#আয়ুর_প্রহর
#পর্ব_০৫
#আয়িশা_নুর_তৃষ্ণা
___
চারদিকে ভোরের আলো ফুটেছে।রাতের আঁধারের চির ফেটে সকাল হয়েছে।পুর্ব আকাশে সূর্যিমামার টিকিটা উদয় হচ্ছে আস্তে আস্তে।নিরবতার রেশ কাটিয়ে লোক লোকারণ্য হয়ে উঠেছে পথ-ঘাট।রাস্তা থেকে শোনা যাচ্ছে কুলির হাঁক।
এইদিকে প্রহর সারারাত ঘুমোয়নি।দু চোখে ঘুম আসেনি তার।আয়ুশ রাতে বাড়ি ফিরেনি।তার জন্য অপেক্ষা করতে করতে প্রহরের ও ঘুম আসেনি।সে ঘুমায়নি।আয়ুশের জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে সে শুধু ভেবেছে তার সাথে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার কথা।তার জীবনে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে আসা মানুষটার কথা।
___
ওইদিন যা হয়েছিল–––
প্রহর বহুদিন পর ছুটিতে হোস্টেল থেকে বাড়ি এসেছে।এসেই শুনে তার বড়ভাই প্রণয় এর জন্য সবাই পাত্রী দেখতে যাবে।ছোট থেকে আজ পর্যন্ত কখনোই কোনো অনুষ্ঠানে যেতে পারেনি প্রহর।যেতে পারেনি বলতে তার মা মিসেস সাবিনা কখনোই তাকে কোনো অনুষ্ঠানে যেতে দেননি।তিনি সবসময় ওকে হোস্টেলে রেখে দিয়েছেন।আর অনুষ্ঠানগুলো ও ওইসময় পড়তো যখন প্রহর হোস্টেলে থাকতো।তাই তার আর অন্যদের মতো কোনো অনুষ্ঠানে,আয়োজনে আসা হতো না।এতো আনন্দ ও করা হতো না।
এইবার কেমন করে যেন তার ছুটিতেই পাত্রী দেখতে যাওয়ার তারিখ পড়লো।প্রহর যেহেতু কখনও এমন কোথাও যায়নি,তাই সেও মায়ের কাছে আবদার করলো,সেও পাত্রী দেখতে যাবে।প্রহর বলামাত্রই সাবিনা বেগম একবাক্যে প্রহরকে না করে দিলেন।বললেন,তোমার মতো মেয়ের কোথাও যাওয়া যাবে না। কিন্তু প্রহর তাও তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার মাকে অনেক অনুরোধ করলো। একপর্যায়ে এমন অবস্থা হলো, সাবিনা বেগম রেগে গিয়ে প্রহরের গায়ে হাত পর্যন্ত তুললেন।তখনই সেখানে প্রণয় উপস্থিত হয়ে মায়ের হাত থেকে প্রহরকে ছুটাতে ছুটাতে করলো,
–“আরে মা!করছো কি!লেগে যাবে তো!এতো বড় মেয়েকে কেউ মারে!”(প্রণয়)
–“তো মারবো না তো কি করবো।কত্তবড় সাহস,ও আমাদের সাথে পাত্রী দেখতে যেতে চায়!(মিসেস সাবিনা)
–“তো সাথে করে নিয়ে যাই।তাহলেই তো হয়।”
–“ওকে নিয়ে গেলে আমাদের প্রেস্টিজ থাকবে?(মিসেস সাবিনা)
–“এসব কি কথা মা।ও আমার নিজের বোন।ওকে নিয়ে গেলে কি এমন ক্ষতি হবে।এমনিতেও বোনটা আমার কোনো অনুষ্ঠানেই থাকতে পারে না।এতোদিন কিছুই বলিনি।আজ অন্তত ওকে সাথে নিয়ে যাই।ও না গেলে আমিও কিন্তু যাবো না।”
ভাইয়ের এমন কথা শুনে প্রহর তার অশ্রুভরা চোখে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো।তার ভাইটা এতোদিনে বোনের হয়ে কিছু বললো।প্রহরের কি যে ভালো লাগছে!
