এই ভালো এই খারাপ পর্ব-০৬

0
91

#এই_ভালো_এই_খারাপ
#পর্ব_৬
#প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

আজলান পায়ের উপর পা তুলে বসে টিভি দেখছিলো। আম্বিয়া বেগম হন্তদন্ত পায়ে হেঁটে ঘরে এসে বলল, ” বউটার কোমরে কত জখম হয়েছে দেখেছিস? মনে হয় হাড্ডিতে আঘাত লেগেছে। এবার মনে হয় বাচ্চাটার আর রক্ষে হলো না। ”

আজলান ভুরু কুঁচকে কথাগুলো শুনে বলল,

” এসব কখন হলো? ”

” পালঙ্ক থেকে পড়ে যাওয়ায় হয়েছে। তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাহ ওকে। এখন হাঁটতে অব্দি পারছে না। তোকে তো কিছু বলাও যায় না।”

” আমাকে কিছু না বললে বুঝবো কি করে? ”

” বৌ বাচ্চা তোর। অথচ চিন্তায় মরি আমি। তোকে কেন যে বিয়ে করাতে গেলাম! ”

আজলান রিমোট চেপে টিভি বন্ধ করে বিছানা থেকে নামলো।

অনেক বাছাবাছির পর থিন স্পোর্ট উইন্ডব্রেকার আল্ট্রা লাইট জ্যাকেটটা বাছাই করে পড়ে নিল। তারপর মাথার চুল আঁচড়ে আবার হাত দিয়ে এলোমেলো করে দিল। আবার আঁচড়ালো। আমেনা বেগম সরু চোখে চেয়ে আছেন। ছোট থেকেই তার এসব ঢঙ দেখতে দেখতে অতিষ্ঠ তিনি। বৌটা সহ্য করছে এই বেশি। কিছু বলতেও পারেন না।

আজলান পারফিউম স্প্রে করে
ফোনটা পকেটে ভরতে ভরতে বের হলো। আয়জাকে ডেকে বলল,

” ওকে বোরকা পড়িয়ে দে। মঈনকে গাড়ি বের করতে বল। ”

আম্বিয়া বেগম তার পিছুপিছু এসে বললেন,

” তুই ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাচ্ছিস? ”

আজলান বলল, ” ওখানে পরিচিত একজন ডাক্তার আছে তার কাছে যাবো। ”

আম্বিয়া বেগম খুশি হয়ে বললেন, ” আল্লাহ সুবুদ্ধি দিল এবার। ”

তিথি শ্বশুরের সাথে গল্পগুজব করছে। এই বাড়িতে এই মানুষটা সম্পূর্ণভাবে তিথির পক্ষে কথা বলে। শ্বাশুড়ি মায়ের মতো ক্ষণেক্ষণে পল্টি খায় না। সে দেখেছে ছেলের সাথে উনার অঘোষিত একটা যুদ্ধ চলে সবসময়। তবে উনি ভদ্রলোক। সবসময় তর্কে জড়াতে ভালোবাসেন না। সুকৌশলে এমনভাবে আজলান শেখকে খোঁচা দিয়ে কথা বলেন যেটা বাড়ির অন্যরা সহজে ঠাহর করতে না পারলেও আজলান শেখের কোণা চোখের চাহনি দেখে তিথি স্পষ্ট বুঝতে পারে এ যেন খোঁচা নয়। ওই গোঁয়ার গালটাতে ঠাস ঠাস করে পড়া চড়। দৃশ্যটা ভাবতেই তিথির শান্তি লাগে।

তিথির অসহ্য রকমের যন্ত্রণা হচ্ছিলো। এমনকি পায়ের উপর ভর দিয়ে হাঁটতেও দমবন্ধ লাগছিলো ব্যাথায়। আয়জা বোরকা পড়িয়ে দিতেই আজলান বলল,
” চলো। ”

তিথি মুখ গোমড়া করে চেয়ে বলল, ” আমি মুখটুক কিছুই ধুইনি। ”

আজলান বলল,

” তোমার মুখ দেখছে কে? ”

আম্বিয়া বেগম বললেন, ” ওর কথা শুনিস না তো বাবা। নিয়ে যাহ। ও মনে হয় সাজগোছ করার কথা বলছে। ”

