#উষ্ণ_প্রেমের_আলিঙ্গন
#পর্ব৪৭
#আফিয়া_আফরোজ_আহি
প্রভাতের কিরণ ছড়িয়ে গেছে ধরণী জুড়ে। অল্প স্বল্প উষ্ণতা ছড়িয়ে দিচ্ছে। সাথে দমকা হাওয়া বয়ে চলেছে। নতুন দিনের সূচনাটাই অন্য রকম। ঘুম ভেঙ্গে নিজেকে আবিষ্কার করলাম পুরুষালি আলিঙ্গনে। মানুষটা আমায় নিজের বাহুডোরে বড্ড যত্নে আগলে রেখেছেন। উনার আঁকড়ে ধরার ধরণ দেখে মনে হচ্ছে উনি পারে না আমায় নিজের কলিজার মাঝে ঢুকিয়ে নেন। চোখ মেলে চাইলাম মানুষটার মুখপানে। কি স্নিগ্ধ সেই মুখশ্রী! মায়া ভরা তার মুখ। এক গোছা চুল এসে পড়েছে আদ্রর মুখের ওপর। এলোমেলো চুলেও মানুষটাকে কতটাই না সুন্দর লাগছে। ইচ্ছে করছে চুলগুলো আরো এলোমেলো করে দিতে। যেই ভাবা সেই কাজ। হাত বাড়িয়ে আদ্র চুলগুলো এলোমেলো করে দিলাম। একা একা ভালো লাগছে না। কি করবো সেটাও ভেবে পাচ্ছি না। অতঃপর আমায় দুস্টু বুদ্ধির আগমন ঘটলো। আদ্রর গাল টেনে দিলাম, হাতের সাহায্যে টেনে চোখ খোলার চেষ্টা করছি কিন্তু কাজে দিচ্ছে না। আঁকিবুকি শুরু করে দিলাম আদ্রর প্রশস্ত বুকে। এবার মাহশয়ের টনক নড়লো। চোখ মুখ কুঁচকে নিলো। ঘুম ঘুম কণ্ঠে বলল,
“সকাল সকাল জ্বালাস না বউ, ঘুমাতে দে”
কথাগুলো বলে আমার হাত গুলো নিজের হাতের মাঝে চেপে ধরে ফের ঘুমিয়ে গেলেন। এদিকে আমি হাত ছুটানোর জন্য মোচড়ামুচরি করছি কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। শেষমেষ হাত ছাড়াতে না পেরে ওভাবেই ঘুমের দেশে পারি দিলাম।
মুখের ওপর পানির অস্তিত্ব অনুভব করতেই পিটপিট করে চোখ খুলে চাইলাম। সামনে আদ্র দাঁড়িয়ে। টাউজার পরিহিত ফর্সা উদাম গাঁয়ে টাওয়াল দিয়ে চুল মুছছে। বুকের পশমে বিন্দু বিন্দু পানির অস্তিত্ব বিদ্যমান। তারমানে কি উনি শাওয়ার নিয়েছে? আদ্রর চোখে চোখ পড়তেই কাল রাতের ঘটনা মনে পড়ে গেল। লজ্জারা ঘিরে ধরলো আমায়। আড়চোখে আদ্রর দিকে তাকিয়ে দেখলাম আদ্রর বুকে পিঠে আঁচড়ের দাগ। ছি! ছি! লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলাম। আদ্র বলল,
“শুভ সকাল রৌদ্রময়ী”
মিনিমিনে স্বরে বললাম,
“শুভ সকাল”
“উঠে ফ্রেশ হতে যা। বেলা নয়টা বেজে গেছে”
জিভে কামড় পড়লো। শশুর বাড়ি এসে প্রথম দিনই দেরি করে ঘুম থেকে উঠলাম। যদিও এখানে বলার মতো কেউ নেই। তাও আমার সকাল সকাল উঠা দরকার ছিলো। আদ্রকে বললাম,
“তুমি আমায় আরো আগে ডাকোনি কেন? এখন এতো দেরি করে নিচে গেলে সবাই কি ভাব্বে?”
“যার যা ইচ্ছে ভাবুক তাতে তোর কি? তুই যা ফ্রেশ হতে”
উঠে দৌড়ে লাগলাম ওয়াশরুমে। আদ্র আমার দৌড়ে দেখে পিছন থেকে বলে উঠলো,
“আসতে যা নাহয় পড়ে যাবি”
কে শোনে কার কথা আমি তো আমিই। আদ্র ফের বলল,
“পা*গলী একটা”
দুজন একসাথে নিচে নামছি। আদ্র আগে আর আমি উনার পিছনে। নিচে ড্রয়িং রুমে বসে আছে সবাই। ওরা কি রাতে এখানে ছিলো? নিচে নেমে আদ্র সোফায় যেয়ে ওদের মাঝে বসে পড়লো। ইভা এগিয়ে এসে আমায় জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলো,
“আদ্র ভাই কি গিফট দিলো বনু?”
