আয়ুর প্রহর পর্ব-১৮+১৯

0
1259

#আয়ুর_প্রহর
#পর্ব_১৮
#আয়িশা_নুর_তৃষ্ণা
___
(কপি করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ)

প্রহর বিছানা থেকে নেমে আয়ুশের হাত ধরে আয়ুশকে এনে বিছানায় বসালো।তারপর নিজে ফ্লোরে বসে আয়ু্শের হাঁটুর উপর আয়ুশের দু’ হাতের ভাঁজে নিজের হাত রাখলো।তার চোখ ছলছল করছে।ছলছল চোখেই আয়ুশকে জিজ্ঞেস করলো,
-“ একটা কথা বলি?”
-“ বলো?”
-“ আয়ু ছাড়া মানুষ বাঁচে?”
-“ একদমই না।”
-“ তবে আমি আমার আয়ু ছাড়া কিভাবে বাঁচবো?বলুন!”

প্রহরের এমন কথা শুনে আয়ুশ প্রহরের দিকে অবাক নেত্রে তাকিয়ে থাকে। প্রত্যুত্তর হিসেবে করে প্রশ্ন,
-“ তোমার আয়ু ছাড়া মানে…..
প্রহরের চোখে অশ্রুকণার ফোঁটা স্পষ্ট। আয়ুশের দু হাত আরও শক্ত করে ধরে আবেগপ্রবণ গলায় বলে উঠলো,
-“ আপনিই তো আমার আয়ু!আমার নিঃশ্বাস!আমার অক্সিজেন।আপনার কিছু হয়ে গেলে আমি কি করে বাঁচবো বলুন!”
আয়ুশ চকিত নয়নে প্রহরের দিকে তাকায়।এই মেয়েটা তাকে এতো এফোর্ট দেয় কেন!মেয়েটার প্রতিটা কথায় সে এমনভাবে মিশে থাকে,গল্পের আসল লেখিকা তুশিতা নুর তৃষ্ণা যেন সে শুধুই আয়ুশের!

নিজের আবেগকে সংবরণ করে আয়ুশ প্রহরের দিকে তাকিয়ে অবাক কন্ঠে বলে,

-“ এমন বলছো কেন?আমার কী হবে?”
-“ আমি সব জেনে গিয়েছি।আমি জানি আপনি কি কাজ করেন।”

আয়ুশ প্রহরকে কিছু বলতে যাবে,তার আগেই প্রহর বলে উঠে,
“ আমাকে কিছু বলবেন না প্লিজ।আমি গতকাল ঘর গুছাতে গিয়ে আপনার কাপড়চোপড় ভাঁজ করতে যাই।তখনি শার্টের ভাঁজ থেকে একটা কাগজ বেরিয়ে আসে।যেটাতে আপনার জয়েনিং লেটার এর কপি ছিল।ওইটা দেখেই আমি বুঝে ফেলি।আমাকে ক্ষমা করে দিবেন প্লিজ।আমি জানতাম না ওইখানে আপনার গোপন তথ্য থাকবে!”
মাথা নিচু করে বলে প্রহর।

-“ ধুর বোকা!ক্ষমা চাইতে হবে কেন?দেখেছো,ভালোই হয়েছে।
আর হ্যাঁ,আমি জানি তুমি দেখে ফেলেছো।আসলে ওইদিন জয়েনিং লেটারের সাথে কিছু কাগজ কপি করিয়েছিলাম‌।একটা কাজে লাগতো।আমার সিক্রেট সবকিছু একটা লকারে রেখে দিলেও জয়েনিং লেটারের একটা কপি শার্টের ভাঁজে লুকিয়ে রেখে দিয়েছিলাম।আশা রেখেছিলাম,তুমি এটা দেখবে ,পড়বে। কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি পড়বে তা ভাবিনি।
গতকাল শার্টটা ধরার পর আমি বুঝে যাই,এটা কারো হাতে পড়েছে।কেননা,আমি শার্টটা উল্টো করে ভাঁজ করে রেখেছিলাম।আর যখন বাড়ি ফিরে শার্টটা দেখলাম,তখন দেখি ভাঁজটা সম্পুর্ন ঠিকঠাক।
তুমি যদি কি কাগজটা না দেখতে তবে আমিই তোমাকে জানাতাম।আজকের কাজটা শেষ হয়ে গেলেই সব খোলাসা করে বলতাম। কিন্তু তুমি তো জেনেই গেলে।”

আয়ুশের কথা শুনে প্রহর জিভ কাটলো। সত্যিই তো।গতকাল ওই শার্টটা থেকে কাগজটা পড়ার পর কাগজটা সুন্দর করে আগের মতো রাখলেও ভুলবশত শার্টটা ভাঁজ করে ফেলেছিল প্রহর গল্পের আসল লেখিকা তুশিতা নুর তৃষ্ণা তাইতো গতকাল আয়ুশ তাকে জিজ্ঞেস করেছিল,রুমে কেউ এসেছে কী না!গতকালের প্রশ্নের মানে এখন বুঝতে পারলো প্রহর।

মনে মনে নিজেকে বকা দিতে গিয়েও থেমে গেলো প্রহর।এখন আয়ুশকে থামাতে ইচ্ছে হচ্ছে তার ।তাই সে বললো,

