এই জোছনা ধারায় পর্ব-৩৯+৪০

0
340

#এই_জোছনা_ধারায়
#পর্ব-৩৯

পলি বেগম দরজার বাইরে থেকেই চলে গেলেন। ফুয়াদ তার কথার কোনো প্রত্যুত্তর করেনি। কিংবা এসব কথার বিপরীতে কি বলা উচিত তা তৎক্ষণাৎ ভেবে পায়নি।

দরজায় তালা লাগিয়ে ফুয়াদ এসে চেয়ারে বসলো। দরজা খোলা রাখলে এশা আবার চলে যেতে পারে। কিরকম গুমোট চেহারায় বসে আছে। হাবভাব বোঝা মুশকিল!

মায়ের প্রতি ফুয়াদের অভিমান, রাগ বেশ গভীর। এতটাই গভীর যে লন্ডন যাওয়ার আগে একবার দেখা করার কথাও ভাবেনি। কিংবা কখনো ও বাড়িতে যাওয়ার কথাও! কিন্তু মা এসে এমন ভাবে বলে গেলেন যেন তার সঙ্গে ওর হালকা কথা কাটাকাটি হয়েছে।
কিছুক্ষণ নিঃশব্দে বসে রইল ফুয়াদ। এশা তো এমনিতেই মুখে কুলুপ এঁটে আছে। জামাকাপড় গুলো গায়ে ঠিকঠাক হয় কিনা তাও পরে দেখছে না।

মানুষকে এত তোষামোদ করার স্বভাব ফুয়াদের নেই। কিন্তু মানুষ আর বউ যে এক জিনিস না তা এখন বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে। বউ হলো ঘরের সম্রাজ্ঞী। তাদের তোষামোদ করে, মাথায় তুলেই নাচতে হয়।

ফুয়াদ নরম গলায় বলার চেষ্টা করল,

-এশা.. লাভলি গার্ল। একটু কষ্ট করে জামাকাপড় গুলো গায়ে দিয়ে দেখো। ছোট-বড় হলে পরিবর্তন করে আনবো।

এশা চেয়ারের উপর হাত-পা তুলে হাঁটুতে মুখ গুঁজে বস আছে। সামান্য নড়াচড়াও করছে না। মনে হচ্ছে কোনো যন্ত্র।

-আমার কিন্তু প্রচুর শর্ট-টেম্পার। রাগারাগি করলে নিশ্চয়ই তোমার ভালো লাগবে না। তুমি আমার কোনো কথা শুনতে চাচ্ছো না। আমি এখন তোমাকে জামাকাপড় পরিয়ে দিবো? তোমাকে স্পর্শ করাও তো আবার নিষেধ।

এশা এবার চেয়ার ছেড়ে উঠে শপিং ব্যাগ গুলো হাতে নিয়ে লম্বা লম্বা পা ফেলে রুমের দিকে চলে গেল।

এর ভিতর শফিক আহমেদ ফোন করলেন ফুয়াদকে। ও একবার ভাবলো ফোন ধরবে না। পরে আবার কি ভেবে ধরলো। বাবা ওর হয়ে যথেষ্ট কথা বলেছিল। এমনকি বাড়ি ছেড়েও চলে গিয়েছিল। ও রাগের মাথায় তাকে অনেক অপমান করেছে। যদিও যা বলেছে সেসব মিথ্যা না! কিন্তু এই দূরত্বের পর নিজের বলা ক্রূর সত্যি গুলোর জন্যও মনের ভেতর কিরকম খচখচ করছে। দূরত্ব এমনই এক জাদু। কত রাগ, ক্ষোভ হালকা করে দেয়।

শফিক আহমেদ স্নেহ ভরা গলা জিজ্ঞেস করলেন,

-বাজান কেমন আছো তুমি?

-আছি কোনো রকম বাবা। এশা আমাকে পাত্তা দিচ্ছে না। আচ্ছা তোমাকে নাকি গ্রাম থেকে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে এনেছে? এ কথা কি সত্যি?

-ডাহা মিথ্যা কথা। তোমার মা এই বাড়ি আমার নামে লিখে দিয়েছে। এরপর গ্রামে গিয়ে অনেক অনুরোধ করে, কান্নাকাটি করে আমাকে নিয়ে এসেছে। বাড়ি লিখে দিয়েছে বলে আমি এখানে আসেনি। আসলে তোমার মায়ের মানসিক অবস্থা প্রচণ্ড খারাপ। তাই এসেছি।

ফুয়াদ কিছুক্ষণ থেমে থেকে বলল,

-ঠিক আছে। তার খেয়াল রেখো। যত্ন নিয়ো।

-আমাকে এত অনুরোধ করে, কান্নাকাটি করে এনে এখন সবার কাছে বলে বেড়াচ্ছে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে এনেছে আমাকে!