হাত বাড়িয়ে ইশারায় রিংটা দেখালাম। ইভা দেখে বলল,
“অনেক সুন্দর”
এর মাঝেই ভাবি এসে বলল,
“কি গো ননদিনী শশুর বাড়ি এসে আমাদের ভুলে গেলে?”
“আরে না। তোমাদের কাছেই আসছিলাম
মাঝে ইভা আটকে দিলো”
সবার মাঝে যেয়ে বসালাম। একেক জন এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে তাঁদের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে আমি কাহিল। ওদের প্রশ্ন কিছুটা এমন, ওরা যাওয়ার পর আমি কান্নাকাটি করি নি তো? মন খারাপ হয়েছে কিনা? ইত্যাদি ইত্যাদি। আমার ভাই-বোন গুলো যে আমায় নিয়ে এতো কনসার্ন সেটা আজকের দিনটা না এলে জানতেই পারতাম না। ওদের সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়ে উঠে যেতে যেতে বললাম,
“তোমরা বসো আমি দেখে আসি ফুপ্পি কি করছে”
এর মাঝেই ফুপ্পি রান্নাঘর থেকে বের হয়ে এগিয়ে এলো। আমায় নিজের কাছে টেনে বলল,
“তোকে আর কষ্ট করে আসতে হবে না। আমিই তোর কাছে চলে এসেছি। কাল আমার মেয়েটা আমার বাড়িতে এলো কিন্তু কাজের চাপে তোর সাথে দুদন্ড ভালো করে কথাও বলতে পারিনি। রাগ করিসনা মা”
“আরে রাগ করবো কেন? আমি তো জানি আমার ফুপ্পি কতো ব্যাস্ত ছিলো কাল। নাহলে সে আমার সাথে কথা বলবে না এটা কখনো হতেই পারেনা”
হটাৎ ফুপ্পির হাসি মুখটা কেমন গম্ভীর হয়ে গেল। গম্ভীর মুখে বলল,
“কে তোর ফুপ্পি? শাশুড়ি হই আমি”
ফুপ্পির হটাৎ এমন আচরণে অবাক হয়ে গেলাম। একটু আগেই তো কি সুন্দর হেসে হেসে কথা বলছিলো তাহলে হুট্ করে কি হলো? সবাই ফুপ্পির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আর এদিকে আমি তো বেক্কেল বনে গিয়েছি। ফুপ্পির আমার রিয়েকশন দেখে ফিক করে হেসে দিলো। আমি ভেবেচেঁকা খেয়ে গেলাম। ফুপ্পি আমার নাক টেনে দিয়ে বলল,
“কিছু বুঝিস নি?”
আমি কেবলাকান্তের ন্যায় মাথা দুলিয়ে না জানালাম।
“আমায় বুঝি মা হিসেবে পছন্দ হয়নি?”
“হয়েছে তো। তুমি তো আমার আরেক মা”
“তাহলে মা বলে না ডেকে এখনো ফুপ্পি ফুপ্পি করছিস কেন?”
জিভে কামড় দিলাম। কানে ধরে বললাম,
“সরি আম্মু। আর হবে না”
ফুপ্পি আমার হাত কান থেকে সরিয়ে দিয়ে বলল,
“হয়েছে আর সরি বলা লাগবে না। এখন সবাই টেবিলে বস। সকালের খাবার তো খেতে হবে নাকি?”
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
“সবাই এখনো খায় নি?”
