আসক্তি২ পর্ব-২০

0
2720

#আসক্তি২
পর্বঃ২০
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

সকাল সকাল শানের ফোনকল পেয়ে ব্যারিস্টার রাশেদ চলে আসে বাড়ি।শান ফ্রেশ হয়ে গম্ভীর মুখে বসে আছে ড্রয়িং রুমে।বাড়ির সকলকে সেখানে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।শানের কথা অমান্য করার ঔদ্ধত্য কারো নেই।তাই সকলেই সেখানে উপস্থিত;পাখি ব্যাতিত।বার কয়েক দরজায় ডাকা হলেও ঠিকঠাক প্রতিউত্তর মেলে নি পাখির।রাহেলা বেগম আর আব্দুল্লাহ্ বসে একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে।তারা বুঝতে পারছে না শান কেন তাদেরকে আজ এভাবে ডেকেছে।দুএকবার প্রশ্ন করলেও শান মুখ গুঁজে কাগজ পাতিতে চোখ রেখেছে ;উত্তর দেয় নি।সবাই বসে অপেক্ষা করছে সঠিক উত্তরের আশায়।

এতোক্ষনে সম্পূর্ণ কাগজ গুলোর এ টু জেট পূ্ঙ্খানুপূঙ্খ ভাবে পড়া শেষ করলো শান।দেখলেই বুঝা যাচ্ছে বেশ মনোযোগ দিয়ে পড়ল সে।মাথা তুলে তাকাতেই ঘুমহীন লাল চোখদুটো কারো নজর এড়ালো না।আশপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারলো যাকে কেন্দ্র এ মিটিং সে’ই এখানে অনুপস্থিত। সবার দিকে একবার নজর বুলিয়ে চোখের চশমাটা খুলে সেন্টার টেবিলে রাখে দুহাত মাথার পিছনে সোফায় এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে শান।বন্ধ চোখেই রাশেদকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আমি সব কাগজ পড়লাম থ্রোলি।যতোটুকু বুঝলাম কোন সমস্যা নেই।তারপরেও আপনার থেকে জানতে চাই, পরবর্তীতে কোন রকম কোন ঝামেলা হবে না তো!এশিওরিটি দিতে পারবেন?”
ব্যারিস্টার রাশেদ হেসে উত্তর দেন, “কোন সমস্যা হবার কোন স্কোপই তো রাখলেন না স্যার!আর পৈতৃকসূত্রে যেহেতু মালিকানা ম্যাডামের তাই কোন সমস্যা ভবিষ্যতে হবে না”

রাশেদের কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে শান।আনমনে ভাবতে থাকে,”ফাইনালি তুমি সবটা আবার পেতে চলেছো পাখি; যা যা তোমার ছিলো।আমার কতোদিনের পরিশ্রমের ফল এটা!”
পৈতৃকসম্পত্তির কথা ভাবতেই আব্দুল্লাহ্ ভ্রুকুচকে চিন্তিত ভঙ্গিতে রাহেলার দিকে চায়।
শান সেদিকে এক নজর চেয়ে বলে,”পাখি কি আসতে চাইছে না চাচি?”
রাহেলা ঠোঁট উল্টিয়ে জবাব দেয়,”কতোবার তো ডাকলাম।শুধু বললো ‘যাও আসি’
“ওকে”,শুকনো স্বরে বলে শান উঠে দাঁড়ায়।এলোমেলো পায় সিঁড়িতে পা রাখে।
“আমি যা করছি সবটাই তোমার ভালোর জন্যে করছি।তুমি সেই সবকিছুই ফিরে পাবে যার একমাত্র মালকিন তুমি।আর এটাই তোমার জন্যে বেটার অপশন”,ভাবতে ভাবতে সিঁড়ি দিয়ে ওঠে যায় শান।পাখির ঘরের দরজায় দু তিন বার নক করেও কোন সাড়া পায় না।এবার ক্ষীনস্বরে ডেকে ওঠে,”পাখি,পাখি….দরজা টা খোল।জরুরী কিছু কথা আছে”
কয়েকবার ডাকার পর দরজা খুলে দেয় পাখি।শান এগিয়ে যায় সেদিকে।দরজা খুলে পাখি বিছানার এককোনে গিয়ে বসে। শান পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়।শান্তস্বরে বলে,”এতোক্ষন নিচে ডাকলাম গেলে না কেন?”
পাখির মৌনতাময় নিরুত্তর ভাবে শান মুচকি হেসে পাখির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।মুখোমুখি বসে পাখির দিকে তাকায়।
“আমার জীবন এভাবে মোড় নেবে ভাবি নি।এভাবে তোমাতে আসক্ত হবো ভাবি নি।আমার আসক্তিতে পরিনত হবে তাও ভাবতে পারি নি।কিছু কিছু সময় ভালোবাসার মানুষকে দূরে সরিয়ে রাখার মাঝেও সুখ নিহিত থাকে।তার ভালোর জন্যে সবটাই ঠিক”