শফিক আহমেদ আবার বললেন,

-আচ্ছা শুনো কাল একবার বাসায় এসো। তোমার মা নিশ্চয়ই গিয়েছিল তোমার ওখানে। আমি জানি তার উপর তোমার অনেক রাগ। কিন্তু সে যাই হোক কাল অন্তত একবার এসো।

-আমি ও বাড়িতে যাবো না। এ ব্যাপারে কোনো অনুরোধ করো না।

-তোমার মা অসুস্থ। তিনি মানসিক ভাবে একেবারেই ঠিক নেই।

-দোয়া করি তিনি সুস্থ হয়ে যাক।

-তুমি নাকি লন্ডন চলে যাবে। কত বছর বাদে ফিরতে পারো তার কি ঠিক আছে! ফিরে যদি দেখো মা বেঁচে নেই। একটুও কি কষ্ট পাবে না?

-আমাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করো না।

-তুমি ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল ভাবলে তাই ই! অনেক তো হলো রাগ, জেদ! মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক কখনো ছিন্ন হয় না। সত্যি তোমার মা অনেক পরিবর্তন হয়েছে। নয়ত কি আমি তোমাকে আসতে বলতাম! আর পরিবর্তন না হলে পলি বেগমের মত মানুষ কি তোমার বাসায় গিয়ে তোমাকে আসতে বলে!

ফুয়াদ কিরকম অস্থিরতা অনুভব করে। কি জন্য এই অস্থিরতা তো নির্দিষ্ট করে বুঝতে না পারলেও এইটুকু বুঝতে পারছে সময়ের সাথে সাথে অনেক কঠিন প্রতিজ্ঞাও নড়বড়ে হয়ে যেতে চায়!

শফিক আহমেদ ফোন রাখেন। ফোন রাখার আগে তিনি বললেন,

-এশা তোমার উপর রাগ করে আছে তাই পাত্তা দিচ্ছে না। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করো না। রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করো। অল্পতে রেগে গেলে হবে না। সংসার হলো ধৈর্যের পরীক্ষা।

এশা যে শপিং ব্যাগ নিয়ে রুমে ঢুকেছে এরপর একবারে গোসল সেরে বের হয়েছে। ভেজা চুলে তোয়ালে পেঁচিয়ে আবার সেই চেয়ারের উপর এসে হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসেছে। শফিক আহমেদের সাথে ফোনে কথা বলা শেষে খেয়াল করলো ফুয়াদ।

ও নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে এশার পিছনে দাঁড়ালো। চুল থেকে তোয়ালেটা খুলে বলল,

-ভেজা চুল এভাবে বেঁধে রাখলে ঠাণ্ডা লাগবে।

-লাগুক।

ফুয়াদ আর একটা শুকনো তোয়ালে এনে ওর চুল মুছিয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলো,

-এশা তুমি কি আমার উপর রাগ, জেদ, ক্ষোভ ছাড়াও অন্য কোনো ব্যাপার নিয়ে বিষণ্ণ? এর বাইরে কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা করছো?

এশা নিজের মাথা ফুয়াদের দিকে এলিয়ে দিয়ে চুপচাপ চোখ বুঁজে থাকলো। ওর লম্বা চুল মেঝেতে লুটোপুটি খেতে লাগলো। ফুয়াদ একটা চেয়ার টেনে এনে বসে চুল গুলো নিজের কোলের মধ্যে রাখলো।

মেয়েটার এত বিষণ্ণতা, মলিনতা ও কীভাবে দূর করবে? নিজেকে বিশাল অপরাধী মনে হচ্ছে ফুয়াদের। এশা ওকে দেখে কিরকম শক্ত থাকার ভান করার চেষ্টা করলো! অথচ এখন কিরকম মুষড়ে পড়ছে।

কিছুক্ষণ পর ফুয়াদ খেয়াল করলো এশা আবার ঘুমিয়ে পড়েছে। চেয়ারের উপর ওভাবেই। কী আশ্চর্য কাণ্ড! কিছুক্ষণ আগেই তো ঘুম থেকে উঠলো। ও নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে এশা কি ঠিকঠাক ঘুমাতে পারেনি? ও ফিরে আসাতে এখন নিশ্চিন্ত অনুভব করছে সেজন্য এত ঘুমাচ্ছে? দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মানুষ তো এভাবে ঘুমাতে পারে না।

চেয়ারে বসে ঘুমানো যায়! যেকোন মুহুর্তে ধপ করে পড়ে যেতে পারে। এখন উপায় হলো ওকে কোলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেওয়া। এই স্পর্শ করা নিয়ে আবার কোন কেলেঙ্কারি হয় আল্লাহ জানেন! চুল মুছে দিলো তা নিয়ে তো কিছু বলল না। ফুয়াদ একটু সাহস পেল। ও এশাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো। মেয়েটার ওজন আগের চেয়ে কমে গেছে!

