#আয়ুর_প্রহর
#পর্ব_১৩
#আয়িশা_নুর_তৃষ্ণা
_____
অনীতা লুকিয়ে লুকিয়ে তার বাবা মায়ের সব কথা শুনে ফেলে।শুনে ফেলে তার বাবা মায়ের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র।তার বাবা মা কাউকে খু’ন করতে চাইছে।এবং যার বিরুদ্ধে এসব ষড়যন্ত্র করছে তার নাম পলাশ,সে অনীতাদের বাড়িতে বহুবছর আগে কাজ করতো।
এই অতি গোপন ও ভয়ংকর পরিকল্পনা শুনে অনীতার হাত-পা যেন শিরশিরিয়ে উঠলো।যখন বুঝলো বাবা মায়ের কথা বলা শেষ তখন সে পর্দার আড়াল থেকে সরে নিজের রুমে চলে গেলো।
পরদিন সকালে সে আয়ুশ কে ফোন করে সব জানালো।নিজের বাবা মাকে চিনতে না পারলেও নিজের ভাইকে খুব ভালো জানে অনীতা।আয়ুশের মন মানসিকতা একদম ভিন্ন ও পবিত্র।তাইতো নিজের বাবা মায়ের জঘন্য পরিকল্পনা সম্পর্কে আয়ুশ কে অবগত করতে তাকে সব গোগ্রাসে বলে দিলো অনীতা।
__
এইদিকে আয়ুশ বহুদিন ধরেই পলাশের খোঁজ করছিল।অনেক লোক লাগিয়ে রেখেছিল পলাশকে খোঁজার জন্য।কেননা,আয়ুশ ছোটবেলায় নিজ চোখে তার বাবাকে অন্যায় করতে দেখেছিল।ওইসময় ভয় পেয়েছিল বিধায় আয়ুশ কাউকে কিছু বলতে পারেনি।আর এখন পুরোনো কথা তুললে কেউ কিছু বিশ্বাস নাও করতে পারে।তাই বহুবছর আগে ঘটে যাওয়া ওই অপরাধের জন্য একজন শক্তপোক্ত প্রমাণের দরকার।আর সেই প্রমাণ হলো একজন সাক্ষী।আর তিনি হলেন পলাশ।
আয়ুশ আর প্রহর যেদিন ফ্ল্যাট গুছিয়েছিল,ওইদিন হঠাৎই আয়ুশের একজন ইনফর্মার তাকে ফোন করে যে,পলাশকে পাওয়া গিয়েছে।সংবাদ পাওয়ামাত্রই ওইদিন রাতে প্রহরকে রেখে আয়ুশ সেখানে চলে যায়।সেখানে গিয়ে সে পলাশকে দেখে।
প্রথমে আয়ুশ কে দেখে পলাশ চিনতে পারেনি।কেননা,পলাশ যখন শেষবার আয়ুশকে দেখে তখন আয়ুশ খুব ছোট ছিল।
পলাশ আয়ুশের পরিচয় পাওয়ামাত্রই ভয় পেয়ে পালিয়ে যেতে চায়। কিন্তু আয়ুশ তাকে ধরে ফেলে।পলাশকে অতীতের ঘটনা স্নরণ করায়।তারপর বলে,
-“ দেখুন পলাশ চাচা।অতীতে মিস্টার শামসুজ্জামান একটা জঘন্য অপরাধ করেছিলেন। বাহ্যিকভাবে ওই অপরাধের সঙ্গ না দিলেও বাস্তবিকভাবে আপনি কিন্তু উনার অপরাধের সঙ্গ দিয়েছিলেন।আপনি কি তা অস্বীকার করতে পারবেন?”
