উষ্ণ প্রেমের আলিঙ্গন পর্ব-৪৩+৪৪

0
4

#উষ্ণ_প্রেমের_আলিঙ্গন
#পর্ব৪৩
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

রুম জুরে আলো আঁধারের খেলা চলছে। বাহির থেকে আলো আসতে চাইলেও জানালায় পর্দা দেয়া থাকায় আলো প্রবেশ করতে পারছে না। দেওয়ালের সাথে চিপকে দাঁড়িয়ে আছি। সামনে অস্পষ্ট ভাবে এক পুরুষালি অবয়ব দেখা যাচ্ছে। তবে মানুষটা কে বুঝতে পারছি না। একটু আগে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে হটাৎ নিজের রুমে পুরুষালি অবয়ব দেখে দেওয়ালের সাথে সেটে দাঁড়িয়ে আছি। আমি নিজেই রুম অন্ধকার করে রেখেছি। হলুদের হইহুল্লোড় করায় খানিকটা ক্লান্ত লাগছে। মেহেদীর অনুষ্ঠান যেহেতু রাতে সেহেতু একটু ঘুমিয়ে নেওয়া যাবে। অবয়টা একটু একটু করে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। মনের মাঝে ভয় হচ্ছে। এটা আবার ইভান ভাই নাতো? সে কি আমার গাঁয়ে কলঙ্ক দেওয়ার জন্য এখানে এসেছে? নাকি তার অন্য কোনো মতলব আছে? কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলাম,
“কে আপনি? এখানে আমার রুমে কেন এসেছেন? কি মতলব আপনার?”

অপর পাশ থেকে কোনো জবাব নেই। মানুষটা তখন আমার থেকে এক হাত দূরে। আমি যে চিৎকার দিবো বা কিছু করবো সেই খেয়াল আমার মাঝে নেই। বুকের মাঝে ধুপুক ধুপুক শব্দ হচ্ছে। ভয়ে এই বুঝি হৃদয়পিন্ড বেরিয়ে আসবে। মানুষটা যখন আমার একদম কাছাকাছি আমি তার উপস্থিতি অনুভব করতে পারছি তখনই চট করে চিনে ফেললাম মানুষটাকে। হুট্ করে ভয় ভীতি এক পাশে রেখে জড়িয়ে ধরলাম মানুষটাকে। সামনের মানুষটা হয়তো ভাবেনি আমি তাকে এভাবে জড়িয়ে ধরবো। সে হয়তো ভেবেছে আমি ভয়ে আরো সিটিয়ে যাবো। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলো,
“ভয় পাসনি? এতো সহজেই চিনে গেলি কি করে? মনে হয়নি অন্য কেউ হতে পারে?”

“তোমার কি মনে হয় আমি আমার নিজের একান্ত ব্যক্তিগত মানুষটাকে চিনবো না। আমার নামে লিখা মানুষটাকে চিনতে আমি ভুল করবো?”

“আমি না হয়ে যদি অন্য কেউ হতো?”

“তুমি থাকতে অন্য কেউ আমার আশেপাশে আসবে এটা অসম্ভব”

“এতটা বিশ্বাস?”

“অবশ্যই। সন্দেহ আছে?”

“একটুও না”

আদ্রকে সেভাবে জরিয়ে রেখেই জিজ্ঞেস করলাম,
“তা হটাৎ আমার রুমে কি করছো? তাও আবার এমন ভুতের মতো”

“বউকে দেখতে এলাম। বউ তো আমায় পাত্তাই দিচ্ছে না”

“এই একদম উল্টোপাল্টা বকবে না। সাহেব এসেছে সেই সকালে তার দেখা নেই আর উনি আসছে আমায় বলতে”

“আমি তো জানি আমার রৌদ্রময়ী অভিমানে গাল ফুলিয়ে বসে আছে তাই তার অভিমান ভাঙাতে চলে এলাম”

“কিভাবে ভাঙাবে তার অভিমান?”

আদ্র কথার পৃষ্ঠে কোনো কথা বললো না। পিছনে লুকানো হাত বাহির করে গালে ছুঁইয়ে দিলো। দুগালে ছুঁইয়ে নাকের ডগায় ও ছুঁয়ে দিলো। গালে শীতলতা অনুভব হচ্ছে। অতঃপর কিছুটা ঝুঁকে আমার গালের সাথে নিজের গাল ঘষে দিলো। আদ্রর খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি গালে লাগতেই কুকিয়ে উঠলাম। আমার দুই গালে নিজের গাল ঘষে দিলো। অতঃপর নাকের ডগায় নাক ছুঁইয়ে দিলো। আমি মানুষটার কার্যক্রম অনুভব করছি। তার স্পর্শ, তার ভালোবাসা সব কিছু। শরীর বেয়ে শিহরণ ছেয়ে যাচ্ছে। আদ্র শাড়ি আস্তরণ গলিয়ে উন্মুক্ত কোমরে হলুদ ছুঁইয়ে দিলো। উনার ছোঁয়ায় শিউরে উঠলাম। আদ্র কোমর জড়িয়ে আমায় নিজের কাছে টেনে নিয়ে ফিসফিসে কণ্ঠে সুধালো,
“রৌদ্রময়ীর অভিমান কি ভেঙেছে নাকি এখনো আছে?”

