#আষাঢ়ে_শ্রাবণের_বর্ষণ
#মাইশাতুল_মিহির
[পর্ব-৪৬]
বিষণ্ণতার বিকেল গুলো কেটে যাচ্ছে চোখের পলকে। আষাঢ়মাসের দিন গুলো শান্তিপূর্ণ থাকলেও শ্রাবণের মেঘ গুলো শূন্যতায় ভরিয়ে দিলো। ক্লান্ত বিকেল, একাকিত্বের রাত, বিষণ্ণ সুন্দর সকাল! শ্রাবণের প্রাত্যহিক দিনগুলো এভাবেই কাটছে নুরার। চোখের নিচের কালো দাগ মেকআপের আস্তরণের মধ্যে লুকানো হয়েছে জনসম্মুখ হতে। হৃদয়ের ক্ষত গুলো আড়ালে রেখে সকলের সঙ্গে হাসিখুশি দিন গুলো বিদায় দিচ্ছে নুরা। তবে রাজকে না দেখার বেদনা তাকে বিষিয়ে তুলছে। প্রতিদিন কলেজে যাবার পর থেকে চোখ দুটো শুধু রাজকে খুঁজে বেড়ায়। অনুভূতি গুলো প্রকাশ করতে না পারার কষ্ট তাকে কুঁকড়ে কুঁকড়ে খায়। ফটিকছড়ি তেই রাজের সঙ্গে দেখা হয়েছে তার। এখন অব্দি রাজের কোনো খোঁজ পেলো না। কলেজেও আসছে না। হায়ার ম্যাথম্যাটিকস ও ফিজিক্স ক্লাস রাজের পরিবর্তে অন্য টিচার করাচ্ছে। রাজের মতো গম্ভীর, রাগী টিচার ক্লাসে না আসায় অন্য সবাই খুশি হলেও নুরা মোটেও না। রাজের না আসার কারণটা তার জানা। তবে কি সত্যি রাজ দেশ ছাড়বে? প্রশ্ন টা মনে আসতেই বুকে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করতে লাগলো। চোখ ঘুরিয়ে বারবার হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখছে নুরা। ক্লাসটা শেষ হবার অপেক্ষা করছে শুধু।
অবশেষে অপেক্ষার প্রহর ঘনিয়ে ক্লাস শেষ হলো। অর্ধবয়স্ক শিক্ষক সাত্তার খান শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ক্লাস থেকে চলে গেলো। উনি যেতেই আড্ডায় মশগুল হলো শিক্ষার্থীরা। কোলাহলে পূর্ণ হলো ক্লাস। নুরা দ্রুত ক্লাসের বাহিরে এসে দেখলো অলরেডি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছেন তিনি। বিলম্ব না করে দৌড়ে সিঁড়ির কাছাকাছি এসে ডাক দিলো নুরা। ভদ্রলোক পিছু ফিরে তাকাতেই নুরা সাবলীল ভাবে প্রশ্ন করলো, ‘মুনতাসির রাজ স্যার কলেজে আসে নি আজ?’
সাত্তার খান সুন্দর ভাবে বললো, ‘অনেকদিন ধরেই রাজ কলেজ আসছে না। কেন? কোনো দরকার ছিল?’
অনেক দিন ধরেই কলেজ আসছে না। কথাটা নুরা জানে। ফটিকছড়ি যাবার আগের দিন থেকেই রাজ কলেজ আসে না। কিন্তু ফটিকছড়ি থেকে ফেরার পর থেকে কেন আসছে না? এটাই নুরা জানতে চাইছে। কিন্তু স্যার তো উলটো তাকে প্রশ্ন করে বসলো। প্রত্যুত্তরে সে কি বলবে? কিসের জন্য রাজের খোঁজ করছে? কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে চিন্তা করলো নুরা। হুট করে মাথায় একটা কথা আসতেই বলে ফেললো,
‘আসলে স্যার আমাকে একটা ম্যাথ দিয়ে বলেছিলো পরে দেখাতে। আমি ম্যাথটা কমপ্লিট করেছি। কিন্তু স্যারকে দেখছি না তাই দেখাতে পারছি না। কলেজ আসছে না কেন স্যার? আপনি কিছু জানেন?’