“ আপনি যাবেন না প্লিজ।আমি জানি আপনি একজন তুখোড় ক্রাইম অফিসার। এইজন্য আপনাকে ক্রাইম স্পেশালিস্ট এর উচ্চপদে যোগদান করার লেটার দেওয়া হয়েছে।অন্যান্য অফিসাররা যেখানে অনেক সাবধানতা অবলম্বন করে অ্যাকশন নেয়,সেখানে আপনি রিস্ক নিয়ে সরাসরি অ্যাকশন নেন।এটা কী ঠিক বলুন?আমি চাই না আপনি কোথাও যান।আমি চাইনা আপনি কোনো রিস্ক নিন।আপনার কোনো ক্ষতি হোক আমি চাই না।আপনাকে কোনো ঝুঁকিতে পা বাড়াতে দিতে চাইনা আমি।প্লিজ আপনি কোথাও যাবেন না।প্লিজ”
আকুতি ঝরে পড়লো প্রহরের কন্ঠে।

প্রহরের কথা শুনে আয়ুশ তপ্ত শ্বাস ফেললো।এমনটা হওয়ারই ছিল।যেকোনো মেয়েই তার স্বামীর এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে এরকম ব্যাবহার করবে স্বাভাবিক।কিন্তু প্রহরের আকুতিতে সে গললো না। সে চায়,তার প্রহর স্ট্রং হোক।নিজের মনকে নিজে শক্ত করুক।সে চায় তার প্রহর কোনো কষ্টসাধ্য সময়েও কঠিন থাকুক।তাই প্রহরের হাতের ভাঁজ থেকে নিজের হাত সরিয়ে বললো,

“ এমনটা কখনোই হবে না প্রহর।আমি আমার কাজ,আমার দ্বায়িত্ব থেকে কখনোই সরে যাবো না।যারা গোপনে অপরাধ করে,যে সকল অপরাধীরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপরাধ করেও নির্ভয়ে বুক ফুলিয়ে চলাফেরা করে,আমি তাদের শাস্তি দিবো প্রহর। এদেশে আইনের থেকে অনেক অপরাধী ছাড় পেয়ে যায়।আমি তাদের শাস্তি দিবো।নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার চেয়ে এমন রিস্ক নিয়ে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া ভুল কিছু নয় প্রহর।তাছাড়া আজকে আমি যেই জায়গায় যাবো,ওইখানে আমার খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ আছে।”

-“ আজ না গেলে হয় না?”
-“ একদম না।
-“ কি এমন কাজ আপনার যে এভাবে বলছেন।”

প্রহরের কথার জবাবে আয়ুশ বড় একটা নিঃশ্বাস নিজের মধ্যে টেনে নিয়ে বললো,
-“ আজকের দিনটি,আজকের কাজটি আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রহর।ছোট থেকে যার প্রতি ঘৃণায় আমার বুক রি রি করতো,তাকে আজ আমি শা’স্তি দিতে যাবো প্রহর।আমার মায়ের সাথে হওয়া অন্যায়ের শাস্তি আমি তাদের দিবো।ছোট থেকে দেখা স্বপ্ন আজ বাস্তবায়ন করবো প্রহর।”

আয়ুশের কথা তেমন করে না বুঝলেও এতটুকু বুঝলো প্রহর যে,আজকে আয়ুশ খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজে যাচ্ছে। কিন্তু তাও…
প্রহর কেঁদে ফেললো।আয়ুশ প্রহরের ভেজা গালে দুই হাত রেখে চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বললো,

-“ এমন করে বললে হবে প্রহর।জানো, এইজন্যই আমি বিয়ে করতে চাইনি কখনো। কিন্তু তোমার সাথে যখন আমার জুড়ি বাঁধলো তখন তোমাকেই আমি আমার করে নিয়েছি।আমি জানি তুমি খুব নরম মনের মেয়ে, কিন্তু তোমাকে এখন থেকে স্ট্রং হতে হবে প্রহর।যেকোনো পরিস্থিতিতে তোমার মনকে শক্ত রাখতে হবে।তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী প্রহর।আমার অর্ধেক শক্তি,মনোবল তুমি।তুমি যদি নিজেকে ঠিক রাখতে পারো তাহলে দু’জনে মিলে হাজার পথ পাড়ি দিতে পারবো।তুমি কী আমায় আটকাবে প্রহর?
আজকে না গেলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।এতোবছর ধরে মনে মনে যা কল্পনা করেছিলাম,তা সত্যি হবে প্রহর।তুমি কী আমার পাশে থাকবে না?মনোবল হারিয়ে আমাকে কষ্ট দিবে প্রহর?”

প্রহর মাথা দুদিকে করে না বলে মাথা নাড়ালো।নিজের আয়ুকে কী কেউ কখনো কষ্ট পেতে দেয়।প্রহর তো তার আয়ুকে নিয়ে ভালোভাবে বাঁচতে চায়।নিজের আয়ুকে কষ্ট দেওয়ার প্রশ্নই আসে না প্রহরের।তাই নিজের মনকে শক্ত করে সে আয়ুশ কে যেতে দিল।

চলবে….

