উষ্ণ প্রেমের আলিঙ্গন পর্ব-৪৫+৪৬

0
171

#উষ্ণ_প্রেমের_আলিঙ্গন
#পর্ব৪৫
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

উৎসব মুখর পরিবেশ। সবাই ব্যাস্ত ভঙ্গিতে এদিকে ওদিক ছুটোছুটি করছে। বিয়ে বাড়ি বলে কথা ব্যস্ততার শেষ নেই। তার ওপর বরযাত্রী এসে পড়েছে। তাঁদের আপ্পায়নে সবাই ব্যস্ত। আমি বসে আছি আমার রুমে। পাশে বসে আছে ইভান ভাই। এতদিন এই মানুষটাকে ঘৃণা করলেও এখন তার প্রতি মায়া হচ্ছে। পাশেই রাখা তার ট্রলি। ইভান ভাইয়েরা দিকে তাকিয়ে একটু আগের ঘটনায় ফিরে গেলাম। ইভান ভাই একটু একটু করে এগিয়ে আসছিলো। তাকে আমার দিকে আসতে দেখে দিগ্বিদিগ্ শুন্য হয়ে গেলাম। ইভান ভাইকে দেখে ভয় হচ্ছে। তিনি কি আমার গাঁয়ে কলঙ্ক দিতে এসেছেন? আমার জন্য বড় আব্বু তার সাথে নারাজ, শুভ ভাই তার সাথে কথা বলে না, আদ্র ভাইয়েরা সেদিনের মারের বদলা কি তবে তিনি এভাবেই নিবেন? তার সকল আক্রোশ আমার ওপর। মৃদু স্বরে বললাম,
“আপনি এখানে কি করছেন ইভান ভাই? দূরে যান আপনি? আমার রুমে আপনি কেন এসেছেন?”

ইভান ভাই হয়তো আমার পরিস্থিতি টা বুঝলেন। শান্ত কণ্ঠে বললেন,
“উত্তেজিত হোস না। আমি তোর কোনো ক্ষতি করবো না, বিশ্বাস কর আমার। একটু আমার কথা গুলো শোন। একবার প্লিজ”

“আমি আপনার কোনো কথা শুনতে চাইনা। আপনি এখান থেকে যান প্লিজ”

“একটা বার আমার কথাটা শোন রোদপাখি। একটা বার প্লিজ”

“আপনার কানে যায়না কথা? আপনার কোনো কথা আমি শুনতে চাই না। আপনি চলে যান”

ইভান ভাই হতাশ কণ্ঠে বলল,
“এতটা ঘৃণা করিস আমায় রোদপাখি? ঘৃণার তিব্রতা এতটাই বেশি যে আমার কথাও শুনতে চাইছিস না?”

“এটাই কি স্বাভাবিক নয়? আপনি আমার সাথে কি কি করেছেন সব ভুলে গেলেন? আপনি ভুললেও আমি ভুলিনি”

“সেগুলো ভোলার মতোও না। শেষ বার আমার কথা গুলো শোন প্লিজ, এরপর আমি আর তোকে আমার মুখ দেখাবো না। প্রমিস”

ইভান ভাই মানুষটা যতই খারাপ হোক প্রমিস করে কখনো ভাঙবে না এটা শিওর। তার ওপর এতটুকু বিশ্বাস আমার আছে।
“ঠিক আছে আমি শুনবো আপনার কথা। কিন্তু আপনি বিছানায় আর আমি সোফায় বসব। আপনার থেকে আমার দূরত্ব থাকতে হবে। আর দরজাটা যেয়ে খুলে দিয়ে আসুন”

ইভান ভাই আমার কথা শুনে তাচ্ছিল্য হাসলেন। অতঃপর উঠে যেয়ে দরজার খুলে দিয়ে আসলেন। সস্থির নিশ্বাস ফেললাম। ইভান ভাই এসে বিছানায় বসলেন।
“এবার বলুন কি বলবেন?”

ইভান ভাই একটু সময় নিলেন। হয়তো কথা গুলো গোছাচ্ছিলেন। আমি তাকিয়ে আছি তার দিকে। হটাৎ সেদিনের কথা মনে পড়তেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে বলে উঠলাম,
“লাল শাড়িও পড়বো বউও সাজবো, তবে আপনার জন্য না এক শুদ্ধতম পুরুষের জন্য”

থেমে বিশ্ব জয় করা হাসি দিলাম। ফের বলাম,
“কথা গুলো মিললো তো, ইভান ভাই?”

