#আয়ুর_প্রহর
#পর্ব_০১
#আয়িশা_নুর_তৃষ্ণা
নিজের ভাইয়ের জন্য পাত্রী দেখতে গিয়ে পাত্রীর ভাইয়ের বধু হয়ে গেল প্রহর।কি থেকে কি হয়ে গেল,এই “হঠাৎ বিয়ে” কিভাবে হয়ে গেল প্রহরের ছোট্ট মাথায় এইসব ঢুকছেই না। ”হঠাৎ বিয়ের” ২ ঘন্টা হয়ে গিয়েছে,এখনো প্রহরের ধোঁয়াশা যেন কাটছেই না।তার বিয়ে হয়ে গিয়েছে এই ভেবেই আঁতকে উঠলো প্রহর! আচ্ছা,এইসব হওয়ার পর সবাই কি ভেবেছে তাকে?সে তো কোনো অন্যায় করেনি। কিন্তু মা মনে হয় ওর উপর খুব রেগে আছে।মা হয়তো তাকে একা পেলে খুব মা’রবে।
ইশ!কত কষ্ট করে মাকে রাজি করিয়ে পাত্রী দেখতে এসেছিল প্রহর!কতো ইচ্ছে ছিল ভাইয়ার বিয়েতে অনেক আনন্দ করবে।অনেক না করতে পারলেও যতটুকু আনন্দ করতে পারবে ততটুকুই। কিন্তু তার আগে শুধু পাত্রী দেখতে এসেই এতো কিছু ঘটে গেল।সত্যিই সে অপয়া।এইবার প্রহরের একটুখানি আনন্দ করার কথা থাকলেও এখন যে সময় অন্য কথা বলছে।প্রহরের জীবন যেন এক নিমিষেই পাল্টে গেল!
বিয়ে হওয়ার পর থেকে একরুমেই বসে আছে প্রহর।এতোক্ষণ ধরেই সং’য়ের মতো বসে থেকে প্রহরের গলা শুকিয়ে গেল।ওড়না দেওয়া নকল ঘোমটার আড়াল থেকে বাহিরে একটু উঁকিঝুঁকি দিল।না!রুমে কেউ নেই। কিন্তু প্রহর ঘাড় ঘুরাতেই দেখতে পেল তার পাশে একটা যুবক তার মতোই সং সেজে বসে আছে। একটু বুদ্ধি তে নিজেই বুঝতে পারলো ,এটাই প্রহরের বর!তারমানে প্রহরের সাথে সাথে এই লোকটাও এতোক্ষণ এই রুমে বসে আছে ভাবতেই প্রহর আবার কেঁপে উঠলো।
প্রহারের যতোটা না লজ্জা লজ্জা লাগছে তারচেয়েও বেশি ভয় ও লাগছে।সে ভাবছে,তার জন্য জীবন নষ্ট হওয়া মানুষদের তালিকায় এই যুবকের নামটাও পড়লো না তো!এই লোকটা যদি তাকে না মেনে নেয়!আরো কতো কি ভাবতে ভাবতেই প্রহর তেষ্টার কথা ভুলে গিয়ে মিইয়ে গেল।
আরো পনেরো মিনিট অতিক্রান্ত হওয়ার পর প্রহর দেখলো,এখন পানি না খেলেই নয়। কিন্তু কাকেই বা বলবে।ঘরে তো কেউই নেই একটা মানুষ ছাড়া। কিন্তু পানি না খেলেও যে চলছে না।তাই প্রহর মৃদুস্বরে তার পাশে থাকা যুবকটাকে বললো,
–“শুনছেন?”
যুবকটি হয়তো কোনো গভীর ধ্যানে নিমগ্ন হয়েছিল।তাই প্রহরের মৃদু আওয়াজেই আঁতকে উঠলো। নিজেকে ধাতস্থ করে প্রহরের দিকে না তাকিয়েই স্বাভাবিক গলায় বললো ,
–“বলুন!”
