আশার হাত বাড়ায় পর্ব-৩০+৩১

0
149

#আশার_হাত_বাড়ায়|৩০|
#ইশরাত_জাহান
🦋
তিনদিন হয়ে গেলো কক্স বাজারের সব জায়গায় ঘুরে বেড়ায় সবাই।আজকে মিস্টার জায়ানের মেয়ের গায়ে হলুদ।রাতে অনুষ্ঠান হবে।ফাইভস্টার হোটেলে অনুষ্ঠান।সবাই একই রঙের পোশাক পরে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছে।হলুদ গাউনের সাথে কলাপাতা রঙের ওড়না আর মাথায় হিজাব পরে আছে শ্রেয়া।মিমি নিজেও হিজাব পরেছে।শ্রেয়া আর অর্পাকে দেখে ভালো লাগলো তার কাছে।সবাই এসে এদিক ওদিকে ছড়িয়ে গেলো।ফারাজ নিজের মতো এনি তার মতো ক্লায়েন্ট নিয়ে কথা বলছে।বিদেশী দুই ক্লায়েন্ট আজকের অনুষ্ঠান শেষ করে চলে যাবে।ওদের কাজ শেষ।আজকে শুধু অনুষ্ঠানের জন্য থেকে গেছে।অনেকক্ষণ ধরে শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে আছে জ্যাক।আজকে শ্রেয়া একটু সেজে এসেছে।দেখতে অন্যদিনের থেকে আরো বেশি আকর্ষণীয় লাগছে।শ্রেয়ার সবকিছু যেমন তেমন ওর চোখটা একটু বেশি সুন্দর।বলা চলে চোখের জন্যই ওর সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে।আজ সেই চোখে কাজল দিয়েছে শ্রেয়া।জ্যাক এসে শ্রেয়ার সাথে কথা বলে।শ্রেয়া আশেপাশে তাকিয়ে জ্যাকের সাথে কথা বলতে থাকে।জ্যাকের চোখ শ্রেয়ার আপাদমস্তক বিচরণ করতে থাকে।শ্রেয়াকে বাজে দৃষ্টিতে দেখছে জ্যাক।শ্রেয়া তাকিয়ে নেই জ্যাকের দিকে।সে তার মতো আছে।পাশে থাকা আরেকটি মডার্ন মেয়ের সাথে কথা বলতে ব্যাস্ত।জ্যাক শুধু ওদের সাথে দাড়িয়ে দেখছে।শ্রেয়া ইচ্ছা করেই জ্যাককে ইগনোর করতে থাকে।এভাবে চলতে চলতে অনুষ্ঠান প্রায় শেষের দিকে তখন শ্রেয়ার কাছে একটি ট্রেতে ড্রিংক নিয়ে হাজির হয় ওয়েটার।শ্রেয়াকে অফার করে বলে,”ম্যাংগো ওর অরেঞ্জ এনিথিং ম্যাম?”

গলা শুকিয়ে এসেছে শ্রেয়ার।পানি হলে বেশি ভালো হতো কিন্তু তারপরও বলে,”ম্যাংগো।”

মেয়েটি জুস দিলো শ্রেয়ার হাতে।শ্রেয়া চুমুক দিতেই মেয়েটি তার ট্রে শ্রেয়ার দিকে ঠেলে দেয়।ফলস্বরূপ কিছুটা জুস শ্রেয়ার জামায় লেগে যায়।লাল রঙের জুস হলুদ জামায় লেগে বিশ্রী দেখা যাচ্ছে।ওয়েটার ভিত মুখ ধারণ করে বলে,”সো সরি ম্যাম।আমি বুঝতে পারিনি।”

“ইটস ওকে,ওয়াশরুম কোনদিকে?”

“উপরের ফ্লোরে একেবারে কোনায়।”

“ওকে।”

শ্রেয়া চলে যায় ওয়াশরুমের দিকে।ওয়েটার মেয়েটির কাছে জ্যাক এসে কিছু টাকা দিলো।মেয়েটি হাসিমুখে টাকা নিলো।

ওয়াশরুম খুঁজতে খুঁজতে হয়রান শ্রেয়া।একেকটি রুম দেখতে পাচ্ছে।এই রুমগুলোর মধ্যে হয়তো ওয়াশরুম থাকবে।কিছু চেনে না জানে না ঢুকতেই অস্বস্তি লাগছে।একটু সাহস যুগিয়ে মেয়েটির কথামত একেবারে কোনার রুমে ঢুকলো।ওয়াশরুম দেখতে পেলো এবার।পানি ছেড়ে যে জায়গায় জুস লেগেছে ওই জায়গাটি পরিষ্কার করতে থাকে।কিছুটা পরিষ্কার হলেও রং সেই ফ্যাকাশে হয়ে যায়।বেশি চেষ্টা করা বৃথা ভেবে ওড়না দিয়ে জায়গাটি ঢেকে নেয়।বাইরে বেড় হয়ে দেখতে পেলো দরজার সাথে দাড়িয়ে আছে জ্যাক।জ্যাক দেখতে বেশ হ্যান্ডসাম। সাদা চামড়া ঘোলা চোখ ঠোটটা হালকা বাদামি।বিদেশিদের যেমন হয় ঠিক তেমনই জ্যাককে দেখতে লাগে।শ্রেয়া অবাক নয়নে দেখে ভয় পেলো।এই জ্যাক এখানে কেনো?শ্রেয়া প্রশ্ন করে,”আপনি এখানে কেনো?”

