আষাঢ়ে_প্রণয়_সন্ধি পর্ব-২২

0
340

#আষাঢ়ে_প্রণয়_সন্ধি
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২২

নিশীথ মাত্র অফিস থেকে বাড়ি এসেছে। সাজিয়া ব্যস্ত হয়ে পরেছে তাই নিয়ে। জান্নাত ইসলাম নিজের রুমে রেস্ট নিচ্ছে।সাজিয়া শরবত নিয়ে আসে নিশীথের জন্য। এটা সে প্রতিদিনই করে। রুমে প্রবেশ করতেই নিশীথকে খালি গায়ে দেখতে পেলো। লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলো সাজিয়া। নিশীথ সাজিয়াকে দেখে মৃদু হেসে ওর কাছে এসে দাঁড়ায়।সাজিয়া চোখ তুলে তাকাতেই নিশীথকে নিজের বেশ কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। সাজিয়া হকচকিয়ে যায়। পেছনে যেতে নিলেই পড়ে যেতে ধরে সে। নিশীথ এক হাতে সাজিয়ার হাত ধরে এবং অন্যহাতে তার হাতে থাকা গ্লাসটি ধরে।

নিশীথ শরবত টুকু খেয়ে নেয়। গ্লাসটি পাশের টেবিলে রেখে এগিয়ে আসে সাজিয়ার কাছে। সাজিয়া কোমড়ে হাত রেখে নিজের কাছে টেনে আনে। সাজিয়া লজ্জায় হাঁসফাঁস করছে। নিশীথ বেশ মজা নিচ্ছে। তার এই লজ্জায় রাঙা হওয়া সাজিয়াকে দেখতে অপূর্ব সুন্দর লাগে। ভীষণ রকমের সুন্দর লাগে।নিশীথ কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,,,

“এতো লজ্জা পাও কেনো সাজিয়া আমি কাছে আসলে। একটুই তো ছুঁয়ে দিয়েছি তাতেই তোমার এই অবস্থা তাহলে সেদিন তো তোমাকে আমি পুরোপুরি..”

সাজিয়া নিশীথের মুখের উপর হাত দিয়ে থামিয়ে দেয় তাকে। লজ্জায় কান থেকে ধোয়া বের হচ্ছে। সাজিয়া এগুলোর সাথে নতুন পরিচিত নয়। তাদের বিয়ের এক মাস পেরিয়েছে। তাদের মাঝে সব স্বাভাবিক। তবে এখনো নিশীথ কাছে আসলে তার লজ্জা লাগে। সাজিয়া কম্পিত কণ্ঠে শুধালো,,,
“চুপ করুন নিশীথ। আমায় লজ্জায় কেনো ফেলেন বারবার। আপনি এতো লাগামছাড়া কেনো বলুন তো”

নিশীথ সাজিয়াকে আরেকটু গভীর ভাবে আলিঙ্গন করে বলল,,,“কোনো পুরুষই তার বউয়ের কাছে সাধু সন্ন্যাসী না সাজি পাখি। তোমার সাথে দুষ্টুমি করবো না কি পাশের বাসার ভাবির সাথে করবো বলো তো। তুমি কি চাও”

“কিছুই না। এখন ছাড়ুন। ফ্রেশ হয়ে আসুন আপনি।”

নিশীথ ছাড়লো না সাজিয়াকে। ঝুঁকে নিজ প্রিয়তমা স্ত্রীর অধরে উষ্ণ স্পর্শ এঁকে দিলো। সাজিয়া শিউরে উঠলো। নিশীথ সাজিয়াকে ছেড়ে গামছা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পরে। সাজিয়া এখনো আগের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে। লোকটা আস্ত একটা পাগল। তাবে তাকে ভীষণ ভালোবাসে। এর বেশি আর কি চাই তার। সাজিয়া মৃদু হেসে রুম ত্যাগ করে।রাত ১১ টা পার হয়েছে। সাজিয়া হাতের কাজ শেষ করে সবে রুমে প্রবেশ করেছে। নিশীথ বসে ফোন দেখছে। সাজিয়া এসে পাশে বসে নিশীথের। নিশীথ ফোন রেখে বলল,,,

“কিছু বলবে সাজিয়া?”

“জি। আসলে আষাঢ় ভাইয়া কি আপনাকে কিছু বলেছে?”

নিশীথ অবাক হয়। বুঝে উঠতে পারে না সাজিয়া কিসের কথা বলছে!সে বলে,,,“তুমি কিসের কথা বলছো সাজিয়া? আষাঢ় তো আমাকে কিছু বলেনি।”

“আজ ভার্সিটি থেকে আসার সময় আষাঢ় ভাইয়া চিত্রাকে নিয়ে কোথাও গিয়েছে। আমার না চিন্তা হচ্ছে। আষাঢ় ভাইয়াকে ঠিক লাগছিলো না।”

“কি বলছো। ও তো আমাকে তেমন কিছুই বলেনি। তুমি কি চিত্রার সাথে কথা বলেছো?”

