আলোছায়াতে প্রণয়াসক্তি পর্ব-২০

0
1066

#copyrightalert❌🚫
#আলোছায়াতে_প্রণয়াসক্তি
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২০
নিঝুমের পিছু পিছু প্রিয়াও চলে যায়। আলফি ও রেহাম আঁড়চোখে তা খেয়াল করে। রেহাম বলে,
“শি ওয়াজ ক্রাইং, আলফি। আই থিংক, ইউ শুড টক টু হার।”

“আই ওয়ান্টেড টু, বাট সি ইজ নট রেডি টু টক। দ্যাটস হোয়াই…”

আলফি দূরে নিঝুমের চলে যাওয়া পথের দিকে উদাস হয়ে চেয়ে রইল। নিঝুম কাঁদছিল। এই কান্নাটা সে সহ্য করতে পারে না। অথচ আজ সে নিজেই কাঁদাচ্ছে। রেহাম বলল,
“শি লাভস ইউ সো মাচ। দ্যাটস হোয়াই শি ডিডেন্ট এক্সপেক্ট দিস ফর্ম ইউ।”

“আই নো। আই ওয়ান্টেড টু এক্সপ্লেন এভরিথিং বাট…. হাহ্! লিভ ইট। বায়। শাহরিয়ার উইল প্রবাইড ইউ ফারদার ইন্সট্রাকশন।”

তারপর আলফি রেহামকে বিদায় বলে ক্লাসের জন্য চলে যায়।

নিঝুম ফ্লাটে এসে কাঁদতে কাঁদতে ব্যাগ গোছাচ্ছে। প্রিয়া কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে বিরক্ত হয়ে ওর হাত থেকে ব্যাগ কেড়ে নিয়ে বলল,
“ব্যাগ গোছাচ্ছিস কেন? আরও তিন দিন আছিস এখানে।”

“আমি রেহামের এসব দেখতে পারব না। ও আমার সামনে আমার হাজবেন্ডের সাথে প্রেম করবে! ছিহ্! আই কান্ট টলারেট দিস।”

প্রিয়া ও-কে বোঝাতে চাইলো,
“রেহাম তো জানে না। তাছাড়া আলফির উপর ক্যাম্পাসের অনেকেরই ক্রা*শ আছে। তোর উচিত ছিল আমাদেরকে সবটা সেদিনই বলা। রেহাম আসলে আমি বলব যে আলফিই তোর হাসবেন্ড।”

“না। আমি এখান থেকে চলে যাব। আলফি নিজে রেহামকে প্রায়োরিটি দিচ্ছে মানে সেও ইন্টারেস্টেড।”

তখন রেহাম আসে। কথার পিঠে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“কে ইন্টারেস্টেড? আলফি?”

নিঝুম দরজার দিকে তাকায়। রেহামকে দেখে প্রিয়ার হাত থেকে ব্যাগটা ছিনিয়ে ফেরত নেয়। তারপর সেটা নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। রেহাম ফের জিজ্ঞেসা করে,
“হোয়াট হ্যাপেন্ড? ব্যাগ গোছাচ্ছিলে কেন?”

নিঝুম এবার ওষ্ঠ কোণে কৃতিম হাসি টেনে বলে,
“আগে থেকে গুছিয়ে রাখছি। পরশু চলে যাব তো।”

“ওহ। আচ্ছা শোনো না, তোমাদের একটা গুড নিউজ দেওয়ার আছে।”

রেহামকে খুব খুশি দেখাচ্ছে। প্রিয়া রেহামকে কিছু বলতে চাইলে নিঝুম বাঁধা দেয়৷ তারপর রেহামের থেকে ভালো খবরটা জানতে চায়। রেহাম বলে,
“আমার একটা ভালো জব হয়েছে। বলতে পারো, আমি ইন্টার্ভিউ না দিয়েই জবটা পেয়ে গেছি। স্যালারিও খুব ভালো।”