প্রণয়ের অতিরিক্ত জোরাজুরিতে সাবিনা বেগম আর প্রহরকে না নিয়ে পারলেন না।তবে মনে মনে একটা দারুন পরিকল্পনা এঁটে নিলেন।তিনি যা শুনেছেন,তা যদি সত্যি হয়,তাহলে তো এই মেয়েকে গছিয়ে দিলেই হবে।উনার আর চিন্তা নেই।অবশেষে তিনি প্রহরকে সাথে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।
ওরা আয়ুশদের বাসায় আসার পর সবাইকে ড্রয়িংরুমে বসতে দেওয়া হলো।প্রহর,প্রণয়, তাদের বাবা,মা এবং তাদের ফ্যামিলির আরো অনেকেই এসেছে পাত্রী দেখতে।এতোজন আসার কারণ,মেয়ে পছন্দ হলে উনারা আজকেই এংগেজমেন্ট করিয়ে ফেলবেন। তাছাড়া মেয়ে পছন্দ না হওয়ার ও কোনো কারণ নেই।মিসেস সাবিনা বেগমের নাকি আগে থেকেই মেয়ের পরিবারের সাথে দেখাশোনা আছে।
হালকা নাস্তার পর পাত্রী দেখাদেখির একপর্যায়ে বাড়ির বড়রা আলোচনায় বসলেন।ওখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবেন বলে আয়ুশ আর প্রহরের মা একসাথে উঠে আলাদা করে কথা বলতে গেলেন।কথা বলার একপর্যায়ে হঠাৎ পাত্রীর মা প্রহরকে ডেকে দিয়ে বললেন,প্রহর যেহেতু ছোট মানুষ।আর এখন একা কি করবে তাই প্রহর যেন উনার রুমে গিয়ে বসে।প্রহরের মা ও প্রহরকে যেতে ইশারা দিলেন। পাত্রীর মা শেহনাজ পারভীন বলে দিলেন,প্রহর যেন দোতলার দ্বিতীয় রুমটায় গিয়ে বসে।তাই প্রহর দোতলার দ্বিতীয় রুম খুঁজে ওইটায় বসে পড়ে।
অনেকক্ষণ বসে থাকার পর প্রহর ওয়াশরুমে যায়।বের হতেই দেখে আয়ুশ বিছানায় বসে আছে।প্রহর আয়ুশকে দেখে স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।আর আয়ুশ ও তার রুমে অপরিচিত একটা মেয়েকে দেখে চমকে উঠে,জোরে বলে উঠে,
–“আপনি কে?আমার রুমে কি করছেন!”
প্রহর ভয় পেয়ে যায়।আগে কখনোই এভাবে অপরিচিত কারোর সাথে কথা বলেনি সে।এখন কি বলবে প্রহর?সে তো ভালো করে দেখেই রুমে এসেছিল!সে আমতা আমতা করে বললো,
–“আসলে আমি জানতাম না এটা আমার রুম!আমায় যেই রুমে আসতে বলা হয়েছিল,ওখানেই এসেছি।”
–“কে পাঠিয়েছে আপনাকে?ও… বুঝেছি! নিশ্চয়ই মিসেস শেহনাজ!”
–“আমাকে হবু ভাবীর মা পাঠিয়েছেন!বলেছেন দোতলার দ্বিতীয় রুমটায় বসতে।”
–“উনিই মিসেস শেহনাজ।উনার সাথে বোঝাপড়া তো আমি পরে করবো।আপনি এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?বের হন রুম থেকে!যান তাড়াতাড়ি!”
–“এক্ষুণি যাচ্ছি ” বলেই প্রহর প্রস্থান করতে যাবে,তখনি দেখে বাহির থেকে দরজা আটকানো।প্রহর ভয় পেয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।ওদিকে আয়ুশ বলছে,
–“কি ব্যাপার!এখনো যাচ্ছেন না কেন?”