ইভান ভাই আমার কথায় কেমন করে যেন হাসলেন। বড্ড করুণাময় সেই হাসি। দম নিয়ে বলা শুরু করলেন,
“জানিস রোদ পাখি আমিও না কাউকে ভালোবেসেছিলাম। বড্ড বেশিই ভালোবেসেছিলাম। এই বেশি ভালোবাসাটাই যেন আমার কাল হলো। কাউকে ভালোবাসা ঠিক তবে তাকে অন্ধ বিশ্বাস করা না। তোকে বলেছিলাম না আমি ইরাকে ভালোবাসি? ইরা মেয়ে টা আমার ভার্সিটির জুনিয়র ছিলো। আমি তাকে ভালোবেসেছিলাম তবে ও বাসে নি। ও আমায় ব্যবহার করেছে। ধোঁকা দিয়েছে আমায়। শুধু মাত্র ওর জন্য আমি তোকে আঘাত করেছি, তোকে সবার সমানে খারাপ বানাতে চেয়েছি, তোকে কষ্ট দিয়েছি। বাবা যখন আমায় তোকে বিয়ে করার কথা বলে তখন আমার মাথা কাজ করছিলো না। ওকে বিষয়টা জানালে ও বলে তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করতে তাহলে তুই আমার থেকে দূরে সরে যাবি। ওকে বিশ্বাস করতাম সাথে সেই সময় আমার মাথা কাজ করছিলো না বিধায় ওর কথা মতোই কাজ করছিলাম। এরপর যখন ওই দেশে ব্যাক করি। মাঝে কেটে যায় দুই দুইটা বছর । দিনদিন ও বদলাতে শুরু করে। ওর আশেপাশে ছেলেদের আনাগোনা বেড়ে যায়। অতঃপর একদিন আমাদের তুমুল ঝগড়া হয় সেদিন জানতে পারি ও শুধু আমায় ব্যবহার করেছে টাকার জন্য। সেদিন বিশ্বাস কর ভেঙ্গে গুড়িয়ে গেছি আমি। চুরমার হয়ে গিয়েছিলাম। যার জন্য তোকে কষ্ট দিলাম, বাবা-মায়ের থেকে আলাদা হলাম সেই আমায় ভালোবাসেনি। তোকে সামলানোর জন্য আদ্র থাকলেও আমার জন্য কেউ ছিলো না। তখন বারবার আমি তোর কষ্ট গুলো অনুভব করেছি। ফিল করেছি আমি তোকে কতটা আঘাত দিয়েছি। নিজেকে কিভাবে সামলেছি আমি জানি। তখন মনে হলো সব কিছুর জন্য তুই দায়ী। তোর বলা কথার জন্যই সে আমায় ছেড়ে গেছে। তোর অভিশাপ ফলেছে। তখন তোর ওপর রাগ জমেছিলো। ধীরে ধীরে বুঝতে পড়লাম তোর কোনো দোষ নেই। তারপর মনে হলো আমার আমিটাকে গোছানোর জন্য আমার জীবনে তোকে দরকার। বড্ড বেশি দরকার। তোকে ছাড়া আমার চলবে না। এরপর দেশে ফিরে তোর সাথে আদ্রর মেলামেশা আমার পছন্দ হচ্ছিলো না। তখন আমার তোকে চাই,চাই মানে চাই। পা*গল হয়ে গেছিলাম এক প্রকার। তোর কাছে ক্ষমা চেয়ে তোকে ফেরত চাইলাম। কিন্তু তুই আমায় ফিরিয়ে দিলি বারবার। এর মাঝে আমার
চোখের পড়লো আদ্রর প্রতি তোর ভালোবাসা গুলো। ওর এক্সিডেন্ট এ তোর করা পা*গলামো গুলো। সহ্য হচ্ছিলো না সেগুলো আমার। ততদিনে তুই আমার জেদ হয়ে গিয়েছিলি। প্ল্যান করলাম তোকে বিয়ে করবো। একবার বিয়ে হয়ে গেলে তুই ঠিক আমায় ভালোবাসবি। সেই মতে প্ল্যান ও করলাম। তবে… ”

বলে ইভান ভাই থেমে গেল। বিছানার পাশে রাখা গ্লাসের পানি ধক ধক করে খেয়ে নিলো এক নিমিষেই। আমি উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছি তার কথা শোনার জন্য। ইভান ভাই পুনরায় বলা শুরু করলেন,
“তবে জানিস সেদিন প্রথম বারের মতো অনুভব করলাম আদ্র তোকে কতটা ভালোবাসে। সেদিন চাইলে আমিও আদ্রকে আঘাত করতে পারতাম তবে করিনি। কেন জানিস? আদ্রর করা প্রথম আঘাতে আমি হতবাক, হতোভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। যেই ছেলে কখনো মা*রা*মারি, ঝামেলার কাছে যায়নি সেই ছেলে শুধু মাত্র তোকে ভালোবেসে আমায় আঘাত করছে। যার খুব কাছের বন্ধু ছিলাম আমি। সেদিন আমি এতটাই অবাক হয়েছিলাম যে ওকে আঘাত করার কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম। নীরবে ওর আঘাত সহ্য করে গিয়েছিলাম। ও আমায় আঘাত করলেও আমার প্রতি থাকা ওরা ভালোবাসা কমেনি। আমি হসপিটালে থাকা কালীন বেশ কয়েক বার দেখে এসেছে আমায়। তুই হয়তো এগুলো জানিস না। সুস্থ হওয়ার পড় বন্ধুর বাসায় ছিলাম এতদিন। কিন্তু তোদের এতো সুন্দর একটা দিনে না এসে পারলাম না। আমার রোদ পাখির বিয়ে বলে কথা। সত্যিই তুই অনেক ভাগ্যবতী। আদ্রর মতো জীবন সঙ্গী পেয়েছিস। পারলে আমায় ক্ষমা করে দিস। যদিও জানি আমি যেগুলো করছি তার ক্ষমা হয়না। তবুও যদি সম্ভব হয় আরকি”

কথা গুলো বলা ইভান ভাই হাসার চেষ্টা করলো। তবে তার মুখে যেন হাসি ফুটতেই চাইছিলো না জোর করে হাসলেন। আমি তখনো নীরব। চুপচাপ তার দিকে তাকিয়ে আছি।
“আচ্ছা রোদ পাখি তুই না সেদিন আমায় প্রশ্ন করেছিলি আমি কেন তোকে ভালোবাসিনি?”

