আসক্তি২ পর্ব-১৭

0
2816

#আসক্তি২
পর্বঃ১৭(বোনাস)
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

“ছাড়ুন আমায়।একদম টাচ করবেন না।”,নজর সরিয়ে পাখি কয়েক সেকেন্ড ভেবে বলে,”হাউ ডেয়ার ইউ টু টাচ মি”
শান ডান ভ্রুটা উচিয়ে পাখির দিকে পাশ ফিরে বসে বাম হাতটা চিপে ধরে শক্ত করে।কারণ এতোদিনে যা বুঝেছে পাখি তেজি মেয়ে।হাত ছাড়লে সে গাড়ি থেকে লাফ দিতেও দু’বার ভাববে না।
“আমার কথা আমাতেই এপ্লাই করে লাভ নেই”,স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলে শান।
পাখি হাত টা মুচরামুচরি করে বলে,”আমায় কেন নিয়ে যাচ্ছেন?যখন ইচ্ছে হবে অপমান করবেন আবার যখন ইচ্ছে হবে এভাবে জোড় করে আআটকে রাখবেন।তা তো হয় না, না?”,
বলতে বলতে পাখি মিররে তাকায়।রাফির চোখে চোখ পড়তেই কটমট করে পাখি বলে,”তুমি কি দেখছো?তোমাকে তো পরে দেখে নিচ্ছি আমি”
রাফি কাপাকাপা হাতে গাড়ির স্টেয়ারিং ধরে।

শান রাফির দিকে একবার দেখে মুচকি হেসে ওঠে।শানের হাসিতে পাখির রাগ দ্বিগুন বেড়ে যায়। বাম পা দিয়ে শানের ডান পায়ে পারা দেয়।শানের অন্তরাত্মা বেরিয়ে আসারর উপক্রম যেন।কারণ এটা সেই পা যে পা, কাল সকাল রডের আঘাতে খত হয়েছে।

ব্যথায় চোখ মুখ কালো করে পা চেপে ধরে শান।পাখি অনুতপ্তহীন চোখে সেদিকে চেয়ে রাফিকে বলে,”গাড়ি থামাও।”
রাফি কথা না শুনেই গাড়ি চালিয়ে যায়।তিরিক্ষি মেজাজে আবার বলে,”গাড়ি থামাতে বলেছি না?নইলে কিন্তু,নইলে কিন্তু লাফ দিবো এই মূহূর্তে”
পাখির কথায় শান আরো শক্ত করে চিপে ধরে ওর হাত।
রাফি দ্রুত ব্রেক কষে নেয়।শান চট করে ডান হাতে পাখিকে নিজের সাথে চেপে ধরে আর অপর হাতে ইশারা করে ওর পায়ের দিকে।

শান ইতোমধ্যে মোজা জুতা খুলে ফেলেছে।পা টা এগিয়ে পাখিকে দেখতে বলে আবার ব্যথায় কাতরিয়ে ওঠে শান।পাখি চমকে দুহাত মুখে দিয়ে স্তব্ধ হয়ে যায়।
কালশিটে পরা দাগে নতুন আঘাতের দাগ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।কেমন যেন চরম অপরাধ বোধে ছেঁয়ে যায় পাখির চোখ মুখ।

শান পাখির দিকে একবার চেয়ে রাফিকে বলে পূনরায় গাড়ি স্টার্ট করতে।পাখি কিছুক্ষণ শান্ত হয়ে বসে থাকে।এরপর মনে মনে বলে,”কি হইছে হইছে আমার কি?আমাকে তিনি সে রাতে অপমান করে তাড়িয়েছে।একবারও কি আমার দিকটা বুঝেছে?তাহলে আমি আজ কেন তার দিকটা বুঝব?”
পরোক্ষণে রাগে চোখ মুখ শক্ত করে পাখি বলে,”ওসব কিচ্ছু দেখতে চাই না আমি।আমি যাবো না, যাবো না, যাবো না আপনার সাথে।”
শান নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলে,”অতিরিক্ত জিদ ভালো না”
শানের এমন হেয়ালিময় কথায় পাখি আরো রেগে বলে, “দিবো কিন্তু আরেকটা পারা? ”
“হুমম হুমম শিওর”,বলে শান পা টা এগিয়ে দেয়।
পাখি কাচুমচু করে বলে,”না। আপনি আমায় যেতে দিন।আমি আপনার অপমান সহ্য করতে পারব না”

