আষাঢ়ে প্রণয় সন্ধি পর্ব-১৩

0
358

#আষাঢ়ে_প্রণয়_সন্ধি
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১৩

“কিরে দেখি জামাই তোকে কি কিনে দিয়েছে?”

সাজিয়া বিরক্ত হলো বেশ।এই মহিলা সব সময় এমন করে।রতনা বেগম এগিয়ে এসে সাজিয়ার হাতে একটা শপিং ব্যাগ দেখে আশাহত হলেন।সে ভেবেছিলো হয়তো অনেক কেনাকাটা করে দিবে।সেখান থেকে একটা শাড়ি সে নিবে।তবে তার আশায় নিশীথ পানি ঢেলে দিয়েছে।সাজিয়া রুমে ঢুকে শপিং ব্যাগটা আলমারিতে উঠিয়ে রাখলো।রতনা বেগম মুখ বাঁকিয়ে বললেন,,,

“একটা প্যাকেট ক্যান?তোর জামাই কি কিপ্টা নাকি?আর উঠায় রাখলি ক্যান দেখাবি না ওই শপিং ব্যাগে কি আছে। নাকি দেখাতে মানা করছে তোর জামাই”

“মামি চুপ করবা তুমি?উনি একদমই কিপ্টা নন।আরো অনেক কিছুই কিনে দিয়েছেন তিনি।তবে সেগুলো আমাকে এখন নয় বিয়ের পর দিবেন।আর ওই ব্যাগে আমার বিয়ের লেহেঙ্গা আছে তাই উঠিয়ে রেখেছি”

“তোর তো মুখে বেশ খই ফুটেছে দেখছি। বিয়ে হতে পারলো না তার আগেই এতো দরদ”

সাজিয়া কথা না বাড়িয়ে হিজাব খুলে ফেলল। রতনা বেগম কিছুক্ষণ বকবক করে চলে গেলেন।সাজিয়া দরজা আটকে বিছানায় শুয়ে পরলো।শরীর চলছে না। তিনটা হয়তো বাজে।গোসল করা হয়নি।তবে এখন উঠে গোসল করার মতো শক্তি ও তার নেই।তাই চিন্তা করলো কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে গোসল করবে।সাজিয়ার খারাপ লাগছে। এই রুমে তার স্থায়িত্ব মাত্র দুই দিনের।এরপর অপরিচিত বাড়ি,ঘরে তার ঠাই হবে।তবে আজ নিশীথের ব্যবহারে সে ভীষণ মুগ্ধ হয়েছে।ছেলেটা তার কেয়ারও করেছে।এটা ভেবেই চোখ বুঝলো সে।

আজ সাজিয়ার হলুদ সন্ধ্যা।খুব ছোট করে আয়োজন করা হয়েছে।পাড়া প্রতিবেশীরা মিলে সাজাবে আরকি।সাজিয়ার বিয়েতেও তেমন অনুষ্ঠান হবে না।সাজিয়া শুনেছে নিশীথদের বাড়ি থেকে মাত্র বিশ কি পঁচিশ জন আসবে।সাজিয়া প্রহরকে নিয়ে আসতে বলেছে চিত্রাকে।সাজিয়াকে একটা হলুূ শাড়ি পড়িয়ে বসিয়ে রেখেছে রতনা বেগম।এতে তিনি বেশ বিরক্ত।এতো বাড়তি ঢং তার মোটেও পছন্দ হচ্ছে না।তবুও জোড় পূর্বক সব কিছু করছেন।

“ওকে নিয়ে চল সবাই হলুদ দিবে”

পাড়া প্রতিবেশী কতগুলো মেয়ে সাজিয়ে দিয়েছে সাজিয়াকে।সাজিয়াকে নিয়ে বাইরে ছোট স্টেজে বসানো হলো।চিত্রা আর প্রহরও কিছুক্ষণ বাদে উপস্থিত হলো।সবাই হলুদ ছোঁয়ালো সাজিয়াকে।চিত্রা এখনো যায়নি সাজিয়ার কাছে।দূর থেকে দেখছে।মেয়েটিকে হলুদ রঙা শাড়িতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।অনুষ্ঠান শেষ হলো আটটা কি সাড়ে আটটার দিকে।ধীরে ধীরে বাড়ি ফাঁকা হলো।চিত্রা সাজিয়ার কাছে আসলো।এতোক্ষণ সে দূরে দাড়িয়ে ছিলো।সাজিয়া জড়িয়ে ধরলো চিত্রাকে।কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে বলল,,,

“তুই এতোক্ষণ আমার কারছে কেনো আসলি না চিত্রা?”