জ্যাক দরজাটা একটু চাপিয়ে দিয়ে বলে,”কাম অন হানি!আই জাস্ট ওয়ান্ট টু ইনজয় উইথ ইউ।”

শ্রেয়া চলে যেতে নেয়।কোনো কথা বলার রুচি নেই।জ্যাক শ্রেয়ার হাত ধরে আবারও সামনে নিয়ে আসে।জ্যাক বলে,”লিসেন হানি! ইউ ক্যান্ট ইস্কেপ।”

“প্লীজ লেট মি গো।আই ডোন্ট লাইক দিস।”

শ্রেয়ার কথাতে পাত্তা দিলো না জ্যাক।শ্রেয়ার হাত মোচড়াতে থাকে।আর দৃষ্টি তার শ্রেয়ার বিভিন্ন স্থানে।যেটা এখন শ্রেয়া বুঝতে পারছে।পারবে না কেনো?এখন শ্রেয়া জ্যাকের অতি নিকটে ও সামনে।জ্যাকের এই চাহনি দেখে ঘৃণা লাগছে শ্রেয়ার কাছে। জোরে জোরে চিল্লিয়ে বলে ওঠে,”হেল্প হেল্প।”

কিন্তু কেউ আসছে না।শ্রেয়া এবার কান্না করে দিলো।মাথার পিনগুলো একটু ঢিলে হয়ে আসে হিজাবটা বেকে যায়। ইনার থাকার কারণে একটু নিজেকে ধরে রেখেছে।জ্যাক শ্রেয়াকে নিয়ে এক প্রকার জোর করতে শুরু করলো।আরো বিভিন্ন কথা বলছে ইংরেজিতে।যেগুলো বিষের মত লাগছে শ্রেয়ার কাছে।এক সময় না পেরে শ্রেয়া ভাবলো তাকে এমন কিছু করতে হবে যাতে জ্যাক ওকে ছেড়ে দেয়।বুদ্ধি খাটিয়ে শ্রেয়া দেখলো আজ সে উচু হিল পরেছে। হিলের সাথে উচু করে স্থানের যে স্ট্যান্ড ওটা চিকন আর শক্ত।যার কারণে এটা উচু হয়ে আছে।এই হিলের একটা আঘাত পেলে জ্যাক সরে যেতে পারে।ভাবতে ভাবতে শ্রেয়া তার পা উচু করে হিল দিয়ে জ্যাকের পা বরাবর রেখে জোরে পিষতে থাকে।প্রথমে কিছু বুঝতে না পারলেও কয়েক সেকেন্ড পর ব্যাথা অনুভব করে জ্যাক।একটু দূরে সরে গেলেই শ্রেয়া তার পা দিয়ে সোজা জ্যাকের পু রু ষ ত্বে আঘাত করে।চিল্লিয়ে বলে,”মেয়েরা অসহায় থাকে ঠিকই সময় হলে নিজেকে রক্ষা করতে জানে।”

বলেই হাঁফাতে হাঁফাতে শ্রেয়া বেড় হতে নিবে ধাক্কা খেলো এনির সাথে।এনির পাশেই ফারাজ আছে।তার কিছুটা দূরে অর্পা মিরাজ আর মিমি।শ্রেয়াকে দেখতে না পেয়ে খুজতে খুজতে এসেছে।শ্রেয়া হাঁফিয়ে উঠেছে।এতক্ষণ অনেক ভয়ে ভয়ে ছিলো।এনির কাছে এসে এনিকে শক্ত করে জড়িয়ে কান্না করছে।ফারাজ ভিতরে এসে দেখলো জ্যাককে।কি হয়েছে এটা আন্দাজ করেছে ফারাজ।জ্যাককে কোকড়াতে দেখে বুঝে নিলো শ্রেয়া ওকে আঘাত করেছে।ফারাজ মুখে ফিচেল হাসি ফোটালো।যাক সময় থাকতে তো সে নিজেকে রক্ষা করতে পেরেছে।এটাই অনেক।ঠিক তখনই সেখানে উপস্থিত হয় আরো একজন বিদেশী ক্লায়েন্ট।জ্যাকের কাছে এসে বলে,”হাও ডিড ইট হেপেন?”

জ্যাক লোকটির হাতের সাহায্যে উঠে দাড়ালো।তারপর শ্রেয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,”দিস লেডি,ইয়েস দিস লেডি ট্রাই টু সিডিউস মি।এন্ড নাও শি হার্ট মি।”

শ্রেয়া কথাটি শুনে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে,”ইউ আর এ লায়ার।”

এনির দিকে ঘুরে বলে,”বিলিভ মি!আমি এগুলো করিনি।আমি তো জামা পরিষ্কার করতে এসেছি আর উনি আমাকে নিয়ে বাজে ব্যাবহার শুরু করেছিলেন।কথার ছলে টাকার অফার দিয়েছিলেন।”

জ্যাক আর শ্রেয়ার কথা কাটাকাটি চলতে থাকে।এক পর্যায়ে জ্যাক নোংরা দৃষ্টি দিয়ে বলে,”ইউ বি*চ।”

আর কন্ট্রোল করতে পারলো না ফারাজ।সোজা এসে মারতে লাগলো জ্যাককে।জ্যাককে ঘুষি মারতে থাকে আর বলে,”মেয়েদের রেসপেক্ট করতে শিখিস নি? তোরা বিদেশী হয়ে যদি মেয়েদের সাথে এমন করিস তাহলে মেয়েজাতির সম্মান কোথায়?”