শানের ভাবনার মাঝে পাখি চোখ তুলে তাকায়।শান মুচকি হেসে দেয়।চোখের দিকে তাকাতেই পাখি বুঝতে পারে শান গত রাতেও ঘুমায় নি।
“কি হয়েছে তোমার?এতো মন খারাপ করে কেউ?চলো নিচে চলো”,বলেই পাখিকে নিচে যাওয়ার জন্যে তাগাদা দেয় শান।পাখি ঠাঁয় বসে থেকেই শানের দিকে চেয়ে থাকে।
“কি হলো চলো!কাজ আছে তো”,মুখটা থমথমে করে বলে শান।
শানের দিকে তাকিয়ে আজ কেন জানে না পাখির বড্ডো বলতে ইচ্ছে করছে, “আমি আপনাকে ভালোবাসি ডাক্তার সাহেব”
কিন্তু বলা আর হয় না।শান ওকে হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় নিচে।

সবার মাঝখানে এনে হাত ছেড়ে দেয় শান।রাহেলার পাশে একটা সোফাতে বসতে বলে।এরপর রাশেদকে বলে,”পুরো কাগজপাতি গুলো পূনরায় পাখিকে পড়ে শোনান ”
রাশেদ কথামতো সব কিছু পাখিকে শোনাতেই গা হিম হয়ে আসে পাখির।পুরো শরীর কাপতে থাকে।কম্পনরত চোখ জোড়া দিয়ে একবার শানের দিকে তাকায়।কারণ পাখি বিশ্বাসই করতে পারছে না শান এভাবে তার হারানো সম্পদ ফিরিয়ে দিতে পারবে।
“আপনি এসব কোথায় পেলেন, এসব তো বড় বাবার কাছে?”,অবাক বিষ্ময়ে প্রশ্ন করে পাখি।সহাস্যে শান জবাব দেয়,”কিভাবে সবটা ম্যানেজ করেছি সেটা বড় কথা নয় পাখি।তুমি তোমার সবটা ফিরে পেয়েছো সেটাই বড়কথা।বাই দ্য ওয়ে তুমি এতো সম্পদের মালকিন!বাব্বাহ, আমাদেরও কিছু দিয়ে হেল্প করো”
মজার ছলে বলে শান পাখির দিকে তাকায়।আর পাখি অবাক চোখে এখনো তাকিয়ে আছে শানের দিকে।বুঝতে পারছে না এতোসব কিভাবে সম্ভব!

পাখির চোখ পড়তেই চোরের মতো নজর সরিয়ে নেয় শান।হয়ত ধরা পরার ভয়ে।ধরা পরলে নিজেকে ও চোখে বলি দেয়া ছাড়া উপায় থাকবে না যে।
শান আবার বলে,”তোমার রানী মাসি তোমার সাথে কথা বলবে।সময় করে কথা বলে নিও।ওহ তার তো আর দরকার হবে না…”
এবার পাখির বুঝতে অসুবিধা হয় না কিভাবে শান এতোসবটা করতে পারলো।খুশিতে ঝলমলিয়ে ওঠে পাখির চোখ মুখ।সম্পত্তি ফিরে পাবার খুশিতে নয়, রানী মাসির সাথে কথা হবে সে খুশিতে।

রাহেলা বেগমের মুখে হতাশার ছাপ স্পষ্ট।কারণ তিনি ইতোমধ্যে আন্দাজ করতে পেরেছেন শান কি করতে চলেছে।চিন্তিত মুখে শানের দিকে তাকাতেই বুঝতে পারেন ভীষণ চাপা কষ্ট বুকে চেপে আছে ছেলেটা।বুকের ভেতর মুচড়িয়ে ওঠে রাহেলার।হাজার হোক নিজের ছেলের মতো বড় করেছে শানকে।শান সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে বলে,”তোমার রানী মাসি যে ঠিকানা দিয়েছিলো সেটা আমাদের এই এলাকার পরের এলাকা। বেশি দূরে নয়।তোমার আয়ান ভাই সে বার তোমায় খুঁজতে সেখানেই এসেছিলো।তারপর তোমার সাথে দেখা হয়।তো যাই হোক,তুমি এখন চাইলে তোমার নিজ বাড়িতে দাপুটের সাথে থাকতে পারবা।নয়ত রানী মাসির আত্মীয়ের বাড়িতে থাকতে পারবা।চয়েজ ইওরস।
তবে আমি এশিওরিটি দিচ্ছি তোমার বড় বাবার ফ্যামিলি তোমার বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে পারবে না”