শান কোন কথা না বলে সামনে তাকায়।পাখি ছটফট করতে করতে থেমে যায়।কিছুক্ষন পর গাড়ি এসে থামে আহমেদ ম্যানশনের সামনে।চায়ের দোকানে কতোগুলো ভদ্রলোক চা খাচ্ছে আর খোশগল্প করছে।তাদের মাঝে সেদিনের কয়েকজন মুরুব্বীও রয়েছে।গাড়ির দুপাশের সম্পূর্ণ জানালা খুলে দেয় শান;উদ্দেশ্য ঐ লোকদেরকে দেখানো।লোক গুলো মাথা উচিয়ে ভিতরে দেখার চেষ্টা করে।এরপর নিজেদের মাঝে বলাবলি শুরু করে।

গাড়ি এসে ভিতরে থামতেই শান চট করে দরজা খুলে বাহিরে বের হয়।রাফিকে ফিসফিস করে কিছু একটা বলে পাখির পাশের দরজা টা খুলে দেয়।পাখি ভিতরে থম মেরে বসে রাগে ফুসতে থাকে।তৎক্ষণাৎ ফোন আসে শানের ফোনে।
“সরি স্যার। আমি জরুরী কাজে আটকে গেছি।পারলে মিটিংটা উইথআউট মি কন্টিনিউ করে নিন।”,ফোনে কাউকে বলে পাখির দিকে একনজর তাকায় শান।পাখি সেদিকে রাগি দৃষ্টিতে দেখে ফট করে চোখ সরিয়ে নেয়।

“কাম”,হাত বাড়িয়ে বলে শান।পাখি দুহাত বুকে গুঁজে বলে,”নো”
শান অবাক হয় পাখির এটিটিউড দেখে।আবার বলে,”সিন ক্রিয়েট করবা না, বেরিয়ে আসো”
পাখি শানের দিকে ঘুরে বসে বলে,”সিন আমি নাকি আপনি ক্রিয়েট করছেন?”
পূনরায় ভ্রু নাচিয়ে বলে,”হুমমমম?”

শান বুঝে গেছে এর সাথে তর্ক করে লাভ নেই। তাই আবারও পাখিকে হাত ধরে এক টানে বের করে আনে।
“আরেএএ,আপনি কি পাগল?”,হকচকিয়ে বলে পাখি।শান কোন কথার তোয়াক্কা না করে দ্বিতীয় দফায় কোলে তুলে নেয় পাখিকে।পায়ের ব্যথায় যে টান পরছে তা শানের কুচকানো চোখ মুখে স্পষ্ট। চোখের ইশারায় রাফিকে কিছু একটা বলতেই সে গাড়ি ঘুরিয়ে কোথায় যেন চলে যায়।

পাখি নড়েচড়ে বলে,”কি শুরু করেছেন আজ?কেন কোলে তুলছেন বার বার?”
“বেশি নড়বা না পায়ে ভীষণ ব্যথা লাগছে”,ব্যথাসূচক শব্দ করে বলে শান।শানের জন্যে মনের কোথাও জমানো মায়াটা চেপে ধরলো পাখিকে।শান্তস্বরে বলে,”নামান, আমি একা ভিতরে যেতে পারব”

শান পাখির দিকে সুক্ষ চোখে তাকিয়ে বলে,”তোমায় চেনা হয়েছে আমার”
এরপর পাখিকে এনে বসায় ড্রয়িংরুমের সোফায়।নিজেও মুখোমুখি আরেকটা সোফায় বসে পা টা ডলতে থাকে।পাখি দুহাত কচলিয়ে বলে,”আমি থাকব না”
শান ওর দিকে তাকিয়ে আবার নিজের কাজে মন দেয়।এভাবে কয়েক মূহূর্ত কেটে গেলে পাখি উঠে দাঁড়ায়।শান বজ্রকন্ঠে বলে,”এক পাও যদি বেরিয়েছো পাখি আমার থেকে খারাপ কিচ্ছু হবে না”
থমকে যায় পাখি।শানের দিকে চেয়ে মুখ বাঁকায়।যেটা শানের দৃষ্টিগোচর হয় না।