আরো মারতে থাকে ফারাজ।এবার জ্যাকের অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। আর বেশি মারতে থাকলে বা”জে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।এনি জোরে জোরে বলতে থাকে,”স্টপ নাও হ্যান্ডসাম।নাও ইটস ঠু মাচ।”

কিন্তু ফারাজের কোনো রেসপন্স নেই।সে তার মতো মারতেই থাকে।এক পর্যায়ে শ্রেয়া এসে বাধা দেয় ফারাজকে।অর্পা রাগী চোখে মিরাজের দিকে তাকিয়ে বলে,”ভাইকে কি সামলাতে পারছো না।রাগের মাথায় আছে ভাই এখন।শ্রেয়াকে উল্টা পাল্টা কিছু যদি বলে দেয়।তাড়াতাড়ি যাও।”

মিরাজ হা হয়ে এতক্ষণ ভাইয়ের মার দেখছিলো।বউয়ের কথা শুনেও তার কোনো প্রতিউত্তর পাওয়া গেলো না।একটা মেয়ের জন্য এমন মার মারবে বুঝতে পারেনি মিরাজ।অবাক হয়ে আছে এখনও।অর্পা বিরক্ত হয়ে ঘুতা দিলো মিরাজের বুক বরাবর।হুশ ফিরলো মিরাজের।অর্পা আবার বলে,”ভাইকে যেয়ে আটকাও।”

মিরাজ দ্রুত গেলো ফারাজের কাছে।শ্রেয়া সামলাতে আসলেও ফারাজ বা জ্যাককে ধরেনি।শুধু হাত ইশারা করে বলে,”স্যার প্লিজ ছেড়ে দিন।ওনার অবস্থা খুবই খারাপ।”

মিরাজ এসে এবার ফারাজের দুই হাত আঁকড়ে নিলো।রাগী দৃষ্টি এখনও জ্যাকের দিকে।অতপর শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”ইউ ইডিয়ট!নিজেকে প্রোটেক্ট করতে জানেন না?এই লোকটা আপনার দিকে কু দৃষ্টি দিয়ে ছিলো শুরু থেকেই।আরে আমি তাই বুঝতে পারছি আর আপনি বুঝতে পারেননি।বাহ!একটা ছেলে বাজে ভাবে আপনার কাছে আসতে চায় আপনি নিজেকে এলার্ট রাখেন না।দোষ তো ওর একার না দোষ আপনারও।বিবেক দিয়ে চলেন না।এক দুনিয়া থেকে এসেছেন তো শত দুনিয়ার সম্মুখীন হবেন।বাচ্চা না আপনি।সেন্স অফ হিউমার থাকতে হয়।যত্তসব বিবেকহীন লোকজন।”

বলেই ফারাজ চলে গেলো।যাওয়ার সময় মিমিকে ক্রস করে যায়।মিমি নিজেও ভয় পেয়ে চুপ করে আছে।শ্রেয়ার খারাপ লাগলো কথাগুলো।মূলত ফারাজের কথার মানে ছিলো শ্রেয়াকে আগে থেকে সতর্ক হওয়া উচিত ছিলো।তাহলে এই পরিস্থিতি আসতই না।

ঘরে এসে বসে আছে ফারাজ।অনেকক্ষণ হয়ে গেছে পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক।ফারাজ নিজেও এখন শান্ত।এনি এসেছে ফারাজের রুমে।বলে,”আসবো হ্যান্ডসাম?”

“হুম।”

এনি এসে ফারাজের পাশে বসে বলে,”এতটা হাইপার হওয়া উচিত ছিলো না।শেহনাজ হার্ট হয়েছে।”

“চ!একটা মেয়ের দিকে পুরুষের নজর থাকে এটা সেই মেয়ে বুঝতে পেরে নিজেকে সামলে চলবে না?”

“এখানে শেহনাজের কি করণীয়?ও তো যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখেছে।জ্যাক নিজেকে কন্ট্রোল রাখেনি।”

“এনি আই মাস্ট সে জ্যাক ইজ দ্যা মেইন ক্রিমিনাল বাট মিস শ্রেয়া শুড বি এলার্ট।সে চাইলে ওয়াশরুমে কাউকে নিয়ে যেতে পারতো।অর্পা নিজেও তো ছিলো সেখানে।অর্পা তো না করতো না।”

“হ্যাঁ এটাও ঠিক।কিন্তু হ্যান্ডসাম!তোমাকেও বুঝতে হবে শেহনাজ অতটাও অগ্রিম কিছু ভাবেনি।”

“ভাবা উচিত ছিলো এনি।মেয়েদের যেমন স্বাধীনতা দরকার ঠিক তেমন নিজেকে রক্ষা করাটাও দরকার।শুধু স্বাধীনতা দিয়ে কিছুই হয় না যদি নারী তার ইজ্জত মান ধরে রাখতে না পারে।শুধু মিস শ্রেয়া বলে কথা না সব মেয়েদেরকেই সম্মানের সাথে স্বাধীনতা চাওয়া উচিত।নারী তুমি শরীরের নাশকতায় চাইবে স্বাধীনতা যাহাতে আছে পুরুষের চাওয়া পাওয়া।তাহলে তো হবে না।নারীর স্বাধীনতা হলো এই সমাজের দুরবস্থা থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য।”

এনি ভেবে দেখলো ফারাজ ভুল কিছু বলেনি।কিন্তু শ্রেয়া তো ফারাজের এসব কথা বুঝবে না।বুঝবে যদি ভালোভাবে তাকে বুঝিয়ে বলা হয়।

“তুমি অনেক পঁচা হয়ে গেছো পাপা।”

হঠাৎ মিমির কথা কর্ণপাত হতেই পিছনে ফিরলো ফারাজ।মিমি মুখ গোমড়া করে আছে।ফারাজ হাত দিয়ে ইশারা করলো মিমিকে কাছে আসতে।মিমি ফারাজের কোলে এসে বসতেই ফারাজ বলে,”কি পঁচা কাজ করেছি আমি?”