#আয়ুর_প্রহর
#পর্ব_১৯
#আয়িশা_নুর_তৃষ্ণা
__
(কপি করা সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ)

নিশুতি রাত।চারদিকে আঁধারে আঁধার ভরপুর।এই আঁধারের মধ্যিখানে নিজের তিনতলা ডুপ্লেক্স বাড়িটার দোতলায় নরম বেদিতে শুয়ে নির্ভয়ে,বিনা শঙ্কায় নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন মিস্টার শামসুজ্জামান।

হঠাৎই সদর দরজা থেকে কলিংবেলের শব্দ এলো ।একবার নয়,দু-বার নয় পরপর এগারোবার। এতোবার করা কলিংবেলের আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল মিস্টার শামসুজ্জামান এর পাশে থাকা মিস্টার শেহনাজ পারভীনের।শেহনাজের ঘুম বরাবরই খুব পাতলা। তবুও আজ বেঘোরে পড়ে ঘুমাচ্ছিলেন।তাই নিচতলার সদর দরজার কলিংবেলের তার কানে একটু দেরীতেই পৌঁছেছে।

আওয়াজ শুনে বালিশের পাশে রাখা ফোনের সাইড বাটনে চাপ দিয়ে দেখলেন,রাত বাজে ১:০০ টা।এতো রাতে কে দরজায় কড়া নাড়বে?কী প্রয়োজন?উনি কি দরজা খুলতে যাবেন?

আজ বৃহস্পতিবার।বাসায় চাকর- বাকর কেউ নেই।সবাইকে দুই মাস পর পর বুধবারে বিকেলে ছুটি দেওয়া‌ হয়। শুক্রবার সকালে সবাই চলে আসে।এমন নিয়ম করা হয়েছে এইজন্য, যেন তারা ছুটিও পায় আবার শুক্রবারে এসে জমে থাকা কাজ করতে পারে।

বাসায় তিনি আর শামসুজ্জামান ছাড়া বাকি আছে শুধু অনীতা।সে বাসায় থেকেও না থাকার মতো।রাতে নিজের রুম থেকে বের হতে মিস্টার শামসুজ্জামান নিষেধ করে দিয়েছেন‌। প্রয়োজনীয় যা কিছু লাগে,সব অনীতার রুমেই আছে এখন।বাবার নিষেধ অমান্য করার মতো মেয়ে অনীতা নয়,তাই এখন অনীতা চাইলেও দরজা খুলবে না।যতোই কলিংবেলের আওয়াজ হোক না কেন!

বাসায় যেহেতু আর কেউই নেই আর মিস্টার শামসুজ্জামান ও বেঘোরে ঘুমাচ্ছেন।কয়েকবার ডাকার পরও যখন উঠলেন না ,তখন শেহনাজ পারভীন নিজেই দরজা খুলতে চলে গেলেন।

দরজা খুলে তিনি অবাক।এ যে পলাশ দাঁড়িয়ে আছে।পলাশকে সামনে দাঁড়ানো দেখেই তিনি চিৎকার করে মিস্টার শামসুজ্জামানকে ডাকতে লাগলেন। কিন্তু ততক্ষণে
পলাশ মিসেস শেহনাজ পারভীনের এক হাত ধরে শেহনাজ পারভীনের গলায় ছু’রি ধরলেন।শেহনাজ শুরুতে পলাশের হাত থেকে ছাড়া পাবার চেষ্টা করলেও পুরাষালী শক্তির সাথে পেরে উঠলেন না।উনার ছুটে য যাওয়ার চেষ্টা দেখে পলাশ ধমক দিয়ে উঠলো,

-“ বেশি ধস্তাধস্তি আপনার জন্য ভালো হবে না।নিজের ভালো চান তো চুপ থাকুন।চুপ করে আমাকে ভিতরে নিয়ে যান।বেশিরকম করলে আপনার গলায় ছু’রি চালান করে দিবো।”

পলাশের এহেন ধমকিতে শেহনাজ চুপ হয়ে গেলেন।নিজের জীবনকে কে না ভালোবাসে।জীবনের মায়া তারও আছে।তাই আর কথা বললেন না।

পলাশের সাথে সাথে উনিও ভিতরে গিয়ে ডাইনিংয়ে সোফার উপর বসলেন।সোফায় নতুন কভার রাখা ছিল।।পলাশ সোফা থেকে কভার খুলে সেগুলো দিয়ে শেহনাজের আগে হাত,পরে পা শক্ত করে বাঁধলেন।শেহনাজ হতবাক হয়ে সোফায় বসে রইলো।

শেহনাজকে বেঁধে পলাশ ও স্বস্তিতে সোফায় বসলো।সাথে ছু’রি রাখা হাত শেহনাজ বেগমের ঘাড়ের কাছাকাছি রাখলেন।আরেক হাত রাখলেন নিজের পরিহিত ঢোলা প্যান্টের পকেটে।

পলাশ বসার পর এবার আর আগ্রহ দমিয়ে রাখতে না পেরে শেহনাজ পারভীন জিজ্ঞেস করলেন,

-“ তুমি এমনভাবে এরকম করে এসেছো কেন পলাশ?কি চাও তুমি?আমি তো বলেছি টাকা দিয়ে দিবো।”

শেহনাজ পারভীনের কথা শুনে পলাশ ঈষৎ হাসলো।তারপর বললো,
-“ টাকা দিতে হবে না। এতোগুলো বছর যখন আপনাদের স্বামী স্ত্রীর কুকীর্তি গোপন রাখতে পেরেছি,আগামীতে পারবো না কেন?বলুন,পারবো না?”

