#উন্মুক্ত_লাইব্রেরী
লেখা – আয্যাহ সূচনা
২৩.
দক্ষ হাতে তরকারি কাটছে অন্বেষা।ঠিক তার পাশে জমিনে পা ভাঁজ করে বসা বর্ণ।আগে রাত কাটতো গোডাউনে মালপত্র কার্টনে প্যাকেজিং করে।এখন তার সম্পূর্ণ সময়টাই কাটছে অলস।ডেঁড়েমুষে বেকার।একদম অকেজো।বসে বসে অন্বেষার কঠোর মেহনত দেখে একবার সমানুভবী চিত্ত জেগে উঠলেও বেশিক্ষণ সেটি সক্রিয় থাকতে দেয়নি তার মাঝে।ধুলো ঝেড়ে ফেলার মতো সরিয়ে দিয়েছে।এই মুহূর্তে তার মুখ্য কাজ হচ্ছে অন্বেষাকে বিরক্ত করা। শাক সবজি ধরে ধরে দেখছে যেনো প্রথমবার দেখা। কাঁচা মটরশুঁটি গিলেছে হিসাব ছাড়া।
অন্বেষা এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে কেড়ে নিলো তার কাছ থেকে। বললো,
“জ্বালাচ্ছো কিন্তু!”
“ভাল্লাগে…..”
অন্বেষা অবাক সুরে জিজ্ঞেস করে, “কি?”
“তোমারে জ্বালাইতে”
মুখ ঘুরিয়ে কাজ করতে করতে প্রশ্ন করলো,
“আমাকে ভালো লাগেনা?”
“আমার রুচি এত খারাপ নাকি? তোমার চোখ দেখছো?মার্বেল এর মত গোল্লা গোল্লা।আর চিকন ঠোঁট ওয়ালা মাইয়ারা ঝগড়াখুন্নি হয়।চুলগুলি বাদ্দাইনিগো মত!আলুর মত নাক।”
অন্বেষা হাতের খুন্তির চলন থামিয়ে বেশ মনোযোগ দিয়েই শুনলো নিজের সম্পর্কে বলা কথাগুলো।বর্ণের তাকে নিয়ে বদনাম শেষ হওয়ার পরপরই সে প্রশ্ন করে,
“আমার এতকিছু খেয়াল করলে কখন?”
বর্ণ অচঁচলচিত্তে এড়িয়ে গেলো প্রশ্নটি।যেনো শুনেই নি। অন্বেষা সস্মিত মুখে বললো,
“তুমি পুরোটাই নকল বর্ণ।তোমার মুখে এক অন্তরে আরেক।”
“আমি মুখে কেমন?”
“কঠোর”
“যদিও তোমার কথা অসত্য।আমি যদি অন্তরের দিক দিয়া দুর্বল হইতে শুরু করি?তখন পাগলা ষাঁড়ের মত মাথা আর শরীর ঝাড়া দেই।ওই ঝাকানিতে দুর্বলতা মাটিতে গড়ায় পড়ে।”
“কিন্তু কেনো?এত কঠোর হতে চাওয়ার কারণ কি?”
বর্ণ ভাবুক চোখে চেয়ে বললো,
“দিনশেষে জানি কষ্ট নামক জিনিসটা আমারে ছুঁইতে না পারে।কি নাই আমার?একটা জান আছে।হাতপা আছে অক্ষত।খাইতে পারলে খাইলাম না খাইতে পারলে নাই।ঘুমাই নিজের ইচ্ছামত।মাথার উপরে একটা ছাদ আছে।আর কি লাগবো?আমার বেশিকিছুর দরকার নাই।যত চাহিদা তত আপোস।আমি কি দুনিয়াতে আপোস করবার আইছি?খালি হাতে দাপট দেহাইবার আইছি আমি।……তুমি কি ভাবো একটা বিয়া কইরা?সংসার কইরা আমি নিজের লগে আপোস করছি? মানায় নিছি?আমি এহনো ওই আগের বর্ণ।এই সংসারটা আমার নতুন চ্যালেঞ্জ।”
এতগুলো কথা শুনে অন্বেষা শুধু একটি ছোট্ট বাক্যে প্রশ্ন করলো,
“তুমি সম্পূর্ণ চিন্তাহীন?”
“নাহ!একটা চিন্তা আছে আমার।কেউ জানি আমারে নিচা দেহাইতে না পারে।তুমি আমারে কি ভাববা আমি জানি না।কিন্তু বাইরের কোনো মানুষ যদি আমারে কাপুরুষ ডাকে?আমি ঐটা সহ্য করমু না একফোঁটাও!”
কথা বলতে বলতে বর্ণের কপালের রগ ফুলে উঠেছে। তেজস্বী মুখভাগ। অন্বেষা তার হাত এগিয়ে বর্ণের হাতের উপর রাখলো।হাতের পিঠে বৃদ্ধাঙ্গুল ঘষে দিয়ে বললো,
“কেউ বলবে না তোমাকে কাপুরুষ।আমি আছি…..”
এই দৃঢ় আশ্বাস শ্রবণইন্দ্রিয়তে শীতল হয়ে ছুঁয়ে গেলো। অচঞ্চল নেত্রপাত করে বর্ণ তার হাতের উপর রাখা অন্বেষার কোমল হাতে। প্রমত্ততা ঘিরে ধরছে ধীর গতিতে।অনুভব করলো বর্ণ।আগ বাড়িয়ে অন্বেষার আঙুলের ভাঁজে ভাঁজে স্ব আঙুলের আধিপত্য বিস্তার করে।ঢেকে ফেললো মাংসল শুষ্ক হাতের আড়ালে।বাঁধন আরো দৃঢ় করলো বর্ণ। পৃষ্ট করে দিতে চাইছে যেনো।পরপরই আবার বল কমিয়ে আনে।কিছু সময়ের জন্য নিজের স্বজ্ঞান থেকে বিরতি নিয়েছে সম্ভবত।প্রগাঢ় দৃষ্টি তুলে অন্বেষার দিকে চাইলে সঙ্গেসঙ্গে অন্বেষা চোখ নামিয়ে নেয়।
আকস্মিক দরজায় কড়াঘাতে ছোট করে দম ফেলে।হাত ছেড়ে দিলো ধীরে সুস্থে।উঠে দরজা খুলে দেখলো দারোয়ান এর পোশাকে একজন দাঁড়িয়ে।বর্ণের বুঝতে বাকি নেই ইনি কে। অন্বেষার দিকে চেয়ে বললো,
“জব্বার চাচা আইছে”
এরপর জব্বার চাচার দিকে চেয়ে বলে,
“আহেন ভিতরে আয়া জিরান একটু। হয়রান হইয়া গেছেন।”
জব্বার চাচা হাসি মুখে বর্ণের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে,
“আপনি আমারে কেমনে চিনেন?”