নিঝুম ও প্রিয়া রেহামকে অভিনন্দন জানায়। রেহাম আরও বলে,
“আলফির কম্পানি থেকেই জব অফারটা পেয়েছি। আলফির পিএ শাহরিয়ার আমাকে নিজে নক করে এপ্রোচ করেছে। আই কান্ট বিলিভ, আলফি এতো বড়ো বিজনেসম্যান! আজকে তাই আলফিকে থ্যাংকস জানালাম। অফিসে তো সে আমার বস হবে। ইউনিভার্সিটিতে সিনিয়র। তাই সিনিয়র হিসেবে থ্যাংকস জানালাম। ”

নিঝুম হতবুদ্ধির মতো চেয়ে আছে। আলফির কম্পানি থেকে রেহাম জব অফার পেয়েছে? আর জবটা ও-কে অফার করা হয়েছে! নিঝুম এসব নিয়ে ভাবনায় পড়ে গেলেও প্রিয়া সাথে সাথে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“ইন্টার্ভিউ ছাড়া জব? এটা কিভাবে পসিবল?”

রেহাম নিঝুমের দিকে আঁড়চোখে তাকায়। তারপর বলে,
“মনে হয় আমার মতো আলফিরও আমার উপর ক্রা*শ আছে!”

কথাটা শুনো নিঝুম চকিতে তাকায়। অতঃপর রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

——
আজ গভীর রাতে তুষারপাত হচ্ছে। হুট করেই শুরু। আলফি ব্যালকনির কাঁচ নামিয়ে হিটার অন করে ও*য়াইনের বোতল নিয়ে বসে আছে। পাশেই একটা হু*ইস্কির খালি বোতল! তার খুব ইচ্ছে ছিল প্রথম তুষারপাত সে নিঝুমের সাথে উপভোগ করবে। দুজনের মাঝে দূরত্ব থাকবে না। তাই তো সবকিছু খুব সাবধানে সামনে এনেছে। কিন্তু এই অভিমানিনীর অভিমানের পাহাড় যে বেড়েই চলেছে। হুট করে আলফির ইচ্ছে হলো নিঝুমকে কল করবে। করলোও তাই।
নিঝুম না ঘুমিয়ে জেগে আছে। প্রিয়া ও নেপালের মেয়েটা ঘুমাচ্ছে। রেহাম আজও প্রিয়াকে এখানে পাঠিয়ে নিজে প্রিয়ার রুমে ঘুমাতে গেছে। নিঝুম জানালার কাঁচ দিয়ে বাইরের তুষার ঝড় দেখছে। নিমিষেই সবকিছু শুভ্রতায় ছেঁয়ে গেছে। টেম্পারেচার মাইনাসে অনেক নিচে নেমে গেছে। হঠাৎ ফোন বাজতেই তুলে দেখে আলফির কল। কিছুটা অবাক হলেও ফোন রিসিভ করে সেটা বুঝতে না দিয়ে ‘হ্যালো’ বলল। অপরপাশ থেকে আলফি বলল,

“ইউ নো, আই ওয়াজ ওয়েটিং ফর দিস ডে। আই ড্রিমড দ্যাট, দ্যা ফার্স্ট স্নোফল এন্ড উই উইল বি টুগেদার উইথ লাভ। বাট বাট… তোমার অভিমানই শেষ হয় না।”

কথাগুলো বলেই দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো আলফি। নিঝুম শুনে গেলো৷ অজান্তেই তার চোখের কোণে অশ্রু কন্যারা ভীড় জমিয়েছে। আলফি ফের কিছুটা জড়ানো গলায় বলল,
“তুমি তো সেদিন আমার থেকে ডিভোর্স চেয়েছিলে… উপস সরি! একদম ডে ওয়ান থেকেই তুমি ডিভোর্স চাইছ। আমার মতো ক্যা*রেক্টরলেস, মা*ফিয়ার সাথে থাকতে চাও না। সো হোয়ার ইজ দ্যা ডিভোর্স পেপার?”

কান্নায় এবাররনিঝুমের গলা ধরে আসছে। সে কোনোমতে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,
“আর ইউ ড্রাং*ক?”

