আলোছায়াতে প্রণয়াসক্তি পর্ব-১২

0
1052

#copyrightalert❌🚫
#আলোছায়াতে_প্রণয়াসক্তি
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১২
মোবাইলে সময় দেখে অ্যালেক্স নিঝুমকে আরেকটা দীর্ঘসময়ের ঘুমের ইন*জেকশন দিয়ে দিলো। গাড়িতে তোলার আগে শর্ট অ্যাক্টিং একটা ই*নজেকশন দিয়েছিল। যার দরুণ কয়েক সেকেন্ডেই নিঝুম ঘুমের ঢোলে মানে সেন্স হারিয়ে ফেলেছিল। তারপর কিছুক্ষণ পর আবার লম্বা সময় ঘুমানোর জন্য ইনজেকশন দিয়েছিল। ইন*জেকশনটা দিয়ে বসতেই বাড়ির দরজায় ক্রমাগত দান-বীয় ধা*ক্কা পড়ছে। অ্যালেক্স ঘাবড়ে গেলেও সামলালো নিজেকে। হুট করে কিছু চিন্তা করে ঘুমন্ত নিঝুমের সাথে কয়েকটা সেলফি তুলে নিলো চটপট। তারপর নিজেই দরজা খুলতে অগ্রসর হলো। কিন্তু তার আগেই দরজা ভাঙার বিকট শব্দ ভেসে আসে। শোনা যায় আলফির কণ্ঠ৷ অ্যালেক্সের নাম ধরে গা*লি দিতে দিতে এই দিকেই আসছে।
আলফি ফোনের টর্চ জ্বা*লিয়ে নিঝুমকে রাখা রুমের কাছে এসেই অ্যালেক্সকে দেখে। তৎক্ষনাৎ কলার চেপে ধরে ওর। কয়েকটা ঘু*ষিও লাগায় তৎক্ষনাৎ। হাসছে অ্যালেক্স। আলফির রাগ বাঁধন হারা। সে হিসহিসিয়ে শুধায়,

“হোয়ার ইজ নিঝুম? টেল মি, বা*স্টা*-র্ড!”

অ্যালেক্স ইশারায় পেছনে বিছানায় দেখায়। আলফি ও-কে ছেড়ে নিঝুমের কাছে যায়। মেয়েটা প্রাণহীন নিথরের মতো পড়ে আছে। গালে বারকয়েক আলতো স্পর্শে ডাকে ও-কে। সাড়া নেই। আলফি দাঁত কিড়মিড় করে নাকের পাটা ফুলিয়ে রাগের বি*স্ফোর*ণ করে উঠে দাঁড়ায়। ফের কলার চেপে ধরে অ্যালেক্সের।

“হোয়াট হ্যাভ ইউ ডান উইথ হার? হোয়াই ইজ সি নট রেসপন্ডিং?”

অ্যালেক্সের মুখের কোণে তা*জা র*ক্ত লেগে আছে। সে সেই অবস্থাতেই হাসতে হাসতে বলে,
“জাস্ট থ্রি অর ফোর ই*নজেকশন… এন্ড সি…”

আলফি ও-কে আরও কতোগুলো ঘু*/ষি ও লা/*থি দিলো। যার দরুণ অ্যালেক্স মেঝেতে পড়ে গেছে। জ*খ*মি অবস্থা তার। আলফি চটজলদি নিঝুমের হাতের বাঁধন খুলল। তারপর কোলে তুলে নিলো সেই অবস্থায়। ঘুরে অ্যালেক্সকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“জাস্ট ওয়েট ফর মি। আই উইল কি*-/ল ইউ!”

অ্যালেক্স ফের হাসে। এই হাসিই গায়ে জ্বা*লা ধরিয়ে দিচ্ছে আলফির। আলফি নিঝুমকে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে ধরলে অ্যালেক্স প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“হোয়াই আর ইউ সো পজেসিভ ফর দিস গার্ল? হু ইজ সি?”

