটা গায়ে জড়াও।
,, সমস্যা নেই আমি ঠিক আছি।
,, আম্মু পাঠিয়েছে। না নিলে মন খারাপ করবে।
তৃধা আর দ্বিমত পোষণ করলো না। চাদরটা গায়ে জড়িয়ে দাঁড়ালো। আসলেই শীত পড়ছে। এতক্ষণ না বুঝলেও চাদরের উষ্ণতায় তৃধার অনূভুতি হচ্ছে তার শরীর যথেষ্ট ঠান্ডা হয়ে গেছে। নিজেকে মরা মানুষ মনে হচ্ছে, হঠাৎ এতো অনূভুতি শূন্য হলো কেন?
নুসাইব চাদর জড়ানো তৃধাকে দেখে পুনরায় বলে উঠলো,, কালেভদ্রে শীতের বিকেল উপভোগ করা হয়। আজ এলাম , হঠাৎ দেখলাম তুমি। কাঁদছিলে?
নুসাইবের প্রশ্নে তৃধার শুকানো ঠোঁট জোড়া ঈষৎ ফাঁক হলো। মুখ দিয়ে টেনে নিঃশ্বাস নিয়ে ধীরে সুস্থে ফেলে বললো,, উঁহু! কাঁদছি না।
উত্তর শুনে সতর্ক দৃষ্টিতে তৃধার চেহারার দিকে তাকালো নুসাইব,, মেয়েটাকে কেমন মায়া মায়া লাগছে। কপালের কাটা দাগটা সেই মায়া দ্বিগুণ করেছে। ঠান্ডায় নাকের ডগা ঈষৎ লাল হলেও ঠোঁট জোড়া শুকনো। অবাধ্য চুল গালে ঠোঁটে লেপ্টে আছে। সেই চুল কানের পেছনে গুঁজে রাখার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে তার নেই। নিভৃতে আখিজুগল সরিয়ে নিয়ে বললো ,, নিঃশব্দে নিরবে তিল তিল করে নিজেকে শেষ করে ফেলার চাইতে শব্দ করে কাঁদা ভালো। অন্তত দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত পরিস্থিতি তৈরি হয় না।
তৃধা মৃধু হেসে নুসাইবের দিকে তাকালো। চোখে চোখ পড়লো দুজনার। তৃধা ব্যাথ্যাতুর চোখে তাকিয়ে একচিলতে হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে বলে উঠলো,,
আমার সব কষ্ট কেনা পানির দামে,
এ চোখ জানে,
রোজ কতটা কষ্ট লুকাই জলের নামে।
~রুম্পা হক
চলবে,,,
উপন্যাসের নাম::#আমি_আছি
লেখনিতে:#সাদিয়া_আফরোজ
পর্ব: ১০
অফিস থেকে সন্ধ্যা করে বেরুলো নুসাইব। কনকনে শীতে হাত প্রায় জমে যাওয়ার জোগাড়। পকেটে হাত গলিয়ে ফুটপাতের দিকে যেতেই তমালের কল। রিসিভ করতেই ফটাফট সালাম দিয়ে বলল ,সে বাড়ি ফিরবে,মায়ের জন্য মন পু*ড়ছে। প্রতুত্তোরে নুসাইব শুধু ” হুম” বলে কলটা কেটে দিলো। তমাল কিছু সময় অবাকচিত্তে নিজের মোবাইলের দিকে তাকিয়ে রয়। পড়ালেখা ঝুলিয়ে রেখে বাড়ি যাবে বলছে এতেও ভাইয়ের রিয়েকশন নেই? তমাল চিন্তিত। ভাইয়ের অধঃপতন নাকি উন্নতি কিছুই বুঝলো না। হিসেব কষে