পলাশের চোখে ভয় ফুটে উঠে।সে বলে,
-“ এসব তুমি কি বলছো বাবা?এমন কিছুই করিনি আমি।”
-“ আমি জানি চাচা।”
-“ কিছুই জানো না তুমি।ওইসময় তুমি ছোট ছিলে, তাছাড়া তুমি কিছুই দেখোনি।”
-“ না চাচা। আমি ছোট হলেও আমি কিন্তু সবকিছুই দেখেছিলাম।আমার কাছে কিছু এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না”।
পলাশ এবার ঘাবড়ে যায়।উত্তেজিত হয়ে বলে,
-“ আমি কিছুই জানি না।ওই বিষয়ে আমায় কিছুই জিজ্ঞেস করবে না।”
একটা চেয়ারে এক পা তুলে বসেছিল আয়ু্শ।পলাশের এহেন কথা শুনে আয়ুশের মেজাজ ও এবার গরম হয়ে যায়। তবুও সে নিজেকে সংযত রেখে পা নামিয়ে পলাশের সামনে গিয়ে বলে,
-“ আপনি আমার মায়ের খুব স্নেহের ছিলেন পলাশ চাচা।তাই এখনো আপনাকে সম্মান করছি।আর কিছু না হলেও আপনার আহানা আপার কথা মনে করুন।আশা করছি আপনি সব জেনে যাবেন।”
আয়ুশের মুখে আহানা আপা নাম শুনে পলাশের দু চোখে পানি ভরাট হয়।সে মনে করে এক স্নেহময়ী বোনের কথা।নিজের বোনের খু’নীকে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে চলে এসেছিল সে!এতো চরম অকৃতজ্ঞ পলাশ!
সে অশ্রুসিক্ত চোখে আয়ুশের দিকে তাকিয়ে বলে,“বলো!কি জানতে চাও।”
-“ মিস্টার শামসুজ্জামানের অপরাধের সাথে আপনার সাথে আপনি কিভাবে যুক্ত জানতে চাচ্ছেন না?আমি বলছি, শুনুন।
আপনি চাইলেই পারতেন উনাদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে সাক্ষ্যপ্রমাণ দিতে। কিন্তু আপনি উনাদের সাথে তাল মিলিয়েছেন।উনাদের থেকে টাকা নিয়ে আপনি চলে এসেছেন। টাকার কাছে নিজের মানবতাকে বিক্রি করে দিয়েছেন।টাকার কাছে আপনার “আহানা আপা”র খুনিদের বিক্রি করে দিয়েছেন।এইভাবেই আপনি উনাদের সাথে যুক্ত!বুঝতে পেরেছেন? আচ্ছা পলাশ চাচা,এমনটা কিভাবে করতে পারলেন আপনি?”
এবার যেন পলাশের মনে কেউ হাতু’ড়ি পেটালো।পলাশ ভীতু চোখে বলে,
-“ আমি জানতাম বাবা,একদিন তুমি ঠিকই আমার কাছে আসবে।তুমিই ওই ঘটনার শেষ দেখে ছাড়বে।”
আয়ুশ কিছুই বললো না।
তারপর পলাশ চাচা জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলেন। শান্ত পরিবেশে উনি বলতে শুরু করলেন,
-“ ওইদিন আমি সব দেখে ফেলার পর শামসুজ্জামান স্যার আমার মুখ বন্ধ করার জন্য আমাকে টাকা দিয়েছিলেন ।আমিও টাকা নিয়েছিলাম ঠিকই।আমি জানতাম পুলিশ দিয়ে কাজ হবে না। পুলিশরা বড়লোকদের কথায় উঠে বসে বেশি।আমার কথা তারা কেউই শুনতো না।তাই আমি চিন্তা করেছিলাম কাউকে কিছু বলবো না।টাকা নিয়ে সোজা নিজের গ্রামের বাড়িতে যাবো,তারপর কিছু গু’ন্ডা নিয়ে আহানা আপার হ’ত্যার বিচার করবো। কিন্তু বাড়িতে আসতেই বাপ ধরে আমার বিয়ে করিয়ে দিল।বউ নিয়ে কিছুদিন পেরোতেই তার পেটে বাচ্চা এলো।আমার সন্তান হলো।
ততদিন আমার হাতে পুরো টাকাটাই ছিল।সাথে প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছাও ছিল প্রচুর। কিন্তু যখন আমার সন্তান হলো,তার জীবন পড়লো শংকায়।তার জন্মের শুরুতেই হার্টের সমস্যা ধরা পরেছিল।ওইসময় চিকিৎসা করাতে গিয়ে অস্তে আস্তে আমার সব টাকা শেষ হয়ে যায়।ছেলে ভালো হয়।
এর কিছুদিন পর শামসুজ্জামান স্যারের সাথে আমার আবার দেখা হয়।উনি আমায় আবার হুমকি দেন।কাউকে কিছু বললে আমার বউ বাচ্চাসহ আমায় শেষ করে দিবেন বলে হুমকি দেন।
বিশ্বাস করো বাবা,নিজের জীবন নিয়ে আমার কোনো চিন্তা ছিল না।আহানা আপার জন্য আমি নিজের জান দিতে পারতাম। কিন্তু আমার বউ-বাচ্চা!তারা তো কোনো দোষ করেনি।তাদের ক্ষতি আমি করতে পারিনি রে বাবা।আমায় ক্ষমা করে দিয়ো ”!
