#আসক্তি২
পর্বঃ৪২(বোনাস)
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম
“কি এইটা?”,মুখে হাসি, মনে সংশয় দ্বিধান্বিত মিশ্র অনুভূতি নিয়ে প্রশ্ন ছোড়ে শান।
পাখির পুরো শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে। শানের দিকে একবার দেখে চোখ মুখ কুচকে নেয়।আবারও বমি বমি আসে পাখির;কিন্তু বমি হয় না।
মুখটা কুচকানো রেখে কম্পিত স্বরে বলে,” আআমি প্রেগন্যান্ট ”
কয়েক সেকেন্ড পর চোখ খুলে শানের দিকে তাকায়।এদিকে চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পরছে পাখির। একটু পরে কি হতে চলেছে সেটা ভেবেই পাখির হাত পা হিম হয়ে আসে।হাত দুটো মুষ্ঠিবদ্ধ করে নিজেকে সংবরনের চেষ্টা করে ।
ভয়ে ভয়ে শানের দিকে দ্বিতীয় দফায় তাকায়।বোঝার চেষ্টা করে এই মূহূর্তে শানের মনে কি চলছে!
“কি বলছো?বুঝতে পারি নি তো জান”, খুব শান্ত কন্ঠে দৃষ্টি স্থীর রেখে প্রশ্ন করে শান।
পাখি আগেপিছে না ভেবে পা উচিয়ে শানের গলা জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে।হারানোর ভয় বড্ডো জেঁকে ধরেছে তাকে।এদিকে শানের কোনই প্রতিক্রিয়া বুঝতে পারছে না সে।
কাঁধ ভিজিয়ে গলা জড়ানো অবস্থাতেই বলে,”আমি কারোর সাথে কিচ্ছু করি নি ডাক্তার সাহেব।আপনি ব্যতিত কারোর সংস্পর্শে আসি নি আমি।কিভাবে কি হলো আমি কিচ্ছু জানি না।আমার খুব ভয় করছে,খুউউউব”
শান খুব সন্তোর্পনে পাখিকে এনে সোফায় বসায়।পা যেন চলছে না তার তবুও জোড়পূর্বক হেঁটে পট থেকে পানি ঢেলে গ্লাস এগিয়ে দেয় পাখির দিকে।অনবরত চোখের পানি মুছে চলেছে পাখি।সামনে আগত গ্লাস টা থাবা মেরে নিয়ে পুরো পানি টা গিলে ফেলে।
“এবার, বলো তো জান একটু আগে কি বলছিলে?প্রেগন্যান্ট না কি যেন বলছিলে?কে প্রেগন্যান্ট? “, পাখির মাথায় হাত বুলিয়ে অভয় দিয়ে বলে শান।
মাথা তুলে পাখি শানের চোখে চোখ রেখে বলে, ” আআমি”
হঠাৎ বুঝতে পারে মাথার উপর থেকে হাতটা খুব সাবধানে নেমে গেলো।পাখি হাতের দিকে দেখে শানের দিকে চোখ রাখে।শান একবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে,আরেকবার বিছানার দিকে তো কখনো কাবার্ডের দিকে।এক কথায় সে কোনদিকেই দৃষ্টি স্থীর রাখতে পারছে না।ঠোঁট দুটো গোল করে জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস ছাড়ে।ডান হাত দিয়ে পুরো মুখটা মুছে নেয়।এরপর পাখির দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকায়।
এই দৃষ্টি যেন ক্ষত-বিক্ষত করে দিতে প্রস্তুত পাখির জরাজীর্ণ তনুমন।
ডান হাত টা বাড়িয়ে শানের বাম গাল ছুঁতেই শান উঠে দাঁড়ায়।পাখি চট করে সোফা থেকে নেমে শানের পায়ের কাছে বসে পরে।
“বিশ্বাস করুন,আমি কারোর সংস্পর্শে যাই নি”
কান্নার শব্দ টা আর মুখ ফুটে বের হচ্ছে না পাখির। কেমন যেন কন্ঠনালীর কাছে দলা পাকাচ্ছে আর গা গুলিয়ে বমি আসছে।হঠাৎ বুঝতে পারে সে হাওয়ার উপর ভাসছে।হকচকিয়ে নিজের দিকে তাকায়।বুঝতে পারে শান তাকে কোলে তুলে নিয়েছে।পাখি কিছু জিজ্ঞেসা করার পূর্বেই শান ওকে বিছানায় খুব সাবধানে শুইয়ে দেয়।
কোন প্রকার কোন বাক্য ব্যয় না করে আদ্র ঠোঁট দুটো ঠেকিয়ে দেয় পাখির কপালে।পাখি ভয়ে বিছানার চাদর খামছে চোখ মুখ খিঁচে রাখে।কপালের উপর দুফোটা গরম জল পরতেই চোখ মেলে তাকায় পাখি।শান তখনও নিশ্চুপ থাকে।এভাবেই চলে যায় কিছুটা মূহূর্ত।