–“দরজা তো বাহির থেকে লাগানো।”
“ওহ শিট!এখন আবার দরজা কে লাগলো” বলেই আয়ুশ বিছানা থেকে উঠে দ্রুতগতিতে উঠে প্রহরকে দরজার সামনে থেকে সরতে বলে নিজে দরজার কাছে এসে দাঁড়ালো।সে ভিতর থেকে দরজা ধাক্কা দিতে লাগলো। কিন্তু কেউ যেন শুনছেই না।প্রহর আয়ুশের পিছনে দাঁড়িয়ে ভয়ে কাঁপতে লাগলো।
দশ মিনিট বাদে বাহির থেকে দরজা খোলা হলো।দরজা খুলতেই দেখা গেলো,দরজার বাহিরে বাসার সবাই দাঁড়িয়ে আছে।আজকেই যেহেতু এংগেজমেন্ট হয়ে যাবার কথা ছিল তাই মিসেস শেহনাজ বেগমের ভাইয়েরা অর্থাৎ আয়ুশের সৎ মামারা,সৎ খালারা,প্রহরের চাচা,মামা’রা এসেছিলেন।উনারা ও সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।
প্রহর আর আয়ুশকে এক রুমে দেখে উনারা ওদের দুজনকে ড্রয়িংরুমে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়ে নানান প্রশ্ন করা শুরু করলেন,দরজা লাগিয়ে দু’জনে ভিতরে কি করছিল।আয়ুশ উনাদের সবকিছু খুলে বলে,যে সে রুমে এসে দরজা লাগিয়ে শুয়েছিল,তখনি ওয়াশরুম থেকে প্রহর বের হয়।তারা কেউ জানতো না এখানে কেউ আছে। কিন্তু সব জেনেশুনে ও আয়ুশের মা মিসেস শেহনাজ বলে উঠেন,
–“যাই হোক!কিছু না করো! কিন্তু তোমরা দুইজনে একসাথে একঘরে ছিলে,এই কথাটা বাইরে গেলে কি হতে পারে জানো? আমাদের সম্মান ধুলোয় মিশে যেতে পারে। আমাদের সবার বদনাম হয়ে যাবে আয়ুশ!”
–“দেখুন,মিসেস শেহনাজ!আমি এই মেয়েটাকে চিনিওনা।এই কাজটা নিশ্চয়ই আপনারই।আপনিই তো মেয়েটাকে এই রুমে পাঠিয়েছেন।”
আয়ুশের কথা শুনে মিসেস শেহনাজ কিছু না জানার ভান করে বললেন,
–“আমি তাকে এখানে পাঠাইনি।আমি তাকে দোতলার তৃতীয় রুমে যেতে বলেছিলাম।”
–“কিন্তু মেয়েটা যে বলল,আপনি তাকে দ্বিতীয় রুমে পাঠিয়েছেন!”এই বলে আয়ুশ প্রহরের দিকে তাকিয়ে প্রহরকে বললো,“এইযে মিস! কিছু তো বলুন!?”
প্রহর কিছু বলতে যাবে তখনি পাশ থেকে প্রহরের মা প্রহরকে অবাক করে দিয়ে বলে উঠলেন,
–“প্রহর নিশ্চয়ই মিথ্যা কথা বলছে।আমি শুনেছি,ওকে তৃতীয় রুমে আসতে বলা হয়েছিল।”
প্রহর আর কিছু বলতে পারলো না।চুপটি করে দাঁড়িয়ে রইলো সে। যেখানে নিজের মা তার বিপক্ষে কথা বলছে, সত্য জেনেও মিথ্যার সঙ্গ নিচ্ছে!সেখানে তার আর কিইবা বলার থাকতে পারে। নিজের প্রতি ধিক্কার দিতে দিতে প্রচন্ড লজ্জা পাচ্ছে প্রহর!
প্রহরের মা সাবিনা আয়ুশের মা মিসেস শেহনাজ কে বলে উঠলেন,
–“বিয়াইন সাহেবা।আমি জানি আজকের কথাটা যেকোনো ভাবেই হোক পাঁচকান হয়ে যাবে।তখন আমার মেয়েটাকে বিয়ে দিতে পারবো না।আপনি আপনার ছেলের সাথে আজকেই বিয়ে দিয়ে দিন।আমরাও ঝামেলামুক্ত হই।”
প্রহরের মায়ের শেষের কথাটা আর কেউ না বুঝলেও প্রহর খুব ভালোভাবে বুঝলো।ঝামেলা বলতে তার মা প্রহরকেই বুঝিয়েছেন।তার বিয়ে দিতে পারলেই প্রহরের পরিবারের সবাই ঝামেলামুক্ত হবে।সে আসলেই একটা ঝামেলা!প্রহর শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে ফ্যালফ্যাল চোখে সব দেখতে লাগলো।
এইদিকে প্রহরের মায়ের কথা শুনে আয়ুশের মা মিসেস শেহনাজ বললেন,
–“আমিও তাই ভাবছি।তাছাড়া আমাদের ও একটা প্রেস্টিজ আছে।সমাজে আমাদের একটা স্ট্যাটাস আছে।সেটা তো এভাবে মেয়েলী ব্যাপারে শেষ করে দেওয়া যায় না।তাই বলছি আয়ুশ,এখনি কাজী ডেকে তোমাদের বিয়ে পড়িয়ে দিবো”।
মিসেস শেহনাজের এমন কথা শুনে আয়ুশের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। সে প্রায় চেঁচিয়ে বললো,
–“আমার জীবনটাকে কি ছেলেখেলা পেয়েছেন আপনি?ছোটবেলা থেকেই তো যেভাবে ইচ্ছা খেলে এসেছেন।এখনও খেলা শেষ হয়নি আপনার?”!
