#আয়ুর_প্রহর
#পর্ব_০৯
#আয়িশা_নুর_তৃষ্ণা
____
মধ্যরাতের আকাশে মেঘের গর্জন শোনা যাচ্ছে।হয়তো খুব ভারী বৃষ্টি হবে।প্রহরের চোখে মুখেও ভারী কান্নার পূর্বাভাস, অনেকক্ষণ শক্ত থাকার পর হঠাৎই হু হু করে কেঁদে উঠলো প্রহর। কাঁদলে মন কিছুটা হালকা হবে এই ভেবে আয়ুশ প্রহরকে কাঁদতে দিল। কিন্তু হঠাৎ করেই প্রহরের কান্নার মৃদু আওয়াজ বন্ধ হয়ে যায়।আয়ুশের ও চোখ লেগে গিয়েছিল।সে প্রহরের দিকে তাকিয়ে দেখে প্রহর ঘুমিয়ে গিয়েছে। গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে।মেয়েটা কান্না করলেই ঘুমিয়ে যায়!
আয়ুশ আলতো করে প্রহরের মাথার নিচে একটা বালিশ দিয়ে তার গায়ের উপরে একটা বেডশিট জড়িয়ে দিয়ে প্রহরের দিকে তাকালো,
সে ভাবছে,
কি জাদু করেছে এই মেয়েটা তাকে? কি আছে এই মেয়েটার মধ্যে?কি এমন শক্তি যা তাকে মেয়েটার সাথে কঠিন ব্যাবহার করতে বাধা দেয়?
আয়ুশ প্রহরের দিকে আরো গভীরভাবে তাকালো,
উজ্জ্বল শ্যামরাঙা মুখ, ডাগর ডাগর চোখ মেয়েটার!
আচ্ছা!এই শ্যামবর্ণের জন্যই কি প্রহরকে এতো নিজের নিজের লাগে! শ্যামবর্ণ তো আয়ুশের বড্ড প্রিয় রঙ।এটা তার মায়ের রঙ।তার অতি কাছের রঙ।এই রঙের জন্যই কি মেয়েটাকে এতো আপন লাগে?এতো কাছের লাগে?
যদি তাই হয়,তাহলে মেয়েটাকে সে সবসময় আগলে রাখবে।মেয়েটা যে বড্ড দুঃখী!
__
পরদিন সকাল
সকাল সকাল বাড়িওয়ালা এসেছিলো। আগামীকাল উনার মেয়ের এংগেজমেন্ট।আজ থেকেই সব গুছগাছ করে রাখবেন।উনার কাজে আয়ুশ কে সাহায্য করতে হবে।তাই আয়ুশকে ডাকছেন।
আয়ুশ ও বাধ্যগত ছেলের মতো উঠে চলে গেল।প্রহর এখনো ঘুমোচ্ছে আর আয়ুশ সারারাত জেগে ছিল। প্রহরের সাথে তার কথা বলা শেষ হয়নি।প্রহর যদি জেগে দেখে আয়ুশ তার পাশে শুয়ে আছে,তাহলে হয়তো আনকম্ফোর্টেবল ফিল করবে।আবার আয়ুশ না থাকলে পাশের রুমে গিয়ে ঘুমোলে ভাববে,আয়ুশ হয়তো তাকে মেনে নেয়নি।এই ভেবে আয়ুশ আর ঘুমোয়নি,জেগেই ছিল।
সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রহর আগের দিনের মতো রান্নাবান্না করতে গেলেও আয়ুশের বাড়িওয়ালার সাথে কাজ করার সুবাদে আজও তাদের ওখান থেকে খেতে বলা হয়েছে।এক লোকের বাসায় পরপর দুইদিন খাওয়া,এটা আয়ুশের বিবেকে লাগলো।সম্মানের সহিত বাড়িওয়ালাকে প্রত্যাখ্যান করতে গেলেও বাড়িওয়ালার পীড়াপীড়িতে তারা দুইজনেই ওখানে তিনবেলা খেলো।
____
রাত্রিবেলা_
