#আমি_তোমার_দ্বিধায়_বাঁচি
#Part_6(বিয়ে)
#ইয়াসমিন_খন্দকার
বউ পালিয়েছে এই কথাটা ঝড়ের গতিতে ছড়িয়ে পড়লো সবার মাঝে। মানুষ কানাঘুষা শুরু করে দিলো। সবাই নানারকম কথাবার্তা বলছে। আয়ুশ শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইসমাইল হোসেন কাঁদো কাঁদো মুখে সবার সম্মুখে এসে বলে,”আমি ভাবতেও পারিনি এমন কিছু হবে।”
আলতাফ তালুকদার রেগে গেছেন ভীষণ। তিনি ইসমাইল হোসেনকে রাগী সুরে বলেন,”আপনার জন্য আমার সম্মান ডুবে যেতে বসেছে আর আপনি এখন নাটক শুরু করেছেন?!”
জাহানারা বেগমও আজ রুষ্ট হলেন ঈশিতার উপর। নিজের ছেলের পছন্দের কথা ভেবে তিনি রাজি হয়েছিলাম। তাছাড়া মেয়েটাকেও তার অনেক ভালো লেগেছিল। কিন্তু সেই মেয়েটা যে এমন কিছু করবে সেটা তার কাছে কল্পনাতীত। তিনিও এখন আর কিছু বলতে পারছেন না৷
ঐশী চুপ করে এসে একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। এখানে বড়দের মাঝে সে আর কিছু বলতে চায়না। এমন সময় গুলশেনারা বেগমের নজর যায় ঐশীর দিকে। ঐশীর দিকে তাকিয়ে তিনি কিছু একটা ভাবেন। পরবর্তীতে সবার সম্মুখে এসে বলেন,”ঐ মেয়েটা যখন পালিয়েই গেছে তখন আর এসব বলে কি লাভ। এখানে থাকা মানে নিজের সম্মান নষ্ট করা। চল, এখান থেকে। আমরা বাড়িতে গিয়ে বসে কথা বলি।”
আয়ুশ বলে,”আমি যখন এখানে বিয়ে করতে এসেছি তখন বিয়ে করে বউ না নিয়ে যাব না।”
জাহানারা বেগম বলেন,”তোর বউ তো পালিয়ে গেছে এখন তুই কাকে বিয়ে করবি!”
আয়ুশ বলে,”আমি যাকে বিয়ে করতে এসেছি তাকেই বিয়ে করবো অন্য কাউকে নয়।”
আয়ুশের এমন কথা শুনে ঐশীর জমা আশা নিভে যায়। সে বুঝতে পারে আয়ুশের মনে ঈশিতার জন্য আবেগ কতোটা জোড়ালো। যেই কারণে এত কিছুর পরেও সে ঈশিতাকে বিয়ে করতে চাইছে। অথচ আয়ুশের মনে তার জন্য কোন যায়গা নেই। ঐশী মেনে নেয় বাস্তবতাটাকে। একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তাকায় আকাশের দিকে। আকাশে ভেসে যাওয়া মেঘ দেখে বলে,”আমার ভাগ্য আমায় কোথায় ভেসে নিয়ে যাবে? আমি জানি না। তবে আমি ভেসে যেতে প্রস্তুত সম্পূর্ণ। ভাগ্যের ভেলায় চড়ে উঠেছি আমি।”
~~~~~
ঈশিতা রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে আছে। একটু পরেই রেলগাড়ি চলে আসবে। ঈশিতার ভীষণ ভালো লাগছে ওখান থেকে পালিয়ে আসতে পেরে। সে জানে না এখন কোথায় যাবে, কি তার ভবিষ্যৎ হবে কিন্তু সে চেষ্টা করবে নিজের জন্য ভালো কিছু করার। অন্তত এই বিয়েটা করে নিজের বিবেকের কাছে ছোট হয়ে যেতে হবে না৷ ঈশিতা ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিল। এই