আমি উত্তর দিলাম না লজ্জায় মিশে রইলাম ওনার বুকে। কতক্ষন সময় নিয়ে নিজেকে সামলে বললাম,
“মাত্র ফ্রেশ হয়ে এলাম। এখন আমায় আবার হলুদের রাঙালে কেন?”

“আমার বউ আর আমিই তাকে হলুদ লাগাবো না সেটা কখনো হয়?”

“সবার সামনে লাগালেই পারতে”

“সবার সামনে এভাবে লাগালে লজ্জা তুই নিজেই পেতিস। আমার কোনো সমস্যা নেই। আমিতো জানি আমার রৌদ্রময়ী লাজুকলতা তাই সবার আড়ালে হলুদের রঙে রাঙিয়ে দিলাম”

“এখন আমায় আবার ফ্রেশ হতে হবে, ধুর ছাই ভালো লাগে না”

আদ্র ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বলল,
“চল আমি তোকে ফ্রেশ হতে হেল্প করি”

আদ্রর বুকে হাত রেখে থামিয়ে দিলাম।
“থাক হয়েছে তোমার হেল্প আমার লাগবে না। আমি নিজেই পারবো। তুমি এখন যাও আমি ঘুমাবো”

“এভাবে তাড়িয়ে দিচ্ছিস? মনে রাখিস পই পই করে হিসাব রাখবো অতঃপর সুদ সমেত তুলবো”

মুখ বাকিয়ে ভেংচি কাটলাম। আদ্র চলে গেল রুমের বাহিরে। আদ্র চলে যেতেই হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। এই মানুষটা আছে বলেই আমি এতটা রিলেক্স এ আছি। কিছুক্ষন আগের ঘটনা। ইভান ভাইকে আচমকা দেখে ঘাবড়ে গিয়েছি। তার অপর পাশে আদ্র আছে। ভীতু চোখে ইভান ভাইকে দেখছি তখন সবার অগোচরে আদ্রর আমার হাত নিজের হাতের মাঝে নিয়ে নিলো। চোখের দ্বারা আস্বস্ত করলো আমায়। আদ্রর হাত ধরার দৃশ্য সবার অগোচর হলেও ইভান ভাইয়ের অগোচর হলো না। তিনি ঠিকি বিষয়টা খেয়াল করলো।অতঃপর কেমন করে যেন হাসলেন। ইভা এসে বলল,
“ভাইয়া এতদিন পড় তোমার আমাদের কথা মনে পড়লো? বন্ধুর বাড়ি গিয়ে আমাদের তো একপ্রকার ভুলেই বসেছিলে। আজকে বনুর বিয়ে বলে হয়তো এলে নাহয় তো তোমার দেখাই পাওয়া যেত না”

ইভান ভাই বাঁকা হেসে বলল,
“রোদ সোনার বিয়ে আর আমি আসবো না সেটা কখনো হয়? আমায় যে আসতেই হতো। আমাদের ফ্যামিলির আদরের মেয়ের বিয়ে বলে কথা”

ইভান ভাইয়ের কথায় কেমন ভয় হলো। তিনি আবার কিছু করবেন না তো? আমি কিছুটা ভয় পেলেও আদ্রর আমায় আশ্বাস দিলো। কানে কানে ফিসফিস করে বলল,
“রৌদ্রময়ীর কোনো ভয় নেই। যতদিন এই আদ্র বেঁচে আছে ততদিন কেউ রৌদ্রময়ীর কিছু করতে পারবে না”

আদ্রর থেকে ভরসা পেয়ে নিজেকে হালকা লাগছে। সত্যিই এই মানুষটা যতদিন আছে ততদিন কেউ আমার কিছু করতে পারবে না। ভাবনা বাদ দিয়ে একসেট কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ধুকে পড়লাম। এখন ফ্রেশ হলে হবে না একবারে শাওয়ার নিতে হবে।

ঘুমিয়ে আছি এমন সময় কারো ডাক কানে ভেসে আসছে। কিন্তু আমার উঠতে ইচ্ছে করছে না। কোলবালিশ জড়িয়ে উল্টোদিকে ঘুরে শুলাম। কিন্তু মানুষটা থামলে তো? তার একমাত্র লক্ষ্য আমায় ঘুম থেকে তোলা। হলুদের হইহুল্লোড় করায় ক্লান্ত লাগছে। ঘুম ভেঙ্গে চোখ মেলে তাকাতে ইচ্ছে করছে না। অপাশের মানুষটা থামলে তো? অনবরত ডেকেই চলেছে।
“রোদ, এই রোদ। উঠনা বোন। দেখ সন্ধ্যা হয়ে গেছে। মেহেদী পড়তে বসবি কখন? তুই না ব্রাইড? তোর দুহাতে মেহেদী পড়তে অনেক সময় লাগবে তো, উঠনা?

