আষাঢ়ে প্রণয় সন্ধি পর্ব-১৪

0
368

#আষাঢ়ে_প্রণয়_সন্ধি
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১৪

প্রণয় খাওয়া শেষ করে সামনে তাকাতে অবাক হলো।কিছুদূরে দাঁড়িয়ে আষাঢ় মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চিত্রার পানে।আষাঢ়ের খেয়াল আসলো প্রহরকে। প্রহরকে দেখে সে সরে আসলো। ইশ কি ভাবে তাকিয়ে ছিলো।চিত্রাও খেয়াল করেছে আষাঢ়কে। তবে এক বারের বেশি সে আর সেদিকে তাকায়নি। খাওয়া দাওয়া শেষে বিদায়ের পালা আসলো।চিত্রা সাজিয়ার একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। সাজিয়া মামাকে এবং মামাতো দুই ভাইকে ধরে কাঁদলো কিছুক্ষণ। রতনা বেগমের কুমিরের কান্না দেখে শরীর জ্বলছে চিত্রার।মানুষ এতো অভিনয় কিভাবে করে। সাজিয়ার তার কাছে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে। চিত্রাও একহাতে জড়িয়ে ধরেছে।

নিশীথ সাজিয়াকে নিয়ে গাড়িতে উঠে।যাওয়ার আগে অবশ্য সাজিয়ার মামা টুকটাক কথা বলেছেন নিশীথের সাথে।গাড়িতে বসে আছে সদ্য বিবাহিত দম্পতি। সাজিয়া সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। ভালো লাগছে না তার। আজকে অনেক ধকল গিয়েছে।নিশীথ তার রাঙা বউকে দেখছে। কি স্নিগ্ধ লাগছে। চিত্রা সাজিয়াকে ওতো বেশিও সাজায়নি। এতেই যথেষ্ট সুন্দর লাগছে।নিশীথ কিছুক্ষণ চুপ করে বলে,,

“তোমার কি খারাপ লাগছে সাজিয়া?”

“উহু মাথাটা একটু ঘুরাচ্ছে। এছাড়া কিছু না চিন্তা করবেন না আপনি। আমি ঠিক আছি।”

নিশীথ কথা বাড়ালো না আর।গাড়ি বাড়ির সামনে এসে থামলো।নিশীথ নেমে সাজিয়াকে নামালো।জান্নাত ইসলাম হাসি মুখে নতুন বউকে গ্রহন করলেন।বর্তমানে সাজিয়া বসার ঘরে বসে আছে।পাড়া প্রতিবেশী এসে নতুন বউ দেখছে। সাজিয়ার খারাপ লাগছে প্রচন্ড। তবুও কাউকে কিছু বলার নেই। সে জানে তার ননদ ও নেই। এক শাশুড়ী। সেও কোথায় কে জানে।হঠাৎ করে জান্নাত ইসলাম এসে সবাইকে বলে তাকে নিশীথের রুমে নিয়ে আসলেন।সাজিয়াকে বিছানায় বসিয়ে এক গ্লাস শরবত দিয়ে বললেন,,,

“এটা খেয়ে নাও। আমি খাবার নিয়ে আসছি।নিশ্চয়ই দুপুরে ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া হয়নি।তুমি এক কাজ করো এই ভারি লেহেঙ্গা পাল্টে সাধারণ কিছু পড়ে নাও। আমি খাবার আনতে গেলাম”

সাজিয়া মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। জান্নাত ইসলাম রুম ত্যাগ করলেন।সাজিয়ার মাথায় এলো সে তো কিছু নিয়ে আসেনি। তবে পরবে কি?বিছানা থেকে ধীর পায়ে নেমে দাঁড়ালো।কিছু একটা ভেবে আলমারির কাছে এসে দাঁড়ালো। ইতস্তত করে আলমারি খুলল।আলমারি খুলতেই চোখে পরলো মেয়েদের পোশাক।সেদিনের কেনা জামাগুলো এক পাশে সুন্দর করে গোছানো। সাজিয়ার আনমনে হাসি ফুটে উঠলো ঠোঁটের কোনে।লোকটা আসলেই অনেক খেয়াল রাখে তার।সে সেখান থেকে মেরুন রঙের একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে আসলো।শাড়ি পরে বের হতেই দেখলো জান্নাত ইসলাম খাবার নিয়ে বসে আছেন।

“এদিকে এসে বস।খেয়ে নাও।”

সাজিয়া দ্রুত বিছানায় এসে বসে বলে,,“জি আম্মু।আপনি খেয়েছেন?”