শানের কথা শুনে পাখির বোঝার বাকি নেই শান তাকে নিজ বাড়িতে পাঠাতে চাইছে।অবাক হয়ে ভাবে,”আমি তো এসব কিছু চাই না ডাক্তার সাহেব।আমি তো……”
“পাখি, গেট রেডি।তোমাদের এলাকায় যাবো।তোমাকে সেখানে সবটা বুঝিয়ে তারপর আবার আমায় ব্যাক আসতে হবে”,পাখির ভাবনার মাঝে ছেঁদ পরে শানের কথায়।
বুকের ভিতর জমাট বাঁধা কষ্ট গুলো জল হয়ে ঝড়তেই পাখি উঠে উপরে চলে যায়।শান সহ উপস্থিত সবাই বিষ্মিত হয় পাখির অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যবহারে।শানও উঠে পিছনে যেতে সিঁড়ির কাছে পা রাখতেই রাহেলা দারাজ কন্ঠে বলে ওঠে,”থামো”
শান থেমে গিয়ে পিছনে তাকায়।রাহেলা কাছে গিয়ে বলে,”এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারলে শানবাবা!মানলাম পাখির অতীত ফিরিয়ে দিয়ে ওকে ভালো রাখতে চাও। তাই বলে মেয়েটাকে এভাবে দূরে সরাতে পারলে!পারবে তো ওকে ছাড়া ভালো থাকতে!”
রাহেলার কথায় নজর এদিক সেদিক করে শান।কোন জবাব দিতে পারে না।রাহেলা বেগম স্বগতোক্তি করে বলে,”এবার এটা বিশ্বাস করতে বলো না যে, তুমি পাখিকে ভালোবাসো না”
জড়িয়ে আসা কন্ঠে শান জবাব দেয়,”সেসব কিছু না চাচি।সত্যি আমি ওকে ভালোবাসি না”
“তোমায় আমি ছোট থেকে এই দুহাতে বড় করে তুলেছি বাপ।শুধু জন্মটাই দিই নি।তাই তোমাকে চেনাতে এসো না”,করুনস্বরে বলে রাহেলা।
চোখের কোণদ্বয় দু আঙ্গুলে মুছে শান জবাব দেয়,”আমার সিদ্ধান্তই ওর জন্যে মঙ্গল চাচি।ও কখনো আমার সাথে ভালো থাকতে পারবে না।এ জীবনে আর কোন বিচ্ছেদ আমি কষ্ট সহ্য করতে পারব না।নিরর্থক জীবনে জড়াতে চাই না ওকে”
শেষের কথাটা বেশ গমগমে স্বরে বলে শান সিঁড়ি দিয়ে উপরে চলে যায়।

ঘরের দরজায় নক করতেই বুঝতে পারে দরজা খোলা ;তবে ভিড়ানো।সন্তর্পণে ভিতরে ঢুকে বুঝতে পারে পাখি উপর হয়ে বালিশে মুখ চেপে শব্দ করে কাঁদছে।বালিশের বদৌলতে সে কান্নার আওয়াজ চারদেয়ালেই সীমাবদ্ধ থাকছে।পাখির কান্নার স্বর এতো করুন লাগছে যে শানের অন্তরেও প্রবল স্রোত বয়ে চলছে।বেশ বুঝতে পারছে শান, পাখির কান্নার পিছনের আসল কারণ।

“উহুহম উহুহহ “,দুইবার গলায় শব্দ করে শান।পাখি তবু ফেরে না।আরেকবার শব্দ করতেই পাখি তড়িৎগতিতে উঠে এসে শানের টি-শার্টের কলার চেপে ধরে।চোখে চোখ রাখে শানের।মুচকি হাসি ঠোটেঁ বজায় রেখে শান বলে,”কি?”
রাগে রি রি করা শরীর নিয়ে পাখি আগুন চোখে শানের দিকে তাকিয়ে বলে,”খুব মহান তুই তাই না?মহান সাজতে চাস তাই না?কাপুরুষ কোথাকার, নিজের মনের কথা বলতে এতো কিসের ভয় তোর?আমি কি একবারও বলেছি আমার সহায় সম্পত্তি ফেরত চাই?”
কিছুক্ষন থেমে অঝোড়ে চোখের অশ্রু বিষর্জন দিয়ে পাখি আবার বলে,”কেন এমন করছেন আমার সাথে?কেন সবটা বলে দিচ্ছেন না ডাক্তার সাহেব?আমাকে এভাবে দূরে সরানোর মানে কি?”
পাখির আজকের ব্যবহারে শান স্তম্ভিত হয়ে যায়।ভাবতেও পারে নি সে এমন ভাবে নিজেকে বোঝাবে।অনুভূতিহীন চোখে শুধু পাখির আচরন দেখে চলছে শান।

