আষাঢ়ের দোলনচাঁপা পর্ব-১৩+১৪

0
27

#আষাঢ়ের_দোলনচাঁপা
#পর্বঃ১৩
#Jhorna_Islam

দোলন কিছুতেই বুঝতে পারছে না এমন একটা নির্জন রাস্তায় কেনো নিয়ে এসেছে আষাঢ় তাকে। চারপাশ কেমন জনমানবহীন চারদিকে শুধু গাছপালা শুধু মাঝে মধ্যে গাড়ির হর্ণের শব্দ আসছে ভেসে পাশেই মেইন রোড। দোলনের কেমন ভয় ভয় লাগছে। মাথায় নানান চিন্তা ঘুরছে।আচ্ছা সত্যিইকি আষাঢ় তাকে এখানে ডেকেছে নাকি? দোলন আবার স্বপ্ন দেখে এখানে এসে পরেনি তো।তারাতাড়ি ফোন বের করে চেক করে মেসেজ আসলেই এসেছে নাকি, এটাও চেক করে ভুল ঠিকানায় চলে এসেছে কিনা। কিন্তু না মেসেজ ও এসেছে ঠিক ঠিকানায় ও এসেছে। তাহলে আষাঢ় গেলো কোথায় সেটাই বুঝলো না। নাকি এখানে এসে এখনো পৌঁছায় নি। দোলন আষাঢ় কে কল দেয় কিন্তু রিং হয়ে ফোন কেটে যায় রিসিভ আর হয় না । আষাঢ় এমন নির্জন জায়গায় কেনো ডেকেছে? মেরে ফেলার ফন্দি এঁটেছে নাকি? নিজের এসব ভাবনা দেখে নিজেই আবার মাথায় গাট্টি মেরে বলে ধূর আমি কিসব ভাবছি।
দোলন আবার ও ফোন দেয় আষাঢ় কে এরমধ্যে হুট করে কে যেনো দোলনের কাঁধে হাত রাখে।
দোলন পিছনে ঘুরে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিছু বলার ভাষা পাচ্ছে না। কাকে আশা করেছিল আর কাকে দেখছে সে?

“আয়শা?”
হু!” আয়শা দাঁত বের করে হেসে বলে।

“তুই এখানে কি করছিস?”

তুই যা করছিস আমিও তাই করছি।

“মানে?”

মানে হলো অপেক্ষা। তুই ও অপেক্ষা করছিস আমিও অপেক্ষাই করছি দোস্ত।

তুই কার জন্য অপেক্ষা করছিস?

তুই যার জন্য করছিস আমিও তারজন্য করছি দোস্ত।

আয়শার এরকম ভঙ্গিতে কথা বলায় রাগ উঠে যায় দোলনের। একেইতো আষাঢ়ের জন্য রাগ লাগছে আবার এই মেয়ে হেয়ালি করছে।ইচ্ছে করছে কানের নিচে দুইটা লাগিয়ে দিতে বেয়াদব মেয়েটার।

মাইর খেতে চাস? মাইর খেতে না চাইলে সব খোলসা করে বল নয়তো আমার হাত আর তোর গাল করে দিবো লাল। দাঁতে দাঁত চেপে বলে দোলন।

আরে রেগে যাচ্ছিস কেনো? তোকে যেমন আষাঢ় ভাইয়া ডেকেছে আমাকেও উনিই ডেকেছে।

একটা অপরিচিত লোক তোকে ডাকলো আর তুই কোনো কিছু না ভেবে ধেই ধেই করে নাচতে নাচতে চলে এলি? একবারও ভাবলি না খারাপ কিছু হতে পারে?

এতো ভাবাভাবির কি আছে? ভাইয়া খুব ভালো মানুষ বুঝলি? তারপর আস্তে করে বলে,,দুলাভাই হবে দুই দিন পরে আবার নাকি অপরিচিত। উনি ভেবেছে নাকের ডগায় ছয় নয় করে বেড়াবে আমাকে না বললে আমি জানতেও পারবো না বুঝতে ও পারবো না হুহ বলেই মুখ ভেংচি দেয়।

“ভাইয়া ভাইয়া করছিস কেন এতো?”