অভ্র ভাই বলল,
“না। তোর জন্য বসে ছিলো। শুভ তো বলেই দিয়েছে তার পাখিকে ছাড়া সে খাবে না। নিজে খায়নি সাথে দেখ আমাদেরও না খাইয়ে রেখেছে”
শুভ ভাইয়ের দিকে তাকাতেই ভাইয়া বলল,
“মিথ্যা কথা বলো না ভাইয়া! আমি একা না তোমরাও খাবে না বলেছিলে”
অভ্র ভাইয়া হেসে বলল,
“আরে মজা করছিলাম। এখন আয় সবাই একসাথে খাবো”
সবাই একে একে টেবিলে বসে পড়লো। খাবার শেষে ড্রয়িং রুমে বসলো আমাদের আড্ডা। আমরা কাজিন মহল একসাথে মানেই আমাদের আড্ডা বসবে। মাঝে কিছু প্রতিবেশী আন্টিরা এসে বউ দেখে গেছে। বেলা বাড়তেই বাড়িতে বৌভাতের আয়োজন করা হচ্ছে। বেশ কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে সবাই বাড়ি চলে গেছে। আমিও রুমে চলে এলাম। নিচে অনেক আত্মীয় স্বজনে ভরপুর।
শাওয়ার নিয়ে রেডি হতে বসেছি। বিছানায় শাড়ির মেলা। এদিকে আমি কোন রঙের শাড়ি পড়বো সেটাই বুঝতে পারছি না। একবার মনে হচ্ছে পিঙ্ক শাড়ি পড়ি , আবার মনে হচ্ছে মিষ্টি কালার শাড়ি পড়ি। কিন্তু সবচেয়ে সুন্দর লাগছে কালো শাড়ি টা। কি করবো ভেবেই পাচ্ছি না! আমার ভাবনার মাঝেই আগমন ঘটলো আদ্র সাহেবের। আদ্র ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে। গাঁয়ে থাকা কালো রঙের টি-শার্ট গাঁয়ের সাথে লেপ্টে রয়েছে। সকালে গুছিয়ে রাখা চুলগুলো এলোমেলো। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের অস্তিত্ব। আদ্র আমায় এভাবে গালে হাত দিয়ে ভাবনায় বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলো,
“কিরে ভাবনার রানী এখন আবার কি ভাবতে বসেছিস?”
“আরে দেখো না এতো গুলো শাড়ির মাঝে কোনটা পড়বো সেটাই বুঝতে পারছি না”
“এই বেপার আমায় ডাকলেই পারতি”
আদ্র শাড়ি গুলো উল্টো পাল্টে দেখে ওগুলোর মধ্যে থেকে লাল রঙের জামদানি শাড়ি বের করে হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
“এটা পড়। নতুন বউ সুন্দর লাগবে”
শাড়িটা রেখে উঠে আদ্রর কাছে গেলাম। শাড়ি আঁচল দিয়ে আদ্রর কপালের ঘাম মুছে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলাম,
“কি এমন কাজ করছিলে যে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে এসেছো?”
“তোরা মেয়েরা বিয়ের দিন ঘরে সেজেগুঁজে বসে থাকিস। আর আমাদের ছেলেদের বিয়ের দিনও সব কাজ ঠিক ঠাক হয়েছে কিনা সেগুলো সব চেক করে তারপর বিয়ে করতে যেতে হয়”
“তাই নাকি সাহেব? তা কি এমন কার্য আপনি করছিলেন শুনি?”
“রান্নার আয়োজন দেখতে গিয়েছিলাম। রান্না ঠিকঠাক না হলে তো সবাই খেতে পারবে না। আমার হয়েছে জ্বালা যেদিক না যাব সেদিকেই কিছু না কিছু গড়বড় হবে”
“তাহলে তো বলতেই হয় আপনি মেলা কাজ করে এসেছেন। আপনি বসেন আমি আপনার জন্য এক গ্লাস ঠান্ডা শরবত নিয়ে আসছি”
“কি সেই কখন থেকে আপনি আপনি শুরু করেছিস! তোর মুখে তুমি ডাকটাই সুন্দর লাগছে। কি মাধুর্যপূর্ন সেই ডাক! মনে হয় হৃদয়ে দোলা দিয়ে যায়”
“ঠিক আছে তুমিই ডাকবো। তুমি বসো আমি আসছি”
বলে রুমে থেকে বেরিয়ে এলাম। পিছন থেকে আদ্রর কণ্ঠ ভেসে আসছে।
“শরবতের দরকার নেই। শাওয়ার নিলেই ঠিক হয়ে যাবে”
কে শোনে কার কথা! আমি এতক্ষনে নিচে নেমে এসেছি। আমায় নিচে দেখে আম্মু জিজ্ঞেস করলো,
“রোদ সোনা তুই নিচে কি করছিস? তোকে না একটু আগে ওপরে পাঠালাম তৈরি হয়ে আসতে?”
“আসলে আদ্র ভা… মানে তোমার ছেলে ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা। তাই ভাবছিলাম ওনার জন্য এক গ্লাস ঠান্ডা শরবত নিয়ে যাই, খেলে ভালো লাগবে”
আমার কথা শুনে আম্মুর মুখে হাসি ফুটে উঠলো। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
“ভালো কথা ভেবেছিস। তোদের মাঝের ভালোবাসা দেখলে মনটা শান্তিতে ভরে যায়”
আম্মুর কথায় সায় জানিয় রান্না ঘরে চলে গেলাম। আদ্রকে শরবটতের গ্লাস দিলে উনি অর্ধেক খেয়ে আমার দিকে বাড়িয়ে দিলেন। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,
“পুরোটা শেষ করলে না যে?”