“তুই জানিস আমার এসব ভালো লাগে না। এখন তো এসেছি না?তোকে আজ খুব সুন্দর লাগছে সাজিয়া।একদম পুতুলের মতো।তুই সুখী হ।আর নিশীথ ও হয়তো ভালো ছেলে।কে জানে মনে মনে কি আছে এই ছেলের”

“উহু তুই চিন্তা করিস না।নিশীথ খুবই ভালো।সেদিন শপিং করতে গিয়েছিলাম।লোকটা মেয়েদের যথেষ্ট সম্মান করে।আমি হবু বউ হওয়া শর্তেও সে আমার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে বসেছে।আমার কথা বাদ দে চিত্রা। নিজের কথা ভাব তুই চিত্রা। এবার তো জীবনে কাউকে আসতে দে।আষাঢ় ভাই তোকে হয়তো পছন্দ করেন।তাকে যথেষ্ট ভালো মনে হয়েছে। সে যদি তোকে চায় তবে রাজি হয়ে যায় প্লিজ।”

চিত্রা শুনলো সব তবে এড়িয়ে গেলো।সে বলল,,“আমি বাড়িতে যাবো চিত্রা অনেক রাত হলো।আমি এসব ভাবতে চাইছি না”

“কেনো চিত্রা শুধু অতীতের জন্য।অতীত নিয়ে আমার মনে হয় না আষাঢ় ভাইয়ার সমস্যা থাকতে পারে।সে তোকে বললে তুই রাজি হোস দয়া করে”

“আমি আসি সাজিয়া।কাল সকালে বেঁচে থাকলে দেখা হবে”

বেরিয়ে গেলো চিত্রা রুম থেকে।সাজিয়া হতাশার নিঃশ্বাস ফেললো।এই মেয়ে কখনো নিজেকে নিয়ে ভাবে না। ভবিষ্যৎ কি ওর।কে জানে!প্রহরকে খুঁজে বের হয়ে গেলো চিত্রা বাড়ি থেকে।প্রহরের মাথায় এখন সাজিয়ার বলা কথাগুলো বাজছে।সে সব শুনেছে।যদিও তার শোনা উচিত নয়। তবে সে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে শুনে ফেলেছে।চিত্রাকে ডাকতে এসেছিলো সে তখনই সাজিয়ার বলা কথাগুলো শুনে ফেলেছে। তবে সে জানে না সত্যিই চিত্রার অতীত কি।তবে বুঝে ওঠার পর থেকে চিত্রাকে সে এবং বাবা ব্যাতিত অন্য পুরুষের সংস্পর্শে আসতে দেখেনি,কথা বলতেও সে দেখেনি।

রোদ উজ্জল দিন।বাইরে রোদের ছড়াছড়ি। নিশীথদের শান্ত বাড়িটি কোলাহলে পরিপূর্ণ হয়েছে।কিছু সংখ্যক মানুষ ব্যস্ত সময় পার করছে।নিশীথ সকাল থেকে ভীষণ ব্যস্ত।আষাঢ় এবং সমুদ্রকে কল করে যাচ্ছে সে।আষাঢ় রিসিভ করে বলেছে সে আসছে।তবে তার খবর নেই এখনো।আর সমুদ্র সে তো ফোনই রিসিভ করেনি।শুক্রবার হওয়ায় আজ হয়তো ঘুমাচ্ছে।নিশীথের মন চাইছে দু’জনকে পানিতে চুবাতে।তবে তা এখন সম্ভব নয়।জান্নাত ইসলাম নিশীথের রুমে আসলেন।

“তোমাকে চিন্তিত কেনো দেখাচ্ছে নিশীথ।কিছু কি হয়েছে তোমার?তুমি অস্থির হয়ে আছো কেনো?”

“না না আম্মু তেমন কিছু হয়নি।আসলে নিশীথ আর সমুদ্রকে ফোনে পাচ্ছি না। তাই আরকি একটু”

“থাম নিশীথ।আর বলতে হবে না। আমি বলি শোন।তোমার অস্থির লাগছে বুঝতে পারছি।এর জন্য তুমি তাদের আসতে বলেছো।তারা ঠিক সময়ে চলে আসবে চিন্তা করো না।তুমি এখন গোসল করে তৈরি হয়ে নাও”

নিশীথ মাথা নাড়ায়।জান্নাত ইসলাম রুম ত্যাগ করলেন।তখনই সমুদ্র ফোন করলো নিশীথকে।নিশীথ রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে ঘুম ঘুম কন্ঠে সমুদ্র বলল,,,
“কি রে আজ এতোবার কল করেছিস কেনো?আজ কি কিছু আছে।দেখ ভাই সপ্তাহে একদিন একটু ছুটি পায় আর তুই আজকেও আমাকে ঘুমাতে দিলি না।ধূর এখন বল কি বলবি?”