আমি মাথা নাড়িয়ে সায় জানালাম। ইভাম ভাই হেসে বলল,
“আদ্র তোকে এতটা ভালোবেসে বলেই হয়তো আমি তোকে ভালোবাসিনি। আমি তোকে ভালোবাসলে যে ওর নির্ভেজাল ভালোবাসা তোর পাওয়াই হতো না”

ইভান ভাই উঠে গিয়ে জানলার ধারে দাঁড়ালেন। আকাশ পানে মুখ করে জিজ্ঞেস করলেন,
“আচ্ছা রোদ পাখি বলতো আমার কি দোষ ছিলো? ইরা কেন আমায় ভালোবাসেনি। নিজের সম্পূর্ণ সত্ত্বা এক করে ভালোবাসার পরও ও কেন আমায় ভালোবাসেনি? জানিস রোদ পাখি এই গল্পে সবচেয়ে অভাগা কে?”

আমি প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালাম। ইভান ভাই আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশাস ফেলে বলল,
“আমি”

একটু থেমে আবার বলা শুরু করলো,
“আমি ইরার ভালোবাসাও পাইনি, তোর ভালোবাসা পেয়েও হারিয়েছি। আমার মতো অভাগা হয়তো কেউ নেই। কিন্তু আমি হতাশ হবো না। আল্লাহ নিশ্চই আমার জন্য কাউকে না কাউকে রেখেছেন। তবে ইরা কেন আমায় ওভাবে ধোঁকা দিলো?”

“হয়তো আপনার ভাগ্যে ছিলো তাই”

ইভান ভাই জানালা থেকে সরে আসলেন। এসে বসলেন আমার পাশে। একটু আগে মানুষটাকে ভয় লাগলেও এখন তার প্রতি করুণা হচ্ছে। ইভান ভাই আমায় ভালো করে পরখ করে বলল,
“তোকে একদম বউ বউ লাগছে। লাল টুকটুকে বউ”

অতঃপর হুট্ করে এগিয়ে মাথায় ঠোঁট ছুঁইয়ে বললেন,
“সুখে থাকিস রোদপাখি। আদ্র তোকে অনেক ভালোবাসে। সারাজীবন আগলে রাখবে তোকে। তোকে বিন্দু মাত্র কষ্ট পেতে দিবে না। ভালো থাকিস”

ইভান ভাই উঠে যেতে নিলে খপ করে তার শার্ট এর কণা ধরে নিলাম। বাঁধা পেয়ে তিনি পিছু ফিরে চাইলেন। প্রশ্ন বোধক চাহনিতে তাকিয়ে আছেন।
“কোথায় যাচ্ছেন ইভান ভাই? ট্রলি নিয়েই বা এসেছেন কেন? আপনি কি আবার চলে যাবেন?”

ইভান ভাই পাশে বসলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
“হ্যাঁ, আমি চলে যাচ্ছি। তোদের বিয়েটা হয়ে গেলেই চলে যাবে। আরো আগেই চলে যেতাম তবে থেকে গিয়েছিলাম তোমাদের বিয়েটা দেখার জন্য”

“আপনি কি আমার জন্য চলে যাবেন?”

“বোকা মেয়ে তোর জন্য যাবো কেন? ওখানে আমার কাজ কর্ম সব কিছু। আমায় তো যেতেই হবে”

কোনো উত্তর দিলাম না। দুজন বসে আছি পাশাপাশি। তবে কারো মুখেই কোনো কথা নেই। এর মাঝে ইভা উচ্ছাস নিয়ে রুমে ঢুকলো। ওরা হাতে টাকার বান্ডেল। টাকা গুলো নাড়তে নাড়তে বলল,
“এই না হলে আদ্র ভাই, একবার চাওয়াতেই টাকা দিয়ে দিলো। তার নাকি বউয়ের মুখ দেখার জন্য তর সইছে না। তাড়াতাড়ি চল বনু। ভাই আমার অপেক্ষা করছে”

এই লোক কি আমায় লজ্জায় ফেলা ছাড়া আর কিছু জানে না? আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে শেষ বারের মতো দেখে নিচ্ছি। লাল রঙের লেহেঙ্গা, গাঁ ভর্তি জুয়েলারি, দুহাতে মুঠো ভর্তি লাল চুরি। মুখে ভারী সাজ। সব মিলিয়ে নিজেকে কেমন অচেনা অচেনা লাগছে। হয়তো ভারী সাজের জন্য। ইভার কথা শেষ হতেই আগমন হলো ঈশিতা আপুর। এসে আমায় দেখে নিয়ে বলল,
“সব ঠিকঠাক আছে। এখন চল দেখি। নিচে সবাই অপেক্ষা করছে”