–“আসলে আমার না খুব তেষ্টা পেয়েছে!একটু পানি হবে”!?
–“নিয়ে আসছি”!এই বলেই চোখের পলকে বসা থেকে উঠে রুমের বাইরে গিয়ে একটা জগে পানি নিয়ে আসলো যুবক।রুমে এসে একটা গ্লাসে করে প্রহরের দিকে গ্লাসটা এগিয়ে দিল যুবক!
প্রহর ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে আরো দুই গ্লাস পানি চেয়ে মুহুর্তের মধ্যেই খেয়ে হাত দিয়ে মুখ মুছলো।যুবকটি ও পাশে আগের মতো বসে পড়লো।
__
কিছুক্ষণ পর রুমে তিনটা মহিলার আগমন ঘটলো।একটা মহিলা বলে উঠলেন,
–“আয়ুশ!বাসা থেকে যাচ্ছো কবে?”
এ কথাটি শোনামাত্রই আয়ুশের চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেল।তার চোয়াল শক্ত হয়ে গেল।মহিলাকে লক্ষ্য করে বললো,
–”আমি বাসা থেকে যাবো কেন?”
–”এখনো বুঝতে পারছো না?যে কাজ করেছো তুমি,তা তোমার বাবার কানে পৌঁছে গিয়েছে। ভাগ্যিস মেয়ের মা সব সামাল দিয়েছিল।তাই কেউ কোনো ঝামেলা করেনি।নয়তো আমাদের মানসম্মান তো সব শেষ হয়ে যেতো!”
–”তো এখন আমি কি করবো?”
–”কি আর!এখন তো সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে।কাল সকাল অব্দি থাকো।তারপর চলে যেও।যতোটা পাষাণ ভাবো,ততোটাও পাষাণ নই আমি।”
–”লিসেন মিসেস শেহনাজ পারভীন।আপনার কথায় এই আয়ুশ কখনো কিছু করেনি,আর করবেও না।আপনার যদি তাতে কোনো আপত্তি থাকে,আপনি নির্দ্বিধায় চলে যেতে পারেন”।
–”শাট আপ আয়ুশ।এতো বড় একটা কাজ করার পরও তোমার বড় গলায় কথা বলার স্পর্ধা দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি।”
এই শুনে আয়ুশ হাত উঠিয়ে বললো,
–”স্টপ স্টপ!আমি কি করেছি?আমি কিছুই করিনি।একটা মেয়েকে আমার রুমে পাঠিয়ে বাইরে থেকে দরজা আটকিয়ে আপনারাই তার সাথে আমার বিয়ে দিয়েছেন।”
এটা শুনে পাশে থাকা আরেকজন মহিলা বলে উঠলো,
–”শুনো বাবা!কেউ কাউকে পাঠায়নি।আমরা জানি, তোমাদের দুজনের মধ্যে নিশ্চয়ই কিছু ছিল।যার কারণে তোমাদের দরজা বন্ধ করা অবস্থায় কেউ দেখে ফেলে।আর বাহির থেকে দরজা লাগিয়ে দেয়।’
–”ভুল জানেন আপনি! কিন্তু আপনি কে?”
–”আমি প্রহরিকার মা,মিসেস সাবিনা”।
–”প্রহরিকা কে?”
আয়ুশের এহেন প্রশ্ন শুনে শেহনাজ পারভীন হুহু করে হেসে উঠে বললেন,
–”কমন আয়ুশ! তোমার অভিনয় গুলোও না!একদম ঠিক করে অভিনয় করতে পারো না তুমি!যার সাথে তোমায় একঘরে পাওয়া গিয়েছে,সেই মেয়ের নামই নাকি জানোনা সে!”