“এভাবে চলতে থাকলে আমি কোনদিনও পাখিকে নিজের থেকে আলাদা করতে পারব না। কিন্তু সেটা তো আদৌ অসম্ভব”,ভেবে শান কলারে চেপে রাখা পাখির হাতদুটো আলগা করে চেপে ধরে।মিছে হাসি ঠোঁটে রেখে বলে,”হোয়াট ননসেন্স!কিসের মনের কথা?আর আজ হোক বা কাল তোমাকে তো যেতেই হতো।তুমি একটা মেয়ে মানুষ তোমার তো বদনাম হচ্ছে”,বলেই শান আড়চোখে তাকায় পাখির দিকে।
“ততোমার কি ববদনামের ভয় নেই?কেন তুমি আমার জন্যে নিজের লাইফকে কালিমাময় করবে! “,পূনরায় বলে শান পাখির দিকে তাকায়।সত্যি বলতে শানের ইচ্ছে করছে পাখির মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শোনার।
কলার ছেড়ে পাখি চোখ মুছে নেয়।শানের প্রতিউত্তরে কি বলবে বুঝতে পারে না পাখি।হাজার কথা বলতে চাওয়া মন আজ সবকথা ভুলে গেছে।দুই পা পিছিয়ে আসে পাখি।বলতে চেয়েও বলা হয় না,”আপনাকে ভালোবাসি। আমাকে আপনার কাছে রাখার ব্যবস্থা করুন”

শান মুচকি হেসে বলে,”চলো;তোমার গ্রামে”
পাখি অবাক হয়েই চেয়ে থাকে শানের দিকে। ও চোখের ভাষা বুঝতে বিন্ধু পরিমান সময় লাগে না শানের।দ্রুত চোখ সরিয়ে পিছু ফিরে আসতেই পাখির কথায় থমকে যায়।
“আই লাভ ইউ “,সকল জড়তা, সকল মৌনতা ভেঙ্গে অস্পষ্ট স্বরে জবাব দেয় পাখি। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারে না শান।হতভম্বের ন্যায় বিপরীত মুখেই দাঁড়িয়ে থাকে।পাখি এবার দুজনার মাঝের দুহাতের দূরত্ব ঘুচিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে শানকে।নিজের বুকের কাছে পাখির হাতের শক্ত বাঁধনে নিজেকে অজানা মায়ার বাঁধনে আবিষ্কার করে শান।

শানের পিঠে মাথা ঠেকিয়ে পাখি স্বপক্ষ নিয়ে আবার বলে,”আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি। আমি পারব না আপনাকে ছেড়ে থাকতে।কোথাও যাবো না আমি।ওরা আমায় মেনে নিবে না।”
বলতে বলতে কেঁদে ফেলে পাখি।
পিঠের উপর উষ্ণ নিঃশ্বাস শানের হার্ট বিটকে দ্বিগুন বাড়িয়ে দেয়।শুকনো ঢোক গিলে বুঝতে পারে সেকেন্ডের সাথে সাথে পাখির ভাবনা গুলো ভাষা আকাড়ে মুখ দিয়ে বের হচ্ছে।আর সাথে সাথে শানও আটকা পরছে পাখির মায়াজালে।না পারছে পাখিকে নিজের থেকে সরাতে, না পারছে একেবারে নিজের করে রাখতে।

কিছু সময় পর শান নিজেকে ধাতস্ত করে, “আর যাই হোক আমি ওর লাইফটা এভাবে নষ্ট করার অধিকার রাখি না”,
তাই তো নিজেকে কঠিন করে বলে,”দেখলে তোমাদের মতো মেয়েরা এমনই।একটু কি ভালো করে কথা বলা শুরু করেছি,সম্মান দিচ্ছি ;তো মাথায় চরে বসেছ।ছাড়ো বলছি। এই জন্যেই মেয়েদেরকে ঘৃনা করি আমি”
বাজখাঁই গলায় বলে শান ইতস্তত করে।কিন্তু পাখির হাতের বাঁধনটা খুলে দেয়ার দূঃসাহস হয় না শানের।

শানের এবারের কথাগুলো মানতে কষ্ট হচ্ছে পাখির।বুক ছিড়ে কান্না আসতে চাইছে।কিছু বলতে যেয়েও পারছে না। নিজেকে ছ্যাচড়া মনে হচ্ছে ভীষণ।খুব ধীরে নিজের হাতের বাঁধন থেকে শানকে মুক্ত করে পূনরায় দুইপা পিছিয়ে নিজের পূর্বের অবস্থানে চলে যায়।আঁতে ঘা লাগছে পাখির।ইচ্ছে করছে এই মূহূর্তে অতল গহ্বরে তলিয়ে যেতে।
ঘাড় বাঁকিয়ে পাখির মুখের দিকে একবার চেয়ে শান দ্রুত ঘর প্রস্থান করে।আরেকটু সময় থাকলে হয়ত পরিকল্পনা মোতাবেক সাজানো সবটা ভেঙ্গে চুড়মার হয়ে যেত।