“সমুদ্রের বাচ্চা আজকে আমার বিয়ে। শালা তুই এখনো মরার মতো ঘুমাচ্ছিস দ্রুত উঠ। তৈরি হয়ে আমার আসবি দ্রুত”

সমুদ্রের ঘুম ছুটে যায়।আজকে যে নিশীথের বিয়ে সে তা ভুলতে বসেছিলো।ততক্ষণে নিশীথ ফোন কেটেছে।নিশীথ ফোন কেটে রাগে ফুঁসছে। তার দুই বন্ধুই আজ এমন করছে।সে এমনিতেও একটু অস্থির হয়ে আছে।আর এই দু’জন লাপাত্তা। খবর নেই কারো।এরপর নিজে গোসল সারতে গেলো।তৈরি হতে হবে আবার তাকে।

দুপুর হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ। চিত্রা সাজিয়াকে সাজিয়ে রেডি করে দিয়েছে।চিত্রা সাজাতে পারে খুব সুন্দর। এসএসসির পর শখ করে শিখেছিলো সে।তাই আজ সমস্যা হলো না সাজিয়াকে সাজাতে।সাজিয়াকে মেরুন রঙা লেহেঙ্গা এবং ভারি মেকাপে বেশ লাগছে।চিত্রাকে দারুন লাগছে। যদিও সে সাজেনি।কালো রঙা ভারী সেলোয়ার-কামিজ পরেছে।চোখে কাজল ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। তাও সাজিয়া দিয়ে দিয়েছে।চিত্রা মোটেও দিতে চাইছিলো না। সাজিয়া এক প্রকার যুদ্ধ করে দিয়ে দিয়েছে।সাজিয়ার চোখ জুড়িয়ে গেলো।মেয়েটা এমনিতেও সুন্দর। তবে আজ সেজে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে।কিছুক্ষণ বাদে ছোট ছোট মেয়েরা এসে বলল বর এসেছে। সাজিয়া চেপে ধরলো চিত্রার হাতখানা।চিত্রা ইশারা করে শান্ত হতে বলল সাজিয়াকে।

আষাঢ় এবং সমুদ্র কে নিশীথ নিজের কাছেই রেখেছে।সে এখন বরের জায়গায় বসে আছে।আর তার দুইপাশে আষাঢ় এবং নিশীথ।সাজিয়ার মামা রাজিব উদ্দীন কাজী সব দিক সামলাচ্ছে। অতিথিদের আপ্যায়নে ব্যস্ত সে।রতনা বেগম ও কাজ করে হাঁপিয়ে উঠেছেন।বিয়ের হওয়ার সময় চলে আসলো।কাজী বিয়ে পড়ানোর জন্য সাজিয়ার কাছে যায়।চিত্রা সাজিয়ার পাশেই বসে ছিলো।কাজী এবং রাজিব উদ্দীনকে আসতে দেখে সাজিয়া হাত চেপে ধরলো চিত্রার।কাজী বিয়ে পড়ানো শুরু করলো।সাজিয়ার মায়ের মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো।এরপর বহু কষ্টে তিনবার কবুল উচ্চারণ করলো।

এবার খাওয়া দাওয়ার পালা।বর বউকে একসাথে খেতে বসিয়েছে।অতিথিদের খাওয়া এতোক্ষণে শেষ।চিত্রা, আষাঢ় সমুদ্র কেউ খাইনি এখনো।সমুদ্র তো নিশীথের উপর মহা বিরক্ত। বিয়ে বাড়ি সে একটু মেয়ে পটানোর চেষ্টা করবে না এই নিশীথটা তাকে গরুর মতো বসিয়ে রেখেছে।নিশীথ প্রথমবারের মতো বউ রূপে নিজের অর্ধাঙ্গীনিকে দেখলো।সে তো ঘায়েল হলো সাজিয়াকে বউ রূপে দেখে।আষাঢ় এখনো এই দিকটায় আসেনি।সে ফোনে কথা বলছিলো।যদিও অরিহার আসার কথা ছিলো তবে সে আনেনি।এখন অরিহার সাথেই কথা বলছে।

বেচারি অভিমান করেছে ভাইয়ের উপর।নিশীথ যখন শুনেছে অরিহাকে আনিনি আষাঢ় তখন সে আষাঢ়কে কথা শুনিয়েছে।আষাঢ় কথা শেষ করে আসে। চিত্রা মাথা নিচু করে খাচ্ছে।আষাঢ়ের চোখ পরে কালোরঙা সেলোয়ার-কামিজ পরিহিতা চিত্রার দিকে।হৃৎস্পন্দন অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে তার।আগে কখনো সে এই রূপে চিত্রাকে দেখেনি সে।থমকে দাঁড়িয়ে আছে আষাঢ়।

“এ কোন রূপে হাজির হলেন চিত্রা।আমার রাতের ঘুম হারাম করলেন আপনি?কি দরকার ছিলো এই রূপে আসার। আমার হৃদয়ে ঝড় উঠেছে চিত্রা।এটা থামানোর জন্য হলেও আপনাকে দরকার!”

#চলবে~