আজকেও প্রহর চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে।তবে আজ দাঁড়িয়ে আছে বিছানার সামনে।আজ সে আগেআগে ফ্রেশ হয়ে গিয়েছে।আর আয়ুশ এখন ফ্রেশ হচ্ছে।আয়ুশ ফ্রেশ হওয়ার পর রুমে এসে দেখে প্রহর দাঁড়িয়ে আছে।
গতকাল কাঁদতে কাঁদতে মনভুলে ঘুমিয়ে পড়লেও আজ প্রহর ঘুমাতে পারছে না।গতকাল তো অনিচ্ছাকৃত ভাবে ঘুমিয়েছিল।একটু কাঁদলেই প্রহরের মাথাব্যাথা করে,আর মাথাব্যাথা থেকে কিভাবে যে চোখে ঘুম চলে আসে,তা সে জানেই না।গতকালও কান্না করার কারণেই চোখ লেগে এসেছিলো।
গতকাল আয়ুশ প্রহরের সাথে ঘুমিয়েছিল কী না,এটাও প্রহর জানে না,কেননা আয়ুশ সকাল সকালই বাড়িওয়ালার সাথে বাজারে চলে গিয়েছিল।ওইসময় নাকি বাজারে ভালো মাছ পাওয়া যায়।
আজকে কিভাবে ঘুমাবে,একসাথে ঘুমোলে আয়ুশ কি রিয়েক্ট করবে এই ভেবে প্রহর দাঁড়িয়ে রইলো। গতকালের মতো আজও আয়ুশ প্রহরকে ডাক দিয়ে বললো,
–“এদিকে আসো,এসে আমার সামনে বসো!”
প্রহর এসে আয়ুশের সামনে বসলো।
আয়ুশ প্রহরের আরেকটু সামনে গিয়ে বসে প্রহরকে বললো,
–“গতরাতে আমার বলা কথা শেষ হয়নি।আজ পুরোপুরি শুনবে তো?”
–“জি,শুনবো”
আয়ুশ একটু নড়েচড়ে প্রহরের আরো সামনে এসে প্রহরকে বললো
“শুনো,তুমি যদি ভেবে থাকো আমি তোমায় বলবো,”এই বিয়ে আমি মানি না” “আজ থেকে একজন উপরে থাকবে একজন নিচে” তাহলে ভেবে নিও ভুল ভাবছো।আমি এক্সিডেন্টলি বিয়ে হওয়া টিপিক্যাল হাসবেন্ডদের মতো তোমায় বলবো না যে,আমি তোমায় মেনে নিতে পারবো না।এটা ওটা!আই রিপিট আমি তোমায় কখনোই এমন বলবো না।
কারণ আমি জানি আমাদের দুইজনের কেমন পরিস্থিতি ছিল।আর যেহেতু আমাদের বিয়েটা একবারই হয়েছে।তাই আমি সবসময় মেনে নিতে চেষ্টা করবো। সবকিছু মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবো।
কথায় আছে, মেয়েদের নাকি একবারই বিয়ে হয়। কিন্তু আমি চাই পুরুষরাও এক নারীতে আসক্ত থাকুক।কোনো নারীকে কখনো কষ্ট না দিক।আমি ছোটবেলা থেকেই এ কথায় বিশ্বাসী প্রহর!
যদি এমন হতো,পুরুষরা প্রয়োজন ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে না করতো। পরনারীর প্রতি আসক্ত না হতো।তাহলে চারপাশের পরিবেশটা কতো সুন্দর হতো প্রহর!আমি নিজের এই ধারণাটা নিজের মধ্যে পাকাপোক্ত করতে চাই।আমি একজনকে নিয়েই বাঁচতে চাই প্রহর!
যদিও আমাদের বিয়েটা তেমন সাধারণভাবে হয়নি, তবুও আমি চাইবো মানিয়ে নেওয়ার।আমি জানি,সময়ের সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে।আমরা সবকিছু মানিয়ে নিতে পারবো।
আমি চাই তুমিও সবকিছু মানিয়ে নাও। আমাদের শুরুটা অগোছালোভাবে শুরু হলেও আমি সবকিছু গুছিয়ে নিতে চাই প্রহর!
