উষ্ণ প্রেমের আলিঙ্গন পর্ব-৫০ এবং শেষ পর্ব

0
216

#উষ্ণ_প্রেমের_আলিঙ্গন
#অন্তিম_পর্ব
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

“মাম্মাম কোথায় তুমি? পাপ্পা খুঁজছে তোমায়। তাড়াতাড়ি এসো আমরা ঘুরতে যাব। কাম ফাস্ট”

যাকে এতো আল্হাদ করে ডাকা হলো সে ঘরের কোথায় কে জানে! কোনো সারা শব্দই এলো না। আদ্র ওয়াশরুম, ব্যালকনি, ঘরের কোণা কাণা খুঁজে ফেলেছে কিন্তু উনার মেয়েকে পেলে তো! আদ্র সাহেবের আদরের রাজকন্যা যে কোথায় ঘাপটি মেরে বসে আছে! বিছানায় বসে বসে দুই বাপ্-মেয়ের কাহিনী দেখে যাচ্ছি। বাপ্ আল্হাদ দিয়ে মেয়েকে মাথায় তুলেছে আর মেয়ে তার কথা আর কি বলবো? সে মাথায় উঠে তান্ডব নৃত্য করছে। আদ্র চাদর সরিয়ে খাটের নিচে উঁকি দিলো।
“একি মাম্মাম তুমি ওখানে কি করছো সোনা? এদিকে এসো। পাপ্পা তোমাকে ডাকছে না?এসো”

আদ্রি খাটের নিচে থেকেই বলল,
“আমি আসবো না। আসলে নানুল মেয়ে মাইল দিবে। একটু আগেও আমায় মেলেছে”

বলতে বলতে ভ্যা ভ্যা করে কান্না শুরু করে দিলো। মেয়ে হয়েছে একজন। একটু কিছু থেকে কিছু বললেই তার মুখ দিয়ে মাম্মা ডাক বের হবে না। গাল ফুলিয়ে বলবে নানুর মেয়ে। এই সব বজ্জাত আদ্রর কারসাজি। উনি মেয়েকে আল্হাদ দিয়ে দিয়ে মাথায় উঠিয়ে ফেলেছে। রক্তিম চোখে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি। আমার চাহনি দেখে উনি ফাঁকা ঢোক গিললো। আদ্র হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“পাপ্পা থাকতে নানুর মেয়ে কিছু করতেই পারবে না। তুমি এসো মাম্মাম, এখন আমরা নানু বাড়ি যাবো।আর কিছু বললে নানুর মেয়েকে তাঁদের বাড়িতে রেখে আসবো। আর আমাদের সাথে আনবো না”

বাপের আল্হাদ পেয়ে মেয়ে সুড়সুড় করে বেরিয়ে এলো। আদ্র অদ্রিকে কোলে তুলে নিলো। গাঁয়ে লেগে থাকা ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে জিজ্ঞেস করলো,
“তুমি কি এমন করেছো যার জন্য মাম্মা তোমাকে মেরেছে?”

“কিছুই কলিনি তো”

“তাহলে নানুর মেয়ে আমার মাম্মাম কে মারলো কেন?”

রাগে দাঁত কিড়মিড় দিয়ে বলে উঠলাম,
“তোমার মেয়ে কিছুই করেনি শুধু আমার সাধের ফুল গাছের টব ধরাম করে ফেলে খান খান করে দিয়েছে”

“তাই বলে মারবি?”

“তোমার মেয়েকে মারার জো আছে? একটু ধমক দিলেই কেঁদে কেটে বাড়ি মাথায় তোলে। একটু কি বকেছি বাবার কাছে সেকি কান্না”

“আমার মেয়েকে মোটেও দোষ দিবি না। মেয়ে আমার তোর মতো হয়েছে। একদম চঞ্চল”

“আরো চাও আমার মতো মেয়ে! এখন সারাদিন বাড়ি মাথায় তুলে রাখে। এই জন্যই আমি তোমার মতো পুচকে চেয়েছিলাম যে শান্ত, ভদ্র হবে”

“আমার মেয়ে চঞ্চল এতে তোর কি?”