“এটা তোর ভাগের”
“আমার ভাগের মানে?”
“আমার সব কিছুতে তোর অর্ধেক ভাগ রয়েছে। তাই অর্ধেক আমি খেলাম আর অর্ধেক তোর। আর ভাগাভাগি করে খেলে ভালোবাসা বাড়ে”
আদ্র আমার হাতে গ্লাস দিয়ে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। আদ্রর পছন্দ করে দেওয়া লাল জামদানি পড়ে আয়নায় সামনে বসে সাজগোজ করছি। লাল শাড়ি, হাত ভর্তি লাল চুড়ি, ম্যাচিং জুয়েলারি। মুখে অল্প বিস্তর প্রসাধনীর ছোঁয়া। ব্যাস আমার সাজ শেষ। আদ্র বেরিয়ে আমায় এই রূপে দেখে কিছুক্ষন ওয়াশরুমের দরজায় দাঁড়িয়ে রইলেন। অতঃপর একটু একটু করে এগিয়ে আসতে নিলেন। ওনাকে এগিয়ে আসতে দেখে ঘাবড়ে না গিয়ে একই ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইলাম। আদ্র এগিয়ে এসে খোপা করা চুল গুলো খুলে দিলো। উন্মুক্ত হতেই ঝরঝর করে পিঠ জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল কেশ গুচ্ছ। আদ্র অন্য রকম কণ্ঠে বলল,
“খোলা চুলে তোকে বেশি সুন্দর লাগে”
কথা গুলো বলে মুখ ডুবিয়ে দিলেন চুলের মাঝে। চুলের মাঝে মুখ ডুবিয়ে রেখে মিহি কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
“চুলে কোন শ্যাম্পু দিস বলতো? ঘ্রানটা অনেক সুন্দর”
আদ্রকে এতটা কাছে অনুভব করে গলা দিয়ে স্বর বের হচ্ছে না। আদ্র কাছে এলেই কেন যেনো বোবা হয়ে যাই। মনে হয় কথা গুলো গলায় আটকে গেছে। এমন সময় রুমের দরজায় নক করলো কেউ। আদ্র ছিটকে দূরে সরে গেল। জিজ্ঞেস করলাম,
“কে?”
ওপাশ থেকে ইভা বলল,
“আমি”
আদ্র মেজাজ খারাপ করে বলল,
“এই ইভার কি খেয়ে দেয়ে কোনো কাজ নেই? প্রতিবার আমার রোমান্সের বারো টা বাজাতে ওকে আসতেই হবে? ধুর ছাই”
আদ্র জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমের ঢুকে গেলেন। আমি এগিয়ে গিয়ে দরজার খুলে দিলাম। ইভা জিজ্ঞেস করলো,
“কি করছিলি?”
“এইতো রেডি হচ্ছিলাম”
ইভা বিছানায় বসে পড়লো। আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ফের চুল গুলো বাধার প্রচেষ্টায়। আদ্র যতই বলুক বড়দের সামনে তো এভাবে খোলা চুলে যাওয়া যায় না! তার ওপর আজকে বৌভাত কতো মানুষ আসবে। আমার চুল বাধার মাঝেই আদ্র একেবারে রেডি হয়ে বের হলো। উনার পরনে ক্রিম কালারের পাঞ্জাবী ওপরে লাল রঙের কোটি। পাশে এসে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করে ঘড়ি পড়তে পড়তে বলল,
“তুই থাক, আমি নিচে যাচ্ছি। তুই একটু পড় আসিস”
একটু থেমে ফের বলল,
“তোর একা আসা লাগবে না। আমি এসে নিয়ে যাবো”
বলে গট গট পায়ে চলে গেল। আমি এতক্ষন ওনার দিকেই তাকিয়ে ছিলাম। ঘরে যে ইভা আছে সে খেয়াল বেমালুম ভুলে বসেছি। আদ্র চলে যেতেই ইভা কাশি দিয়ে বলল,
“উহুম, উহুম। বনু এই জন্যই বুঝি দরজা খুলতে দেরি হচ্ছিলো?”