রেডি হয়ে শান ড্রয়িং রুমে পাখির জন্যে অপেক্ষা করে।রাশেদকে বলে সমস্ত কাগজপাতি আরেকবার চেইক করিয়ে নেয়।স্বাভাবিক স্বরে বলে,”সবটা দেখে নিন।দূরের পথ কোন কাগজ ছেড়ে গেলে সেটা আর নিতে আসা সম্ভব নাও হতে পারে।আর আমি চাই না ওখানে গিয়ে কোন কাগজের অভাবে সবটা ভুন্ডুল হয়ে যাক”
“জ্বি স্যার”,বলেই রাশেদ কাগজ গুলো দেখে ব্যাগে ঢুকায়।

সিঁড়ির দিকে তাকাতেই শান বুঝতে পারে অনুভূতিহীন চাহনীতে এলোমেলো পায়ে পাখি নিচে নেমে আসছে।পাখির এ রূপ যে কতোটা কষ্টদায়ক তা হারে হারে টের পাচ্ছে শান।রাহেলা পাখির দিকে তাকাতেই নিজেকে সংবরন করতে পারে না।পাখিকে বুকে জড়িয়ে চাপাস্বরে কেঁদে ফেলে।এতোদিনের পরিচয়ে বেশ মায়া জন্মেছে মেয়েটার উপর।আব্দুল্লাহ্ গম্ভীর মুখে এগিয়ে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”জীবনে অনেক সুখী হবে তুমি।অনেক ভালো থাকবে”

পাখি নিষ্প্রান চোখে শানের দিকে চোখ বুলিয়ে রাহেলাকে বলে,”চাচি, ইনায়াহ্ স্কুল থেকে ফিরে আমার কথা বলবে।বলবেন, আমি জগতের সবথেকে খারাপ মানুষ যে ওকে দেয়া কথা রাখতে পারি নি।ওর যত্ন নিবেন।হাইপার হতে দিবেন না”
“ওকে নিয়ে এতো দূঃচিন্তা করতে হবে না।মাম আগের থেকে অনেকটাই বেটার।আশা করি আগের মতো এ্যাটাক আসবে না”,শান্তস্বরে বলে শান।
রাহেলাকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আমি না আসা পর্যন্ত ইনায়াহ্’কে একটু ভুলিয়ে রেখো চাচি”
পাখি অবাক বিষ্ময়ে ছলছল চোখে সেদিকে চেয়ে থাকে।শান নজর সরিয়ে রাহেলাকে বলে,”আমি আসছি চাচি”
বলেই সদর দরজায় পা রাখে।

সবার সাথে শেষবারের মতো কথা বলে পাখিও বেরিয়ে আসে শানের পিছু পিছু।

🌸🌸

গাড়ির দরজা খোলার পূর্ব মূহূর্তে শানের ফোনে কল আসে কারো।
“হ্যা পরশ বল,ওদিকে কি অবস্থা? ”
…..
“আচ্ছা আমি যাচ্ছি ওখানে।”
……
“ওকে সমস্যা নেই, কোন ঝামেলা হলে তোকে ইনফর্ম করব। একটু সজাগ থাকিস”,বলেই কলটা কেটে দেয় শান।

পাখির গ্রামের বাড়ির এলাকায় তার বড় বাবাই সবকিছু।তার দুষ্কৃতিকারী ছেলেদের ভয়ে তটস্থ থাকে পুরো এলাকা।রাজনৈতিক দলে নাম লেখানো কিনা!তাই সবটা খোঁজ নিয়ে থানায় জানিয়ে রাখে শান।মূলত ঐ এলাকার থানার এস আই পদে নিযুক্ত শানের প্রিয় বন্ধু পরশ।