তুমি কখনো আমায় ভয় পেয়ো না।আমায় নিয়ে তোমার মনের সমস্ত খুঁটিনাটি তুমি আমায় বলবে।আমি তোমার সব জড়তা কাটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো ইন শা আল্লাহ!
শুধু তুমি আমায় ভুল বুঝো না।সবসময় নিজেকে মানিয়ে নাও।”
আয়ুশের কথা শুনে প্রহরের কেমন যেন লাগছে।কি নিদারুন স্বর্গীয় অনুভুতি এটা।এমন মানুষ ছিল তার জীবনে। প্রতিটা কথা যেন তার হৃদয়মননে দোলা দিয়ে যাচ্ছে।
প্রহর আয়ুশের কথায় সায় দিল,বললো,
–“আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করবো !”
আয়ুশ মুচকি হাসলো।প্রহরকে বললো,
–“তাহলে এখন ঘুমানো যাক।এখন যেহেতু প্রথম প্রথম,তাই একটু আনইজি লাগতে পারে।তুমি চাইলে মাঝে কোলবালিশ দিয়ে রাখতে পারো।”
প্রহর বললো,
–“আপাতত দুইটা রাখি।কিছুদিন পর একটা রাখবো!”
–“এর কিছুদিন পর একটা কোলবালিশ উধাও হয়ে দুইজন পাশপাশি থাকবো।কাছাকাছি!এরপর একদম কাছাকাছি!
আয়ুশের কথা শুনে প্রহর লজ্জা পেল।মনে মনে আয়ুশকে নির্লজ্জ বলে মাঝখানে দুইটা কোলাবালিশ দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
__
১ দিন পর,
বাড়িওয়ালাদের এংগেজমেন্টের ঝামেলা মিটে গিয়েছে।এখন প্রহর আর আয়ুশ বাসায়ই আছে। সন্ধ্যাবেলা হঠাৎই কলিংবেল বেজে উঠলো।প্রহর দরজা খুলতে গেলে আয়ুশ তাকে বাধা দিয়ে নিজে উঠে এসে দরজা খুলল।
সামনে থাকা ব্যাক্তিটিকে দুপলক দেখার পরই সে চিনে ফেলল। তড়িৎ গলায় প্রহরকে ডাকতে লাগলো,
–“প্রহর……! তাড়াতাড়ি এদিকে এসো!
আয়ুশের ডাক শুনে প্রহর দরজার সামনে যেতেই চমকে উঠলো।এ কাকে দেখছে সে!
সামনে থাকা ব্যাক্তিটি প্রহরের উদ্দেশ্য হাত বাড়িয়ে দিল। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অতি পরিচিত মুখটাকে হঠাৎ দেখতে পেয়ে প্রহর দৌড়ে গিয়ে তার বুকে মাথা রেখে তাকে জড়িয়ে ধরলো।
প্রহর ফুঁপিয়ে কান্না করতেই যাবে।তখনি ব্যাক্তিটি তার বুক থেকে প্রহরের মাথা উঠিয়ে প্রহরকে বললো,
“একদম না।অনেক কেঁদেছো তুমি!এখন থেকে আর কাঁদবে না!”
___
তিনদিন হয়ে গেল।প্রণয় আয়ুশ আর প্রহরকে খুঁজেই চলেছে। কিন্তু কোন সন্ধান পেলো না।
সে জানে প্রহরকে খুঁজে পেতে হলে আয়ুশের সন্ধান পাওয়াটা জরুরী।তাই সে আঁটঘাট বেঁধে প্রহর কে খুঁজতে নেমেছিল। কিন্তু এখন তো খুঁজেও পাচ্ছে না। কিন্তু প্রণয় হতাশ হলো না।
খুঁজতে খুঁজতে প্রণয় খুঁজে পেল আয়ুশের সেই বন্ধুকে যে আয়ুশকে ভাড়াবাসার ব্যাবস্থা করে দিয়েছিল।আয়ুশের সেই বন্ধুর থেকে বাসার ঠিকানা নিয়ে আজ প্রণয় এসে পৌঁছালো!