আমি উঠলে তো? ঈশিতা আপু এবার হতাশ কণ্ঠে বলে উঠলো,
“তোর জন্য এই লাইনটা ঠিক আছে ‘যার বিয়ে তার হুস নাই, পাড়া পড়শীর ঘুম নাই’। তোকে দেখে সেটাই মনে হচ্ছে। তাড়াতাড়ি উঠ”

ঈশিতা আপুর অত্যাচারে টিকতে না পেরে উঠে বসলাম। ঘুমানোর সময় ডিসটার্ব জিনিসটা আমার মোটেও পছন্দ না। চোখ মুখ কুঁচকে বললাম,
“তোমাদের জ্বালায় কি একটু শান্তিতে ঘুমাতেও পারবো না? আগে যদি জানতাম বিয়ে করতে গেলে এতো প্যারা সহ্য করতে হয় তাহলে আমি বিয়েই করতাম না। পালিয়ে গিয়ে কাজী অফিসে কবুল বলে চলে আসতাম এটাই ভালো ছিলো। এই জ্বালা প্রাণে সয় না”

দুঃখ কষ্ট ঝাড়তে ঝাড়তে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। ঈশিতা আপু আমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো ভাবেনি এমন রিয়েকশন দিবো। তাতে আমার কি? আমি তো আমি। ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে রেডি হতে বসালাম। এখন মেহেদী পড়া হবে সাথে ভাই বোনরা মিলে নাচ গান হবে এই আরকি। তার চেয়ে বড় কথা হলো সুন্দর সুন্দর ছবি তুলতে হবে। ঝটপট রেডি হয়ে নিলাম। গাঢ় সবুজ রঙের সারারা সাথে দুই হাত ভর্তি চুরি। মুখে অল্প বিস্তর সাজ। বাগানেই মেহেদীর আয়োজন করা হয়েছে। স্টেজে পারফরমেন্সের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশে আরেকটা স্টেজ করা হয়েছে আমাদের বসার জন্য। স্টেজের পাশেও বসার ব্যবস্থা আছে। বাগানে বসে অনেকেই মেহেদী পড়ছে। ঈশিতা আপু আমায় নিয়ে সবার মাঝে বসিয়ে দিলো। এখানে আপাতত কোনো ছেলে নেই। একপাশে গান বাজছে। আর যে যার মতো মেহেদী পড়ছে। আমি যেতেই মহল কেমন পাল্টে গেল। মুহূর্তের মাঝেই আগমন হলো ছেলেদের। আদ্র গানের সাথে এন্ট্রি নিলো। ওনার কাছে হিরো পুরো ফেইল। গাঢ় সবুজ রঙের পাঞ্জাবী, কালো পায়জামা। পাঞ্জাবীর হাতা কনুই পর্যন্ত গোটানো। ফর্সা হাতে কালো ঘড়ি। সব মিলিয়ে আদ্রকে অনেক সুন্দর লাগছে। সবচেয়ে বড় কথা আদ্র ঠোঁটে ফুটে ওঠা হাসি দেখে আমি ফিদা। এই মানুষটাকে হাসলে এতো সুন্দর কেন লাগে? কারো নজর না লাগুক। আমি ভ্যাবলাকান্তের মতো আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি। এন্ট্রি শেষে আদ্র এসে আমার পাশে বসলো। পাশে বসা ইভাকে বলল,
“মেহেদীর ডালা টা দে তো”

ইভা মেহেদীর ডালা আদ্রর দিকে বাড়িয়ে দিলো। আদ্র সেখান থেকে একটা মেহেদীর টিউব তুলে নিয়ে আমায় বলল,
“হাত দে”

ইভা জিজ্ঞেস করলো,
“মেহেদী দিয়ে তুমি কি করবে?”

“আমার বউয়ের হাতে আমি মেহেদী পড়িয়ে দিবো”

“কি? তুমি মেহেদী পড়াতে পারো?”

আমি ইভাকে বলlলাম,
“কিছু না বলে দেখতে থাক। তাহলেই বুঝতে পারবি”

আদ্রর মনোযোগ দিয়ে হাতে ডিজাইন করছে। আশেপাশে অনেকেই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ইভা আর রোশনিও উপুড় হয়ে দেখছে। ওদের এভাবে দেখার ধরন দেখে মনে হচ্ছে আলাদিনের চেরাগ পাওয়া গেছে যেটা ওরা এতো মনোযোগ দিয়ে দেখছে। আদ্র খানিকটা ডিজাইন করতেই ইভা চেঁচিয়ে বলল,
“আদ্র ভাই তুমি তো হেব্বি সুন্দর মেহেদী দিতে পারো”

আমি একটু ভাব নিয়ে বললাম,
“দেখতে হবে জামাই টা কার”

আদ্র একহাতের তালুর অংশে মেহেদী পড়িয়ে দিচ্ছে। আর অন্য হাতে মেহেদী আর্টিস্ট আপু মেহেদী পড়িয়ে দিচ্ছে। আশেপাশে সবাই বসে মেহেদী পড়ছে সাথে গল্প করছে। উৎসব মুখর পরিবেশ যাকে বলে। হটাৎ ইভা আমার দিকে তাকিয়ে চোখ ছোটো ছোটো করে প্ৰশ্ন করলো,
“আদ্র ভাই যে এতো সুন্দর মেহেদী দিতে পারে সেটা তুই জানলি কি করে?”