“আপনার নাম অনেকবার হুনছি।এক্কেরে মুখস্ত হইয়া গেছে।”
একগ্লাস পানি এনে তার দিকে এগিয়ে দিলো বর্ণ।জব্বার চাচা তেষ্টা মিটিয়ে ঘরের চারিদিক চেয়ে দেখলেন।বেশ খুশি হলেন তিনি।বললেন,
“এই তোমাদের নতুন সংসার?যাক!ভালোই হইছে।আমি অনেক খুশি হইছি।”
জব্বার চাচার কথার বিপরীতে বর্ণ বলে উঠলো,
“আপনি খুশি হইলে হইবো চাচা মিয়া?আমারে যে সুখে থাকবার দিতাছে না এই মাইয়া?জ্বালায় কয়লা কইরা ফালাইতাছে।”
জব্বার চাচা বর্ণের কথা শুনে হাসছেন।বুঝতে পেরেছেন ঠাট্টা করছে।অন্যদিকে অন্বেষার চোখ কপালে। অন্বেষা খাবার টিফিন বক্সে রেখে জব্বার চাচার হাতে ধরিয়ে বলতে লাগলো,
“ওর কথা শুনবেন না চাচা।সারাদিন আবোলতাবোল কথা বলে ননস্টপ।কোনো থামাথামি নেই।উল্টো আমার ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে।”
জব্বার চাচা হেসে হাত তুলে দুজনকে ক্ষ্যান্ত হতে বললেন।মনে মনে আরো অনেকটা খুশি হলেন দুজনার খুনসুটির সংসার দেখে।অবশেষে বোধহয় মেয়েটি সুখের মুখ দেখলো।
___________
নতুন সংসার এর জন্য কেনাকাটা করতে এসেছে বর্ণ এবং অন্বেষা।বর্ণ নাকোচ করলেও তাকে এক প্রকার টেনে আনা হয়। বর্ণের একটি স্বভাব বোধগম্য হয়েছে অনেক সময় পর।সে প্রথমে সব ব্যাপারে না বোধক শব্দ উচ্চারণ করার কিছু সময় পর ঠিক সেই কাজের দিকেই পা বাড়ায়।তার বারণ শুধুই ভনিতা মাত্র।জ্বালাতন করার হাতিয়ার।একে একে বর্ণের ভিন্ন ভিন্ন রূপ প্রকাশ পাচ্ছে। অন্বেষা যত শীগ্রই এই বদ অভ্যাসের লাগাম টানবে তত মঙ্গলজনক তার জন্য।
শীতের পোশাকের প্রয়োজন। অন্বেষা বর্ণকে প্রশ্ন করলো,
“তোমার শীতের পোশাক আছে?”
পকেটে হাত গুঁজে কি যেনো ভাবলো। তারপর বলে উঠলো,
“আমি এমনেই মানুষটা গরম।আমার আবার শীতের কাপড় লাগে নি?”
অন্বেষা নিউ মার্কেটের আশপাশে ফুটপাতে ঘুরছে।দরকারি যাবতীয় জিনিস কিনে নিয়েছে সাধ্যের মধ্যে।এবার এগিয়ে গেলো ছেলেদের শীতের পোশাকের দোকানে।একটার পর একটা ফুল হাতা টিশার্ট তুলে বর্ণের গায়ের সাথে মাপ দিয়ে নিলো। শেষমেশ একটি মোটা সোয়েটার পছন্দ হয়।
দোকানির কাছে জানতে চাইলো,
“দাম কত?”
দোকানী গলা উঁচু করে বলে উঠে,
“এমনেতেই বেচি ১০০০ টাকায় আপনার লেইগা ৭০০ টাকা”
বর্ণ হুট করে বলে উঠে,
“ক্যান? ওয় কি আপনার বউ লাগে নি?”
অন্বেষা বর্ণকে থামিয়ে দেয়।আরো কয়েকটা কাপড় দেখলো।পছন্দ হয়নি।মন গিয়ে রয়েছে ধূসর রঙের সোয়েটারে।
অন্বেষা বললো,
“লাস্ট কত রাখবেন?”
দোকানি জবাব দেন,
“আর পঞ্চাশ কমাইলাম যান। সাড়ে ছয়শো দেন।”
“দুইশো টাকা দিবো”
হতভম্ব দোকানি।পাশে দাঁড়িয়ে ফোনে বাবল গেম খেলতে থাকা বর্ণের দিকে করুন দৃষ্টিতে চাইলো।বর্ণের সাথে চোখাচোখি হয়।বর্ণ এক হাত নাড়িয়ে বলতে লাগলো,
“ আমি এই মাইয়ারে চিনি না।আমার দিকে তাকায় লাভ নাই।আপনারা দুইজন চালায় যান”
এমন আকস্মিক পল্টিতে অন্বেষা চোখ পাকিয়ে তাকায়।দামাদামি করবে না নাকি?কেনাকাটা শেষে অন্বেষা ছো মেরে বর্ণের হাত থেকে নিজের ফোন কেড়ে নিলো।সারাদিন বাচ্চাদের মতো গেম খেলতে থাকে।স্থান, ক্ষণ কোনোটাই দেখে না।তার দুহাতে ব্যাগ ধরিয়ে বললো,
“তোমার পকেটে আমি তিনশত টাকা দেখেছি।চলো ফুচকা খাওয়াও”
বর্ণ কাদো কাদো মুখ বানিয়ে বললো,
“এই তিনশ টাকা আমার শেষ সম্বল। কাইড়া নিছ না কালনাগিনী!”
“একদম তুই তুকারি করবে না।”
বর্ণ ভনিতা করে অন্বেষার গাল টেনে বললো,
“আহা সোনা এটা আদরের ডাক।”
“আমার এত আদর দরকার নেই।ফুচকা খাবো সাথে চা।চলো বলছি!”
“আমি বুঝতাছিতো!আমার জান পরান গিল্লা খাইয়া তারপর ক্ষ্যান্ত হইবা তুমি”
______
বাড়ি ফিরে সুদীপ্তা আর তার স্বামীকে দেখে কিছুটা অবাক হয় অন্বেষা।বাড়ির বাহিরে তারা যেনো বর্ণ অন্বেষারই অপেক্ষায়।বর্ণ তার চেয়ে অধিক পরিসরে চমকিত।হতভম্ব হয়ে পড়লো সুদীপ্তার পাশে দাঁড়ানো জীবনকে দেখে। সুদীপ্তাকে চিনেছে অন্বেষার প্রতিবেশী হিসেবে।আর জীবন তার সহকর্মী ছিলো। হিসেব মিলাতে না পেরে পায়ের দ্রুততা বাড়িয়ে দাঁড়ায় জীবনের সামনে। জীবনও বর্ণকে দেখে ঠিক ততটাই স্তম্ভিত।
“কিরে জীবন?”
“বর্ণ?তুই এদিকে?”
তাদের দুজনের আলাপচারিতা দেখে অন্বেষা সুদীপ্তা কেউই কিছু বুঝলো না। অন্বেষা প্রশ্ন করলো,
“তুমি ওনাকে চিনো?”
