আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি পর্ব-২৭+২৮

0
160

#আমি_তোমার_দ্বিধায়_বাঁচি
#Part_27
#ইয়াসমিন_খন্দকার

ঈশিতা সকাল সকাল বেরিয়ে পড়েছে অজানার উদ্দ্যেশ্যে। এখন সে অনুভব করতে পারছে যে এই পৃথিবীতে সে সত্যিই ভীষণ একা। হঠাৎ ঈশিতার মনে পড়ে গেলো কিছুদিন আগে তার কাছে চট্টগ্রামের একটা প্রাইভেট মেডিকেলে জয়েন হবার অফার এসেছিল। ঈশিতা চেয়েছিল ঢাকা মেডিকেলে ডাক্তার হিসেবে যোগদান দিতে তাই সে অফারটার আর জবাব দেয়নি কিন্তু নাও করেনি। বর্তমানে এই ঢাকা শহরটাই তার কাছে সবথেকে বিষাক্ত লাগছে। তাই ঈশিতা চায় যেকোন মূল্যে এই শহর থেকে দূরে চলে যেতে। তাই ঈশিতা নিজের ফোন বের করলো। ইমেইলের মাধ্যমে আবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলো সেই হাসপাতালে। এখন একটা কাজের ভীষণ দরকার তার। নিজের জন্য না হলেও নিজের অনাগত সন্তানের কথা বিবেচনায় নিয়ে তাকে এমনটা করতেই হবে।

ঈশিতা জয়েনিং হবার মেইল পাঠিয়ে দিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। এখন শুধু ফিরতি মেইলের দরকার। ঈশিতার যা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সেসব জাহানারা বেগম তার ব্যাগে পুড়ে দিয়ে পাঠিয়েছেন। এখন সেসব সম্বল নিয়েই ঈশিতা হেটে চলেছে অজানার পথে। ফিরতি মেইল আসলেই সে রওনা দেবে তার নতুন গন্তব্যের পানে।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
রাসেল এবং আয়ুশ ঈশিতাকে খুঁজতে ব্যর্থ হয়েছে। কোথাও তারা ঈশিতার সন্ধান পায়নি। আয়ুশের এবার ভীষণ চিন্তা হলো। ঈশিতার আবার বড় কোন বিপদ হলো নাতো? চিন্তায় তার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। আয়ুশ রাসেলকে বললো,”আচ্ছা, ঐ তামিম আবার ঈশিতার কোন ক্ষতি করে নি তো?”

“তোর এই কথাটাকে আমি পুরোপুরি উড়িয়ে দিতে পারছি না। চল তাহলে আমরা তামিমের কাছে যাই। এখন ও এসব কিছুর জবাব দিতে পারবে।”

রাসেল ও আয়ুশ একই সঙ্গে চলল তামিমের বাড়ির দিকে।

তামিম সকালে উঠে নাস্তা করতে বসে পড়েছিল। এমন সময় কলিং বেল বেজে ওঠায় ভ্রু কুঁচকে ফেললো।

“এই সকাল সকাল আবার কে বিরক্ত করতে চলে এলো। শান্তিতে একটু খেতেও পারবো না।”

একথা বলেই সামনে এগিয়ে গিয়ে দরজাটা খুলল। দরজা খুলেই আয়ুশকে দেখে হতবাক হয়ে গেলো। তুতলিয়ে বলে উঠল,”তু..তুমি..”

আয়ুশ তামিমের শার্টের কলার চেপে ধরল। তামিমের নাক বরাবর কয়েকটা ঘু*ষি দিয়ে বলল,”ঈশিতা কোথায়?”

“ঈশিতা কোথায় সেটা আমি কি করে জানবো?”

আয়ুশ ঈশিতাকে আরো কয়েকবার প্রহর করলো। আজ সে একদম উন্মাদে পরিণত হয়েছে। রাসেল এই উন্মাদ রূপ দেখে বলে উঠলো,”আয়ুশ আস্তে…মরে যাবে তো।”

“মরুক। ওর মতো জঘন্য মানুষ মৃত্যুই ডিজার্ভ করে। চুপ করে আছিস কেন? বল,আমার ঈশিতা কোথায়?”