“আরে তুই যা ভাবছিস তেমন কিছু না। আমি রেডি হচ্ছিলাম উনি ওয়াশরুমে ছিলো”
“বুঝি, বুঝি। আমরা সবই বুঝি খাই না সুজি”
দুজন বসে গল্প করা শুরু করলাম। একটু পড়ে আদ্র
এসে আমায় নিচে নিয়ে এলো। নিচে আমার বাড়ির সবাই এসেছে। আব্বু-আম্মু, বড় আব্বু-বড় আম্মু সবাই। সবার সাথে দেখা করে কথা বলে স্টেজে যেয়ে বসলাম। অবশেষে সুন্দর মতো বৌভাতের শেষ হলো। বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষ হলে সবাই মিলে আমায় আর আদ্রকে আমাদের বাড়িতে নিলো। দিনটা কেমন ব্যস্ততার, হাসি, মজা, গল্পের মাঝেই কেটে গেল।
#চলবে?
#উষ্ণ_প্রেমের_আলিঙ্গন
#পর্ব৪৮
#আফিয়া_আফরোজ_আহি
সময়টা শীতকাল। কনকনে শীত যাকে বলে। ডিসেম্বরের শেষ দিকে শীতে অবস্থা বেগতিক। কম্বল মুড়ি দিয়েও যেন শীত নিবারণ করা যাচ্ছে না। কুয়াশায় ছেয়ে আছে চারপাশ। সকাল সকাল এই বাড়ি থেকে ওবাড়ি দেখা যাচ্ছে না এতটা কুয়াশা। তার মধ্যে শুরু হয়েছে ঝিরঝিরি বৃষ্টি। ইদানিং ঋতুগুলোও কেমন নিজেদের ধরণ বদলে ফেলছে। ছোটো বেলায় কখনো দেখিনি শীতের দিনে বৃষ্টি হতে। অক্টোবরে দিকে শেষ বৃষ্টি হতো তারপর শীত চলে আসতো। এখন বড় বেলায় এসে কতো কিছুই না দেখতে হচ্ছে। অদিনের বৃষ্টি এসে ঠান্ডা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। কম্বল মুড়ি দিয়ে আদ্রর বুকের মাঝে গুটি সুটি মেরে ঘুমের দেশে তলিয়ে আছি। এদিকে যে সেই কখন থেকে এর্লাম বাজছে আমার সেদিকে খেয়াল থাকলে তো! আদ্র মাথায় হাত বুলিয়ে মৃদু কণ্ঠে ডাকছে,
“বউ, এই বউ। উঠ, তোর এর্লাম বাজছে। মেডিকেলে যেতে হবে না! উঠে রেডি হো”
আমি শুনলে তো! কম্বলটা আরো গাঁয়ের সাথে জড়িয়ে আদ্রর গাঁয়ে ঘেঁষে ঘুম। আদ্র ডেকেই চলেছে। এক সময় ঘুম ঘুম কণ্ঠে জবাব দিলাম,
“কি হয়েছে? ডাকছো কেন? একটু ঘুমাতে দেও না! এই ঠান্ডায় কার উঠতে ভালো লাগে বলো?”
“ভালো না লাগলেও উঠতে তো হবে?”
“আমি উঠব না”
“মেডিকেলে যাবি না?”
“না। আমার প্রচন্ড শীত করছে। আজকে যাবো না”
আদ্র হতাশ কণ্ঠে বলল,
“ভবিষ্যত ডক্টর যদি এমন হয় পেশেন্টদের যে কি অবস্থা হবে আল্লাহ মালুম! আমি তাঁদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি”
ঘুম উধাও হয়ে গেল। বাই এনি চান্স আদ্র কি আমায় বাজে ডক্টর বোঝালো? আমি পেশেন্টদের ঠিকঠাক ভাবে দেখি না এটাই বোঝালো? চোখ ছোটো ছোটো করে আদ্রর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
“তুমি কি বোঝাতে চাইছো? আমি কেয়ারলেস ডক্টর?”
“মোটেও না আমি এটা কখন বললাম?”
রনচন্ডী রূপ ধারণ করে বললাম,
“তাহলে কি বোঝাতে চেয়েছো শুনি?”
আদ্র হটাৎ আমার রণচন্ডি রূপ দেখে ঘাবড়ে গেছে। আমার মাথাটা নিয়ে নিজের বুকে চেপে ধরে বলল,
“আমি কিছুই বুঝাইনি। তুই ঘুমাবি বলছিলি না! ঘুমা”
ঘুম উধাও হয়ে গেছে। এখন চোখ বুজে থাকলেও ঘুম আসবে না এটা শিওর। চুপটি করে আদ্রর বুকে মাথা রেখে ওনার হৃদস্পন্দন এর শব্দ শুনছি। কোনো মানুষ যে এতটা আগ্রহ নিয়ে কারো হৃদস্পন্দন এর শব্দ শুনতে পারে এটা বোধ হয় আমি ছাড়া কেউ না। আদ্র আমায় জড়িয়ে রেখে চোখ বুজে রয়েছে। আদ্রর বুকে মাথা রেখেই জিজ্ঞেস করলাম,
“তুমি অফিস যাবে না?”