“ও আচ্ছা এখন আমার কি? সারাদিন তোমার আদরের দুলালীর জ্বালা কে সহ্য করে? সারাদিন আমি কষ্ট করে রাখি, খাওয়াই, গোসল করাই সব করি। রাতে এসে আদর দিয়ে বাঁদর বানিয়ে এখন আমার কি?”

আদ্র আসতে আসতে আদ্রির কানে কানে বলল,
“মাম্মাম তোমার মাম্মা কিন্তু রেগে গেছে। এখন চলো পালাই”

দুজন এক দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। একটু আগে ইভা ফোন দিয়ে জানালো ইভান ভাই আসছে। সেই যে গেছে মানুষটা আর দেশে ফিরেনি। তাই এখন ওবাড়ি যাবো। আদ্র তার আদরের কন্যাকে রেডি করাচ্ছে। মেয়ে হয়েছে একদম বাবা ভক্ত। বাবাকে পেলে মাকে সে চিনেই না। রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম।

বাড়িতে ঢুকতেই নজরে এলো ড্রয়িং রুমে সবার মেলা বসেছে। আদ্রি তার নানা-নানুকে দেখে বাবার কোল থেকে নেমে ভোঁ দৌড়ে কাকে বলে। আম্মুর কোলে উঠে গলা জড়িয়ে ধরে আমার নামে নালিশ দেওয়া শুরু করলো। আম্মু ওর কথা শুনে ওরা তালে তাল দিয়ে বলল,
“নানু মাম্মাকে আচ্ছা করে বকে দিবো। মাম্মা যেন আদ্রি সোনাকে না বকে”

এগুলো সব আদ্রর শিখানো। আমি কিছু বললেই আম্মুকে ফোনে দিয়ে মেয়েকে শিখিয়ে দিবে আমার নামে বিচার দিতে। আদ্রি আর আম্মুর কাহিনী দেখছি এমন সময় ইভা এসে বলল,
“জানিস বনু ইভান ভাই বিয়ে করেছে”

“কি বলছিস? আমায় তো কেউ এই বিষয়ে বলেনি?”

“আমি ছবি দেখেছি মেয়েটা ভারী মিষ্টি। ভাইয়ার সাথে মানিয়েছে”

“কই আমাকেও দেখা। আমিও একটু দেখি”

“উহু, তোকে দেখানো বারণ আছে। তোকে সারপ্রাইজ দিবে বলেছে”

ইভার সাথে টুকটাক কথা বলছি। মাঝে কেটে গেছে চারটা বছর। বদলেছে সময়, ক্যালেন্ডারের পাতা আরো অনেক কিছু। আমাদের কাজিন মহলের সবাই এখন যার যার ব্যক্তিগত জীবনে ব্যাস্ত। তবে যতো ব্যাস্ততাই থাকুক না কেন আমাদের আড্ডা মিস যায়না। একদিন বসলো পুরো রাজ্যের গল্প জুড়ে দেই। বাড়িটা এখন আর আগের মতো নেই। এখন কেমন শান্ত হয়ে গেছে। সবাই বাচ্চা-কাচ্চা, সংসার নিয়ে ব্যাস্ত। অভ্র ভাইয়া আর প্রিয়ম ভাবির এক ছেলে, এক মেয়ে। শুভ ভাইয়া,তিথি আপুর এক ছেলে। ইয়াদ ভাইয়া আর ইভাজ ভাইয়া কাজের সূত্ররে ফ্যামিলি নিয়ে অন্যত্র থাকে। রুদ্র ভাই বিয়ে করেছে দুবছর আগে, ভাবি প্রেগনেন্ট। তার সাত মাস চলেছে। খুব শীঘ্রই আমাদের বাড়িতে নতুন মেহমান আসতে চলেছে। রিসাব ভাই পড়াশোনা করে এখনো বেচেলার ঘুরছে। আব্বু-আম্মু বিয়ে জন্য প্রেসার দিচ্ছে তবে তিনি নাকি বিয়ে করবে না। ভাইয়ার জন্য মেয়ে দেখা হচ্ছে। ঈশিতা আপুর এক ছেলে এক মেয়ে। ইভার এক মেয়ে। রোশন পড়াশোনা শেষ করে ভার্সিটির লেকচার হিসেবে জয়েন হয়েছে। রোশনির বিয়ে হয়েছে প্রায় ছয় মাস হবে। আরু শশুর বাড়ি। ওর ফুটফুটে কিউট একটা ছেলে। আমাদের কাজিন মহলের জায়গায় কয়েকদিন বাদে আমাদের বাচ্চাদের কাজিন মহল হয়ে যাবে। কিন্তু এখনো আমরা সেই আগেই মতোই রয়ে গেছি। কারো মাঝে তেমন বদল আসেনি। এইযে ইভা আর আমি। ইভা পিয়াসের কোলে মেয়েকে দিয়ে দিব্বি ড্যাং ড্যাং করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর আমার মেয়ে! তাকে নিয়ে কি বলবো। সে তার পাপ্পা কে পেলে আমাকে চিনেই না। ইভা আর আমি বসে বসে গল্প করছি। এর মাঝেই এলো তিথি আপু। তিথি আপুর আগে আগে আসছে তীব্র। ছেলে হয়েছে একদম শুভ ভাইয়ের কার্বন কপি। গম্ভীর, চুপচাপ, শান্ত । তিথি আপুর এই নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই।