শান উঠে বাম হাতের উল্টো পিঠে নাকটা মুছে নেয়।চোখ দুটো মুছে নেয় খুব সাবধানে।লাল টসটসে চোখ দুটো দেখে অবাক হয় পাখি।বুঝতে অসুবিধা হয় না কান্না সংবরন করছে তার ডাক্তার সাহেব।কিন্তু শানের কোন অনুভূতিই তার বোধগম্য হচ্ছে না।
হঠাৎ করে শান এগিয়ে গিয়ে পাখির সারামুখে অজস্র চুমু এঁকে দেয়।সদ্য গোসল নেয়া চুল গুলো থেকে শ্যাম্পুর ঘ্রান পাখির নাকে গিয়ে ঠেকে।সে গন্ধে ভিতর থেকে উল্টি আসে।নিঃশ্বাস আটকে রাখে কিছুক্ষন।
“আআপনি এএমন ককরছেন…..?”,কম্পিত দ্বিধান্বিত কন্ঠে মাত্র তিনটা শব্দই মুখ দিয়ে বের করতে পারে পাখি।বাকি কথা শেষ না হতেই শান একটা কান্ড করে বসে।
পাখির বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে পরে;চুপচাপ থাকে।
” আমার কেমন যেন লাগছে জান!আমার খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে, ওহহ না না খুব হাসতে ইচ্ছে করছে….উফফ আমার কি যেন করতে ইচ্ছে করছে”,নিজের মাঝে এই মূহূর্তে কোন অনুভূতির উদয় হয়েছে তা শান বুঝতে পারছে না।আবোল তাবোল বকে চলেছে।
পাখি হাত উঠিয়ে শানের চুলে হাত দিতেই মাথাটা তোলে শান।
“সরি সরি সরি, আমি তো বুঝতে পারি নি, এখন তো এখানে কেউ একজন আছে”, অপরাধীর মতো দৃষ্টি করে পাখির পেটে হাত রেখে বলে শান।
ঠোঁটে হাসি অথচ চোখের কোণে চিকচিক করছে জলের কণা, দুই তিনবার নাকে ছিঁচকে শব্দ করে শান পাখির দুই বাহু ধরে খুব সাবধানে উঠিয়ে বসায়।পাখি যেন একদলা তুলোর স্তুপ।
পাখি কিছুই ঠাওর করতে পারছে ন। শুধু অবুঝের মতো শানের পাগলামি দেখে চলেছে।
” কি দেখছো ওভাবে?আরে আমি আজ পৃথিবীর সবথেকে সুখী ব্যক্তি।তুমি জানো না পাখি আমার মনের মাঝে আজ কতো আনন্দ ঢেউ খেলছে।আমি বাবা হবো জানপাখি, এর থেকে আনন্দের আর কি আছে”,বলতে বলতে পাখিকে জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে।
পাখি তখনো নির্বাক।এতোক্ষনের আটকে রাখা দীর্ঘশ্বাস টা ছেড়ে পাখি মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে,”আপনার রিপোর্ট যে…..”
“ওসব ভুয়া ”
“জানতেন?”
“এই যে এখন জানলাম”
“মানলেন,আর বিশ্বাস?করলেন?”
“এ পৃথিবী মিথ্যের আবরনে ঢেকে যাক, তোমার তুমিটা শুধু সত্যি হয়ে বেঁচে থাক।এই আমি তুমিটাই বেছে নেবো।”
স্বগতোক্তি করে শান বলে,”পূর্বেই বোঝা উচিত ছিলো রিপোর্টে হয়ত কোন প্রবলেম আছে।জানো পাখি বাবাটাকে এতো ভালোবাসতাম, এতো বিশ্বাস করতাম যে আর কখনোই নিজের অক্ষমতাটা খুঁটিয়ে দেখার প্রয়োজন বোধ করি নি।তবে আজকের মিথ্যেটা আমায় পৃথিবীর সর্বসুখ এনে দিয়েছে।”
পাখি শক্ত করে শানের গলা জড়িয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।
“আরে আরে কাঁদছো কেন? এই সময় কান্না করা যাবে না তো….দেখি তো মুখটা “, বলতে বলতে শান পাখিকে নিজের থেকে ছাড়াতে নিলে পাখি আরো শক্ত করে ধরে নেয়।
শান আর কিছু না বলে চুলে হাত বুলিয়ে দেয়।
” আমি আমি মনে করেছি, আপনি আমায় ভভুল বুঝবেন।আর তারপর, তারপর আমায় আপনার থেকে আলাদা করে দিবেন”,হেঁচকি তুলে কাঁদতে কাঁদতে বলে পাখি।
“এতোটা নোংড়া মাইন্ডের ভেবেছো আমায়?অবিশ্বাস করব! তাও তোমায়?