গাড়ির দরজা খুলতে গিয়ে খেয়াল হয় পাখি একদৃষ্টে অন্যদিকে চেয়ে আছে।গাড়ির দরজায় ইচ্ছেকৃত দুইবার নক করে শান।পাখি ঘুরে তাকালে ইশারায় বসতে বলে।পাখি আরেকবার বাড়ির পুরো এরিয়া টা ঘুরে দেখে আনমনে ভাবে,”কিভাবে এসেছিলাম আর কিভাবে যেতে হচ্ছে!নিয়তি বড় অদ্ভুত চিজ”
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বসে পরে সামনে শানের পাশের সিটে।শান কিছুক্ষন অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে পাখির দিকে।পাখি সেদিকে চোখ পড়তেই রাগে, ক্ষোভে, অভিমানে দৃষ্টি সরিয়ে নেয় তড়িৎগতিতে। মুচকি হেসে শান ওর খুব কাছাকাছি চলে আসে।ভীষণ অবাক হয় পাখি।ভিতরে অজানা ভালো লাগা কাজ করে,”এই বুঝি তিনি বলবেন তার মনের কথা”
পাখিকে অবাক করে দিয়ে শান ওর সিট বেল্ট বেঁধে দেয়।এরপর শান্ত চাহনীতে চেয়ে থাকে কিছুক্ষন।
মনে মনে বলে ওঠে,”সরি পাখি।আ’ম টু মাচ হেল্পলেস।আমি পারব না আমার সাথে তোমায় জড়াতে”
পাখি শানের বুকে দুহাত ঠেলে দূরে সরিয়ে দেয়। হকচকিয়ে ওঠে শান।
“একদম কাছে ঘেঁষার চেষ্টা করবেন না।কাওয়ার্ড কোথাকার”
দাঁতে দাঁত চেপে বলে পাখি। মুচকি হেসে সরে আসে শান।

ব্যারিস্টার রাশেদ তার একজন সহকারী সহ নিজের গাড়িতে বসে।এরপর দুটা গাড়ি ছুটে চলে সিলেটের উদ্দেশ্যে।

পুরো রাস্তা দু ঠোঁটে একটা কথাও বলে নি পাখি।জানলায় দুহাত রেখে শানের দিকে পিঠ করে বসে ছিলো।শান বার বার সোজা হতে বললেও কোন কথা শোনে নি পাখি।নিজের মতো রাস্তার দিকে চেয়ে ছিলো।

🌸🌸
দীর্ঘ সাত ঘন্টার জার্নি পেরিয়ে শানরা এসে পৌঁছায় পাখির গ্রামের বাড়িতে।গাড়ি থেকে নেমে নিজ বাড়িতে পা রাখা পর্যন্ত পুরোটা সময় পাখি শানের সাথে সাথে ছিলো।ভয়ে কাঁপছিল মৃদু মৃদু।শান বার বার তাকে আশ্বস্ত করছিলো, ” কিছু হবে না।সব লিগ্যাল কাগজ আর কোর্ট নোটিশ আমাদের কাছে আছে”
পাখিদের বাড়ির আঙ্গিনায় পা রাখতেই মানুষের সমাগমে ভরে উঠল পুরো বাড়ি।গুজুরগুজুর, ফিসিরফিসিরে বাতাস ভারি হয়ে উঠলো।কিছুক্ষন পর রানি মাসি দৌঁড়ে এসে শানদের বসার ব্যবস্থা করলেন।পাখি তাকে দেখে নিজেকে আর নিজের মাঝে রাখতে পারলেন না।ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে।মাথায় হাত বুলিয়ে রানি মাসি শ্বান্তনা দিচ্ছিলো পাখিকে।

অল্পকিছু সময় পর লম্বা,সুঠামদেহি পালোয়ান গোছের একজন লোক আসলো।সবাই তাকে সালাম সমাদর করে বসতে দিলো।এরপর সুদর্শন একজন যুবক চলে আসলে তাকেও সালাম, সমাদরে বসতে দিলেন সবাই।তাকে দেখে পাখির গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে এলো।শান একবার পাখির দিকে তাকাতেই ভয়ার্ত মুখ দেখে বুঝতে পারলেন এই সেই আয়ান।যে পাখির সাথে প্রতারনা করেছিলো।রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে আসে শানের।কোনমতে রাগকে কন্ট্রোল করে বসে পরে চেয়ারে।পাখি পা টিপে টিপে শানের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।একে একে এলাকার অনেক গন্যমান্য ব্যক্তিরাও এসে উপস্থিত।এরপর কয়েকজন ছেলে সহ ঠাঁটবাট বজায় রেখে একজন বখাটে টাইপ ছেলের আগমন ঘটে।শান সরু চোখে তাকিয়ে বুঝতে পারে এই হলো রায়ান।