জিভ কাটলাম। ইসস, ধরা পড়ে গেলাম। এখন ইভাকে কি করে বলবো ঈশিতা আপুর বিয়ের সময় আদ্র আমায় মেহেদী পড়িয়ে দিয়েছিলো। একটু ভেবে নিজেই নিজেকে সাহস দিলাম আমারই তো বর এখন তো বলা যেতেই পারে।
“ঈশিতা আপুর বিয়েতে আমার হাতের মেহেদী দেখেছিলি না?”

“হ্যাঁ”

“ওটা ওনারই দিয়ে দেওয়া”

ইভা অবাক চোখে চেয়ে আছে আমার দিকে। আমি ওরা চাওনি কে ইগনোর করে আদ্রর মেহেদী দেওয়া দেখায় মনোযোগী হলাম। একটু পরেই শুরু হলো আমাদের কাজিন মহলের ডান্স পারফরমেন্স। আমাদের বাড়িতে বিয়ে মানেই আমাদের কাজিনদের একটা গানে গ্রূপ পারফরমেন্স থাকবে। এবারও সেটার ব্যতিক্রম না। গান সিলেক্ট করা হয়েছে “মেহেন্দি লাগাকে রাখনা”। আমরা মেয়েরা একপাশে ছেলেরা একপাশে। মেয়েদের মধ্যে আমি, ইভা, রোশনি, আরু, ভাবি, ঈশিতা আপু, তিথি আপু। ছেলেদের মধ্যে আদ্র, অভ্র ভাই, রোশন, শিহাব ভাইয়া, শুভ ভাই, রূদ্র ভাই আর ইয়াদ ভাই। শুভ ভাই প্রথমে রাজি নাহলেও তিথি আপুর চোখে রাঙানো দেখে রাজি হয়ে গেছে। এই জনই হয়তো বলে ‘পুরুষ তার শখের নারীকে যেমন ভালোবাসে তেমন ভয় পায়’। রিসাব আর ইফাজ ভাইয়া পার্টিসিপেট করবে না। ওরা একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমাদের পারফরমেন্স দেখছে ডান্স শেষে হাপিয়ে গিয়েছি। আবার মেহেদী পড়তে বসে পড়লাম। এখনো অনেকটা মেহেদী পড়া বাকি। এখন কাপল ডান্স চলছে। ঈশিতা আপু আর শিহাব ভাইয়ার ডান্স শেষে এবার পালা ইভা আর ইয়াদ ভাইয়ের। ওরা দুজন নাচ কম ঝগড়া বেশি করছে মনে হচ্ছে। ইভা আর ইয়াদ ভাইয়ের নাচ দেখে হাসতে হাসতে আমাদের অবস্থা কাহিল। ছোটো বেলা থেকেই ওদের বন্ডিং এমনি। সাপ আর বেজির মতো একজন আরেক জনের পিছনে লেগে থাকে। ইয়াদ ভাইয়া বাড়িতে আসলে দেখা যায় দুজনের মা*রা*মারি। এদিকে আমার মেহেদী পড়া শেষ। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে মেহেদীর ডিজাইন দেখছি। হাতের তালু সম্পূর্ণ টা জুড়ে আছে একটা নামের বিচরণ। মেহেদীর ডিজাইনের সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা তার নাম।
“আদীব চৌধুরী আদ্র”

#চলবে?

#উষ্ণ_প্রেমের_আলিঙ্গন
#পর্ব৪৪
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

রজনীতে অমানিশা ছেয়ে আছে চতুর্দিকে। আঁধার কে বিদায় দিয়েছে রঙ বেরঙের আলোর মেলা। পুরো এলাকা সহ আমাদের পুরো বাড়ি আলোয় সেজেছে নতুন রুপে। বাড়িটার সৌন্দর্য যেন উপচে পড়ছে। ফেইরি লাইটের আলোয় আলোকিত পুরো এলাকা। দেখতেই বড্ড সুন্দর লাগছে। ইভা আর ইয়াদ ভাইয়ের ঝগড়া নামক ডান্স শেষে হতেই সবাই আমাকে আর আদ্রকে পাকড়াও করলো। আমাদের নাকি কাপল ডান্স করতে হবে। আমি বার বার মানা করলেও ঈশিতা আপু সেই সুযোগ দিলো না।দুজনকে ধরে বেঁধে স্টেজে উঠিয়ে দিলো। অতঃপর আমাদের রেখে সবাই চলে গেল। হুট্ করে আশেপাশের সকল লাইট অফ করে দেওয়া হলো। হুট্ করে লাইট অফ হয়ে যাওয়ায় ভয় পেয়ে আঁকড়ে ধরলাম আদ্রকে। আদ্রও আমায় আগলে নিলো নিজের সাথে। মুহূর্তেই আমাদের ওপর পড়লো ফোকাস লাইট। বক্সে গান বেজে উঠলো,