বলেই ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন পলাশ।আয়ুশ পলাশের মুখশ্রীর দিকে তাকালো।এই মুখে একটু আগেও যে পাপের লেশ দেখেছিল,তা যেন পলাশ চাচার অনুতপ্ত হওয়ার কান্নার ছোঁয়ায় উধাও হয়ে যাচ্ছে।
আয়ুশ পলাশ চাচাকে অনেকক্ষণ বুঝালো।সে বললো,সে তার বাবার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে চায়।তার জন্য পলাশ চাচার সাহায্য ও সাক্ষ্যের প্রয়োজন হবে।
পলাশ চাচা রাজি হলেন।আয়ুশ পলাশ চাচাকে প্ল্যান বুঝিয়ে দিলেন।আয়ুশ ওইদিন রাতেই একটা চাল চাললো।পলাশকে দিয়ে মিসেস শেহনাজের নাম্বারে ফোন করে তাদের থেকে আবার টাকা চাইলো। ঘটনাটা এমনভাবে সাজালো যেন মনে হয়,পলাশ হঠাৎ আবির্ভাব হয়েছে তাদের ব্ল্যাকমেইল করে তাদের থেকে টাকা নেওয়ার জন্য।
নিজের বাবা মিস্টার শামসুজ্জামানকেও আয়ুশ বেশ ভালোভাবেই চিনে।তিনি কতোটা ধুরন্ধর তা আয়ুশ জানে। তাই বেশ সুক্ষ্মভাবেই চালটা চাললো সে।
পলাশ চাচা মিসেস শেহনাজ অর্থাৎ আয়ুশের সৎমাকে ফোন দিয়ে টাকা চাওয়ার বাহানায় আগের কথা তুললো।এতো বছর পর নিজেদের পাপের সাক্ষী পুরোনো এক চাকরের ব্ল্যাকমেইলে মিসেস শেহনাজ ভয় পেয়ে গেলেন। কিন্তু তা পলাশকে বুঝতে না দিয়ে নিজেই পলাশকে ধমকাতে লাগলেন। কিছুক্ষণ কথা বলার পর শেহনাজ বেগম নিজেই ফোন রেখে দিলেন।
শেহনাজ বেগম ফোন রাখার পর আয়ুশ অনীতাকে ফোন দিল।ওইসময় অনীহা সজাগ থেকে মা-বাবার সব কীর্তিকলাপ দেখেছিল বিধায় সবকিছু সাথে সাথেই জেনে ফেললো আয়ুশ।বুঝলো,প্ল্যান সঠিক দিকেই এগুচ্ছে।
__
ওইদিন কথা বলার পর মিসেস শেহনাজ পলাশকে উনার সাথে উনার বাড়িতে দেখা করতে বলে।আর বলে উনার সাথে দেখা করলে তবেই পলাশকে টাকা দিবে।এই সুযোগেরই অপেক্ষা করছিল আয়ুশ।মিসেস শেহনাজ যেন পলাশকে নিজের বাড়িতে ডাকে এমনটাই চাইছিলো সে।
এই ঘটনার পর আরো প্ল্যান হলো। আয়ুশ পলাশ চাচাকে আরও অনেক কিছুই বুঝিয়ে দিলো।সাথে বললো, আগ বাড়িয়ে কোনো কাজ না করতে।
কিন্তু পলাশ চাচা!তিন বাঁধা মানলেন না।এতোবছর ধরে মিস্টার শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে তার মনের যে ক্ষোভ তিনি আড়াল করে রেখেছিলেন, শুধুমাত্র শক্তপোক্ত মানবশক্তির অভাবে যে কাজ তিনি করতে পারছিলেন না।আজ আয়ুশকে দেখে তিনি যেন বল পেলেন।পেলেন পূর্ণোদ্যম শক্তি!
