উন্মাদিনী পর্ব-০২

0
18

#উন্মাদিনী
#পর্বঃ২
#লেখিকা_দিশা_মনি

তাজিব স্পৃহাকে সাথে নিয়ে ঘরে বসে তার সাথে পুতুল খেলছিল। এমন সময় তাজিবের মা তানিয়া বেগম সেখানে উপস্থিত হলেন। নিজের মেয়ে তোহার বলা কথাগুলো মনে করলেন। তিনি অনেক রাগারাগি করে দেখেছেন কিন্তু কোন লাভ হয়নি। তাই এবার যা করতে হবে অন্যভাবে করতে হবে। এই ভাবনা থেকে তানিয়া বেগম তাদের পাশে বসে তাদের খেয়াল যোগ দিল। যা দেখে তাজিব কিছুটা অবাক হলো। তানিয়া বেগম তাজিবের অবাক মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে হেসে বলেন,
“এত অবাক হচ্ছিস কেব তাজিব? তোর মাকে আজ অব্দি তুই ভালো করে চিনতেই পারলি না৷ আমি তো শুধুমাত্র তোর কথা ভেবেই মাঝে মাঝে রাগারাগি করি। কিন্তু তার মানে তো এই নয় যে আমি স্পৃহাকে পছন্দ করি না। উলটে আমিই তো ওকে পছন্দ করে এই বাড়ির বউ করে এনেছিলাম।”

তাজিব স্বস্তির শ্বাস ফেলে বলে,
“আমি জানি, আমার মা কেমন। তুমি যে মানুষ হিসেবে খারাপ নও এটা আমি জানি মা। এ নিয়ে আমার মনে সত্যি কোন সন্দেহ নেই৷ কিন্তু মাঝে মাঝে তোমার ব্যবহার বিশেষ করে স্পৃহার প্রতি আমি মেনে নিতে পারি না।”

“ওসব কথা এখন বাদ দে তো। এখন আমি একজন ভালো শাশুড়ী আর ভালো মা হওয়ার চেষ্টা করব৷ স্পৃহা চলো আমরা সবাই মিলে তোমার পুতুলের বিয়ে দেই।”

স্পৃহাও আনন্দ পায়৷ আর তাজিব তাদের এত মিল দেখে স্বস্তি খুঁজে পায়।

★★
তাজিব আজ যথারীতি অফিসে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে গেছে। অন্যদিন যতোটা উদ্বিগ্নতা নিয়ে অফিসে যেত আজ তেমন হয় নি। আজ সে অনেকটা নিশ্চিন্তে অফিসে যাচ্ছে। তাজিব অফিসে যাওয়ার আগে ডাইনিং টেবিলে আসতেই ভীষণ সুন্দর একটা দৃশ্যের সম্মুখীন হয়। আর সেটা হলো স্পৃহাকে তানিয়া বেগম নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছে। এই দৃশ্য তার মনে তৃপ্তি এনে দেয়। তাজিব নিজেও খেতে বসে পড়ে। খাওয়া দাওয়া শেষ করে তানিয়া বেগমের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“আম্মু আমি অফিসে যাচ্ছি৷ তুমি স্পৃহার খেয়াল রেখো।”

“আচ্ছা।”

নিশ্চিত হয়ে তাজিব বেরিয়ে যায়। তাজিব বেরিয়ে যেতেই তানিয়া বেগম নিজের চাল চালতে শুরু করেন। তিনি স্পৃহার দিকে তাকিয়ে বলেন,
“স্পৃহা মা, তুমি তো খুব সুন্দর পুতুল খেলো। তো তোমার পুতুলের বিয়ে দেও কেন বলো তো?”