আরে জান তুমি তো আমার মরুর বুকের তপ্ত বালিতে এক পশলা বৃষ্টি,
তুমি যে স্রষ্টার অনন্য এক সৃষ্টি।
যে সৃষ্টিতে আমার সকল সাধনার তুষ্টি
আমার মতো পথহারা পথিকের অন্ধকার রাতের আলোকবর্তিকা হাতে মহীয়সী নারী তুমি…..তুমি ভুল হলে তো আমার পুরো জীবনের মানেটাই ভুল”
শানের কথায় যেন কান্নার বেগ আরো বেড়ে যায় পাখির।শান মিছে রাগ দেখিয়ে বলে,”এবার কিন্তু বেশি হচ্ছে পাখি।এভাবে কান্না করা যাবে না তো”
পাখি খুব কষ্টে নিজেকে সংবরন করে নেয়।কান্নার বেগ কমে এলে শান ওকে আস্তে করে আগের স্থানে বসায়।দুহাতে চোখ মুছিয়ে বলে,”এই কারণেই চেহারা খারাপ হচ্ছে,আমাকেও কাছে সহ্য করতে পারো না, তাই না?ইশ!প্রেগন্যান্সির এতো স্পষ্ট সিমটম গুলো কি করে আমার নজর এড়ালো?”
বলতে বলতে শান নিজেকে দোষারোপ করে।
কি যেন একটা মনে হতেই শানের ভ্রুতে ভাঁজ চলে আসে।পাখির মুখটা তুলে বলে,”এই তোমার না গত মাসে….. ”
“সবাই বলেছে এরকমও নাকি হয় কারোর কারোর ক্ষেত্রে”, হেঁচকি তোলা কন্ঠে বলে পাখি।
” সবাই বলতে!”
“মা, চাচি,রাখি,রেহানা ম্যাম ”
“তারমানে সবাই জানে! ”
“কাল বৈঠকের পর আপনি হসপিটালে চলে যান। তখন আমার খুব বমির চাপ আসে। মা চাচি বুঝে যায় সবটা।তার পর বাকি আরো অনেক কিছু আমার থেকে জেনে নেয়”
শান উঠে দাঁড়ায়। একহাত কোমড়ে আরেকটা হাত কপালে স্লাইড করতে করতে বলে,”আমার বাচ্চা আমি জানি না অথচ বাড়ির সবাই জানে।ছিহহ, কতোটা কেয়ারলেস হয়ে গেছি আমি”
চট করে পাখির পাশে বসে বলে,”এরকম টা যে হয় না তা নয়, হয় তবে অনেক রিস্ক হয় জান”
পাখি জবাবে একটা অনুভূতিহীন চাহনী উপহার দেয়।
শান আবারও বলে ওঠে, “কাল তোমায় ডাক্তারের কাছে নিবো”
ভ্রু কুচকে যায় পাখির।
“কি ভাবছো? তোমার বর ডাক্তার অথচ অন্য ডাক্তারের কাছে কেন নিতে চাইছে!তাই তো?”,পাখির মুখোভাব দেখে বলে শান।
মাথা উপর নিচ করে পাখি হ্যা সূচক জবাব দেয়।
” একজন ডাক্তার হিসেবে না, একজন পেশেন্ট হিসেবে তোমায় অন্য ডাক্তারের কাছে নিবো।ইদানিং ডাক্তারের দায়িত্বে বেশি সময় দিতে দিতে এটাই ভুলে গেছি আমিও কারো হাজব্যান্ড।শেইম অন মি”,মুখটা অন্ধকারাচ্ছন্ন করে একা একাই বিড়বিড় করে শান।
পাখি উঠে এসে কাঁধে হাত রাখে।শান পিছু ফিরে হন্তদন্ত হয় বলে,”আরে নামছো কেন তুমি?এ সময় তোমার পুরো বেড রেস্টে থাকতে হবে।নিয়মে কোন গাফিলতি আমি সহ্য করব না পাখি।”
পাখিকে আবারও বিছানায় বসিয়ে দেয়।হাত দুটো মুঠোভরে নিয়ে পর পর কতো গুলো চুমু খেয়ে বলে,”আমার লাইফের বেষ্ট ডে ছিলো তোমায় আপন করে পাওয়া আর আজকের পর থেকে আজকের দিনটা বেষ্ট দিন হিসেবে স্মৃতির পাতায় লেখায় থাকবে।আমার কিছুই চাই না পাখি শুধু বাবা ডাকটা শুনতে সহায্য করো আমায়”
শেষের কথাটা বেশ অনুনয়ের স্বরে বলে শান।
পাখিকে কিছু বলতে না দিয়ে আবারও বলে ওঠে,”এই চাওয়াটাকে দাফন করে রেখেছিলাম আজ আবারও সেটার জানান দিচ্ছে মনের মাঝে।প্লিজ জান আমার বাচ্চাটাকে পৃথিবীতে আনো”
বলতে বলতে কন্ঠ ভারী হয়ে আসে শানের।
পাখি শানের দিকে তাকিয়ে বলে,”ইন শা আল্লাহ্”
🌸🌸
“হ্যা আম্মা, ঘুমাইছো?”