“আমায় বিশ্বাস করো, আয়ুশ। আমি জানি না ঈশিতা কোথায়। আমি ঈশিতাকে আমার সাথে আসতে বলেছিলাম কিন্তু ও আসে নি। একা একা কোথাও চলে গেছে।”

আয়ুশ মারধর করা থামালো না। রাসেল আয়ুশকে থামিয়ে বলল,”ওকে ছেড়ে দে, আয়ুশ। আমার ওর মুখ দেখে মনে হচ্ছে না ও মিথ্যা বলছে।”

“ছেড়ে দেব? কখনো না। ওর জন্য আজ আমার ঈশিতা আমার থেকে দূরে সরে গেছে। ওকে আমি কিছুতেই ছাড়ব না।”

বলে আবার মা*রতে উদ্যত হলো। রাসেল কোনরকমে আয়ুশকে আটকে রাখলো। ইতিমধ্যেই তামিমের অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। গড়িয়ে গড়িয়ে রক্ত পড়ছে তার শরীর থেকে। রাসেল তামিমের উদ্দ্যেশে বলে,”আমি কিন্তু বেশিক্ষণ এভাবে আয়ুশকে সামলে রাখতে পারবো না। তুমি যদি নিজের ভালো চাও তাহলে আয়ুশের কথা মতো কাজ করো।”

“বলুন আমায় কি করতে হবে। আমি তাই করবো।”–ভয়ার্ত সুরে বলে তামিম।

আয়ুশ বলে,”তুই সবার সামনে আমার ঈশিতার সম্মান নষ্ট করেছিস…এবার তোকে ওর হারানো সম্মান আবার ফিরিয়ে দিতে হবে।”

“সেটা কিভাবে?”

“আজ ঐশীর বৌভাত। বিয়েতে উপস্থিত সবাই বৌভাতেও আমন্ত্রিত। এই মানুষগুলোর সামনেই তো তুই ঈশিতার মান সম্মান নষ্ট করেছিলি এবার তোকে ওদের সামনেই সব সত্য বলতে হবে। ঈশিতা যে চরিত্রহীন নয় সেটা তোকে প্রমাণ করে দিতে হবে..নাহলে তোকে আমি..”

তামিম বলে ওঠে,”তুমি যা বলবে আমি তাই করবো। কিন্তু দয়া করে আমাকে আর মে*রো না।”

রাসেল আয়ুশের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”ও যদি সবটা স্বীকার করে নেয় তাহলে তোকে আর ওর গায়ে হাত তুলতে হবে না। আমি ওকে মানহানীর মামলায় জেলে ঢোকাবো।”

তামিম কাতর সুরে বলে,”প্লিজ এমন করবেন না। আমার ক্যারিয়ার একদম শেষ হয়ে যাবে।”

“এসব করার আগে তোর এটা ভাবা উচিত ছিল।”

বলেই আয়ুশ তামিমকে টানতে টানতে নিয়ে যেতে থাকে। রাসেলও তাদের পেছন পেছন যায়।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আজ ঐশীর বৌভাত। নাহিদ ও ঐশীকে পাশাপাশি বসানো হয়েছে দুটি আসনে। অনেকে এসে নবদম্পতিকে দোয়া করে যাচ্ছে। তালুকদার পরিবারের লোকেরাও এখানে উপস্থিত। আলতাফ তালুকদার চুপ করে একপাশে বসে আছেন। তিনি লক্ষ্য করছেন অনেকেই বাকা চোখে তার পানে তাকাচ্ছে। গতকাল যা কেচ্ছা হলো ভাবতেই তার মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছা করছে। ঐশীকে নিজের মেয়ের মতো দেখেন তিনি, তাই না এসেও পারেন নি। এখন বুঝতে পারছেন এখানে আসাটাই তার মস্ত বড় ভুল হয়েছে। জাহানারা বেগমও একপাশে মুখ কালো করে বসে আছেন। ভাই-ভাবির কথা ফেলতে পারে নি বিধায় তাকে এখানে আসতে হয়েছে। কিন্তু তিনিও সবার বাকা নজর দেখে ব্যথিত।