“Kehte hain Khuda ne is
Jahaan mein Sabhi ke liye
kisi na kisi ko hai banaaya har kisi ke liye Tera milna hai uss rab ka ishaara Maano mujhko banaya tere jaise hi kisi ke liye”

সফট মিউজিকের তালে তালে দুজন পারফর্ম করছি। সময়ের ব্যবধানে পরিবেশটা কেমন বদলে গেল। সবাই চুপ মেরে গেছে। এতক্ষন হইহুল্লোড়, শব্দ, চেঁচামেচি থাকলেও এখন পুরো বাগানের মহল নীরব। মনে হচ্ছে এখানে আমি আর আদ্র ছাড়া আর কেউ নেই। এটা আমাদের রাজত্ব। আমরা দুজন মজে গেছি আলাদা এক জগতে। এক ধ্যানে তাকিয়ে আছি আদ্রর ওই নেশালো চোখে। এই নেশায় ডুবেই আমার ধ্বংস নিশ্চত। এই ধ্বংসের হাত থেকে আমায় কেউ বাঁচতে পারবে না, কেউ না।

“Kuch toh hai tujh se raabta
Kuch toh hai tujh se raabta
Kaise hum jaane humein kya pata
Kuch toh hai tujh se raabta
Tu humsafar hai Phir kya fikar hai
Jeene ki wajah ye hi hai Marna isi ke liye

Kehte hain Khuda ne is jahaan mein Sabhi ke liye kisi na kisi ko hai banaaya har kisi ke liye”

গান কখন যে বন্ধ হয়ে গেছে সেদিকে দুজনের একজনেরও খেয়াল নেই। আমরা মজে রয়েছি একে ওপরের চোখের অতল গহীনে। চোখের চাওনিতে বিনিময় হচ্ছে হাজারো জমানো কথা, হাজারো ভালোবাসা। আশপাশ থেকে হাত তালি আর সিটি বাজানোর শব্দে ঘোর থেকে বেরিয়ে এলাম। একে ওপরের দিকে তাকিয়ে অপ্রস্তুত হেসে দিলাম। সবাই একসাথে বলে উঠলো,
“ফাটাফাটি, মাইন্ড ব্লোয়িং, অসাধারণ”

ঈশিতা আপু খোঁচা দিয়ে বলল,
“প্রথমে তো রাজিই হচ্ছিলি না আর এখন গান শেষ তবুও তোদের নাচ শেষ হচ্ছে না?”

ঈশিতা আপুর কথায় লজ্জা পেলাম। এতগুলো মানুষের সামনে আমি কিনা বেহায়ার মতো আদ্রর চোখে তাকিয়ে ছিলাম? লজ্জায় মাথা কাঁটা যাচ্ছে আমার। ঈশিতা আপু ফের বলে উঠলো,
“তবে একটা কথা গানের সাথে মিলে গেছে খোদা তোদের দুজনকে একে অপরের জন্যই বানিয়েছে। সেই জন্যই তো এতো ঝড় ঝপটা পেরিয়ে শেষমেষ দুজন এক হলি। ইউ বোথ আর মেড ফর ইচ আদার”

সত্যিই ভাগ্যবতী না হলে এই মানুষটা আমার জীবনের আসতো না। আর উনি না আসলে জীবনটা এতো সুন্দর, রঙিন হতো না। চোখ ঘুরিয়ে আশেপাশে তাকাতেই দৃষ্টি যেয়ে থামলো ইভান ভাইয়ের দিকে। তিনি বুকে হাত গুঁজে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তার তাকানোতে আক্রোশ নাকি অনুশোচনা কোনোটাই বোঝা যাচ্ছে না। কেমন শান্ত তার চাহনি। ভাবনায় এলো তখন যদি ইভান ভাই ওই বাজে আচরণ গুলো না করত, আমায় এভাবে ভেঙ্গে গুড়িয়ে না দিতো। তবে হয়তো আমি আদ্রকে কখনোই পেতাম না। আদ্রর আমার পাশে থাকা, আমায় আগলে রাখা, আগের সেই চঞ্চল রূপে ফিরিয়ে আনা এগুলো হতো না। আর না হতো এতো সুন্দর সুন্দর মুহূর্ত আর অনুভূতির সাথে পরিচয়। আদ্র পাগলের মতো ভালোবাসাটা আমার কাছে অপ্রকাশিতই রয়ে যেত। তবে আফসোস হচ্ছে প্রথমে ইভান ভাইকে না ভালোববেসে আদ্রকে বাসলে হয়তো আমায় এতো কিছু সহ্য করতে হতো বা। আমার জীবনটা আরো সুন্দর হতো। তবে ‘আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে’ এই জন্যই হয়তো এতকিছু। মাথায় একটা লাইন এলো,
“তাকে ভালোবাসো যে তোমাকে ভালোবাসে, তাকে নয় যাকে তুমি ভালোবাসো। যে তোমায় ভালোবাসে তাকে ভালোবাসলে সে তোমায় আগলে রাখবে, তার রানী করে রাখবে। আর তুমি যাকে ভালোবাসবে সে তোমার অবহেলায়, অপমানে রাখবে”

বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। এতো সুন্দর একটা দিনে এগুলো মনে না করলেই হয়। ইভান ভাইয়ের থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম। অতঃপর তাকালাম আদ্রর দিকে। মানুষটা ঠোঁটের কোণে লেগে আছে মিষ্টি হাসি। উনি হেসে হেসে বন্ধুদের সাথে গল্প করছে। আমিও ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম আড্ডায়। আড্ডা, গল্প, মজা, মস্তি সব মিলিয়ে কেটে গেল সময়টা। এবার সময় খেয়ে দেয়ে ঘুমাতে যাওয়ার। সবাই যে যার মতো উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেছে। ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে টেবিলে বসালাম। পুরো টেবিলে জুড়ে আমাদের কাজিন মহলের আনাগোনা। আমরা সবাই এক হলে যা হয় আরকি? আমরাই কথা বলে যাই অন্য কেও কথা বলার সুযোগও পায়না। এবারও তাই হলো। কাল কে কি করবে, কার কিছু কাজ, কে কিভাবে সাজবে এগুলো নিয়েই গসিপ হচ্ছে। খাওয়া দাওয়া শেষে রুমে চলে এলাম। ববিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছি। একটু পড়েই হুড়মুড় করে সব আমার রুমে ঢুকলো। ওদের হটাৎ আক্রমণে চমকে গেলাম।
“কি হলো? তোমরা সবাই আমার রুমে? কারণ কি?”

ইভা দাঁত কেলিয়ে বলল,
“এখন আমরা সবাই আড্ডা দিবো রাত জেগে”

ঈশিতা আপু বলল,
“সর তো, আমার ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমাবো। তোরা আমায় টেনে নিয়ে এলি কেন?”

ইভা মুখটা ভার করে বলল,
“কাল বনু আদ্র ভাইদের বাড়ি চলে যাবে, তুমি শশুর বাড়ি চলে যাবে, থাকবো আমি আর রোশনি। ভাবিও আম্মুদের সাথে থাকে। আমাদের গল্প করার মতো কেউ থাকবে না। আজকে চলো না একটু আড্ডা দেই সবাই মিলে”

ইভার কথায় মনটা খারাপ হয়ে গেল। সবাই কোনো কথা বললো না। যে যার মতো বিছানায়, সোফায়, ফ্লোরে বসে পড়লো। আড্ডার মাঝে ফোন ভাইব্রেট করে উঠলো। সবার আড়ালে ফোন চেক করতেই আদ্র সাহেবের ম্যাসেজ,
“ছাদের আয়। কথা আছে”

“আসতে পারবো না। সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছি”

“তুই আসবি নাকি আমি সবার সামনে যেয়ে কোলে তুলে নিয়ে আসবো”

বজ্জাত লোক একটা। এর জ্বালায় এখন আমি একটুও শান্তি পাবো না। এখন ওদের কিভাবে বলবো? আদ্রর কথা জানতে পারলে নিঃঘাত আমার লেগপুল করবে। এইদিকে এরা ঐদিকে বজ্জাত আদ্র মহাশয়। আমি কি করবো? চট করে মাথায় বুদ্ধি চলে এলো। হামি দিয়ে ঘুম ঘুম ভাব এনে বললাম,
“আমার না ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমিয়ে গেলাম। কাল আবার সকাল সকাল উঠতে হবে। তোমরা যাওয়ার আগে দরজা টেনে দিয়ে যেও”

এই বলে গা এলিয়ে দিলাম। ভাবি বলল,
“আমারও ঘুম পাচ্ছে। কাল অনেক কাজ। আমি ঘুমাতে গেলাম”

ভাবি চলে গেল। ঈশিতা আপু বলল,
“তোদের ভাইয়াও আমায় ডাকছে আমি গেলাম তোরা আড্ডা দে”

রয়ে গেছে ইভা এর রোশনি। ওরা থেকে আর কি করবে তাই ওরা দুজন চলে গেল। ওরা যেতেই উঠে বসলাম। আমার বুদ্ধি কাজে দিয়েছে। কিন্তু আদ্র এখন আমায় ছাদে কেন ডাকছে? খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই ওবাড়ি চলে গেছে। তাহলে। মহাশয় এলো কখন? কে জানে? গাঁয়ে ওড়না সুন্দর করে জড়িয়ে ছাদের যাওয়ার জন্য হাঁটা দিলাম।

ছাদের দরজার এসে থেমে গেলাম। ছাদের এক কোণে পুরুষালি অবয় দেখা যাচ্ছে। এগিয়ে গেলাম সামনের দিকে। পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই মানুষটা আমার দিকে ঘুরে তাকালো। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,
“হটাৎ এমন জরুরি তলব যে?”

আদ্র একটু ঝুঁকে গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
“প্রেম করতে ইচ্ছে করছিলো তাই”

“এই সামান্য কারণে কেউ এভাবে হুমকি দেয়?”