সবাই তৈরী হলে আমরা বেরিয়ে পড়লাম এয়ারপোর্ট এর উদ্দেশ্যে। আমি আদ্র এর আদ্রি আমাদের গাড়িতে। আদ্র ড্রাইভ করছে। আদ্রি তার পাপ্পার গলা জড়িয়ে কোলে বসে আছে। আমি এতো করে বললাম আমার কাছে আসতে। কিন্তু ও আসবেই না। আদ্রি একটু পর পর এটা সেটা দেখিয়ে আদ্রকে জিজ্ঞেস করছে। আদ্র মশাই ও আছে গাড়ি চালাচ্ছে আর মেয়ের কথার উত্তর দিচ্ছে। মেয়ে সারাদিন কান ঝালা পালা করলেও দিব্বি ধর্য্য নিয়ে মেয়ের কথা শুনবে। এয়ারপোর্ট এর সামনে সবাই দাঁড়িয়ে আছি। একটু পড়েই বেরিয়ে এলো ইভান ভাই। তার কোলে দুই বছরের একটা ছেলে বাচ্চা। ইভান ভাইয়ের পিছন পিছন এগিয়ে আসছে এক সুন্দরী রমণী। সামনে আসতেই মেয়েটাকে দেখে অস্ফুস্ট স্বরে বলে উঠলাম,
“তিন্নি তুই?”

“হ্যাঁ আমি”

“তুই আর ইভান ভাই ক্যামনে কি?”

“তুই’ই তো বলেছিলি তোর ভাইয়ের গলায় ঝুলে যেতে। তাই ঝুলে গেলাম”

“বাট ইভান ভাই কে পেলি কোথায়?”

“তুই তো জানিস আমি স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশ চলে গিয়েছিলাম সেখানেই ইভানকে দেখলাম। তারপর পরিচয় হলো, কথা বাড়লো তারপর আমিই প্রপোজ করলাম”

“তুই প্রপোজ করলি আর ভাইয়া রাজি হয়ে গেল?”

“এমনি এমনি রাজি হয়েছে নাকি? পুরো এক বছর ঘুরেছি ব্যাটার পিছু। তারপর যেয়ে রাজি হয়েছে। তাও তার শর্ত সে প্রেম করব না সোজা বিয়ে করবে। তারপর বাবা-মাকে জানিয়ে করে ফেললাম বিয়ে”

তিন্নিকে ছেড়ে ইভান ভাইয়ের কাছে এগিয়ে গেলাম। ইভান ভাই জিজ্ঞেস করলো,
“সারপ্রাইজটা কেমন লাগলো রোদপাখি?”