জান্নাত ইসলাম হেসে বলেন,,“না তুমি খেয়ে নাও। আমি পরে খেয়ে নিবো।বাসায় অনেক মেহমান।তাদের খাওয়া দাওয়া। আরো অনেক কাজ আছে।আমি বরং আসি হ্যাঁ।তুমি খেয়ে নাও।”

জান্নাত ইসলাম রুম ত্যাগ করলেন।সাজিয়া খেয়ে নিলো।খাওয়া শেষে সে রুমে চোখ বুলালো।ছোটখাটো সুন্দর একটা রুম নিশীথের।বেশ ভালোই লাগলো তার রুমটা।দেওয়াল ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখলো দশটা বাজে।তবে নিশীথ এখনো আসেনি রুমে।নিশীথের রুমের সাথে ছোট্ট একটা বারান্দা ও আছে।চাঁদের আলো বারান্দার গ্রিল দিয়ে প্রবেশ করে সাজিয়ার মুখের উপর পরছে।নিশীথ তখনই রুমে প্রবেশ করে।এসে সাজিয়াকে না দেখে বেশ অবাক হয়।এতোক্ষণে সে নিজের জামাও পাল্টে ফেলেছে।বারান্দায় আসতেই এক অপূর্ব দৃশ্য চোখে পরলো তার। সে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয় সেই রমনীর পানে। রমনী এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে চাঁদ দেখছে।

“তুমি এখানে যে?”

সাজিয়া হকচকিয়ে উঠলো।মেয়েটি ভয় পেয়েছে বোধহয়। সাজিয়া নিশীথের দিকে তাকিয়ে নিচুস্তরে বলল,,,“আপনি আসছিলেন না তাই এখানে এসেছি।আজকের চাঁদটা দেখুন সুন্দর না!”

নিশীথ সাজিয়ার পানে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে,,“আপনার কাছে আকাশের চাঁদ অপূর্ব সুন্দর হলেও এই মুহুর্তে আমার পাশে দাঁড়ানো চাঁদটিকে বেশি অপূর্ব লাগছে আমার কাছে।”

“আপনি কি কিছু বললেন নিশীথ”

“উহু। চলুন আগে নামাজ পরে নেই।নতুন জীবন শুরু আমাদের। নফল নামাজ না পড়লে হয়”

সাজিয়া মুচকি হেসে শুধায়,,“হু চলুন”

দু’জন একসাথে নামাজ পড়ে দিলো।এরপর আবারও বারান্দায় চলে আসলো দুজন।মেঝেতে বসে পড়লো।সাজিয়া আপনমনে বলে উঠলো,,,
“জীবন সুন্দর যদি মানুষটা সঠিক হয়।তবে আমি এখনো আপনাকে ঠিকমতো বিশ্বাস করে উঠতে পারছি না নিশীথ। আপনি কি আদেও ভালো?”

নিশীথ হাসলো।এরপর সাজিয়ার কথার জবাবে বলল,,“তোমার বিশ্বাস না করারই কথা আমাদের পরিচয় বা কদিনের। তবে তুমি আমায় বিশ্বাস,ভরসা করতে পারো। আমি তার মর্যাদা রাখার চেষ্টা করবো”

“আপনি আমার স্বামী। আপনার সাথে আজ আমার নতুন পথ চলা শুরু হলো।আশা করি আপনি আমাকে কখনো ঠকাবেন না।আপনায় বিশ্বাস করার চেষ্টা করবো”

“বিশ্বাস করতে পারো। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তার মর্যাদা রাখার চেষ্টা করবো। আমি এখনই আমার অধিকার চাইবো না। যখন আমরা একে অপরকে ভালোবাসবো,বিশ্বাস,ভরসা করতে পারবো তখন না হয় তোমাকে নিজোর করে নিবো”

সাজিয়া স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেললো। নিশীথ তাকে সময় দিয়েছে এটাই অনেক।দু’জন আরো অনেক গল্প করলো।দু’জন কিছুক্ষন কথা বলার মাধ্যমে বন্ধুত্বময় একটা সম্পর্ক গড়ে উঠলো।সাজিয়া নিজের স্বপ্ন সম্পর্ক বলল নিশীথকে।এরকম টুকটাক কথা হলো দু’জনের মাঝে।নিশীথের বেশ ভালো লাগছে। সাজিয়ার ও যে খারাপ লাগছে তা নয়। তার ও নিশীথের সাথে কথা বলতে,সময় কাটাতে বেশ লাগছে।

আষাঢ় রুমে পায়চারি করছে।কিছুই ভালো লাগছে না তার। এখনো তার চিত্রার মুখখানা মানসপটে ভেসে উঠছে। কি এক জ্বালা।আষাঢ়কে ডাকতে এসে এমন অস্থির অবস্থায় দেখে অবাক হলেন বেলী বেগম।তার ছেলে তো এমন নয়,আজ তাহলে কি হলো।নিশীথদের বাড়ি থেকে ফিরেছে বেশ কিছুক্ষণ হলো। আসার পর থেকেই তিনি খেয়াল করেছেন ছেলের অস্থিরতা। তবে কি কিছু নিয়ে চিন্তিত তার ছেলে।সে এগিয়ে আসলেন রুমের দিকে।দরজার সামনে এসে বললেন,,

“আষাঢ় তুমি কি আছো?আমি কি আসতে পারি?”