শেষের কথাটা একটু আগ্রহভরে বললো নুরা। রাজের প্রতি তার এমন কৌতুহল দেখে সন্দিহান চোখে তাকালো সাত্তার। কিন্তু সন্দেহাতীত কিছু বললো না নুরাকে। কারণ রোশান মাহমুদের ভাতিজি এবং সোহেন মাহমুদের মেয়ে হিসেবে নুরা তার পরিচিত। তাই এড়িয়ে চললো ব্যাপারটা। স্বাভাবিক ভাবে জানালো, ‘কারণ তো আমি জানি না। কলেজ আসা না আসা যার যার পারসোনাল ব্যাপার। তবে প্রিন্সিপাল স্যারের কাছ থেকে যতোটুকু শুনেছি রাজ মনে হয় পিএইসডির জন্য বাহিরে যাবে শীঘ্রই।’
নিরবে দীর্ঘশ্বাস ফেললো নুরা। মনে মনে তাচ্ছিল্য হাসি দিলো একটা। এটাই তাহলে রাজের ফাইনাল ডিসিশন। রাজ সত্যি দেশ ছাড়বে। ক্ষুন্ন হলো মন। আগ্রহাতিশয় চেহারা মলিন করে শুধাল, ‘ওহ আচ্ছা।’
কথাটা বলে চলে যেতে নিলেই পিছন থেকে অর্ধবয়স্ক শিক্ষক সাত্তার ডেকে উঠলো, ‘তোমাকে কোন ম্যাথটা দিয়েছে রাজ? আমাকে দেখাও সমস্যা নেই।’
গুরুত্ব দিলো না নুরা। না দাঁড়িয়ে হাঁটার মাঝেই ঘাড় ঘুরিয়ে পিছু তাকিয়ে জবাব দিলো, ‘ভাইকে দেখিয়ে নিবো। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ!’
বলেই সামনের দিকে হাঁটা শুরু করলো নুরা। কিছু ভালো লাগছে না তার। অনুভূতি শূন্য হয়ে পরেছে একদম। এতো কষ্ট, যন্ত্রনা কেন শুধু তার কপালেই লিখা ছিল? রাজকে ভালোবাসার মতো এতো বড় অন্যায় কেন সে করলো? কেন রাজকে ভুলার কথা কল্পনাতেও আনতে পারে না? নিজের জন্য বড্ড মায়া হলো নুরার। এতো কষ্ট নিরবে একাই সহ্য করতে লাগলো। বাকি ক্লাস গুলো নিশ্চুপ রইলো। অন্যান্য সময় একাই পুরো ক্লাস মাতিয়ে রাখা মেয়েটা হুট করে চুপচাপ হয়ে গেলো। ব্যাপার টা কিছুতেই সহজ ভাবে নিলো না দীবা ও রিমি। কি এমন কারণ থাকতে পারে যা নুরাকে হঠাৎ পরিবর্তন করে দিল? ক্লাসে থাকায় নুরাকে প্রশ্ন করলো না। স্বাভাবিক ভাবে বাকি ক্লাস গুলো শেষ করে বাড়ি ফিরলো তিনজন।
_____________________
করিডোরের পথ ধরে দুই হাত বুকে গুঁজে হাঁটছে রিমি। দৃষ্টি তার বিশালাকৃতির বারান্দার দরজার খোলা জায়গায়। দরজার ফাঁক দিয়ে বাহিরের খোলামেলা দৃশ্য ভাস্যমান। নীল আকাশটা গুধূলীর আবিরে রঙ্গিন। সূর্য পশ্চিমাকাশে ডুব দিবে কিয়ৎক্ষণ পর। নুরাকে নিয়ে গভীর চিন্তায় মশগুল রিমি। হুট