সকলের উপস্থিতির পর রাশেদ সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে তার এসিস্ট্যান্ট ফরহাদ কে ইশারা করে কাগজ গুলো বের করতে।চারিদিকে পিনপতন নীরবতা বিরাজমান।ফরহাদ কথামতো কাগজপত্র গুলো চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে হস্তান্তর করে।চেয়ারম্যান সেগুলোতে চোখ বুলিয়ে মুচকি হেসে বলে, “এখানে আর কি’ই বা বলার থাকে।সবই কাগজে পানির মতো পরিষ্কার।”
এরপর পাখির বাবার উদ্দেশ্যে রিনরিনে স্বরে বলে,”আজদ সাহেব পাখি’ই সকল সম্পত্তির উত্তরাধিকারী।”
বেশ গাম্ভীর্যতা পাখির বড় বাবা আজাদ সাহেবের চোখে মুখে।
কানে কানে ফিসফিস করে চেয়ারম্যান বলে,”সব কাগজ পরিষ্কার ভাই সাহেব।ঝামেলা বাড়ানোর দরকার নাই।হিতে বিপরীত হয়ে যাবে।বলি কি, সবকিছু ছেড়ে দেন।”
শানকে ইশারা করে বলে,”ঐ ছেলের বন্ধু আমাদের এস আই পরশ।এখানে ভুলভাল কিছু হলে সবাই ফেঁসে যাবো”

এরপর গলা খাঁকারি দিয়ে বলে, “তো হলোই তো, আজ থেকে মৃত মাজিদের স্থাবর -অস্থাবর সকল সম্পদের মালিক তারই একমাত্র মেয়ে পাখি।আর এখন থেকে সে সমস্ত সম্পদের ভোগদখল করতে পারবে।তারপ্রতি কোন বিপদ আসবে না।আশা করি ব্যারিস্টার সাহেবের আর কোন কথা থাকার কথা না”
শান এদের ব্যপারে যা শুনেছিলো তাতে একটুও মানতে পারছে না এতো তাড়াতাড়ি সবটা মেনে নিবে ওরা।কিন্তু শানকে অবাক করে দিয়ে মিটিং সেখানেই শেষ করার ঘোষনা দেয়া হয়।

হুংকার দিয়ে কেউ একজন বলে ওঠে,”এক মিনিট”
সবাই সেদিকে দৃষ্টি রেখে বুঝতে পারে আয়ান বলল কথাটা।
“আমার কিছু কথা আছে চেয়ারম্যান চাচা”, বলেই সবার দিকে নজর বুলিয়ে পাখির মুখোমুখে গিয়ে দাঁড়ায় আয়ান।আয়ানের কথায় সবাই আবারও নিজ নিজ জায়গায় বসে পরে।শান ছোট ছোট চোখে বোঝার চেষ্টা করে সে পাখির সাথে কি করতে চলেছে।হাতের মুঠি শক্ত করে শান। আয়ান সানগ্লাস টা খুলে ফুঁ দিয়ে বলে ওঠে,”আমার সাথে পাখির বিয়ের প্রায় সবকিছুই ঠিক ছিলো।বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে যায় পাখি।তাও আজ থেকে প্রায় দুই আড়াই মাস আগে।তাই নয় কি? ”
আয়ানের কথার পিঠে অনেকেই কথা মিলিয়ে বলে,”হ্যা তা তো ঠিক”
“যতোদূর জেনেছি, খবর নিয়েছি পাখি সেদিন রাতে এই ডাক্তারের সাথে তার বাড়িতে চলে যায়।তাহলে এই দুই আড়াই মাস পাখি তো ডাক্তারের বাড়িতেই ছিলো। হিসেবে কি তাই মেলে?”,সকলের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছোড়ে আয়ান।
উপস্থিত সকল লোকজন ভেবে বলে,”হ্যা তাই তো”
“এখন আমার কথা, ডাক্তার সাহেব একজন অবিবাহিত ব্যাচেলর মানুষ।নিজের ভাগ্নিকে মেয়ের পরিচয়ে বড় করছে।এরপর আমাদের পাখি গিয়ে সে বাড়িতে ছিলো গত দিনগুলো।তারমানে এতোদিন দুজন এক বাড়িতেই ছিলো।আপনাদের কি মনে হয় আমাদের মেয়ে এখনো ঠিক বা কুমারি রয়েছে?”,রক্তচোক্ষু নিয়ে বলে আয়ান।

আয়ানের কথার পর দুহাতে কান চেপে কেঁদে ফেলে পাখি। অনেকেই বলে, “সত্যিই তো। এটা তো ভাবা হয় নি।তাতে আবার শহর এলাকার লোক।”

আয়ানের কথায় শানের বোঝার বাকি নেই ঢেউ এবার কোথায় গিয়ে ঠেকবে।রাগে চোয়াল শক্ত করে চেয়ে থাকে আয়ানের দিকে।আয়ান কটাক্ষের চোখে চেয়ে শানের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়ে বলে,”এগুলো তো আমাদের এলাকায় চলবে না ডাক্তার সাহেব।এতোদিন ধরে একটা মেয়েকে বিবাহ ছাড়াই নিজের কাছে রাখলেন,ফূর্তি করলেন।তারপর রুচি উঠি গেলো ফিরিয়ে দিলেন!বাহ বাহ বাহ।এটা কি করে মেনে নেই বলুন…..”
“মাইন্ড ইওর ল্যাঙ্গুয়েজ, ব্লাডি চিপ”,দাঁত চিবিয়ে বলে শান।আয়ান চাপাস্বরে বলে,”এটা ঢাকা নয় ;সিলেট।কোন বাড়াবাড়ি করলে একদম শেষ করে দেব”
শানের রাগ তবুও কন্ট্রোল করা দায় হয়ে পরে যায়।