শেহনাজ চুপ করে রইলেন।কেন জানি এখন পলাশকে তার বিশ্বাস হচ্ছে না।
শেহনাজের নিরবতা দেখে পলাশ ধমক দিয়ে বললো,
-“ বলুন,গোপন রাখতে পারবো কী না ?বলুন,পারবো কী না!”

পলাশের ধমকিতে শেহনাজ বেগম ভয় পেয়ে বললেন,
-“ পারবে,পারবে!”
পলাশ বললো,
-“ তা যদি আমি টাকা চাই,তাহলে কত টাকা দিতে পারবেন?”
-“ যত চাও!”
-“ যদি বলি,টাকা দিতে হবে না।”

পলাশের কথায় শেহনাজ পারভীনের মুখ চিকচিক করে উঠলো।ভালোই তো,টাকা দিতে হবে না। কিন্তু পরক্ষণেই মুখ পাল্টে ফেললেন।পলাশ যদি এর বিনিময়ে অন্য কিছু চায়!
তাই তিনি পলাশকে জিজ্ঞেস করলেন,
-“ কি চাও তুমি পলাশ?যা চাও তাই দিবো।”
-“ যা চাই তাই?”
-“ হ্যাঁ,তাই দিবো। শুধু একবার বলো।”

পলাশ এবার নড়েচড়ে বসলো।বললো,
-“ অনুমান করুন তো কী চাই?টাকা ছাড়া ভাববেন,হুম?”
-“ টাকা ছাড়া কী চাও?!” বলেই ভাবতে লাগলেন শেহনাজ পারভীন। কিন্তু টাকা ছাড়া আর কিছুই খুঁজে পেলেন না তিনি।
-“ ঠিক বুঝতে পারছি না,তুমি কী চাও। সোজাসাপ্টা বলে ফেলো ।”
-“ ক্লু দিবো?”
-“ দিলে তো ভালোই।”
-“ আমি আপনার কাছে যা চাচ্ছি,তা আমার কাছে অত্যন্ত লোভনীয় জিনিস?”

মমমমমমমমমম…. কিছুক্ষণ ভাবার পর শেহনাজ পারভীন বললেন,
-“ সম্পত্তি?”
-“ একদম না।এসব কিছুর প্রতি লোভ নেই আমার।অন্য কিছু বলছি।”
তাহলে?
চট করেই মাথায় কিছু একটা চলে আসলো শেহনাজ পারভীনের।মুখে লাজভাব এনে বললেন,
-“ আমি বুঝেছি,তুমি কী চাও।যা চাও তা পাবে। নিশ্চিন্তে থাকো।”
-“ কি চাই,বলুন তো।”
-“ কী আর!আমার মেয়ে অনীতাকে?তা কতদিনের জন্য…….

শেহনাজ পারভীন তার কথা আর শেষ করতে পারলেন না।তার আগেই পলাশ তার দিকে তেড়ে এলেন। একেবারে শেহনাজের গলার কাছে ছু’রি ঠেকিয়ে বললেন,

-“ এমন কথা বলার সাহস কী করে হয় তোর?কী কুৎসিত মনের তুই?নিজেকে সবার মতো ভেবেছিস?অনীতা আমার মেয়ের মতো।আর তুই তার সাথে আমাকে…..
ছিহ!তুই সত্যিই একটা নোংরা মহিলা। শেষ পর্যন্ত নিজের মেয়েকেও তার বাবার বয়সী একজনের হাতে তুলে দেওয়ার চিন্তা আটছিলি।তোর মুখে কুকুরের লালা ঘষানো উচিত।”

বলে ক্ষান্ত হলেন না পলাশ।ছু’রি একদিকে রেখে একহাতে শেহনাজ পারভীনের মুখে হাত চেপে আরেক হাতে শেহনাজ পারভীনের চুলের মুঠি ধরে টানতে লাগলেন।শেহনাজ পারভীন ব্যাথায় চিৎকার করতে চাইলেন পারলেন না।মুখ দিয়ে কু কা শব্দ ছাড়া আর কিছু বের হলো না।

দুই মিনিট শেহনাজ পারভীনের চুলে টানাটানি করার পর হু’শ ফিরে এলো পলাশের।সে শেহনাজ পারভীনের মুখ থেকে হাত সরিয়ে শান্ত হয়ে বসলো।যে কাজের জন্য সে এসেছে,তা আগে সারতে হবে তাকে।

পলাশের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে হাঁপাতে লাগলেন শেহনাজ।প্রায় দম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তার।পলাশ তার সাথে এমন তুই তোকারি করবে,তার চুল টেনে ধরবে,এতোটুকু তার কল্পনার বাইরে ছিল।

