আষাঢ়ে শ্রাবণের বর্ষণ পর্ব-১৭+১৮

0
2478

#আষাঢ়ে_শ্রাবণের_বর্ষণ
#মাইশাতুল মিহির

(পর্ব-১৭)

‘বৃষ্টিবিলাশী কন্যা’ সম্মোধন শুনে মুচকি হাসলো দীবা ও নুরা। দুইজনই সাবলীল ভাবে উত্তর দিলো, ‘এইতো ভালো।’

রিমি সোফায় হেলান দিয়ে বসে অন্য দিকে তাকিয়ে বির*ক্তিসহিত বিড়বিড় করে বললো, ‘আপনার অনুপস্থিতিতে এতোক্ষণ তো অনেক ভালো ছিলাম।’

বিড়বিড় করে বললেও কথাটা সবার কান অব্ধি পৌঁছেছে। রিমির এমন প্রত্যুত্তর শুনে কপাল কুঁচকালো অভ্র। জায়গা মতো খোঁ**চা*টা ছুঁ*ড়ে বলে উঠলো, ‘তোমার কাছে কে জানতে চেয়েছে?’

রিমি অবাক হয়ে বললো, ‘এই মাত্র না জানতে চাইলেন?’

অভ্র ভাবলেশহীন গলায় বললো, ‘ভাবি আর নুরাকে বৃষ্টিবিলাশী কন্যা বলেছি। তোমার সাথে এই নামটা যায় না।’

নুরা বলল, ‘তাহলে কোন নামটা যায় ভাইয়া?’

অভ্র জড়তাহীন গলায় বললো, ‘তোমার বোন অতিরিক্ত ঝ**গ*ড়া জানে। তাই ঝ*গ*ড়া*টে নামটা তার সাথে পারফেক্ট।’

আরিয়ান নুরা উচ্চস্বরে হেসে ফেললো অভ্রের কথায়। নুরা ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল উঠিয়ে গ্রে*ট শুধালো অভ্রের কথাটাকে। অপমানে তেঁতে উঠলো রিমি। গলার কন্ঠস্বরে ঝা**ঝ মিশিয়ে বললো, ‘ঝ**গ*ড়া*টে কাকে বলছেন আপনি?’

অভ্র নির্বিকার ভাবে উত্তরে বললো, ‘এখানে রিমি নামে দ্বিতীয় কেউ আছে বলে মনে হয় না।’

রিমি প্রত্যত্তরে কিছু বলতে যাবে এমন সময় আবরার আর সাবিত সেখানে উপস্থিত হলো। তাদের কে দেখে রিমি নিরব হয়ে যায়। দাঁ*তে দাঁত পি**ষে অভ্রের দীকে তী*ক্ষ্ণ চোখে তাকালো কেবল। আবরার এগিয়ে অভ্রের পাশে সিঙ্গেল সোফায় বসলো। অতঃপর তারা নিজেদের মতো আড্ডায় মশগুল হলো। পুরোটা সময় আবরার দীবাকে প্রখর করেছে। আড় চোখে বারংবার তাকিয়েছে কিন্তু দীবা ভুলবশত একবারো আবরারের দিকে তাকায়নি। চোখ মুখ শ*ক্ত করে নিরব থেকেছে শুধু। মনে মনে অস্থির হয়ে আছে আবরার। দীবার জে*লা*সি দেখে তখন মজা পেলেও এখন কেমন উ*ষ্ক*খু*ষ্ক লাগছে তার। রাতে খাবার খাওয়ার সময়ও দীবা নিরব ছিলো। অন্যান্য সময় সবার সাথে হেসে কথা বললেও আজ নিস্থব্ধ ছিলো সে। মাঝে মাঝে চোখ পা*কিয়ে আবরারের দিকে রাগি লুক দিয়েছিলো। দীবার রা*গা*ন্বিত চোখের তী*ক্ষ্ণ চাহনি আবরারের মন পুলকিত হচ্ছে না। মি**থ্যে টা ধরে না রেখে ভাবছে সত্যি টা বলে দেওয়াই ভালো।
____________________