তিথি বলল, ” এগজ্যাক্টলী শ্বাশুমা। ”

আজলান তার হাত ধরে বলল, ” শাটআপ। চলো। ডাক্তারের কাছে যাচ্ছ সিনেমা হলে নয়। ”

তিথিকে টেনে তুলতেই তিথি কোমরে হাত চেপে “ও মারে বাপরে” বলে ডেকে উঠলো। আজলান ভয় পেয়ে হাতটা ছেড়ে দিল। তিথি বলল,

” যাব না ডাক্তারের কাছে। আমি হাঁটতে পারছিনা।”

আফতাব শেখ চশমা ঠিক করে বললেন, “তোমার বরকে বলো যেন কোলে তুলে নিয়ে যায়। ”

তিথির ব্যাথিত মুখখানা ঝলমলিয়ে উঠলো। আজলান বলল, ” এতক্ষণ তো বেশ হাঁটছিলে। ”

তিথি বলল, ” তোমার কোলে উঠবো আমি? কোনসময় ধপাস করে ফেলে দাও তার গ্যারান্টি নেই।”

আফতাব সাহেব মঈনকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

” মঈন তুমি তোমার স্যারের হয়ে সব কাজ করো। এটুকু করতে পারবে না? ”

মঈন মাথা হেঁট করে দাঁড়িয়ে রইলো। আজলান উনার দিকে তাকিয়ে কাঠকাঠ গলায় বললো,

” মঈন গাড়ি স্টার্ট দাও। ”

মঈন চলে গেল। আম্বিয়া বেগম উনার স্বামীকে বিড়বিড় করে বললেন, ” বেয়াক্কেল একটা। ওর বউ মঈন কোলে নেবে কেন? নাতিপুতি হয়ে গেছে এখনো আক্কেল হয় না বুড়োর। ”

তিথির কিছু ভালো লাগছিলো না। তবুও চুপটি করে সবার তামাশা দেখছিলো বিশেষ করে আজলান শেখের। তাকে কিভাবে কোলে নিলে তার একটুও আয়ু ক্ষয় হবে না, এতটুকু সৌন্দর্য কমবে না সেটা বোধহয় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছিলো। তারপর অনেক ভাবাভাবির পর তাকে কোলে তুলে নিয়ে বেরিয়ে গেল। তিথি কিচ্ছু বললো না। ব্যাথায় সে জগত সংসার ভুলে যাচ্ছে। আজলান শেখকে বোধহয় সবার আগে ভুলে গেছে। হঠাৎ করে মাথায় এল, আরেহ এ কে? কোথা থেকে এল?
তার জীবনটা তো ঝকঝকে নীল আকাশের ওই রংধনুর মতো রঙিন ছিল। হাসিখুশি চঞ্চলমতি তিথি সে! এত দুঃখ চেপে হাসতে কবে শিখে গেছে?

ডাক্তার তাকে ভালোমতো দেখে ফরোয়ার্ড বন্ডিং, ব্যাকওয়ার্ড বন্ডিং পরীক্ষা দিল। সাথে নিউরোলজিক্যাল ডিফিসিয়েন্সি আছে কী না সেই ব্যাপারেও কথা বললো। কোমরের এক্স-রে এবং এমআরআই করাতে বললো। এবং পরামর্শ দিল সব সময় শক্ত সমান বিছানায় ঘুমাতে হবে। ফোমের বিছানায় ঘুমানো যাবে না এবং ফোমের নরম সোফায় অনেকক্ষণ বসা যাবে না। ঘুমানোর সময় সোজা হয়ে ঘুমাতে হবে। বেশি নড়াচড়া করা যাবে না।

আজলান বাচ্চার কথা ভেবে অস্থির হয়ে পড়েছিলো। ডাক্তার একটু রাগত স্বরে বললো, ”
“প্রেগন্যান্সির সময় শুধু মাকে নয় ফ্যামিলির সবাইকে সতর্ক থাকতে হয়। ভাগ্য ভালো বেবির কিছু হয়নি। অনেক বড় একটা বিপদ হয়ে যেতে পারতো। ”