বর্ণ জবাবে বলে,
“চিনমু না? গার্মেন্টসে ওর লগেইতো কাম করতাম আমি।”
সুদীপ্তা স্বামীর দিকে চেয়ে বললো,
“তাহলেতো হয়েই গেলো। অন্বেষা আমি পরিচিত।আর কাকতালীয়ভাবে আমাদের স্বামীরাও পূর্ব পরিচিত।”
জীবন সুদীপ্তার কথা শুনে আশ্চর্য ভঙ্গিতে প্রশ্ন করে,
“কিরে বর্ণ?তুই বিয়া করসোস?”
বর্ণ ঝড়ো নিঃশ্বাস ফেলে মাথা দোলায়।হতাশ গলায় বলে,
“ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে!আমিও বগা বিয়ার ফান্দে ঝুইলা পড়ছি।”
বর্ণের কথাবার্তার ধরন জীবনের অজানা নয়।একে অপরের সাথে চতুর্মুখী পরিচয় যেনো নতুন চমক।অনেকক্ষণ যাবত দাঁড়িয়ে আছে সুদীপ্তা,জীবন এবং তাদের মেয়ে।তাদের নিয়ে ঘরে চলে গেলো। অন্বেষা হাতমুখ ধুয়েই চা বসলো চুলোয়।সুদীপ্তা বারণ করছে কোনো ঝামেলা করতে।তারপরও খালি মুখে মেহমান ফেরাবে না।
বর্ণের উদ্দেশ্যে জীবন বলে উঠে,
“তোরে ছাড়া কাম করতে ভাল্লাগে নারে।একলা একলা করি।শালার ম্যানেজার তোরে বাইর করায়ই ছাড়লো।”
চাকরিচ্যুত হওয়াতে বর্ণের উপর তেমন প্রভাব পড়েনি।হেসে জবাব দিলো,
“গার্মেন্টস এর বাকি মাইনষেরে টাকা খাওয়াইছে ম্যানেজার।সবাই জানি ওর পক্ষে আর আমার বিপক্ষে কথা কয়।”
“ঐটাতো জানি।কিন্তু আমার একটুও মন টিকে না।”
বর্ণ জীবনের কাঁধে হাত রেখে বললো,
“কারো প্রতি এত মায়া জন্মাবি না কোনোদিন।ছাইড়া গেলে যেনো কষ্ট পাইতে না হয়”
“তুই তো পাষাণ!”
“হ ঠিক কইছোস।”
অন্বেষা চা ঢালছে কাপে।সাথে বর্ণের কথাটি মনোযোগ সহকারে শুনলো।ভাবলো কিছু সময় নিয়ে।তাহলে কি বর্ণের মনেও তার জন্য অগাধ মায়া জন্মাবে না?হুট করে গরম চা অল্প একটু ছিটকে পড়ে অন্বেষার হাতে। আর্তনাদে মুখ ফুটে শব্দ বেরোলে বর্ণ তড়াক করে ঘুরে তাকায়।বিছানা থেকে পা নামিয়ে দ্রুত অগ্রসর হলো অন্বেষার দিকে।
বাজখাঁই সুরে ধমকে উঠে,
“কাম করার সময় মনোযোগ কই থাকে তোমার!অঘটন না ঘটাইলেই না!”
বর্ণের বিচলিত রূপ আর শাসনসুলভ কণ্ঠে কিছুক্ষন পূর্বের ধারণা ঘুচে যায়।সামান্য ব্যথার মধ্যে অদৃশ্য স্বস্তি মেলে।অজান্তে মুখে হাসি ফুটলে বর্ণ বলে উঠে,
“পাগল হইয়া গেছো?গরম চা হাতে ফালায় আবার হাসো! জ্বিনে ধরছে?”
অন্বেষা মাথা দুলিয়ে না সূচক ইঙ্গিত করলো।হাতে পানি দিয়ে চা আর কিছু বিস্কিট পরিবেশন করে।জীবন বললো,
“আমি নতুন কাম খুঁজতাছি বুঝছস।সামনের সপ্তাহে চলিস আমার লগে।দুই ভাই মিলা যামু নে”
বর্ণ তুচ্ছ হাসে।বলে,
“তোর অতি দরদী স্বভাবটা গেলো নারে জীবইন্না!”
“যাবি কিনা?”
“লইস”
খুনসুটিতে মেতে উঠলো বর্ণ আর সুদীপ্তার মেয়ে।শান্ত মেয়েটা খিলখিল করে হাসছে বর্ণের সাথে।আলাপ আলোচনার মধ্যে বর্ণ সুদীপ্তার মেয়ের উদ্দেশ্যে বলে উঠে,
“এই তুমি আমারে বিয়া করবা?”
সুদীপ্তার মেয়ে লজ্জায় মুখ ঢেকে নিলো।তারপর মাথা দুলিয়ে বললো,
“না না”
বর্ণ আবার বলে উঠে,
“আরেহ করো না বিয়া!তোমারে চকলেট কিনা দিমু।”
“না না তুমি বুড়ো।আমি তোমাকে বিয়ে করবো না।”
অন্বেষা হেসে জবাব দেয়,
“ঠিক!বুড়ো লোককে বিয়ে করতে নেই।”
সারাদিনের ধকলে প্রায় অচল অন্বেষার দেহ।বর্ণ বিছানা সম্পূর্ণ দখল করার পূর্বেই পিঠ ঠেকিয়ে শুয়ে পড়েছে।দুর্বল লাগছে।ক্লাস,অফিস,রান্না যেকোনো একটা কাজ বাদ দেওয়া যেতো?তাহলে হয়তো ক্লান্তি কমতো।তার উপর জুড়েছে সংসার এর কাজ।ভার হয়ে আছে মাথা।পরিশ্রান্ত চোখজোড়া বুঁজে অন্বেষা।মিনিট দশেক পরই চুলে টান পড়লো।বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে পাশে চাইতেই দেখে বর্ণকে।বুকে ভর দিয়ে শুয়ে আছে।মুখ ফেরানো অন্বেষার পাশে। কেশ থেকে গিট বাঁধছে কখনো আবার খুলে দিচ্ছে।অদ্ভুত কর্মকাণ্ড তার।যেনো কোনো নাদান শিশু।
অন্বেষা বললো,
“খাবার গরম করে খেয়ে নিও।আমার ক্লান্ত লাগছে….”
“একলা একলা খাইলেতো আবার খোটা দিবা”
ক্লান্ত সুরে অন্বেষা জবাব দেয়, “দিবো না”
“তুমি দেহি দুইদিন সংসার কইরা আইলসা হইয়া গেছো।আমার মনে হয় আরেকটা বিয়া করাই লাগবো!”