নিস্থব্ধ রাত, স্নিগ্ধ বাতাস। অন্ধকারাচ্ছন্ন রাতে চাঁদের আলোতে আলোকিত পরিবেশ। সোডিয়ামের কৃতিম আলো নিভিয়ে ছাদের এক পাশে বসে আছে আবরার। অপেক্ষা করছে সে দীবার। রাতে খাবারের পর দীবাকে আর দেখেনি সে। মনের ব্যা*কু*লতা কমেনি। সেই মায়াবী মুখশ্রী দেখার প্রবল ইচ্ছা পুষণ করছিলো তার মন। এবার রা**গ ভা*ঙ্গাতে হবে। রাত যখন প্রায় এগারোটা ছুঁই ছুঁই। আবরার দীবার রুমের সামনে নখ কা*ম*ড়ে পায়চারী করছে আর ভাবছে সে কি দীবাকে একবার ডাক দিবে? বলবে তার সাথে কথা আছে? ভাবতে ভাবতে একসময় নজর গেলো রিমির উপর। রিমি তখন পানি খেতে রুম থেকে বের হয়েছিলো। সে আবরারকে দেখে প্রশ্ন ছু**ড়লো তাৎক্ষনাৎ, ‘এখানে কি করছো ভাইয়া?’

আবরার বেশ অ*স্ব*স্তিতে পরে গেলো। ইতস্ততবোধ করে বললো, ‘কিছু না। তুই যা।’

রিমির স*ন্দেহ*প্রবন দৃষ্টিতে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। সে খেয়াল করে দেখলো আবরার দীবার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। স*ন্দেহ তার আরো গাঢ় হলো। মনে মনে হেসে ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বললো, ‘দীবার রুমের সামনে কি করছো?’

আবরার এক হাতে মাথা চু*ল*কে ভাবছে কি বলা যায়। সরাসরি যদি দীবাকে দেখতে চাই বলে তাহলে নিশ্চয় তাকে নিয়ে হাসবে। মনে মনে বুদ্ধি এটে বলে উঠলো, ‘আসলে দীবাকে আরিয়ান ছাদে যেতে বলছে। কি জরুরী কথা নাকি আছে।’

রিমি বললো, ‘কিন্তু আরু ভাইকে তো একটু আগে অভ্র ভাইয়ার রুমে দেখলাম।’

‘ওহ আচ্ছা।’ বলে আর কোনো কথা খুঁজে পেলো না আবরার। রিমি স*ন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভ্রুঁ নাচায়। আবরার নিজেকে কেমন আহাম্মকের মতো লাগছে। তার এতো বছর জীবনে এমন বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে পরেনি। জিভ দিয়ে উষ্ঠধয় ভিজিয়ে বললো, ‘আরিয়ান একটু আগে আমাকে বলেছে। তুই গিয়ে দীবাকে জানিয়ে দে ব্যাস।’

রিমি ভ্রুঁ উঁচিয়ে ‘আচ্ছা আমি পানি খেয়ে আসি তারপর বলবো।’ বলে নিচে গেলো। আবরার যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে ছাদে চলে আসলো। এখন দীবার আসার অপেক্ষা।

রিমি পানি খেয়ে উপরে দীবার রুমের দিকে যাচ্ছে আর হিসেব মিলাচ্ছে। সে রুম থেকে বের হবার সময় সাবিত আরিয়ান কে অভ্রের রুমে হাসাহাসি করতে শুনেছে। এই কিছু সময়ের মাঝে দীবাকে কেন ছাদে যেতে বলবে? জরুরী কিছু হলে তো রুমেই আসতে পারে। না মিলাতে পারছে না সে।

‘কিরে পু*চকি। কি ভাবছিস?’

রিমির মাথায় গা**ট্টা দিয়ে বললো আরিয়ান। রিমি মাথা চু*লকে বললো, ‘তুমি দীবাকে ছাদে যেতে বলে এখানে কি করছো? দীবার রুমে গিয়েই তো কথা বলতে পারো। ছাদে যাবার কি আছে?’

রিমির কথা আরিয়ান কিছু বুঝতে না পেরে পাল্টা প্রশ্ন করলো, ‘ওয়েট, দীবাকে কখন ছাদে যেতে বললাম?’