আয়ুশ বুঝলো,তার পাশে তার সহধর্মিণী রুপে যে দাঁড়িয়ে আছে তার নামই প্রহরিকা!আর যে মহিলাটি বলেছে,তাদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল,সে মহিলাটি প্রহরিকা’র মা।আয়ুশ ওই মহিলার কাছে গিয়ে বললো,
–”আপনি কি কখনো আমাকে ওর সাথে কথা বলতে দেখছেন বা কখনো একসাথে দেখেছেন?”
–”না তো বাবা!”
–”তাহলে কিভাবে বললেন,ওর সাথে আগে থেকেই বিয়ে হয়েছে”?
এই শুনে প্রহরের মা ভড়কে উঠলেন। এতোক্ষণ ধরে আয়ুশের একমনে বসে থাকা দেখে তিনি ভেবেছিলেন,আয়ুশ হয়তো বোকাসোকা হবে। কিন্তু এর ঝাল তো বড্ড বেশি মনে হচ্ছে।তিনি বললেন,
–”শুনো,এখন তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে,বিয়ের আগে কিছুই ছিল না।আমার কি মনে হচ্ছে জানো?হয়তো প্রহরিকার’ ই তোমাকে দেখে ভালো লাগে।তাই সে তোমার রুমে এসে বসে থাকে,যেন বন্ধ ঘরে দেখে সবাই তোমাদের বিয়ে দিয়ে দেয়।”
–“নিজের মেয়ের সম্বন্ধে এসব বলছেন?”
–“যা সত্যি তাইতো বলবো বাবা।এমনিতেও ওর ছেলেদের পিছনে ঘুরার বাতিক আছে”।
প্রহর এতোক্ষণ চুপটি করে সব শুনছিল।প্রথমে সে তার বরের নামটা জানলো!আয়ুশ!তারপর হঠাৎই তার মায়ের মুখ থেকে এসব শুনতে পেয়ে প্রহরের চোখ পানিতে ভরে উঠলো।মনে মনে বলে উঠলো“মা!”
এইদিকে প্রহরিকার মায়ের থেকে এহেন কথাবার্তা শুনে আয়ুশের মেজাজ আরো বিগড়ে গেল।সে বললো,
–”আমি তো জানতাম,মায়েরা সবসময় সন্তানদের সবার থেকে রক্ষা করে চলে।আর আপনি তো উল্টো নিজের মেয়ের বিরুদ্ধে অপবাদ দিচ্ছেন।”
এ কথা শুনে শেহনাজ পারভীন বলে উঠলেন,
–”দেখো আয়ুশ! আমার সাথে তর্ক করো ঠিক আছে।অন্য গুরুজনদের সাথে তর্ক করতে যেয়ো না।যা করেছো,করেছোই।এখন দয়া করে তোমরা দু’জনে বাসা থেকে কাল সকালে চলে গিয়ে আমায় উদ্ধার করো ”।
দুটি মহিলা আর নিজের সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীর সামনে বারবার এভাবে বাসা থেকে চলে যেতে বলাটা আয়ুশের সম্মানে আঘাত হানলো।নিজের সামনে নিজের মেয়েকে এভাবে বাসা থেকে বের হতে বলছে দেখেও প্রহরিকার মা কিছুই বলছেন না।এটা লক্ষ্য করে আয়ুশ অবাক হয়ে গেল। কিছু একটা ভেবে তৎক্ষণাৎ সে প্রহরের দিকে তাকিয়ে বললো,
–“প্রহর!”
প্রহর চকিত নয়নে আয়ুশের দিকে তাকালো,আযুশ বললো,
–“আমার সাথে যাবে?”
প্রহর কিচ্ছুটি না ভেবেই মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বললো!
আয়ুশ সাথে সাথে সবার সামনে প্রহরের হাত ধরে এক কাপড়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল।
যাওয়ার আগে শুধু এতোটুকু বলে গেল,
“বাই বাই মিসেস শেহনাজ ও মিসেস সাবিনা”!
চলবে কি..?