এখন তার সামনে তার বোন প্রহর দাঁড়িয়ে আছে।সে বোনের মুখে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।তার সেই ছোট্ট বোনটার বিয়ে হয়ে গিয়েছে।কত বড় হয়ে গিয়েছে তার বনুইটা।
–“আর কতোক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবেন ভাইয়া।ভিতরে আসুন!”
আয়ুশের কথায় প্রহরের খেয়াল হলো তারা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।
সে ভাইয়ের হাত ধরে ভাইকে বাসার ভিতরে নিয়ে এসে সোফায় বসালো।
আয়ুশ দরজা লাগিয়ে ভিতরে এসে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল।
প্রহর প্রণয়কে ফ্রেশ হতে বললে সে হাত মুখ ধুয়ে এলো।এসে হাত মুখ মুছে প্রহরের পাশে বসে পড়লো।
প্রণয়ের সাথে কথা বলার শুরুতেই প্রহর জিজ্ঞেস করলো,
“মা -বাবা কেমন আছে ভাইয়া?”
প্রণয় প্রহরের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
–“উনারা তোর সাথে এতো অন্যায় করেছে, তবুও তুই তাদের খোঁজ নিচ্ছিস?”
–“ উনাদের কথা জিজ্ঞেস করবো না কেন,উনারা তো আমার বাবা-মা। সন্তান কি পিতা-মাতার সাথে কখনো খারাপ আচরণ করতে পারে?যাই হোক পিতা মাতা আমার মাথার মুকুট। ছোটবেলায় এইটাই তো বলতে তুমি?তাই না ভাইয়া!”
–“তা বুঝলাম। কিন্তু উনারা তোকে অন্যায়ভাবে একটা ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছে,তুই কোনো প্রতিবাদ করিসনি কেন?আমি জানি আমার বনুই কখনো কোনো খারাপ কাজ করতে পারে না। কিন্তু তাই বলে তুই প্রতিবাদ ও করবি না?”
–“প্রতিবাদ করতে চেয়েছিলাম ভাইয়া। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে চুপ ছিলাম। কিন্তু তুমি কোথায় ছিলে তখন?”
প্রণয় আফসোসের সহিত হেসে বলে,
–“ কি আর বলবো বনুই।মা আমায় বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিল,বলেছিল প্রেমা বাড়িতে আসছে।ওর জন্য বাড়ির চাবি নিয়ে যেতে বলেছিল। কিন্তু গিয়ে দেখলাম প্রেমা নেই।আর আসার পর তো দেখলাম…..”
–“ আফসোস করো না ভাইয়া।যার সাথে বিয়ে হয়েছে মানুষটা কিন্তু অতোটাও মন্দ না।মন-মানসিকতা ভীষণ সুন্দর!
প্রণয় ভ্রু কুঁচকে বলে,
–“মাত্রই তো বিয়ে হলো।আর এই ক’দিনেই বুঝে গিয়েছিস?”
প্রহর লাজুক হেসে বলে,
–“সত্যিই ভাইয়া!মানুষটার মন ভীষণ সুন্দর!”
তখনি আয়ুশ একটা ট্রে করে চা আর কিছু নাস্তা নিয়ে চলে আসে।আসতে আসতে প্রহারের কথা শুনতে পায় সে।
আয়ুশ প্রণয়ের হাতে এক কাপ চা ধরিয়ে দেয়।তারপর প্রহরকে এককাপ দিয়ে নিজে এককাপ নেয়।বোনের স্বামীর এমন আন্তরিকতা প্রণয়কে মুগ্ধ করে।
আয়ুশ প্রণয়কে জিজ্ঞেস করে,
“তো কেমন আছেন ভাইয়া?”