‘ওমা, আরব ভাই যে বললো তুমি নাকি ছাদে ওয়েট করছো। দীবাকে যেতে বলতে বলছে আমাকে।’

আরিয়ান কিছুক্ষণ ভাবনায় মশগুল হয়। আরিয়ানের কথা বলে আবরার নিজে দীবার সাথে দেখা করবে। বুঝতে বাকি নেই আরিয়ানের। তাই শ**য়*তানী হাসি দিয়ে বলল, ‘তুই রুমে যা। আমি কথা বলছি।’

‘ঠিক আছে।’

আরিয়ান দীবার রুমে না গিয়ে ছাদে চলে আসলো। পুরো ছাদে একবার ভালো করে চোখ বুলিয়ে দেখলো আবরার রেলিং’য়ের কার্নিশ ঘে*ষে দাঁড়িয়ে আছে। সেও নিঃশব্দে গিয়ে পাশে দাঁড়ালো। আবরার তার পাশে আরিয়ানকে দেখে বিস্মিত হলো। বললো, ‘তুই এখানে?’

আরিয়ান অবাক হওয়ার ভান ধরে বললো, ‘ওমা আমি না দীবাকে ছাদে আসতে বললাম? তাহলে আমি থাকবো না তো কে থাকবে?’

আবরার দাঁতে দাঁত চি**বিয়ে ‘ড্যাম’ বলে রেলিংয়ে হা*ল্কা থা*প্পড় মা*রলো একটা। আরিয়ান এবার উচ্চস্বরে হেসে ফেললো। মুখের হাসি ধরে রেখে বললো, ‘চিল ব্রো চিল!

চলমান..

#আষাঢ়ে_শ্রাবণের_বর্ষণ
#মাইশাতুল_মিহির

[পর্ব-১৮]

প্রাতঃকালে এক পলাশ বৃষ্টির পর দুপুরের মধ্যভাগে ভ্যাঁপসা গরম ছড়ালো। অসহনীয় সূর্যের তপ্ত তাপ। ভেঁজা মাটির ঘ্রাণে চারপাশ আচ্ছন্ন। শান্তিনিবাসের প্রত্যকটা সদ্যস তুমুল ব্যস্ত। চলছে অনুষ্ঠানের উদ্যোগ। শুক্রবার হওয়ায় স্কুল, কলেজ ও অফিস বন্ধ। তাই সবাই নিজ বাড়িতে অবস্থান করছে। বড়রা রান্না ঘরে বসে গুলপট্টি বাধাচ্ছে কি কি আইটেম করা যায় তা নিয়ে। রাইমা কে দেখার জন্য মেহমান আসবে বাড়িতে। তাই এতো ঘটা করে আয়োজন। এসবের মাঝে আবরারের কোনো হেলদুল নেই। সে তার মতো নির্বিকার ভাবে রুমে ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে। অন্যদিকে অভ্র আন্তরিকতার সাথে আরিয়ান ও সাবিতকে সাহায্য করছে। সে প্রসন্ন মনেই সবার সাথে হাতে হাত লাগিয়ে দায়িত্ব সহকারে কাজ করছে। বাড়ির মেয়েরা কে কি পরবে তা নিয়ে তাদের মাঝে ভাবান্তর চলছে। বহুত ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিলো তারা তিনজন সেম ডিজাইনের চুড়িদার জামা পরবে। রাইমা কে পরানোর জন্য নিশিতা লাল জামদানি শাড়ি দিয়ে গেলো। রাইমাকে সাজিয়ে দিয়ে তারা তিনজন তৈরি হয়ে নিলো। দুপুরের মধ্যভাগ প্রায় শেষ পর্যায়ে মেহমানদের আগমন ঘটলো বাড়িতে। রোশান ও হোসেন খুব আন্তরিকতার সাথে মোঃ আফজাল শরিফকে স্বাগতম জানালো। আফজালের সাথে মূলত তার পরিচয় ব্যবসার মাধ্যমে। প্রথমে শুধু পরিচিত হলেও আস্তে আস্তে সম্পর্ক নিবিড় হয়ে বন্ধুত্বের রূপ ধারন করলো। আফজালের দুই ছেলে। এখন মূলত বড় ছেলে রাজিবের জন্য রাইমা কে দেখতে এসেছে তারা। যদিও রাইমাকে তারা আগে থেকে চিনে। কিন্তু এখন আন্টি বদল করাবে। আফজাল জানায় তার ছোট ছেলে কোনো এক কারণে আসতে পারেনি। তবে পরে তাদের সাথে দেখা করবে নিশ্চিত। প্রসন্ন মনে রোশান তাদের আপ্যায়ন করলো। দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই ড্রয়িংরুমে বসে গল্পগুজব করছে। এক পর্যায়ে আফজাল রাইমাকে দেখার ইচ্ছা পোষণ করলো। তখন দীবা, নুরা আর রিমি মিলে রাইমাকে নিয়ে আসে তাদের সামনে। রাইমা সবাইকে সালাম দিল। রাজিবের মা রাইমার সাথে খুব বন্ধুশোভল আচরনে এটা সেটা জিজ্ঞেস করতে লাগলো। রাইমা নম্রতার সাথে সকল প্রশ্নের জবাব দিলো। রাজিবের মা এক পর্যায়ে আয়েশার কাছে অনুমিত চাইলো, ‘বেয়াইন যদি কিছু মনে না করেন তাহলে রাজিব আর রাইমা কি আলাদা কথা বলতে পারবে?’