ঐশীর কানেও ঈশিতার ব্যাপারটা এসেছে। ঐশী কথাটা শুনেছে থেকে অস্থির হয়ে আছে। ঐশীর কিছুতেই বিশ্বাস হতে চাচ্ছিল না ঈশিতা এমন কিছু করতে পারে। এই ক’দিনে সে ঈশিতাকে যতটা চিনেছে তাতে সে এমন কিছু করার মেয়ে নয়। বরং এমন হতে পারে তামিমই তাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। তবে কোন প্রমাণ না থাকায় সে কিছু বলতেও পারছে না।

হঠাৎ করেই নাহিদদের বাড়িতে আগমন ঘটে আয়ুশের। সে একা আসে না, তামিমকে সাথে নিয়ে আসে। আশেপাশের সবার দৃষ্টি এদিকেই। আলতাফ তালুকদার উঠে এসে বলেন,”কি হয়েছে আয়ুশ? তুমি এই ছেলেটাকে এখানে নিয়ে এসেছ কেন?”

আয়ুশ তামিমের কলার শক্ত করে ধরে বলে,”তুই কি এবার নিজের সব অপরাধ স্বীকার করবি নাকি আমি আবার টোটকার ব্যবস্থা করবো..”

বলে শার্টের হাতা ফোল্ট করতে যাচ্ছিল। এমন সময় তামিম বলে ওঠে,”আমি বলছি..সব বলছি।”

তামিম সবার সামনে বলতে শুরু করে,”গতকাল আপনারা যা দেখেছিলেন সবটাই আমার সাজানো একটা নাটক। আমি গতকাল ঈশিতাকে ফাসিয়েছিলাম। ওর কোন দোষ ছিল না।”

বলেই তামিম গতকালকের সব ঘটনা খুলে বলে। শুধু তাই নয়, তার সাথে তার মামার কল রেকর্ডিও শোনায় যেখানে সে তারা ঈশিতাকে ফাঁসানোর চক্রান্ত করেছে। এসব দেখে শুনে সেখানে উপস্থিত সবাই স্তম্ভিত।

জাহানারা বেগম আঁচলে মুখ ঢেকে কেঁদে বলেন,”আবারো আমি মেয়েটাকে ভুল বুঝে ওর উপর চরম অন্যায় করে ফেললাম। নিজের হাতে মেয়েটাকে বাড়ি থেকে বের করে দিলাম।”

আয়ুশ সকলের উদ্দ্যেশ্যে বলল,”আজ আপনাদের সো কলড সমাজের জন্য আমার স্ত্রীকে আমি হারিয়ে ফেলেছি। এতসব সম্মান,আভিজাত্য এসবের দিকে খেয়াল রাখতে গিয়ে ঈশিতা আজ আমার থেকে আলাদা হয়ে গেছে। আমি পরোয়া করি না আর কোন সমাজকে। আপনারা কি পারবেন আমার স্ত্রীকে আবার আমার কাছে ফিরিয়ে দিতে?!”

আয়ুশ আলতাফ তালুকদারের সামনে গিয়ে বলে,”তোমার সম্মানের কথা ভেবে গতকাল আমি কোন স্টেপ নিতে পারিনি। আমার স্ত্রীকে নির্দোষ প্রমাণ করার অপেক্ষা করতে হয়েছে।”

জাহানারা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলেন,”আর তুমি..তুমি তো ঈশিতাকে মেয়ের মতো দেখতে। তাহলে কিভাবে পারলে ওকে বের করে দিতে?”