আয়ু্শের কথা শুনে মিসেস শেহনাজ ক্রুর হাসলেন।তারপর মুখ গম্ভীর করে বললেন,
–“এখন তো আমি কিছুই করছি না আয়ুশ।আর মেয়েটা যেমনাভবেই আসুক না কেন,ওকে আর তোমাকে যখন একসাথে এক রুমে পাওয়া গিয়েছে তারমানে নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে।এখন যাই বলো, তোমাদের বিয়ে না হওয়া অব্দি সমস্যা মিটবে না।”
প্রহরের মা মিসেস সাবিনা ও উনার সাথে তাল মিলিয়ে বললেন,
–“হ্যাঁ হ্যাঁ একদম।এখন বিয়ে না হলে আমার মেয়েটার জীবন নষ্ট হয়ে যাবে।আর আমরাও এখন কোনো ঝামেলা করতে চাচ্ছি না। ব্যাপারটা ভালোয় ভালোয় মিটে গেলেই হয়।”
প্রহর তার মায়ের কথা শুনে মাথা উঠিয়ে তার মায়ের দিকে তাকালো।’ইশ!মা কতোটা ভাবে তার জন্য ‘ ভাবতেই তার চোয়ালে মিথ্যে হাসি এসে গেল।
কিন্তু বাবা!বাবা কিছু বলছে না কেন!এখনো তিনি চুপ করে আছেন?নিজের মেয়েকে এমন অবস্থায় দেখে তার জন্য একটু ও চিন্তা হচ্ছে না বাবার। ছলছল আঁখি নিয়ে নিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে বাবাকে দেখলো প্রহর।বাবা কি সুন্দর করে বসে আছেন। কিছুই বলছেন না তিনি।প্রহরের মায়ের মতই উনার মত।প্রহরের মায়ের সিদ্ধান্তই উনার সিদ্ধান্ত।কন্যাবিদায় করতে পারলেই যেন তিনি বাঁচেন।প্রহর ঈষৎ হেসে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো।
আয়ুশের সৎ মামারা,প্রহরের চাচা,মামারাও মিসেস শেহনাজ আর মিসেস সাবিনার সাথে একমত পোষণ করলেন। উনাদের ও কথা আয়ুশের এখনি প্রহরকে বিয়ে করতে হবে। উনাদের সবার জোরাজুরিতে বিশেষ করে প্রহরের চাচাদের এতো চাপে আর মেয়েটার অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে আয়ুশ রাজি হয়।সমাজ বলেও তো একটা ব্যাপার আছে।
আয়ুশ প্রথমে সবাইকে বোঝাতে চেষ্টা করে তার,সৎ মামা,খালা আর প্রহরের পরিবারের লোকেরা না বললে বিষয়টা কখনোই বাইরে যাবে না। কিন্তু মিসেস শেহনাজ এমনভাবে সবাইকে আয়ুশের বিরুদ্ধে উস্কে দেন যে,আয়ুশের আর রাজি না হয়ে উপায় থাকে না।
আয়ুশ চাইলেই বাড়ির ভিতর থেকে বের হয়ে যেতে পারতো।
কিন্তু তক্ষুণি আয়ুশের তার নিজের মায়ের কথা মনে পড়ে যায়।তার মনে আছে,একদিন কোনো একটা ঘটনা শুনিয়ে আয়ুশের মা তাকে বলেছিলেন “নিজের সুখের জন্য, নিজের শান্তির জন্য কখনোই অন্যের বিন্দুমাত্র ক্ষতি করা উচিত নয়।এতে স্রষ্টার সৃষ্টির প্রতি অন্যায় করা হয়।”