আয়েশা সম্মতি দিলেন, ‘জি অবশ্যই।’

রাইমা আর রাজিবকে রিমি আলাদা রুমে দিয়ে বাহিরে দাঁড়িয়ে রইলো। ইতিমধ্যে রাইমাকে রাজিবের মন্দ লাগে নি। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ গায়ের রঙে হালকা পাতলা ছিমছাম গরনের মেয়ে। হাসিটাও সুন্দর লেগেছে তার। চেহারায় মিষ্টি মিষ্টি একটা ভাব আছে। তবে এই মুহূর্তে এমন কি প্রশ্ন করা যায় ভেবে পাচ্ছে না রাজিব। নিজেকে খুব নার্ভাস লাগছে। কেটে গেছে অনেক সময়। রাইমা চুপচাপ বিছানার এক পাশে মাথা নিচু করে বসে আছে। বুক তার ধুরুধুরু করছে। রাজিব হালকা কেশে গলা পরিষ্কার করে নিলো। তারপর বললো, ‘এই বিয়েতে কি আপনার সম্মতি আছে? নাকি পারিবারিক কোনো চাপ?’

রাইমা তার কাজল কালো আঁখি যুগল তুলে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সুদর্শন পুরুষটির দিকে তাকালো। মেদহীন শরিরে লম্বা ফর্সা গায়ের রঙ। রাইমা চোখে চোখ রেখেই শুধাল, ‘তেমন কিছুই না।’

‘আপনার যদি অন্য কোথাও সম্পর্ক থেকে থাকে তাহলে নির্ধিদায় আমাকে বলতে পারেন। আমি বিয়েতে না বলে দিবো। আপনার উপর চাপ আসবে না।’

রাইমা তাৎক্ষনাৎ অস্থির কন্ঠে বলতে লাগলো, ‘না না। বিয়েতে অবশ্যই আমার মত আছে। আমি কোনো সম্পর্কের মাঝে নেই।’

রাজিবের মন প্রসন্ন হলো। সে চোখে হেসে মুখে বললো, ‘তাহলে নিচে গিয়ে হ্যাঁ সম্মতি দিতে পারি?’

লজ্জা পেলো রাইমা। চোখ সরিয়ে হাল্কা করে মাথা দুলালো। রাজিব তার মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে ঠোঁট প্রসারিত করে মৃদু হাসলো। তারপর কিছু না বলে বাহিরে চলে আসে দুজন। সবাই মতামত জানতে চাইলে দুজনই হ্যাঁ বললো। আবরার নিচে এসে সবার সাথে কুষলবিনীময় করলো। দীবা, রিমি ও নুরা প্রচন্ড রকমের খুশী কারন রাজিবকে তাদের দুলাভাই হিসেবে পছন্দ হয়েছে। রাজিব আর রাইমার আন্টি বদল হলো। বিয়ের দিন তারিখ এই মাসের শেষের দিকে ঠিক করা হলো। অতঃপর রাইমাকে নিয়ে তিনজন রুমে চলে গেলো। আফজাল দীবার সম্পর্কে জানতে চাইলো। বললো, ‘আমার ছোট ছেলের জন্য দীবাকে পছন্দ হয়েছে রোশান। অনেক মিষ্টি মেয়ে দীবা। তোমার কি মতামত?’