আয়ুশ বলে ওঠে,”আমি এখনই বেরিয়ে যাচ্ছি..সব ছেড়ে চলে যাচ্ছি অজানার উদ্দ্যেশ্যে…যতদিন না আমার ঈশিতাকে খুঁজে পাব ততদিন আর ফিরবো না তালুকদার ভিলায়। এটা আমি প্রতিজ্ঞা করলাম।”

বলেই আয়ুশ বেড়িয়ে যায়। রাসেল তামিমকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। আলতাফ তালুকদার এবং জাহানারা বেগম ব্যথিত হৃদয়ে চেয়ে থাকেন। নিজেদের দোষেই সব হারিয়ে ফেললেন তারা!

to be continue…..

#আমি_তোমার_দ্বিধায়_বাঁচি
#Part_28
#ইয়াসমিন_খন্দকার

ঈশিতা চট্টগ্রামের একটি ছোট এপার্টমেন্টে কোনরকমে মানিয়ে নিয়েছে। যদিওবা এখানে মানিয়ে নিতে তার অনেক কষ্ট হচ্ছে। তবে দেখতে দেখতে ৯ মাস এই এপার্টমেন্টেই কাটালো সে। বর্তমানে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি মেডিকেলে সে ডাক্তার হিসেবে আছে। বর্তমানে তার প্রেগ্ন্যাসির শেষ সময় চলছে। তাই অনেক সচেতন থাকতে হচ্ছে। শেষ সময়ে সবকিছু সামলানোর জন্য একটা কাজের মেয়েও রেখেছে সে। কুলসুম নামের মেয়েটা তার হাতে হাতে সমস্ত কাজ করে দিচ্ছে। তাই অনেকটা স্বস্তিতে থাকতে পারছে। নাহলে তো একা হাতে সব সামলানো এক প্রকার অসম্ভব হয়ে যেত। ঈশিতা এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেই মানিয়ে নিয়েছে। কারণ এরই নাম তো জীবন। জীবন কখনো কারো জন্য থেমে থাকে না। এগিয়ে চলে নিজস্ব গতিতে। যেই গতি অপ্রতিরোধ্য এবং দূর্নিবার।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আয়ুশের বিগত নয় মাস গেছে অনেক দুঃখ-কষ্টে জর্জরিত ভাবে। ঈশিতা না ফেরা পর্যন্ত বাড়িতে না ফেরার প্রতিজ্ঞা সে বজায় রেখেছে। বাড়ি থেকে দূরে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকছে। জাহানারা বেগম এসে রোজ তার সাথে দেখা করে এবং দুঃখবিলাস করে যায়। আজও তিনি এসে আয়ুশের সাথে কথা বলছেন। তিনি আয়ুশকে বাড়ি ফিরে যেতে জোর করছেন কিন্তু আয়ুশ বরাবরের মতো তার প্রস্তাব নাকচ করে দিচ্ছে। জাহানারা বেগম নিজেকে দোষ দিয়ে বলছেন,”আমার জন্য ঈশিতা চলে গেছে। আমারই দোষ সব।”

আয়ুশ হতাশার শ্বাস ফেলে বলে,”এভাবে নিজেকে দোষ দিয়ে কোন লাভ নেই মা। যা হওয়ার ছিল তাই হয়েছে। ভাগ্যে যদি থাকে তাহলে ঈশিতা আবার ফিরবে আমার জীবনে। আর আমিও ওকে সসম্মানে ফিরিয়ে নিয়ে যাব তালুকদার ভিলায়।”

এরইমধ্যে হঠাৎ আয়ুশের ফোন বেজে ওঠে। আয়ুশ ফোনটা রিসিভ করতেই তার বন্ধু রাসেল বলে ওঠে,”তোর জন্য একটা সুসংবাদ আছে আয়ুশ। আমি ঈশিতা ভাবির খোঁজ পেয়েছি। সে বর্তমানে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি মেডিকেলে ডাক্তার হিসেবে কর্মরত আছে। আমি তোকে তার ঠিকানাটা পাঠিয়ে দিচ্ছি।”