আলফি রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে উত্তর দেয়,
“ইটস নান অফ ইউর বিজনেস।”

“অফকোর্স ইটস মাই বিজনেস। উই বোথ আর হ্যাভিং অ্যা লাভ রিলেশনশিপ!”

থামে আলফি। ঘুরে কৌতুকের স্বরে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“ইউ এন্ড নিঝুম আর হ্যাভিং অ্যা লাভ রিলেশনশিপ? রিয়েলি?”

আলফির কন্ঠে কৌতুক ও আত্মবিশ্বাস অ্যালেক্সকে কিছুটা দোটানায় ফেলল। কিন্তু কন্ঠে অগাধ আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলল,
“ইয়েস!”

আলফি এগিয়ে এলো ওর দিকে। দুটো ফোনের ফ্ল্যাশলাইটের আলোয় পরিষ্কার রুমের সকল বস্তু। আলফি অ্যালেক্সের কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল,
“গো হে*ল উইথ ইউর সো কল্ড লাভ রিলেশনশিপ!”

তারপর ঘুরে আবার চলে যাচ্ছে। অ্যালেক্স বিভ্রান্তির স্বরে বলে,
“বাট হোয়াই আর ইউ এক্টিং পজেসিভ, ম্যান! সি ইজ জাস্ট অ্যা গার্ল!”

“সি ইজ নট জাস্ট অ্যা গার্ল। সি ইজ মাই ওয়াইফ!”

বলেই বড়ো বড়ো কদম ফেলে নিঝুমকে নিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে এলো আলফি। পেছনে রয়ে গেলো হতভম্ব, হতচকিত, জ*খ*মি অবস্থায় অ্যালেক্স।
নিঝুমকে নিয়ে বাড়ির বাইরে আসতেই কাছাকাছি পু*লিশ গাড়ির সাইরেনের শব্দ শুনতে পায়। বুঝে যে শাহরিয়ার নিশ্চয়ই পু*লিশে খবর দিয়েছে। তাই নিঝুমকে গাড়িতে বসিয়ে সিটবেল্ট বেঁধে দেয়। পু*লিশ এসে পৌঁছালে সব ডিটেইলসে বলে। নিঝুমের সাথে কলে কথা বলার রেকর্ডটাও দেয় প্রমাণ হিসেবে। তারপর পু*লিশ নিজের কাজ করে আর আলফি নিঝুমকে নিয়ে চলে আসে।

——–
রাত তিনটার বেশি বাজে। আলো-আঁধারিতে ঘুমন্ত নিঝুমের মুখের দিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে আছে আলফি। ঘুমের মাঝে মেয়েটাকে অপলক দেখা তার পছন্দের কাজের মধ্যে একটি। মায়াবি মুখটা কেমন কাহিল অবস্থা। বাইরে শনশন শীতল হাওয়া বইছে। এইতো কিছুক্ষণ আগেই নিঝুমকে নিয়ে বাড়ি ফিরেছে সে। এখনও ঘুমের ডোজ কাটেনি ওর। আজ যদি সে আরেকটু দেরিতে পৌঁছাতো তবে কী হতো? ভাবতেই গায়ে রাগের কাঁপন ধরছে তার। তখন পু*লিশ না এলে হয়তো অ্যালেক্সকে সে আজ নিজ হাতে মে*;রে ফেলতো! তার এই ফুলের মতো বউটার দিকে কেউ হাত বাড়াবে তাকে তো সে ছেড়ে দেওয়ার মতো না।

নিঝুমের নিজে কপালে উষ্ণ ঠোঁ’টের ছোঁয়া এঁকে উঠে দাঁড়ায়। ফোন করে শাহরিয়ারকে। তারপর বলে,
“অ্যালেক্স যেন সহসা বে’ল না পায়৷ গট ইট?”