পলাশ আবার শেহনাজ বেগমের ঘাড় বরাবর ছুড়ি ধরে বললো,
“ আমি এগুলোর কিছুই চাই না।”
-“ তা..তা…তাহলে কি চাও তুমি?”ভয় পেয়ে বললেন মিসেস শেহনাজ।
-“ কিছু প্রশ্নের উত্তর চাই।দিতে পারবি?”
শেহনাজকে তুই করেই বললো পলাশ।সামনে বসা থাকা এই মহিলার সাথে এতোসময় সুন্দর করেই কথা বলছিল পলাশ। কিন্তু এই মহিলা এতো নোংরা মানসিকতার হতে পারে,তা জানতো না পলাশ।তাই শেহনাজকে আপনি বা তুমি বলেও ঘৃণা লাগছে পলাশের।তাই তার বেস্ট অপশন “ তুই” বলে ডাকা।

পলাশের প্রশ্ন শুনে মিসেস শেহনাজ যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। প্রশ্নই তো তেমন কোনো ব্যাপার না। জিজ্ঞেস করলেন,
-“ তো করো!কী প্রশ্ন করবে!”
-“ যা প্রশ্ন করবো সব আহানা আপার ব্যাপারে। সত্যি সত্যি উত্তর দিবি তো?’

একটা বিষয়ে শেহনাজের খটকা লাগলো,এতো বছর পর হঠাৎ টাকা চাওয়ার অজুহাতে আহানার বিষয়ে প্রশ্ন করতে পলাশ কেন আসবে।আহানার বিষয়ে পলাশ তো জানেই।তাই সে বললো,

-“ আহানার ব্যাপারে কী জানবে তুমি?তুমি তো তার পুরাতন কর্মচারী ছিলে।আহানার ব্যাপারে প্রায় সবই তো জানো তুমি।”
শেহনাজ এই কথা বলার সাথে সাথেই পলাশ আবার রেগে গেল। দাঁতে দাঁত লাগিয়ে বললো,
-“তোকে যা বলতে বলেছি,তাই বলবি।অযথা কথা বলবি না।তোর মুখ থেকে বেশি কথা শোনা আমার পছন্দ হচ্ছে না।আমি যা জিজ্ঞেস করবো তার ঠিক ঠিক উত্তর দিবি শুধু।ঠিক আছে?”

শেহনাজ দ্বিধাবোধ করতে লাগলেন।একে তো পলাশ নামের এক কর্মচারী তাকে তুই বলে সম্বোধন করছে।ব্যাটাকে থাপড়িয়ে দাঁত ফেলে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে শেহনাজের। কিন্তু কি করবেন তিনি।হাত-পা তো বাঁধা! তাছাড়া মিস্টার শামসুজ্জামান ও তো ঘুমাচ্ছেন।কে আসবে তাকে বাঁচাতে?

হতে পারে পলাশের কথার উত্তর দিলে পলাশ তাকে ছেড়ে দিবে।এই ভেবে আর দ্বিরুক্তি করলেন না শেহনাজ পারভীন। নিজের পূর্ব মেজাজ ভুলে গিয়ে পলাশের কথায় সম্মতি জানালেন।পলাশের কথার সঠিক জবাব দিবেন তিনি।
পলাশ বলতে লাগলো,

-প্রথম প্রশ্ন— তুই মিস্টার শামসুজ্জামানের কততম স্ত্রী?
শেহনাজ পারভীন উত্তর দিলেন— দ্বিতীয় স্ত্রী।
-—মিস্টার শামসুজ্জামানের সাথে বিয়ে হওয়ার পূর্বে কি তোর কোথাও বিয়ে হয়েছিল?
উত্তর এলো— হ্যাঁ।

-— ওখান থেকে চলে এলি কেন?
উত্তর এলো- শামসুজ্জামানের সাথে এক শপিংমলে দেখা হয়েছিল আমার।সেইখানে আমাকে একবার দেখেই সে পছন্দ করে ফেলে‌। তাছাড়া আমাকে খুব শপিং ও করে দেয়।ওর কথা শুনে মনে হয়েছে ও আমাকে ভালো রাখতে পারবে,তাই প্রথম স্বামীর সংসার করার কিছুদিন পরই আমি সেখান থেকে চলে আসি।

-— “ তারমানে তুই পরকীয়া করে শামসুজ্জামান কে বিয়ে করেছিস”
-— “ হ্যাঁ।”
-— “ আহানা আপার মৃত্যু স্বাভাবিক মৃত্যু ছিল নাকি হ’ত্যা ?”
-—“ তা তো তুমি জানোই?”
-— “ তোর মুখ থেকে শুনতে চাচ্ছি।” বলে আবার ধমক লাগালো পলাশ।
-— “ আচ্ছা আচ্ছা বলছি। আহানাকে হ’ত্যা করা হয়েছিল।”
-“— কে করেছিল?ওইসময় কেনই বা গোপন রেখেছিলি?”