“তোমারতো আবার প্রেমিকার অভাব নেই।আফজাল চাচার স্ত্রী তোমার ডার্লিং।গলিতে দাঁড়িয়ে হাতে আঙুলে ওড়না পেঁচানো প্রেমিকাও আছে। আবার সুদীপ্তা দিদির নাবালক মেয়েকেও তোমার বিয়ে করার ইচ্ছে।মনে রেখো!ঘরের বাহিরে রমণীরা ঘরের বাইরেই থাকে।ঘরে থাকে ওয়ান এন্ড অনলি বউ!সেই রানী,তারই রাজত্ব সবখানে।”
বর্ণ ফিক করে হেসে উঠলো।এই কথায় হাসির কি আছে বুঝে উঠতে পারলো না অন্বেষা।কপাল কুঁচকে কিঞ্চিত রেগে চেয়ে আছে।বর্ণ তার রাক্ষসী হাসি থামিয়ে বলে,
“ফকিরনীর ঘরে আবার রানীগিরী মারাইতে আইছে!”
অন্বেষা হেয় করে বলে উঠলো,
“হ্যা! তুমিইতো বলো, তুমি এসেছো খালি হাতে রাজত্ব করতে।যেহেতু তুমি রাজা আমি ওই হিসেবে রানী তাই না?রাজা রানী হতে অঢেল সম্পদের দরকার পড়ে না।”
“বাংলা ছায়া ছবির ডায়লগ কম মারো।”
“সে নাহয় কম মারলাম।কে তোমাকে বিয়ে করে দেখে নিবো”
বর্ণ দেখলো অন্বেষার হিংসেমীতে ভরা মুখমণ্ডল।রেগে আগুন হয়ে উঠছে।ঠোঁট কামড়ে হাসলো বর্ণ।এইতো সুযোগ আরো যন্ত্রণা দেওয়ার। আয়েশী ভঙ্গিতে বলে উঠে,
“আমি মিষ্টি জাতীয় প্রাণী আমারে দেখলেই মাছিরা ফিট হইয়া যায় বুঝলা।এসব তিন চারটা বিয়া আমার বায়ে হাতের খেল।”
“কেন?পানির বদলে চিনির শিরায় ডুব দাও নাকি?
“ঐটার দরকার পড়ে না।”
“ঠিক আছে।তবে এটাও মনে রেখো আমি মাছি না লাল পিপড়া।কামড়ে মাংস তুলে ফেলবো”
বর্ণ ভুল অর্থ বের করলো অন্বেষার কথার।সামান্য ঝুঁকে এসে সন্দিহান তেরছা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
“নেস্টি!”
অন্বেষা বর্ণের মাথার বালিশ টেনে নিলো নিজের দিকে।তাকে জ্বালানোর দায়ে একদিন বালিশ ছাড়া ঘুমোলে তেমন কোনো ক্ষতি হবেনা।বর্ণ অন্বেষার পরিকল্পনাকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে অন্বেষার হাতের উপরে আরামে মাথা রাখলো।পাতলা পুরোনো কম্বলে পেঁচিয়ে ধরে বললো,
“বালিশের চেয়ে তোমার হাত নরম।এটা আজকা থিকা আমার পার্মানেন্ট বালিশ”
“ঘেষাঘেষি করবে না বলে দিচ্ছি!দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার।”
“না সোনা স্বামীরে এভাবে দূরে সরায় দিলে পাপ হইবো।দেখো আমি কত সোহাগে তোমারে জড়ায় ধইরা আছি।”
অন্বেষা রেগে বলে উঠে,
“গন্ধ তোমার শরীরে।দুর হও!”
বর্ণ মাথা দোলায়।আরো শক্ত করে জাপ্টে ধরে বলে উঠে,
“সোয়ামির গায়ের দুর্গন্ধও ফুলের সুবাসের মতো।এমন করতে নাই পাখি।”
চেপে ধরে আছে অন্বেষাকে।সুযোগ পেলে একদম হাতছাড়া করেনা।শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে অন্বেষার।হাত পা চালিয়েও কোনো লাভ হলো না।পুরুষালি শক্তির কাছে পেরে উঠা দায়।তাছাড়াও ভীষণ দুর্বল;ক্লান্ত দেহ।কোনো রকমে।মিনিট দশেক পর অন্বেষা বললো,
“যেদিন আমায় ভালোবাসবে?সেদিন থেকে সারাদিন জড়িয়ে ধরে রাখলেও আমি কিছু বলবো না। এখন এসব ঢং বাদ দিয়ে খাবার গরম করে খেয়ে নাও।দোহাই লাগে!”
বর্ণ স্তব্ধ হলো অজান্তে।অন্বেষার রাগে ভরা কপোল কৃষ্ণচূড়ার পুষ্পিত শিখার ন্যায়।দৃষ্টিতে যেন দাবানলের প্রজ্জ্বলন।স্থির গোলাকৃতির বিশাল চোখে শাসিয়ে যাচ্ছে বর্ণকে।বর্ণর হাতদ্বয় দৃঢ়ভাবে চেপে আছে তাকে।তার গভীর চোখে ধরা পড়েছে নিগূঢ়তা।হঠাৎ দেহখান সমস্ত বল ছেড়ে দিলো কেনো?রাগান্বিত মুখের অভিব্যক্তি দেখে কেউ কিভাবে নীরব থাকতে পারে? এ কেমন অনির্বচনীয় বন্ধন যা তাদের মধ্যে বিরাজমান?কিছুটা অগোছালো,অনেকটা গুরুত্বহীন।মহাসাগরের অতল গহ্বর,নির্বিচার ঝড়ের প্রলয়।অন্বেষাকে কিংকর্তব্য বিমূঢ় করে দিয়ে ঝড়ের অন্বেষার গালে অধর ছুঁয়ে দেয়।অন্তরের নিত্যনতুন ঢেউ আড়াল করতে নিজের চিরচেনা ভঙ্গিতে ফিরে এলো বর্ণ।অন্বেষার মাথায় হাত চাপড়ে দিয়ে বলতে লাগলো,
“চুম্মা দিছি।এবার মাথাটা ঠান্ডা করো। দেহো ধোঁয়া বাইর হইতাছে।চুল পুইড়া টেকো বউ হইলে কিন্তু ঘেঁটি চিপ দিয়া ঘর থিকা বাইর কইরা দিমু”
চলবে……
#উন্মুক্ত_লাইব্রেরী
লেখা – আয্যাহ সূচনা
২৪.
“নারী তার স্পর্শ সহ্য করতে পারে যে তাকে ভালোবাসে।ভালোবাসা বিহীন যেকোনো স্পর্শ নারী হৃদয়ে কাটার মতো বিধে……”
বলতে বলতে থেমে গেলো অন্বেষা।অনেক বেশি বলে ফেলতে চলেছিলো। কোন স্থিতি? কোন অবস্থানে?এবং কার সম্মুখে কি বলছে মস্তিষ্কে সেটি ধরা দিতে বাঁধ সাধছে।হুট করে এরূপ প্রতিক্রিয়াতে বর্ণের পাশাপাশি অন্বেষা নিজে বিমূর্ত হয়ে দাঁড়ালো।অনিমেষ চেয়ে বর্ণ হিম শীতল কণ্ঠে বলে,
“আমিতো তোমার লগে শয়তানি করতাছিলাম….আর..আমি ভাবলাম তোমারে ছোঁয়ার অধিকার আমার আছে…. এতটুক বিষয়ে কান্দাকাটি করা লাগবো কেন আজব?”