এশার ঘুম ভাঙলো পরদিন সকালে। ভোর সকালে না। নয়টার দিকে। ফুয়াদ অনেক আগেই বিছানা ছেড়েছে। কি এক অস্থিরতায় ওর ঘুম ভালো হচ্ছে না।

চোখ মেলেই তাজা ফুলের ঘ্রাণ পেল এশা। বেড সাইড টেবিলের উপর রাখা। সঙ্গে বারান্দা থেকে ভেসে আসা সিগারেটের গন্ধও পেল। ফুয়াদ বারান্দায় অন্যমনস্ক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ জানালা দিয়ে রুমের দিকে চোখ পড়তেই দেখলো এশার ঘুম ভেঙেছে। ও সিগারেট ফেলে রুমে এসে বলল,

-ফ্রেশ হও। রাতে কিছু খাওনি, খাবে। কোনো ঘাড়ত্যাড়ামি করো না।

-আমি তো চেয়ারের উপর ঘুমিয়েছিলাম। এখানে আসলাম কীভাবে?

-তোমাকে ক্রেন দিয়ে তুলে ওই রুমের চেয়ার থেকে এই রুমের বিছানায় এনেছি।

এশা ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো ফুয়াদ নাস্তা রেডি করছে গম্ভীর চেহারায়। পাউরুটি, জেলি, ডিম পোচ, কিসমিস, বাদাম। সঙ্গে কফি।

-খেয়ে-দেয়ে তৈরি হয়ে নাও। তোমার শ্বশুরবাড়ি যাবো।

এশা অবাক হলেও কোনো প্রশ্ন করলো না। ওর ধারণা ছিলো ফুয়াদ এত সহজে ওখানে যাবে না।

-মা ফোন করেছিল। যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছে।

ফুয়াদ একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বিন ব্যাগ চেয়ারের উপর শুয়ে আবার বলল,

-সম্পর্ক ছিন্ন করা আসলেই সহজ কোনো ব্যাপার না। রাগে, জেদে আমরা কতকিছু ভাবি। তুমিও হয়ত ভেবেছো আমার সঙ্গে আর থাকবে না!

এশা কিছু বলল না। ও চুপচাপ খেয়ে চলেছে। কিছুক্ষণ পর তাকিয়ে দেখলো ফুয়াদ চোখ বুঁজে শুয়ে আছে। খাওয়া শেষ করে ও শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নিলো।

*

রাহাত আর ফয়সাল আগেই পৌঁছেছে। ফুয়াদেরই দেরি হলো। মালা এই অসুস্থ শরীর নিয়ে নাস্তা বানিয়েছে ওদের জন্য।

মালা ওদের নাস্তা বানিয়ে খাওয়াচ্ছে! কি ভয়াবহ বিস্ময়কর ব্যাপার। সম্পা কিছুক্ষণ চোখ কপালে তুলে তাকিয়ে থাকলো। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ওকে এই দিন দেখা পর্যন্ত বাঁচিয়ে রেখেছে তার জন্য তাঁর প্রতি বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে মনে মনে।

ও ফিসফিস করে রাহাতকে বলল,

-দেখলা দুনিয়াতে সাহস হচ্ছে সবচেয়ে বড় ব্যাপার। আমরা যদি সাহস করে এই বাড়ি থেকে বের হয়ে না যেতাম তাহলে এই দিন দেখতে পেতাম?

-হয়েছে। চুপ করো।

ফুয়াদ এসে দেখলো ওদের নাস্তা খাওয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। শফিক আহমেদকে হাসিখুশি মুখে দেখা গেল। কিন্তু পলি বেগম এখনো এখানে উপস্থিত হননি।

মালা ওদের দেখে ব্যস্ত হয়ে পড়লো,

-তোমাদের এত দেরি হলো কেন? বসো, বসো। নাস্তা খাও।

ফুয়াদ বলল,

-আমরা খেয়ে এসেছি আপু।

রাহাত কটমট চোখে ফুয়াদের দিকে তাকালো। কি যে হয়রান করেছে ওকে এই বদমাশটা! পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে বিরিয়ানি খেতে পাঠিয়েছে। রাহাত সম্পাকে বলল,

-তুমি কিন্তু ওদের সাথে কথা বলবে না! খবরদার!

কিন্তু সম্পা কিছুক্ষণ পর গিয়ে ফুয়াদকে জিজ্ঞাসা করলো,

-এই ফুয়াদ ওই পুলিশ গুলো কি আসল ছিলো?

-হ্যাঁ ভাবী! কেন? আপনার লাগবে? কাউকে বিরিয়ানি খাওয়াবেন?