করে নুরার বিহেভিয়ারের বিশাল পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। নুরা কি কোনো ব্যাপারে ডিপ্রেশনে আছে? নয়তো তাকে এমন মনমরা দেখায় কেন? নুরার এই পরিবর্তন দেখে রিমির নিজেরও ভালো লাগছে না। সারাক্ষণ দুশ্চিন্তা ঘুরঘুর করছে মাথায়। যখন পূর্ণ মনোযোগ সহকারে নুরাকে নিয়ে ভাবতে ব্যস্ত রিমি ; তখুনি আকস্মিক কেউ তার বাহু ধরে টান দিয়ে অন্ধকার একটা রুমে নিয়ে গেলো। হঠাৎ -ই কেউ বাহু ধরে টান দিয়ে অন্ধকার রুমে নেওয়ায় হতভম্ব হয়ে গেলো রিমি। ভয়ে চেঁচিয়ে উঠতে নিলেই তার মুখ চেপে ধরে কানের কাছে ফিশফিশ করে বলে উঠলো অভ্র,
‘চুপ! চেঁচাবে না একদম। আমি অভ্র।’
তবুও রিমি নিজেকে ছাড়ানোর জন্য উম্ম উম্ম করে যাচ্ছে। তার এমন অস্বস্তির কারণ বুঝতে পেরে মুখ থেকে হাত সরালো অভ্র। ছাড়া পেতেই জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগলো রিমি। রাগে চোখমুখ শক্ত করে অভ্রের বাহুতে শরিরের সর্বশক্তি দিয়ে একটা কি/ল বসিয়ে দিলো। ব্যাথা পেলেও টুঁশব্দ করলো না অভ্র। রিমি তার এমন কান্ডের জন্য কপাট রাগ দেখিয়ে বললো, ‘শ’য়’তা’ন ছেলে। এভাবে কেউ টেনে আনে? ভয় পেয়েছি আমি।’
ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকালো অভ্র। কোমড়ে দুই হাত রেখে কপাল কুঁচকেই প্রশ্ন করলো, ‘ভয়? তাও আবার তুমি পেয়েছো? সত্যি নাকি রিমি?’
বারান্দায় থাকা কৃতিম লাইট গুলোর আলো রুমে এসে পরেছে। সেই আলোতেই রুমটা আবছায়া আলোকিত। হালকা ঝাপসা আলোতে অভ্রের মায়াবী মুখখানির দিকে তাকালো রিমি। প্রেম প্রেম পেলেও প্রকাশ করলো না। কিছুক্ষণ আগের ঘটনার কারণে রাগান্বিত সে। তাই রোমান্টিক ফিলিংস বাদ দিয়ে কোমড় বেধে ঝগড়ায় নামলো, ‘কেন? আমি কি রোবট যে ডর-ভয় কিছু নেই আমার মাঝে?”
অভ্র এক হাতে মাথার পিছনের চুল গুলো চুলকাতে চুলকাতে বলল, ‘না মানে অল টাইম তোমাকে চেঁচাতে দেখে তুমি যে ভয় পাও সেটা ভুলে গেছি প্রায়।’
কথাটা বলার পরেই সকচকিত হলো অভ্রের মস্তিষ্ক। হকচিকিত চেহারায় রিমির দিকে তাকালো। ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো একটা। ভুল জায়গায়, ভুল সময়ে কথাটা বলে ফেলেছে সে। এখন বাঁচার উপায়?