পাঁচদিন অপেক্ষা করার পর পলাশ চাচা আর নির্দিষ্ট দিনের অপেক্ষা করতে পারলেন না।তিনি আগেভাগেই মিসেস শেহনাজের সাথে দেখা করবেন বলে ঠিক করলেন। কিন্তু তা আয়ুশকে বলার সাহস পেলেন না। শুধু ওই বাড়িতে যাওয়ার দিন রাত ১:০০ টার পর আয়ুশের ডিপার্টমেন্টে জানিয়ে দিলেন,তিনি মিসেস শেহনাজের সাথে দেখা করতে যাচ্ছেন।
ডিপার্টমেন্টের অনেকেই পলাশ চাচাকে খোঁজার বিষয়টি জানতো।আর আয়ুশ পলাশ চাচাকে খুঁজে পাওয়ার পর উনাকে অফিসে নিয়ে এসে কয়েকবার সিক্রেট প্ল্যানিং ও করেছে।এগুলো সবাইই দেখেছে।পলাশকে আয়ুশের সাথের কিছু অফিসার ইতিমধ্যেই চিনে ফেলেছেন।
তাই অফিসে পলাশের থেকে পাওয়া কলে এমন তথ্য পাওয়ার পরপরই এক অফিসার ক্রাইম ব্রাঞ্চের হেড অফিসার মিস্টার পারভেজ আনোয়ারকে ফোন দিয়ে উক্ত সংবাদ দেন।
পলাশের এই না বলে ও বাড়িতে চলে যাওয়ার সংবাদ পাওয়ার পর আয়ুশ রাগান্বিত হবেন এইটা পারভেজ আনোয়ার জানেন। কিন্তু তিনি এতো রাতে আয়ুশকে রাগিয়ে দিতে চান না।তিনি চান,আয়ুশ ঠান্ডা মাথায় সব ভাবুক।তাই তিনি ফোন দিয়ে আয়ুশ কে ডেকে ঠান্ডা মাথায় সব বুঝানোর সিদ্ধান্ত নিলেন।এবং বুঝালেন ও।
সেই রাতেই আয়ুশ ও আরও কয়েকজন অফিসার মিস্টার শামসুজ্জামানের বাড়ির দিকে রওয়ানা হলেন। যেতে যেতে আয়ুশ পলাশ চাচাকে মেসেজ দিলো,
-“ কোথায় আছেন চাচা”!