ঈশিতা আপু এগিয়ে এসে মাথায় সুন্দর করে ওড়না দিয়েছি ঘোমটা দিয়ে দিলো। দুজন আমার দুপাশে। নিচে নেমে বাগানের দিকে যেতে হবে। মাঝে শুভ ভাই এসে যোগ হলো। আমার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে সাহস দিলো আমায়। অতঃপর আমায় নিয়ে বসিয়ে দিলো আদ্রর সামনে রাখা আসনে। বাগানে স্টেজ বানানো হয়েছে। স্টেজের মাঝে আমার আর আদ্রর বসার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুজনের মাঝে রয়েছে ফুলের তৈরি পর্দা। মুখের ওপর দেওয়া ওড়না পাতলা হওয়ার সবই বোঝা যাচ্ছে। আড়চোখে তাকিয়ে দেখলাম আদ্র এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ওনার পরনে গোল্ডের রঙের শেরওয়ানি। মাথায় পাগড়ি, হাতের ঘড়ি। সব মিলিয়ে আদ্রকে বর বর লাগছে। উনার থেকে চোখ ফিরিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না। উনি সুন্দর নাকি আমার চোখেই তাকে সুন্দর লাগে? নিঃসন্দেহে আদ্র সুদর্শন পুরুষ। আদ্রর থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম। কিন্তু আদ্র এখনো আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ইভা কাশি দিয়ে উঠলো। আদ্র হুসে ফিরলো। কাজী সাহেব এসে বসলেন তার জন্য বরাদ্দ করা জায়গা। শুরু করলেন বিয়ে পড়ানো। মনে পড়ে গেল সেদিনকার কথা। সেদিন আমার পাশে কেউ ছিলো না। কিন্তু আজকে দিনটা ভিন্ন আমার পাশে সব কাজিনরা রয়েছে, আব্বু-আম্মু সবাই রয়েছে। একটু পড় কাজী সাহেব কবুল বলতে বললেন। আগের সেই একই অনুভূতি তবে এবার পরিস্থিতি অন্য রকম। রুদ্র ভাই সারাদিন কাছে না এলেও এই মুহূর্তে এসে পাশে দাঁড়ালো। হাত ধরে সাহস দিলো। রিসাব ভাইয়া ওপর পাশে কাঁধে হাত রেখে ভরসা দিলো। একটু দূরে তাকিয়ে দেখলাম ইভান ভাই দাঁড়িয়ে আছে। দুই ভাইকে পাশে নিয়ে বুক ভরে শ্বাস নিয়ে কাঙ্খিত সেই শব্দ ‘কবুল’ বলে দিলাম। এরপর আদ্রর পালা। আদ্রকে বলতে বলা হলে উনি এক দমে বলে দিলেন। আশেপাশে হাসির রোল পড়ে গেল। ইভা বলে উঠলো,
“আদ্র ভাই আপনার বউকে কেউ নিয়ে যাচ্ছে না। আসতে ধীরে বলেন”

সবাই একসাথে “আলহামদুলিল্লাহ” বলে উঠলো। চারপাশে খুশির রোল পড়ে গেল। সবার মাঝে খুশির আমেজ। একে অপরকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছে। ফুলের পর্দা উঠিয়ে দেওয়া হলো। আদ্র এগিয়ে এলো। আলতো হাতে মুখের ওপর থেকে ওড়না তুলে ফেলল। অতঃপর কিছু সেকেন্ড তাকিয়ে রইল আমার মুখপানে। এগিয়ে কপালে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিয়ে বলল,
“ভালোবাসি বউ”

#চলবে?

#উষ্ণ_প্রেমের_আলিঙ্গন
#পর্ব৪৬
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

(প্রাপ্তবয়স্ক-প্রাপ্তমনস্কদের জন্যে)

সূর্য হেলে গেছে পশ্চিম আকাশে। আকাশ জুড়ে মেঘেদের মেলা। মাঝে মাঝে কিছু পাখি উড়ে যাচ্ছে। বিয়ে শেষে স্টেজে বসেছে আমাদের কাজিনদের আড্ডা মহল। বড়ারা বাগানের একপাশে গোল হয়ে আড্ডা দিচ্ছে। বাড়ি কাছাকাছি হওয়ার যাওয়ার তাড়া নেই। বড়া তাঁদের মতো আড্ডা দিচ্ছে আর আমরা আমাদের মতো। একটু আগেই শেষ হয়েছে আমাদের ফটোসেশন। যতো কাপল পোজ আছে সব ট্রাই করা শেষ। বিয়ের দিন ফটো পারফেক্ট হতে হবে। নাহয় এতো কষ্ট করে দুই ঘন্টা বসে কোমর ব্যথা করে সাজাটাই বৃথা যাবে। কাপল ফটো, গ্রূপ ফটো, সিঙ্গেল ফটো সব তুলা শেষ করে একটু আগে আড্ডায় বসেছি। সবাই মিলে গল্প করছি এমন সময় ইভা একটা আয়না নিয়ে এলো। দুজনের মাঝে রাখা হলো আয়নাটা। আয়নায় দুজনের মুখ স্পষ্ট। ইভা আদ্রকে প্রথমে জিজ্ঞেস করলো,
“আয়নায় কাকে দেখতে পাচ্ছে আদ্র ভাই?”