অভ্রের এমন মন্তব্য শুনে রিমির চোখ দুটো রসগোল্লা সাইজ। রাগ শরিরে রিনরিনিয়ে উঠলো। দাঁতে দাঁত পিষে চোয়াল শক্ত করে তাকালো অভ্রের দিকে। কিছু বলার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতেই অভ্র ঘটালো আরো একটা অবাক করার ঘটনা। বিস্মিত হলো রিমি। হতভম্ব হয়ে ফ্যালফ্যাল চোখে অভ্রের দিকে তাকিয়ে রইলো শুধু।।
বোমা ফোটার আগেই পদক্ষেপ গ্রহন করা উত্তম বলে মনে করে অভ্র। হুট করে যেহেতু এমন একটা কথা বলে ফেলেছে সেহেতু কিছু তো করতে হবে যেন বোম বিস্ফোরিত না হয়। কি করবে, কি করবে না ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ দুষ্টু একটা বুদ্ধি আটকালো মাথায়। এর চেয়ে ভালো পদক্ষেপ আর হতেই পারে না। তাই বিলম্ব না করে রিমির দুই গালে নিজের দুই হাত রেখে ঠোঁটে আলতো ভাবে একটা চুমু একে দিলো। রাগ দেখাতে গিয়েও থেমে গেলো রিমি। ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে অভ্রের দিকে তাকিয়ে রইলো। রিমির গাল ধরেই ঠোঁটে আবারো ছোট একটা চুমু দিয়ে আহ্লাদী কন্ঠে বললো অভ্র,
‘বেবি প্লিজ রাগ করো না। তুমি অনেক কিউট কিউট একটা গার্লফ্রেন্ড। সুইটের হাড়ি, পাতিল, ডিব্বা। তোমাকে এখানে এনেছি একটু একা সময় কাটাতে। রেগে গিয়ে সুন্দর মোমেন্ট টা নষ্ট করো না প্লিজ। তুমি না আমার সোনামণি পাখি। প্লিজ অসহায় বয়ফ্রেন্ডটার প্রতি একটু সহায় হউ।’
নিজেকে আর সংযত রাখতে পারলো না রিমি। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হেসে উঠলো। ঠোঁটে হাসি রেখেই অভ্রকে নিজের দুই হাতের বন্ধনে আবদ্ধ করে নিলো। অভ্রের বুকে নিজের চিবুক রেখে অভ্রের দিকে তাকালো। মিষ্টি করে একটা হাসি উপহার দিলো রিমি। অভ্র তার কপালে আলতোভাবে আরো একটা চুমু দিয়ে বললো, ‘লজ্জা পেলে না যে?’
রিমি ঠোঁটে হাসি রেখেই ভাবলেশহীন ভাবে শুধাল, ‘আমি লজ্জা পাই না।’
নিচের ঠোঁট কামড়ে বাঁকা হাসলো অভ্র। রিমির কপালে নিজের কপাল ঠেকিয়ে বললো, ‘বাহ্! প্লাস পয়েন্ট।’
বুঝতে না পেরে রিমি জানতে চাইল, ‘কিসের প্লাস পয়েন্ট?’
অভ্রের ঠোঁটে এখনো শয়তানি হাসি বিদ্যমান। বললো, ‘অন আওয়ার ওয়েডিং নাইট, কষ্ট করে আর লজ্জা ভাঙ্গাতে হবে না।’
লজ্জা পাই না বলা রিমি এই মুহূর্তে অভ্রের বলা কথাটায় ভীষণ লজ্জা পেলো। নিজের লজ্জা মাখা মুখখানি লুকাতে অভ্রের বক্ষস্থলে নিজের মুখ লুকালো। শব্দ করে হেসে উঠলো অভ্র। রিমিকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে। কেটে গেলো অনেকটা সময়। নিরবতা ভেঙ্গে অভ্র তার মনে জমে থাকা প্রশ্নটা করলো।
‘রিমি?’
‘হুম?’