–“ ভালো আছি,আপনি ভালো আছেন ভাইয়া?”
–“এইতো আছি!ভালোই! কিন্তু আপনি আমায় ভাইয়া বলে ডাকছেন কেন।আমি তো আপনার ছোট বোনের স্বামী”!
প্রণয় চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলে,
“ ছোট বোনের হাসবেন্ড হলেও আপনি আমার সমবয়সী প্রায়,তাই আর কি!”
–“ এটা বললে তো হবে না ভাইয়া।আপনি ভাইয়া ডাকলে পরে শ্যালক হিসেবে আপনাকে ট্রিট দিতে হবে!”
প্রণয় বলে,
–“ তো কি হয়েছে!ট্রিট দিতে পারবেন না?”
আয়ুশ খানিকটা লজ্জা পেল।বলল “না না!তেমনটা নয়।আসলে..!
প্রণয় সাথে সাথেই বলে উঠলো,
“না না ভাইয়া কিছু মনে করবেন না।আমি তো খানিকটা দুষ্টুমি করলাম আর কি। কিন্তু আপনি চাইলে আমরা দুইজন দুইজনকে তুমি করে ডাকতে পারি।যেহেতু বয়স প্রায় সেম সেম।”
–“আচ্ছা ভাইয়া!এখন থেকে তুমি বলেই ডাকবো!”
প্রণয় কিছু একটা ভেবে আয়ুশ কে বললো,
“তুমি আমাকে প্রণয় ব্রো বলে ডাকতে পারো ব্রাদার।ভাইয়া ডাকলে কেমন কেমন লাগে।আমি তোমায় ব্রাদার ডাকবো আর তুমি আমায় ডাকবে ব্রো।আমার ও ভাইয়া বলতে হবে না। তোমার ভাইয়া ডাক শুনেইও আনইজি লাগবে না।”
প্রণয়ের কথা আয়ুশের পছন্দ হয়।সে মুচকি হেসে মাথা নাড়ায়।
চা শেষ করে প্রণয় নিজের জায়গা থেকে উঠে আয়ুশের ঠিক পাশে বসে আয়ুশের হাত ধরে কেঁদে ফেলে।ঘটনার আকস্মিকতায় আয়ুশ ও প্রহর দু’জনেই বিব্রতবোধ করে।
প্রণয় কাঁদো কাঁদো গলায় বলে,
“আমার বোনকে সবসময় দেখে রেখো ব্রাদার।কখনো কষ্ট দিয়ো না।বোনটা আমার খুব চাপা স্বভাবের। নিজের দুঃখ কষ্টের কথা কখনো কাউকে বলে না।আমার বনুইটাকে তুমি একটু দেখে রেখো ভাই!”
প্রণয়ের কথা শুনে আয়ুশ প্রণয়ের হাত শক্ত করে ধরে।বোনের প্রতি ভাইয়ের এমন ভালোবাসা আয়ুশকে মুগ্ধ করে।সে বলে,
–“ আজ এক ভাই আরেক ভাইয়ের কাছে ওয়াদা করছে যে,সে তার ভাইয়ের বোনকে কখনো কষ্ট দিবে না।তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারো।”
–“ আমার কোনো ভাই নেই আয়ুশ।আজ থেকে তুমি আমার ভাই।আমাদের সম্পর্ক রক্তের নয় আত্মার!”
–“ হ্যাঁ আমার ভাই!তুমি আমার প্রণয় ব্রো!”