এরপর ফ্রিজ থেকে বরফ বের করে নিয়ে আসে।শানের সামনে দাঁড়িয়ে বরফের ট্রে টা এগিয়ে দেয় শানের দিকে।থমথমে গলায় বলে,”মেডিসিন কোথায়?”
শান মাথা তুলে তাকিয়ে ট্রে টা হাতে নিতে নিতে বলে,”লাগবে না ”
“ঢং টা ছেড়ে, ইগো টা ভেঙ্গে যদি একটু বলেন তাহলে আমি মেডিসিনটা আনতে পারি।আর আপনি রিলিফ পাবেন একটু।”,চিবিয়ে চিবিয়ে কথাটা বলে দাঁত ক’পাটি কেলিয়ে রাখে পাখি।শান ছোট ছোট চোখে পাখির দিকে চেয়ে ভাবে,”এই মেয়ের সাথে কিছুতেই পেরে উঠছি না”
“কি হলো বলবেন নাকি সঙ এর মতো দাঁড়িয়ে থাকব?”
“আমার ঘরে ওয়ারড্রোবের উপরের ঝুড়িতে”,বলেই শান বরফের একটা টুকরো ট্রে থেকে উঠিয়ে পায়ে ঘষতে থাকে।

খানিক বাদে পাখি মেডিসিনটা হাতে নিয়ে নামে। এগিয়ে দিয়ে বলে, “হুম নিন”
“মেডিসিন লাগবে না, বললাম না!”,ভরাট গলায় বলে শান।
“আপনি ডাক্তার না হনুমান আমার বুঝে আসে না।কি করে কোন ডাক্তারের মেডিসিনে এতোটা ফোবিয়া থাকতে পারে জানা নেই!”,রাগে গজগজ করতে করতে বলে পাখি।মেডিসিন টা শানের কোলে ছুড়ে দিয়ে সোজা বরাবর অপর সোফাটায় বসে পরে পাখি।শান অবাক হয়ে যায় পাখির ব্যবহারে।
“হা করে না তাকিয়ে, ওয়েন্টমেন্ট টা ম্যাসাজ করে নিন”,শানকে উদ্দেশ্য করে কপোট রাগ দেখিয়ে বলে পাখি।শান ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বরফের আরেকটা টুকরো পায়ে ঘষতে থাকে।

“অসহায়কে কখনো সহায়ত্বের খোঁটা দিতে নেই।বিপদে কারো হাত ছাড়তে নেই”,নিজের মাঝে জমানো কষ্টগুলোকে চেপে রেখে বলে পাখি।শানের কানে কথাগুলো ঢুকতেই হাত থামিয়ে পাখির দিকে মাথা তুলে তাকায়।পাখি বসা অবস্থাতেই দুহাঁটুতে সামান্য ঝুঁকে বলে, “সেদিন রাতে ওভাবে একজন অসহায়কে বের করে দেয়া উচিত হয় নি ডাক্তার সাহেব।ঝড় বৃষ্টির রাত ছিলো।এক একটা মেয়ে মানুষ ”
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পাখি আবার বলে,”ভাগ্যিস রাফি সেদিন সাহায্য করেছিলো।না হলে কি হতো কে জানে!”

“তোমায় কী করে বোঝাই সেদিন কতোটা মানসিক চাপে ঐরকম ডিসিশন নেয়া।তোমার চলে যাবার পর প্রত্যেকটা মূহূর্ত গিল্টি ফিল করেছি পাখি।না চাইতেও বার বার তোমাকেই খুঁজেছি।বুঝে গেছি অনিচ্ছাসত্ত্বেও আমার লাইফে তৃতীয় নারীর আগমন ঘটে গেছে।জানি না কতোটা দীর্ঘ হতে চলেছে সে পথ”,পাখির দিকে এক ধ্যানে চেয়ে শান বলে।
পাখি শানের দিকে তাকিয়ে প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষা করে;নিরাশ হয়।উঠে দাঁড়িয়ে শান্ত ভঙ্গিতে বলে,”জানি না আজ কেন এভাবে নিয়ে আসলেন!জানতে চাইছিও না।তবে আপনার গত দিনের ব্যবহার মনে রেখে আপনার বাড়িতে থাকা জাস্ট অসম্ভব।আমার জীবনে ঐ দিনটা কখনোই ভুলব না আমি।আমি ঠান্ডা মস্তিষ্কে বলছি আমি এ বাড়িতে থাকতে পারব না”

“সরি”,
কানে আসা সরি শব্দটায় পাখির চোখ মুখের রঙ পাল্টে যায়।বিশ্বাস করতে পারছে না শান তাকে সরি বলেছে।শানের দিকে সরুচোখে প্রশ্নাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে পাখি।শান সেদিকে চেয়ে আবার বলে,”সরি।সেদিন কিছুটা ডিপ্রেসড ছিলাম”
এবার সত্যি সত্যি সরি কথাটা স্পষ্ট শুনতে পেলো পাখি।নিজের মাঝে ভাব ধরে রেখে মুখ ঘুরিয়ে নিলো সে।বুকের কাছে দুহাত গুঁজে বলে,”আজকের সরি আগামি দিনের ‘গেইট আউট ফ্রম মাই হাউজ, রাই নাউ’
জানি আমি।এসবের কোন দরকার নাই। আমি থাকব না এখানে”