“তোর কাছে সামান্য হলেও আমার কাছে না। এইযে এখন সবার থেকে লুকিয়ে দুজন প্রেম করবো বিষয়টা আমার কাছে ইন্টারেস্টিং। কালকের পরে তোকে সব সময় চোখের সামনে দেখবো। সারাদিন চোখের সামনে ঘুরঘুর করবি। এখন যেমন তোর আমার মাঝের দূরত্ব আমায় পোড়ায় তখন পোড়াবে না। চাইলেই হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিতে পারবে তখন। এখনকার মতো সবার থেকে লুকিয়ে প্রেম করার ফিলিংস টা আসবে না”

“তাই নাকি প্রেমিক সাহেব?”

“জি মিসেস প্রেমিকা”

‘মিসেস প্রেমিকা’ সম্মোধন শুনে খিলখিল করে হেসে দিলাম। প্মিসেস তাও আবার প্রেমিকা? বেপারটা একটু অদ্ভুত শোনালো আমার কাছে। আদ্র তাকিয়ে আছে আমার মুখের দিকে। উনার চোখে একরাশ মুগ্ধতা। দুজনে যেয়ে বসালাম দোলনায়। শুরু হয়ে গেল আমাদের গল্প। গল্প করতে করতে কখন যে সময় পেরিয়ে গেছে সে খেয়াল দুজনের একজনেরও নেই। আমরা মত্ত গল্পে। ঘড়ির কাঁটা তখন ১টা পেরিয়ে ২টার কাছাকাছি। খেয়াল হতেই আদ্রকে বললাম,
“তুমি বাড়ি যাবে না?”

“যেতে ইচ্ছে করছে না”

“এ আবার কেমন কথা?”

“ইচ্ছে করছে তোর কাছেই থেকে যাই”

“পা*গল হলে নাকি?”

“পা*গল তো আমি সেই কবেই হয়েছি তোর জন্য। এ আর নতুন কি?”

“বুঝেছি মাথা গেছে তোমার। এখন বাড়ি যাও”

আদ্র চোখে চোখ রেখে বলে উঠলো,
“রেখে দে না আমায় তোর আঙিনায়”

কেমন যেন শোনালো কথাটা। এটা কি আবদার? নাকি অসহায়ত্ত? কিছুই বুঝতে পারলাম না।
“তোমায় খুব যত্নে রেখে দিবো আমার মনের মনি কোঠায়”

আদ্র যেন একটু স্বস্তি পেল। একটু থেমে ফের বললাম,
“এখন বাড়ি যাও”

আদ্র হুট্ করে কাছে চলে আসলো। উনাকে এতটা কাছে দেখে ঘাবড়ে গেলাম। আদ্র কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠলো,
“আজ চলে যাচ্ছি, তবে কালকের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে রাখিস। কাল নো ছাড়ছাড়ি, অনলি ভালোবাসা”

আদ্র উঠে চলে গেল। আমি উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। আদ্রর কথার মানে বুঝতে পেরে ফাঁকা ঢোক গিললাম। বুকের মাঝে ধক করে উঠল। আর কিছু ভাবতে পারছি না লজ্জা লাগছে। রুমে এসে বিছানায় গড়াগড়ি করছি কিন্তু ঘুম আসছে না। আদ্রর বলা কথাটা বারবার কানের কাছে বেজে চলেছে।
——–

সূর্য উদিত হয়েছে পূর্ব আকাশে। নতুন দিনের সূচনা সাথে হতে চলেছে আমাদের নতুন জীবনের সূচনা। দিনটা পুরো অন্য রকম। বাড়ি ভর্তি মানুষ গিজগিজ করছে। আশেপাশে বাচ্চারা ছুটোছুটি করছে। সব মিলিয়ে জমজমাট বিয়ে বাড়ি যাকে বলে। বাচ্চাদের চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙ্গে গেল। আরমোড়া ভেঙ্গে উঠে বসলাম। ফ্রেশ হয়ে ব্যালকনি তে দাঁড়িয়ে আছি। আর কিছু মুহূর্তের অপেক্ষা অতঃপর এই বাড়ির মেয়ে থেকে অন্য বাড়ির বউ হয়ে যাবো। মানুষ গুলো চেনা হলেও অনুভূতিটা একদম ভিন্ন। এখন থেকে কতো দায়িত্ব আমার। বাগানের গাছ গুলোতে পানি দিলাম শেষ বারের মতো। আচ্ছা আমি চলে গেলে আমার গাছ গুলোর কি হবে? ওদের আমার মতো করে কে যত্ন করবে? আমার মতো ভালোবেসে ওদের খেয়াল কে রাখবো? বাগানের দিকে নজর যেতেই চোখে পড়লো আমার লাগানো গাছ গুলোর দিকে। বাগানের গাছ গুলো নিয়ে আমার তেমন চিন্তা নেই ওগুলো বড় আম্মু যত্ন নিবে। গোলাপ গাছ থেকে একটা ফুল তুলে কানের পিষ্ঠে গুঁজে নিলাম। ফুটে থাকা ফুল গুলো হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিলাম। বুক চিরে বেরিয়ে এলো দীর্ঘশ্বাস। রুমের দরজার নক করলো কেউ। ঈশিতা আপু গলা তুলে ডাকছে।
“রোদ উঠছিস?”