অবুঝ স্পৃহা বলে,
“কারণ বিয়ে মানে আনন্দ। যখন আমি আমার পুতুলের বিয়ে দেই তখন ওরা অনেক আনন্দ পায়। আমার পুতুল মেয়ে আর আমার পুতুল ছেলে দুজনেই বন্ধু পেয়ে যায়। এরপর আমার পুতুল মেয়ে আমার পুতুল ছেলের জন্য রান্না করে। তার খেয়াল রাখে।”

“বাহ, তুমি একদম ঠিক বলেছ। আচ্ছা, আমায় একটা কথা বলো, তোমার মনে হয় না তোমার বন্ধুরও এমন একটা কাউকে বিয়ে করে বন্ধু আনা দরকার। যে তার জন্য রান্না করবে তার খেয়াল রাখবে।”

স্পৃহা হঠাৎ করে অন্য ভাবনায় হারিয়ে যায়। তানিয়া বেগম বলেন,
“কি হলো কিছু বলছ না যে?”

“কিন্তু বন্ধুর সাথে তো আমার বিয়ে হয়েছে।”

“হ্যাঁ,হয়েছে কিন্তু তুমি কি তোমার বন্ধুর জন্য রান্না করতে পারো বা তার খেয়াল রাখতে পারো?”

স্পৃহা দুদিকে মাথা নাড়িয়ে বলে,
“না তো।”

“সেজন্যই তো বলছি। তোমার বন্ধুর তো এমন কাউকে দরকার যে তার খেয়াল রাখতে পারবে, তাকে রান্না করে দিতে পারবে।”

“হ্যাঁ, তুমি তো ঠিক বলছ ভালো আন্টি। কিন্তু বন্ধুর জন্য এমন কাউকে কোথায় পাব?”

“এর বন্দোবস্ত তো তোমার নিজেকেই করতে হবে!”

“আমাকে?!”

“হ্যাঁ, তোমাকে।”

“আমি কি করবো?”

“যেভাবে তুমি তোমার পুতুল ছেলে-মেয়ের বিয়ে দাও ঠিক একই ভাবে তোমার বন্ধুর বিয়ের ব্যবস্থাও তোমায় করতে হবে।”

“কিন্তু কার সাথে বন্ধুর বিয়ে দেব? আমার পুতুল ছেলের সাথে তো আমার পুতুল মেয়ের বিয়ে দেই। তাহলে কি বন্ধুর সাথেও পুতুলের বিয়ে দেব।”

“আরে পাগল মেয়ে! মানুষের সাথে কি কখনো পুতুলের বিয়ে হয়? তবে চিন্তা নেই,আমি একদম পুতুলের মতো দেখতেই একটা মেয়ে খুঁজে আনব তোমার বন্ধুর জন্য। তোমার শুধু তোমার বন্ধুকে রাজি করাতে হবে। বলো তুমি শুনবে আমার কথা?”

“হ্যাঁ, তুমি তো এখন ভালো আন্টি হয়ে গেছ। আমি তোমার সব কথা শুনব।”

তানিয়া বেগম একটা গা জ্বালানি হাসি দেন। মনে মনে বলেন,
“তোহার দেয়া বুদ্ধিটা তো ভালোই কাজে লাগল। এবার আমায় কাটা দিয়েই কাটা তুলতে হবে।”

অতঃপর তিনি স্পৃহার কানে কানে কিছু কথা বলেন।

“যা যা বললাম করতে পারবে তো?”

“হুম,পারবো।”

“আচ্ছা, এখন যাও তুমি তোমার পুতুলের বিয়ে দাও। এদিকে আমি তোমার বন্ধুর বিয়ের আয়োজন শুরু করি।”

★★
সন্ধ্যার একটু পর তাজিব ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে অফিস থেকে ফিরলো। তাজিবকে ফিরতে দেখেই তানিয়া বেগম এগিয়ে এসে তার দিকে পানির গ্লাস বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
“তুই এসে পড়েছিস তাজিব। এই নে পানি টুকু খেয়ে নে। আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসছি।”

“স্পৃহা খেয়েছে আম্মু? আর তুমি খেয়েছ?”