বর্ণের এরূপ সরল অভিব্যক্তি আর কন্ঠ অন্তরে গিয়ে বিধলো।সাথে তার প্রতিক্রিয়া দিতে ব্যর্থ মুখমণ্ডল।অবুঝের ন্যায় এলোমেলো দৃষ্টি ফেলা এই বর্ণ নতুন।বোধহয় লজ্জাবোধ করছে।বুকে কম্পন ধরে অন্বেষার বর্ণের চেহারার দিকে তাকিয়ে।উপলব্ধিবোধটা বর্ণকে বাক্যদ্বয় বলার পূর্বে ভাবা উচিৎ ছিলো।নিজেকে ঠাটিয়ে দুটো চড় দিলেও বোধহয়।
অপরাধবোধে দগ্ধ হয়ে বর্ণের দিকে এগিয়ে যায় অন্বেষা।তার রুক্ষ হাতজোড়া আঁকড়ে ধরতেও দ্বিধা।সে নিজেইতো বর্ণকে সামান্য একটু স্পর্শের কারণে সরিয়ে দিয়েছিল। জানতো সে,অধিকার আছে।বর্ণের স্বভাব সম্পর্কেও অজানা নয়।তাহলে কেনো মস্তিষ্ক কাজ করলো উল্টোপাল্টা?
বর্ণের দিকে চেয়ে বললো,
“কষ্ট পেয়েছো?…আমাকে ক্ষমা করে দাও।”
বর্ণ কোনো জবাব দেয়নি।অবোধ এর মত চেয়ে আছে অন্বেষার দিকে।অন্বেষা কাতর কন্ঠে আবার বলে উঠলো,
“তুমি যখন আমার গালে স্পর্শ করলে তখন আমার মনে হচ্ছিলো তুমিতো আমায় ভালবাসো না,তোমার কোনো অনুভূতি নেই।তাহলে?……মাথাটা টগবগ করে উঠেছিল বর্ণ।…..আমি…আমি ক্ষমা চাইছি!হাত জোড় করছি।মানুষের মধ্যে হুট করে এমন কিছু চিন্তা চলে আসে যা আমাদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না।তখনই ভুলটা হয়।…..আমিও কেমন নির্বোধ!আমি জানি….”
“তুমি কি আমারে ভালোবাসো?”
অনবরত নিজের ভাবনাকে ব্যাখ্যা করতে থাকা অন্বেষাকে থামিয়ে প্রশ্ন করে বসে বর্ণ। অন্বেষা ক্ষণিকের জন্য থমকে যায়।কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে। চোখ খিঁচে বন্ধ করে লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে বর্ণকে জড়িয়ে ধরলো। মুহূর্তের মধ্যে বর্ণের অভ্যন্তরে চাপা পড়ে থাকা হৃদয়ে তোলপাড় শুরু হয়।ঝংকার তুলে বাড়তে শুরু করে অস্থিরতা। অন্বেষা অপরিষ্কার কণ্ঠে জবাব দেয়,
“বাসছি…বাসতে শুরু করেছি…ধীরে ধীরে তোমাকে বুঝতে চাইছি।আমাদের মাঝে অনেককিছু অগোছালো।গুছিয়ে নিবো সময়ের সাথে সাথে।বীজ বপনের সাথে সাথে ফলের আশা করা যায়?ধীরেধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে।”
বিনিময়ে বর্ণের বুক ভরা দীর্ঘশ্বাস পেলো অন্বেষা।তবে মুখ ফুটে কোনো জবাব আসেনি। অন্বেষা আবার বলে উঠে,
“তুমি আমাকে ভালোবাসবে বর্ণ?”
“আমি অনুভূতিহীন…”
“ভুল!”
“সত্য”
“আমার জন্য আলাদাভাবে অনুভূতির জায়গা তৈরি করা যায় না?”
“ভাইবা দেখমু…”
“হতে হবে”
বর্ণ অন্বেষার কাছ থেকে সরে আসে।হাত ধরে টেনে এনে চুলোর সামনে বসিয়ে দিলো।পরপর নিজের কোমরে হাত রেখে তার পুরোনো ভঙ্গিতে বললো,
“পিরিতের চেয়ে বড় পেট।তোমার পিরিতে পেট ভরে নাই। ক্ষিদা লাগছে ভাত দাও কালনাগিনী”
অন্বেষা কিছু সময় চেয়ে রইলো বর্ণের দিকে।নিজেকে কাবু করে ফেলতে জানে বোধহয়।ক্ষণিক সময় পূর্বের সবটাই আড়াল করে নতুনত্ব এনে ফেলে।সে কি পালিয়ে বেড়ায়?নাকি ভনিতা করে? অন্বেষা স্পষ্ট দেখেছে বর্ণের সেই ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া ভার মুখ।
অন্বেষা ক্লান্তি উধাও।দ্রুত খাবার গরম করলো।নতুন প্লেটে সুন্দর করে খাবার সাজিয়ে রাখলো বর্ণের সামনে।উঠে চলে যেতে চাইলে বর্ণ বলে উঠে,
“খাওয়ায় দাও”
এরূপ আবদারে ঘুরে তাকালো অন্বেষা।শীতল মুখে আকস্মিক শয়তানি হাসি ফুটায় বর্ণ।বলে,
“এটা তোমার শাস্তি!আমার লগে ঘাউরামি করার শাস্তি।আজকে থিকা তিনবেলা খাওয়ায় দিবা আমারে।”
অন্বেষা হাসি মুখে এগিয়ে আসলো।এতে করে যদি তাদের সম্পর্কের জোট মজবুত হয়।একদিন সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে উঠবে তাদের মধ্যে এই প্রত্যাশাটাও জন্মেছে আজকাল।বর্ণের মুখে খাবার তুলে দিলো নিজ হাতে।ছোট বাচ্চাদের ন্যায় মুখভর্তি করে খাচ্ছে।
অস্পষ্ট গলায় বললো,
“তোমার লগে থাকার একটা জিনিস ভালো হইছে মজায় মজায় খাইতে পারতাছি।নইলে চানখাঁরপুল মোড়ের খাওয়ন এত বিশ্রী!ছিঃ! ডাইলরে পানি মনে হইতো।আর সবজির নামে খালি আলু।”
অন্বেষা বললো,
“তাহলে বলতে চাইছো আমার হাতের খাবার ভালো?”
বর্ণ কপাল কুঁচকে ফেলে। সরাসরি প্রশংসা তার সাথে যাচ্ছে না। ইনিয়ে বিনিয়ে বললো,
“আছে মোটামুটি।চলার মতো…”
অন্বেষা হাসলো।বললো,
“আমিও শুরুর কিছু বছর এসব খাবার খেয়েই পাড় করেছি।তারপর মনে বল এলো।এখন এই জীবনটা আমার।আমার একার।আমি আমার সেই প্রত্যেকটা ইচ্ছা পূরণ করবো।দিনরাত পরিশ্রম করতে হলে করবো।যেনো আমার এতটুকু সামর্থ্য থাকে আমি যখন যেটা খেতে চাই খেতে পারি।”
বর্ণ নত সুরে জবাব দিলো, “হুম…”
অন্বেষা বর্ণের মুখে ভাতের শেষ লোকমা পুরে দিয়ে বললো,
“আচ্ছা বর্ণ তোমার কোন খাবার সবচেয়ে বেশি পছন্দ বলোতো?”