-ওসব তোমাদের মত বড়লোকদের কারবার। তবে বিরিয়ানিটা ভালো ছিলো। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।

ওরা সকলে মেহমানের মত ড্রয়িং রুমে বসে আছে। এর ভিতর পলি বেগমকে দোতালা থেকে সিঁড়ি ভেঙে নিচে নামতে দেখা গেল। তাকে খুব রুগ্ন, দুর্বল মনে হচ্ছে। তিনি এসে সিঙ্গেল সোফাটায় বসে বললেন,

-আজ হঠাৎ আবার আমার শরীরটা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ডাক্তার বলেছেন মানসিক রোগ। দুশ্চিন্তা, একাকিত্ব! খুব বেশি কথা বলা আমার পক্ষে সম্ভব না।

সবাই চমকে গিয়ে তাকালো। পলি বেগমকে এত দুর্বল, নমনীয় আগে কখনো দেখেনি। তিনি যে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের বিছানায় ছিলেন তখনও না।

তিনি কাহিল স্বরে বললেন,

-এই বাড়িটা তোমাদের বাপের নামে লিখে দিয়েছি। তোমরা এখন থেকে এখানেই থাকতে পারো। কোনো অসুবিধা হবে না। তোমাদের যার ইচ্ছে ব্যবসায় থাকবে, যার ইচ্ছে চাকরি করবে। তোমাদের কোনো স্বাধীনতা আমি আর নষ্ট করবো না। বউদের গহনাগাটি সব বউদের কাছেই থাকবে। বাসায় এখন দুইজন কাজের মেয়ে আছে। তোমাদের প্রয়োজন হলে আরো দুই-এক জন রেখে নিয়ো। যার যা খাবার পছন্দ খাবে। কোনো নিষেধ নেই। এশার যতদূর ইচ্ছে পড়বে। সম্পার বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে হলে ছাদে গিয়ে ভিজবে। মারুফা.. তোমার যা পছন্দ তুমিও তাই করতে পারবে।

পলি বেগমের কথার বিপরীতে বলার মত কিছু কেউ তৎক্ষণাৎ খুঁজে পেল না। কিছু সময় ধরে এরকম পিনপতন নীরবতা বিরাজ করলো। এই নীরবতার ভিতরই তিনি সোফা ছেড়ে উঠে বললেন,

-এই বয়সে একা থাকা খুব কঠিন। তার চেয়ে কঠিন ব্যাপার হলো তোমাদের না দেখে থাকা। তোমাদের কোলাহলপূর্ণ এই বাড়িটা নীরব দেখা আমার পক্ষে আর সম্ভব না। এত অর্থবিত্ত সব তুচ্ছ মনে হয়। আমি নাকি অনেক পাষাণ, নির্দয়! তাহলে তোমাদের ছেড়ে থাকতে পারছি না কেন? তোমরা তো দেখছি আমার চেয়ে বড় পাষাণ!

পলি বেগম চোখ মুছতে মুছতে নিজের রুমের দিকে চলে গেলেন। তিনি চলে যাওয়ার পর শফিক আহমেদ সর্বপ্রথম ফুয়াদের দিকে তাকিয়ে বললেন,

-দেখলে তো তোমার মায়ের অবস্থা! তুমি লন্ডন যাবে এ কথা এখনো তাকে বলেনি। তুমি একটু ভালো করে বলে যেয়ো বাবা।

ফুয়াদ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলল। শফিক আহমেদ এবার সবার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করলেন,

-তোমরা থাকবে না এখানে? নাকি চলে যাবে? ফুয়াদ তুমি তো আর মাত্র আছোই কয়টা দিন। এশাকে নিয়ে এখানেই থাকো।

ফুয়াদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে এশার হাত ধরে বলল,

-চলো, রুমে চলো।

এরপর ফয়সাল আর রাহাতও যার যার রুমের দিকে গেল।

*

এশা রুমে ঢুকেই আবার সেই হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে রইল। ও ঠিক করেছিল প্রেগন্যান্সির ব্যাপারটা এখন ফুয়াদকে জানাবেই না। লন্ডন যাওয়ার পর জানাবে। এভাবে তাকে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু সেই জেদটা কেমন হালকা হয়ে যাচ্ছে।

আচ্ছা খবরটা শুনে কি ফুয়াদ অখুশি হবে? রাগ করবে? অ্যাবরশন করতে বলবে? সে তো কত পরিবর্তন হয়েছে! তার এই সিদ্ধান্তর কি পরিবর্তন হয়নি?

সম্পার চোখে-মুখে চাপা উত্তেজনা। ও রুমে ঢুকে একটু বিশ্রাম না নিয়েই এশার রুমের দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। দরজা খোলা। ফুয়াদ নেই। এশা একা বসে আছে। যাক ভালো হয়েছে।

-এশা তুমি এরকম কেন বলো তো? আমি তো আমার পেটের সব খবর তোমাকে বলি! আর তুমি এত বড় ব্যাপারটা আমার থেকে গোপন করতে পারলে?