“হ্যাঁ, আমরা দুজনেই খেয়েছি। তোর বউ তো খেতেই চাচ্ছিল না তোর জন্য অপেক্ষা করতে চাইছিল কিন্তু ওর যা শরীরের অবস্থা ওর তো খাওয়া দাওয়া করা জরুরি। তাই আমি ওকে খাইয়ে দিয়েছি।”

“ভালো করেছ আম্মু। আমি যাই ওর সাথে একটু দেখা করে আসি।”

বলেই তাজিব স্পৃহার সাথে দেখা করতে তার রুমের দিকে যায়। এদিকে তানিয়া বেগম হেসে বলেন,
“যা যা! এই সময়টার জন্যই তো আমি অপেক্ষা করছিলাম। এবার হবে আসল মজা!”

তাজিব রুমে এসে রুমের লাইট অফ করা। তাই সে রুমে প্রবেশ করা মাত্রই রুমের লাইটটা জ্বালায়। জ্বালিয়েই দেখতে পায় স্পৃহা চুপচাপ বসে আছে বিছানায়। তাজিব স্পৃহার পাশে গিয়ে বসে বলে,
“তুমি আজ এত চুপচাপ কেন বন্ধু?”

স্পৃহা কোন উত্তর দেয় না। তাজিব এবার একটু উদ্বিগ্ন হয়ে বলে,
“কোন সমস্যা হয়েছে? আম্মু কি আবার কিছু বলেছে?”

স্পৃহা এবার নিজের কনিষ্ঠ আঙুল তাজিবের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
“পিংকি প্রমিস করো আমার একটা কথা রাখবে।”

“মানে?”

স্পৃহা তাজিবের হাত নিজের মাথায় নিয়ে বলে,
“কসম করে বলো আমার কথা রাখবে..”

‘কি হয়েছে খুলে বলো?’

“আগে তুমি কথা দাও আমি যা বলব তাই শুনবে।”

“বন্ধু..”

“যদি কসম না দাও তাহলে আমি ভাবব তুমি আমায় ভালোবাসো না।”

“আচ্ছা, কসম করছি। বলো তুমি কি চাও?”

” আমি চাই আমার পুতুল ছেলে-মেয়ে যেভাবে বিয়ে করে তেমনি ভাবে তুমিও একটি মেয়েকে বিয়ে করো।”

তাজিব সহসা স্পৃহার মাথা থেকে হাত সরিয়ে বলে,
“এসব কি বলছ তুমি স্পৃহা? কে শিখিয়েছে এসব তোমায়?”

“তোমাকে কিন্তু আমার কথা রাখতে হবে বন্ধু। তুমি আমার মাথায় হাত দিয়ে কসম করেছ। কথা না রাখলে কিন্তু আমি মারা যাব..”

তাজিব স্পৃহার মুখ চেপে ধরে বলে,
“চুপ..একদম এসব বলবে না।”

স্পৃহা তাজিবের হাতটা সরিয়ে বলে,
“তাহলে তুমি বিয়ে করে নাও!”

“আমি তো বিয়ে করেছি। তুমি আমার বউ।”

“না, তোমার আরেকটা বউ লাগবে। যে তোমায় রান্না করে দেবে, তোমার খেয়াল রাখবে।”

” নিশ্চয়ই আম্মু তোমায় এসব বলেছে তাই না? দাঁড়াও আমি আম্মুকে দেখে নিচ্ছি।”

বলেই তাজিব উঠতে নেবে এমন সময় স্পৃহা বলে,
“যদি তুমি কথা না মানো তাহলে আমি কিন্তু তোমার থেকে অনেক দূরে চলে যাব..এতটাই দূরে যে কখনো ফিরবো না।”

স্পৃহার কথা শুনে তাজিবের দুই পা আপনাআপনি থেমে যায়। সে অনিমেষ চেয়ে থাকে স্পৃহার দিকে।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