দেখলো বাড়িতে তৃধা আপু আসার পর থেকেই ভাইরে আচরন বদলে গেছে। হঠাৎ করে এতো বেশি চিন্তিত হওয়াতে মাথা ধরে গেছে। তার মত হবু ডাক্তারের এই দশা হলে জাতীর স্বাস্থ্য অন্ধকার হয়ে যাবে। একটা ব্যাগ বাড়তি নিলো। তার মধ্যে ঠুসে ঠুসে বই পত্র নিয়ে তবেই খান্ত হলো। ভালো ডাক্তার হতে হবে, জাতির স্বাস্থ্যের চেয়ে তার টেনশন বাবাকে নিয়ে। অন্তত তার চোখে ডাক্তার হতে পারলেই জিবন স্বার্থক। তমাল ভাবছে চেহারা দেখে রোগ বুঝার জন্য ডাক্তারি পড়ার পাশাপাশি জ্যোতিষ বিদ্যাটাও রপ্ত করবে।
নুসাইব ফুটপাত ধরে হাঁটা শুরু করলো। আজ গাড়ি নিলো না,ড্রাইভারকে দিয়ে গাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সন্ধ্যার শহরটা হেঁটে দেখবে সে। যদিও তার এই হাঁটাহাঁটির পেছনে কারন অন্য।
কারনটা তৃধার সেই,গোধূলি লগ্নে ব্যাথাতুর চোখ, মৃধু হাঁসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে সেই তিনটা লাইন, অবশেষে বাঁধভাঙা নোনা জল। সবটাই যেন তার চোখে ভাসছে। সকালে তৃধার চোখাচোখি হয়েছে কয়েকবার। চোখ ফুলে আছে , হয়তো সারারাত কেঁদেছে। ভাবতে ভাবতে ব্যাস্ত নগরী দেখতে লাগলো। বড় বড় শোরুম গুলোতে নানান রঙের বাতি জ্বলছে। শীতের মৌসুম হওয়াতে প্রথম সারিতে স্থান পেয়েছে শীতের কাপড় চোপড়। হাতে গোনা কয়েকজন সেই গুলো বেছে বেছে কিনছে। ফুটপাতের পরিবেশ ভিন্ন। কাঁচে দেয়ালের অন্তরালে সজ্জিত দোকানপাটের চেয়ে এইখানে মানুষের আনাগোনা বেশি। কেউ কেউ চার্জ লাইট জ্বালিয়ে শীত বস্ত্র বিক্রি করছে তো কেউ আবার মাটির প্রদিপ জ্বালিয়ে নানান রঙের পিঠা তৈরি করছে। উপচে পড়া মানুষের ভীড় ঠেলে কেউবা আবার নিজের পছন্দের শীত বস্ত্র আর মুখোরোচক পিঠা কিনে নিচ্ছে। গাড়ির বহর ছুটছে নিজ নিজ গন্তব্যে। হাঁটতে হাঁটতে সবটা নজর বন্ধি করছে নুসাইব। তাও যেন তৃধার শব্দ কানে বাজছে। নিজের উপর হাল ছাড়লো। তার ছবি চোখে ভাসলে ভাসুক,কথা কানে বাজলে বাজুক, মনে পড়লে মনে পড়ুক এই নিয়ে আর মাথা ঘামাবে না। মস্তিষ্ককে বুঝায় কিছুক্ষণ। নিজেকে ধাতস্থ করে চোখ রাখলো আকাশে। কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশে তারা গুলো মিটমিট করে জ্বলছে, চাঁদের দেখা নেই। হয়তো মেঘের আড়ালে লুকিয়ে। তাকিয়ে বিভোর হলো নুসাইব। এই সময়টা তৃধার কেমন যাচ্ছে? তিক্ত স্মৃতি মনে করছে আবার?