ফটিকছড়িতে থাকার সময় খেয়াল করেছি তুমি কোনো ব্যাপারে অনেক চিন্তিত। একটু আগেও অন্যমনস্ক হয়ে হাঁটছিলে। কি হয়েছে তোমার? আমাকে বলো প্লিজ।’
হাতের বাধন হালকা করলো রিমি। মাথা তুলে অভ্রের দিকে তাকালো। চোখে চোখ রেখে মলিন কন্ঠে শুধাল, ‘ইদানীং নুরাকে কেমন জানি লাগে। মনে হয় কোনো ব্যাপারে সে অনেক আপসেট। সেদিন রাতে হুট করে এসেই দীবার গালে থাপ্পড় দিয়ে বললো তার প্রিয় জিনিস নাকি সবসময় হারিয়ে যায়। কিন্তু দীবা কি করেছে সে নিজেও জানে না। কি কারণে মারলো তাও না। নুরা দরজা লাগিয়ে একা ছিলো সারারাত। কেঁদেছে অনেক। তারপর থেকেই নুরাকে কেমন জানি হয়ে গেছে। আগের মতো প্রাণোচ্ছল না। হাসাহাসি করে না। আমাদের সাথে তেমন জমিয়ে দুষ্টুমিও করে না। কারণ টা আমাদের এখনো খোলে বলে নি। নুরাকে এমন দেখতে আমার একদম ভালো লাগে না।’
হতবাক অভ্র। সত্যি নুরাকে আসার পর থেকে অন্যরকম লেগেছে। হঠাৎ এমন কি হবে তার?
‘নুরার কি কোনো রিলেশন আছে?’
‘না!’
‘সত্যি জানো? নাকি লুকিয়েছে তোমাদের থেকে।’
‘আরে না। নুরার রিলেশন নেই। তবে একটা সিরিয়াস ক্রাশ আছে।’
ভ্রুঁ কুঁচকালো অভ্র। সিরিয়াস ক্রাশটাকে জানতে চাইলে রিমি বললো, ‘রাজ স্যার। উনি যেদিন প্রথম আমাদের কলেজে এসেছে সেদিন থেকেই নুরা তার উপর ক্রাশ খেয়ে বসে আছে।’
কথা গুলো একটু হাসি হাসি ভাব নিয়ে বললো রিমি। কিন্তু অভ্র চলে গেলো চিন্তার অন্য জগতে। তার মাথায় হাজারটা প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে লাগলো। রাজ দীবাকে পছন্দ করে আগে থেকে সেটা আবরার তাকে বলেছিলো। এই নিয়ে ফটিকছড়ি তে দুজনের মাঝে একটু ঝামেলা হয়েছে। তাহলে কি নুরা কোনো ভাবে জানতে পেরেছে রাজ দীবা কে ভালোবাসে? আর এই কারণেই নুরার পরিবর্তন? কারণটা ধরতে বেশি সময় লাগে নি অভ্রের। নিচের ঠোট কামড়ে রিমির দিকে তাকালো। নিরবে তপ্ত শ্বাস ফেলে রিমির মুখের সামনের চুল গুলো কানের পিছনে গুঁজে দিতে দিতে আশ্বাস দিয়ে বললো, ‘টেনশন করো না। সব ঠিক হয়ে যাবে।’
অভ্রের চোখের দিকে তাকালো রিমি। এই মানুষটা তার ভরশা। এই মানুষটার বুকেই তার শান্তির জায়গা। এই মানুষটাকেই সে ভালোবাসে। চিন্তিত মনে একটু প্রশান্তি আনতে অভ্রকে আবারো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। মনে মনে এটাই চাইলো নুরাও যেন ঠিক হয়ে যায়। সব ঝামেলা যেন খুব শীঘ্রই মিটে যায়।