“না”
“কেন?”
“বউ যাবে না তাই আমিও যাবো না”
“তুমি বাড়ি থেকে কি করবো?”
“কেন! বউয়ের সাথে রোমান্স”
আদ্রর কথা শুনে শুকনো ঢোক গিললাম। উনাকে ঠেলে উঠতে উঠতে বললাম,
“তুমি থাকো বাসায় আমি মেডিকেলে যাচ্ছি”
আদ্র খপ করে আমার হাত টেনে নিজের বাহুডোরে আমায় আবদ্ধ করতে করতে বলল,
“এটা হবে না জান। এখন রোমান্স মানে রোমান্সই হবে। নো ছাড়াছাড়ি”
সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না। বয়ে চলে নিজ গতিতে। তেমনই সময়ের বিবর্তনে কেটে গেছে দুটো মাস। সেদিন বাড়ি গিয়ে আর ইভান ভাইকে পাইনি। বড় আম্মুকে জিজ্ঞেস করলে জানায় ইভান ভাই নাকি সেদিন রাতেই চলে গেছে। তার যাওয়ার কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। ইভান ভাইয়ের জীবনে একটা মানুষ আসুক যে তাকে ভালোবাসবে, ভালোবেসে তাকে আগলে রাখবে।
আমার দিন গুলো মেডিকেল, আম্মু আর আরুর সাথে গল্প, আদ্রর সাথে খুনসুটি, মান-অভিমান, ভালোবাসা সব মিলিয়ে যেন খুব দ্রুত চলে গেছে। মাঝে মাঝে ভাবি এই তো দুই মাস আগেও বাবার বাড়ি ছিলাম। বাড়ি কাছাকাছি হলেও দূরত্ব ছিলো দুজনের মাঝে। এখন মানুষটা সব সময় আমায় দুচোখের সামনে। ইচ্ছে হলে তাকে ছুঁয়ে দেওয়া যায়, হুটহাট জড়িয়ে ধরা যায়। অভিমানে গাল ফুলিয়ে এক গাদা অভিযোগ নিয়ে বসা যায়। মানুষটা কতো মনোযোগ দিয়েই না শোনে আমার সেই অভিমান মিশানো অভিযোগ গুলো। এই মানুষটা কে না পেলে জীবনে বড্ড আক্ষেপ রয়ে যেত। সব কিছুর পরিবর্তন হলেও একটা জিনিস আগের মতোই রয়ে গেছে সেটা হলো আমার প্রতি আদ্রর ভালোবাসা। উল্টো এখন আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। মানুষটা আমায় অভিযোগ করার কোনো সুযোগই যেন দেয় না। কিছু বলার আগেই বুঝে যায়। আমার মন খারাপে তার উদ্বেগ এর শেষ নেই। কোনো একদিন আক্ষেপ নিয়ে বলেছিলাম,
“আমার ভাগ্যে এতো খারাপ কেন? কেন ইভান ভাই আমায় ভালোবাসেনি?”
আর আজকে কয়েক বছরের বিবর্তনে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলতে পারি,
“নিঃসন্দেহে আমি ভাগ্যবতী নারী। যাকে এক পুরুষ তার সকল সত্ত্বা উজার্ করে ভালোবাসে”
———
বিকেলে আমি আর আরু বসে বসে কার্টুন দেখছি। টিভিতে টম এন্ড জেরি চলছে। টম আর জেরির কান্ড দেখে হাসতে হাসতে দুজনের অবস্থা কাহিল। আশেপাশে কি হচ্ছে সেদিকে আমাদের খেয়াল থাকলে তো! আদ্র একটু বেরিয়েছে। ফুপ্পি রুমে রেস্ট নিচ্ছে। আরু আর আমি হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছি। এর মাঝে কেউ এসে পাশে বসলো। সেদিকে খেয়াল নেই আমার। পাশের মানুষটা আমায় ডাকছে। আমি বিভোর টিভির স্ক্রিনে। হুট্ করে টিভি অফ হয়ে গেল। আমি আরুর দিকে, আরু আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমাদের দুজনের মাঝে কেউ টিভি অফ করিনি। তাহলে টিভি টা অফ করলো কে? পাশে তাকিয়ে দেখলাম আদ্র মহাশয় রক্তিম চোখে চেয়ে আছে। উনার হাতে রিমোট। আরু বলল,
“ভাইয়া টিভি অফ করলে কেন?”
আদ্র গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“টিভি না দেখে পড়তে যা”
আরু কথা বাড়ালো না। উঠে চলে গেল। আদ্রর হটাৎ এমন গম্ভীর রূপ! কারণ কি? মিনিমিনে কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলাম,
“রেগে আছো কেন? কিছু কি হয়েছে? কোনো সমস্যা?”