আদ্র আয়নায় তাকিয়ে হাসলেন। অতঃপর ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটিয়ে বললেন,
“আদ্র’র লাল টুকটুকে বউ”

আদ্রর কথা শুনে সবার মাঝেই হই হই পড়ে গেল। ইভা এবার আমায় জিজ্ঞেস করলো। আমি একটু সময় নিয়ে ভেবে বললাম,
“আমার সদ্য বিবাহ করা একমাত্র বর”

আদ্র আমার দিকে তাকালেন। উনি কি ভেবেছে উনি বলতে পারবে আর আমি বলতে পারব না? আমিও ‘আদীব চৌধুরী আদ্রর’ বউ আমিও পারি, হুহ। গল্পের একপর্যায়ে আদ্র উঠবে কিন্তু উনার জুতা খুঁজে পাচ্ছে না। নিশ্চই এটা ইভা আর রোশনির কাজ। আদ্র জুতা বেশি খোজা খুঁজি করলো না সোজা ইভাকে জিজ্ঞেস করলো,
“কতো চাই বল?”

ইভা যেন আদ্রর কথা শুনে খুশিতে গদগদ হয়ে গেল। ইভা কিছু বলবে তার আগেই আদ্রর বন্ধুরা শুরু করে দিলো তারা জুতা ফেরত নিবে না। লাগলে নতুন জুতা কিনে নিবে। এই নিয়ে ইভা রোশনি আর আদ্রর বন্ধুদের কথা কাটাকাটি শুরু হলো। আদ্র সেসবে পাত্তা দিলো না। বন্ধুদের থামিয়ে দিয়ে শেরওয়ানির পকেটে হাত গুঁজে একটা খাম বের করলো। ইভার দিকে বাড়িয়ে দিয়েও বলল,
“এতে হবে নাকি আরো লাগবে?”

ইভা আদ্রর বন্ধুদের ভেংচি কেটে দিলো। খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,
“এতেই হয়ে যাবে ভাইয়া। ইউ আর দা বেস্ট জিজু”

অতঃপর এলো বিদায়ের পালা। আশ্চর্য জনক বিষয় হলেও বিদায়ের সময় আমার একটুও কান্না এলো না। বিষয়টা অবাক করার মতো না? যেই মেয়ে দুদিন আগে থেকে মুড অফ করে বসে ছিলো, সকালে কান্নাকাটি করলো সে এখন কাঁদছেই না। আমার মনেই হচ্ছে না আমি আমার বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছি। মনে হচ্ছে এই বুঝি ১০ মিনিটের রাস্তা পেরিয়ে ফুপ্পির বাড়ি যাচ্ছি আবার চলে আসবো। আমার কান্না না পাওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হলো আমার ভাই-বোনেরা। ওরা আমার সাথে সাথে আছে। এমনকি আমার সাথে সাথে ফুপ্পির বাড়ি অবধিও এসেছে। ওরা চায় না আজকের এই খুশির দিনে আমার মন খারাপ হোক। আমায় হইহুল্লোড়ে মাতিয়ে রেখেছে। কখন যে ওদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে চলে এসেছি আমি নিজেও জানি না। গেটের সামনে গাড়ি থামতেই আদ্র প্রথমে নেমে পড়লো। অতঃপর আমার পাশের গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো। মুচকি হেসে আদ্রর হাতে হাত রেখে নেমে পড়লাম। ভিতরে যেতে নিলে আদ্রর বন্ধুরা বাঁধা দিলো। আদ্র ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
“কি হয়েছে? ভিতরে যেতে দিচ্ছিস না কেন?”

আদ্রর বন্ধুদের মাঝে মিহি আপু বলল,
“এমনি এমনি তো যেতে দিবো না বন্ধু। বউকে কোলে তুলে নিয়ে যেতে হবে”

মিহি আপু কথাটা বলতে দেরি করলেও আদ্রর করতে দেরি হলো না। আমায় ফট করে কোলে তুলে নিয়ে বলল,
“এই কথা, আগে বলবি তো? এখন সর বউ নিয়ে যেতে দে। বউ আমার গরমে ঘেমে যাচ্ছে”

পাশ থেকে আদ্রর বন্ধুরা সাথে আমার বজ্জাত কাজিনরা শিস বাজাচ্ছে। ইভা তো একপ্রকার চি*ল্লিয়েই বলে উঠলো,
“জিও আদ্র ভাই”

মিহি আপু বলল,
“বউয়ের প্রতি কি ভালুপাসা?”