“নো নো। এবসিউলিটলি নট। উম… মেবি! নাহলে তো তোমাকে কল করতাম না। এই ও*য়াইনটা কোনো কাজের না। আমার এতো না চাওয়া স্বত্বেও তোমাকে কল করতে বাধ্য করলো। আজ মেবি ডোজ বেশি হয়ে গেছে। এমনিতে আমি ড্রিংক করি না। তুমি তো ছিলে, দেখেছ আমাকে ড্রিংক করতে? বলো? দেখেছ?”

“না।”
নিঝুমের সংক্ষিপ্ত ভারাক্রান্ত উত্তরে আলফি হেসে ফেলল। বলল,
“কীভাবে দেখবে? আমি আমার স্লিপিং বিউটিকে দেখে নে-শা করতাম। আবছা আলোছায়াতে ঘুমন্ত নিঝুম। বড্ড মায়াবী। তুমি জানো, আমি বাংলা জানলেও খুব একটা বলতাম না। বাবা-মা থাকেন নিউইয়র্কে। আমি এখানে একা। তোমার সাথে পরিচয়ের পর থেকে আমি নিজের বাংলা ল্যাঙ্গুয়েজের উপর আরও ফোকাস করেছি। প্রথমবার বাংলাদেশেও আমি সেবারই গিয়েছিলাম। দিস ইজ বিকজ অফ ইউ। মাই ফার্স্ট লাভ আফটার মাই প্যারেন্টস। বাট ইউ নেভার ওয়ান্টেড টু আন্ডারস্ট্যান্ড মি।”

নিঝুম নিরবে কাঁদছে। আলফি নিজের হুঁশে নেই। তাই তো সরল মনে সব বলে যাচ্ছে। আলফি আরও বলে,
“তোমার আঙ্কেলের কম্পানির সাথে ডিলটা কোইন্সিডেন্স ছিল। আমি রিফিউজ করে দিতাম কিন্তু তোমার থেকে তোমার আঙ্কেলের নাম ও পরিচয় জানা তাই আমি এক্সাইটেডেই ডিল একসেপ্ট করে নিই। আই ওয়ান্টেড টু গিভ ইউ অ্যা সারপ্রাইজ। বাট হোয়েন আই রিচড দেয়ার, আই ফাউন্ড আউট দ্যাট ইউর আঙ্কেল ওয়ান্টেড টু ফিক্স ইউর ম্যারেজ উইথ অ্যা রিচ ম্যান। এন্ড ইউ নো, একজন ইন্টারেস্টেড ছিল। তোমার চাচর বিজনেস পার্টনার। যার মাধ্যমে উনি ডিলটা পেয়েছিলেন। আমি তাই ওই লোককেই এই ডিল থেকে বের করে দিয়ে তোমার চাচাকে অফার দেই। উনি একসেপ্ট করে নেন। তারপর জানতে পারলাম, তুমি বিয়েতে রাজি না। বিকজ অফ দোউজ ফলস রি-উমার এবাউট মি এন্ড অলসো ইউ থিংক অ্যাই অ্যাম অ্যা মা-ফিয়া! দ্যাটস হোয়াই….. তখন যদি তুমি জানতে আমিই জায়ান, তুমি আমার থেকেও দূরে সরে যেতে।”

নিঝুমের কাছে এবার সব পরিষ্কার। তার বড়ো আব্বু তাকে ধনী কারও সাথে বিয়ে দিয়ে সাথে নিজের বিজনেসেরও ফায়দা করতে চেয়েছিল। আসলে বিজনেস ওয়ার্ল্ডে এটা কমন বলতে গেলে। কিন্তু এটা তো সত্যিই যে আলফি যদি তখন নিজের সম্পূর্ণ পরিচয় প্রকাশ করতো তবে সে আলফির থেকেও দূরে সরে যেত। সে সবসময় একটা নির্ঝঞ্ঝাট জীবন চেয়ে এসেছে। কিন্তু চাইলেই কী হয়? নিঝুম হতাশ নিঃশ্বাস ছাড়ে। আজ সে তার মনকে প্রাধান্য দিবে।

“আলফি, আই লাভ ইউ।”

চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন৷ কপি নিষিদ্ধ। রিচেক হয়নি।