উনাকে ভাইয়া বললে তোর কি সমস্যা দোস্ত? অবুঝ গলায় জানতে চায় আয়শা।

ভাইয়া থেকে সাইয়া হওয়ার সম্ভাবনা আছে । এমনিতেই তুই লোকটাকে পছন্দ করিস এজন্য মিনমিন করে বলে দোলন।
দোলনের কথা আয়শার কান অবধি পৌঁছায় না। তাই জানতে চায়,, কি বলছিস দোস্ত?

কিছু না। এখন দেখ তোর ভাইয়া কোথায়। আমাদের এখানে ডেকে লোকটা হাওয়া হয়ে গেছে। ফোন ও ধরছে না।

ধরবেও না তুই আয় আমার সাথে। তারপর আয়শা দোলনের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে থাকে।

আরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস আমাকে?

আয় গেলেই দেখতে পাবি। ওহ আসল জিনিসটাইতো ভুলে গেছি বলেই আয়শা সাইড ব্যাগ থেকে একটা কাপড় বের করে দোলনের চোখ বেঁধে দেয়।

আয়শা কি করছিস তুই? আমার চোখ বাঁধছিস কেনো? সর এখান থেকে কি ঢং করছিস?

পাশেই একটা নদী আছে তোকে মে’রে ঐখানে ভাসিয়ে দিবো এজন্য চোখ বেঁধে নিয়েছি।

আজকাল কারো প্রতিই বিশ্বাস নেই দিতেই পারিস হুহ্।

তুই এটা আমাকে বলতে পারলি? আমার তোকে এমন মনে হয়?
দোলন কোনো উত্তর দেয় না চুপ করে থাকে।

আয়শা দোলনকে নিয়ে একটা জায়গায় দাঁড় করায়।তারপর দোলনের চোখ থেকে কাপড়টা সরিয়ে দেয়। দোলন চোখ টিপটিপ করে সামনে তাকিয়ে শুকনো ঢুক গিলে। সবকিছু স্বপ্ন লাগছে। দোলন নিজের চোখ হাতের তালু দিয়ে কচলিয়ে আবার তাকায় এতক্ষন ভেবেছে ভুল দেখছে কিন্তু না কোনো কিছু ভুল দেখছে না। সবকিছু বাস্তব আসলেই বাস্তব?

“আয়শু আমি যা দেখছি তুই ও কি তা দেখছিস?”

আয়শা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে,, “নারে দোস্ত। তুই দেখছিস তোর ভবিষ্যৎ জামাইকে আর আমি দেখছি আমার ভবিষ্যৎ দুলাভাইকে। তাই তোর আর আমার দেখা আলাদা।

দোলন আয়শার কথায় কোনো প্রতিক্রিয়া করে না সে হা করে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। সবকিছু কেমন স্বপ্নের মতো লাগছে। মনে হচ্ছে কোনো সিনেমার দৃশ্য বাস্তবে প্রদর্শন করছে।

দোলনের সামনে আষাঢ় হাঁটু গেড়ে বসে আছে। হাতে মস্ত বড় এক দোলনচাঁপা ফুলের তোড়া।
দোলন আয়শার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,,দোস্ত আমাকে একটা চিমটি কাটতো আমার না এসব কিছু বিশ্বাস হচ্ছে না।

আয়শা সত্যি সত্যিই দোলনের হাতে চিমটি কাটে।
দোলন ব্যাথায় চোখ মুখ কুঁচকে আহ্ শব্দ করে উঠে।
তোরে বলেছি চিমটি কাটতে এজন্য তুই এতো জোরে চিমটি কাটবি?