তিথি পুরোটা সময় কোনোপ্রকার কথা বললো না। দুটো ইনজেকশন পুশ করার পর কেবিনে প্রায় দু’ঘন্টার মতো সময় কাটিয়েছে সে। ব্যাথা কমে আসার পর দু একটা কথা বলেছে নার্সের সাথে। আজলান ভেবেছিলো মারাত্মক কিছু হয়ে গিয়েছে। তিথি কথা বলায় স্বস্তি পেল সে।
কি ডেঞ্জারাস মহিলা! সারাক্ষণ বকরবকর করে মাথা নষ্ট করে দেবে আবার চুপ করে থাকলেও আতঙ্কের শেষ নেই।

গাড়িতে নিয়ে আসার পথে আজলান বলল,
” হাঁটতে পারবে?”

তিথি বলল, ” দৌড়াতে পারবো। ছুঁবে না একদম। অসহ্য লাগে। ”

আজলান বলল, ” তার আবার ছিঁড়ে গেল! ”

তিথি বলল, ” তোমার ষড়যন্ত্র কি আমি বুঝতে পারছিনা? তুমি আমার বাচ্চাকে মেরে ফেলার জন্য ষড়যন্ত্রটা করেছ। তোমাকে আমি ছাড়বো না। ”

বলেই আজলানের বাহু খামচে দিয়ে টলমলে চোখে তাকালো।
আজলান তাকে সংশোধন করে দিয়ে বলল, ” ওটা আমার বাচ্চা ঠিক আছে? এবোরশন করানোর জন্য ডাক্তারের পিছুপিছু কে দৌড়েছে তার প্রমাণ আমার কাছে আছে। শুকনো দরদ দেখাচ্ছ এখন? ডিজগাস্টিং! একদম চুপ থাকো। বেশি কথা বললে এখানে রেখে চলে যাবো। ”

তিথি মুখ ভার করে রইলো। ব্যস্ত শহরের এই কোলাহল তিথির একটুও ভালো লাগছে না। হঠাৎ হঠাৎ জীবনটাকে বেশ পানসে লাগে। যেন কোথাও একটুও স্বস্তি নেই, শান্তি নেই, আনন্দ নেই। জীবনে ভালোবাসার মানুষ থাকার চাইতে ভীষণ করে ভালোবাসতে পারার মতো একটা মানুষের দরকার হয়। যাকে খুব করে মন ভরে ভালোবাসতে ইচ্ছে করবে। তিথির জীবনে এরকম কেউই আসেনি। না তাকে কেউ ভালোবেসেছে, না তার কাউকে ভালোবাসতে ইচ্ছে করেছে। যার দিকেই দু পা এগিয়েছে সেই তাকে দশ পা পিছিয়ে যেতে বাধ্য করেছে।

যেতে যেতে হঠাৎ করে মঈনকে সে বলল,

” ভাইয়া একটা ফুচকার দোকানে নিয়ে চলেন। দুই প্লেট খাবো। ”

মঈন আজলানের দিকে ফিরে চাইলো। তিথি বলল,

” আমি যেটা বলছি সেটা করুন।”

মঈন বলল, ” স্যার…

আজলান বলল, ” ওইসব তেল চিটচিটে ফুচকা খাবে তুমি? ”

তিথি বলল, ” হ্যা খাবো। তুমি চলে যাও। আমি ভাইয়ার সাথে ফিরবো। ”

আজলান বলল, ” আমি খেতে দেব না তোমাকে। শুধু নিজের চিন্তা করছো। বেবির চিন্তাও করতে হবে তোমাকে। ”

তিথি বলল, ” ও আমাকে গুঁতো মেরে বলছে ফুচকা খেতে। বলছে, মা মা এরকম সুযোগ আর পাবে না। ”

মঈন ঠোঁট টিপে টিপে হাসতে লাগলো। আজলান বলল,

” ও গুঁতো মারবে কি করে? ”

তিথি বলল, ” সেটা তুমি বুঝবে কিভাবে? তুমি কখনো মা হয়েছ? নাকি কখনো হবে? ”

আজলান বলল, ” মেহবুব তোমাকে আমি ওয়ার্ন করছি এগুলো অস্বাস্থ্যকর খাবার। ”