আফজালের কথা শুনে চমকে উঠলো উপস্থিত সবাই। আরিয়ান মুখের সামনে হাত নিয়ে খুকখুক করে কেশে উঠলো। আবরার চুপচাপ তার বাবার প্রত্যত্তরের অপেক্ষা করছে। রোশান গম্ভীর ভাবে উত্তর দিলো, ‘দীবা এখনো ছোট আফজাল। ওর বিয়ে নিয়ে ভাবি নি আমরা।’

আফজাল বলল, ‘এখন তো আর বিয়ে হবে না। আমি আংটি বদল করেই রাখতে চাই। সময় হলে না হয় ঘটা করে বিয়ে দেওয়া হবে।’

রোশান চোখ তুলে আবরারের দিকে তাকালো। তারপর শুধালো, ‘দেখা যাক। ছেলের সাথে আগে তো পরিচয় হোক আমাদের। তারপর না হয় ভাবা যাবে।’

প্রশন্ন হলো আফজাল। কিন্তু ক্রো*ধান্বিত হলো আবরার। চোখ মুখ শক্ত করে রোশানের দিকে তাকিয়ে রইলো। দীবা তার স্ত্রী এই কথাটা বললো না কেন? রোশানের উপর প্রচন্ড রকমের রাগ হলো তার। রাগ দমিয়ে চুপচাপ স্থান প্রত্যাখ্যান করলো। নিশিতা ঝাঁঝ মেশানো চক্ষু দৃষ্টি ফেললো রোশানের উপর। বাবা ছেলের এমন মন রে*শা-রে*শিতে মোটেও প্রসন্ন নয় তার মন। কবে শেষ হবে এই ক্রো*ধ??
____________________

‘মাথার তার ছিঁ*ড়ে গেছে তোর? আব্বু এমন কথা কখনোই বলবে না।’

নুরার কথায় কন্ঠস্বরে বিরক্তি প্রকাশ করে বললো রিমি। তার পাশেই দীবা আহাম্মকের মতো বসে আছে। দুতলার সামনে বড় ছাউনি যুক্ত বারান্দা। রেলিং এর পাশে বিভিন্ন ফুলের টপ ঝুলানো। দেয়াল ঘেঁষে রয়েছে ফ্লোর বেড। পার্পল কালার চাদড়ে মুড়ানো বেডের উপর রয়েছে কয়েকটি কুশন।এখান থেকে বাহিরের দৃশ্য স্পষ্ট বুঝা যায়। তিমিরাচ্ছন্ন পরিবেশে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ফোটা পরছে। শীতল হাওয়া প্রভাহমান। ভেজা মাটির ঘ্রাণেন্দ্রিয় স্পষ্ট। নুরা হাতের মোবাইলটা ফ্লোর বেডে উপর ছুঁড়ে ফেললো। অতঃপর উঠে দাঁড়িয়ে কোমড়ে এক হাত রেখে দুজনের উদ্দেশ্যে শুধাল, ‘বিশ্বাস কর বোইনে-রা। দুলাভাইয়ের একটা ছোট ভাই আছে। তার জন্যই দীবাকে পছন্দ করেছে আঙ্কেল। কাকা বলছে ছেলের সাথে পরিচয় হলে কথা বলবে।’

রিমি আবারো কন্ঠে ঝাঁঝ মিশিয়ে বললো, ‘এটা কিভাবে পসিবল? দীবা তো ম্যারিড। আব্বু এমন বলবে কেন?’ নুরা ক্ষুন্ন মনে ভাবুক কন্ঠে বললো, ‘জানি না।

‘তাহলে আমি রাজি!’ দীবার ভাবলেশহীন প্রত্যত্তর শুনে রিমি নুরা হতবাক হয়ে গেলো। নুরা ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকে প্রশ্ন করলো, ‘কি বললি তুই?’

দীবা দেয়ালে হেলান দেওয়া অবস্থা পরিবর্তন করে সোজা হয়ে বসলো। তারপর কিছুটা রশিকতার ছলে বললো, ‘রাজিব ভাই যেহেতু সুন্দর তার ছোট ভাইও নিশ্চয় সুন্দর হবে তাই না? ছেলে সুন্দর হলে আমি রাজি। তাছাড়া রোশান আঙ্কেল মতামত দিলে তো কোনো কথাই নেই।’

রিমি কুশন তুলে দীবার দিকে ছুঁড়ে মৃদু গলায় চেঁচিয়ে উঠলো, ‘তুই অলরেডি বিবাহিত। আমার ভাইয়ের বউ। আমার ভাবি। ভুলে গেছিস নাকি?’