“অনেক বাজে। আমি আপনার সাথে কথা বলবো না ইভান ভাই”

বলে গাল ফুলালাম। আমার কান্ড দেখে ইভান ভাই ফিক করে হেসে দিলো। তার কোলে থাকা বাবুটা মাশাআল্লাহ অনেক কিউট। একদম ইভান ভাইয়ের মতো সুন্দর,গুলুমুলু, কিউট। গাল টেনে আদর করে দিলাম।
“নাম কি ওর?”

“ইহান”

ইহানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই টুপ্ করে কোলে চলে এলো। বাকিরা সবাই কুশল বিনিময় করছে। ইহানকে কোলে নিয়ে আদর করছি এমন সময় আদ্রর কোলে বসে কেঁদে উঠলো আদ্রি। চিক্কুর দিয়ে কান্না যাকে বলে। আদ্র কোনো ভাবেই ওর কান্না থামাতে পারছে না। ইহান অবাক চোখে আদ্রির কান্না দেখছে। আদ্র মেয়েকে থামাতে থামাতে বলছে,
“কি হয়েছে মাম্মাম? কান্না করছো কেন? পাপ্পা কে বলো কি হয়েছে?”

আদ্রি হেঁচকি তুলতে তুলতে বলল,
“মাম্মা যাবো”

আমি বেক্কেলের মতো মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছি। যাকে একটু আগে এতো বলেও কোলে আনতে পারিনি সে এখন আমার কোলে আসার জন্য কাঁদছে। ইহান কে ইভান ভাইয়ের কোলে দিয়ে মেয়েকে কোলে তুলে নিলাম। আমার কোলে আসতেই তার কান্না শেষ। ইহানের দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটে দিলো। আদ্রির কান্ড দেখে সবাই একসাথে হেসে দিলো। ইভান ভাই তো বলেই ফেলল,
“একদম মায়ের কার্বন কপি”

“মোটেও না। আমি ছোটো বেলায় কখনো এমন করিনি”

পাশ থেকে আদ্র বলে উঠলো,
“বলবো ছোটো বেলায় তুই কি বিচ্ছু গিরি করে বেড়াতি?”

“বলার কি আছে? ছোটবেলার আমি অনেক ভদ্র ছিলাম”

“তাই নাকি?”

“হ্যাঁ”

“আচ্ছা ইভান তোর মনে আছে? একবার কে যেনো শুভ ভাইয়ের কোলে ছোট্ট রোশনিকে দেখে গড়াগড়ি দিয়ে কেঁদেছিলো? তার সেকি কান্না? শেষমেষ শুভ ভাই রোশনিকে রেখে তাকে কোলে নিয়েছিলো। তারপর থেমেছে মেয়ের কান্না”

ইভান ভাই দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,
“মনে আছে মানে দিব্বি মনে আছে। এখনো সেই ঘটনা পড়ে পড়লে হাসতে হাসতে আমার পেটে খিল ধরে যায়”

“আমার কেন যেন মনে হচ্ছে সেই মেয়েটার সাথে রোদের অনেক মিল আছে”

“একদম বাজে কথা বলবে না বলে দিচ্ছি। মেয়ের দোষ ঢাকতে আমার নামে উল্টোপাল্টা বলা বন্ধ করো”

শুরু হয়ে গেল আমাদের ঝগড়া। ঈশিতা আপু বলল,
“তোরা কি এখানে দাঁড়িয়ে ঝগড়া করে কাটিয়ে দিবি নাকি বাড়িও যাবি?”

“হ্যাঁ চলো। সবাই বসে আছে ওদের জন্য”

সবাই মিলে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
——

ড্রয়িং রুম জুড়ে আমাদের পুরো কাজিন মহল সাথে সবার কোলে তাঁদের ছানাপোনা। গল্প আড্ডায় মেতে উঠেছি সবে। বহুদিন পর একসাথে হলে যা হয় আরকি। দুনিয়ার যত কথা আছে সব যেন আমাদের মাঝেই হচ্ছে। রান্না ঘরে চলছে রান্নার ধুম। বাড়িতে এক প্রকার উৎসব লেগে গেছে। বড় আব্বু ইভান ভাইয়ের ওপর রেগে থাকলেও এখন আর রাগটা নেই। কি সুন্দর ইহান কে কোলে নিয়ে হেসে হেসে নাতির সাথে গল্প করছে।

