#আসমানী
#পর্ব_১৩
#লেখনীতে_তাহমিনা_মিনা
“কাকীমা,আপনার হাতের রান্নার কোনো তুলনা হয়না।ভার্সিটিতে থাকাকালীন সময়ে আমি তো অপেক্ষা করে থাকতাম কবে নাহিদ বাড়ি যাবে আর আসার সময় আমার জন্য এইরকম সুস্বাদু খাবার নিয়ে আসবে।”
নাহিদ পাশে থাকা বন্ধুকে কনুই মেরে বলে,”তাহলে তুই আমার চাইতে বেশি আমার মায়ের হাতের রান্না করা খাবারের জন্য অপেক্ষা করতি?”
নাহিদের বন্ধু আরিয়ান বলে,”সত্যি বলতে তাই।”
নাহিদ কপট অভিমান করে বলে,”এইসব কোনো কথা?কোথায় ভাবলাম আমার জন্য অপেক্ষা করতি।”
আরিয়ান বলে,”তুই এইসব বুঝবি না রে বন্ধু।আমি বড় হয়েছি অনাথাশ্রমে।এইসব খাবার আমার জন্য বিলাসিতা।আর হলের ডাইনিং এর খাবারের যে মান।তাকে দিয়ে কি আর পোষাবে আমার?”
শাহেদা বেগম আরিয়ানের কথা শুনে আরও একটু খাবার তুলে দিয়ে বলে,”খাও বাবা।লজ্জা পেও না।তুমি আসবে বলেই রান্না করেছি।”
আরিয়ান খাবার খেতে খেতে বলে,”আমার অতো লজ্জা নেই কাকীমা।মানুষের কাছে চেয়ে চিন্তে যার জীবন চলেছে,তার লজ্জা করা শোভা পায় না।”
শাহেদা বেগমের চোখে পানি চলে আসে।নাহিদ প্রসঙ্গ বদলে বলে,”রামিম এলো না কেন? ওর ও তো আসার কথা ছিল।”
“ছিল।কিন্তু হঠাৎ জরুরি কাজ পড়ে গেছে।তাই আর আসতে পারে নি।আসে নি আর এতো মজার খাবার মিস করেছে তাই।”
শাহেদা বেগম বলে,”তোমরা তো একসাথেই থাকো।আমি ওর জন্য খাবার দিয়ে দিব।বাসায় নিয়ে যেও।”
“আচ্ছা,কাকীমা।”
“এখন তুমি কি করো বাবা?”
আরিয়ান হেসে বলে,”নাহিদের মতো চাকরি করা তো আমার পক্ষে সম্ভব না।আমি হচ্ছি মুক্ত পাখি।আমাকে বাসায় আঁটকে রাখার মতো কেউ নেই।কোনোকালে ছিলও না।আমি আগের মতোই টিউশনিই করি।”
“এটা কেমন কথা বাবা?আগে ছিল না বলে যে সারাজীবনই থাকবে না তা তো না।পড়াশোনা শেষ করেছো।এখন যাই হোক ছাত্র পড়িয়ে টাকা ইনকাম করছো।একটা মেয়েকে বিয়ে করে সংসারী হও এইবার।”
আরিয়ান হেসে বলে,”আমার কাছে মেয়ে দিবে কে কাকীমা?আমার তো তেমন কেউই নেই।চালচুলোহীন মানুষ আমি।এখনও সবার সাথে ম্যাসে থাকি।এখন বিয়ে করা কি সম্ভব নাকি?”
শাহেদা বেগম বলে,”কেন সম্ভব না?তুমি যেহেতু অনাথ বলে দাবী করতেছো নিজেরে,তাহলে আরেকজন অনাথকেই না হয় নিজের জীবনের সাথে জুড়ে নাও।তাতে সেও একটা আশ্রয় পাবে আর তুমিও ভরসা করার মতো একজন মানুষ পাবে।”
আরিয়ান নত মুখে বলে,”আপনারা দেইখেন।এইরকম কাউকে পেলে তো আগে।”
শাহেদা বেগম আর কিছু বলে না।বাবা-মা হারা ছেলেটার জন্য তার মায়ার শেষ নেই।
আরিয়ান নাহিদকে বলে,”ভাবী কই?আসার পর তো একবারও দেখলাম না তাকে।”
“ও তোর মতো টিউশনি করায়।আজকে অবশ্য একটা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গেছে।চলে আসবে একটু পরেই।”
“ওহ,আচ্ছা।ভালো তো।”
“কথা বলোনা তো বাবা।খেয়ে নাও।আসমানী চলে আসবে।”
★★★
“জানেন ভাবী,নাহিদ কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় একটা মেয়েকে খুব পছন্দ করতো।কিন্তু মেয়েটা ওকে মোটেও পাত্তা দিত না।”
আরিয়ানের কথা শুনে আসমানী নাহিদের দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে বলে,”তাই নাকি?আমাকে তো বললেন না কোনোদিন?আমি কি রাগ করতাম নাকি চলে যেতাম?”