মেসেজ সিন হলো না।আয়ুশ পলাশ চাচাকে ফোন দিল।রিং ক্রমাগত বাজতে লাগলো।
বাড়ির কাছাকাছি গিয়ে আয়ুশ সব অফিসারকে বাইরে থাকার আদেশ দিয়ে নিজে বাড়ির পিছনের দেয়ালে চড়ে বাড়িতে ঢুকতে লাগলো।কেননা,বাড়িতে দুইজন সিকিউরিটি গার্ড কে সে দেখেছে। তাছাড়া বাড়ির সামনের দিকে সিসি ক্যামেরা ও আছে।
আয়ুশের ও অবশ্য পিচ্ছিল রাস্তায় যেতে সমস্যা হচ্ছিল।তবে প্রায়শই এসব কাজ করার দরুন এসব কাজে অভ্যস্ত থাকায় পাঁচিল টপকাতে তার অতোটাও বেগ পেতে হয়নি।
আয়ুশ বাড়ির পিছনে ঢুকে বাড়ির পিছনে থাকা একটা ছোট্ট ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে থাকলো।
আয়ুশের অনেকক্ষণ ফোন দেবার দরুন ফোনের রিংটোনে পলাশ চাচার ঘুম ভাঙলো।তিনি উঠে দেখলেন আয়ুশের মোট ৪০ টা মিসডকল রয়েছে। এতগুলো কল দেখে অজানা কিছুর আশঙ্কা তার বুক চেপে ধরলো।তিনি ভয়ে ভয়ে আয়ুশ কে ফোন দিলেন।
আয়ুশ যেন ফোনের অপেক্ষায়ই ছিল।ফোন ভাইব্রেশন থাকলেও ফোনের আলো জ্বলতে দেখে আয়ুশ ফোন থেকে করতেই দেখলো পলাশ চাচা কল দিয়েছে।সে রিসিভ করে সাথে সাথে আওয়াজ নিচু করে বললো,
-“ পলাশ চাচা,আপনি ঠিক আছেন তো?”
-“ হ্যাঁ বাবা!ঠিকই তো আছি!”
-“ আপনি এখান কোথায়?”
-“ কেন বাবা আমার বাড়িতে,আমার রুমে। কিছু হয়েছে বাবা?”
পলাশ চাচার কথা শুনে আয়ুশ হতভম্ব হয়ে পলাশ চাচাকে বললো,
-“ আপনি আপনার বাসায়?তাহলে অফিসে ফোন দিয়ে বললেন কেন যে,আপনি আজকে মিস্টার শামসুজ্জামানের বাসায় মিসেস শেহনাজের সাথে দেখা করতে এসেছেন?”
আয়ুশের কথা শুনে পলাশ চাচা করুণ স্বরে বললেন,
-“ প্রতিশোধের আগুন আমার বুকে এখনো জ্বলছে রে বাবা।আমি শান্তিতে থাকতে পারছি না।তাই ভেবেছিলাম,তোমাকে না বলে আজকেই দেখা করতে যাবো।যত বৃষ্টিই হোক যাবো।তাই রাত ১:০০ টায় অফিসে মেসেজ দিয়েছিলাম।এমনকি ওই কালসাপ মহিলাকে দিনেই ফোন দিয়ে বলেছিলাম,আমি আজকে রাতেই দেখা করতে যাবো। কিন্তু এরপর আমাদের এইদিকে এতো তুফান হলো যে আমি আর যেতেই পারিনি।তোমার কথা না মানার জন্য আমায় ক্ষমা করে দিয়ো আয়ুশ।”
পলাশ চাচার কথা শুনে আয়ুশের ইচ্ছে হলো পলাশ চাচাকে কয়েকটা কড়া কথা শুনিয়ে দিতে।একে তো পলাশ চাচা এমন পাকনামি করতে গিয়েছিলেন ।এখন আবার ওই পাকনামির খেসারত স্বরুপ আয়ুশকে রিস্ক নিয়ে এই বাসার ভিতরে আসতে হয়েছে।
কিন্তু আয়ুশ পলাশ চাচাকে কিছুই বললো না।মেজাজ ঠান্ডা রাখলো।হতে পারে এখন পলাশ চাচাকে এমন কড়া কথা বলতে উনার মত পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে।উনি আয়ুশ কে আর সাহায্য নাও করতে পারেন।তাই আয়ুশ পলাশ চাচাকে কিছু হয়নি আর ঘুমিয়ে পড়ুন বলে ফোন রেখে দিল। পাশাপাশি অফিসারদের মেসেজ করে বলে দিল,এখানে আর কোনো সমস্যা নেই।উনারা যেন নিশ্চিন্তে থাকেন।
এবার আয়ুশের বাড়ি থেকে বের হওয়ার পালা।যেদিক দিয়ে এসেছে ওইদিক দিয়ে অর্থাৎ বাড়ির পিছনের পাঁচিল টপকে বাইরে যাবে এমনটা ভেবে ছোট্ট ঝোপ থেকে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো আয়ুশ।
কিন্তু ঝোপ থেকে বের হওয়ার আগে আশেপাশ ভালো করে পরখ করে নিতে চাইলো সে।কেননা পলাশ চাচা যে আসবেন না এটা এখানের কেউ জানে না।তাই পলাশ চাচার আসার কথা শুনে হয়তো মিস্টার শামসুজ্জামান এখানে সেখানেই লুকিয়ে আছেন। অন্ধকারে দূরে থেকে কাউকে তেমন ভালো যাচ্ছে না।হয়তোবা পলাশ ভেবে আয়ুশকেই গুলি করে দিতে পারেন তিনি।এটাও অসম্ভবের কিছুই নয়।
এমনটা ভেবে আশেপাশে চোখ বুললো আয়ু্শ।না তেমন কিছুই নেই।
কোনো রিস্ক নেই দেখে আয়ুশ যখনই ঝোপ থেকে বের হতে যাবে,তখনি তার চোখ পাঁচিলের দিকে আটকালো।কে নেমে হেঁটে আসছে এইদিকে?কে এটা…?অনীতার ঘরের দিকে যাচ্ছে কেন?