“তুমি আন্টিকে খুব বকা দিয়েছো।এভাবে কেউ কাউকে বকে না।তুমি কেনো বকা দিবে?ভালোভাবে বুঝিয়ে বলবে।আমাকেও তো কি সুন্দর চকলেট দিয়ে বুঝিয়ে বলো।”

মিমির দিকে তাকিয়ে ফারাজ বলে,”তোমার শ্রেয়া আন্টি আর তোমার বয়সের দূরত্ব অনেক বেশি মা।শ্রেয়া আন্টি এখন বড়।তাকে কি এসব দিয়ে বুঝিয়ে বলা যায়?”

“তাই বলে তুমি ইডিয়ট বলে গালি দিবে?যাও এখন সরি বলো।আন্টি কান্না করছে।”

“হোয়াট?”

“হ্যাঁ,তুমি এখন আন্টিকে সরি বলবে পাপা।তাহলেই আমি তোমার সাথে কথা বলব।তার আগে না।”

বলেই দৌড়ে গেলো মিমি।ফারাজের আড়ালে এনি মিচকি হাসি দিয়ে জোরে বলে,”মেয়ের কথা রাখতে শেখো হ্যান্ডসাম।ভালো ফলাফল পাবে।আর সরি বললে কেউ পঁচা হয়ে যায় না।সরি না বললে উল্টো তুমি তোমার মেয়ের কাছে পঁচা হবে।”

ফারাজ মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালো।এনি চলে যেতেই ফারাজ গেলো শ্রেয়া অর্পা যে রুমে আছে ওই রুমের দিকে।দরজায় টোকা দিতেই অর্পা বলে,”আসেন ভাইয়া।”

“মিস শ্রেয়া কোথায়?”

“ও তো রুফে আছে।মন ভালো নেই তাই রুফের দিকে গেছে।”

ফারাজ কোনো কথা না বলে চলে গেলো সেদিকে।ফারাজ যেতেই অর্পা কল দিলো এনি আর ইভাবে।পাশে মিমিও ছিলো।সবাই মিলে ফারাজকে ফলো করতে করতে চলে গেলো রুফের দিকে।চারপাশের বড় বড় নারকেল গাছের শীতল বাতাস রুফের চারপাশের বয়ে যাচ্ছে।শ্রেয়া ছাদের এক কোনায় দাড়িয়ে আছে।মাথায় ওড়না দেওয়া।ফ্রেশ হয়ে রুফে এসেছে।ফারাজ কিছু তাজা ফুলের ঘ্রাণ পাচ্ছে।পাশেই অহরহ টব থেকে ফুটন্ত বেলিফুলের ঘ্রাণ।ভালোই লাগছে পরিবেশটা।পাশে পাশে ঝরবাড়ি দেওয়া।ঘুরতে আসা মানুষগুলোর জন্য এভাবে সাজানো এই রুফ।ফারাজ গোলা খাকারি দিলো।পুরুষালি কণ্ঠে হালকা কেপে পাশে তাকালো শ্রেয়া। ফারাজকে মাথা নিচু করে নিলো।ফারাজ সোজা সমুদ্রের ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।শ্রেয়ার উদ্দ্যেশে বলে,”আমরা মিষ্টি কিনি কিভাবে জানেন তো মিস শ্রেয়া?”

শ্রেয়া আড়চোখে দেখছে ফারাজকে।ফারাজ জানে শ্রেয়া উত্তর দিবে না।তাই ফারাজ বলে,”ছোট বেলার এক কাহিনী বলা যায় এখনও এমনটাই করি।শুনবেন কি?”

“হ্যাঁ।”

“আমি ছোট থেকে খুব মিষ্টি খেতাম।বলা চলে বাবা টাকা দিলে টিফিনে মিষ্টি কিনে খেতাম।সেরা দোকানের মধ্যে একটি দোকান ছিলো যেটা একটু কাছে।প্রায় প্রায় যেতে যেতে একদিন দেখলাম মিষ্টি যেখানে থাকে ওই স্থানে গ্লাস খোলা। একটু সামান্য কিছুক্ষণের জন্য খোলা মিষ্টিতে মাছি এসে ভনভন করছে।ওই মিষ্টি দেখে খাওয়ার রুচি মরে যায়।ওইদিন আমি মিষ্টি না কিনেই বাসায় আসি।এরপর দোকান পাল্টাই।”

মিষ্টি নিয়ে ফারাজের এমন কথা শুনে শ্রেয়া তাকিয়ে আছে ফারাজের দিকে একমনে।ফারাজ ফোঁস করে নিশ্বাস নিয়ে বলে,”বোঝেননি নিশ্চয়ই?”

“কি বুঝবো?”