“নারে বাবু… বল”
“আম্মা আমি বাবা হবো আম্মা”,উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলে শান।
শর্মিলা ছেলের খুশিতে ভীষণ খুশি আজ।খুশিতে গদগদ হয়ে বলে,” জানি বাপ।”
“আম্মা আমার কি যে খুশি লাগছে কি করে বোঝাই!”
“শোন, বউ মাকে বিশ্রামে রাখবি সবসময়।সিঁড়ি ভেঙ্গে ওঠানামা করতে দিস না”, ধমকের স্বরে বলে শর্মিলা।
” আম্মা আমি ডাক্তার।ভুলে গেছো?”
শর্মিলা নিঃশব্দ হেসে দেয়। এরপর টুকিটাকি কথা বলে কল কেটে দেয় শান।
পাখির দিকে এগিয়ে শান বলে, “সকালটা তোমার জন্যে অনেক উপহারের ডালা নিয়ে বসে আছে জান।”
পাখি প্রশান্তি ভরা চিত্তে শানের দিকে তাকায়।
চলবে…..
#আসক্তি২
পর্বঃ৪৩
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম
কানের কাছে টুং টাং শব্দ হতেই ঘুম ভেঙ্গে যায় পাখির।চোখ না খুলেই বিরক্তি ভরা মুখে চোখ মুখ কুচকে নেয়।ফোনের এলার্ম ভেবে বিছানা হাতরাতে বুঝতে পারে শান বিছানায় নেই।অগত্যা চোখ দুটো খুলে সামনে তাকতেই নজরে আসে গোল গাল,চৌকোনা, লম্বাটে বিভিন্ন আকৃতির অনেক গুলো উইন্ড চাইম।চক্ষু চড়কগাছ যেন।শোয়া থেকে উঠে বিছানায় হাঁটু গেড়ে বসে পাখি সেসব ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে।বুঝতে বাকি থাকে না এগুলোই এতোক্ষন হাওয়ায় বাজছিলো।
মূহূর্তেই মনে পড়ে গত রাতে শানের বলা কথাটা,”সকাল টা তোমার জন্যে এক ডালা উপর নিয়ে বসে আছে”
ভাবতেই ঠোঁটের কোণে প্রাপ্তির হাসি ফুটে ওঠে।
পাখি উঠে চারিদিকে তাকিয়ে শানকে খোঁজে কিন্তু পায় না।ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে সকাল সাত টা বাজে।
অবাক হয়ে পাখি ভাবতে থাকে, “,ইনায়াহ্’র স্কুলের সময় হয়ে যাচ্ছে তো।আর আমি এতোবেলা করে ঘুমালাম!”
ভাবতে ভাবতেই তাড়াহুড়ো করে চুলে হাত খোপা করে নেয়।দ্রুত ছুটে যায় ওয়াশরুমের দিকে।কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে দরজায় পা রাখতে বুজতে পার শান ট্রে হাতে নিয়ে সাইড টেবিলে সেটা রাখছে।
পাখির দরজা খোলার শব্দে শান মাথা তুলে তাকায়
“কখন উঠলে?আমি তো একটু আগেও দেখে গেলাম ঘুমে আছো।”, ট্রে টা টেবিলে রাখতে রাখতেই উৎকন্ঠিত হয়ে প্রশ্ন করে শান।
পাখি তোয়ালেতে হাত মুখ মুছে শানের দিকে সরু চোখে তাকায়।
” এই তো এইমাত্র….”
“একা একা বাথরুমে গেছো কেন?আর বাথরুম টা অনেক পিচ্ছিল হয়ে গেছে। ঘষতে হবে আজ”, বলতে বলতে পাখির দিকে এগিয়ে আসে শান।
পাখির হাত ধরে ট্রে টার কাছে নিয়ে যায়।অবাক হয়ে শানের কাজ কারবার দেখছে পাখি।
” এইগুলো খাও, আর তারপর বলো আজ কি রান্না করব?”
শানের কথায় হেসে দেয় পাখি।ঘর্মাক্ত মুখটা ওড়নার আঁচলে মুছে দিয়ে বলে,”এই ছোট খাটো কাজগুলো আমি করতে পারব ডাক্তার সাহেব।আপনকে এতো ব্যস্ত হতে হবে না”
“উহু বেশি বুঝবা না। যা বলব তাই শুনবা। এখন খাও এগুলো”
“এতোগুলো ফল, ডিম,জুস এগুলো কে খাবে”, এক হাত কোমড়ে ঠেকিয়ে আরেক হাতে মুখ চেপে অবাক হয়ে বলে পাখি।
শান নিরুত্তর বসে থাকে।পাখি সেদিকে একবার চেয়ে বলে,” আমার ফ্রিজের সব ফল নিশ্চই একদিনে শেষ করার পরিকল্পনা তাই না?”