পলাশের প্রশ্ন শুনে শেহনাজ বেগমের খটকা লাগলো।পলাশ তো জানেই,তবুও এখন এসব জিজ্ঞেস করছে কেন? কিন্তু প্রশ্ন করতে গিয়েও প্রশ্ন করতে পারলেন না শেহনাজ।তার হাত পা এখন বাঁধা।ঘাড়ের কাছে ছু’রি ধরা। উল্টাপাল্টা কিছু বললেই না জানি পলাশ ক্যাচাং করে ঘাড়ে পোঁচ মেরে দেয়।তাই মুখের প্রশ্ন মুখেই ফিরিয়ে আনলেন মিসেস শেহনাজ ।
প্রশ্ন এড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
-— “ আমি যদি এই প্রশ্নের উত্তর দেই,আমাকে ছেঁড়ে দিবে তো পলাশ?”
-—“অবশ্যই ছেড়ে দিবো তোকে!তবে শুধুমাত্র এই প্রশ্নের উত্তর দিলে নয়।আরো কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। উত্তর দেওয়ার পরপরই তোকে ছেঁড়ে দিবো।এক মুহুর্ত দেরী করবো না।”

পলাশের উত্তর শুনে খুশি হলো শেহনাজ।সে বললো,
-“ আচ্ছা,তাহলে বলছি! শুনো,
আহানা শামসুজ্জামানের প্রথম স্ত্রী ছিল। কিন্তু শামসুজ্জামান আহানাকে ভালোবাসতো না। শুধুমাত্র আহানার ব্যাবসা সামলানোর গুণ দেখে আহানাকে বিয়ে করেছিল শামসুজ্জামান।

আহানা শামসুজ্জামানের ব্যাবসায় অনেক সাহায্য করেছিল। অস্বীকার করবো না,শহরে শামসুজ্জামানের খ্যাতি অর্জনের পিছনে আহানার অবদান ছিল খুব।
ওদের সংসারজীবন চলতে লাগলো।আহানার ছেলে হলো।ছেলের দিকে খেয়াল রাখতে গিয়ে ব্যাবসা থেকে আহানার মনোযোগ কমতে লাগলো।

ঠিক তখনি এক শপিংমলে শপিং করতে গিয়েছিলাম আমি।সেখানে শামসুজ্জামান আমায় দেখার পরেই আমাকে তার সাথে রিলেশনে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়।

আমিও তার সাথে কথা বলতে থাকি।আমাদের প্রেমালাপ দিনদিন বেড়েই চলে।গভীরে যেতে থাকি আমরা।তখনি চিন্তা করি,এভাবে আর কতদিন।আমি শামসুজ্জামানের কাছে পালিয়ে আসি।”

-“ আহানা আপার কথা তো বলছিসই না।তোকে নিজের কেচ্ছা বলতে বলেছি আমি।”

ছু’রির ডাট দিয়ে শেহনাজের কপালে খোঁচা দিয়ে বললো পলাশ।
-“ আরে ,সবুর করো। দিচ্ছি তোমার প্রশ্নের উত্তর। আমার কাহিনী থেকেই তোমার প্রশ্নের উত্তরের শুরু।
— আমি পালিয়ে আসার পর শামসুজ্জামান পড়ে যায় মহাবি’পদে।আমি আসার আগেই আমার আগের স্বামীর ডিভোর্স লেটার পাঠাই।আমার পালিয়ে আসার খবর শুনে ও সাথে সাথেই আমায় তালাক দিয়ে দেয়।আমিও সুযোগ পেয়ে তালাকের সময়সীমার পর শামসুজ্জামান কে বিয়ে করে ফেলি।

কিন্তু এতেই শামসুজ্জামান ভুল করে ফেলে।তার আগের স্ত্রী আহানা তার সবকাজের সহযোগী ছিল।এটা অনেকেই জানে।এখন যদি সবাই দেখে শামসুজ্জামান দ্বিতীয় বিয়ে করেছে,তাহলে এটা নিয়ে হইচই পড়ে যাবে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হবে সব।সবাই রঙলীলা দেখবে।

প্রথম স্ত্রীর অনুমতি না নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে, এইজন্য আহানা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারতো।আর আমিও ছলে বলে তার প্রথম স্ত্রী ছিল না এই বলে তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিতে পারতাম‌।

সম্মানহানির ভয়ে শামসুজ্জামান ভীত হয়ে পড়ে।আহানা আমাদের সম্পর্কে একবার জানতে পারলে সব শেষ।তাই সে আমাকে আগের স্বামীর কাছে ফিরে যেতে বলে। কিন্তু আমি তো আর ফিরে যাবো না।এইখানে আমি টাকা পেয়েছি টাকা।যা আমাকে আর কেউ দিতে পারবে না।
তাই আমি শামসুজ্জামানকে প্রস্তাব দেই,আহানাকে গোপনে হ’ত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিবো।এতে সাপ যেমন মরবে,তেমন লাঠিও ভাঙবে না।”

-“ তারপর?” পলাশ উত্তেজিত হয়ে পড়ছে।
-“ তারপর প্ল্যান অনুযায়ী একদিন শামসুজ্জামান আহানার জন্য তার পছন্দের আইসক্রিম নিয়ে আসে,আর তাকে সেটা খেতে বলে।
আইসক্রিম খাওয়ার সময় শামসুজ্জামান তার মুখে অজ্ঞান হওয়ার স্প্রে ছিটিয়ে দিলে আহানা সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।তারপর আমি আর শামসুজ্জামান মিলে আহানার গ’লা শক্ত করে টিপে ধরি‌।

