#আয়ুর_প্রহর
#পর্ব_০৮
#আয়িশা_নুর_তৃষ্ণা
___
নিঝুম রাত্রি। আশেপাশের কোলাহল সব নিস্তব্ধতায় জড়িয়ে আসছে।রাতের পাখিরা গভীর তন্দ্রায় স্বপ্নপুরীর চিলেকোঠায় হানা দিচ্ছে।গাড়ির হর্নের আওয়াজ ধীরে ধীরে কমে আসছে। লোকজনের হাঁকডাকও ফিকে আসছে।পথের ধারে ধারে থাকা ল্যাম্পপোস্টগুলো রাতের সূর্যের আলোকছটা হয়ে পথচারীর সঙ্গ দিচ্ছে।রাত গভীর হচ্ছে!
প্রহর জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।ভাবছে,রাতে কে কোথায় ঘুমাবে।এই নিয়ে বড্ড চিন্তায় পড়ে গেল প্রহর।প্রথমে ভেবেছিল সে আলাদা রুমে থাকবে। কিন্তু এই কথাটা আয়ুশের কাছে কিভাবে তুলবে তা ঠিক করে বুঝে উঠতে পারছে না।
প্রহর আর আয়ুশ দু’জনে বাড়িওয়ালার বাসায়ই দুপুর আর রাতের খাবার সেরেছে। দুপুর পর্যন্ত আয়ুশ ঘুমিয়েছিল।আর প্রহর বসে বসে ঘরদোর গুছিয়েছিল। দুপুরে দুইজন বাড়িওয়ালার বাসায় গিয়ে দুপুরের খাবার খাওয়ার পর বাড়িওয়ালী প্রহরকে আর ছাড়েননি।আয়ুশ ও প্রহরকে রেখে আসতে পারেনি।
প্রহর ওখানে থাকায় বাড়িওয়ালির ও কিছুটা সুবিধা হয়।কাজের লোক থাকা সত্ত্বেও প্রহর হাতে হাতে তাদের সাথে একটু আধটু সাহায্য করে।
বাড়িওয়ালি রোকসানা বেগম প্রহরকে বেশ পছন্দ করেছেন।প্রহরের কথাবার্তা উনার কাছে বেশ ভালো লেগেছে।
রোকসানা বেগম নিজেও যথেষ্ট মার্জিত ও রুচিশীল ও মিশুকমনা একজন মানুষ।প্রহরকে উনার মনে ধরেছে ভালোভাবেই।ছেলেপক্ষ চলে যাওয়ার পরও রাতে তিনি প্রহর আর আয়ুশকে রাতের খাবার খেয়ে যেতে বলেছেন।
রাতের খাবার শেষ করে প্রহর আর আয়ুশ তাদের ফ্ল্যাটে ফিরে এলো।
আয়ুশ ফ্রেশ হতে গেল।প্রহর জানালার ধারে দাঁড়িয়ে রইলো এই চিন্তায় সে কোথায় থাকবে।যদিও তারা স্বামী-স্ত্রী। কিন্তু বিয়েটা এমনভাবে হয়েছে যে তার কিছুটা সংকোচবোধ হচ্ছে।
আয়ুশ ফ্রেশ হয়ে আসার পর প্রহর ও ফ্রেশ হয়ে আসলো।এসে দেখলো আয়ুশ বিছানায় বসে আছে।কোলে একটা বালিশ নিয়ে তার উপর ভর দিয়ে ফোন ঘাটছে।প্রহর তা দেখে ঠেয় দাঁড়িয়ে রইলো।আয়ুশ প্রহরকে দাঁড়ানো দেখে ফোন থেকে মুখ তুলে ফোন রেখে বিছানায় বসতে ইশারা দিল।প্রহর বিছানার এককোণে বসলে আয়ুশ তাকে বললো,
–“ঘুমাবে না?”
–“হ্যাঁ”
–“তাহলে বালিশ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো!”
আয়ুশের কথা শুনে প্রহর চুপটি করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো।আয়ুশ তা দেখে প্রহরকে ডাক দিলো,
–“প্রহর!”
প্রহর মুখ তুলে আয়ুশের দিকে তাকালো।আয়ুশ বললো,
–“আনইজি ফিল হচ্ছে?”
–“খানিকটা”!
আয়ুশ একটু এগিয়ে প্রহরের ঠিক সামনে বসলো।প্রহর উঠে পিছিয়ে যেতে চাইলে আয়ুশ বললো,“উঠো না!বসে থাকো!”