আসমানীর কথা শুনে নাহিদ মিটমিট করে হাসে।আরিয়ান আবার বলে,”মেয়েটার জন্য যে কি পাগলামি করতো ও জানেন না।মেয়েটাকে পড়াতে চেয়েছিল তাও সম্পূর্ণ বিনা পয়সায়।”
আসমানী বেশ কড়াভাবেই বলে,”এতো প্রেম ছিল নাকি?”
আরিয়ান আবার বলে,”মেয়েটার জন্য হাত কেটে নাম লিখেছিল।এখনও আছে।তবে সবসময় দেখা যায় না।একটু বেগুন বা ইলিশ খেলে জেগে উঠে পুরোনো ভালোবাসা। এইজন্য আপনি এখনও দেখতে পাননি।”
আসমানী বেশ রেগে গিয়েই বলে,”তাই নাকি?এলার্জিময় ভালোবাসা?”
নাহিদ এবার বলে,”আসমানী ও তোমার সাথে মজা করছে।আমি এমন কাউকেই ভালোবাসিনি।আর ভালোবাসলেও এমন পাগলামি আমি কোনোদিনও করতাম না।আমাকে তো তুমি চিনোই।কতটা লাজুক আমি।”
“হ্যাঁ, সেটাই তো সমস্যা।মিচকে শ*য়*তা*ন আপনি।পেটের মধ্যে কি চলছে সেটা বুঝা যায় না।”
আরিয়ান এবার হাহা করে হেসে বলে,”প্রেমে তো পড়েছিলাম আমি।একদম কঠিন প্রেমে পড়েছিলাম।কিন্তু সে আমাকে ভালোবাসেনি।আমার মতো অনাথকে সে ভালোবাসেনি।আবার তার বাবা ছিল বিরাট বড়লোক। আর আমার তো শূন্য পকেট।সে কি আমায় মেনে নিবে?”
আসমানী বলে,”আপনার বন্ধু কাউকে পছন্দ করতো না?”
“নাহ।করলেও যে লাজুক ছিল ও।বলার মতো সাহস ও পায়নি।আমাদেরকেই বলেনি কখনো।”
আরিয়ান নিজের শার্টের হাতা গুটিয়ে আসমানীকে দেখিয়ে বলে,”এই যে ভাবী দেখেন।তার নাম।আজকে আপনার শাশুড়ী ইলিশ মাছ খাইয়েছে।তাই জেগে উঠেছে।এই নামে যদি আপনার কোনো বান্ধবী থাকে,তবে জানায়েন।এই নামের মেয়েকেই বিয়ে করতে হবে।না হলে কি কোনো মেয়ে তার স্বামীর হাতে অন্য মেয়ের নাম সহ্য করবে?”
আসমানী ভালোভাবে তাকিয়ে দেখে আরিয়ানের হাতের মধ্যে লেখা আয়ুশী।আসমানী হেসে বলে,”আমার এক বান্ধবী আছে।কিন্তু সমস্যা আছে।”
আরিয়ান মজা করে বলে,”কেন?তার বাবাও কি অনেক বড়লোক নাকি?”
“মোটামুটি।কিন্তু তার হাজব্যান্ড অনেক রিচ।”
এইবার নাহিদ হাহা করে হেসে উঠে।হাসতে হাসতে বলে,”তোর কপালে মেয়ে নাই বন্ধু।তুই চিরকুমারই থাক।”
হঠাৎ করেই সামনের দিকে তাকিয়ে আসমানী বলে,”এসে গেছেন।আপদ।”
নাহিদ বলে,”কিসের আপদ?”