প্রণয় কান্না থামিয়ে বোনের দিকে তাকায়।প্রহরকে ইশারায় কাছে প্রহর এসে প্রণয়ের পাশে বসে।প্রণয় এক হাতে আয়ুশ ও একহাতে প্রহরকে ধরে কিছুক্ষণ বসে থাকে।
খানিকক্ষণ পরে পরিবেশ স্বাভাবিক হয়।তারা আরও কথা বলতে থাকে।কথার মাঝে প্রণয় ঠিক করে,আজ রাতে তারা বাইরে ডিনার করবে।হুট করে বোনের বাড়িতে এসে সে তার বোনের উপর খাবারের প্রেশার ফালাতে চায় না।
____
প্রেমা আজ বাড়িতে ফিরেছে।ভাইয়ের পাত্রী দেখায় সে উপস্থিত হতে পারেনি অদূরে মামার বাড়ি রাঙামাটি যাওয়ার কারণে।তবে প্রহরের সাথে কি হয়েছে,তা তার অজানা নয়।প্রণয় তাকে সব জানিয়েছে।ওইদিনই ফিরে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু একজনকে কে আর এতদূর থেকে কে নিয়ে আসবে।মামা ওইদিন ওকে রেখেই এখানে এসে পড়েছিলেন।আর প্রণয় ও যেতে পারেনি।তাই বাধ্য হয়ে প্রেমাকে ওইখানেই রয়ে যেতে হয়।আজ মামা তাকে নিয়ে এসেছে।কাজ থাকায় বাড়ির পথের একটা রিকশায় তাকে উঠিয়ে দিয়ে নিজের কাজে চলে গিয়েছে মামা।
প্রহর যেমন শান্ত,প্রেমা ঠিক তেমনই চঞ্চল!প্রহর যেমন মিষ্টি প্রেমা ঠিক তেমনি দুষ্ট। বাবা-মায়ের কাছে প্রহরের মতো অবহেলিত সে নয়। তবুও প্রহরকে খুব ভালোবাসে প্রেমা।মায়ের তাদের দুই ভাই-বোনকে একচোখে দেখার কারণ আর প্রহরকে অন্য চোখে দেখার কারণ এখন পর্যন্ত খুঁজে বের করতে পারেনি প্রেমা।মাকে বুঝালেও লাভ হয় না।তিনি প্রহরকে একদম দেখতে পারেন না।বোনের জন্য বড্ড মায়া হয় প্রেমার!
আজ বাড়ি এসেই গলা চড়িয়ে মাকে ডাকতে লাগে প্রেমা।প্রেমার গলার আওয়াজ শুনে সাবিনা বেগম এসে দরজা খুলেন।দরজার বাইরে প্রেমা মাকে কেমন আছে জিজ্ঞেস করলে মা ভালো আছ উত্তর দিলে প্রেমা ভিতরে ঢুকে।ভিতরে ঢুকেই প্রেমা জিজ্ঞেস করে,
–“প্রণয় ভাইয়া কই মা?”
প্রেমার প্রশ্ন শুনে সাবিনা বেগম বললেন,
–“ ও বাড়ি থেকে চলে গিয়েছে প্রহরিকা কে খুঁজতে!”
প্রেমা কাঁধে রাখা ব্যাগ সোফায় রাখতে রাখতে বললো,
–“প্রহুকে ভাইয়া পেয়েছে?”
–“ আমি কি জানি!”
বলেই রান্নাঘরের দিকে চলে গেলেন সাবিনা বেগম।
প্রেমা বুঝতে পারে না মা প্রহরের কথা শুনলেই এমন ব্যাবহার করেন কেন?এমন কেন মা!?
মা চলে যেতেই প্রেমা তার ব্যাগ থেকে ফোন বের করে।
ফোন হাতে নিতেই তার মনে পড়ে,প্রহর তার থেকে ২ বছরের বড় হওয়া সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত তাকে ফোন দেওয়া হয়নি।আর প্রেমা একবার চাইতেই পেয়ে গেল।
দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ছাড়ে প্রেমা।
তারপর ফোনটা হাতে নিয়ে কাউকে কল দেয়।তিনবার রিং হতেই ওপাশ থেকে রিং কেটে গিয়ে কল আসে।প্রেমা সাথে সাথে রিসিভ করে ওপাশে থাকা ব্যাক্তিকে বলে,
–“ আমি তোমার সাথে যাবো।তোমার জন্য বাড়ির পিছনের রাস্তায় অপেক্ষা করবো।যেখানেই থাকো না কেন,তোমায় আমাকে নিয়ে যেতে হবে!”
চলবে……