পছন্দের খাবারের কথা শুনে বর্ণ ঢেঁকুর তুলে বললো,
“গরুর কালা ভুনা আর ঝাল ঝাল ভুনা খিচুড়ি। আহা!কত্ত বছর আগে খাইছি….পুরাই অমৃত।”
“সত্যিই?”
“তো কি মজা করমু তোমার লগে…..ধুর ছেমড়ি দিলাতো লোভ লাগায়া।বাদ দাও আমি এই শুক্রবারে একটা বিয়েবাড়িতে ঢু মাইরা আমু।”
অন্বেষা শাসিয়ে বলে উঠে,
“একদম না!এসব কাজ করবে না।আমি তোমার জন্য শুক্রবারে রান্না করবো।”
বর্ণ তীর্যক দৃষ্টিতে চায় অন্বেষার দিকে।পরপর তার ওড়না টেনে মুখ মুছে দিলো।মাথার পেছনে হাত রেখে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বললো,
“তোমার আব্বায় মনে হয় যাওয়ার আগে ট্যাকার গাছ লাগায় গেছিলো। পাড়বা আর খাইবা না?”
“সেসব নিয়ে আপনার ভাবার দরকার নেই জনাব।আপনি আরাম করে খাবেন আপনার কাজ এতটুকুই।”
বর্ণের অধরের এক কোণে ম্লান হাসি। অন্বেষার অদেখা হাসি।যার অর্থ বর্ণ নিজে নিজেই অনুধাবন করতে পারছে।এক ভিন্ন অনুভব তাড়না দিয়ে উঠলো।তার পেছনে খরচ করা অন্বেষার সময়,তার প্রয়াস।তার সাথে সাথে নিজেকেও সুখে রাখার।
অন্বেষা বারান্দা থেকে কাপড় তুলতে ভুলে গিয়েছিল।কাপড় নামিয়ে হাতের আঙুলে হিসেব করতে লাগলো।শুক্রবারে স্পেশাল রান্নার জন্য কত টাকা খরচ হবে।গণনার মাঝেও অনুভব করলো কেউ তার পেছনে দাঁড়িয়ে।ঘুরে তাকালো তাড়াতাড়ি।ছোট স্থান।হাত ভাঁজ করে দেয়ালের সাথে বর্ণকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চমকে উঠে।বর্ণ আকস্মিক গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করে উঠলো,
“তুমি তোমার জীবনে কি চাও?”
জবাব দেওয়ার পূর্বে বর্ণের মুখপানে চোখ যায়।তারার ন্যায় জ্বলজ্বল করতে থাকা দুচোখ বলছে ভিন্ন ভাষা।সর্বদা ছটফটে বর্ণের মাঝে আজ গভীর শান্তি।জবাব দিলো,
“বাবা মা তো চলে গেছেন।আমি সবসময় চাইতাম আমার জীবনসঙ্গীকে নিয়ে আমার এক অগাধ সুখের সংসার হবে।……আমি সুখে থাকতে চাই বর্ণ….আমার একান্ত ব্যক্তিগত মানুষটাকে নিয়ে।যার কাছে আমার হৃদয় থাকবে সম্পূর্ণ উন্মুক্ত”
বর্ণ বারান্দায় এগিয়ে এলো।হাত বসে পড়লো জমিনে।মেরুদণ্ড সোজা করে দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসেছে।মাথা তুলে অন্বেষার দিকে চেয়ে বলে,
“বও এদিকে।হাত টানলে কইবা ‘ ভালোবাসা ছাড়া স্পর্শ বেডি মানুষ সহ্য করতে পারেনা’।” শেষ কথাটি মুখ ভেঙিয়ে বললো বর্ণ।
অন্বেষা কাপড়গুলো রেলিংয়ে ঝুলিয়ে পাশে বসলো। বিনীত সুরে বললো,
“আর কখনও বলবো না ওসব।ভুল হয়েছে”
“থাক থাক!আর ঢং করা লাগবো না।”
অন্বেষা মাথা নুয়ে ফেলে।এই ভুলের ঘানি কতদিন টানতে হবে কে জানে?বর্ণ অন্বেষার চুপসে যাওয়া মুখ দেখে হেসে ফেলে।আড়চোখে দেখলো অন্বেষাও।
কিছুসময় নিশ্চুপ আকাশপানে তাকিয়ে রয়ে বর্ণ প্রশ্ন করে,
“চাইলে একটা রাঘব বোয়াল ধরতে পারতা।বিয়া শাদী কইরা রাজরানীর মতো দিন কাটাইতে পারতা।সুখ খুঁজতে আইলা তাও আবার ফকিরনীর ঘরে।যার তোমারে না খাওয়ান পিন্দানের ওকাদ আছে না ভালোবাসার মত মন।নিজের পায়ে নিজে কুড়াল তোমরা মাইয়ারা নিজেরাই মারো।পড়ে ভেটকায় কান্দো।”
অন্বেষা চরম অধিকারবোধ খাটিয়ে বর্ণের হাত তার দুহাতে পেঁচিয়ে ধরলো।কাঁধে মাথা রেখে বললো,
“এতো লোভ করতে নেই বাপু….আমার ভাগ্যে যেটা ছিলো আমি সেটা পেয়ে গেছি।”
“বেয়াহা মাইয়ালোকের মতো ঘেষাঘেষি করো কেন?”
“ওমা!তুমি বুঝি পর পুরুষ?”
বর্ণ কপাল কুঁচকে জবাব দিলো,
“ন্যাকা!এই ঢং কইরা কয় পেরেম ভালোবাসা ছাড়া কাছে আহন যায় না।আর এহন নিজেই গায়ে ঢুইলা পড়তাছে।তোমরা মাইয়ারা আসলেই দুই মুইখা সাপ।”
“আমার অধিকার আছে বুঝেছো।আমি তোমার মত জল্লাদ ব্যাটালোককে ভালোবাসার চেষ্টাতো করছি।তুমিতো সেটাও করছো না।তো আমার অধিকার খাটানো জায়েজ”
“তুমি একটা ডায়নী বুড়ি!রক্ত চোষা জোঁক”
অন্বেষা ঠোঁট টিপে হেসে উঠলো। পরক্ষণেই জবাব দেয়,
“উহু!বিষধর সাপ।ছোবল খেলে বাঁচবে না।তো সাবধানে থেকো।”
শীতকাল কড়া নাড়ছে দুয়ারে।প্রকৃতি নিঃস্তব্ধ। শীতল শিহরণ প্রতিটি নিঃশ্বাসে।নিসর্গে নিঃসীম শূন্যতা। নিশির হিমেল হাওয়ায় স্নায়ু নীরব।নীরব একজোড়া কায়া।মনে হলো উভয় প্রাণে বিরাজ করছে প্রশান্তি।নিঃস্তরঙ্গ বায়ুপ্রবাহে ছুঁয়ে কম্পিত করলো অঙ্গ কয়েকবার।লেপ্টে রইলো অন্বেষা।বর্ণের বাহুতে খুঁজছে উষ্ণতা।
“বর্ণ?”