“রেগে থাকবো না তো কি করব? সেই কখন থেকে ডাকছি তোর খেয়াল আছে? আমার তো মাঝে মাঝে মনে হয় তোর যে একটা জামাই আছে তুই সেটা ভুলে বসেছিস”
“সরি! আসলে টিভি দেখতে যেয়ে খেয়াল করিনি”
“এক কাপ কফি নিয়ে রুমে আয় কথা আছে”
আদ্র ধুপ ধাপ পা ফেলে চলে গেল। আমি উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রান্না ঘরে চলে গেলাম। কফি বানিয়ে রুমে ঢুকতেই কানে এলো আদ্র কারো সাথে কথা বলছে। কফিটা টি-টেবিলে রেখে আদ্রর পাশে বসে পড়লাম। উনি কথা শেষ করে কফি হাতে নিলেন।
“তোমার কি কোনো কারণে মন খারাপ? রেগে আছো আমার ওপর?”
“রেগে থাকার কাজ করলে রাগ করবো নাতো কি করবো?”
“সরি বললাম তো”
আদ্র কিছু বলবে এমন সময় ওনার ফোন বেজে উঠলো। আদ্র ফোন রিসিভ করতেই ওপর পাশ থেকে ইভা হুড়মুড় করে বলে উঠলো,
“আদ্র ভাই তাড়াতাড়ি বনুকে নিয়ে বাড়ি চলে এসো”
আদ্র কিছু বলবে তার আগেই কল কেটে দিলো।
“কে কল দিয়েছে?”
“ইভা”
“কি বলল?”
“বলল তোকে নিয়ে তাড়াতাড়ি ও বাড়িতে যেতে”
“হটাৎ এমন জরুরি তলব? কারো কোনো কিছু হয়েছে কি?”
“আমি কিভাবে বলবো বল! ও আমাকে কিছু বলতে না দিয়েই কল কেটে দিলো। চল গিয়ে দেখি”
তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে পড়লাম দুজন। রাস্তায় আমাদের মাঝে তেমন কথা হলো না। বাড়িতে ঢুকতেই চোখ পড়লো সোফায়। সবাই সেখানে বসে আছে। তাঁদের মাঝে ভাবি লজ্জা রাঙা মুখ নিয়ে বসে আছে। আমাকে দেখেই ইভা লাফ দিয়ে উঠে এলো। আমায় জড়িয়ে ধরে বলল,
”বনু তুই ফুপ্পি হতে চলেছিস। আমাদের বাড়িতে পুচকু আসবে”
“মানে?”
“ভাবি প্রেগনেন্ট”
ইভাকে ছেড়ে ভাবির কাছে চলে এলাম। আম্মুরা সবাই ভাবিকে এটা সেটা বলছে।
“ভাবি ঘটনা কি সত্যিই?”
ভাবি মাথা নেড়ে সায় জানালো। লাফ মেরে উঠে বললা,
“ইয়াহু, আমাদের বাড়ি পুচকু আসবে। তার ছোটো ছোটো হাত, পা, আধো আধো বুলিতে ফুপ্পি ফুপ্পি ডাকবে। ইসস ভাবতেই আমার খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে”
আমার খুশির শেষ নেই। আমাকে দেখে মনে হবে বাচ্চা মেয়ে কোনো কিছু পাওয়ার খুশিতে লাফিয়ে বেড়াচ্ছে। আমার সাথে যোগ হলো ইভাও। আম্মু বলে উঠলো,
“তোরা কি জীবনেও বড় হবি না? একজনের বিয়ে হয়ে গেছে আরেকটার বিয়ে দিবো এখনো সেই বাচ্চাদের মতোই করে যাবি?”
বড় আম্মু বলল,
“ওদের কিছু বলে লাভ নেই। এগুলো এই জীবনেও সুধরাবে না”
বড় আম্মুর কথা শুনে দুজন একে ওপরের দিকে তাকিয়ে একসাথে বলে উঠলাম,
“হাম নেহি শুধরেঙ্গে কাভিবি”
বলে দুজন একসাথে হেসে দিলাম। আদ্র ভাবিকে বললো,
“খালি মুখে সুখবর তো শুনবো না, মিষ্টি কোথায়?”