সে কি আড়ালে কাঁদছে? ভাবতে ভাবতে হঠাৎ কারো ধাক্কায় নুসাইব ছিটকে পড়ার জোগাড়। আচমকা ধাক্কা লাগাতে বেসামাল হলো পা দুটো। ভাগ্যিস সামনে আরেকজন ছিল,সে নুসাইব কে ধরে দাড় করালো। ধাক্কা দেওয়া ব্যাক্তি নিজেও তদবা খেয়ে গেছে। তার দ্বারা এমন কিছু হবে সে ভাবতেই পারেনি। তার পেছনে তার স্ত্রী দাঁড়িয়ে। অনবরত রাগে ফুঁসছে সে। ধাক্কাটা সে-ই তার স্বামীকে দিয়েছিলো। তিনি হয়তো টাল সামলাতে না পেরে নুসাইবের গায়ে পড়লো। নুসাইব সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে তার দিকে তাকালো। ধাক্কা দেওয়া ব্যাক্তি অপরাধী প্রায়। তার চেহারা দেখে নুসাইবের মায়া হলো। বুঝাই যাচ্ছে ইচ্ছে করে করেনি। তার স্ত্রী-ই প্রথমে তাকে ধাক্কা মে*রেছিল।
,,ভাই মাফ করবেন আমি ইচ্ছে করে করিনি। আসলে আমার স্ত্রীও বুঝতে পারেনি এমন কিছু হবে ,স্যরি। – বলেই সে তার স্ত্রীর হাত ধরে চোখ রাঙানি দিলো। হয়তো ক্ষমা চাইতে বলছে।
নুসাইব দেখলো ছেলেটা প্রায় তার বয়সী হবে। স্বামী স্ত্রী দুজনের মধ্যে যে ঝগড়া চলছে সেটা স্পষ্ট। তা দেখে নুসাইব বেশ শান্ত গলায় বললো,, ইটস্ ওকে। তবে সাবধানে চলাফেরা করবেন।-বলে দাঁড়ালো না নুসাইব। আগের মত হাঁটতে লাগলো।তবে পেছন থেকে স্বামী স্ত্রীর বাকবিতন্ডা স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে।
,,তুমি আমায় লোকটার সামনে চোখ রাঙালে কেন রজব? তোমার এতো বড় স্পর্ধা হয় কি করে?
,, সুমনা!আস্তে কথা বলো। ভুলটা তোমার ছিলো।বাড়ি চলো!!
,, তোমার মতো লোকের সাথে বাড়িতো দূরে কথা কবরস্থানেও যাবো না।
এর পর আর শোনা গেল না। শোনার ইচ্ছেও নেই নুসাইবের। সে হাঁটতে হাঁটতে অনেকটাই দূরেই চলে এলো।
__________
ঝকঝকে গিফ্ট পেপারে মোড়ানো গিফ্ট নিয়ে বসে আছে নবনী। হাত পা যতটা ঠান্ডা থাকার কথা ছিলো তার চেয়ে দ্বিগুণ ঠান্ডা হয়ে আছে। যদিও মুখশ্রী দেখে বুঝার উপায় নেই। ফর্সা মুখটা লাল, কপালে আর নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। তার অবস্থা দেখে রিমি টিপ্পনী কেটে বললো,, তোকে দেখতে অসুস্থ মনে হচ্ছে। তোর হ্যান্ডসাম ডাক্তার ভাইকে কল দিবো?