“তোমরা আবার ঝগড়া করছো!”
দরজায় পরিচিত মিষ্টি কন্ঠস্বরটা কানে আসতেই শান পাখি দুজনেই সেদিকে তাকায়।
হাতের চিপসের প্যাকেট থেকে একটা চিপস মুখে পুরতে পুরতে ইনায়াহ্ এগিয়ে এসে বলে,”মুন সাইন তুমি কোথায় যাওয়ার কথা বলছো?”
পাখি কাচুমাচু করে বলে,”ককই ককোত্থাও নাতো”
“তুমি নাকি আমার জন্যে কান্না করতেছো সেই ভোরবেলা থেকে! রাফি চাচ্চু বললো।তাই তো স্কুল থেকে আমায় এখানে নিয়ে আসলো”,পাখির কোলে উঠে বলে ইনায়াহ্।
পাখি রাগান্বিত চোখে রাফির দিকে তাকাতেই রাফি নজর নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।পাখি রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগে শান বলে,”এ ইয়ে মানে,রাফি গাড়ির দিকে যা হসপিটালে যাবো;কাজ আছে।”
রাফি যেন শানের হুকুমের অপেক্ষায় ছিলো।বাহিরে এসে পাখির চোখমুখের রাগের কথা ভেবে হাফ ছেড়ে বাঁচে।

শান ইনায়াহ্’কে আদোর করে চলে আসতেই ইনায়াহ্ বলে,”সান সাইন তুমি দিদাকে বলে দিও আমি এ বাড়ি এসেছি।নয়ত দিদা কান্না করবে”
ও বাড়ির কথা কানে আসতেই শান স্তম্ভের ন্যায় দাঁড়িয়ে যায়।মুচকি হেসে মাথা নেড়ে সম্মতি জানায় শান।ঘোরলাগা চোখে পাখির দিকে তাকাতেই পাখি রাগে, বিরক্তিতে মুখ ফিরিয়ে নেয়।শান মুচকি হেসে বাহিরে চলে আসে।

🌸🌸

“আরে ডক্টর শান, সকাল পিরিয়ডে দেখলাম না যে?”,হাস্যোজ্বল মুখে প্রশ্ন করে শানের কলিগ কম বন্ধু বেশি নাবিদ।
শান হেসে উত্তর দেয়,”আর বলিস না।পার্সোনাল একটু কাজে আটকে গেছিলাম”
“হবে নাকি এক কাপ ধোঁয়া ওঠা কফি?”,অফার করে নাবিদ।
কিছু একটা ভেবে শান বলে,”ভর দুপুরে গরম কফি!তার থেকে বেটার কোল্ড কফি।কি বলিস?”,
“ওকে ডান।চল”
দুজনেই এগিয়ে যায় হসপিটাল ক্যান্টিনের দিকে।

“তোর নামে কিসব কথা বলাবলি হচ্ছে।কিছু কি জানিস সে ব্যপারে”,কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে বলে নাবিদ
শান বিজ্ঞের মতো কিছু একটা ভেবে বলে,”বিশ্বাস করিস? এরকম টা হবে?বা হবার চাঞ্ছ আছে?”
“বিশ্বাস করতে চাই।চাই তুই সবটা নতুন করে শুরু কর।গুজব টা কে বাস্তবে রূপ দে শান।জীবন এতোটুকু না, এতো লম্বা”,দুই আঙ্গুলের ইশারায় কম বেশির পরিমান বুঝিয়ে বলে নাবিদ।
এরপর পাখির আগমন থেকে আজকের সমস্ত ঘটনা খুলে বলে নাবিদকে।নাবিদ মুচকি হেসে বলে,”বস্, এবার ফেসে গেছো বস্ ”
“ওসব কিছুই না।বাদ দে”