অনেকক্ষণ ধরে তার গলা টি’পে,তাকে বালিশচাপা দিয়ে তার মৃ’ত্যু নিশ্চিত করার পর একটা শক্ত দড়ি এনে আহানাকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে দিই।আর ওইসময় তুমি এসে আমাদেরকে আহানাকে ঝুলাতে দেখে ফেলো।তাতেই সব গোলমাল হয়ে যায়।”

“তোরা আমাকে দেখে ফেলার পর আমাকেও মা’রতে চাইলি। কিন্তু তৎক্ষণাৎ নিজের প্রাণ বাঁচাতে আমি বললাম,আহানা আপার লা’শ সম্পর্কিত ঝামেলায় আমি তোদের সাহায্য করবো।”
শেহনাজের মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বললো পলাশ।
পলাশ থাকলে শেহনাজ আবার কথা বলা শুরু করলো,

-“ তুমি যেহেতু দেখে ফেলেছিলে,তাই আমরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু যখন তুমি বললে আহানার লা’শের ব্যাপারে সাহায্য করবে,আহানার হ’ত্যাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে আমাদের সাহায্য করবে,তখন যেন আমরা স্বস্তি পেলাম।তাই তোমাকে হুমকি দিয়ে বলেছিলাম,আহানা আত্মহত্যা করেছে আর এটা তুমি নিজে দেখেছো এই কথা পুলিশকে বলতে হবে।বলার পর তোমাকে টাকা দিবো বলেছিলাম।তুমিও তেমনই করেছিলে। কিন্তু আমরা ভুলে গিয়েছিলাম,সাপের লেজ রাখতে নেই।”

শেহনাজের কথা শুনে হু হা করে হেসে উঠে পলাশ। কটাক্ষের স্বরে বলে,
-“ সাপ আমি না তুই,তা সময়ই বলে দিবে।তার আগে বল,আহানা আপার কাটা’ছেঁড়া হয়নি কেন?”
-“ আহানাকে যেহেতু শহরের সবাই শামসুজ্জামানের ওয়াইফ হিসেবে চিনতো,তাই সবাই বলেছিলো তার পোস্টমর্টেম হওয়া দরকার। কিন্তু শামসুজ্জামান অনেক নেকি কান্না করে বলে,তার ভালোবাসার কাটাছেঁড়া সে কখনোই হতে দিবে না,সে কখনোই তার প্রিয় মানুষের কাটাছেঁড়া সহ্য করতে পারবে না।সবার করুণা নিয়ে শামসুজ্জামান পোস্টমর্টেম বাতিল করতে সক্ষম হয়।”
-“ ও আচ্ছা! ”
-“ হ্যাঁ।তোমার প্রশ্ন শেষ?আমি একটা প্রশ্ন করবো তোমাকে।”
শেহনাজ ভয়ে ভয়ে বললো।
শেহনাজের কথা শুনে পলাশ বললো,
-“ কর কী প্রশ্ন করবি।”
-“ হঠাৎ তুমি এসে উদয় হলে কেন?কি চাই তোমার?”
-“ শাস্তি?”
-“ শাস্তি!কার শাস্তি।”
-“ তোর আর তোর শামসুজ্জামানের।”
-“ কিন্তু কীভাবে?কেন?”

শেহনাজের প্রশ্নের প্রত্যুত্তর করলো না পলাশ।সে বললো,
শেষ প্রশ্ন-—“ তোরা আমাকে মা’রতে চেয়েছিলি কেন ?”
পলাশের প্রশ্ন শুনে শেহনাজ মৃদু কেঁপে উঠলো।বললো,
-“ তুমি এসব কীভাবে জানলে?”

পলাশ মুচকি হেসে বললো,
“ কীভাবে জেনেছি তা পরের কথা।আগে বল আমায় কেন মা’রতে চেয়েছিলি তোরা?”

-“ আসলে আহানাকে যখন আমরা মে’রেছিলাম,তখন
একমাত্র তুমিই আমাদের আহানাকে মার’তে দেখে ফেলেছিলে।ওইসময় তো বুঝিনি তুমি এখন এসে এমন করবে।যদি জানতাম,তাহলে আগেই তোমাকে…..।
-“ কী! উপরে পাঠিয়ে দিতি?”
শেহনাজ কিছু বললো না।
পলাশ বলতে লাগলো,
“ শোন,আজকে যদি আমি না আসতাম।ওইসময় যদি তারা আমাকে মে’রেও ফেলতি, তবুও তোদের শাস্তি হতোই।”
-“ কীভাবে?”
-“ তোর কী মনে হয়,আহানা আপাকে তোরা মে’রেছিস,এটা শুধু আমি একা জানি।অন্য একজন নিজ চোখে তোদের কুকীর্তি দেখেছিল।সে প্রতিশোধ নিতোই নিতো। ”
-“ কে?কে সে?”