আমি নাকি তোকে মেরে ফেলবো এটা ঐটার প্রতিশোধ।

তোকে পরে দেখে নিচ্ছি আমি।

এই তোমরা থামবে কি শুরু করেছো? আশ্চর্য এরকম পর্যায়ে এসেও কে ঝগড়া করতে পারে? চুপ করো আমাকে আমার কাজ করতে দাও।বিরক্ত সুরে কিছুটা ধমকিয়ে বলে আষাঢ়।

আয়শা দোলনের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,,” দোস্ত যা করবি ভেবে চিন্তে করবি বুঝলি? এখনই কেমন ধমকাচ্ছে দেখ।”

দোলন চুপ করে আষাঢ়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
আষাঢ় গলা খেঁকাড়ি দিয়ে মুখে মিষ্টি করে হাসি ফুটিয়ে বলতে শুরু করে,,, ” শুনো মেয়ে আষাঢ় মাসের বৃষ্টিতে যখন পিচ্ছিল খেয়ে পরে তোমার মাখামাখি অবস্থা। আমি পানি দেওয়ার পর মুখ ধুচ্ছিলে ঠিক তখন আমি পরেছি। তুমিতো পরেছো কাঁদায় আর আমি তোমার প্রেমে। “.

এই আষাঢ়ের #আষাঢ়ের_দোলনচাঁপা হবে কি চাঁপাফুল? খুব যত্নে ভালোবাসায় বুকের ভিতর আগলে রাখবো। হবে কি?চাঁপাফুল হয়ে আমার হৃদয়ে সারাজীবন সুবাস ছড়াবে কি?

দোলন কিছু বলে না চুপচাপ আষাঢ়ের দিকে তাকিয়ে আছে। আষাঢ় ও দোলনের দিকেই তাকিয়ে। দুইজনের চোখে চোখে হাজারো কথা চলতে থাকে। আষাঢ়ের বন্ধুরা দোলনের পিছন থেকে আয়শা বলে চলেছে,, হ্যা বলো! হ্যা বলো! সেই দিকে যেনো হুঁশই নেই।

আষাঢ় ব্রু উঁচিয়ে বলে,, কি চাঁপাফুল কিছুতো বলো। যদিও আষাঢ় জানে তার চাঁপাফুলের উত্তর কি।তাও মন চাইছে মুখ থেকে স্বীকারোক্তি।

“আমার উত্তর জানতে চান?”

আষাঢ় মাথা নাড়িয়ে জানায়,,,” হু।”

তাহলে আমার উত্তর হলো না। আমি থাকতে চাই না আপনার দোলনচাঁপা ফুল হয়ে।

দোলনের এমন উত্তরে আষাঢ়ের মুখ থেকে হাসি কর্পূরের মতো উড়ে গেলো।এহেন উত্তরে সকলেই বেশ অবাক হয়ে যায়। আয়শা দোলনকে ধাক্কা দিয়ে বলে,,কি বলছিস কি তুই দুলি? তুই ভাইয়াকে ভালোবাসিস না?

আষাঢ় ফুলের তোড়াটা মাটিতে রেখে উঠে দাঁড়ায়।
“তুমি যা বলছো ভেবে বলছো?”

“হুম। ”

“এটাই তোমার ডিসিশন? ”

“হ্যা আমি আপনার জীবনের চাঁপাফুল হয়ে থাকতে চাই না। বছরে একবার যার দেখা মিলে।আমিতো আপনার সাথে সারাজীবন থাকতে চাই আষাঢ় মাস। ঠোঁট উল্টে বলে দোলন।

দোলনের এমন কথায় সকলের মুখ হাসি ফোটে। আয়শা কপালে হাত দিয়ে বলে,,, ন’টাং’কি কাহিকা!
শুধু শুধু মানুষের হার্টে আঘাত করে।

আষাঢ় দোলনের কথা শুনে দৌড়ে আসে দোলনকে জড়িয়ে ধরতে। দোলন কয়েক কদম পিছিয়ে গিয়ে বলে,,উহুু এসব হচ্ছে না দূরে থাকুন।

আষাঢ় মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে,,খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেছিলাম এই আরকি।সকলেই এহেন কথায় উচ্চ স্বরে হেসে উঠে।