মায়ের বলা উপদেশ মনে করেই আয়ুশ রাজি হয়েছে বিয়ে করতে।সে নিজেও চায় না শুধুমাত্র তার জন্য একটা মেয়ের সম্মানহানি হোক,তার জন্য একটা মেয়ের পুরো জীবনটা নষ্ট হোক।কোনো নির্দোষের একচুল ক্ষতি হতে দিতে রাজি নয় আয়ুশ।সে প্রহর কে নির্দোষ ভাবে,কারণ সে জানে মিসেস শেহনাজ কতোটা ধুর্ত!এই মহিলা সবসময় আয়ুশকে বাড়ি থেকে তাড়ানোর ফন্দি এটেছেন।আজ অবশেষে আয়ুশের বিরুদ্ধে বদনাম রটিয়ে তাকে বাসা থেকে বের করার একটা অজুহাত খুঁজেই পেয়ে গেলেন।
সবদিক বিবেচনা করে, বিশেষ করে তার জন্য একটা মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে যাবে,এটা আয়ুশ কখনোই মানতে পারবে না।তাইতো এই দায়বোধ থেকেই সে বিয়েটা করতে রাজী হয়েছে।
আর অন্যদিকে প্রহর নিরবে সব দেখে যাচ্ছে।কিইবা বলার আছে তার।যেখানে তার মা-বাবা কেউই তার স্বপক্ষে কোনো আওয়াজ তুলছে না,সেখানে তার নিজের মুখ থেকে কোনো শব্দ বৃথা মনে হচ্ছে।সে সব বিধাতার হাতে ছেড়ে দিয়েছে।তিনি যা চান তাই হবে।প্রহর নির্দ্বিধায় সব মেনে নিবে।জীবন তো আর কম ভোগায়নি তাকে! এইবারও না হয় সব সহ্য করে নিবে প্রহর!
বিয়েটা হয়ে গেল।শেহনাজ বেগম নিজেই কাজী ডেকে খুব সাদামাটা ভাবে বিয়ের ব্যাবস্থা করলেন।আয়ুশের বোন অনিতা তার ওড়না দিয়ে প্রহরকে একটু সাজালো।ব্যাস! এতটুকুই।তারপর তো বিয়েটা শেষ হওয়ার পর ওদের ঘন্টাখানেকের মতো একটা রুমে বসিয়ে রাখা হলো।তারপর আয়ুশের সৎ মামা,খালারা ও বাদবাকি সবাই মিলে আলাপ আলোচনা করে একথা ওকথা বলে আয়ুশকে বাসা থেকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।আয়ুশ ও নিজের আত্নসম্মান নিয়ে প্রহরকে নিয়ে চলে আসলো।জীবনটা কোথায় মোড় নিলো , কিভাবে যে কি হয়ে গেল।এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে বিয়ে হবে কখনো কি ভেবেছিলো প্রহর!?ভাবতে ভাবতে প্রহারের চোখ থেকে দু’ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো।
প্রহর বারবার ঘড়ি দেখেই যাচ্ছে।সারারাত সে ঘড়ি দেখেই কাটিয়েছে।১ টা,২ টা,৩ টা করতে করতে সকাল হয়ে গিয়েছে।প্রহরের ও খুব ঘুম পাচ্ছে। কিন্তু তবুও সে আয়ুশের জন্য অপেক্ষা করছে। কেন আয়ুশের জন্য এতো চিন্তা হচ্ছে সে জানে না! শুধু জানে, মানুষটাকে তার জন্য বাড়িছাড়া হতে হয়েছে।মানুষটা তার জন্যই এতোকিছু করেছে। তাছাড়া একটা মানুষ রাতে বাসায় না ফিরলে দুশ্চিন্তা হবারই কথা।
ঘড়ির কাঁটা ৮ টায় আসতেই কলিংবেল বেজে উঠলো।প্রহরের চোখ লেগে গিয়েছিলো।সে হুড়মুড় করে উঠে চোখ কচলে দরজার কাছে গেল।তার প্রাণ যেন বেড়িয়ে আসছে।তাড়াহুড়ো করে জিজ্ঞেস করলো,“কে?আপনি এসেছেন”?ওপাশ থেকে আওয়াজ আসলো,“দরজা খোলো”!
চলবে।