রিমির কথায় নবনী দাঁতে দাঁত পিষে বলো,, দে কল দে। তোকে আমাকে দুজনকে পাগল হওয়ার ইনজেকশন দিয়ে পাগলা গারদে যদি না পাঠায় তো আমার নাম বদলে দিস।
রিমি মুখ বেঁকিয়ে বলল,, তার জন্য হলাম পাগল। ক্ষতি কি? পরে নাহয় বিয়ে করে তোর ভাবী হয়ে যাবো।
নবনী দাঁত কেলিয়ে হেঁসে বলল,, ও প্লিজ এই কথা আমার ভাইকে বলিস। সে তোকে প্রথম না হলেও তৃতীয় কিংবা চতুর্থে অবশ্যই রাখবে।
নবনীর কথায় রিমি মুখটা ছোট করে বললো,, তাও ভালো। চতুর্থ হলেও চলবে। পরে নাহয় যাদু করে বশে আনবো।
হার মানলো নবনী। এই রমনী তার ভাইয়ের প্রেমে মত্ত প্রায় দেড় বছর ধরে। তাকে কোন কিছু বলে লাভ নেই। চতুর্থ কেন যদি বলে দশ নাম্বার বউ করবে তাতেও রিমি রাজি হয়ে যাবে।
অবশ্য তমাল এই বিষয়ে জানে না। নবীনও কখনো তমালকে এই বিষয়ে জানায়নি। নবনী বিশ্বাস করে তমাল যে দিন জানবে সেইদিন অবশ্যই মুখমণ্ডল গম্ভীর করে রাশভারী গলায় বলবে,,, যেহেতু তোর বান্ধবী, সেটা আর ভালো হওয়ার চান্স নেই। নিশ্চয়ই তোর মতই বাদর হবে। তার চেয়ে ভালো পথে পথে মাথা চুলকাতে চুলকাতে যে পাগলী গুলো হেঁটে বেড়ায় সেইগুলো একটা ধরে বিয়ে করে ফেলা।
এই উত্তর আসবে দেখেই নবীন কখনো রিমির কথা বলেনি। তমালও জানে না।
নবনী ভারী নিঃশ্বাস ফেলে কাঁপা হাতে গিফ্ট পেপার খুলতে শুরু করলো। প্রিয়র দেওয়া প্রথম উপহার।বুক দুরুদুরু,হাত কাঁপছে তার সাথে নিঃশ্বাসের তালমেল এলোমেলো হচ্ছে। আচ্ছা কি আছে এতে?
___________
সন্ধ্যা হতে না হতেই শেখ ভিলায় দুজন মহিলা প্রবেশ করলো। তারা প্রতিবেশি দেখে দারোয়ান আটকায়নি, বরং সালাম দিয়ে ভেতরে যেতে বললো।
কলিং বেলের শব্দ শুনে এগিয়ে গেলো সায়রা বানু। তৃধা ডাইনিং রুমেই ছিল। সায়রা বানুর আগে দরজা ওবদি সে পৌঁছে গেলো। দরজা খুলতেই দুজন মহিলাকে দেখতে পেলো। একজন বয়স্ক বৃদ্ধা অন্যজন প্রায় ফরিদা হকের বয়সী। দু’জনই তৃধাকে উপর থেকে নিচ ওবদি পরখ করতে লাগলো। তৃধা ভীষণ অপ্রস্তুত । এর আগে এনাদের দেখেনি সে। সায়রা বানু নিজেও অবাক হলো। এসেছে ভালো কথা বিনা বাক্যে তৃধাকে এইভাবে দেখছে কেন?
ফরিদা হক কিচেন থেকে বেরিয়ে দুজনকে দেখে হড়বড়িয়ে সামনে এলো। তিনি খুব কৌশলে তৃধাকে সরিয়ে তাদের সাথে গল্প জুড়ে দেয়। তৃধা দুজন থেকে ছাড়া পেয়ে সরে যেতে নেয়। এমন সময় বৃদ্ধা মহিলা বলে উঠলো, বড় নাতবউ নাকি?
তৃধার পা জোড়া থেমে গেলো। ফরিদা হক সাথে সাথে বলে উঠলো,, উঁহু। এমন মেয়ে পেতে ভাগ্য লাগে।সেই ভাগ্য আমার ছেলের নেই।
চলবে,,,
নোট: উপন্যাসের প্রতিটা পাতা রোমাঞ্চকর হবে এমনটা নয়। চরিত্র সম্পর্কে বুঝার জন্য কিছু পাতা ভীষণ রকমের সাদামাটা হয়।