আষাঢ় চাঁপাফুলের তোড়াটা দোলনের হাতে দেয়। তারপর দোলনের হাত ধরে একটা টেবিলের সামনে নিয়ে যায়, যেখানে খুব সুন্দর করে ডেকোরেশন করা।টেবিলের মাঝখানে একটা কেক রাখা যাতে লেখা,, আষাঢ়ের দোলনচাঁপা। কেকের ডেকোরেশন পুরো দোলনচাঁপা ফুলের মতো। দোলনের এতো ভালো লাগছে এসব দেখে। দুইজন মিলে কেক কাটে তাদের নতুন সম্পর্কে জড়ানোর খুশিতে।

******
দিন যতো যাচ্ছে মেঘ কেমন পাগলের ন্যায় আচরণ করছে। আজ মেঘ কোনো ভাবে জানতে পেরেছে আষাঢ় মেয়েটাকে প্রপোজ করবে। সেই থেকে রুমের দরজা লাগিয়ে সবকিছু ভাংচুর করছে।

মিসেস রিমি কতো করে বলছে দরজা খুল মা আমার কথা শোন কিন্তু কিছুই শুনছে না। বাড়িতে কেউই নেই এই সময় কি করবে বুঝতে পারছে না। মেঘের এমন অবস্থা দেখে মিসেস রিমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে না। এমন শান্ত শিষ্ট মেয়েটার এমন অবস্থা মোটেও কাম্য নয়।

“মেঘ মা দরজা খুল মেঘ?”

নো রেসপন্স।

মেঘ প্লিজ দরজা খুল।আচ্ছা তুই কি চাস? আমার ছেলে আষাঢ় কে তুই চাস তাই না? আমি দেখছি ব্যাপারটা তোর আংকেলের সাথে কথা বলে আমি আষাঢ়ের সাথে তোর বিয়ে দিবো। পাগলামো করিস না মা দরজা খুল।

মিসেস রিমি কথাটা বলার সাথে সাথে দরজা খুলে যায়। মেঘ বলে,,,তুমি সত্যি বলছো মামনি? তুমি সত্যি বলছো? আষাঢ় কে আমাকে দিয়ে দিবে?

হ্যা দিয়ে দিবো যদি তুই পাগলামি বন্ধ করে আগের মতো ভালো মেয়ে হয়ে যাস।

মেঘ নিজের চোখ মুখ মুছতে মুছতে বলে,, আমি ভালো মেয়ে হয়ে যাবো মামনি।আমি আবার আগের মতো হয়ে যাবো। তুমি কথা দাও আষাঢ় আমার হবে।

কথা দিলাম।

না না এভাবে না আমাকে ছুঁয়ে বলো নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে মেঘ।

মিসেস রিমি কোনো উপায় না পেয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে মেঘের হাত ছুঁয়ে বলে,,এই নে তোকে ছুঁয়ে কথা দিলাম।

মেঘ মিসেস রিমিকে জড়িয়ে ধরে বলে,,আই লাভ ইউ মামনি। তারপর নিঃশব্দে হাসতে থাকে।

#চলবে,,,,?

#আষাঢ়ের_দোলনচাঁপা
#পর্বঃ১৪
#Jhorna_Islam

আষাঢ় বাইক চালাচ্ছে পিছনে দোলন বসা। আজ বাইক নিয়ে বের হয়েছিল সে।দোলনকে নিজের বাইকের পিছনে বসিয়ে বাইক চালানোর ইচ্ছে ছিলো সেটাও পূরণ হলো আজ। দুইজন ই নিরব কানের শুধু বাইকের শব্দ আর আশেপাশের গাড়ির হর্ণের শব্দ। আষাঢ় বুঝতে পারছে না দোলন এরকম চুপ কেন হয়ে আছে। দোলনতো চুপ থাকার মেয়ে না। তারপর বাইকের লুকিং গ্লাসের দিকে তাকিয়ে বলে ওহ এই ব্যাপার? এই জন্যইতো বলি ম্যাডাম এরকম চুপ হয়ে আছে কেনো।