____________________
রাত্রীর শুরু কেবল। চারপাশ নিঝুম অন্ধকার। অন্যান্য দিনের তুলনায় আজকের আকাশটা পরিষ্কার। সাদা মেঘেদের ভেলা ভাসছে। রাস্তাঘাট নিরব নিস্তর হলেও পুল ক্লাবে মেতে আছে কিছু যুবক। নিজেদের অবসর সময় কাটাতে ফ্রেন্ডদের সাথে নিয়ে রাতের বেলা পুল খেলায় মেতে উঠে সবাই। বিষণ্ণ মনটাকে একটু ভালো করতে বহুদিন পর পুল বেল খেলতে এসেছে রাজ। দীবাকে ভুলে থাকার যথাসম্ভব প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তবুও কেন জানি দীবার সেই গোলগাল হাস্যউজ্জ্বল চেহারা তার চোখে ভেসে উঠে। ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো রাজ। একটু নিচু হয়ে কিউ স্টিক টা সামনে থাকা লাল বলটার দিকে তাক করলো। সরু চোখে খুব সাবধানতার সঙ্গে বলটার দিকে স্টিকটা রাখলো। মনোযোগ যখন বলটার দিকে তখুনি রাজের পকেটে থাকা মোবাইলটা ভোঁভোঁ শব্দ তুলে বেজে উঠলো। তবুও নিশানা সরালো না। তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে থেকে নিশানা বরাবর ছুড়লো রাজ। বিপরীত পাশে থাকা তার বন্ধু শব্দ করে হেসে উঠলো। রাজকে দূরদান্ত খেলোয়াড় হিসেবে প্রশংসা করতে লাগলো। প্রত্যুত্তরে স্মিতি হাসলো রাজ। পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখলো আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে। কলটা রিসিভ করে মোবাইল কানে দিয়ে বললো, ‘হ্যালো?’
অপর পাশের ব্যক্তি একদম নিশ্চুপ। কোনো প্রকার বাক্য খরচ করছে না। চুপচাপ থেকে কাটিয়ে দিলো প্রায় অনেকটা সময়। কোনো প্রকার সাড়াশব্দ না পেয়ে রাজ আবারো বললো, ‘কে বলছেন?’
টু টু শব্দ তুলে লাইনটা কেটে গেলো। আশ্চর্য হলো রাজ। এতো রাতে কল দিয়েছে অথচ কোনো কথা না বলেই কেটে দিলো? কিন্তু কেন? প্রশ্নটা মাথায় রেখেই আবারো খেলায় মনোযোগ দিলো। ঘড়ির ধরে প্রায় পনেরো মিনিট পর একই নাম্বার থেকে পূর্ণরায় আবারো কল আসলো। রাজ প্রথমের যতো রিসিভ করে বললো, ‘হ্যালো?’
এবারো অপরপাশের ব্যক্তিটি নিশ্চুপ। তাকে চুপচাপ দেখে অল্প শব্দে হেসে ফেললো রাজ। ঠোঁটে হাসি রেখেই বলে উঠলো, ‘কল দিয়ে কথা বলছো না কেন নুরা?
নুরার চোখ একদম চড়কগাছে উঠে গেছে। কান থেকে মোবাইল নামিয়ে নাম্বার টা দেখলো। তারপর আবারো কানে দিয়ে আশ্চর্যান্বিত হয়ে অস্ফুটিত কন্ঠে বলে উঠলো, ‘চিনলেন কিভাবে?’
রাজ আরো একটা বল কিউ স্টিক দিয়ে ঠেলে গর্তে ফেললো। তারপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো, ‘এভাবেই। তা কেমন আছো? দিনকাল কেমন যাচ্ছে?’
নিঃশব্দে তাচ্ছিল্য হাসি দিলো নুরা। মনে মনে বললো ‘আপনাকে ছাড়া আমার দিন গুলো বড্ড অসহায় রাজ। প্লিজ আমার হয়ে আমার কাছে ফিরে আসুন। অসহায় মেয়েটার মনে একটু প্রশান্তির ছোঁয়া নিয়ে আসুন।’ কিন্তু প্রকাশ করলো না। নির্বিকার ভাবে উত্তর দিলো, ‘এইতো ভালোই চলছে। আপনার কি অবস্থা!’
‘যেমন দেখেছিলে তেমনই আছি।’
চলমান…