অপরপাশ থেকে শাহরিয়ার হ্যাঁ বোধক বাণী শোনালে সে ফোন রাখে। বসে আবার নিঝুমের পাশে।

সকালের প্রথম সূর্য কিরণ পর্দার ফাঁকে থাই গলে রুমের ভেতরে নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। আস্তে আস্তে ঘুম ছুটে যায় আলফির। চোখ-মুখ কঁচলে দেখে নিঝুম তারই দিকে চেয়ে আছে। তৎপর হয়ে বিছানা থেকে মা*থা উঠায় আলফি। নিঝুমের চোখ-মুখ শুকনো। স্থির চাহনি তার৷ আলফি বলে,
“গুড মর্নিং।”

নিঝুম জবাব দেয় না। ফের চোখ বুজে নেয়। আলফি সন্দিহান হয়ে নিঝুমের কপালে হাত রাখলে বুঝে মেয়েটির গায়ের ভীষণ জ্বর। সেন্স আসলেও জ্বরের ঘোরে শরীরে শক্তি নেই। আলফি উঠে যায়। কাল বিকেলের পর তো নিঝুমের কিছু খাওয়া হয়নি। তারউপর কি*ডন্যাপ হওয়ার ভয়, বার কয়েক ঘুমের ইন*জেকশন দেওয়াতে শরীর আর কতো সইবে? আলফি রান্নাঘরে গিয়ে সুপ রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ ফ্রিজ থেকে চি’কেন বের করে আদাকুচি, লবন ও সামান্য তেল দিয়ে বয়েল হতে দিয়ে নিজে ফ্রেশ হতে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে সুপ রান্না করে ফেলে। তারপর সুপ নিয়ে নিঝুমের ঘরে যায়। ও-কে উঠিয়ে গলার কাছে রুমাল বেঁধে নিজের বুকের সাথে ঠেস দিয়ে বসিয়ে অল্প অল্প করে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। কিছুটা কোনোমতে খেতেই বমি করে দেয় নিঝুম। নিজেকে সহ, বিছানা, কম্ফর্টার, ও আলফির ট্রাউজারেও বমিতে ভরিয়েছে৷ অতঃপর ক্লান্ত হয়ে ঢলে পড়েছে। আলফি চোখ-মুখ খিঁচে বসে আছে। জীবনেও সে এরকম পরিস্থিতিতে পড়েনি। টিসুর বক্স এনে প্রথমেই নিঝুমের মুখ ও গলা মুছে দিলো। জামার উপর থেকে হালকা ভাবে বমি মুছে নিয়ে নিজের ট্রাউজার, বিছানা, কম্ফর্টার সব থেকে বমি মুছে নিলো। আলফি ঘড়িতে সময় দেখলো। আটটার একটু বেশি বাজে৷ তার বাবা-মায়ের ফ্লাইটের সময় হতে এখনও বাকি। কিন্তু নিঝুমের জামা বদলাতে তো হবে। বমির জামা পরে এতক্ষণ থাকবে কীভাবে। কিন্তু ও যদি বদলে দেয় তবে নিঝুমের হুঁশে ফিরলে নিঝুম ওর সাথে কী করবে কে জানে! যদিও তার অধিকার আছে কিন্তু নিঝুম তো এখনও জানেনা সেটা৷ এমনিতেই জ্বর সাড়লে অ্যালেক্স কান্ডের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে সেটা নিয়েই উদ্বিগ্ন সে।

আলফি নিজে আবার পোশাক বদলে ফ্রেশ হয়ে তোয়ালে, এয়ারফ্রেশনার ও একটা মাইল্ড বডিস্প্রে নিয়ে আসলো। রুমে এয়ারফ্রেশনার স্প্রে করে দেয়। তারপর পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে নিঝুমের মুখ ও গলা আবারও মুছে দিয়ে জামাতে বডিস্প্রে দিয়ে দিলো। এরপর ও-কে আবার উঠিয়ে বসিয়ে সুপ খাওয়াচ্ছে। এবার আর বমি করেনি। সুপ খাওয়ানোর পর এবার ঔষুধ খাইয়ে দেয়।

নিঝুমকে সুপ ও ঔষুধ খাওয়ানোর পর লম্বা একটা নিঃশ্বাস ছাড়ে। জ্বর কমে যাবে কিছুক্ষণের মধ্যে। এরপর নিজে গিয়েও খেয়ে নেয়।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক করা হয়নি।