তিথি ফিসফিসিয়ে বলল, ” তোমার চুমুর চাইতে স্বাস্থ্যকর আছে। ”

আজলান চুপ করে রইলো। তিথি বলল, ” ভাইয়া চলেন। ”

মঈন গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিল। স্যার কিছু বলেনি দেখে সে ফুচকার দোকানের সামনে গিয়ে গাড়ি থামালো। তিথি সবার আগে নেমে গিয়ে ফুচকা তার জন্য আর মঈনের জন্য ফুচকা অর্ডার দিল। আজলান গাড়ি থেকে নেমে চারপাশ পর্যবেক্ষণ করতে ব্যস্ত। দোকানের ভেতরটা কেমন, কিভাবে বানাচ্ছে, কি দিয়ে বানাচ্ছে এসব জিনিস লক্ষ করছে বেশ সূক্ষ্মভাবে। তিথি খেতে খেতে তাকে দেখলো। এত সুন্দর পুরুষ মানুষকে সে ভালোটালো বাসতে পারেনি কেন? অথচ তার মতো কালো বুঁচকি কি এর মতো কাউকে পাওয়ার যোগ্যতা রাখে? কথায় আছে না কপালে থাকলে সে অটোমেটিক্যালি চলে আসে। আজলান শেখও তার জীবনে অটোমেটিক্যালি চলে এসেছে। তাই বোধহয় তাদের মধ্যে সংসার করাটা জরুরি হয়ে পড়েছিলো, ভালোবাসা নয়।

মঈন আজলানের উদ্দেশ্যে বলল,

” স্যার খেয়ে দেখতে পারেন। দারুণ। ”

আজলান বলল, ” তুমিও ওর সাথে তাল মিলাচ্ছো? এসব খেলে পেটে গ্যাস হয়। ”

তিথি টুলের উপর বসে খেতে খেতে বলল,

” এত স্বাদ ক্যা? ”

আজলান তার দিকে চাইতেই তিথি বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ” একটা খাবে? পেটের সব গ্যাসগ্যাস ফুড়ফুড় করে বেরিয়ে যাবে কাল সকালে। ”

খাওয়ার সময় বিষম উঠে গেল মঈনের। আজলান মুখ ফিরিয়ে নিয়ে দোকানিকে ধমকে বলে উঠলো,

” এই তোরা গ্লাভস পড়িস না কেন? ”

দোকানি হেসে উঠে বলল, ” কে ভাই? এসব জেনে আপনি কি করবেন? ”

আজলান বলল, ” গ্লাভস ছাড়া হাত দিয়ে সবাইকে খেতে দিচ্ছিস। আবার শসা, ডিমগুলোও হাত দিয়ে ধরছিস। তেঁতুলগুলো হাত দিয়ে কচলাচ্ছিস। এসব স্বাস্থ্যকর? মানুষকে মজার জিনিস খাওয়াচ্ছিস নাকি বিষ? ”

” আরেহ ভাই জ্ঞান দিয়েন না তো। অনেক বছর ধরে দোকানটা চলতেছে। আপনার সমস্যা হলে খাইয়েন না। ব্যস। ”

আজলান বলল,

” পুলিশ এসে দোকানটা উড়িয়ে দিলে ভালো হবে? প্লেটগুলোও তো ভালো করে ধুয়েমুছে রাখিস না। এখানে এত মাছি কেন? ”

দোকানি বিরক্তিকর গলায় বলল,

” আরেহ ভাই কি সমস্যা আপনার? না খাইলে না খান। আপনার জ্ঞান শুনবার জন্য আমরা বসে নাই। পুলিশ অনেকবার আসছে। ওরাও চটপটি ফুচকা খেয়েদেয়ে সাথে বউয়ের জন্য নিয়ে গেছে।”

আজলান বলল, ” আমি ঝামেলা বাঁধাচ্ছি? ”

তিথি ফুচকা মুখে পুরে দ্রুত গিলে ফেলে আজলানকে বলল, ” এখানে ঝামেলা করো না প্লিজ। ”

আজলান তাকে সরিয়ে দিয়ে বলল,

” এখনো ঝামেলার কি দেখলে ডার্লিং? অনেক কিছু দেখার বাকি আছে এখনো। ”