-কী ব্যাপার ভাবী?

-এখনও নাটক করছো। আমি ফুয়াদকে বলে দিবো? না, থাক। এত বড় খুশির খবর তোমারই ওকে দেওয়া উচিত!

এশা চমকে গেল। সম্পা ভাবী ওর প্রেগন্যান্সির ব্যাপারে বলছে? কিন্তু সে কীভাবে জানলো?

-মিনারা আন্টি আমাকে ফোন করেছেন। তিনি আমাকে এই খবরটা ফুয়াদকে দিতে বলেছেন। তুমি নাকি এত বড় ব্যাপারটা ফুয়াদের কাছ থেকে গোপন করছো! তোমার পরিকল্পনা কি? ও লন্ডন গেলে বলবে? ওকে শাস্তি দিবে? খুবই খারাপ পরিকল্পনা এশা।

এশা এবার সোজা হয়ে বসলো। মা এটা কেন করলো! ও সম্পার হাত ধরে অনুরোধের গলায় বললেন,

-ভাবী আপনি ফুয়াদকে বলবেন না প্লিজ।

-বলার হলে তো এতক্ষণে বলেই দিতাম। এটা তোমারই বলা উচিত! খুব আনন্দের মুহুর্ত!

এশা চোখ থেকে এবার ঝরঝর করে জল গড়াতে লাগলো।

-আরে এশা তুমি কাঁদছো কেন?

ও ভেজা গলায় বলল,

-তো কি করবো ভাবী? প্রায় তিনটা মাস আমি কিরকম মানসিক যন্ত্রণায়, দুশ্চিন্তায় ঝাঁঝরা হয়েছি। ভেবেছি তার সঙ্গে আর থাকবো না। কিন্তু দেখেন আমি কত ভালোবাসার কাঙাল। এখন একটু আদর, যত্ন করছে বলে সে কথা ভুলে গেছি। আমার অনেক কষ্ট হয়েছে ভাবী, অনেক। রাতে ঘুমাতে পারিনি, গলা দিয়ে খাবার নামেনি।

-পিছনের দুঃখের কথা মনে রেখে কি হবে বলো?

-বাচ্চা হওয়ার খবর অন্য সবার কত আনন্দের ব্যাপার! অথচ আমার জন্য ছিলো দুশ্চিন্তার। এখনো দুশ্চিন্তা দূর হয়নি। ওই লোক এই খবর শুনে খুশি নাও হতে পারে। হয়ত বলবে অ্যাবরশন এর কথা।

-আরে এত বাড়িয়ে ভাবছো কেন! তুমি এক্ষুণি গিয়ে ওকে খবরটা দাও! কোথায় ও? যাও ডেকে আনো। বাচ্চা হওয়ার খবর শুনে যদি ও অখুশি হয়, অ্যাবরশন এর কথা বলে তাহলে ওর মত হাজবেন্ডের কি দরকার!

এশা চোখ মুছে রুমের বাইরে গেল ফুয়াদের খোঁজে। তাকে এই মুহূর্তেই খবরটা জানিয়ে দিবে। এটা চেপে রাখা আর সম্ভব হচ্ছে না! কিন্তু পুরো বাড়ি খুঁজেও ফুয়াদকে পাওয়া গেল না। ওকে রুমে রেখে সে অনেকক্ষণ যাবৎ ই নিখোঁজ।

(চলবে)

#ইসরাত_জাহান_তানজিলা

#এই_জোছনা_ধারায়
#পর্ব-৪০

পলি বেগমের এই পরিবর্তন সবার কাছে অবিশ্বাস্য ঠেকছে। বাড়িতে এখন কেবল এ ব্যাপারেই কানাঘুষা চলছে। মারুফার ধারণা তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেলেই আবার আগের মত স্বৈরাচারী আচরণ শুরু করবেন। এখন অসুস্থ। তাই মন দুর্বল। এসব কথার বিপরীতে ফয়সাল শক্ত মুখে ধমক দিয়ে ওকে থামিয়ে দিলো।

বাড়ির সব জায়গায় ফুয়াদকে খুঁজলো এশা। শুধু পলি বেগমের রুম বাদে। কারণ ওই রুমে তাকে কখনো যেতে দেখেনি। কিন্তু ফুয়াদ এই মুহূর্তে মায়ের রুমেই বসে আছে।

বসে আছে অনেকক্ষণ যাবৎ ই। কিন্তু কথা বলতে অদ্ভুত রকমের সংকোচ। এই সংকোচের কারণ কি হতে পারে? দূরত্ব, রাগ, জেদ, দ্বন্দ্ব, ভাঙচুর, কলহ.. সব শেষে মায়ের নত হওয়া? হয়ত আরো অনেক কিছু।

পলি বেগম বোধ হয় এই নিয়ে দশবারের মত জিজ্ঞেস করলেন,

-তুমি কিছু বলবে বাবা? বলছো না কেন? এভাবে বসে আছো কেন?