আয়ু্শ প্রহরকে বললো,
“তুমি হয়তো ভাবছো,না মানে তোমার বয়স অনুযায়ী এমনি ভাবার কথা।তুমি হয়তো চিন্তা করছো আমাদের এক্সিডেন্টলি বিয়ে হওয়ার কারণে আমরা আলাদা রুমে থাকবো কিংবা আমি তোমাকে বলবো,আমি তোমার সাথে থাকতে পারবো না।যদি একই রুমে থাকতে হয় তাহলে একজনকে নিচে আর একজনকে উপরে থাকতে হবে!এমনটাই ভাবছো তো প্রহর?”
প্রহর উদাসীন গলায় উত্তর দিল,
“তেমন কিছু না,আমি নিচে থাকতে পারবো!আমার অভ্যাস আছে”!
প্রহরের এহেন কথা শুনে আয়ুশ গম্ভীর হয়ে গেল। বললো,
“অভ্যাস আছে মানে?তুমি এর আগে এমন থেকেছো নাকি?আর তোমার কি আমাকে এতোটা ও অমানবিক মনে হয় যে,আমি তোমাকে নিচে থাকতে দিবো!রাবিশ”!
–“তা নয়! কিন্তু আমি নিচে থাকতে পারি।যেকোনো জায়গায় নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা আমার আছে আলহামদুলিল্লাহ!”
প্রহরের কথা শুনে আয়ুশ বললো,
“এটা ভালো!নিঃসন্দেহে এটা তোমার ভালো গুণ।”
তারপর শক্ত গলায় বললো,
“এখন বলো,তুমি এর আগে এমন থেকেছো বললে! বিস্তারিত বলো শুনি!”
আয়ুশ কথা শেষ না করতেই দেখে প্রহরের চোখে পানি জমা হয়ে আছে।এখনি টুপ করে পড়বে!
প্রহর বললো,
–“অনেক গল্প!বলতে গেলে দেরী হয়ে যাবে!”
–“দেরী হোক!আমি এখনি শুনতে চাই।”
প্রহর বলতে যেয়েও বলবে কি না এই ভেবে চুপ হয়ে রইলো। খানিক বাদেই সে ভাবলো,এই মানুষটার সাথে যেহেতু জীবন জড়িয়েই গিয়েছে,তাহলে তাকে বললেই বা সমস্যা কোথায়। এতো দিনের জমিয়ে রাখা কথার ফুলঝুরি থেকে কিছু কথা উগড়ে দিতে পারলে ভালোই হবে।তবে কথার থলে পুরো খালি করবে না এই ভেবে আয়ুশকে নিজের ছোট থেকে বড় হওয়া অব্দি সমস্ত কথা বলার সিদ্ধান্ত নিল প্রহর!
এইদিকে আয়ুশ ভাবছে,সে বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলছে না তো মেয়েটার সাথে।আগে কোনোদিন তো এমন করেনি করো সাথে।সব মেয়েকে সবসময় এড়িয়ে গিয়েছে সে।তবে আজ কি হলো তার!?মেয়েটার সাথে কাগজের একটা দলীলে সাক্ষর করে,তিন কবুল বলে তার জীবনের সাথে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছে বলেই কি এভাবে একটা অপরিচিতা মেয়ের সাথে এভাবে কথা বলতে পারছে আয়ুশ?তার সম্পর্কে এতো জানবারই বা কৌতুহল হচ্ছে কেন?
এসব মনে করে সে ভাবলো প্রহরকে আর কিছু জিজ্ঞাসা করবে না। কিছুই বলতে হবে না প্রহরের।এ কথা যখনি প্রহরকে বলতে যাবে ঠিক ওই মুহুর্তেই প্রহর নিজ থেকেই বলতে শুরু করলো,তার জীবনের কিছু কথা।যা সে এতোদিন তার বুকে পুষে রেখেছিল।প্রায় সবকথাই উগড়ে দিল আয়ুশের কাছে।আয়ুশ সেসব শুনে অবাক দৃষ্টিতে প্রহরের দিকে তাকিয়ে রইলো।এইটুকু বয়সে কতোটুকু অযত্ন পেয়েছে মেয়েটা! মানুষ এতোটা অমানবিক হতে পারে!?কিছুটা প্রায় মিলে গেলো যেনো নিজের সাথেই!আয়ুশের চোখের কোণায়ও খানিকটা জল জমা হলো..!
চলবে………..