দোলন চোখ বন্ধ করে আছে। আশেপাশের কোনো আওয়াজ বা কোনো কিছুই তার কানে যাচ্ছে না। সে চুপচাপ বাইকে বসে বাতাসের ছোঁয়া অনুভব করছে। বাতাস এসে যখন শরীরটা ছুঁয়ে দিয়ে যায় তখন আবেশে চোখ বন্ধ হয়ে যায়। চোখের পাতায় ঘুম ধরা দিতে চায়। দোলনের বিনুনি করা চুলগুলো বাতাসে হেলছে দুলছে। কপালের সাইডের ছোট ছোট চুল বেরিয়ে এসেছে বাতাসের তোড়ে। বাতাসের তোড়ে তারা মনের আনন্দে বাঁধন হারা হয়ে নেচে চলেছে।দোলন আগে কখনো বাইকে উঠেনি এই প্রথম উঠলো। প্রথমে ভয় পেলেও আস্তে আস্তে ভয় কেটে ভালো লাগা ধরা দিয়েছে।

আষাঢ়ের সেই ভালো লাগা সহ্য হলো না। হুট করে জোরে সোরে ব্রেক করে। দোলনের ভালো লাগা কর্পূরের মতো মুহূর্তের মধ্যে হাওয়া হয়ে ভয় এসে হানা দেয় মানসপটে। এক হাত দিয়ে ঝাপটে ধরে আষাঢ়ের গলা আরেক হাত দিয়ে পিছনের শার্ট।
ঘাড়ে রাখা হাতটা দিয়ে এতোটা জোরেই ধরেছে যে দোলনের বাম হাতের বড় বড় নখ গুলো আষাঢ়ের গলায় বিঁধে গেছে।

আষাঢ় চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়। জ্বলে যাচ্ছে গলাটা।
দোলন বুকে থুথু দিয়ে বাইক থেকে নেমে পরে। এখন বাইকের সামনে এসে কোমরে হাত দিয়ে রাগী দৃষ্টিতে আষাঢ়ের দিকে তাকিয়ে আছে। কতো বড় সাহস ইচ্ছে করে এমন ভয় দেখিয়েছে দোলন ভালো করেই বুঝতে পারে। এই বেটা বহুত ব’জ্জাত আছে। এতোদিনে দোলন হারে হারে চিনে ফেলেছে। কি সুন্দর ইনজয় করছিল বেটা ব’দ সব শেষ করে দিলো। দোলনের ইচ্ছে করছে আষাঢ়ের সবগুলো চুল মুঠোয় নিয়ে টেনে ছিঁড়ে দিতে তাহলে মজা বুঝতো।

দোলনকে এমন করে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আষাঢ় ব্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে,,, কি?”

দোলন আষাঢ়ের দিকে আঙ্গুল তাক করে বলে,,,”মেয়ে মানুষ দেখলে হুঁশ থাকে না? ”

“মানে?”

“ঢং করে আবার মানে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে? এমন ঢং করে লাভ নাই। ঢং কম করো পিও।”

“আমি আবার কি ঢং করলাম? আর ছেলেরা ঢং করে কিভাবে শুনি।”

এতকিছু জানি না। আপনি এইভাবে বাইক কেন ব্রেক করলেন? মেয়ে মানুষ দেখলে আপনারা সব ছেলেরাই হুঁশ হারিয়ে ফেলেন তাই না? নিজেকে হিরো ভেবে বাইক ব্রেক করেছেন? আর ভেবে নিয়েছেন আমিও হিরোইনদের মতো ভয় পেয়ে আপনাকে ঝাপটে ধরবো। ছিঃ ছিঃ আষাঢ় মাস আপনার থেকে অন্তত আমি এমন কিছু আশা করিনি। আপনিও অন্য সবার মতো বের হলেন? আমার মন আর বিশ্বাস ভেঙে দুই টুকরো করে দিলেন আপনি? চলে যান আপনি আমি আর যাবো না আপনার সাথে। আমি একা যেমন এসেছিলাম একাই যেতে পারবো। যান যাচ্ছেন না কেন? এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে দোলন আড় চোখে আষাঢ়ের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢুক গিলে।

আষাঢ় রেগে আগুন হয়ে আছে। চোখগুলো কেমন লাল বর্ণ ধারণ করেছে। হাত দুটি শক্ত করে মুষ্টি বদ্ধ করে দোলনের দিকে তাকিয়ে আছে। আষাঢ় কে দেখে মনে হচ্ছে দোলনকে সে চোখ দিয়েই ভ’ষ্য করে দিবে।