হটাৎ করে কোলে নেওয়ায় নিজের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য আদ্রর গলা জড়িয়ে ধরলাম। আদ্র আমায় নিয়ে গট গট পায়ে হাঁটা দিলো বাড়ির ভিতরে। একেবারে ড্রয়িং রুমের সোফায় নিয়ে বসিয়ে দিলো। পাশে নিজেও বসলো। একটু পর শুরু হলো মানুষের আনাগোনা। পুরো ড্রয়িং রুম জুড়ে মানুষ। নতুন বউ দেখতে এসেছে সবাই। নিজেকে কেমন উদ্ভট প্রাণী মনে হচ্ছে। আমি বসে আছি একেকজন এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, প্রশ্ন করছে আরো কতো কি? তবে সস্থির বিষয় হলো পাশে আদ্র আছে। উনিই আমার ভরসা। উনি পাশে থাকলে আমি সমস্ত পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবো। এক আন্টি এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে পাশে বসলেন। থুতিনিতে হাত রেখে আদ্রকে বলল,
“বউ দেখি মাশাআল্লাহ মেলা সুন্দর আদ্র বাবা। একদম পরীর মতো”

আদ্র হাসি মুখে বলল,
“এই জন্যই তো মামুর মেয়েকে অন্য কারো ঘরে যেতে না দিয়ে নিজের বউ করে নিয়ে এসেছি। কি বলো ভালো করেছি না আন্টি?”

“একদম ভালো করেছিস বাবা”

বড়দের সামনে এভাবে কেউ বলে? এই আদ্র দিন দিন কেমন লাজ লজ্জা ভুলে যাচ্ছে। যার তার সামনে যাতা বলে ফেলে পড়ে লজ্জায় পড়তে হয় আমায়। এই লোককে নিয়ে আর পারি না।
——-

ফুলে সজ্জিত পুরো কক্ষ। পুরো রুম জুড়ে তাজা ফুলের ঘ্রান। ফুলের ঘ্রানে চারপাশ মো মো করছে। বেলি, রজনীগন্ধা, গোলাপ ফুলের সমাহার বসেছে পুরো রুম জুড়ে। শুধু খাট না খাটের পাশের টেবিল, সোফার সামনে টি-টেবিলেও ফুল দিয়ে সাজিয়েছে। বেলি ফুল আর রজনীগন্ধার ঘ্রানে মেতে উঠেছে পুরো রুম। কিছুক্ষন আগেই সবাই মিলে আমায় রুমে নিয়ে এসেছে। আমায় বিছানায় বসিয়ে দিয়ে ওরা সেকি লজ্জা জনক সকল কথা বার্তা শুরু করে দিয়েছে। ওদের কথা শুনে লজ্জায় আমার মাথা কাঁটা যাচ্ছে। লজ্জায় গাল লাল হয়ে আসছে, কান দিয়ে মনে হয়ে ধোয়া বের হবে। আমরা কাজিনকুল এতো অ*সভ্য কথা বলতে পারে তা জানা ছিলো না। আজকের দিনটা না এলে বোধ হয় জানাও হতো না। ঈশিতা আপু,ভাবি আর ইভা মিলে আমায় লজ্জার সাগরে চুবিয়ে মা*রছে। মনে মনে বলছি,
“ওপর থেকে কেউ দড়ি ফালাক আমি উঠে যাই”

এদের মাঝে আর থাকা যাচ্ছে না। এমন সময় আগমন ঘটলো আদ্রর। আমি যেন হাফ ছেড়ে বাচলাম। বাহিরে আদ্রর বন্ধুরা ওকে আটকে রেখেছে। টাকা ছাড়া আদ্রকে রুমে ঢুকতে দিবে না। আদ্র ভ্রু কুঁচকে বলল,
“কি চাই?”

“টাকা”

“কেন?”

“এইযে আমরা কষ্ট করে রুম সাজালাম তার জন্য”

“আমার বউ আমার রুম ভিতরে যাবোও আমি। তোদের কেন টাকা দিবো?”

“আমরা যে রুম সাজালাম সেটা?”

“তোদের আমি রুমে সাজাতে বলেছি? তোরা সাজিয়েছিস কেন? আমি কোনো টাকা দিবো না তোরা তোদের ফুল নিয়ে যা”

“এটা কিন্তু ঠিক না আদ্র। শা*লীদের বেলায় তো টুপ্ করে টাকা বের করে দিয়েছিস। আমাদের বেলায় কিপ্টামো করছিস কেন?”

“ওরা আমার শা*লী, বড্ড আদরের তাই দিয়েছি। আর তোরা হোলি বন্ধু নামক হা*রামি। তাই তোদের দিবো না”

মিহি আপু গাল ফুলিয়ে বলল,
“তুই আমাদের হা*রামি বলতে পারলি?”

জিসান ভাইয়া বলল,
“হা*রামি বলিস আর যাই বলিস টাকা দিতেই হবে”

শুরু হয়ে গেল তর্ক বিরতর্ক। অতঃপর আদ্র তাঁদের টাকা দিয়ে বিদায় করলো। রুমে ঢুকতেই ইভা, ঈশিতা আপু আর ভাবি হেসে দিলো। আদ্র কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেল। আদ্রকে দেখে ভাবি হেসে বলল,
“আদ্র ভাই এসে গেছেন? রোদ ভয় পাচ্ছিলো তাই আমরা গল্প করছিলাম। আপনি যখন এসেছেন এখন আমরা যাই। কি বলো ঈশিতা?”