“আমরা ছেলেরা মেয়েদেরকে মিষ্টি ঐশ্বর্য রমণী এসব নামে ডাকি।মোহিত হয়ে ডাকা হয়।যেমনটা মিষ্টি এক ভালোবাসার খাবার তেমন নারী হলো ভালোয়াবার স্থান।মিষ্টি যখন ঢাকনা/গ্লাস দিয়ে ঢাকা ছিলো তখন ঐ মিষ্টির উপর মাছি বসেনি।কিন্তু উন্মুক্ত মিষ্টিতে মাছি এসে বসেছে।সেখানে আপনি একজন নারী মিস শ্রেয়া।আপনার দিকে পুরুষের নজর থাকবে।দেখুন পৃথিবীতে ভিন্ন মস্তিষ্কের মানুষ আছে।নারী পুরুষের মধ্যেও ভালো মন্দ আছে।এর একটা প্রমাণ আমি আপনি নিজেদের জীবন থেকে পেয়েছি।নারীরা অনেক সময় নিজেদের রক্ষা করতে পারে না কারণ তারা নর্দমার পশুদের খোক্করে পড়ে।আবার কিছু পুরুষের জীবনে নোংরা মস্তিষ্কের নারী জোটে।পুরুষকে করে দেয় ছারখার।তাই যতটুকু সম্ভব নিজেদের রক্ষা করতে হয়।আপনি যখন কোনো সমস্যায় পড়বেন অগে দেখবেন আপনার আশেপাশে লোক আপনাকে কোন পরিবেশে নিয়ে যাচ্ছে।আদৌ কি আপনাকে সাহায্য করছে নাকি সাহায্যের নামে ঝুঁকিতে ফেলছে।আপনার পোশাকে জুস ইচ্ছা করে ঢালা হয়।মিমি আমাকে বলে দেয় এটা।তবে মিমি বুঝতে পারে না আগে।আমরা আপনাকে না পেয়ে খুজতে খুজতে এদিক ওদিক জিজ্ঞাসা করাতে মিমি বলে আপনি এদিকে এসেছেন।মিমি মনে করেছিলো আপনাকে ওয়াশরুম দেখিয়ে দেওয়ার জন্য জ্যাক হয়তো ওয়েটারকে টাকা দিয়েছে।ছোট মেয়ের মাথায় যেটুকু আসে আর কি।কিন্তু আমরা বুঝে যাই।মেয়েটাকে ফায়ার করে দেওয়া হয়েছে।কিন্তু আপনাকেও আরো বেশি সচেতন হতে হবে।আপনি অন্তত ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য অর্পা বা ইভাকে নিতে পারতেন।যেহেতু কিছু চিনেন না জানেন না।”

কথাগুলো বলে ফারাজ আবার চলে যেতে নেয়।কিছুটা হেটে আবারও শ্রেয়ার দিকে ঘুরে বলে,”রাগের মাথায় কথা শুনিয়ে দিয়েছিলাম। আঘাত করার ইচ্ছা ছিলো না।”

সরাসরি সরি বলতে পারলো না ফারাজ।কিন্তু এটা যে সরির জন্য বলা শ্রেয়া বুঝে নিলো।ফারাজ যেতেই ঠোটটা হাসি হাসি করে চাঁদ দেখতে থাকলো।

চলবে…?

#আশার_হাত_বাড়ায়|৩১|
#ইশরাত_জাহান
🦋
মিস্টার জায়ানের মেয়ের বিয়ের সমস্ত অনুষ্ঠান আজ শেষ হলো।কাল ঢাকায় ব্যাক করবে সবাই।এই কয়টা দিন শ্রেয়া আর ফারাজের মধ্যে বন্ধু সুলভ আচরণ গড়ে উঠেছে।তবে এটা অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি না।শ্রেয়া ফারাজের সাথে কাজ নিয়ে বেশি কথা বলে।কোনটা কোম্পানির জন্য বেস্ট কোনটা বেস্ট না এগুলোই নিজে থেকে ফারাজকে বলে শ্রেয়া।এনি আর শ্রেয়ার একই মতামত হলে সেই ডিজাইন নিয়ে কাজে লেগে পড়ে।শ্রেয়া অনুভব করেছে যত দিন যাচ্ছে সে ফারাজকে ভালোবেসে ফেলেছে।হ্যাঁ এই সাতদিন সে তার ভালোবাসা সম্পর্কে অবগত।নিজে থেকেই লজ্জা পেতে থাকে আবার ফারাজকে দেখলে আরো বেশি লজ্জা লাগছে।আজকে সবাই রাতের আধারে সমুদ্র দেখতে এসেছে।বলা যায় সমুদ্র বিলাস।
মিমিকে নিয়ে শ্রেয়া নিজের মতো ঘুরছে।এনি ফারাজের সাথে কথা বলছে। ইভা ওর বয়ফ্রেন্ডকে জানিয়েছিলো সে কক্স বাজারে এসেছ।তাই সেও কক্স বাজারে আসে।কাল একসাথে যাবে ঢাকায়।মিমি শ্রেয়ার হাত ধরে সমুদ্রের কাছে আসে।বেশি দূরে না যেয়ে শুধু সমুদ্রের তীরে দাড়িয়ে থাকে।পানি ছুড়তে থাকে মিমি শ্রেয়ার দিকে আর শ্রেয়া সেও মিমির সাথে তালে তাল মেলাতে থাকে।এনি ফারাজকে বলে,”ওদেরকে একসাথে দেখতে ভীষণ ভালো লাগছে তাই না হ্যান্ডসাম?”

“হুম।”

“একদম মা মেয়ের মতো লাগছে তাই না।”

ফারাজ তাকালো এনির দিকে।এনি ফারাজকে দেখে বলে,”না মানে দেখতে তেমনই লাগছে তাই না?”

“কিছুটা।”

এনি আর কথা বললো না।অতিরিক্ত কিছু বললে ফারাজ আবার কি রিয়েক্ট করবে কে জানে।এমনি একটু আগে কাজ শেষ করে শান্তির জন্য এখানে এসেছে।এত ব্যস্ততার পরেও একটু রিফ্রেশমেন্ট দরকার।এখনই ফিউচার প্ল্যান নিয়ে বলার সাহস এনি পাচ্ছে না।শ্রেয়া আর মিমির কিছু ছবি তুলে নিলো।অন্ধকারে চারপাশে থাকা ক্ষুদ্র আলোয় ছবিগুলো স্পষ্ট না আসলেও বোঝার উপায় আছে।মিমির মুখটা বোঝা যায়।ফেইসবুকে পোস্ট করে হ্যাপি মোমেন্ট লিখে।এই পোস্ট নজরে আসে জিনিয়ার।বিরক্ত হলো সে।শ্রেয়াকে সহ্য করতে পারছে না।সিনথিয়ার বাবা মাকে কল করে জানান,”আপনারা পরশুদিন আসবেন।আমি ফারাজ আর সিনথিয়ার বিয়ে নিয়ে কথা বলতে চাই।”