আয়ুশ ভীষণ খুশি হয়ে যায়। এতদিন ধরে সে যেটার অপেক্ষায় ছিল অবশেষে আজ সেই দিনটি এসে গেলো। ফোন কেটে দিয়ে জাহানারা বেগমকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আয়ুশ। হাস্যোজ্জ্বল মুখে বলে,”আমি তোমার বৌমার খোঁজ পেয়েছি মা। আমার জন্য দোয়া করো, যেন আমি তোমার ঘরের বউকে আমার ঘরে ফিরিয়ে আনতে পারি।”

জাহানারা বেগমও খুশি হয়ে বলেন,”যা বাবা, ঈশিতাকে জলদি ফিরিয়ে আন। আমাদের সবার তরফ থেকে ওর কাছে মাফ চাস।”

আয়ুশ চট্টগ্রামের উদ্দেশ্য বেরিয়ে যায়।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ঐশীর বর্তমান দিনগুলো অনেক ভালো যাচ্ছে। নাহিদের সাথে তার বিয়ের সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল না সেটা এখন একদম শতভাগ নিশ্চিত হয়ে বলতে পারে ঐশী। নাহিদ তাকে সবসময় সুখী রাখার চেষ্টা করে। নিজেকে ভীষণ লাকি মনে হয় ঐশীর। এত ভালো স্বামী পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের বিষয়। এজন্যই হয়তো বলা হয়, আল্লাহ উত্তম পরিকল্পনাকারী। আয়ুশের সাথে বিয়ে হলে হয়তো ঐশী এত সুখী হতো না। ঐশী-নাহিদের এই সুখ আজ আরো বেড়ে গেছে তাদের জীবনে নতুন অতিথি আগমনের কথা শুনে। ঐশী মা হতে চলেছে। নাহিদ এই খুশিতে পুরো এলাকায় মিষ্টি বিলিয়েছে। ঐশীকে নিয়ে এখন সে আহ্লাদে আটখানা। এই নয় মাসে তাদের দাম্পত্য জীবন ছিল সুখে-শান্তিতে পরিপূর্ণ। কখনো কোন দুঃখ তাদের স্পর্শ করে নি। আজও নাহিদ ঐশীকে গভীর বাহুডোরে আবদ্ধ করে রাত্রীযাপন করছে। নাহিদ ঐশীর কপালে ভালোবাসার পরশ একে বলে,”তুমি জানো না ঐশী, তুমি আজ আমাকে কত বড় খুশির সংবাদ দিয়েছ। আমার খুশি আজ আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। আমি বাবা হতে চলেছি, আমাদের সন্তান আসতে চলেছে এই পৃথিবীতে।”

“আমিও আজ ভীষণ খুশি। কিন্তু মন থেকে খটকাও যে পুরোদমে দূর হচ্ছে না!”

“খটকা কেন?”

“আমার সাথে তো কখনো ভালো হয়নি। এখন কি আবার ভালো কিছু হবে?”

“এটা কোন কথা নয় ঐশী। এসব নেতিবাচক চিন্তা করো না। দেখবে আল্লাহ আমাদের জন্য ভালো কিছুই লিখে রেখেছেন।”

“তাই যেন হয়। আমি বেশি কিছু চাই না, শুধু এটাই চাই, যেন আমাদের সন্তান সুস্থভাবে এই পৃথিবীতে আসে।”

“তুমি যা চাও তাই হবে দেখো।”

বলেই নাহিদ ঐশীকে নিজের বাহুডোরে আরো শক্ত করে আগলে নেয়। যেন কখনো ছেড়ে যেতে দিবে না। তাদের এই সম্পর্কের বন্ধন যেন ভীষণ অটুট।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আজ হাসপাতালে প্রভার শেষ কর্মদিন। আজকের পর থেকে সে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে চলে যাচ্ছে। তাই শেষদিন অনেক কলিগই তাকে শুভেচ্ছা বার্তা জানাচ্ছে। ঈশিতার এক মহিলা কলিগ তার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আমার তোমার জন্য ভীষণ চিন্তা হয় জানো। আমি যৌথ পরিবারের বউ। আমার শ্বাশুড়ি, ননদরা আমার ছেলেকে দেখে রাখে তবুও আমার সবটা ম্যানেজ করতে কতটা কষ্ট হয়৷ আর তুমি একজন সিঙ্গেল মাদার হয়ে কি করে এত দিক সামলাবে?”