ক্যান্টিন থেকে জমিয়ে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে যে যার কেবিনে ঢুকে পরে।শান চশমা ঠিক করে কয়েকটা কাগজে চোখ বুলাতেই নরজায় নক পরে।
“কাম ইন”
“স্যার একজন ভদ্র মহিলা এসেছেন আপনার সাথে দেখা করতে।আপনি অফ ডিউটিতে ছিলেন তাই বসিয়ে রেখেছি”,
“পেশেন্ট?”
“তা তো বলতে পারব না স্যার।তবে দেখে মনে হয়েছে বেশ বড়লোক ঘরের হবে হয়ত”
“ওকে, ভিতরে পাঠাও”,বলেই শান পূর্বের ন্যায় কাজে মন দেয়।

“মে আই কাম ইন”,ভরা ভরা নারী কন্ঠ কানে আসতেই শান মাথা তুলে তাকায়।প্রথম নজরে চিনতে অসুবিধা হয় না এই রমনীকে!
মূহূর্তে শানের সারা শরীর রাগে ক্ষোভে কাপতে শুরু করে।
“রিল্যাক্স শান।এভাবে রেগে যাওয়ার কোন মানে হয় না।জাস্ট কিপ ইওরসেলফ কুউউউল”,নিজের মনকে বুঝিয়ে ধাতস্ত করে শান।
এরপর ঠোঁট গোলাকৃতি করে পরপর কয়েকটা নিঃশ্বাস ছেড়ে শান বলে,”ইয়াহ,ইয়াহ কাম ইন মিসেস আহমেদ”

আগত ভদ্র মহিলা শানের সম্বোধনে বিরক্ত প্রকাশ করে। ধীরপায়ে টেবিলের দিকে আগাতে আগাতে বলে,”কতোবার বলেছি ডোন্ট কল মি উইথ দিস টাইপ অফ চিপ সারনেইম ”
শান রাগি চোখে চেয়ে বলে, “এটাই তোমার পদবী। যদি চাও তো আমি তোমার আসল পদবী সম্বোধন করতে পারি।স্টেইপ……”
“ওহহ শান প্লিজ”

” ডাকতে পারি আর কি;যেটা তোমার আসল স্থান।নিশ্চই সেটা মিসেস আহমেদের থেকে বেশি সম্মানের হবে।তবে তোমার কাছে সেটা ভালো না’ও লাগতে পারে।”,তেড়ছাভাবে বলে শান সুক্ষ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে।

“এতো পিঞ্চ মেরে কথা বলো না।”
“পিঞ্চের কিছু নেই।কি কারণে এসেছো বলো।আর বলে দূর হয়ে যাও”,কটাক্ষ করে বলে শান।
“শুনলাম নিউ রিলেশনশীপে গেছো।তাও আবার যেন-তেন না লিভ ইন!”,সামনে বসে থাকা ভদ্রমহিলা তেড়ছাভাবে বলে ওঠে।
শান মূহূর্তে চোখের পাতা বন্ধ করে। কয়েক সেকেন্ড পরে খুলে টেবিলের উপর দুহাত রাখে।ঝুঁকে এসে বলে,”এ্যানি প্রবলেম?”
“নাহ্ প্রবলেমের কি আছে।খুব তো গলাবাজি করতে কোন নারীকেই নাকি বিলিভ করো না আর।জীবন নাকি একা একাই কাটাবে ব্লা ব্লা ব্লা”
“একজীবনে কি সবাইকে দেয়া সবকথা রাখা সম্ভব হয় মিসেস আহমেদ?হয় না। প্রমান? ইন ফ্রন্ট মি”,বলেই শান ভদ্রমহিলার আগা-গোড়া ইশারা করে

“বেশ ভালো তো।বেষ্ট উইশেষ ফর ইওর ফিউচার।তবে বলি কি শান আমাদের সমাজে এখনো লিভ ইন টা পাকাপোক্ত স্থান করে নিতে পারে নি তাই পারলে বিয়ে পর্যন্ত গড়াও সমাজের কাছে সম্মান পাবে”
“উইশ জানানোর জন্যে এসেছো বুঝি!”
ভদ্রমহিলা থমথমে মুখে চেয়ে থাকে শানের দিকে।

“নিজের মতো সবাইকে মনে করো? তোমার মতো নির্দিষ্ট এমাউন্টে যে সবাই বিক্রি হবে আর তারপর বাবার বয়সি লোকের কাছে গা গড়াবে এমন ভাবাটা বোকামি”,স্বাভাবিকভাবেই বলে শান।
স্বগতোক্তি করে বলে,”তারপরেও থ্যাংকস ফর ইওর সাজেশন।এখন ইউ মে গো নাউ”
শেষের কথাটা বলে শান ধীরভাবে দরজার দিকে হাত ইশারা করে বেরিয়ে যেতে বলে।

চলবে…..