লন্ডন যাওয়ার ব্যাপারে মাকে জানাতে এসেছে ও। তার কারণে ওর ভেতরটা কতখানি ভেঙেছে, কত স্বপ্ন ভেঙেছে, জীবনটা কতখানি বিষিয়ে গেছে– সেসব অন্যায়, অপরাধের দন্ডে আজ আর মাপতে ইচ্ছে করছে না। শুধু মনে হচ্ছে সমস্ত রাগ, জেদ ধুয়ে মুছে ভালো ভাবে বলে যেতে পারলে নিজের কাছে স্বস্তি পাবে।

-মা আমি লন্ডন যাচ্ছি। আগামী সপ্তাহে ফ্লাইট।

পলি বেগম বিমর্ষ মুখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো ফুয়াদের দিক।

-লন্ডন যাচ্ছো?

-হুঁ।

-এশাকে নিয়ে যাবে?

-আপাতত তো নিতে পারছি না। আমি আগে যাই। তারপর নিয়ে যাবো।

-ওহ। আর কখনো আসবে বাংলাদেশে?

-আসবো না কেন? তুমিও বাবাকে নিয়ে লন্ডন বেড়াতে যাবে। আমরা এক সঙ্গে স্নো ফল দেখবো। চেরি ব্লসম দেখবো।

পলি বেগম একটু ম্লান মুখে হাসার চেষ্টা করে বললেন,

-সে পর্যন্ত বেঁচে থাকবো বলে মনে হচ্ছে না বাবা। সেই যে চেয়ার থেকে পড়ে জ্ঞান হারালাম! শরীরটা এখনো ঠিক হচ্ছে না।

-অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করছো। এখন তো আমরা সবাই এসে পড়েছি। শীঘ্রই সুস্থ হয়ে যাবে। আর সন্ধ্যায় তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো।

-আমার একটু পরই ডাক্তারের কাছে অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে। তুমি আরেকটু আমার কাছে বসো বাবা। তোমাকে দেখি।

পলি বেগম ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। ফুয়াদের খানিকটা অস্বস্তি সঙ্গে কিছুটা অপরাধ বোধও হচ্ছে। ও কি খুব বেশি বাড়াবাড়ি, অন্যায় করে ফেলেছে? না, তা অবশ্যই না! তবুও কেন মনের ভেতর খচখচ্ করছে!

-তৈরি হও। আমি তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো।

-না, তোমার এত কষ্ট করতে হবে না। তোমার বাবা যাবেন।

-এটাকে কষ্ট ভাবছো কেন মা!

এই বলে ফুয়াদ উঠে দাঁড়ায়। এরপর কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে মাকে নিঃসংকোচে জড়িয়ে ধরে। মাকে জড়িয়ে ধরা ওর জন্য সহজ কোনো কাজ না। জগতের সব চেয়ে কঠিন কাজের একটি। এক রাজ্যের সংকোচ ঠেলে আজ ও সেই কাজটি করে বলল,

-তুমি অনেক ভালো মা! নিষ্ঠুর, নির্দয়, পাষাণ না!

মায়ের রাগ, জেদ, আত্ম-গরিমার কারণে বুঝ হওয়ার পর থেকেই পাহাড় সম দূরত্ব আবিষ্কার করে। অন্যদের মত মায়ের কোলে মাথা রাখার কোনো স্মৃতি নেই ওর। জড়িয়ে ধরার স্মৃতি নেই। আহ্লাদ, আবদার করার মতও সহজ সম্পর্ক ছিলো না।

পলি বেগমের মনো হলো তার বুক থেকে বিশাল ভারী কিছু ধপ করে নেমে গেল। বুকে আটকে থাকা কোনো বিষাক্ত কাঁটা উপড়ে গেছে। নিদারুণ স্বস্তি পেল, নিজেকে হালকা অনুভব করলো। মনে হচ্ছে ডাক্তারের কাছে না গেলেও চলবে।

-তোমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট কয়টায়? তৈরি হচ্ছো না কেন?

এই বলে ফুয়াদ রুম থেকে বেড়িয়ে গেল। এশাকে কোথায়ও দেখছে না। চলে যায়নি তো? ফুয়াদ জিহ্বায় কামড় দিলো! কী মহা বিড়ম্বনা!

-ভাবী, এশাকে দেখেছেন?

মারুফাকে সামনে পেয়ে জিজ্ঞেস করলো ফুয়াদ।

-ও তো তোমার খোঁজ করছিলো। তুমি কোথায় ছিলে?