সোফা, চেয়ার, ফ্লোর জুড়ে বসেছে একেক জন। একটু পর পর রান্না ঘর থেকে ভাজাভুজি দিয়ে যাচ্ছে। আমরা খাচ্ছি আর গল্প করছি। গল্পের মাঝে ঈশিতা আপুর মেয়ে ঈমি কেঁদে উঠলো। যেয়ে দেখি ঈমি কাঁদছে আর আদ্রি আব্বুর পিছনে লুকিয়ে আছে। নিঃঘাত আদ্রি কিছু করছে। চোখ রাঙিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
“আদ্রি কি করেছো তুমি? ঈমি কাঁদছে কেন?”

পাশ থেকে শিপু বলল,
“মামনি আদ্রি বনুকে চিমটি কেটেছে”

এই মেয়েকে নিয়ে পারি না! ঈমিকে কোলে নিয়ে আদর করে দিলাম। যেখানটায় চিমটি কেটেছে সেখানে লাল হয়ে গেছে। আদ্র যেয়ে মেয়েকে কোলে তুলে বকে দিলো। কিন্তু মেয়ে তার শুনলে তো! শিপু কে চোখ রাঙাচ্ছে ও কেন বললো তাই। ভাবা যায় কি সাং*ঘাতিক মেয়ে! শিপু ওর বড় তাকে ও চোখ রাঙাচ্ছে। আমি আদ্রিকে কিছু বলতে গেল আদ্র বলতে দিলো না।
——–

রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই আড্ডা দিতে বসলেও হয়ে উঠলো না। একেক জনের বাবুর কাঁদছে। সে উঠে চলে যাচ্ছে। এভাবে ভেঙ্গে গেল আমাদের আড্ডা মহল। রুমে এসে দেখলাম রুমে অন্ধকার। আদ্র আগেই চলে এসেছে। তার নাকি অফিসের কাজ আছে। রুম অন্ধকার দেখে ভ্রু কুঁচকে গেল। বাহির থেকে আশা আবছা আলোয় কিছুটা দেখা যাচ্ছে। এগিয়ে গিয়ে লাইট জ্বালিয়ে দিলাম। পুরো রুমে কোথাও বাপ্-মেয়ের দেখা নেই। মেয়ের কথা মনে পড়তেই খেয়াল হলো আদ্রি তার নানা-নানুর সাথে ঘুমিয়েছে। এ বাড়িতে এলে প্রায়ই ও আব্বু-আম্মুদের সাথে ঘুমায়। আব্বুও আছে নাতনি অন্ত প্রাণ। নাতনি যা বলে তাই ঠিক। আদ্র কে না পেয়ে ব্যালকনির দিকে পা বাড়ালাম। মহাশয় নিশ্চই সেখানে আছে। আমার ভাবনাই ঠিক হলো।

আদ্র মশাই কোলে ল্যাপটপ নিয়ে ব্যাস্ত হাতে কি-বোর্ডের ওপর অ*ত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। আদ্রর সামনে রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়ালাম। উনি আমায় দেখে লেপটপটা পাশে রেখে দিলো। হেঁচকা টান দিয়ে আমাকে নিজের কোলে বসিয়ে দিলো। ঘাড়ে থুতনি ঠেকিয়ে বলল,
“এতক্ষনে আসার সময় হলো মেডাম?”

“এসেই বা কি করবো বলো? বর মশাই তার ল্যাপটপ নিয়ে ব্যাস্ত। আমি এসে কি করবো?”