এদিকে মিরাজকে কল করে জানিয়ে দিলো সিনথিয়া তার পরিবার নিয়ে আসবে।মিরাজ কি বলবে বুঝতে পারছে না।এটা কেনো হতে হলো।শুধু এটুকুই বলে,”ভাইয়া এমন অহংকারী ন্যাকু মেয়ে পছন্দ করে না মা।ভাই আর মিমির জন্য লাগবে সাংসারিক ও ভদ্র মেয়ে।”

“ওসব সাংসারিক মেয়ে আগেকার সময় লাগতো।এই সময়টা মানুষ এসব দেখে না।এই সময়ে মানুষ যোগ্যতা দেখে।”

বেশি কিছু বলল না মিরাজ।মায়ের মুখের উপর এখন কিছু বলা মানে বিপদে পড়া। অর্পাকেও কিছু শেয়ার করলো না।বেচারি এমনি দুশ্চিন্তা করার মানুষ।শুধু তার বাবাকে একটি ম্যাসেজ দিয়ে জানিয়ে দিলো।বাবা রিপ্লাই করে,”আমি দেখছি কি করা যায়।চেষ্টা করবো সবকিছু সামলানোর কিন্তু বাকিটা ফারাজের হাতে।”

মিমির ঘরে একা ঘুমিয়ে আছে অহি।ঘুমের মধ্যেই অনুভব করলো দরজা ধাক্কানোর শব্দ।দরজা ধাক্কানোর শব্দে দরজা খুলে অহি দেখলো সামনে তিহান দাড়িয়ে আছে।তিহানকে দেখে অহি বলে,”কি চাই তোমার?”

“আমার ঘরে চলো।”

“কেনো?”

“স্বামী স্ত্রী আমরা।একসাথে ঘুমাবো।”

“পুরুষত্বের তেজ উঠেছে বুঝি!”
কিছুটা তিরস্কার করে বলে।

“দেখো বাড়াবাড়ি করো না।স্বামী স্ত্রী ঝামেলা হয়।তাই বলে এভাবে ঘর পাল্টে থাকা মানায় না।”

“কোনটা মানায় আর কোনটা মানায় না এটা আমি তোমার মতো লোকের থেকে জানতে চাই না।বিবেকহীন লোক যে পারে না স্ত্রীকে সম্মান দিতে যে পারেনা সন্তানকে শিক্ষা দিতে ভালোবাসতে সে কখনও কাউকে জ্ঞান দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না।”

“অনেক হয়েছে গলাবাজি।”
বলেই অহির হাত ধরে মিস্টার তিহান।হাত ছাড়িয়ে দূরে সরিয়ে দিলো অহি।চিল্লিয়ে বলে,”খবরদার অধিকার খাটাতে আসবে না।সম্মান তো অর্ধেক চলেই গেছে।বেশি বাড়াবাড়ি করলে তালাক দিয়ে চলে যাবো।তোমার সম্মান আর এই বাড়িতে তো থাকবেই না সাথে করে সমাজের চোখেও হাস্যকর হয়ে যাবে ব্যাপারটা।”

অহির এই নতুন রূপ দেখে অবাক হয় তিহান।অবাক নয়নে বলেন,”এতটা পরিবর্তন?”

“বাধ্য করেছো তুমি।এই জীবনে না পেলাম স্বামীর সুখ না পেলাম সন্তানদের ভালোবাসা।না পেলাম নিজের একটা নির্দিষ্ট পরিচয়।এখন আমার শুধু একটাই পরিচয় আমি মিমির নানী।আমাকে আমার মিমি অনেক ভালোবাসে।এই বাড়িতে আছি ফারাজের দয়ায়।ছেলেটা আমাকে ভালোবাসে আমার ভরণ পোষণ মিটিয়ে দেয়।ওর জন্য আশ্রয় পেয়েছি আমি এই বাড়িতে।তোমাদের জন্য না।বেশি কিছু করলে বাধ্য হবো এই বাড়ি ছাড়তে।মান সম্মান ডুবে যাবে তোমার।মনে রাখবে গরীবের মান সম্মান গেলেও পাবলিক হয়না বড়লোকদের সবকিছু ছড়াছড়ি হয় অতি সহজে।”

তিহান এবার কিছু না বলেই চলে আসতে নেয়।ঠিক তখনই পিছন থেকে অহি বলে,”সময় থাকতে দ্বিতীয় বউ আর মেয়েকে অবহেলা করেছিলে।এখন সময় পরিবর্তন হয়েছে।উপরে আল্লাহ দেখছেন।তিনি সবকিছুর হিসাব মিলাতে থাকেন।আমার মেয়েটা যে নোংরা কাজ করেছে তার শাস্তি বাবা মা স্বরূপ আমরাও পাবো।এই দুনিয়ায় না পেলেও আখিরাতের জন্য শাস্তি তো আছেই।বাবা মা শিক্ষা না দিলে সেই বাবা মাকেও হিসাব দিতে হবে তিহান।কৃত কর্মের জন্য প্রস্তুত হও।”