হাসলো দীবা। দাঁত কেলিয়ে বললো, ‘অবশ্যই মনে আছে। তোমার ভাইয়ার জীবনে যদি লামিয়া সামিয়া থাকে তাহলে আমার থাকবে না কেন? তাছাড়া আমাদের মাঝে নামে মাত্র স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক। এটা কোনো ফ্যাক্ট না।’

নুরা অসন্তোষজনক ভাবে বললো, ‘ধুরু, সব সময় ফাজলামো ভালো লাগে না।’

দীবার একরোখা বক্তব্য, ‘আমি মজা করছি না। ছেলে সুন্দর হলে আমি রাজি।’ রিমি বিরক্তি মাখা চোখে এক বার তাকিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে আকাশে দৃষ্টি রাখলো। দীবার বলা সম্পূর্ণ কথা গুলোই কর্ণপাত হলো আবরারের। সে দীবাকে খুঁজতেই এই দিকে এসেছিলো। অতঃপর তিন জনের কথোপকথন কানে পৌঁছালো। রাগান্বিত হলো দীবার শেষের কথাটায়। রোশানের উপর থাকা চাপা রাগ। তার উপর দীবার এমন মতপ্রকাশে ক্রোধ তার তীব্র হলো। শক্ত গলায় বলে উঠলো, ‘কি বললে তুমি?’

কণ্ঠস্বর অনুসন করে বারান্দার দরজার এক পাশে চোখ তুলে তাকালো তিনজন। আবরার পকেটে দুই হাত গুঁজে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে আছে দীবার দিকে। তার এমন চাহনীতে দীবা ভয়ে শুকনো ঢুক গিললো। সে তো এইসব মজা করে বলেছে। লোকটা শুনলো কিভাবে? উফফ! ভিতরে ভিতরে ভয়ার্ত হলেও বাহিরে প্রকাশ করলো না। আবরার এগিয়ে দীবার সামনে দাঁড়িয়ে আবার প্রশ্ন করলো, ‘চুপ আছো কেন? বিয়ে করার শখ জেগেছে আবার?’

আবরারের এমন কথায় অপমান লাগলো দীবার। রাগে শরির রিনরিন করে উঠলো। বসা থেকে উঠে আবরারের মুখোমুখি দাঁড়ালো একদম। তাদের দুজনের মাঝে মাত্র চার পাঁচ হাত দূরত্ব। আবরারের এমন কথায় দীবার আগে জমানো অভিমান, ক্রোধ বেড়ে গেলো। চোয়াল শক্ত হলো তার। শুধাল,’তাতে আপনার কি?’

আবরার কিছুটা ধমকে উঠলো, ‘আমার অনেক কিছু। আমি তোমার হাসবেন্ড। তার পরেও কেন রাজি হবে তুমি?’

দীবা কিছুটা তাচ্ছিল্য কন্ঠে বললো, ‘হাসবেন্ড? তিন মাস পর মনে হলো আপনি কারোর হাসবেন্ড হোন? যাক তাও তো মনে আছে। আমি ভেবেছি ভুলে গিয়ে বুঝি লামিয়াকে নিয়ে আছেন।’

দীবার প্রত্যত্তর শুনে আবরার নিভলো। কণ্ঠস্বর নরম করে বললো, ‘আমি লামিয়া নামে কাউকে চিনি না। তখন তোমাকে রাগাতে মজা করে বলেছিলাম।’

আবরারের কথায় পাত্তা দিলো না দীবা। প্রথমের ন্যায় রুক্ষ কন্ঠে বলতে লাগলো, ‘ওই দিন সম্পূর্ণ দোষ আমার উপর দিয়েছিলেন আপনি। যেখানে আমি-আপনি দুজনই নির্দোষ ছিলাম। রাতে বাজে একটা পরিস্থিতি ক্রিয়েট করে চলে গিয়েছিলেন। এতো দিন একবারো জানতে চাননি আমার অবস্থা কেমন ছিলো। বিয়ের রাতে বর বউকে ছেড়ে চলে গেছে বলে আত্মীয়পরিজন আমাকে কতো কথা শুনালো। কেউ তো আমাকে বাপ ম*রা অপায়া মেয়ে বলেছিলো। মেন্টালি ডিপ্রেশডে চলে গিয়েছিলাম আমি। আর এতো দিন পর এসে বলছেন আপনি আমার হাসবেন্ড? এই শব্দটা উচ্চারণ করতে একটুও লজ্জা করলো না? কোন অধিকারে বলছেন এই কথাটা?’