“হুম?”
“শীত আসছে…”
“হুম”
“আমার ভীষণ প্রিয় ঋতু”
বর্ণ আকাশ আঁধারের ঘোরে নিমগ্ন।শুনছে,বুঝছে,জবাব দিচ্ছে।সম্পূর্ণ স্থবির দেহ, নিষ্ক্রিয়তা অঙ্গে অঙ্গে।কুড়েমিতে ভুগছে সে।জবাব দিতেই আলসেমি করলো।শুধু বললো,
“হুম”
“শীতে নতুন প্রেমের সূচনা হয় জানো?”
এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘাড় ঘুরায় অন্বেষার দিকে।কি আরাম!কি শান্তিতেই না মাথা এলিয়ে রেখেছে তার কাঁধে।হিংসে হলো বর্ণের।তারও চাই এই আরাম।হাত ছাড়িয়ে নিলো তৎক্ষনাৎ।ঝড়ের গতিতে অন্বেষার কোলে মাথা রাখে।জায়গা হচ্ছে না তার এই বিশাল দেহের এই দেড় ফুট এর মতো বারান্দায় তারপরও মানিয়ে নিলো।হাত পা গুটিয়ে শুয়ে বললো,
“চুল টাইনা দাও। ঘুম পাড়াও আমারে।”
বর্ণের এমন আবদারে মন অভ্যন্তর প্রফুল্ল হয়ে উঠে। স্বেচ্ছায় তার আবদারগুলো পূরণ করার জন্য উৎকণ্ঠা হয়ে উঠে। অন্বেষা ঝাঁকড়া চুল গভীরে হাত রাখলো। ধীর হাতে চুল টেনে দিতে থাকে।পনেরো মিনিটের মধ্যে বর্ণকে লক্ষ্য করে দেখলো ঠোঁট চেপে কাত হয়ে বিভোর তন্দ্রায়। পা ঝিমঝিম করছে।তবে সরে যাওয়ার উপায় নেই।
চুল থেকে হাত সরিয়ে সাহস সঞ্চয় করে অন্বেষা।ভয় হচ্ছে।তবে প্রবল ইচ্ছেরা উড়তে শুরু করলো।খুব সাবধানে হাত এগোলো বর্ণের ঘুমন্ত মুখে। বিড়বিড় করে বলে উঠে,
“তোমার মুখ কতটা মায়াময় জানো?অযথা কেনো মিথ্যে ভনিতা করো?”
বর্ণ ঘুমিয়ে।নয়তো এতক্ষণে উঠে অন্বেষাকে দু চারটে কথা শুনিয়ে দিতো। শিউর হয়ে নিলো অন্বেষা।সাহস দ্বিগুণ হয়।কপাল থেকে চুল সরিয়ে চট করে অধর ছুঁয়ে সরে গেলো।নিজের এমন কর্মকাণ্ডে লজ্জায় কুঁকড়ে যেতেও বেশি সময় নেয়নি।লাজে একাকী চোখ মুখ খিচে আছে।নিজেকে মনে মনে ‘ বেহায়া’ বলে শায়েস্তা করে।
নিঃশ্বাস ফেলে আবারও বর্ণের দিকে চায়।সত্যিই ঘুমিয়েতো?নাহয় তাকে এখানে টিকতে দিবে না।খোটা আর লজ্জা দিতে দিতে ঘরছাড়া করবে।
বর্ণ নড়েচড়ে উঠে।ঘুমের ভান ধরে থাকা বর্ণ মুখ নুয়ে অন্বেষার দৃষ্টির আড়ালে আলগোছে হাসলো।
_________
“কেমন আছো? তোমারেতো আজকাল দেহাই যায় না এই গলিতে। ঘর পাল্টাইছো নাকি?”
পুরোনো বাড়ির সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে জনির সঙ্গে দেখা।ছেলেটার মতলব আগেই বুঝেছে অন্বেষা।আজ মুখ কুচকে ফেললো।জবাব দিলো,
“সেটা কি আপনার জানার বিষয়?”
জনি ভ্যাবাচ্যাকা খেলো।জোরপূর্বক হেসে বললো,
“আরেহ রাগ করতাছো ক্যালা?আমিতো এমনেই জিগাইলাম”
“আমি রাগ করিনি” কাটকাট জবাব দেয় অন্বেষা।
জনি বলে উঠে,
“আমরা হইলাম এই এলাকার স্থানীয় বুঝলা।আমরা এলাকার মানুষের খোঁজ খবর রাখমু নাতো কেঠা রাখবো কও?তুমি নতুন এলাকায়।”
অন্বেষার অজান্তে তাকে চোখে চোখে রাখা বর্ণ ঘাড় বাঁকা দাঁড়িয়ে আছে চায়ের দোকানের পাশে।দেখছে দুজনকে।হাত বাড়িয়ে অনুমতি ছাড়াই দুটো সুপারি হাতে তুলে নিলো।সেগুলো মুখে পুরে চিবুতে শুরু করে।
অন্বেষা এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে জবাব দেয়,
“আমার স্বামীও এখানকার স্থানীয়।”
“আচ্ছা? কি নাম তোমার জামাইর?”
বর্ণ হন্তদন্ত পায়ে এগিয়ে আসে। ঘাড় কাত করে জনির মুখের কাছাকাছি এসে চেয়ে বললো,
“বর্ণ”
জনি কপাল কুঁচকে ফেললো।এতক্ষণ যাবত অন্বেষাকে দেখে যে ফুরফুরে মেজাজ ছিলো সেটি উধাও।বললো,
“কিহ!”