শান উঠে দাঁড়িয়ে ট্রে টা বিছানার উপর রেখে বলে,”এতোসব নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না।আমি আছি কি করতে!এবার চুপচাপ সবটা খেয়ে নাও।”
“এতোগুলো খাওয়া এমনিও সম্ভব না।আর এখন তো দেখেই গা গুলাচ্ছে”
শান স্থীর দৃষ্টিতে তাকায় পাখির দিকে।
“ঠিকাছে শুরু করছি”, কোণঠাসা হয়ে বলে পাখি।
আপেলের একটা টুকরো মুখে দিয়ে বলে,” ইনায়াহ্ কোথায়?ওর স্কুলের সময় হচ্ছে তো। আমায় নিচে যেতে হবে”
“ইনায়াহ্ চাচির সাথে রান্নাঘরে, রান্না করছে।আমি ওর ব্যাগ গুছিয়ে দিয়েছি।তোমার এতো চিন্তা করতে হবে না”
“ও রান্না করছে মানে?”, ভ্রু কুচকে অবাক হয়ে প্রশ্ন করে পাখি।
শান নিঃশব্দ হেসে বলে,” তোমার জন্যে নাকি ও কি রাঁধবে।তাই চাচির সাথে রান্না করছে”
হেসে ওঠে পাখির চোখ মুখ। নিজেকে খুব বিশেষ কেউ মনে হচ্ছে এই মূহূর্তে।
🌸🌸
সকালের কিছু পরেই শান পাখিকে নিয়ে আসে ডাক্তার পাপড়ির চেম্বারে।কেবিনে ঢুকতেই পাপড়ি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে শানের সাথে কুশল বিনিময় করে।
“পাখি মিট মাই বেষ্ট গার্ল ফ্রেন্ড পাপড়ি”,
পাখি মুখে হাসি টেনে সালাম জানায়।পাপড়ি মুচকি হেসে জবাব দিয়ে ভালো মন্দ অনেক কথা জিজ্ঞেসা করে।
শান তাদের কথার মাঝে বলে ওঠে,” পাপড়ি হচ্ছে শহরের নামি দামি একজন প্রসূতি বিশেষজ্ঞ।”
শান পূনরায় পাপড়িকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আমাদের গেট টুগেথারে আসিস নি, ব্যপার টা মোটেই ভালো লাগে নি”
“আরে হ্যান্ডসাম আমি তখন মান্থলি মিটিং এ চিটাগাং ছিলাম।আর জানিসই তো কতোটা ব্যস্ত থাকতে হয় মিটিং এ”
“হুমম….. এবার ম্যাডামকে দেখে বলতো কি অবস্থা?”
“এটার জন্যে তো তুইই…”
“বেশি না বকে যা করতে বলেছি তাই কর”
“ওকে ওকে…. পাখি এদিকে আসো তো”
পরীক্ষা নিরিক্ষার কিছুক্ষণ পর পাপড়ি এসে আবারও নিজের চেয়ার টেনে বসে।শান পাখিকে ধরে ধরে নিয়ে আসে চেয়ার পর্যন্ত।
পাখি লজ্জিত দৃষ্টিতে বলে,”আমি পারব হাঁটতে।এমন করছেন আমার খুব লজ্জা লাগছে”
বলতে বলতেই শান চট করে কোলে তুলে নেয় পাখিকে।হকচকিয়ে পাখি বলে,”কি হচ্ছে কি, ছিহহ।নামান না ”
পাপড়ি সেদিকে চেয়ে শব্দ করে হেসে ফেলে।শানকে ডেকে বলে,”এদিকে শোন”
শান পাখিকে কোলে নিয়েই চেয়ারের কাছে চলে আসে।সাবধানে নামিয়ে বসিয়ে দেয়।
“কংগ্রাচুলেশনস!দ্যা মোস্ট ওয়ান্টেড বয় ফয়সাল আহমেদ শান তাহলে এবার বাবা হতে চললো!”,চোখে মুখে হাসি ফুটিয়ে শব্দ করে বলে পাপড়ি।
পাপড়ির কথায় শানের মাঝে আলাদা এক অনুভূতি খেলে যায়।পাখি তৎক্ষনাৎ হাত টা পেটের উপর রেখে নিচে তাকায়। শান সেদিকে চেয়ে হেসে কাঁধে হাত রাখে পাখির।মাথা তুলে তাকাতেই শানের তৃপ্ত চোখ দুটো নজরে আসে পাখির।
হালকা ক্ষীণস্বরে শান বলে,” কংগ্রাচুলেশনস টু আস”
পাখি ঠোঁট এলিয়ে হেসে ওঠে।
“সাত সপ্তাহ চলছে শান।খুব সাবধান।সব তো তুই জানিসই। নতুন করে আর কিছু বলতে হবে না জানি।”