দোকানি তিথিকে বলল, ” আপা টেকা দিয়া যান। ”

মঈন এসে কিছু বলতে যেতেই আজলান বলল,

” তুমি কথা বলবে না। মেহবুব গাড়িতে যাও। ”

তিথি বলল, ” কি করবে তুমি? ”

আজলান পায়চারি করতে করতে রাস্তার একপাশে চলে গেল। ফুচকার টাকা মঈন শোধ করে দিল। তিথিকে বলল,

” আপনি বসুন। আমি স্যারকে নিয়ে আসছি। ”

প্রায় দশ বারো মিনিটের মতো গাড়িতে বসে রইলো তিথি। তন্মধ্যে একটা গাড়ি থেকে কয়েকটা লোক নেমে এল। গায়ে ক্যাজুয়াল ফুল হাতা সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট। আজলান একপাশে দাঁড়িয়ে রইলো পকেটে হাত গুঁজে। লোকগুলোর সাথে শুধু দৃষ্টি বিনিময় হলো তার।

সবাই দোকানের সামনে ভীড় জমালো। তিথি আজলানকে গিয়ে বলল, ” ওরা কারা? ”

” ফুড সেফটি ডিপার্টমেন্ট থেকে এসেছে। ”

তিথি অবাককন্ঠে বলল, ” কোনো দরকার ছিল এসবের? ”

” কতবড় বেয়াদব সে। আর সাহস কত! আমার সাথে তর্ক করছে!”

তিথি বলল, ” তাই বলে ওদের পেছনে পুলিশ লাগিয়ে দেবে? ”

দোকানিটার বিলাপ শুনতে পেল তিথি। বুকটা ধড়ফড়িয়ে উঠলো তার। আজলানের কাছে ছুটে এসে লোকটা বলল,

” স্যার ভুল হয়ে গেছে। আমি অনেকদিন ধরে দোকানটা চালাই স্যার। এটা দিয়ে সংসার চলে। ”

আজলান বলল, ” সিল পড়বে তোর দোকানে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে যেদিন দোকান চালাতে পারবি সেদিন দোকান খোলার অনুমতি পাবি। ”

বলেই ঘাড় বেঁকিয়ে ইশারা করতেই দোকানটা বন্ধ করে দেয়ার তোড়জোড় শুরু হলো। তিথি অবাকচোখ স্বার্থপরতা চেয়ে রইলো। যেন ইচ্ছে করে, নিজের দম্ভ, অহংকার জাহির করার জন্য কাজটা সে জেদের বশে করেছে। তিথির আরও বেশি ঘৃণা জমলো লোকটার উপর। বলল,

” যেখানে সেখানে ক্ষমতার অপব্যবহার না করলেই নয়? ”

আজলাম গর্জে বলল, ” চুপ। ”

তিথিকে টেনে গাড়িতে এনে বসিয়ে দিল সে। বলল,

” মঈন গাড়ি ছাড়ো। ”

ফুড সেফটি ডিপার্ট্মেন্টের অফিসারগুলো এসে আজলানের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে কি যেন বলাবলি করলো। আজলান গাড়িতে উঠে বসতেই দোকানিটা ছুটে এসে বলল,

” ও স্যার আমারে একবার সুযোগ দিন। ”

আজলান জানালার কাচ তুলে দিতে দিতে বলল,

” আগে গ্লাভস কিনে নিয়ে আয়। ”

তিথি বলল, ” কি পাষাণ তুমি! ”

আজলান মুখ শক্ত করে বসে রইলো। তিথি বলল,

” আমি খেতে গিয়েছি তাই তুমি প্রতিশোধ নিয়েছ না? ”

” এতকিছু যখন বুঝতে পারো তখন আমার সাথে পাল্লা দিতে যাও কেন? ”

তিথি ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলল,

” তোমার সব দম্ভ একদিন ভাঙবে। ”

আজলান বলল, ” আমার মতো মানুষের দম্ভ আছে বলেই তোমাকে এখন অব্দি তেলাপোকার স্যুপ খাওয়ায়নি কেউ। ”

তিথি চুপ করে রইলো। রাগে তার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।

চলমান…