আসমানী মুখ ভেঙ্গিয়ে বলে,”ঐ যে আপনার না হওয়া বউ।মেয়েটাকে দেখলেই মনে যে কি হয় আমার।”
নাহিদ সামনে তাকিয়ে দেখে নুসাইবা আসছে।নাহিদ বন্ধুর সামনে বেশ ভড়কে যায়।নুসাইবা এসেই নাহিদকে বলে,”তোমার বন্ধু এসেছে শুনলাম।তুমি তো তার কথা অনেক বলতে সবাইকে।তাই তাকে দেখতে এলাম।”
নাহিদ অপ্রস্তুত হয়ে বলে,”হ্যাঁ, আরিয়ান।ও হচ্ছে আমার একমাত্র খালাতো বোন।”
আরিয়ান বুঝতে পারে এখানে কোনো ঝামেলা আছে।তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে বলে,”নুসাইবা নিশ্চয়ই তুমি?তোমার কথা শুনেছি আমি।চলো নুসাইবা ঐ নদীর পাড়ের ঐদিকে যাই।”
নুসাইবা বলে,”হ্যাঁ, নাহিদ ভাই তুমিও এসো।”
আসমানী নাহিদের দিকে চোখ গরম করে তাকাতেই আরিয়ান বলে,”আরেহ,ওদের কেন বিরক্ত করছো?ওরা তো নতুন বিয়ে করেছে।ওদেরকে ওদের মতো কিছু সময় কাটাতে দাও। আর তাছাড়া তুমি তো আমাকে দেখতে এসেছো।আমার সাথেই গল্প করো।চলো।”
নুসাইবা আর কোনো উপায় না পেয়ে আরিয়ানের পিছু পিছু যায়।আসমানী প্রথমে নুসাইবার উপর রেগে থাকলেও পরে খেয়াল করে আরিয়ান কিছুক্ষণ পরপর আরিয়ান নুসাইবার দিকে কিভাবে যেন তাকাচ্ছে।যেন ফুল বডি স্ক্যান করে নিচ্ছে।আসমানীর এটা মোটেও ভালো লাগে না।মেয়ে হয়ে জন্ম নেওয়ার দরুন সে ভালোভাবেই জানে দৃষ্টি কাকে বলে।
★★★
“কাকীমা আমাকে যেতেই হবে আজকে।কালকে সকালে টিউশনি আছে।সম্ভব হলে আমি থাকতাম।”
“তাহলে বাবা দেরি করো না।৮ টা বেজে গেছে।সাড়ে ৮ টায় বাস।তোমার পৌঁছাতে তাহলে দেরি হয়ে যাবে।”
“আচ্ছা,কাকীমা।আসি তাহলে।কাকা আমি আসি।ভালো থাকবেন।”
আসমানীর দিকে ফিরে আরিয়ান বলে,”আসি ভাবী।আমার ভোলাভালা বন্ধুকে দেখে রাখবেন।”
আসমানী একটু মুচকি হেসে বলে,”সাবধানে যাবেন ভাইয়া।”
আরিয়ান বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় নাহিদের সাথে।দুই বন্ধু গল্প করতে করতে রাস্তা চলতে থাকে।হঠাৎ রাস্তা ফাঁকা হওয়ায় নাহিদ বেশ স্বাভাবিক ভাবে জিজ্ঞেস করে,”তুই নিশ্চিত যে ঐ লোকের সম্পদ অবৈধ?”
আরিয়ান মুখে একটা সিগারেট ধরিয়ে বলে,”হ্যাঁ, আমি নিজে খোঁজখবর নিয়েছি।কোনো সমস্যা নেই।”
“ওকে।তাহলে নেক্সট প্ল্যান কি তোর?কবে করছিস সবকিছু?”
“এতো তাড়াতাড়ি না।সে কোনো ছোটখাটো চোর না।সে বড় মাপের চোর।তার আশেপাশে অনেক গার্ড ঘুরে।”
নাহিদ একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,”অহ,তাহলে তো এবার নাটক করতে হবে।”
“হুমম।”
“এই নাটক করতে করতে আমি ক্লান্ত।”
“তোকে কোনো কিছুর সাথেই জড়াতে হবে না এখন থেকে।শুধু আসল কাজে থাকলেই হবে।তোর এখন পরিবার আছে। বিয়েও করেছিস।”
“দেখি কি করি।”
আরিয়ান মুচকি হেসে বলে,”সিউর বস।সবই আপনার মর্জি।”
চলবে……