চট করে শান বলে,”আমায় কিছু বলতে হবে না।তোর পেশেন্টকে বল।তোর পেশেন্ট আমার কথা শুনতে চায় না”
শানের কথায় চট করে ফিরে তাকায় পাখি।
পাপড়ি হেসে দিয়ে পাখির উদ্দেশ্যে বলে,”শোন মেয়ে বরের কথা শুনবা। পানি বেশি করে খাবা। রেস্টে থাকবা কয়েকটা মাস।”
এরপর পাপড়ির থেকে আরো কিছু নির্দেশনা নিয়ে শান পাখিকে নিয়ে কেবিন ছেড়ে বেরিয়ে আসে।
🌸🌸
“একটা কথা বলব?”, শানের দিকে ফিরে প্রশ্ন করে পাখি।
” রাফি গাড়ি আস্তে চালা…..হ্যা বলো, কি যেন বলতে চাইলে”,পাখির দিকে চেয়ে জানতে চায় শান।
“বলছিলাম কি, আপনার সমস্যাটা আরেকবার না হয় সবটা টেষ্ট করে নিন।”, বিব্রত কন্ঠে বলে পাখি।
শান মুখটা পাংশুটে করে বলে,” তার আর কোনই দরকার নাই পাখি।তবে হ্যা ডক্টর মাহমুদের কাছে আরেকবার যাবো।এটা জানতে কতো টাকার বিনিময়ে রিপোর্টটা সাজিয়েছিলেন”
শেষের কথাটা বলতে বলতে চোখ মুখে রাগ ফুটে ওঠে শানের।
পাখি এগিয়ে এসে বাম হাত টা জড়িয়ে কাঁধে মাথা রাখে।শান স্বাভাবিক হয়ে বলে,”শরীর খারাপ লাগছে?”
মাথা দুই দিকে নেড়ে পাখি না সূচক জবাব জানায়।
গাড়ি চলছে তার আপন গতিবেগে।শান একহাতে পাখিকে জড়িয়ে নিয়ে আরেক হাতে ফোনে কিছু একটা করছে।গাড়ি সামনে আগাতেই মোড়ের মাথায় আইস্ক্রিমওয়ালার দোকান।ফট করে মাথা তুলে পাখি বলে,”,রাফি থামো থামো”
পাখির কথায় ভ্রু কুচকে শান তাকিয়ে বলে,”রাফি গাড়ি থামা তো”
“কি ব্যপার,কি হয়েছে পাখি?”
“আইসক্রিম খাবো।গলাটা শুকিয়ে এসেছে”,
” তোমার মাথা ঠিকাছে? শুনলে না পাপড়ি কি বলল?পাখি প্রথমের এই সময় গুলো খুব সেন্সিটিভ।”
বলতে বলতে পাখির মুখের দিকে তাকায় শান।ঠোঁট উল্টে থমথমে মুখে পাখি বাহিরে তাকিয়ে থাকে।
শান ওয়ালেট বের করে রাফিকে টাকা দিয়ে বলে,”যা তো, আইসক্রিম নিয়ে আয়”
শানের কথায় পাখি পাশ ফিরে আড়চোখে শানকে দেখে নেয়।
“এটাই প্রথম এটাই শেষ মনে রেখো।আর কখনো আইসক্রিম খেতে দেবো না”
ঠোঁট টিপে নিঃশব্দে হাসে পাখি।শান সেদিকে চেয়ে মুখটা গম্ভীর করে ফোনে মনোযোগ দেয়।পাখি বাম হাত টা সরিয়ে শানের বুকে মাথা দিয়ে বলে,”আর কখনো খাইতে চাইবো না”
🌸🌸
বাড়ি ফিরতে ফিরতে দুপুর গড়িয়ে যায়। দরজায় পা দিতেই চক্ষু চড়কগাছ পাখির।হরেক রকমের বেলুন দিয়ে বাড়ি সাজানো।চারিদিকে ঘুরে ফিরে দেখে নেয় পাখি।একরাশ মুগ্ধতা এসে গ্রাস করে তাকে।কিছুক্ষন পর রনি রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে বলে,”উফ,জীবনে প্রথম কোন মেয়ের জন্যে কিচেনে আসলাম।তাও কার জন্যে?যে আমায় কিনা জানে মারতে চাইছিলো তার জন্যে”
পাখি শব্দ করে হেসে এগিয়ে যায় সেদিকে।ঠোঁটের হাসি কিঞ্চিত ম্লান করে বলে,”তা সেই মেয়ে কি বলেছে একবারও তার জন্যে কিছু রাঁধতে”
“উহু সে বলে নি, আমার অনাগত মা বলেছে….বুঝলে মায়ের মা!বাই দ্য ওয়ে রিপোর্ট পজিটিভ না?”