দোলন এক কদম পিছিয়ে গিয়ে শুকনো ঢুক গিলে। সে মজা করতে চেয়েছিল আষাঢ়ের সাথে। দেখতে চেয়েছিল আষাঢ় কিরকম প্রতিক্রিয়া করে। কিন্তু আষাঢ় যে রেগে বো’ম হয়ে যাবে সেইটা কে জানতো। দোলন এখন বুঝতে পারলো বিষয়টা বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে। মজা করতে গিয়ে কিসব বলে দিয়েছে।

আ-আষাঢ়ঢ়ঢ়,,,?

আষাঢ় কোনো উত্তর না দিয়ে সামনে এগিয়ে দোলনের হাত শক্ত করে চেঁপে ধরে। এতোটাই শক্তি প্রয়োগ করে ধরেছে দোলনের মনে হচ্ছে হাতের হাড্ডি গুড্ডি সব বুঝি ভেঙে যাচ্ছে। দোলন ব্যাথায় চোখ মুখ কোচকে আহ্ বলে উঠে।
আষাঢ় তাতে পাত্তা দেয় না। দোলন কে টেনে বাইকে তুলে, নিজেও উঠে বাইকে স্টার্ট দেয় স্পিড বাড়িয়ে। দোলন কতো করে বলছে তার কথা একটা বার শুনার জন্য আষাঢ় শুনছে না। শেষে না পেরে কিছুটা চিল্লিয়েই বলে আষাঢ় আমার কথাটা শুনো প্লিজজজজ।

দোলনের এরকম চিল্লানিতে আষাঢ় কটমট দৃষ্টিতে বাইকের লুকিং গ্লাস দিয়ে দোলনের দিকে তাকায়। দোলন এরকম তাকানো দেখে আর একটা টু শব্দ ও উচ্চারণ করে না। মনে মনে শুধে আল্লাহকে ডেকে চলেছে যেইভাবে রাগিয়ে দিয়েছে কে জানে কি করে এখন। দোলনরে আজ তুই শেষ। কেন গেলি এরকম ভাবে মজা করতে? কেনোই বা এরকম আবোল তাবোল বলে রাগিয়ে দিলি?নে এবার ঠেলা সামলা। আজ আর রক্ষে নেই তোর তুই শেষ।

*************
আষাঢ় শিস বাজিয়ে গুণ গুণ করতে করতে বাইকের চাবিটা আঙ্গুলের মাথায় নিয়ে ঘুরাতে ঘুরাতে বাড়িতে প্রবেশ করে। ভিতরে প্রবেশ করে বাইকের চাবিটা সোফার উপরে ঢিল মেরে রাখে। তারপর ফ্রেশ হতে চলে যায় নিচের বাথরুমে একবারে খেয়ে তারপর উপরে যাবে। বড্ড খিদে পেয়েছে। বাথরুমে যাওয়ার আগে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সাত মিনিট কম একটা বাজে। এতো রাত হয়ে গেছে আষাঢ় বুঝতেই পারলো না।

ফ্রেশ হয়ে বের হয় আষাঢ়। পরনের শার্টের অনেকাংশই ভিজে গেছে। শার্টটা ঝাড়তে ঝাড়তে বলে,,,”খালা খাবার দাও খিদে লেগেছে বড্ড।”

খা,, আরেকবার ডাকতে গিয়ে চুপ হয়ে যায় আষাঢ়। সারাদিন কাজ করে হয়তো ঘুমোচ্ছে এখন। শুধু শুধু এতো রাতে ডেকে ঘুম নষ্ট করার কোনো মানেই হয় না। টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখে খাবার ঢাকনা দিয়ে রাখাই আছে টেবিলে।
আষাঢ় গিয়ে টেবিলে বসে পরে। হাত বাড়িয়ে প্লেট নিতে যাবে তার আগেই বাঁধা আসে।
আষাঢ় ব্রু কোচেকে তাকিয়ে দেখে মেঘ।