বর্ণ অন্বেষার পাশে দাঁড়িয়ে তার বাহু চেপে ধরে কাছে টেনে নেয়।হেসে বললো,
“ওর জামাইর নাম বর্ণ”
ভরা রাস্তায় এভাবে নিজের সাথে মিশিয়ে রাখায় লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছে অন্বেষা।আশপাশের মানুষ চেয়ে আছে।কেউ মিটিমিটি হাসতে শুরু করেছে ইতিমধ্যে। অন্বেষা নতজানু হয়ে রইলো।
জনি উত্তেজিত গলায় বলে উঠে,
“কুত্তার বাচ্চা তুই ওর জামাই?তোর মত কুলাঙ্গার।”
অন্বেষা ফট করে মাথা তুলে। রাগান্বিত স্বরে বলে উঠলো,
“মুখ সামলে কথা বলবেন।কে আপনি?রাস্তায় মেয়েদের পথ আটকে বিরক্ত করেন।”
জবাবে বর্ণ বলে,
“ওয় হইলো বাপের হেডামে চলা একটা ছিলা মুরগি।যার নিজের বাল গজায় না অন্যের বাল হাওলাত কইরা লইয়া চলে”
বর্ণ আর জনির মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখতে এলাকাবাসী একটু বেশীই উপভোগ করে।এবার সাথে মেয়েও আছে।আরো উৎসাহ নিয়ে তাদের আলোচনা শুনছে।বর্ণ আশপাশ চেয়ে দেখলো। অন্বেষাকে ছেড়ে সবার উদ্দেশ্যে বললো,
“দেখছেন নিহি কারবার? মোকলেস মাতবরের পোলা আমার লগে পারেনাই এহন আমার বউটার দিকে নজর দেয়। রাস্তাঘাটে পথ আটকায় রাখে।এই হইলো মহল্লার গন্যমান্য বেডার ঘরের আউলাদ”
সকলে কানাঘুষা শুরু করে।এবারে আঙ্গুল উঠেছে জনির উপরেই।রক্ত টগবগ করে উঠছে জনির। লাঞ্ছিত হচ্ছে।রাগে কাঁপতে লাগলো।বর্ণ এগিয়ে আসলো।জনিকে একপ্রকার ধাক্কা দিয়ে অন্বেষা থেকে দূরে সরিয়ে নেয়।জনির গাল একহাতে চেপে ধরে নিজের মুখোমুখি এনে চোয়াল শক্ত করে ধীর কণ্ঠে বললো,
“তুই প্রতিশোধ নিতে উথাল পাথাল করবি আমি জানি।কিন্তু আমার বউয়ের কোনো সম্মানহানী হইবো?কোনো তাফাল্লিং করবি? ওরে মোহরা বানায় চাল চালবি?কসম খোদার কলিজা টাইনা বাইর কইরা কুত্তারে খাওয়ায় দিমু। বাপের ব্যাটা হইলে আমার লগে গ্যাঞ্জামে সীমাবদ্ধ থাকিস।ওই ছেড়িরে আমগো মামলায় টানবি পরিণতি বহুত খারাপ হইবো”
ছুঁড়ে ফেলে দিলো জনিকে আবর্জনার ন্যায়।আরেকটু হলে দাঁতের মাড়ি ভেঙে যেতো।বর্ণ অন্বেষার হাত চেপে নিয়ে বেরিয়ে গেলো মহল্লা থেকে।রিকশা ডেকে উঠলো দুজনেই।এখনও ঘন নিঃশ্বাস ফেলছে বর্ণ।রক্ত গরম বোঝাই যাচ্ছে। অন্বেষা আর কোনো কথা বললো না।কিন্তু বর্ণ হুংকার ছেড়ে বলে উঠে,
“আর কতগুলি আশিক আছে তোমার?ওই ভোটকা,তারপর আবার এই জইন্না!লিস্ট দিও সবটিরে এক এক কইরা ডোজ দিমু নে।”
“আমি কি বলেছি ওদের আমার পিছু নিতে?”
“কওয়া লাগবো কেন?এই থোবড়াটা প্রদর্শন কইরা ঘুরলে সবাই পিছে লাগবো।”
“এখন কি করবো এই থোবড়ার জনাব বলে দিন আপনিই?একটা কাজ করি?প্লাস্টার করে ফেলি।তারপর মমি সেজে ঘুরবো ওকে?”
বর্ণ বাঁকা চোখে চাইলো একবার। অন্বেষা ভনিতা করে বোকা চোখে চেয়ে আছে।বর্ণ মুখ ঘুরিয়ে ফেললো। রাশভারী গলায় বললো,
“কি সাইজা ঘুরবা ঐটার ব্যবস্থা আমিই করমু।”
অন্বেষা ভেংচি কাটলো।বিড়বিড় করে বললো,
“যার আশিক হওয়ার দরকার তার খবর নেই। পাড়া পড়শীর ঘুম নেই”
_____
জীবনের সাথে নতুন চাকরির জন্য গিয়েছিলো বর্ণ।তারা বলেছেন জানাবেন।কোনো প্রকার আশা না রেখেই টিউশন শেষ করে দাঁড়িয়ে আছে ফুটপাতের এক দোকানের সামনে।পকেটে এক হাজার টাকা।কপালে ঘাম।অনেকটা পথ হেঁটে এসে হাঁপিয়ে উঠেছে। দর কষাকষি করে প্রয়োজনমত পণ্য কিনে বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করলো।
অপেক্ষায় পায়চারি করছে অন্বেষা। ফোন করেছে বর্ণের নাম্বারে অনেকবার।ফোন বন্ধ বলায় আরো চিন্তা হচ্ছে।নিচ তলায় যাওয়া বারণ।বারান্দায় ঘুরাফেরা করতে করতে দেখলো বর্ণ আসছে।হাতে শপিং ব্যাগ।সেটি আঙুলের সাহায্যে ঘুরাতে ঘুরাতে উপরে অন্বেষার দিকে চাইলো।পায়ের গতি বাড়িয়ে উপরে উঠে আসে।
অন্বেষা দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে সরাসরি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়,
“কোথায় ছিলে?ফোন বন্ধ কেনো?আমি কত টেনশনে ছিলাম জানো?”
বর্ণ নির্বাক।হাতের শপিং ব্যাগটা ছুঁড়ে দিলো অন্বেষার হাতে।হতভম্ব অন্বেষা প্রশ্ন করে,
“এটা কি?”
অর্ধ বিছানায় শুয়ে পড়লো বর্ণ। পা জোড়া নিচে ঝোলানো। খ্যাঁক খ্যাঁক করে বলে উঠলো,
“আল্লাহ দুইটা চোখ তো দিছে।দেখতে পারো না?”
অন্বেষা ব্যাগ থেকে বের করে দেখলো কালো রংয়ের একটি বোরকা।সাথে নেকাব আছে।ব্যাগ হাতড়ে আরো একটি ছোট্ট প্যাকেট খুঁজে পেলো।খুলে দেখলো সেটিও।একটি ছোট সাদা পাথরের কানের দুল।
অন্বেষা অবাক দৃষ্টিতে প্রশ্ন করে, “এগুলো আমার?”
বিরক্তির সুরে বর্ণ বলে উঠে, “না আমার।আমি পিন্দুম।”
বর্ণের কথার ধরনে হেসে ফেলে অন্বেষা। বোরকা দেখতে দেখতে পাশে এসে বসলো।প্রশ্ন করলো,
“টাকা কোথায় পেলে?”
“চুরি করছি”
“তাহলে তুমি বখাটে বাউন্ডুলের পাশাপাশি চোরও?”
“হ।খানদানি চোর!”
“আর এই কানের দুল?”
“ফ্রি দিছে বোরকার লগে”
অন্বেষা বর্ণের বুঁজে থাকা চোখের দিকে চাইলো।স্পষ্ট মিথ্যে বলছে।হেসে বললো,
“ভন্ড বর্ণ!সে সত্য আর অনুভূতি থেকে পালিয়ে বেরায়।পুরোটাই মিথ্যেবাদী,নকল”
চলবে….