“কি করবি, তাই?ওয়েট দেখাচ্ছি”

আদ্র শক্ত করে জড়িয়ে নিলেন নিজের সাথে। ঘাড়ে নাক ঘষতে ঘষতে ফিসফিসে কণ্ঠে বলল,
“বরের সাথে রোমান্স করতে আসবি”

“এই সর তো তোমার ঢং নিয়ে। এক বাচ্চার বাপ্ হয়ে গেছে তাও তার রোমান্সের শেষ নেই”

আদ্রকে ঠেলে উঠে দাঁড়ালাম। রেলিংয়ে ভর দিয়ে দেখছি রাতের শহর। কি সুন্দর নিস্তব্ধতায় ঘেরা চারপাশ। ব্যাস্ত শহরে নেই কোনো কোলাহল। শান্ত পরিবেশ। আদ্র এগিয়ে এসে জড়িয়ে নিলো আমায়। কাঁধে মুখ গুঁজে বলল,
“ভালোবাসি রৌদ্রময়ী। অনেক অনেক ভালোবাসি। রৌদ্রময়ীর জন্য আদ্রর ভালোবাসার শেষ নেই। আমি চাই এভাবেই #উষ্ণ_প্রেমের_আলিঙ্গন এ রৌদ্রময়ীকে সারাজীবন আগলে রাখতে। মন, প্রাণ, সত্ত্বা উজার্ করে ভালোবাসতে। যেই ভালোবাসার কোনো সীমা নেই, শেষ নেই”

আদ্রর চোখে তাকিয়ে আছি। মানুষটার চোখে আমার জন্য এক আকাশ সম ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছি। একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছি আদ্রর ঝিল সম আঁখিদ্বয়ের মাঝে। আদ্রর চোখে হারিয়ে যাওয়ার আগে ফিসফিস করে বলে উঠলাম,
“আমিও তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি বর মশাই”

আদ্র বুকে হাতে রেখে বলে উঠলো,
“আমি ধন্য”

এর মাঝেই নামলো ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টির ঝাপটায় শীত লাগছে। আদ্র আবেশে আরেকটু তার উষ্ণ আলিঙ্গনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো আমায়। বৃষ্টির ঝাপ্টা যেন জানান দিচ্ছে আমাদের কতো শত স্মৃতি এই বৃষ্টিকে ঘিরে। ভালোবাসা সুন্দর, ভ*য়ংকর সুন্দর।

🌸 সমাপ্ত 🌸

(অবশেষে শেষ হলো আপনাদের প্ৰিয় আদ্র আর তার রৌদ্রময়ীর পথচলা। আপনারা চাইলে #উষ্ণ_প্রেমের_আলিঙ্গন সিজন-২ আসবে। বাকিটা আপনাদের ওপর নির্ভর করবে। জানিনা কতো টুকু লিখতে পেরেছি। শেষ পর্ব আপনাদের মন মতো হবে কিনা? তবে আমি মন প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করছি নিজের বেস্ট টা দেওয়ার। এই গল্পের মাধ্যমে আপনাদের অনেক অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। এভাবেই আমাকে ভালোবেসে যাবেন। সাপোর্ট করে পাশে থাকবেন। শেষ পর্ব লিtতে গিয়ে হাত কেমন কাঁপছিলো। মনে হচ্ছে আদ্র আর রৌদ্রময়ীকে নিয়ে লেখা শেষ হয়েও হচ্ছে না। আপনারা অনেকেই বলেছেন গল্পটা এতো তাড়াতাড়ি শেষ না করতে। কিন্তু কিছুই করার নেই। গল্পটা পড়ে আপনার অনুভূতি জানাবেন। সুন্দর, সুন্দর রিভিউ দিবেন আপনার মন্তব্য আমায় অনুপ্রেরনা যোগায়। গল্পটা বেশি বেশি শেয়ার করবেন। যেন আপনাদের মতো আরো কিছু গল্প প্রেমিরা গল্প টা পড়তে পারে। আজ আর বেশি কিছুই বলতে ইচ্ছে করছে না। কেমন যেন খারাপ লাগা ঘিরে আছে মন জুড়ে। আপনাদের জন্য অনেক অনেক ভালোবাসা রইল। দোয়া করবেন আমার জন্য। যেন তাড়াতাড়ি আপনাদের মাঝে নতুন গল্প নিয়ে ফিরতে পারি। ধন্যবাদ সবাইকে আমায় এতটা সাপোর্ট ও ভালোবাসা দেওয়ার জন্য)