এর ভিতর এশাকে দেখা গেল। সে হন্তদন্ত হয়ে আসছে অস্থির মুখে! খুব সম্ভবত নিচ তলায়, গ্যারেজে, গেটের কাছে খুঁজতে গিয়েছিল।

ফুয়াদকে দেখেই রেগেমেগে আগুন হয়ে প্রায় চিৎকার করে উঠলো,

-কোথায় গিয়েছিলেন আপনি? কতক্ষণ ধরে খুঁজছি। আহাম্মক কোথাকার!

-মাঝে মাঝে এরকম গালি-টালি দিয়ো। শুনতে তো ভালোই লাগে। একেবারে পাক্কা বউ বউ গালি!

-ধুর!

এশা বসে পড়লো। কি এক রাগে, বিরক্তিতে তার কেঁদে ফেলার অবস্থা। ফুয়াদ হাঁটু গেড়ে ওর পাশে বসে জিজ্ঞেস করলো,

-তুমি কি ভেবেছিলে আমি আবার কোথায়ও চলে গেছি?

-তো কি ভাববে!

-এইটুক সময় না দেখেই এত উতলা হয়ে গেলে! এত উদ্বিগ্ন!

-আমি আপনাকে একটা কথা বলার জন্য খুঁজেছি!

-যে জন্যই খুঁজো, আমার জন্য ব্যাকুলতা অস্বীকার করতে পারবে?

পলি বেগম ডাক্তারের কাছে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে এসেছেন। তাকে ডেকে ফুয়াদ বলল,

-আমি মায়ের রুমে ছিলাম। মাকে নিয়ে এখন একটু ডাক্তারের কাছে যাবো! তুমিও চলো। আমাকে না দেখে আবার উতলা হয়ে যাবে।

-আমার কি কাজ? আপনি যান।

ফুয়াদ এশার হাত ধরে টেনে দাঁড় করলো।

-আরে এই অবস্থায় আমি বাইরে যাবো।

-গায়ের জামাটা তো ভালোই। সুন্দর লাগছে তোমাকে।

পলি বেগমকে ডাক্তার দেখানো শেষে ফুয়াদ মা আর বউকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে আসে। তাদের কেউই আসতে চায়নি। ও এক প্রকার জোরজবরদস্তি করে এনেছে।

ফুয়াদ দুইজনের পছন্দ মত খাবার অর্ডার করলো। খাবার আসার ফাঁকে এশাকে বলল,

-যাও মায়ের পাশে গিয়ে বসো। তোমাদের দুইজনের একটা ছবি তুলি!

এশা বোধ হয় শাশুড়ির সঙ্গে অস্বস্তি বোধ করছে। করা তো স্বাভাবিক! বিয়ের পর থেকেই যে ঝামেলা হলো! তবুও একটু সংকোচ নিয়ে গিয়ে তার পাশে বসলো। ফুয়াদ একটা ছবি তুলে বলল,

-এক ভাবেই বসে থাকবে? কাঁধে হাত দাও।

ও পলি বেগমের দিকে তাকালো। তিনি সহজ ভাবে বললেন,

-দাও। সমস্যা নেই!

ওয়েটার খাবার নিয়ে এসেছে। খাবারের গন্ধে এশার বমি চলে আসলো। এখানে বমি করলে কিরকম কুৎসিত ব্যাপার হবে!

-আমার খেতে ইচ্ছে করছে না। পেট ভরা।

এই বলে এশা মুখ চেপে বসে রইল। ফুয়াদ ওর জন্য খাবার পার্সেল করে নেয়।

*

বাসায় ফেরার সঙ্গে সঙ্গে ও অস্থির মুখে ফুয়াদকে বলল,

-আপনার সাথে আমার কথা আছে।

ওর হাবভাব দেখে ফুয়াদ সামান্য বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

-কি কথা? কথা আছে তো বলো! তুমি তো আজকাল মুখে কুলুপ এঁটে থাকো। আমি তোমার কথা শোনার জন্য চাতকের মত অপেক্ষা করি!

-ছাদে চলুন!

ফুয়াদ কোনো প্রশ্ন না করে ওর সাথে ছাদে গেল। মানুষ গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে রুমে বসে আর এশা ওকে ছাদে নিয়ে এসেছে।

-তুমি কি আমাকে ছাদ থেকে ফেলে টেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছো নাকি?

এশাকে ভীষণ দুশ্চিন্তিত, উৎকন্ঠিত মনে হলো। চোখে মুখে কি এক আশঙ্কা! ছাদের এই ঠাণ্ডা বাতাসের ভিতরও ঘামতে ঘামতে ও বলল,

-আচ্ছা ফুয়াদ, যে মানুষটা বাচ্চা কাচ্চা পছন্দ করেন না। বাবা হওয়া মানে যার কাছে বিশাল দায়িত্ব। এই ছোট জীবনে অত দায়িত্ব নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা যার নেই। সেই মানুষটাকে বাবা হওয়ার খবর কীভাবে দেওয়া উচিত?