“হ্যাঁ, হ্যাঁ চলো”

ইভা যাওয়ার আগে আমার কানে কানে ফিসফিস করে বলে গেল,
“বেস্ট অফ লাক বনু”

ইভারা চলে গেল। আদ্র একবার আমার দিকে তাকিয়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। দরজা বন্ধ করার শব্দে কেঁপে উঠলাম। আদ্র একটু একটু করে এগিয়ে আসছে আমার দিকে। হৃদস্পদন বেড়ে যাচ্ছে। আকস্মাৎ ভয় জেঁকে ধরলো। বিছানা থেকে নেমে আদ্রকে সালাম করতে গেলে উনি আটকে দিলেন আমায়। উঠিয়ে বুকে জড়িয়ে নিয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন,
“রৌদ্রময়ীর স্থান আমরা বুকে, পায়ে নয়। আর কখনো যেন না দেখি পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে। মনে থাকবে?”

মাথা নাড়িয়ে সায় জানালাম। গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না। আদ্র আমায় বিছানায় বসিয়ে দিয়ে এগিয়ে গেল আলমারির দিকে। আলমারি খুলে কিছু বের করলেন। অতঃপর আমার সামনে বসে আমার হাতে একটা চেক তুলে দিয়ে বলল,
“তোর মোহরানার টাকা”

“এগুলো দিয়ে আমি কি করবো?”

“যা ইচ্ছে তাই করবি। এটা তোর প্রাপ্য”

“এখন তোমার কাছে রাখো আমার লাগলে আমি নিয়ে নিব”

“ঠিক আছে আলমারিতে আছে। নিয়ে নিস। এখন হাতটা এদিকে বাড়া তো”

ডান হাত বাড়িয়ে দিলাম। অনামিকায় রিং থাকায় আদ্র ডান হাতের মধ্যমা আঙুলে একটা রিং পড়িয়ে দিলো। অতঃপর চুম্বন এঁকে দিলো হাতের উল্টো পৃষ্ঠে।
“পা বের কর দেখি”

“পা? কেন?”

“কথা না বলে যেটা বলছি শোন”

লেহেঙ্গা একটু উঁচু করে পা বের করলাম আদ্র পকেট হাতড়ে কিছু একটা বের করলেন। অতঃপর আমার আলতায় রাঙা পায়ে থাকা নুপুর গুলো খুলে নতুন এক জোড়া নতুন নুপুর পড়িয়ে দিলো।
“নতুন নুপুর কেন?”

“আগের নুপুর গুলো কেমন পুরোনো হয়ে গেছে”

“পুরোনো কবে হলো? সেদিনই তো পড়িয়ে দিলেন”

“এটাতে ঝুনঝুনি বেশি। তুই আমার আশেপাশে থাকলে তোর নুপুরের শব্দ শুনে আমি তোর অস্তিত্ব অনুভব করতে পারবো। সারাবাড়ি তোর নুপুরের রিনঝিন শব্দে মুখরিত হয়ে থাকবে। তবে এটা পড়ে বাহিরে যাওয়া মানা”

আমি ভদ্র মেয়ের মতো মাথা নাড়িয়ে সায় জানালাম। আদ্র নুপুর পড়ানো শেষে আলতায় রাঙানো পায়ে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিলো। উনার হটাৎ স্পর্শে শিউরে উঠলাম। গাঁয়ে কাঁটা দিলো। আদ্র এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। সময় গড়িয়ে যাচ্ছে কিন্তু ওনার দৃষ্টির নড়চড় হচ্ছে না। এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে মূল্যবান কিছু খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছেন। নড়তেই আদ্র বলে উঠলো,
“নড়ছিস কেন? দেখতে দে”

“কি দেখো?”

“লাল টুকটুকে বউ রূপে আমার রৌদ্রময়ীকে”

“এতক্ষন দেখলে তাও হয়নি?”

“রৌদ্রময়ীকে দেখার তৃষ্ণা আমার এ জীবনে মিটবে না। রৌদ্রময়ীকে দেখার তৃষ্ণা আমার আজীবন রয়ে যাবে। যতো দেখবো, ততো কম পড়ে যাবে”

“এই সরো তো। আমার একভাবে বসে বসে পা ব্যথা করছে”

বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালাম। এই ভারী লেহেঙ্গা পড়ে আর থাকা যাচ্ছে না। আদ্র বলল,
“কাবার্ডে দেখ তোর জন্য শাড়ি রাখা আছে। সেখান থেকে একটা শাড়ি নিয়ে ফ্রেশ হয়ে ওযু করে আয়”

“ওযু কেন?”

“নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে নতুন জীবন শুরু করবো তাই”

কোনো কথা না বলে নীল রঙের একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। একে বারে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এলাম। চুল দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। আদ্র তোয়ালে নিয়ে এগিয়ে এসে চুল মুছতে মুছতে বলল,
“এখনো সেই বেখেয়ালিই রয়ে গেলি? পড়ে সর্দি লাগলে?”

“তুমি আছো তো খেয়াল রাখার জন্য”

আদ্র সুন্দর করে চুল মুছিয়ে দিয়ে নিজেও ফ্রেশ হয়ে এলো। দুজন একসাথে নামাজ আদায় করে নিলাম। আদ্র জায়নামাজে বসে থেকেই বলল,
“জানিস রৌদ্রময়ী চাওয়া হালাল এবং মন থেকে হলে সাথে আল্লাহর ওপর ভরসা থাকলে আল্লাহ তায়ালা সেটা তোকে যে কোনো ভাবে পাইয়ে দিবেন”

“যেমন?”