শান একগাল হেসে বলে,”সাত সপ্তাহ চলছে তোর মায়ের বয়স”
“ওহহহ রিয়েলি ব্রো!আই’ম সো এক্সাইটেড”
“ইনায়াহ্ কোথায় ভাইয়া?”, চিন্তিত ভঙ্গিতে প্রশ্ন করে পাখি।রনি হাত দুটা টিস্যুতে মুছে বলে,” চাচি, ইনায়াহ্ বড় মা’র বাড়ি গেছে।বড় মা কে আনতে”
“ওহহহহ”,
” চলো ঘরে চলো”,বলে শান হাত ধরে উপরে নিয়ে যায় পাখিকে।ঘরের দরজা খুলে ভিতরে যেতে ইশারা করে শান।পাখি মুচকি হেসে সন্দিহান চোখে তাকায় শানের দিকে।শান আরেকবার ইশারা করে ঘরে ঢুকতে।পাখি আর কিছু না বলে ভিতরে ঢুকে পরে।আরেক দফা অবাক হওয়ার পালা যেন এবার।
ঘরের পশ্চিম দিকের দেওয়ালে বিশাল বড় একটা প্রকৃতির ছবি টাঙ্গানো।যেটার দিকে তাকালে যেকোন মানুষই তার সৌন্দর্যের অতল গহ্বরে পৌঁছাতে বাধ্য।পাখি সেদিকে এক ধ্যানে চেয়ে থাকতেই উইন্ড চাইম গুলো টুং টাং করে ওঠে।
শান বুকের কাছে দুইহাত গুঁজে দরজায় ঠেস মেরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পাখিকে দেখছে।
ঠোঁটের কোণা প্রশান্তির হাসি এলিয়ে পাখি পাশ ফিরতেই চোখে পড়ে বেলকোনিতে নানা রকমের ইনডোর প্ল্যান্ট রাখা।ছোট্ট ছোট্ট ক্যাকটাস তাতেই যেন ফুল গুলো মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে।লম্বায় পা ফেলে পাখি এগিয়ে যায় সেদিকে।চোখ যেন জুড়িয়ে যায় সেসব দেখে।সামনের দাঁত কপাটি বের করে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে। এরপর কৃতজ্ঞ চিত্তে শানের দিকে তাকায়।পূনরায় গাছ গুলোয় মনোযোগী হয় পাখি।
শান মুচকি হেসে চশমা টা খুলে টেবিলের উপর রেখে পাখির দিকে এগিয়ে যায়।পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।কাঁধে মুখ ঠেকিয়ে বলে,”আমার জীবনটা এতো সুন্দর করে দেওয়ার জন্যে কিভাবে আপনাকে খুশি করতে পারি ম্যাডাম”
পাখি হেসে দিয়ে মাথাটা পিছনে শানের বুকে ঠেকিয়ে বলে,”আমার লাখ টাকার সুখ চাই না ডাক্তার সাহেব।আমার তো শুধু আপনাকেই চাই”
শান আরেকটু ঘনিষ্ট হতেই পাখি নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,”উহু, মেইনটেইন ডিস্টেন্স। আপনার ডাক্তার বান্ধবী কি বলেছে মনে নাই?