ভাবি লাজুক মুখে উত্তর দিলো,
“আপনার ভাই মিষ্টি আনতে গিয়েছে। এখুনি এসে পড়বে”
আমি আর ইভা বসে পড়লাম প্ল্যান করতে। আমরা এমনই। কোনো একটা টপিক পেলেই আমরা শুরু হয়ে যাই। পুঁচকুর নাম কি রাখা হবে সেটা নিয়ে আমি আর ইভা তর্ক বিতর্ক করছি। আমাদের ঝগড়া দেখে হাসছে সবাই। এর মাঝেই অভ্র ভাইয়ের আগমন হলো। মিষ্টি মুখ করায় ব্যস্ত সবাই।
রাতের আকাশে কালো মেঘের ছড়াছড়ি। আকাশে এক ফালি চাঁদ মেঘেদের মাঝে উঁকি দিচ্ছে। চারপাশে নিস্তব্ধতা। আজকে আমাদের বাড়িতেই থেকে গিয়েছি। যেতে চাইলেও বড় আম্মু আমাদের যেতে দেয়নি। ইভা, রোশনি, ঈশিতা আপু, ভাবি তাঁদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে রাত বারোটার কাছাকাছি বেজে গেছে। ঈশিতা আপু বিকেলে এসেছে। ওদের বিদায় দিয়ে রুমে ঢুকলাম। রুমের লাইট নিভানো। ড্রিম লাইট জ্বলছে মিটিমিটি করে। পুরো রুমে কোথাও আদ্র নেই। তাহলে উনি কোথায়? ওয়াশরুমে উঁকি দিয়ে দেখলাম সেখানেও নেই। ব্যালকনির দিকে তাকাতেই নজরে এলো পুরুষালি অবয়ব। এগিয়ে গেলাম সামনের দিকে। আদ্র উদাস মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। নিঃশব্দে এগিয়ে গেলাম উনার কাছে। পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে পিঠে মাথা রেখে মৃদু কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলাম,
“এইযে বর মশাই কি হয়েছে তোমার? এতো উদাসীন কেন? মন খারাপ? এখনো রেগে আছো আমার ওপর?”
আদ্র পিছনে ঘুরলো। আমায় শক্ত করে তার বাহুডোরে আবদ্ধ করে নাক টেনে দিয়ে বলল,
“আদ্র কখনো তার রৌদ্রময়ীর ওপর রেগে থাকতে পারে? রৌদ্রময়ীর হাস্যজ্জল মুখ দেখলেই তো তার সকল রাগ নিমিষেই গলে জল হয়ে যায়”
“তাহলে ওভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলে কেন?”
আদ্র ভাবুক ভঙ্গিতে বলল,
“ভাবছিলাম”
“কি?”
“আমাদের মাঝে ছোটো রৌদ্রময়ীর আগমন ঘটলে কেমন হবে?”
প্রথমে আদ্রর কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকলেও কথার মানে বুঝতে পেরে কপোল জুড়ে লালিমা ছড়িয়ে গেল। লজ্জায় রাঙা কপোলে অধরে ছুঁইয়ে দিলো উনি।
“শোন তোর ফাইনাল ইয়ারের এক্সাম এর পড়েই তার আগমনের ব্যবস্থা করব। ছোটো একটা প্রাণ পুরো বাড়িময় ঘুরে বেড়াবে। আধো আধো কণ্ঠে তোকে আমাকে ডাকবে। একদম তোর মতো চঞ্চল, দুস্টু, পুরো বাড়ি যে মাতিয়ে রাখবে। তুই যেমন পুচকু থাকতে টুকুস টুকুস করে কথা বলতি তেমন”
“উহু, সে হবে তোমার মতো। আমার পুচকু আদ্র চাই”
“উহু, রৌদ্রময়ী”
“না, পুঁচকু আদ্র”
এই নিয়ে দুজনের মাঝে বেজে গেল লঙ্কা কান্ড। আদ্র বলছে তার পুচকু রৌদ্রময়ী লাগবে, আর আমি বলছি পুচকু আদ্র। ঝগড়ার এক পর্যায়ে আদ্র হুট্ করে কোলে তুলে নিলো। ভারসাম্য বজায় রাখতে আদ্রর গলা জড়িয়ে ধরলাম। উনি রুমে প্রবেশ করে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ফিসফিস কণ্ঠে বলল,
“রৌদময়ী আসবে নাকি আদ্র আসবে সেটা পড়ে দেখা যাবে আগে তো তাঁদের আগমনের ব্যবস্থা করতে হবে নাকি?”
“তুমি দেখে নিও আদ্রই…”
পুরো কথাটা বলার আগে আদ্র অধরে অধর মিলিয়ে দিলো। ধীরে ধীরে দুজনে হারিয়ে যাচ্ছি ভালোবাসার অতল গহীনে। ভালোবাসার শহরে, যেই শহর জুড়ে শুধুই আমাদের বিচরণ।
#চলবে?