“ আমি” বলে দরজা দিয়ে ঢুকলো আয়ুশ।তার লাল লাল চোখ থেকে ভয় পেয়ে গেল শেহনাজ।

-“ হ্যাঁ আমিই।আমি ওইদিন মায়ের বেডরুমে মায়ের সাথে লুকোচুরি খেলছিলাম।আমি শোকেসের পিছনে এমন একজায়গায় দাঁড়িয়েছিলাম,যেখান থেকে আমি সব দেখতে পারবো, কিন্তু আমাকে কেউ সহজে দেখতে পারবে না।আমি লুকিয়েই ছিলাম।তখনি দেখি আ..স্যরি মিস্টার শামসুজ্জামান হাতে একটা আইসক্রিম নিয়ে মাকে দেন।আমি বের হতেই যাচ্ছিলাম,তখনি দেখি উনি আমার মায়ের মুখে রুমাল চেপে ধরেছেন।

মূহুর্তের মধ্যেই শেহনাজ পারভীন রুমে ঢুকে মায়ের গলা চে’পে ধরলেন।আমি চিৎকার দিতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু আমার মুখ দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হচ্ছিলো না।আমি বাইরে বের হতেও পারছিলাম না।

তারপর দেখলাম মিস্টার শামসুজ্জামান ও মিসেস শেহনাজ পারভীনের সাথে হাত মিলিয়ে মায়ের গলা চে’পে মাকে শেষ করে মাকে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে দিলেন।তখনি পলাশ চাচা রুমে ঢুকলেন।সবার সব কথাই আমি শুনলাম। কিন্তু আড়াল থেকে বের হতে পারলাম না। কিছু একটা আমাকে সেখানেই আটকে দিলো।
আপনারা মিথ্যে চিরকুট লিখে আমার মায়ের হত্যা’কে আত্নহ’ত্যা বলে চালিয়ে দিয়েছিলেন।সবই দেখেছিলাম আমি।
তারপর যখন আপনাদের সব নাটক শেষ হলো,তখন আমি চুপিচুপি বের হলাম।আমি চুপ হয়ে গিয়েছিলাম।”

-— “ তু..তুমি আমাদের দেখে ফেলেছিলে? শামসুজ্জামানের বাচ্চাটাকে তখনি বলেছিলাম, এটাকেও তার মায়ের সাথে পাঠিয়ে দাও,সব আপদ একেবারে বিদায় হবে। কিন্তু তা না,এটাকে মা’রলে সবাই সন্দেহ করবে।তাই আর মা’রলো না।এখন বুঝুক ঠেলা। কিন্তু……”
-— “ কিন্তু কী মিসেস শেহনাজ পারভীন?”

-— “তুমি তো আমাদের কাউকে কিছু বলো নি আয়ুশ।”

-— “ কিভাবে বলবো আপনাদের।এইযে এখন বললেন,তখনি আমাকে মে’রে ফেলতে চেয়েছিলেন।ওইসময় যদি আমি আপনাদের এসব বলতাম যে,আমি আপনাদের সব কুকর্ম দেখে ফেলেছি,আপনারা আমাকে আস্ত রাখতেন?আমি আজ এসে এসব বলতে পারতাম?
আর আমি কাউকে কিছু বলিনি।আজকে বললাম।”

-— “আর কখনো কাউকে এসব কথা বলতেও পারবে না তুমি আয়ুশ।আজকে এবং আজকেই তোমার শেষ দিন।তোমার পরিণতি তোমার মায়ের মতোই হবে। কিন্তু অন্যরুপে এবং তা হ’ত্যা!”

দোতলার সিঁড়ির উপর দাঁড়িয়ে বললেন মিস্টার শামসুজ্জামান।
শামসুজ্জামানের কন্ঠ শুনে শেহনাজ যেন প্রাণ ফিরে পেলেন,জোরে বলে উঠলেন,
-—“ শামসুজ্জামান,তুমি এসেছো?”
-—“ হ্যাঁ ডার্লিং।তোমার শামসুজ্জামান হাজির আর তোমার যম।” শেষের কথা আয়ুশকে লক্ষ্য করে বললেন শামসুজ্জামান।

শামসুজ্জামানের কথা শুনে আয়ুশ তার দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলো,তার বাবা নামক পশুর হাতে একটা বন্দুক আর সেটা তার দিকেই তাক করা।

এতোদিন তো এই মানুষটাকে খুব ঘৃণা করতো আয়ুশ।আজ যেন ঘৃণা ছাড়িয়ে গেল।নিজের ছেলের সামনে অপর একটা মহিলাকে এমন করে বলতে তার একটুও লজ্জা হলো না?এতোটা নির্মম এই লোকটা যে নিজের ছেলের দিকে বন্দুক তাক করতেও দ্বিধাবোধ করে না!

আয়ুশ নিজের প্যান্টের পকেট থেকে পিস্তল বের করতে গেলেই শামসুজ্জামান বাঁধা দিয়ে বললো,
-“ প্যান্টের পকেটে যা আছে,তা রেখে দাও আয়ুশ।ভুলেও বের করে চালাকি করার চেষ্টা করো না। নয়তো আমার বন্দুকের গু’লি তোমার সহযোগী পলাশের মাথায় গু’লি শ্যুট হবে।”

শামসুজ্জামানের কথা শুনে আয়ুশ দেখলো, শামসুজ্জামানের বন্দুক আয়ুশের থেকে ঘুরিয়ে পলাশের দিকে তাক করা।

আয়ুশ হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।তার মাথা কাজ করছে না।সে সাহস করে তার প্যান্টের পিছনের পকেটে হাত রাখতে যাবে,তখনি…

তার পরপরই বিকট শব্দে একটা আওয়াজ হলো।গু’লি করার আওয়াজ……!কেউ জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলো।

চলবে……