অহির একটা কথাও মাটিতে ফেলার মতো না।সত্যি বলতে এই কয়েকদিন অহির এই দূরত্ব আর অবহেলা সজ্য হচ্ছে না মিস্টার তিহানের।তাই তো আজ ছুটে আসে অহিকে নিতে।কিন্তু অহি আজ তাকে তার স্থান বুঝিয়ে দিলো।মিস্টার তিহান আজ একটু উপলব্ধি করলো।সে যে ভুল করেছে তা এখন তা এখন অনুশোচনায় জেগে উঠেছে।কিন্তু এখন সে কিছুই ঠিক করতে পারবে না।পরিস্থিতি তাকে ঠিক করিয়ে দিবে।

পরদিন সকালে ফারহান চৌধুরী আসেন শ্রেয়ার মায়ের কাছে।সাথে আছে মিসেস জুঁই।সৃষ্টি বেগম ঘরে যা ছিলো তাই দিয়ে আপ্যায়ন করতে থাকলেন।লজ্জা পাচ্ছেন তিনি।আগে থেকে জানলে ফল মিষ্টি আনতে পারতেন।রিমলি তাও চেষ্টা করলো পাশের দোকান থেকে কিছু আনার।নুডুলস এনে রান্না করছে আর কিছু পিঠা সৃষ্টি বেগম বানিয়ে রেখেছিলেন নিজেদের জন্য।ওগুলো দিয়ে সামনে পরিবেশন করলেন।লজ্জা মুখে বললেন,”আমি তো জানতাম না আপনারা আসবেন।বাড়িতে কোনো ছেলে মানুষও নেই।আমি আর আমার মেয়ে।ঢাকা শহরের এদিক ওদিক কমই যাওয়া হয়।ভুল কিছু করলে মনে নিবেন না ভাইজান।”

ফারহান চৌধুরী স্মিত হাসলেন।মিসেস জুঁই বলেন,”কপালে থাকলে পরেরবার পেট ভরে খেয়ে যাবে।তখন বেয়াই অ্যাপায়ন করতে পারবেন আপা।”

বেয়াই আপ্যায়ন শুনে অবাক হলেন সৃষ্টি বেগম।তবে রিমলি ঠিকই বুঝলো বিষয়টি।ঘরের মধ্যে ছিলো সে।ঘর থেকেই শুনছে ওদের কথাবার্তা।শ্রেয়ার জন্য সম্বন্ধ এসেছে বুঝতে পারলো।তাও কি না তার কল্পনার মানব।রিমলি কেনো জানেনা চায় ফারাজ আর শ্রেয়ার মিল হোক।তাই তো এদের সম্বন্ধের কথা শুনে ঘরের মধ্যেই লাফাতে থাকে দুই হাত উচু করে।অর্পাকে ম্যাসেজ দেয়,”আমার আপুর বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। হুররে!তোমার শশুর এসেছে তোমার ভাসুরের জন্য।”

ম্যাসেজ দেখে খুশি হয় অর্পা।মিরাজকে বলে ঘটনা।মিরাজ তো দেখানো হাসি হেসে দেয়।
বাসায় গেলে বাবা মায়ের এই দুইদিক থেকে দুইটা সম্বন্ধ নিয়ে একটা তুলকালাম বাদবে এটা সে শিওর।কোনো একটা সুনামি আজ আসবে।

সৃষ্টি বেগম কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বলেন,”বুঝলাম না।কার বেয়াই মানে কার সাথে কার সম্পর্ক?”

“আপনাদের শ্রেয়াকে আমাদের অনেক ভালো লাগে।যেমন মিষ্টি তেমন নম্র ভদ্র।আপনার কি আমাদের ফারাজকে ভালো লাগে?”

এ যেনো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি।সৃষ্টি বেগম শাড়ির আঁচল মুখে এগিয়ে দিয়ে বলেন,”আপনারা এত বড় পরিবার থেকে সম্বন্ধ এনেছেন এটাই তো বিশ্বাস হয় না।”

“হয়ে যাবে বিশ্বাস।সময় লাগবে তো একটু।কিন্তু ফারাজকে আপনার পছন্দ তো?”

“ফারাজ বাবা অনেক ভালো মানুষ।যতটুকু দেখেছি বলতে পারি সে একজন বিচক্ষণ পুরুষ।এমন পুরুষ মানুষকে না বলার উপায় নেই।”

“তাহলে আর কি?আমরা ফারাজের সাথে কথা বলে দেখি।আর আপনারা শ্রেয়ার সাথে কথা বলুন।দুই তরফা রাজি হলে বিয়ে দিয়ে দিবো।”

মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলেন সৃষ্টি বেগম।জিনিয়ার কানে পৌঁছে গেলো ব্যাপারটি।ফারহান চৌধুরীর ড্রাইভারকে কল করে ফারহান চৌধুরীর খোঁজ নিতেই জানতে পারেন সবকিছু।রাগে দুঃখে ছক কষছে এই সম্পর্ক ভাঙার।

রাতে সবাই ঢাকায় ফিরে আসে।যে যার বাড়িতে পৌঁছে যায়।ফারাজ এসেই সবার সাথে সাক্ষাৎ করে নিলো।তারপর ফ্রেশ হয়ে এসেছে।ফ্রেশ হয়ে আসতেই ফারাজের রুমে হাজির হয় জিনিয়া।জিনিয়াকে আসতে দেখেছে অহি।কিছুটা জানে ফারাজ সম্পর্কে।অহি তাড়াতাড়ি করে ডাক দিলেন মিরাজকে কল করতে লাগলেন ফারহান চৌধুরীকে।কিছু একটা অঘটন ঘটে যেতে পারে এখন।ফারাজ তার মাকে দেখে বলে,”কিছু বলবে মা?”

“তোমার বিয়ে নিয়ে কথা চলছে এটা কি তুমি জানো?”

ভ্রুকুটি করে ফারাজ বলে,”হোয়াট?”