ফুয়াদ কিরকম বোকার মত তাকিয়ে থাকলো। কি বলতে চাচ্ছে এশা? ব্যাপারটা ধীরে ধীরে বোধগম্য হতেই ও একটা শুকনো ঢোল গিললো। জগতের সমস্ত বিস্ময় জড়ো করে বলল,

-মানে! কি বলছো তুমি?

-আপনি কি আসলেই একটা আহাম্মক? কি বলছি বুঝতে পারছেন না? আপনি বাবা হতে চান না তো আমি প্রেগন্যান্ট হলাম কেন! আপনাকে আসলেই ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া উচিত! নিশ্চয়ই আপনি খবরটা শুনে খুশি হননি! এখন কি অ্যাবরশন করতে বলবেন? তিন মাসেরও বেশি হয়ে গেছে! তা সম্ভব না। সম্ভব হলেও আমি করতাম না।

ফুয়াদ কোনো প্রত্যুত্তর না করে হতবুদ্ধি হয়ে দ্রুত একটা সিগারেট ধরিয়ে বিড়বিড় করে বলল,

-দাঁড়াও। আমার মাথা কাজ করছে না।

-মা হওয়া সবার জন্য কত আনন্দের! আমার জন্য শুধুই দুশ্চিন্তার! আপনি নিখোঁজ হয়ে গেলেন। সেই অবস্থায় আমি এটা জানতে পারলাম! কী যন্ত্রণায় আমার দিন কেটেছে!এখন আপনার মাথা কাজ করছে না! পাষাণ, নির্দয়! সন্তান হওয়ার খবর শুনে মাথা কাজ করে না। আরে এমন ইতর লোকের সামনে আমি এখনো দাঁড়িয়ে আছি কেন!

এশার ঠোঁট কাঁপছে! ও একটু পরই বোধ হয় হাউমাউ করে কেঁদে ফেলবে। ফুয়াদের সামনে আর এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে বিধ্বস্ত মুখে এক প্রকার দৌড়ে ছাদ থেকে নেমে গেল।

*
ফুয়াদ ছুটে এসে ওকে পেল দোতলায় উঠার সিঁড়ির মাঝমাঝি। লিভিং রুমে বাসার সবাই বসা। ওদেরকে এমন ছোটাছুটি করতে দেখে উৎসুক চোখে তাকালো।

আকস্মিক আক্রমণের মত ফুয়াদ জাপটে ধরলো এশাকে। স্থান-কাল কিছু পরোয়া করলো না। শফিক আহমেদ সেদিকে একবার তাকিয়ে দ্রুত চোখ নামিয়ে নেয়। তাকে বিব্রত দেখাচ্ছে। তিনি মেইন দরজার দিকে হাঁটা শুরু করলেন।

এশা চেষ্টা করেও ফুয়াদের আলিঙ্গন থেকে মুক্ত হতে পারলো না। ফুয়াদ কেমন ঘোর লাগা, দিশাহারা গলায় বলল,

-আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরছি না এশা। তোমাকে স্পর্শ করা তো নিষেধ। তোমার ভিতর যে আরেকজন আছে তাকে অনুভব করার চেষ্টা করছি।

এশার ছটফটানি থামলো। ও এবার শান্ত হলো। ফুয়াদ সেই শান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে পাগলের মত ওর কপালে, গালে চুমু খেতে লাগলো।

ফয়সাল চেঁচিয়ে উঠলো,

-এই তোরা এখানে কি করছিস! সমস্যা কি তোদের? যা, রুমে যা!

ফুয়াদের সম্বিত ফিরে। ও এশাকে ছেড়ে লিভিং রুমের উপস্থিত সবাইকে উদ্দেশ্যে করে আত্মহারা গলায় প্রায় চিৎকার করে বলল,

-এশা, মাই লাভলি ওয়াইফ! আমি ওকে অসম্ভব ভালোবাসি। অসম্ভব! ও আমার হৃদয়ের পুরোটা দখল করে নিয়েছে। এই ভীষণ সুন্দর মনের মেয়েটি মা হচ্ছে। আর আমার মত আহাম্মককে বাবা হওয়ার অনুভূতি দিয়েছে। আমি ওর প্রতি কৃতজ্ঞ! আমি ওকে সারাজীবন পরম ভালোবাসায় আগলে রাখতে চাই। ওর সুন্দর চোখ দু’টি যেন আর আমার কারণে না ভিজে। প্লিজ তোমরা ওকে অভিনন্দন জানাও।

(চলবে)

#ইসরাত_জাহান_তানজিলা