“নাহ। আপনি একটু আষাঢ় ভাইয়াকে ফোন করে জানবেন আসলে হয়েছেটা কি। আমার চিন্তা হচ্ছে ভীষণ।”

“তুমি চিন্তা করো না। আমি ফোন করছি আষাঢ়।”

নিশীথ পাশ থেকে ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে আসলো।সাজিয়া রুমে বসে হাসফাস করছে। নিশীথ আষাঢ়ের নাম্বারে কল করলো। দুবার রিং হওয়ার পর আষাঢ় রিসিভ করলো।
“হ্যাঁ বল নিশীথ?”

আষাঢ়ের কন্ঠ শুনে নিশীথ বুঝলো কিছু একটা তো হয়েছে।নিশীথ শান্ত সুরে বলল,,,“কি হয়েছে তোর?”

আষাঢ় নির্লিপ্ত কন্ঠে শুধালো,,,“কি হবে?”

“বিকালে কি হয়েছে?”

আষাঢ় ভনিতা ছাড়াই নিশীথকে প্রতিটা কথা বলল। নিশীথ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,,“মেয়েটার অতীত হয়তো ভয়ংকর”

“আমি আগামীকাল আঙ্কেলের সাথে কথা বলবো।”

“হুম কথা বল আঙ্কেলের সাথে এবং তাকে সরাসরি বলিস তুই চিত্রাকে ভালোবাসিস, বিয়েও করতে চাস।”

আষাঢ় নিশীথ টুকটাক আরো কিছু কথা বলল।অতঃপর ফোন রাখলো। নিশীথ রুমে এসে সাজিয়াকে জানালো সব। সাজিয়া একটু চিন্তিত হলো। তার মনে হচ্ছে চিত্রা ও বোধ হয় আষাঢ়কে পছন্দ করতে শুরু করেছে। যদিও সে নিশ্চিতভাবে বলতে পারছে। শুধুই এটা তার ধারণা মাত্র।

রোদ উজ্জ্বল দিন। আকাশে সূর্য মামার উপস্থিতি সবাইকে হারে হারে বুঝিয়ে দিচ্ছে। গতকাল যে বৃষ্টি হয়েছে তার ছিটেফোঁটা চিহ্নও নেই। কড়া রোদ্দুরের তেজে মানুষের অবস্থা নাজেহাল।শুক্রবার হওয়ায় ব্যস্ত মানুষগুলো সব এখন পরিবারের সাথে বসে সময় কাটাচ্ছে। অরিহা আর প্রহর দু’জনই পড়তে বসেছে। তাও একই সাথে। এবং দুজনের সামনে বসে আছে চিত্রা। অরিহা চিত্রার অগোচরে প্রহরকে জ্বালাচ্ছে। তার এখনো মনে পরে সেই দিনের কথা যেদিন প্রহর তার শখের ছবি আঁকাটা নষ্ট করেছিলো।

“কি হলো অরিহা তুমি অন্যমনষ্ক কেনো?পড়ায় মনোযোগ দাও”

অরিহা হকচকিয়ে উঠে। প্রহরকে জ্বালানোর ঠেলায় পড়ায় মনোযোগ ছিলো না। ইশ চিত্রা আপু তাকে কি ভাবলো এটা ভেবেই কেমন লাগলো অরিহার। অরিহা দ্রুত পড়ায় মনোযোগ দিলো। প্রহর সয়তানি হাসি দিলো এবার। এতো সময় টেবিলের নিচ থেকে পা দিয়ে অরিহা তাকে জ্বালাচ্ছিলো। এখন সে জ্বালাবে। অরিহা গনিত করছিলো। চিত্রা কয়েকটা অঙ্ক দিয়েছে তিন অধ্যায় অর্থাৎ বীজগনিত থেকে। প্রহর ও এবার নিচ থেকে অরিহার পায়ে গুতা মারলো। অরিহা রাগি দৃষ্টিতে তাকালো প্রহরের দিকে। অতঃপর নিজের পা সরিয়ে অঙ্ক করায় মনোযোগ দিলো।

“প্রহর দে তোকে না বিজ্ঞান পরতে দিয়েছিলাম?আচ্ছা আমি কিছু প্রশ্ন করছি উত্তর দে।”

প্রহর চোরা চোখে চিত্রার পানে তাকালো। সে তো এতোক্ষণ কিছুই পরেনি। চিত্রা দুই তিনটা প্রশ্ন করলো তবে প্রহর একটারও উত্তর দিতে পারলো না। এতে চিত্রা ভীষণ রেগে গেলো। ঠাস ঠাস করে পিঠে কয়েকটা পরলো প্রহরের। প্রহর ভীষণ লজ্জা পেলো। অরিহার সামনে মার খাবে এটা সে কখনো ভাবেনি। অরিহা মুখ টিপে হাসছে। প্রহর চিত্রার থেকে বই নিয়ে মনোযোগ দিয়ে পড়তে লাগলো।

“অরিহা তোমার অঙ্ক করা হয়েছে?”