আয়ানের কথায় কান গরম হয়ে আসে পাখির।রাগে,ভয়ে চোখ ফেটে জল গড়িয়ে পরে।ভয়কে একপাশে রেখে ঝনঝনে গলায় বলে,”এরকম বাজে কথা বলতে জিহ্ব কাপঁল না তোমার?”
“একদম চুপ থাকবি মা*…”,আয়ানের কথা শেষ হবার পরপরই গালে কষিয়ে থাপ্পড় বসিয়ে দেয় শান।রাগে চোয়াল শক্ত করে আয়ানের কলার চেপে ধরে নাক বরাবর একটা ঘুষি মারে।ঘটনাটা এতোটাই তাড়াতাড়ি ঘটে গেলো যে আয়ান প্রতিহত করার সুযোগ টাই পেলো না। রায়ান তার পালিত প্রানীগুলো নিয়ে এগিয়ে আসতেই চেয়াম্যান সাহেব তাদের আটকে দেয়ে।ফিসফিসিয়ে বলে,”শান্ত হও।দেখতে থাকো কিছুক্ষন”

শান রক্তচোক্ষু নিয়ে আয়ানের দিকে তাকিয়ে রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলে,”ওর সমন্ধ্যে আর একটাও বাজে কথা নয়।জিহ্ব টেনে টুকরো টুকরো করে কুকুরকে খাওয়াবো।”
পাখি গিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে শানের চোখে চোখ রেখে বলে,”এসব কথা মানায় না আপনাকে।জানতেন না এরকম কিছু হবে?বলি নি আমি কেউ আমায় মেনে নেবে না।তাহলে এখন এতো জ্বলছে কেন!এগুলো আমার শোনা কপাল, শুনতেছি।”

শান রেগে গিয়ে কলার ছেড়ে দেয়।আয়ান রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে রায়ানকে ইশারা করতেই দ্রুত রায়ান ছেলেপেলে সহ শান সহ রাশেদকে ঘিরে ধরে।জোড় জবরদস্তি করে তাদের থেকে ফোন, কাগজ পাতি সব কেড়ে নেয়।এরপর নাক চেপে ধরে এলাকাবাসির উদ্দেশ্য আয়ান বলে,”আপনারা কোনটা চান, এই নষ্ট মেয়েকে গ্রামে ফেরাতে নাকি ডাক্তারের সাথেই বিয়ে দিতে?”
স্বভাবতই সবাই চাইবে ডাক্তার শানের সাথেই পাখির বিয়ে হোক।কারণ কোন সমাজই এরকম মেয়েকে মেনে নিবে না।
এলাকাবাসিরা সমস্বরে বলে ওঠে,”ওদের বিয়ে করিয়ে দাও ”

শান অবাক হয়ে যায় ঘটনার আকষ্মিকতায়। সে কোষ্মিনকালেও ভাবে নি এরকম পরিস্থিতি দাঁড়াবে।

“আমি জানি আপনি আমাকে চান না।আমাকে কাছে রাখতে চান না।আপনাকে গ্যারাকলে পরতে হলো আমার জন্যে”,আনমনে ভেবে পাখি এসে আয়ানের পা জড়িয়ে বলে,”উনাকে যেতে দাও প্লিজ।আমার সাথে তার কোন রকম কোন সম্পর্ক নেই।বিশ্বাস করো”
আয়ান পা ছাড়িয়ে নিচু হয়ে বলে,”তোর সাথে কোন কথা থাকতে পারে না আমার। ওর সাথেই তোর বিয়ে হবে আজ এই মূহূর্তে।”
পাখি কান্নারত অবস্থায় শানের দিকে তাকাতেই বুঝতে পারে শানকে কতোটা অসহায় লাগছে।
শান চাইলেও পারছে না পরশকে একটা ফোন করতে। ফোন গুলো কেড়ে নিয়েছে রায়ান।

“কি থেকে কি হলো?না চাইতেও এ কোন সম্পর্কে বাঁধা পড়লাম”,ভেবে শুকনো ঢোক গিলে পাখির দিকে তাকায় শান।

এরপর সন্ধ্যাবেলায় কাজি ডেকে এলাকাবাসির উপস্থিতিতে জোড় জবরদস্তি বিয়ে দেয়া হয় শান-পাখির।(📯📯📯)

চলবে….