হাঁফাতে হাঁফাতে ফারাজের ঘরে আসলো মিরাজ।কোনমতে দরজার কাছে এসে দাড়ালো।একটুর জন্য পড়ে যায়নি।অর্পা কোনমতে দৌড়ে আসলো।মিরাজের দৌড় দেখেই সে দৌড় দেয়।কাহিনী কি কিছুই জানে না।মিরাজকে দেখে জিনিয়া বলে,”ওহ তাহলে চলেই এসেছো আমাকে বাধা দিতে।কিন্তু সত্যিটা তো জানবেই ফারাজ।তোমরা ওর সাথে ওর অ্যাসিসট্যান্টকে বিয়ে দিতে চাও এটা জানার অধিকার তো আছে ওর।”

“ব্যাপারটা এভাবে না যেভাবে তুমি প্রেজেন্ট করছো মা।বাবা ছিলো তো।সেই বুঝে নিতো।”

ফারাজ এদের কথার মাঝে বলে,”আমার অ্যাসিসট্যান্ট মানে?মিস শ্রেয়ার সাথে আমার বিয়ের কথা?”

“হ্যাঁ তোমার বাবা যেয়ে কথা বলে এসেছে শ্রেয়ার মায়ের সাথে।সম্ভবত তোমরা রাজি হলে বিয়েটা হবে।”(জিনিয়া বলে)

অতসী এসে দাড়ালো ফারাজের ঘরের সামনে।ফোন বেড় করে ফারাজের রিয়েকশন ভিডিও করতে চায়।হয়তো ফারাজ কোনো একটা বাজে কথা বলবে।ভেঙ্গে দিবে বিয়ে। হলোও তাই।ফারাজ বলে ওঠে,”তোমরা ভাবলে কি করে আমি এখন বিয়ে করবো?”

“তোমার ভাই আর তার বউ তো মনে করে তুমি ওই ক্ষেত মেয়েটাকে ভালোবাসো।তাই তো বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।তোমার ভালোবাসার মিলন ঘটাতে।”

“হোয়াট ননসেন্স!আমি এমন কিছুই ভাবি না মিস শ্রেয়াকে নিয়ে।আমি ভালোবাসি না তাকে।বিয়ে তো দূরের কথা আমার জীবনে এখন কেউই নেই।শুধু আমার মেয়ে আছে আমার জীবনে।”

জিনিয়া তাকালো অর্পা আর মিরাজের দিকে।মিরাজ নিজেও কম না।মায়ের চালাকি ধরতে পেরে সেও মুখ খুলে।ফারাজকে প্রশ্ন করে,”তারমানে তুমি দ্বিতীয় বিয়ে করতে চাও না?”

“আমি আমার জীবনে অন্য কোনো নারীর স্থান দিতে পারবো না।”

“করবে না তো কাউকে বিয়ে।”

“না আমি বিয়ে করবো না।”

“মিস সিনথিয়াকেও না?”

সাথে সাথে ক্যামেরা বন্ধ করে দিলো অতসী।ফারাজ যে না বলবে এটা শিওর সে।জিনিয়া এবার অগ্নিদৃষ্টি দিলো মিরাজের দিকে।মুখে টেডি স্মাইল দিয়ে মায়ের দিকে তাকালো মিরাজ।কিভাবে উল্টো বিপদে ফেলতে হয় এটা সে খুব ভালো করেই জানে।ফারাজ এবার গর্জে উঠে বলে,”কি একবার মিস শ্রেয়া একবার মিস সিনথিয়া লাগিয়েছিস তোরা?”

“আমরা মিস শ্রেয়া লাগলেও মম তো মিস সিনথিয়া লাগিয়েছে।কাল সিনথিয়ার বাবা মা আসবে তোমাদের বিয়ে নিয়ে কথা বলতে।দেখো ব্রো!আমার কাছে ওই নাচঙ্গি সিনথিয়ার থেকে মিস শ্রেয়াকে বেশি পারফেক্ট লাগে।বউ ভক্ত হয়ে সাপোর্ট করছি না আমি।ভাইয়ের সুখের দিকে বিচার করে বলছি কথাগুলো।মেনে নেওয়া না নেওয়া তোমার ব্যাপার।”

মিরাজের এমন লাগামছাড়া উল্টো কথাতে ফারাজ কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না।মিরাজের কথাতে একবার মনে হচ্ছে তাকে বিয়ের জন্য জোর করা হচ্ছে আবার মনে হচ্ছে না তার মতামতের প্রয়োজন আছে এদের কাছে।ফারাজ সোজাসুজি বলে দেয়,”আমি এখন বিয়ে করবো না।দ্বিতীয় কোনো নারীকে আমার জীবনে স্থান দিবো না।কথা ক্লিয়ার?”

“ওকে।তুমি সিঙ্গেল থেকে বুড়ো হয়ে পচে মরলে আমার কি!ভাই হিসেবে দায়িত্ব ছিলো পালন করেছি।বাবার ক্ষেত্রেও সেম।এখন নিজেকে গাঙ্গে ভাসিয়ে দিবে নাকি ফুলের মতো জীবনটাকে জাগ্রত করবে এটা তোমার হাতে।আমার যায় আসেনা।চলো বউ ভাইয়ের বউ না আসুক আমাকে তো আমার বউকে নিয়ে সুখে থাকতে হবে।খুব ঘুম পাচ্ছে।”

অর্পার হাত ধরে বেড়িয়ে গেলো মিরাজ।অর্পা মিটিমিটি হাসতে থাকে।মিরাজ যে ওদের মুখ বন্ধ করতে এমন করেছে এটা অর্পা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে।এই যে ছেলে মুখ থেকে সবসময় লাগামহীন কথা বেড় হয়।

চলবে…?