“হ্যাঁ চিত্রা আপু এই নাও।”

চিত্রা অরিহার অঙ্ক দেখছে। আজ শুক্রবার বিধায় চিত্রা প্রহর আর অরিহাকে এক সাথে পড়াচ্ছে। তার ভাই তো মোটেও পড়তে চায় না। তাই অরিহার বাসায় জোর করে নিয়ে এসেছে। যূিও প্রহর বাহানা মারছিলো আসবে না বলে।তবে চিত্রা তার কোনো কথাই শুনেনি।

আষাঢ় অনেক সাহস নিয়ে চিত্রাদের বাড়িতে এসেছে। চিত্রাকে নিজ বাড়িতে দেখে অনেক ভেবে চিন্তে এসেছে আষাঢ়। চিত্রার সামনে সে অতীত টেনে কখনোই তাকে কষ্ট দিবে না। তাই তার অগোচড়ে এখানে এসেছে। কলিংবেল বাজাতেই মরিয়ম সুলতানা এসে দরজা খুলে দিলেন। আষাঢ় তাকে দেখে নম্র কন্ঠে সালাম বিনিময় করলো। মরিয়ম সুলতানা তাকে বসতে বললেন সোফায়। আষাঢ় নিজেকে শান্ত রেখে বলল,,,

“আন্টি আঙ্কেল কোথায়?আসলে তার সাথে আমার কিছু প্রয়োজনীয় কথা ছিলো।”

মরিয়ম সুলতানা আষাঢ়কে বসতে বলে নিজেদের রুমে রুমে চলে আসেন । আরমান রহমান বিছানায় শুয়ে আছেন। মরিয়ম সুলতানা এসে তার পাশে বসে। ধীর কন্ঠে ডাকেন তাকে। কিছুদিন ধরে খেয়াল করেছেন মরিয়ম সুলতানা তার স্বামীকে অসুস্থ লাগছে। যদিও অনেকবার জিজ্ঞেস করেছে তবে উত্তর মেলেনি। আরমান রহমান চোখ খুলে স্ত্রীকে দেখে উঠে বসলেন।

“আষাঢ় এসেছে আরমান তোমার সাথে নাকি কি কথা বলবে”

আরমান সাহেব মুচকি হাসলেন কথাটা শুনে। সে আন্দাজ করতে পেরেছেন আষাঢ় কেনো এসেছে। আরমান সাহেব বিছানা ছেড়ে উঠতে উঠতে বললেন,,,
“আচ্ছা আমি যাচ্ছি তুমি তোমার কাজে যাও”

“আষাঢ় কি বলতে এসেছে ধারণা করতে পারছো তুমি কিছু?”

“আমি জানি সে কেনো এসেছে। মরিয়ম যোগ্য পাত্র পেয়েছি আমি আমার মেয়ের জন্য। সে আমার মেয়েকে সম্মান,ভালোবাসা সব দিয়ে আগলে রাখতে পারবে।”

মরিয়ম সুলতানা কিছু বলবেন তার আগেই আরমান সাহেব বেরিয়ে আসলেন রুম থেকে। আষাঢ় তাকে দেখে সালাম দিলো। সে ও সালামের উত্তর দিয়ে আষাঢ়কে বললো,,,
“চলো ছাদে যাই। তোমার যা বলার সেখানে বলো”

আষাঢ় সম্মতি দিতেই দু’জন ছাদে আসলো। ছাদের এক কোনায় উপরে টিন দেওয়া বেশ কিছু জায়গা আছে। সেখানে বসলো দু’জন। আষাঢ় ইতস্তত করে বলল,,,
“আসলে আঙ্কেল আমি চিত্রাকে নিয়ে কিছু কথা বলতে এসেছি”

“হ্যাঁ বলো সমস্যা নেই”

আষাঢ় লম্বা এক নিঃশ্বাস নিয়ে বলেই ফেলল,,,“আঙ্কেল আমি চিত্রাকে ভালোবাসি। এবং বিয়েও করতে চাই। তবো তার আগে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো তার অতীত জানা। আমি চিত্রার অতীত জানতে চাই”

“অতীত জানার পর যদি তোমার এই ভালোবাসা গায়েব হয়ে যায়?”

আষাঢ় মৃদু হেসে শুধালো,,,“আঙ্কেল আমি কোনো কিশোর নই। আমার যথেষ্ট বয়স হয়েছে এবং আমি চিত্রাকে ভালোবাসি এটাই সত্য। তার অতীতে কি আছে না আছে আমার তাতে যায় আসে না। শুধু তার মন জয় করার জন্য হলেও অতীত জানা জরুরি তাই জানতে এসেছি।”

আরমান সাহেব দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললেন,,,“আচ্ছা আমি তোমাকে বলছি সব। আমার মেয়েটার অতীত বড্ড বাজে আষাঢ়। আমি ভরসা করি তোমায়।

#চলবে~