ট্রেনে করে সে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে চলে যাবে। চট্টগ্রামে ঈশিতার এক প্রিয় বান্ধবী রয়েছে তার সাথে দেখা করে কিছু একটা হবে এই আশায়। কিন্তু ট্রেনও আজ লেইট করছে। বিরক্তিতে কপাল কুচকে যাচ্ছে ঈশিতার। এরমধ্যে সে ব্যাগ চেক করে বুকিং করা ট্রেনের টিকিকটা খোঁজে কিন্তু পায় না। ঈশিতার মাথায় হাত! এখন কি করবে সে?! এখন তো এমনি ঈদের জন্য ভীড় বেশি, আগে থেকে বুকিং করা না থাকলে মোটেই সিট মিলবে না। ঈশিতা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। বোধহয় তাড়াহুড়ো টিকিকটা কোথাও পড়ে গেছে। ঈশিতা আর কোন উপায়ন্তর পেল না। সেখানেই বসে রইল চুপটি করে। এমন সময় ট্রেন এলো। আবার তার চোখের সামনে চলেও গেল কিন্তু ঈশিতাকে বসেই থাকতে হলো সেখানে। আর কোন উপায় না পেয়ে ঈশিতা ভাবল আজকের রাতটা স্টেশনেই কাঁ*টিয়ে দেবার কথা। তারপর কাল নাহয় কোন একটা ব্যবস্থা করা যাবে। আগে বিয়েটা ভেঙে যাক। ঈশিতা মাথা নিচু করে স্টেশনেই বসে ছিল এমন সময় কেউ তার সামনে রেলের টিকিট দেখিয়ে বলে,”এটা খুঁজছ বুঝি?”
ঈশিতা চোখ তুলে তাকাতেই অবাক হয়। আয়ুশ তার সম্মুখে দাঁড়িয়ে! ঈশিতার মুখ দিয়ে আর কোন কথা বের হয়না। আয়ুশ সামান্য হেসে বলে,”তোমার আমার বিয়ে হওয়াটা বুঝি আল্লাহর ইচ্ছা ছিল। তাই দেখো তুমি চেয়েও পালাতে পারলে না। টিকিটটা পড়ে রইলো।”
ঈশিতা চোখ রাঙানি দিয়ে বলে,”আমি কিছুতেই আপনাকে বিয়ে করবো না।”
“আমিও ঠিক করে নিয়েছি, বিয়ে করলে তোমাকেই করব।”
“আমি রাজি না থাকলে এই বিয়ে হবে না।”
“তোমাকে রাজি করিয়েই বিয়ে করব।”
“কোন ধরনের কোন সিনক্রিয়েট করলে কিন্তু আমি চিৎকার করে লোক জড়ো করবো।”
“কাজি সাহেব, আপনি আসুন জলদি।”
কাজিকে দেখে ঈশিতা রেগে গেল। বলল,”উনি এখানে কি করছেন?”
“কাজি সাহেবের যা কাজ তাই করতে এসেছেন। আজ নাহয় এই কমলাপুর রেল স্টেশনেই আমাদের ইউনিক বিয়েটা হলো।”
“অসম্ভব। আমি আপনাকে কিছুতেই বিয়ে করবো না।”
আয়ুশ এবার ঈশিতাকে তার মায়ের লেখা একটা চিঠি দেখায়। যেটা ঈশিতার থেকে তার বাবা লুকিয়ে রেখেছিল। ঈশিতা চিঠিটা দেখেই বুঝতে পারে এটা তার মায়ের লেখা। যদিও তার মা তেমন শিক্ষিত ছিল না কিন্তু অক্ষরজ্ঞান ছিল। তিনি অল্পস্বল্প লিখতে পারতেন। চিঠিতে ঈশিতার মা হুসনে আরা লিখে গেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন ঈশিতা কোন অন্যায় করে নি। কিন্তু সবাই যখন তাকে বলেছিল ঈশিতা পরীক্ষায় নকল করতে গেছে এটা তিনি সহ্য করতে পারেন নি। ঈশিতাকে নিয়ে তার ছিল অনেক স্বপ্ন। এই স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার দুঃখ ছিল তার কাছে অনেক বড়। কিন্তু তবুও তিনি চান ঈশিতা ঘুরে দাঁড়াক। সফল হোক জীবনে।