আষাঢ় বেলী বেগমের উপস্থিতি বুঝতে পেরে চমকে উঠলো।অতঃপর নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,,,“আসো আম্মু”

বেলী বেগম ভেতরে প্রবেশ করলেন।তিনি বিছানায় বসেন।আর আষাঢ় বসে সোফাতে।বেলী বেগম চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন,,,“তোমার কি হয়েছে আষাঢ় এমন কেনো করছো?কিছু নিয়ে চিন্তিত তুমি?”

আষাঢ় নিঃশব্দে হাসলো।উঠে এসে বেলী বেগমের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরলো।বেলী বেগম মৃদু হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।আষাঢ় হুট করে বলল,,,
“আম্মা তোমার ছেলে হয়তো প্রেম রোগে পরেছে।কিছু ভালো লাগছে না আম্মা। সেই মেয়ের কথা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কি করবো বলো তো”

বেলী বেগম চমকালেন না।তিনি বোধহয় বুঝতে পেরেছিলেন।তিনি প্রথম জনের কথাও জানতেন।আষাঢ় গোপন রাখে না তার কাছে কিছু। তিনি আষাঢ়ের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললেন,,
“মেয়েটা কি চিত্রা আষাঢ়”

আষাঢ় প্রচন্ড অবাক হলো।উঠে বসলো সে।এরপর বিষ্মিত কন্ঠে শুধালো,,,
“আম্মা তুমি কিভাবে জানলে যে সে চিত্রা”

বেলী বেগম আবারও হাসলেন।তার ছেলের মনের খবর সে জানবে না তো কে জানবে।
“আষাঢ় আমি তোমার মা। তোমার মনের খবর জানি আমি।তবে চিত্রাকে পাওয়া কিন্তু খুব বেশি সহজ হবে না তোমার পক্ষে। আমরা সবাই জানি সে আলাদা।তবে আমি তোমাকে একটা বুদ্ধি দিতে পারি”

“কি বুদ্ধি আম্মা”

“তোমার উচিত আগে তার সাথে বন্ধুত্ব করা।তাকে নিজের বন্ধু বানাও।তাহলে হয়তো তাকে পাওয়া একটু হলেও সহজ হবে তোমার জন্য।আষাঢ় সে কি তোমার ভালোলাগা না ভালোবাসা”

আষাঢ় বেশ কিছুক্ষণ ভাবলো। এরপর জবাব দিলো,,“ভালোবাসা আম্মা।”

বেলী বেগম কিছু কথা বলে রুম ছাড়লেন।আষাঢ়ের এখন একটু ভালো লাগছে। মায়ের সাথে কথা বলার পর এখন ভালো লাগছে। নিজেকে হালকা মনে হচ্ছে। তবুও চিত্রাকে এক পলক দেখার জন্য মন ছটফট করছে। ঘড়িতে সময় দেখে নিলো কয়টা বাজে। ছাদে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো সে। এই সময়টাতে চিত্রা ছাদে থাকে। ধীর পায়ে ছাদে এসে দাঁড়ালো সে। তবে চিত্রাকে দেখতে পেলো না। হতাশার নিঃশ্বাস ফেললো। অপেক্ষায় রইলো সে। যদি চিত্রা আসে এই আশায়। তবে তার অপেক্ষার প্রহর এতো দ্রুগত শেষ হবে তা সে কল্পণা করেনি। চিত্রা এসেছে।ধীর পায়ে এসে ছাদের কিণারা ঘেঁষে দাঁড়ালো। হয়তো খেয়াল করেনি আষাঢ়কে।আষাঢ় তাকিয়ে দেখছে তার স্নিগ্ধ রানীকে।বিড়বিড় করে বলল,,,

“আপনি স্নিগ্ধ নিষ্পাপ চিত্রা। আপনার ওই ঠোঁটের মিষ্টি হাসির কারণ হতে চাই। ভালোবাসি চিত্রা”

অতঃপর কিছু একটা ভেবে তার স্নিগ্ধরানীকে উদ্দেশ্য করে বলল,,“চিত্রা আমি কি আপনার সাথে কথা বলতে পারি?”

#চলবে~