আঁধারে চোখ সয়ে এসেছে বিধায় তাকে দেখেই চিনতে পারলো আয়ুশ।আরে এটা তো প্রণয়! কিন্তু প্রণয় এখন এখানে এসেছে কেন?
আয়ুশ ভেবে শেষ করতে পারলো না।এমন সময় দেখলো দুইতলার বড় ব্যালকনিতে মিস্টার শামসুজ্জামান বন্দুক হাতে নিয়ে নিশানা তাক করছে প্রণয়ের দিকে।আয়ুশ বুঝতে পারলো তাকে কি করতে হবে।অনীতার ঘরের পিছনেই আয়ুশের লুকিয়ে থাকার ঝোপ ছিল।তাই আয়ুশের কাজটা করতে আরো সুবিধে হলো।
সে প্রণয়ের পা ধরে হেঁচকা টান দিতে চাইলো। কিন্তু তা করতে পারলো না।তাতে বিপদ বাড়বে বৈ কমবে না।উল্টো আয়ুশকেও গু’লি করে দিতে পারে মিস্টার শামসুজ্জামান। কিন্তু এখন প্রণয়ের জীবন বাঁচানোই গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে আয়ুশের কাছে।তাই গু’লি আসার আগেই প্রণয়কে ইশারা করে এখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে যেয়ে দাঁড়ালো আয়ুশ। কিন্তু তার আগেই প্রকাণ্ড শব্দে গুলির আওয়াজ হলো। সঙ্গে সঙ্গেই প্রশিক্ষণরত অফিসারের ন্যায় প্রণয়কে হেঁচকা টান দিয়ে জানালার দিকে ঠেলে দিলো আয়ুশ।আর নিজে গড়িয়ে গেল অন্যদিকে।গু’লি একটুর জন্য তার পাশ কাটলো না।মাটি ফুঁড়ে নিচে চলে গেল।
ট্রিগারে চাপ দেওয়ামাত্র জোরেশোরে একটা আওয়াজ হলো।আওয়াজ শুনে মিস্টার শামসুজ্জামান নিজের ভুল বুঝতে পারলেন। এতোক্ষণে উনার সম্বিত ফিরলো। সাইলেন্সার লাগাতে ভুলে গিয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু যা হওয়ার তা তো হয়েই গিয়েছে।যে লোকটা ভিতরে এসেছে,তার গায়ে গু’লিটা লাগতে পারলেই হয়েছে।এই ভেবে নিচে তাকাতেই দেখলেন,কেউ একজন গড়িয়ে অন্যদিকে যাচ্ছে।উনি ভাবলেন,এটা হয়তো পলাশ।শেষবারের জন্য পলাশকে দেখতে নিচে যেতে লাগলেন তিনি।
এমন সময় অনীতার জানালায় আবার ঠকঠক আওয়াজ হলো।
চলবে…….