ঈশিতা মলিন হেসে বলে,”কি করবো বলো? আমাকে তো বাস্তবতার সাথে মানিয়ে নিতে হবে। আমার এই পৃথিবীতে আপন বলতে কেউ নেই, যাদের আপন ভেবেছিলাম তারাও আমায় পর করে দিয়েছে। তাই এখন নিজের ব্যবস্থা নিজেকেই করতে হবে। সাথে নিজের সন্তানেরও।”

“কোন সাহায্য লাগলে আমাকে বলো। আমি নিজের সাধ্যমতো সাহায্য করার চেষ্টা করব।”

“আচ্ছা।”

কথা বলা শেষ করে ঈশিতা নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আজ তার উপর দিয়ে অনেক ধকল যাচ্ছে। এই সময়ে এত ধকল সহ্য করা টাফ। তবুও ঈশিতা যতটা সম্ভব ট্যাকেল দেবার চেষ্টা করছে। সব কাজ সেরে ঈশিতা এবার এপার্টমেন্টে ফেরার জন্য প্রস্তুতি হয়। কিন্তু হঠাৎ করেই পেটে ভীষণ ব্যাথা অনুভব করে। ঈশিতা বুঝতে পারছিল না এর কারণ। তার তো ডেলিভারি ডেট এখনো অনেক দেরি। তাহলে এত তাড়াতাড়ি এই ব্যাথার মানে কি? ঈশিতা বেশিক্ষণ নিজেকে সামলে রাখতে পারে না। ব্যাথার চোটে আর্তনাদ করে ওঠে। সাথে সাথেই আরো কয়েকজন ডাক্তার ছুটে এসে বলে,”কোন সমস্যা?”

“আমার পেটে ভীষণ ব্যাথা হচ্ছে। আমি বুঝতে পারছি না এর কারণ কি। আমার ডেলিভারি ডেইট তো এখনো এক মাস দেরি আছে।”

কয়েকজন তাকে একজন গাইনি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। তিনি চেকআপ করে বলেন,”আপনার প্রেগ্ন্যাসিতে কিছু কমপ্লিকেশন দেখা দিয়েছে। তাই আপনাকে আপাতত হাসপাতালে এডমিট করতে হবে। যে কোন সময় বাচ্চার ডেলিভারি করতে হতে পারে।”

ঈশিতা চিন্তিত হয়ে বলে,”বেশি সিরিয়াস কিছু নয়তো?”

“এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না, তবে একটু জটিলতা হতে পারে।”

ঈশিতা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে বলে,”ইয়া মাবুদ, তুমি আমার সন্তানকে ঠিক রেখো আর ওর স্বার্থে আমায় ঠিক রেখো। আমি ছাড়া যে ওকে দেখে রাখার আর কেউ নেই।”

~~~~~~
আয়ুশ দ্রুতবেগে চট্টগ্রামের দিকে রওনা দিচ্ছিল। কিন্তু ভারী বৃষ্টি এবং ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে মাঝরাস্তায় তাকে আটকে পড়তে হয়। আয়ুশ একটি হোস্টেলে অবস্থান করে এক রাতের জন্য। কিন্তু তার ভীষণ চিন্তা হচ্ছিল। আয়ুশ বলে,”ঈশিতার কাছে না পৌঁছানো পর্যন্ত আমি শান্তি পাবো না। আল্লাহ, তুমি দ্রুত আমাকে ওর কাছে পৌঁছে দিও। আমার যে ওর মান ভাঙাতে হবে।”

বলেই আকাশের পানে চায় আয়ুশ। আমাবস্যার কারণে আকাশ অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। কি বার্তা দিচ্ছে এই অন্ধকার আকাশ?!

to be continue…..