শান চোখ মুখ কুচকে মাথা চুলকে সরে আসে।
🌸🌸
জুমআ বাদ শান এতিম বাচ্চদে জন্যে খাবারের আয়োজন করে। বাড়িতে তারই তোড়জোড় চলছে সকাল থেকে।একটি বারের জন্যে পাখিকে নিচে নামতে দেয় নি শান।ভীষণ বিরক্ত লাগছে এখন পাখির।সুস্থ সবল কোন মানুষই এভাবে ঘরবন্দি থাকতে পারবে না।কিন্তু শান কোন প্রকার কোন রিস্ক নিতে চায় না।তাই তো বার বার বলেছে নিচে না নামতে। কোন কিছুর প্রয়োজন হলে যেন তাকে ডেকে নেয়।
শুয়ে থাকতে তার আর একদমই ভালো লাগছে না।তাই তো উঠে গিয়ে জানলার কাঁচ সরিয়ে নিচে লোক সমাগমে তাকিয়ে থাকে পাখি।অফ হোয়াইটের পাঞ্জাবি পরিহিত যুবক তার খুব চেনা।তার শরীরের প্রতিটা অঙ্গ তা পরিচিত।মুচকি হেসে পাখি এক দৃষ্টে চেয়ে থাকে শানের দিকে।
“এতোটা ভরসা, এতোটা বিশ্বাস কি করে কেউ করতে পারে তা যেন আপনার থেকেই কেউ শেখে।প্রতিটা মূহূর্তে ভালোবাসার নতুন নতুন সঙ্গা শিখছি, শিখছি নতুন করে হাজারও ছন্দ।আপনি যে আমার জীবনে কি তা শুধু আমিই জানি। ও আমার ডাক্তার সাহেব,আমি আপনাকে বাবা ডাক শোনাতে চাই।জীবনের বিনিময়ে হলেও চাই।”, ঠোঁটের কোণে ক্ষীণ হাসি, নজর শানের দিকে রেখে আপনমনেই বিড়বিড় করে পাখি।
খেয়ালই করে নি শানও তার দিকে চেয়ে আছে।
কপাল থেকে ঘামের ফোটা গুলো মাটিতে ঝেড়ে ফেলে ছোট ছোট চোখে উপরে জানলায় চোখ রাখে শান।
পাখি সম্বিৎ ফিরে একটা শুকনো হাসি উপহার দেয়।ইশারা করে ঘরে ডেকে নেয়।
শান, বাকি সবাইকে কাজগুলো বুঝিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে যায়।
রান্নাঘরে তখনো রাহেলা শর্মিলা কাজে ব্যস্ত।শানকে দৌঁড়াতে দেখে রাহেলা চিন্তিত হয়ে বলে,” শানবাবা এভাবে দৌঁড়ালো কেন ম্যাডাম?”
“তা তো আমিও বুঝতে পারছি না রাহেলা।তবে আমার ছেলে যে খুব খুশি তা আমি আঁচ করতে পারছি।আর এ খুশির পিছনের কলকাঠি চালক হলো ঐ পাখি মেয়েটা।আমাদের সকলের মধ্যমনি”
রাহেলা হেসে হাতে হাতে কাজ এগিয়ে বলে,”তা যা বলেছেন ম্যাডাম।বউ মা সত্যিই আমাদের শানবাবার জীবনের লটারি।”
“সে না আসলে কখনোই হয়ত ছেলের সাথে সম্পর্কটা নতুন করে জড়াতে পারতাম না রাহেলা।আমি তো আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম।”, বলতে বলতে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে শর্মিলা।
🌸🌸
” এতো ঘেমে গেছেন?”
পাখির কথায় মুখটা এগিয়ে দেয় শান।পাখি শানের ভাব বুঝতে পেরে ওড়নার আঁচলে মুখ মুছে দিয়ে বলে,”যা পারেন না, তা করতে যান কেন?”
“তোমার জন্যে”,এক কথায় জবাব দেয় শান।
গায়ের পাঞ্জাবিটা খুলতে খুলতে বলে,”আমি চাই আমার বউ বাচ্চা দুজনেই খুব ভালো থাকুক।সকল বিপদ আপদ থেকে দূরে থাকুক।তার জন্যে যদি এমন হাজারও কাজ করতে হয় আমি তাতেও রাজি”
ওদের কথার মাঝেই দরজায় নক করে কেউ।
শান মাথা উচিয়ে দেখে দরজা খোলাই আছে তবে সামান্য ভেড়ানো।একটু পর ভেড়ানো দরজাটা ঠেলে হাতে একটা খাবারের প্লেট সমেত ঘরে ঢোকে ইনায়াহ্।সিঁড়ি ডিঙ্গিয়ে খাবার নিয়ে আসতে যে তার খুব কষ্ট হয়েছে তা তার চোখে মুখে স্পষ্ট।
শান দ্রুত উঠে গিয়ে প্লেটটা হাতে নেয়।ইনায়াহ্’কে এনে বিছানায় বসিয়ে বলে,”মাম্মাম তুমি এসব কেন আনতে গেছ”
“মুন সাইনের জন্যে”, ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে জবাব দেয় ইনায়াহ্
পাখি ভ্রূদ্বয়ে ভাঁজ ফেলে হেসে দেয়।ইনায়াহ্’র গালে চুমু এঁকে বলে,” আমার মা এটা ”
প্লেটের দিকে চোখ ফেলে অবাক হয়ে পাখি বলে,”এতো খাবার কে খাবে মা?”
“কেন? তুমি খাবে আর বোনু খাবে”
পাখি শব্দ করে হেসে দেয়।শান মুচকি হেসে বলে,”এতো খাবার তো ওরা খেতে পারবে না মা।সো তোমরা তিনজনেই খেয়ে ফেলো কেমন”
ইনায়াহ্ শানের হাত ধরে হেসে বলে,”আমরা চারজন।হ্যাপি ফ্যামিলি, বলো না মুন সাইন!”
পাখি অবাক হয় ইনায়াহ্’র কথায়।ইনায়াহ্’র মাথায় পর পর কতোগুলো চুমু এঁকে বলে,”একদম”
চলবে…..