“তুমি বসো আমি তোমাকে খাবার বেড়ে দিচ্ছি।”

আষাঢ় কথা বাড়ায় না বড্ড খিদে পেয়েছে। এমনিতেও নিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে না।

মেঘ সুন্দর করে খাবার বেড়ে দেয়। আষাঢ় খাচ্ছে, মেঘ পাশেই একটা চেয়ার টেনে বসে আছে।
আষাঢ় খেতে খেতেই বেগ্র কন্ঠে বলে,,,এই মাঝ রাতে কোন ভূত প্রেত কে ঘায়েল করার জন্য এরকম রূপ ধারণ করেছিস শুনি?

মেঘ বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে,, কি বলছো তুমি? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

আমি বলছি এই মাঝরাতে এরকম সং কেন সেজেছিস?

মেঘের মন খারাপ হয়ে গেলো। যার জন্য এতো কষ্ট করে সেজে সেই সন্ধা থেকে অপেক্ষা করছে সে কিনা এরকম ভাবে বলছে? তবুও নিজের মনকে এটা বলে খুশি করার চেষ্টা করলো ,, আষাঢ় তার দিকে তাকিয়েছে।এটাও নোটিশ করেছে যে মেঘ সেজেছে ।
আষাঢ় খাচ্ছে আর মেঘ গালে হাত দিয়ে একমনে আষাঢ়ের দিকে তাকিয়ে আছে। এই ছেলেটাকে এতো ভালো কেন বাসে? আষাঢ় কে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে মেঘ।

হুট করেই মেঘের নজর যায় আষাঢ়ের গলার দিকে। বসা থেকে উঠে এগিয়ে এসে বলে,,তোমার গলায় কিসের দাগ আষাঢ়? কি হয়েছে? ব্যাথা পেয়েছো কিভাবে? কথাগুলো বলে হাত বাড়াতে নিলেই আষাঢ় ঘাড় সরিয়ে নেয়। নিজের গলায় হাত দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে কি হয়েছে? প্রথমে না বুঝলেও পরোক্ষনে মাথায় ঢুকে দোলনের নখ বিঁধে গিয়েছিল এখানে। আষাঢ় মুচকি হেসে শার্টের কালার উপরে উঠিয়ে বলে,,তেমন কিছু না।

“এটাতো মনে হচ্ছে নখের আঁচড়। ”

খাবার বেড়ে আমাকে উদ্ধার করেছিস এবার গিয়ে ঘুমা।
মেঘ আর কিছু বলার আগেই আষাঢ় হাত ধুয়ে উঠে বড় বড় কদম ফেলে উপরে চলে যায়।

উফফফ কবে যে সেই দিন আসবে। আমি প্রতিদিন তোমার জন্য খাবার নিয়ে অপেক্ষা করবো, আর তুমি কাজ থেকে এসে আমাকে সাথে নিয়ে খেতে বসবে। মাঝে মাঝে নিজের হাতে আমাকে আদর করে খাইয়ে দিবে।

************
আজ সকালে হাঁটতে বের হওয়ার কথা অথচ দোলন ঘাপটি মেরে শুয়ে আছে। সিলিং এর দিকে তাকিয়ে কি যেনো ভেবে চলেছে একমনে।
পাশে ফোনটা থেমে থেমে বেজে চলেছে সেই দিকে খেয়াল নেই তার।

ফোনের আওয়াজ শুনে দোলনের খালামনি রুমে ঢুকে দেখে,, ফোন না ধরে মেয়ে টা কেমন উপরের দিকে তাকিয়ে আছে।

“দুলি?”

দোলনের খালামনির ডাকতে দেরি দোলনের শোয়া থেকে উঠে খালামনিকে জড়িয়ে ধরতে দেরি হয় না। খালামনিকে জড়িয়ে ধরে দোলন কেঁদে দেয়।

“কি হয়েছে তোর কাঁদছিস কেন?”

””””””””””””
“কি হলো বল!”
দোলন কিছুই বলে না শুধু কান্না করতে থাকে।

#চলবে,,,,,?