এক নাগাড়ে এতো গুলো কথা বলে থামলো দীবা। জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগলো। হৃদপিন্ড তার দ্রুতগতিতে চলছে। রিমি নুরা নিরবে এক পাশে দাঁড়িয়ে থেকে শুনছে সব। আবরার স্থব্ধ হয়ে আছে। সত্যি সে কখনো দীবার জায়গা থেকে ভাবে নি। হঠাৎ বিয়ে হওয়ায় একটা মেয়ের মনে ঠিক কতটুকু প্রভাব ফেলে তা কেবলমাত্র সেই মেয়েটি বলতে পারবে। আবরার বাকশূন্য প্রায়। শুকিয়ে যাওয়া উষ্ঠ জোড়া জিভ দিয়ে ভিজিয়ে নরম গলায় বললো, ‘তখনকার পরিস্থিতি ভিন্ন ছিলো। বিয়েটা মানতে পারিনি আমি।’

আবরারকে থামিয়ে দীবা কথার পিঠে বলে উঠলো, ‘তখন মানেন নি তো এখন কোন হিসেবে মানছেন? কোন হিসেবে হাসবেন্ড বলছেন? এতো দিন পর এসবের কোনো মানেই হয় না। ভুলে গেছি আমি সব। আর এখন আমি যা খুশি তা করবো। একদম অধিকার দেখাতে আসবেন না।’

আর এক মুহূর্তও দেরি না করে তাৎক্ষনাৎ স্থান প্রত্যাখ্যান করলো দীবা। আবরার এখনো আগের ন্যায় নিশ্চুপ। রাগ হলো তার! তবে নিজের উপর। দীবা তো ভুল কিছু বলেনি। ওই দিন দীবাকেই দোষারোপ করেছিলো সে। এতো গুলো দিন খোঁজ খবর না নিয়ে হঠাৎ করে কিসের ভিত্তিতে সে অধিকার ফলাবে? ভাবলো না আর। চুপচাপ বারান্দা থেকে চলে গেলো। গাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো আবরার। রিমি আর নুরা একে অপরের দিকে ক্ষুন্ন মনে তাকালো। নুরা উদাস মনে বললো, ‘ওরা তো ঝগড়া করলো। এবার কি হবে?’

রিমি আশ্বাস দিয়ে বলে উঠলো, ‘ওদের ব্যাপার ওরাই সামলাবে। কিন্তু আব্বু যেনো দীবার বিয়ে নিয়ে কিছু করে সেটা আমাদের দেখতে হবে।’

‘কিন্তু কিভাবে?’

উত্তর দিলো না রিমি। আপাতত চিন্তিত সে। ভাই আর দীবার সম্পর্ক নিয়ে চিন্তিত। দুজন মিলে গেলে দুশ্চিন্তা দূর হবে। কিন্তু কিভাবে ওদের সম্পর্ক ঠিক করবে??
_____________________

রুমের এসে দরজা লাগিয়ে বিছানায় বসলো দীবা। এতোক্ষণ আবরারকে তরতর করে এতো গুলো কথা শুনিয়ে দিলেও এখন তার মন বিষণ্ণবদন। ভয় লাগছে তার। মুখের উপর কথা গুলো বলা একদম উচিত হয়নি তার। বিছানার হেডসাইডে পিঠ ঠেকিয়ে বসলো দীবা। চোখের পাতা ভিজে এলো আপনা আপনি। মনে পরলো সেই দিনের কথা! কান্না পেলো প্রচুর। নাক টেনে শুকনো ঢুক গিললো সে। দুই হাটু উঁচু করে তাতে মাথা ঠেকিয়ে কেঁদে ফেললো।….

চলমান…