“হ্যাঁ”

“ভালো করেছিস। রুম থেকে বের হতে হবে না। আমি তোর খাবার দিয়ে যাবো”

মাথা নাড়িয়ে যায় জানালাম। মনটা ভালো নেই। মনের মাঝে উচ্ছাস থাকলেও কোথাও একটা চাপা কষ্ট হচ্ছে। কেমন চিনচিনে ব্যথা করছে বুকে। একটু পড়েই আপু খাবার নিয়ে এলো। খাবার গুলো দেখে খেতে ইচ্ছে করছে না । আপুকে বললাম,
“নিয়ে যাও আমি খাবো না”

“সেকি কেন?”

চোখে এসে অশ্রু ভর করলো। সব সময় টেবিলে বসে ভাই বোনরা মিলে কতো খুনসুটি করা হতো। আজকে একা খেতে ভালো লাগছে না। কিন্তু অপুকে সেটা বুঝতে দিলাম না।
“এমনি। তুমি খাবার টা নিয়ে যাও”

আপু হয়তো কিছু বুঝতে পেরেছে। কোনো কথা না বলে খাবার নিয়ে চলে গেল। রুমে মনমরা হয়ে বসে আছি। এমন সময় আগমন ঘটলো ইভা, রোশনি, রোশন, ইয়াদ ভাইয়া, শুভ ভাই, রূদ্র ভাই, ইফাজ ভাইয়া, অভ্র ভাই , ঈশিতা আপুর। সবার হাতে খাবারের প্লেট। ইভা আমায় শুনিয়ে শুনিয়ে বলল,
“আজকে নাকি বনু খাবে না। ও না খেলে আমরাও খাবো না”

সবাই প্লেট গুলো টেবিলের ওপর রেখে দিলো। একটু পর শুভ ভাই কাছে এসে বসলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“কি হয়েছে পাখি? খাবি না কেন?”

এবার আর অশ্রুরা বাধা মানলো না। টুপ্ করে অক্ষিকোল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো। শুভ ভাই আমায় নিজের বুকে জড়িয়ে বলল,
“কাঁদছিস কেন পাখি? কি হয়েছে ভাইয়াকে বল”

শুভ ভাইকে জড়িয়ে রেখেই বললাম,
“একা একা খেতে ইচ্ছে করছিলো না। কান্না পাচ্ছিলো। তোমাদের সাথে খুনসুটি করে না খেলে যে আমার মন, পেট কোনোটাই ভরে না”

শুভ ভাই চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলল,
“এই বেপার? এখন আমরা এসে গেছি তো? সবাই মিলে একসাথে খাবো। এই ঈশিতা খাবারের প্লেট টা দে তো। আজকে আমি পাখিকে খাইয়ে দিবো”

শেষের কথা গুলো ঈশিতা আপুকে উদ্দেশ্য করে বলল। ঈশিতা আপু প্লেট এগিয়ে দিলো। শুভ ভাই খাইয়ে দিচ্ছে আমায় আর আমি বসে বসে খাচ্ছি। মাঝে দিয়ে ইয়াদ ভাই বলে উঠলো,
“তুমি একাই খাওয়াবে নাকি? আমরাও খাইয়ে দিবো রোদ সোনাকে। আমাদেরও ভাগ আছে”

শুরু হয়ে গেল আমাদের খুনসুটি। সবাই মিলে আমায় খাইয়ে দিচ্ছে। মুখ খালি হওয়ার আগেই যে পারছে খাবার পুরে দিচ্ছে। এই হলো আমার কাজিন মহল। আমার ভালোবাসার জায়গা। এরকম ভাই-বোন পেয়ে আমি ধন্য। এভাবেই খুনসুটিতে আমাদের খাওয়া পর্ব চুকলো।

বউ সেজে বসে আছি। আমার রুমে বসেছে আড্ডা। কেউ এক মুহূর্তের জন্যও আমায় একা ছাড়েনি। একা থাকলে যদি আমি কান্না কাটি করি সেই ভয়ে ওরা আমার রুমেই আড্ডা জমিয়েছে। গল্প করছি এমন সময় নিচ থেকে ভেসে এলো,
“বর এসেছে, বর এসেছে”

সবাই উঠে দৌড়ে দিলো। রুমে শুধু আমি। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছি। হটাৎ দরজা আটকানোর শব্দ হলো। পিছন ঘুরে মানুষটাকে দেখে চমকে গেলাম। তিনি এখানে কি করছেনা? মানুষটা আমার দিকে এগিয়ে আসছে। ভয়ে বুকের মাঝে ধুপুক ধুপুক শব্দ হচ্ছে। মানুষটা ক্রোমাগত এগিয়েই আসছে। মৃদু কণ্ঠে বলে উঠলাম,
“আপনি এখানে কেন এসেছেন, ইভান ভাই?”

#চলবে?