“এইযে আমি তোকে চেয়েছি। আমার চাওয়ায় কোনো ঘাটতি ছিলো না তুই আমায় ভালোবাসিস না জেনেও ভালোবেসেছি । ইভানের সাথে তোর এনগেজমেন্ট হওয়ার পরও আমি আশা ছাড়িনি। আমি জানতাম আমার রব আমায় নিরাশ করবেন না। দেখ দীর্ঘ ১২ বছরের ভালোবাসার ফল হিসেবে তুই এখন আমার বউ, আমার জীবনসঙ্গী”

আদ্রর কথা গুলো মন দিয়ে শুনলাম। আসলেই আল্লাহর কাছে চাইতে পারলে উনি কাউকেই খালি হাতে ফিরান না।

ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছি। স্নিগ্ধ হিমলে হাওয়া এসে মুহূর্তেই শরীর ঠান্ডা করে দিয়ে যাচ্ছে। হাওয়ার তালে তালে দুলছে লম্বা ঘনকালো কেশ গুচ্ছ। ক্ষনিকের মাঝে নিজেকে আবিষ্কার করলাম কারো বাহু বন্ধনের মাঝে। এটা যে আদ্র সেটা বুঝতে মুহূর্তও লাগলো না। পিছনে ঘুরে আদ্র গলা জড়িয়ে ধরলাম।
“দেখো পরিবেশটা সুন্দর না?”

আদ্র নেশালো কণ্ঠে বলল,
“পরিবেশের চেয়েও সুন্দর আমার রৌদ্রময়ী। নীল শাড়িতে তাকে নীলাঞ্জনার চেয়েও সুন্দর লাগছে নেশা ধরে যাচ্ছে চোখে”

আদ্র কেমন নেশালো চোখে চেয়ে আছে। ওনার এমন চাহনি দেখে শুকনো ঢোক গিললাম। আদ্র এগিয়ে এলো। কানের পৃষ্ঠে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। শিউরে উঠলাম। আদ্র ফিসফিস করে বলল,
“এমন বিধ্বংস রূপে সামনে কেন এলি জান? খুন হয়ে যাচ্ছি আমি তোর রূপের ঝলকে। নেশা ধরে যাচ্ছে যে। এই নেশা কাটানোর জন্য যে তোকে চাই। বড্ড বাজে ভাবে চাই। দিবি সেই অনুমুতি?”

কি বলবো কিছুই বুঝতে পারছি না। বুকের মাঝে দ্রিম দ্রিম শব্দ হচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ হাতুড়ি পেটা করছে। গলা শুকিয়ে আসছে। হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আদ্রর সম্পূর্ণ অধিকার আছে। আমার কোনো রাইট নেই উনাকে বাঁধা দেওয়া। আদ্র ফের জিজ্ঞেস করলো,
“কি হলো জান কিছু বলছিস না কেন?”

কিছু না ভেবে আদ্রকে জড়িয়ে ধরলাম। কারণ মুখে বলার সাহস আমার নেই। আদ্র হয়তো আমার উত্তর বুঝতে পারলেন। ঠোঁটের কোণের মুচকি হাসি ফুটিয়ে টুপ্ করে কোলে তুলে নিলেন আমায়। আদ্রর গলা জড়িয়ে ধরলাম। আদ্র আমায় বিছানায় বসিয়ে লাইট অফ করতে গেলেন। লাইট অফ করে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দিলেন। আদ্র একটু একটু করে এগিয়ে আসছে। মনের মাঝে কেমন ঝড় বইছে। অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। আদ্র আমাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজে ভর দিলেন আমার ওপর। কপালে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিলেন। কপাল থেকে ওষ্ঠ সরিয়ে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলেন আমার মুখপানে। লজ্জায় রক্তিম বর্ণ ধারন করেছে গাল দুটো। আদ্রর চোখে নেশা। একটু তাকিয়েই ওনার থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম। আদ্র এগিয়ে আসছে। মুহূর্তের ব্যবধানে অধরে অধর মিলিয়ে দিলো। পুরো ওষ্ঠ জুড়ে আদ্রর বিচরণ। অবাধ্য হয়েছে তার হাতের আনাগোনা। কোমর জড়িয়ে নিজের আরো কাছে টেনে নিলেন। আদ্র অবাধ্য স্পর্শে নিজেকে কেমন পা*গল পা*গল লাগছে। শরীর বেয়ে শিহরণ ছেয়ে যাচ্ছে। কেমন হাঁসফাঁস লাগছে। যতো সময় যাচ্ছে আদ্রর পা*গলামো ততো বাড়ছে। বিছানার চাদর খামচে ধরলাম। আজ যেন আদ্র নিজের মাঝে নেই। নেশার ঘোরে পুরোপুরি ডুবে গেছেন। সকল ভালোবাসা উজার করে দিচ্ছে। পুরো রুম জুড়ে ফুলের মিষ্টি ঘ্রান আর দুজনের নিঃশ্বাসের শব্দ। উত্তপ্ততা ছেয়ে গেছে রুম জুড়ে। আদ্র কপালে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে ফিসফিস করে বলল,
“সরি জান। একটু কষ্ট সহ্য করে নে”

#চলবে?