নিজের মায়ের চিঠি পড়ে অঝোরে কান্না করতে থাকে ঈশিতা। আয়ুশ বলে,”আমি বুঝতে পারছি এখন তোমার মনের অবস্থাটা। কিন্তু তোমার মায়ের ইচ্ছা পূরণে তোমাকে কেবল মাত্র আমি সাহায্য করতে পারি। তাই আমি চাই, তুমি এই বিয়েটা করে নাও।”
ঈশিতা আবেগশূন্য চোখে তাকায় আয়ুশের দিকে। লোকটার প্রতি তার এক আকাশ পরিমাণ ঘৃণা৷ কিন্তু এই মুহুর্তে এনার থেকে সাহায্য নেওয়া ছাড়া তার আর কোন উপায় নেই। কেননা, এখান থেকে বাড়িতে ফিরলে তার বাবা নিশ্চয়ই তাকে অন্য কারো সাথে বিয়ে দিয়ে দেবে। আর তাহলে ঈশিতা তার মায়ের স্বপ্ন আর পূরণ করতে পারবে না। আর বান্ধবীর কাছে যাওয়ারও উপায় নেই। কারণ তার জমানো সব টাকা দিয়ে টিকেট কেটেছিল কিন্তু ট্রেনটাই মিস হয়ে গেল। তাই ঈশিতা আস্তে করে বলে,”আমি রাজি। কাজিকে বিয়ে পড়ানো শুরু করতে বলুন।”
আয়ুশ মৃদু হেসে বলে,”গুড কার্ল।”
কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করেন। অবশেষে রেল স্টেশনেই আয়ুশ-ঈশিতার বিয়েটা হয়ে যায়!
~~~~~~~~
ঐশী চুপ করে একপাশে বসেছিল। গুলশেনারা বেগম ঐশীর কাছে এসে বলে,”তুই চিন্তা করিস না। ঐ মেয়ে ফিরে এলেও আমি এই বিয়েটা হতে দেব না। এমজ পালাটু মেয়েকে বাড়ির বউ করা যায়না। তোর সাথেই আয়ুশের বিয়ে দেব আমি।”
ঐশী মলিন সুরে বলে,”আয়ুশ ভাইয়া যে আমায় পছন্দ করে না। তার মনে যে আমার প্রতি কোন অনুভূতি নেই!”
“বিয়ের পর এমনি হয়ে যাবে!”
“না,দাদি এমন হয়না। যদি ঈশিতা ফিরে আসে তাহলে তুমি বিয়েতে কোন বাগড়া দেবে না। কথা দাও আমায়।”
“এটা তুই কি বলছিস ঐশী? আয়ুশকে অন্য কারো হয়ে যেতে তুই দেখতে পারবি?”
“যার মনে আমার কোন স্থান নেই, তার জীবনে স্থান পেয়ে কষ্ট ছাড়া অন্য কিছু কি পাবো?”
“কিন্তু..”
“কোন কিন্তু নয় দাদী। তুমি ঈশিতার প্রতি আয়ুশ ভাইয়ার কেয়ার দেখো নি? ও পালিয়ে গেছে জেনেও কিভাবে ওকে খুঁজতে ছুটল! এরপর আর কি বলার আছে আমাদের?”
গুলশেনারা বেগম চুপ হয়ে গেলেন। কার জন্য লড়বেন তিনি? ঐশী তো নিজের ইচ্ছাতেই সরে যেতে চাইছে।
এদিকে জাহানারা বেগম দূর থেকে দাদি-নাতনিকে পর্যবেক্ষণ করে বলেন,”নিশ্চয়ই দুটোতে মিলে কোন ফন্দি আঁটছে। ইয়া আল্লাহ, তুমি দেখো আয়ুশ যেন ঈশিতাকে খুঁজে ফিরিয়ে আনে। আমি ঈশিতাকে ছেলের বউ হিসেবে মেনে নিতে পারবো তাও এই পঙ্গু ঐশীকে মেনে নিতে পারব না। আমার দিকে মুখ তুলে তাকিও আল্লাহ।”
to be continue….